চার বছরের বেশি সময় ধরে চলছে বাংলাদেশ-ভারতের পাটযুদ্ধ। বাংলাদেশের পাট শিল্পের অগ্রগতির জন্য শিগগিরই এ যুদ্ধের অবসান আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে দুই দেশের পাটযুদ্ধের সন্তোষজনক নিষ্পত্তির আশা করছেন তারা।
বাংলাদেশের প্রতি টন পাটসুতা, চট ও বস্তা রপ্তানির ওপর ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ভারতের রাজস্ব বিভাগ ১৯ থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে গেজেট প্রকাশ করে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় যুদ্ধ। এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনাময় পাট খাত।
দীর্ঘ এ সময়ে বাংলাদেশ দফায় দফায় পাটযুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে ভারতের প্রতি আবেদন জানিয়েছে। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে অনেকবার আলোচনা ও চিঠি চালাচালি হয়েছে। তাতে আশ্বাসও মিলেছে। শেষ পর্যন্ত ফল মেলেনি।
পাটযুদ্ধ শুরুর আগে ভারতে ব্যাটারিযুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে গাড়ির ব্যাটারি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারত।
সংক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আপিল ট্রাইব্যুনালে যায়। ভারতও সেখানে সমানতালে লড়ে। তবে এ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ভারতকে হটিয়ে বাংলাদেশই বিজয় ছিনিয়ে আনে।
শিগগিরই পাটযুদ্ধেরও সমাপ্তি চায় বাংলাদেশ। তবে এবার ব্যাটারির মতো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার জন্য এখনও ডব্লিউটিওর আপিল ট্রাইব্যুনালে যাওয়া হয়নি। যদিও সেখানে যাওয়ার মতো সব ধরনের প্রস্তুতি বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশ চায় উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টির শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি।
কারণ যে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি পাটে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক বসিয়েছে ভারত, তা যথাযথ হয়নি। বাংলাদেশ আশা করছে, ভারত তার সিদ্ধান্ত সংশোধন করবে এবং দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ব্যবধান কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
পাটে অ্যান্টি ডাম্পিংয়ে এই যখন পরিস্থিতি, তখন স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে সহায়ক শক্তি হিসেবে ভারতের জন্যও সময়টি ঐতিহাসিক। এ উপলক্ষে আজ দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এ সফরকে ঘিরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন দরজা খুলে যাওয়ার প্রত্যাশার কথা বলেছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে আগাম আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে বাংলাদেশে আসা ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পসচিব অনুপ ধাওয়ানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি দাবি করেন, যেসব পণ্যের ওপর ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং আরোপ করা আছে, আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোর যৌক্তিক সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে এমন কিছু করতে, যা উভয় দেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
তার বক্তব্যে আশ্বস্ত হন পাট খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা আশা করছেন, নরেন্দ্র মোদি এবারের বাংলাদেশ সফরে পাটযুদ্ধ পরিসমাপ্তির একটা সবুজ সংকেত দেবেন। সরকারে বিভিন্ন স্তরের বক্তব্যেও পাটে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে বলে অনেকে আশায় বুক বেঁধেছেন।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ দায়িত্বশীল বিভিন্ন মহল জানায়, সফরে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও অমীমাংসিত অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। তবে সেখানে ভারত পাটে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক তুলে নেয়ার মতো কোনো সবুজ সংকেত থাকবে না। অর্থাৎ পাট ইস্যুতে নমনীয়তার বিষয়ে ভারতের আগের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসছে না। ফলে দুই দেশের পাটযুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে বাণিজ্য বৃদ্ধিকরণ সংক্রান্ত বেশ কিছু ইস্যুতে আলোচনা হবে। এর মধ্যে নতুন আরও কয়েকটি বর্ডার হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত অন্যতম। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উন্নয়ন ও বিদ্যমান বাধা দূর করা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তি সই হবে।
সরকারপ্রধানদের নির্দেশ অনুযায়ী আগামীতে এ চুক্তির আওতায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুলবে। সেখানে বাংলাদেশি পাটে ভারতের আরোপিত অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার ইস্যুতেও আলোচনার সুযোগ থাকবে।
গুণ-মান ভালো ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে ভারতের বাজারে ব্যাপকভাবে বাংলাদেশি পাট ও পাট পণ্য রপ্তানি হতো। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সাফটার আওতায় বাংলাদেশ ভারতে শূন্য শুল্কে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে।
কিন্তু হঠাৎ করেই ভারত সাফটা চুক্তিকে অকার্যকর করে পাট রপ্তানি কমাতে বাংলাদেশি পাট ও পাট পণ্যে সেই শূন্য অবস্থা থেকে প্রতি টনে সর্বোচ্চ ৩৫১ দশমিক ৭২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক ধার্য করে দেয়।
এ ক্ষেত্রে ভারতের অভিযোগ ছিল, তাদের স্থানীয় বাজারের চেয়ে কম দামে পাট রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। সমজাতীয় পণ্য কোনো রপ্তানিকারক দেশ আমদানিকারক দেশের স্থানীয় বাজারের তুলনায় কম মূল্যে রপ্তানি করলে সেখানে ডাম্পিং হয়েছে বলে ধরা হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত স্থানীয় সমজাতীয় পণ্য খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এ ধরনের পরিস্থিতি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট দেশ যে প্রতিরক্ষণমূলক শুল্ক ব্যবস্থা নেয় সেটাই হলো-অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক।
তবে এর সঙ্গে একমত নয় বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, বাংলাদেশ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে, যার ২০ শতাংশ গেছে ভারতে।
ইপিবির এই তথ্যের সূত্র টেনে পাট ও পাট পণ্য রপ্তানিকারকরা দাবি করছেন, যে বছর অ্যান্টি ডাম্পিং পদক্ষেপ নেয় ভারত, ওই বছর বাংলাদেশ যে পরিমাণ পাট রপ্তানি করেছে তা ভারতীয় বাজারের ৮ শতাংশ, যা ভারতের যুক্তিকে যৌক্তিক প্রমাণ করে না।
তারা আরও দাবি করেন, নিয়ম হলো অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের আগে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে, যেটা ভারত করেনি।
ভারতের অ্যান্টি-ডাম্পিং অ্যান্ড অ্যালাইড ডিউটিজ (ডিজিএডি) অধিদপ্তর ২০১৬ সালের অক্টোবরে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সুপারিশে বাংলাদেশি উৎপাদকরা পাট রপ্তানিতে যে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাচ্ছেন সেই বিষয়টিকেও বড় করে দেখেছেন।
বাংলাদেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সেলের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবারের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য জট খোলার একটি পথ তৈরি হবে। তবে পাটে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত এখনই হবে না। কারণ ভারত এ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে আরও পরিষ্কার হতে চায়। আরও সময় নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মাসে প্রথম দিকে দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হলে জবাবে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশকে নতুন করে প্রস্তাব দিতে। আমরা এখন সেদিকেই যাচ্ছি।’
চার বছর পার হয়ে গেছে, কোনো সমাধান আসছে না। বাংলাদেশ সংক্ষুব্ধ হয়ে ডব্লিউটিওতে যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডব্লিউটিও সেলের এই মহাপরিচালক বলেন, ‘যাওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। তার আগে আমরা দুই দেশের মধ্যকার আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে চাই। দ্বিপক্ষীয় আলোচনাতেই বিষয়টির সমাধান আশা করছে বাংলাদেশ।’
কোয়ালিটি জুট ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মালেক এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা প্রত্যাহারে সরকার ভারতের সঙ্গে নিবিড় চেষ্টা চালাচ্ছে। সর্বশেষ আশ্বাস মিলেছিল, এ বছরই একটা সিদ্ধান্ত আসবে। ফলে আমরাও আশা করেছিলাম, হয়তো ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরে এর একটা সুরাহা হবে। সেটি না হলে সৃষ্ট জটিলতা আরও দীর্ঘসূত্রতায় গড়াবে।’
বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেজিইএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও শ্যামল বাংলা জুটেক্স লিমিটেডের কর্ণধার লুৎফর রহমান বলেন, ‘যেকোনো দেশের জন্যই অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক বাণিজ্য সম্পসারণে বড় বাধা। ভারত আমাদের প্রতিবেশী হওয়ায় তাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য বেশি। আবার বাণিজ্য ব্যবধানও বেশি, যা ভারতের অনুকূলে।’
‘বাণিজ্য পরিবেশ থাকলে দুই দেশের জন্যই টেকসই বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়ক হবে। আমরা আশা করব বিবাদমান এ সমস্যা শিগগির দূর হবে।’
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার (৯ মে) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন।
শনিবার (১০ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছে ৪৭ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৮ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ২৯ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ৯৭২ জন। এর মধ্যে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা মডেল টাউন থেকে প্রাণঘাতী মারনাস্ত্রের ৭.৬২ বোরের ২৯টি গুলি. দেশীয় অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণে মাদকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-২। গত শুক্রবার মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলো- মো. সাগর হোসেন (৩৭), মো. হেলাল কবির (৩৩) এবং মো. আসিফ (২৭)।
গতকাল শনিবার র্যাব-২ জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) খান আসিফ তপু দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, সূচনা মডেল টাউন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী সাগর হোসেন তার ভাড়া বাসায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য বিক্রির জন্য মজুদ করে রেখেছে। এমন তথ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাবের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পালাতে চেষ্টা করেন। তবে তাদের আটক করা হয়। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সাগর হোসেনের দেয়া তথ্যে প্রাণঘাতী ৭ দশমিক ৬২ বোরের ২৯ রাউন্ড গুলি, ২টি চাপাতি, ২টি ছুরি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, সাড়ে ১৫ কেজি গাঁজা, ১ হাজার ৭০০ পিস ইয়াবা ও নগদ ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৩৩০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক আসামিরা জানায়, দীর্ঘদির ধরে তারা দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য এনে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় বিক্রি করেন।
তিনি আরও বলেন, আসামীদের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। কোথা থেকে তারা এসব গুলি পেয়েছে, কিভাবে ব্যবহার করার পরিকলপনা রয়েছে ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। আসাদিরে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে
বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও আশপাশের এলাকায় যেকোনো সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
শনিবার (১০ মে) দুপুরে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনশৃঙ্খলা ও প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড়, অফিসার্স ক্লাব মোড়, মিন্টু রোড) যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হলো।
পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর ২৯ ধারায় বর্ণিত অর্পিত ক্ষমতাবলে আজ (শনিবার) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দাবিতে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য'র ব্যানারে শাহবাগে শুরু হয়েছে গণজমায়েত।
শনিবার বিকেল তিনটা থেকে এই গন জমায়েত শুরু হয়। এর আগে গতকাল তিন দফা দাবিতে এই গণ জমায়েতের ডাক দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।
তবে তিনি বলেছেন, এটি কোন নির্দিষ্ট দলের প্রোগ্রাম নয়। এটি সব দলের স্বতঃস্ফূর্ত প্রোগ্রাম। এরপর তিনি এক ঘোষণায় বলেন, আজকের এই গণজমায়েত 'ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য'র ব্যানারে অনুষ্ঠিত হবে।
তিন দাবিগুলো হলো—আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা।
বিকেল তিনটা থেকে গনজমায়েত শুরু হলেও শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল থেকেই শাহবাগ অবরোধ করে রেখেছে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আজ সারাদিনও ছিলো শাহবাগ অবরোধ।
বিকেল তিনটার কিছু আগে শাহবাগে এসে উপস্থিত হন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা, ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদী, জুলাই ঐক্যের সংগঠক মোসাদ্দিক আলী ও এবি জুবায়ের। এরপর শুরু হয় গণজমায়েতের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি।
এরপর একে একে শাহবাগে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মিছিল। বিকেল চারটায় বড় একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগে উপস্থিত হোন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এসময় সকলে সমস্বরে 'লীগ ধর জেলে ভর', 'ব্যান ব্যান আওয়ামী লীগ' স্লোগান দিতে থাকেন।
গণজমায়েতে সারজিস আলম বলেন, এই শাহবাগে ফ্যাসিবাদ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আজ সেই শাহবাগ থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদ নিষিদ্ধ করা হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়বো না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, এই সরকার আমাদের। আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে আগ্রহী না। কিন্তু সরকারকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আজ উপদেষ্টা পরিষদের সভা থেকে কোন সিদ্ধান্ত না আসলে ভালো হবে না বিষয়টি। সভা থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আসতে হবে।
বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার এক শোকবার্তায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গুণী শিল্পী বাংলাদেশের সংগীত জগতে যে অবদান রেখেছেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা মুস্তাফা জামান আব্বাসীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “উপমহাদেশের খ্যাতনামা সংগীত পরিবারে জন্ম নেয়া বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পীর গান ও গবেষণা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নিত্যনতুন চিন্তা ও সৃষ্টির খোরাক জোগাবে।”
প্রসঙ্গত, মুস্তাফা জামান আব্বাসী ৮৭ বছর বয়স আজ সকালে মৃত্যুবরণ করেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দাবিতে হওয়া শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচি এখন থেকে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য' ব্যানারে পালিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন কোনো একক দলের বা মতের নয়।
বাংলাদেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে একত্রিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন হাসনাত।
শনিবার দুপুরে নিজের ভ্যারিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি এই ঘোষণা দেন।
ফেসবুকে হাসনাত লিখেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত দুই দিন ধরে ছাত্র-জনতা রাস্তায় অবস্থান করছে। এখনো পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারেনি।
বিভিন্ন মহল থেকে এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে দাবি করেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, নানাভাবে আন্দোলনকে বিতর্কিত ও বিভক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, এই আন্দোলন কোনো একক দলের বা মতের নয়। সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে এখন থেকে আমাদের সব কর্মসূচি "ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য" ব্যানারে পালিত হবে।
ঢাকাসহ সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে রাজপথে নেমে আসার আহবান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আসুন, আমরা সবাই জুলাইয়ের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানপন্থী সকল মত ও দল একত্রে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, জুলাই এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র জনতার শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি গতকাল বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত চলছে। আজ বিকেল থেকে আর দুইটি দাবি যোগ করে আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হবে বলে ঘোষণা দেন হাসনাত।
দাবিগুলো হলো—আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ।
শনিবার (১০ মে) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে সবসময়ই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে, ইন্টারপোল তো আমার কথা অনুযায়ী কাজ করবে না! এক্ষেত্রে তারা (ইন্টারপোল) তাদের আইন-কানুন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’
এসময় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।’
‘তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্টে আরও কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে,’ যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জেলা ডিএসবির আবেদনের বিষয়টি আমার জানা নেই।’
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দাবি-দাওয়ার বিষয়ে রাস্তায় আন্দোলন করলে জনদুর্ভোগ হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে রাস্তা ছেড়ে অন্য কোথাও আন্দোলন করলে ভালো হয়।’
এ ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করার জন্য সাংবাদিকদের সাহায্য চান উপদেষ্টা।
গতকাল (শুক্রবার) যমুনার সামনে ছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে বলার পর তারা শাহবাগে গেছেন। সেখানেও দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে তারা ইমার্জেন্সিগুলো দেখছেন,’ বলেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মন্তব্য