করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে চীন থেকে সরে যাওয়া বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আনতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তার কোনো প্রভাব পড়েনি।
কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় আগামী দিনগুলোতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতির গবেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ২০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ কম।
২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে ২২২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।
এই আট মাসে নিট এফডিআই কমেছে আরও বেশি; ৩১ দশমিক ২১ শতাংশ। এ সময়ে ৬০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশে। গত বছরের একই সময়ে তা ৮৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছিল।
বিভিন্ন খাতে মোট যে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, সেই অঙ্ককে নিট এফডিআই বলা হয়।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) এসেছে, চলে গেছে তার চেয়ে বেশি।
এই আট মাসে পুঁজিবাজারে মোট যে বিনিয়োগ হয়েছে, তার চেয়ে ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলার বেশি দেশে নিয়ে গেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অর্থাৎ, নিট এফডিআই দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক।
২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল পুঁজিবাজারে।
বিদেশি বিনিয়োগের এই নাজুক অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থনীতি গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, এই মহামারিতে সব দেশেই বিনিয়োগে খরা চলছে। সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ লকডাউনের কারণে অনেক দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের মুনাফা কমে গেছে; কেউ কেউ বড় লোকসানের মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় কেউ আর অন্য দেশে বিনিয়োগ করছে না। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এ অবস্থা কাটতে সময় লাগবে।’
আহসান মনসুর বলেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা। সবার মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন করে লকডাউনও ঘোষণা করেছে সরকার। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে এফডিআইর জন্য কোনো সুখবর নেই, অশনিসংকেতই বলা যায়।
চীনের সরে যাওয়া বিনিয়োগ বাংলাদেশে নিয়ে আসার উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উদ্যোগ নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না। কাজ করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়তে হবে। তারা যখন নিশ্চিত হবে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাবে তখনই আসবে।
‘তবে, এখন যে কঠিন পরিস্থিতি, এ অবস্থায় উদ্যোগ নিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। অবস্থা স্বাভাবিক না হলে বিদেশি বিনিয়োগ তো দূরে থাক, দেশি বিনিয়োগও হবে না।’
বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের চেম্বার ‘অ্যামচেম’-এর সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে এফডিআই পরিস্থিতি কখনই সন্তোষজন ছিল না। গ্যাস-বিদ্যুৎ, বন্দরসহ অন্য অবকাঠামো সমস্যার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে বিনিয়োগ করতে তেমন আগ্রহী হতেন না।
তিনি বলেন, ‘এখন এসবের অনেক উন্নতি হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এফডিআই বাড়ার একটা অনুকূল পরিবেশও সৃষ্টি হচ্ছিল। কিন্তু মহামারি সে সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছে। এখন এফডিআই না বেড়ে উল্টো কমছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩১৫ কোটি ৭০ লাখ (৩.১৫ বিলিয়ন) ডলারের এফডিআই এসেছিল দেশে।
তার আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) এসেছিল ৪৯৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এফডিআই। এর মধ্যে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে জাপানের কোম্পানি জাপান টোব্যাকো। আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কেনা বাবদ প্রায় ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল ওই প্রতিষ্ঠানটি।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংস্থা-আংকটাড গত বছরের শেষের দিকে বিশ্ব বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে যে ধস নেমেছে, তার ধাক্কা উন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত– সব দেশের ওপরই পড়েছে। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) বিশ্বে এফডিআইপ্রবাহ কমেছে ৪৯ শতাংশ।
ওই ছয় মাসে বাংলাদেশে ১১৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছিল, যা ছিল গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে ১৪৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছিল।
আংকটাডের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১৫৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছিল, যা ছিল আগের ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
২০১৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ৩৬১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। জাপান টোব্যাকোর বিনিয়োগের কারণেই ওই বছরে এফডিআই হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল।
বিনিয়োগ আনার উদ্যোগে সারা নেই
গত বছরের ২৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীন থেকে মুখ ফেরানো বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়মকানুন সহজ করার পাশাপাশি ব্যাংকিং জটিলতা কমাতে বলেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিবের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়: ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে অনায়াসে বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশ বা অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা কর্তৃক জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়মনীতি সহজীকরণ বা যুগোপযোগী করতে হবে।’
চিঠিতে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তরের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলের অনেক দেশ, যেমন ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নিজ নিজ দেশের বিনিয়োগসংক্রান্ত আইন, বিধিবিধান, করব্যবস্থা এবং ব্যাংকিংপদ্ধতি সহজতর করছে।’
এসব দেশে আইনিকাঠামো, নীতিসহায়তায়, ব্যাংকিং নীতি ও পদ্ধতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারসহ ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারও এসব বিনিয়োগ দেশে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংককেও কিছু নিয়ম সহজ করতে হবে।
‘বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে অর্থ-লভ্যাংশ নির্বিঘ্নে নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৮ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে সর্বোত্তম ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার ওপরও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের শ্রমবাজার সহজলভ্য। রাজনৈতিক অবস্থাও স্থিতিশীল। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের শিল্প, কৃষি এবং সেবা খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। আমানতের সুদের হার বিদেশি ব্যাংকের তুলনায় বেশি হওয়ায় দেশীয় ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিমে তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন।
‘কিন্তু অনেক সময় সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ শেষে অর্থ উত্তোলন এবং প্রবাসে অর্থ প্রত্যাবাসনের সময় তারা ব্যাংকের জটিল প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হন, যা অনেক প্রবাসীকে দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে।’
বিদ্যমান ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট যুগোপযোগী করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি একটি খসড়া তৈরি করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এ আইনে আর কী কী পরিবর্তন আনা দরকার, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুততম সময়ে আইনটি পাস করার ওপর জোর দেওয়া হয় চিঠিতে।
বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ‘যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে’, তা কাজে লাগাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করে বিদ্যমান আইনগত, নীতিগত এবং পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল ওই চিঠিতে।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য