কাকশিয়ালী-ইছামতী-কালিন্দী- এই তিন নদীর মোহনায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বসন্তপুর গ্রাম।
৫৬ বছর আগে এখানে ছিল সমৃদ্ধ নৌবন্দর। বাণিজ্য হতো ভারতের সঙ্গে।
কাছেই সীমান্তের ওপারে ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ। সেখান থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার। আর বসন্তপুর থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও কম।
এই নৌবন্দরকে ঘিরে কালিগঞ্জ ছিল জমজমাট। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যায় এটি। এখনও স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে জরাজীর্ণ কাস্টম ভবন, তৎকালীন ইমিগ্রেশন অফিসসহ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টার।
পুরোনো এসব স্থাপনা দেখতে সেখানে ঘুরতে যান অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘হ্যানে কাস্টমের সারেরা থাকত। পাকিস্তান আমলে হ্যানে যখন বন্দর চালু ছেল, তখন দেখা যেতু, যাত্রীরা যাতায়াত করতু। মাছ ও কাঠ যেতু। বাজারঘাটও ছেল। দেশ স্বাধীনের আগে খানের আমলে বন্দর উঠুয়ে নেয়।’
সম্প্রতি এই বন্দর পুনরায় চালু করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন দেখতে মুখিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা।
গ্রামের আবু হাসান বলেন, ‘শুনতিছি বন্দর চালু হবে। হলি এখানকার বেকার যুবকদের কাজকাম হবে। এলাকা যেমন হবে সমৃদ্ধ, সরকারও তেমন অনেক টাকা পাবে।’
নৌবন্দরটি চালু হলে এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে যাবে বলে মনে করেন কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদ মেহেদি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, নৌরুটে সে সময় ভারতীয় পণ্য শিল্পনগরী খুলনাসহ ঢাকায় যেত। নৌবন্দরের কারণেই কালিগঞ্জের নাজিমগঞ্জ ও ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ বড় মার্কেট হিসেবে গড়ে ওঠে। নৌবন্দর চালু হলে সাতক্ষীরায় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। এই এলাকাও উন্নত হবে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের আগে নাজিমগঞ্জ ও ভারতের হিঙ্গলগঞ্জের মধ্যে নৌপথ ছিল। আমি ওই উপজেলায় গিয়ে তা জানতে পেরে নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠাই। প্রধানমন্ত্রী সেটাতে সম্মতি দিয়েছেন এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন নৌবন্দর করতে।’
ডিসি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২২ জানুয়ারি এই বন্দরটি নির্মাণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। এখন মন্ত্রণালয় নৌবন্দরের সম্ভাব্যতা ও সুফলতা যাচাই করে দেখবে। এরপর জরিপ চালিয়ে সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করে বিষয়টি একনেকের বৈঠকে তুলবে। সেখানে অনুমোদন হলেই নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন:গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় গোটা জেলায় কারফিউ জারির আজ তৃতীয় দিন। সর্বত্র বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক। শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকেই দেখা যায়, জেলা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা। দু-একটি ছোট যানবাহন ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি।
বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় পুলিশের কাজে বাধা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। আজ গোপালগঞ্জ থানার মামলাটি দায়ের করা হয়।
সূত্র জানায়, এ মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
কারফিউ চলায় শহরের ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা এবং সেবাপ্রত্যাশীরা। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গোটা গোপালগঞ্জে এখনও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
আজ সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের তৎপরতা বাড়তে শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।
কারফিউ আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত শিথিল থাকবে। এরপর সন্ধ্যায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউ শিথিল অথবা বাড়ানো হতে পারে।
এর আগে, বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে ২২ ঘণ্টার কারফিউ শুরু হয়। চলে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে কারফিউর সময় আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউয়ের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
এ সময় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, গোপালগঞ্জে বুধবারের (১৬ জুলাই) সহিংসতায় চারজন নিহত এবং ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত ৪ জনের লাশ পোস্ট মর্টেম করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায় বলে জানান।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন যত অবস্থায় রমজান নামের আরও একজনের মৃত্যু হয় এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, সারা দেশে মাসব্যাপী পদযাত্রার অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে তারা এটিকে ‘লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হিসেবে নামকরণ করেন। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গোপালগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এটি প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
এনসিপির নেতাদের গাড়িবহর গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে পথে বাধা পায়। সকালে পুলিশ এবং ইএনওর গাড়িতে হামলা চালানো হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের দায়ী করা হয়।
দুপুরে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। হামলার কিছুক্ষণ পর সেখানে পৌঁছান এনসিপির নেতারা। তারা সেখানে স্লোগান ও বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে তারা মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা দিলে তাদের গাড়িবহর ঘিরে হামলা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এনসিপি নেতাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে এখন পর্যন্ত ৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বিবৃতি এই উদ্বেগ প্রকাশ করে দলটি।
এতে দলটি বলেছে, ‘চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে বিএনপি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সেখানে চাঁদাবাজি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।’
দলটি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
একই সঙ্গে বিএনপি স্থানীয় প্রশাসনকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং মিথ্যা মামলা ও চাঁদাবাজি থেকে নিরীহ ব্যবসায়ীদের রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘রাজধানীর পরে, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর। বন্দর নগরী হিসেবে, চট্টগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বেশিরভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য এখান থেকেই পরিচালিত হয়। তাই, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য এই শহরে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি অপরিহার্য।’
দলটি বলেছে, এটি দুর্ভাগ্যজনক যে বর্তমানে মিথ্যা মামলা এবং ব্যাপক চাঁদাবাজি ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার করছে, যার ফলে চট্টগ্রামে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এমন খারাপ পরিস্থিতি ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যদি এটি অব্যাহত থাকে—তাহলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়তে পারে।’
'আমের বাণিজ্যিক রাজধানী সাপাহার' স্লোগানে আম চাষে প্রসিদ্ধ নওগাঁর সাপাহারে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল (উৎসব)।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ, সাপাহার আল হেলাল ইসলামী একাডেমির অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম, সাপাহার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও আমচাষী রফিকুল ইসলাম, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা, নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রায়হান আলম প্রমুখ।
ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালে রয়েছে দেশি-বিদেশি বাজারে আম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল, আমজাত খাদ্যদ্রব্য, প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চাষিদের প্রোফাইল এবং আমের নানা জাতের প্রদর্শনী। মেলায় মোট ৪০টি স্টল রয়েছে।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আম বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা। এ উৎসবের মাধ্যমে নওগাঁর আমকে আরও সুপরিচিত করে তোলা যাবে। সাপাহারকে আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।
আম চাষিদের দাবি, নওগাঁর অধিকাংশ বাগানে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে আম উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু উৎপাদনের তুলনায় রপ্তানি হয় খুবই সামান্য। রপ্তানি বাড়াতে না পারলে আমের কাঙ্খিত দাম পাবেন না আমচাষিরা। তাতে ভালো আম উৎপাদনে আগ্রহ ধরে রাখা সম্ভব হবে।
আমচাষি সোহেল রানা বলেন, 'রপ্তানির আম দূষণমুক্ত করতে হয়। না হলে আম ফেরত আসার ঝুঁকি থাকে। এর জন্য দরকার ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (VHT)। আবার আম বাছাইয়ের জন্য প্যাকিং হাউস ও সহজে সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টিন) সনদ পেতে নওগাঁতে কৃষি বিভাগের সঙ্গনিরোধ শাখা স্থাপন করা দরকার। সরকারিভাবে এই সুবিধাগুলো যেন করা হয় সেই দাবি জানাতে চাই প্রশাসন ও সরকারের আছে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম আহমেদ বলেন, আম উৎপাদনে সাপাহার দেশের শীর্ষস্থানে থাকলেও চাষিরা এখনও বঞ্চিত। এখানে অধিকাংশ বাগানে রপ্তানিযোগ্য আম চাষ হয়ে থাকে। এখানকার চাষিরা আমকে একটি শিল্পে পরিণত করেছে। বর্তমানে সাপাহারে ২০ হাজারের বেশি আমচাষি রয়েছেন এবং ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আম চাষ হয়। গত বছর এই অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার আম লেনদেন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'রপ্তানিকারকদের উদ্দেশ্য আমি বলতে চাই, সাপাহারের আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও ভালো মানের। আপনারা সাপাহারের আম বিদেশে রপ্তানি করুন।'
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, 'আমের চাষকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে নওগাঁর। এ অঞ্চলে এখন সারা বছর আম উৎপাদিত হয়। সারা বছর আম খেতে চাইলে সাপাহারে আসতে হবে। আম চাষের চালেঞ্জ হলো রপ্তানির অভাব। বর্তমানে বিদেশে প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশি আছে তাদের চাহিদাই পূরণ করতে পারি না। এমনকি বিদেশিদের মাঝেও বাংলাদেশের আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর জন্য আম রপ্তানির যে বাধাগুলো আছে সেগুলো দূর করতে হবে। নওগাঁতে ভিএইচটি প্ল্যান্ট ও প্যাকিং হাউজ স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ঝালকাঠি পৌরসভাটি কাগজে প্রথম শ্রেনীর তালিকায় থাকলেও বাস্তবে তৃতীয় শ্রেনীর মতই। পৌর কর দেয়া বাসিন্দারা বৃষ্টির জলে খাচ্ছে হাবুডুবু। সপ্তাহজুড়ে টানা বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হয়েছে ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকা।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণকাঠিতে পানিবন্ধী হয়ে আছে প্রায় ২০০ পরিবার। এখানকার ঘরবাড়ি মাসব্যাপী পানিতে তলিয়ে আছে। জলাবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। তাদের এমন ভোগান্তি দশ বছর ধরে পোহাতে হচ্ছে।
সেলিম তালুকদার, আলম হাওলাদার, মিল্টন তালুকদার, সাইদুল ইসলাম, এডভোকেট শাহাদাৎ হোসেনের বাড়ির বাসিন্দারা দুর্ভোগের কথা সার্চ বিডি নিউজকে জানিয়েছেন।
পানিবন্দি বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি ডুবে যায়। বিশেষ করে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা পরিষদ ভবনের আশপাশ এলাকার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ।
"বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো যাচ্ছেনা। রান্নাঘরেও পানি উঠে গেছে। প্রাইভেট টিচার পানি পেরিয়ে ঘরে আসতে চায়না। পৌরসভাকে বারবার বলেও কোনো কাজ হয়নি। এমনটাই জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদা বেগম, সেলিম তালুকদার, সাইদুল ইসলামসহ অনেকে।
এলাকাবাসীর দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষ যদি ড্রেন তৈরি বা পাইপ দিয়ে নদীতে পানি নামিয়ে দিতো অথবা সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না। সাবেক মেয়রদের গাফিলতির কারনেই আজ পানিবন্দি থাকতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'ড্রেনেজ সমস্যা আমরা জানি। তবে সাবেক মেয়রদের আমলে বাজেট ও জনবলের সংকটের কারনে সময়মতো কাজ করা হয়নি না।'
ভুক্তভুগিদের মতে, পৌরসভা যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করে, তবে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে জনদুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে।
এদিকে বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছে পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দারা। তাদের দাবি দ্রুত সময়য়ের মধ্যে জলাবদ্ধতার টেকসই সমাধান করে দিতে হবে। অন্যথায় তারা পৌর কর দেয়া বন্ধ করা এবং পৌরসভা ঘেরাও সহ কঠোর কর্মসুচি দিবেন।
তবে অনেকটা আশার বানী শোনালের পৌর প্রশাসক কাওছার হোসেন। তিনি জানান, 'শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিমধ্যে রেকর্ডিও খালগুলো পুণ:খনন করা হচ্ছে। কৃষ্ণকাঠি এলাকার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লড়াইয়ের সময় গোপালগঞ্জে হামলা হয়েছে। আরও ১০ জায়গায় হামলা হলেও আমাদের দমন করা যাবে না।
তিনি বলেন, সামনে আরেকটি লড়াই আছে। লড়াইয়ে মুন্সীগঞ্জবাসীকে পাশে চাই। শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুরে মুন্সীগঞ্জের সুপার মার্কেটে এনসিপির পথসভায় বক্তব্য এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, ফ্যাসিবাদ ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ফ্যাসিবাদ ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। তিনি বলেন ‘ভবিষ্যতের নির্বাচনে প্রবাসীরা যেন ভোট দিতে পারে, তা আমরা নিশ্চিত করব।’ মুন্সীগঞ্জের নদী ভাঙন, অবৈধ বালু দখলসহ নানা অনিয়ম বন্ধে কাজ করার আশ্বাসও দেন এই নেতা।
সভায় সারজিস বলেন, ফ্যাসিবাদ নির্মূল না হলে দেশ স্বাধীন হবে না। শুধু গোপালগঞ্জে নয়, যেখানেই ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীরা থাকবে, সেখানেই ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে প্রতিরোধ করতে হবে। দেশের বাইরে থেকে যারা হত্যার পরিকল্পনা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘হাসিনার বিচার করতে হবে। তার মৃত্যুদণ্ড দেখে মরতে চাই।’
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন নেতানির্ভর নয়, নীতিনির্ভর রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আগামী মাসের ৩ আগস্ট জাতীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করে ছাড়ব।
পথসভায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা সবাইকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
এর আগে মুন্সীগঞ্জ শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি পদযাত্রা সুপার মার্কেটের শহীদ চত্বরে এসে যোগ দেয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি সময় গোপালগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ জন শিক্ষক।
শিক্ষকরা যৌথ বিবৃতিতে জানান, এই বর্বরতা শুধু রাজনৈতিক সমাবেশে হামলা নয় বরং জুলাই বিপ্লবের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে। গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচির ওপর বর্বরোচিত হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, ইউএনওসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ সদস্যদের আহত করা অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত।
তারা মনে করেন, এই হামলা শুধু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়। বরং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত। শিক্ষকরা দোষীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরুরও দাবি জানান।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে সারা দেশ থেকে সন্ত্রাসীদের গোপালগঞ্জে জড়ো করেছে।
শিক্ষকরা বলেন, অবিলম্বে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ও পেশাদার সদস্যদের সমন্বয়ে ঢেলে সাজানোর দাবি জানান।
বিবৃতি দেওয়া শিক্ষকরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহিব্বুল্লাহ ও অধ্যাপক ড. কাজী মো. বরকত আলী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খোন্দকার লুৎফুল এলাহী ও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শামসুজোহা, অধ্যাপক ড. মো. সোহাইবুর রহমান ও অধ্যাপক ড. আবু খায়ের মোকতাদিউল বারী চৌধুরী, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. কবীর উদ্দিন; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এএফজি মাসুদ রেজা, ডুয়েট-এর শেখ মো. রোকনুল ইসলাম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সুজাহাঙ্গীর কবির সরকারসহ মোট ৪৭ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।
ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জুলাই-যোদ্ধাসহ আন্দোলনে আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে এক প্রতীকী ম্যারাথনের আয়োজন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) আয়োজিত এই বিশেষ কর্মসূচিতে বিভিন্ন বয়সের প্রতিযোগীদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে আয়োজিত এ প্রতীকী ম্যারাথন ছিল এবারের গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপনের অন্যতম অংশ।
আজ সকাল ৭টায় এই ম্যারাথনের উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। শুরুতে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
ম্যারাথন শেষে উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই অভ্যুত্থান দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আজকের এই প্রতীকী ম্যারাথনে অংশ নিয়ে আমরা অভ্যুত্থানের সেই মহান আত্মত্যাগীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তরুণ প্রজন্মকে সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি।’
এক হাজার প্রতিযোগী নিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রতীকী ম্যারাথনটি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে গণভবন, সংসদ ভবন, খামারবাড়ি হয়ে আবারও চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এসে শেষ হয়।
মন্তব্য