গত জুনে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দর ছিল ১৭ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর থেকে দাম বাড়তে বাড়তে উঠে যায় ৪৬ টাকা ৬০ পয়সায়। দাম আরও বাড়বে-এমন গুজবে বিনিয়োগকারীরাও ব্যাপকভাবে কিনতে থাকেন শেয়ার।
তবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে দর হারাতে থাকে কোম্পানিটি। বৃহস্পতিবার এর দাম ছিল ৩৩ টাকা ২০ পয়সা।
তবে এই শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের চেয়ে বেশি লোকসানে আছেন পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের বিনিয়োগকারীরা।
গত ১৪ জুলাই শেয়ারটির দাম ছিল ২৯ টাকা ৭০ পয়সা। এরপর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে সাড়ে তিন গুণ হয়ে যায়। অক্টোবরের শেষে ১০০ টাকাও ছাড়িয়ে যায় দাম।
কিন্তু এরপর হয় পতন। সেদিন যারা শেয়ারটি কিনেছেন, তাদের প্রায় অর্ধেক টাকা নাই হয়ে গেছে। শেয়ারটির সবশেষ দাম ৫৮ টাকা ৩০ পয়সা।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সে যা ঘটেছে, সেটা বিস্ময়কেও হার মানায়। বছর দুয়েক আগে যে কোম্পানির শেয়ার ১৫ টাকার নিচে বিক্রি হয়েছে, সে কোম্পানির শেয়ার নিয়ে নানা গুজব ডালপালা মেলার পর গত অক্টোবরে ১৬০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
কোম্পানিটি ব্যাপক মুনাফা করবে, ভালো লভ্যাংশ দেবে- এমন কথা প্রচলিত থাকলেও এর কোনোটাই সত্য প্রমাণ হয়নি। আর দাম কমতে কমতে এখন দাঁড়িয়েছে ১০৬ টাকা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৪৯টি বিমা কোম্পানির মধ্যে সাধারণ বিমার ৩৭টি কোম্পানির সব কটির শেয়ারের ক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটেছে।
কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়ে তিন গুণ হয়েছে, কোনোটির চার গুণ, কোনোটির পাঁচ গুণ।
নানা সময় পুঁজিবাজারে কোনো একটি খাতের শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ জন্মায়। কিন্তু এ রকম উল্লম্ফন ২০১০ সালে মহাধসের আগেও কোনো খাত নিয়ে দেখা যায়নি।
বিমা খাতে ব্যাপক সংস্কার হচ্ছে, সরকারি বড় প্রকল্প বিমার আওতায় আসছে-এমন কথা ছড়ানোর পাশাপাশি ১০ বছর আগের একটি বিধানকে সামনে এনে প্রলুব্ধ করা হয় বিনিয়োগকারীদের।
পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তাদের হাতে রাখতে হবে বলে এক দশক আগেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তবে নানা কারণে সেটি হয়নি। আর সম্প্রতি বিমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এক মাসের মধ্যে এই কোটা পূরণ করতে হবে।
তবে মাস দুয়েক ধরে এসব কোনো কথাতেই কাজ হচ্ছে না। আগে যেসব যাচাই-বাছাই ছাড়া সব কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে, তেমনি এখন উল্টোযাত্রায় দর হারাচ্ছে সব কোম্পানি। এমনকি যারা ভালো মুনাফা করে লভ্যাংশ দিয়েছে ভালো, তারাও দর ধরে রাখতে পারছে না।
এক বছর আগে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ছিল ১৩ টাকা। সেটি বাড়তে বাড়তে ১৩৮ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
লোভের শুরু যেভাবে
বেশ কিছু সিদ্ধান্তের ভুল ব্যাখ্যায় আগ্রহ বাড়ে বিমা খাতে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বিমা খাত নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখান। সেখান থেকে শুরু।
এরপর যানবাহনের তৃতীয় পক্ষের বিমা ব্যবস্থা বাতিল করার পর প্রচার হয় যে, এখন সব গাড়ির প্রথম পক্ষের বিমা করতে হবে। তৃতীয় পক্ষের চেয়ে প্রথম পক্ষের বিমায় প্রিমিয়াম অনেক বেশি। বলা হয়, এ কারণে বিমার বাজার আরও বড় হচ্ছে।
কিন্তু পরে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রথম পক্ষের বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
পরে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম সংগ্রহে এজেন্টকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কমিশন দেয়া যাবে। পরে এজেন্ট ব্যয় একেবারেই তুলে দেয়া হয়। তখনও ছড়ানো হয়, কোম্পানির আয় বাড়বে বহুগুণ।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা পরে সংশয় প্রকাশ করেন যে, এজেন্ট ব্যয় না করলে বিমা কোম্পানির পলিসি কমে যাবে কি না।
আবার বলা হয়, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো বড় বড় প্রকল্প বিমার আওতায় আসছে। এগুলোর ঝুঁকি একেবারেই কম তাই কোম্পানির লাভ হবে ভালো। তবে পরে জানানো হয়, মেট্রোরেল সরকারি সাধারণ বিমা করপোরেশনের আওতায় থাকবে। এটি পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত নয়।
সব শেষে পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রাখার বিষয়ে নির্দেশনা জারির পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের-ডিএসইর পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের সাবধান করা হয়।
এর মধ্যে আবার বিমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে। ডেল্টা লাইফের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ আনার পর দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে অভিযোগও পাঠানো হয়।
এরপর ডেল্টা লাইফে বসানো হয় প্রশাসক। যারা ঘুষ দাবির অভিযোগ করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। পরে দুদকে জমা দেয়া অভিযোগ তুলেও নেয়া হয়।
কিন্তু এসব ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে।
কী বলছেন বিশ্লেষকরা
এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী খায়রুল বাশার মোহাম্মদ আবু তাহের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমা খাত নিয়ে সে সময় যেভাবে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী ছিলেন, বাস্তবে তা ছিল না। ফলে যেভাবে শেয়ারের দর বেড়েছে তা টেকেনি।’
তিনি বলেন, ‘আইডিআরএর অনেকগুলো সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের সে সময় সচেতন হয়ে বিনিয়োগ করা উচিত ছিল। এ ছাড়া যেভাবে দর বেড়েছিল তাতে মূল্য সংশোধন হওয়ার পর আর সেখানে বিনিয়োগ হয়নি। ফলে দরও বাড়েনি।’
ব্র্যাক ইপিএলের গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘বিমা নিয়ে সে সময় একটি কারসাজি হয়েছিল। আর তার কারণেই যতটুকু বাড়ার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা মূলত দর বাড়লেই বেশি শেয়ার কিনতে আগ্রহী হন। এজন্যই লোকসানটি বেশি হয়েছে।’
স্ট্যান্ডাড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানির সেক্রেটারি মুহাম্মদ কাউসার মুন্সি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ বিমা কোম্পানির প্রিমিয়াম সংগ্রহের ক্ষেত্রে এজেন্টকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কমিশন দিলে কোম্পানির আয় বাড়বে, এটাও সত্য। কিন্তু এর কারণেই শেয়ারদর বাড়বে এটা ভাবা ঠিক নয়।’
দর হারিয়েছে ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন ১৮ মার্চ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫৬ শতাংশ দর হারিয়েছে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স। ৫০ শতাংশের উপরে দর হারিয়েছে আরও তিন থেকে চারটি কোম্পানি।
অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা। সেটি কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ২০ পয়সা। কোম্পানিটি শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২৮.৬০ শতাংশ।
এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ১৩৮ টাকা ৯০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৯৪ টাকায়। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩২.৩২ শতাংশ।
এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৯২ টাকা ৮০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা ৯০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪৫.১৫ শতাংশ।
বিজিআইসির দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ১৮.৭০ শতাংশ।
বিএনআইসিএলের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৭৫ টাকা ৯০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৫০.১৯ শতাংশ।
সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৬৭ টাকা ৪০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ৫৮ টাকা ৩০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ১৩.৫০ শতাংশ।
সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৩৫ টাকা ৮০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকায়। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৫.৪৭ শতাংশ।
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৬৪ টাকা ৯০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৩০ পয়সায়। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৫৩.৯৮ শতাংশ।
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ টাকা ১০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪০.৬৯ শতাংশ।
ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৬১ টাকা ৫০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ৮০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৫.২৮ শতাংশ।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ১১৯ টাকা ৮০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকায়। কোম্পানিটি শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২৪.৮৭ শতাংশ।
ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪৩ টাকা ৮০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা ৩০ পয়সায়। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৭.৬৭ শতাংশ।
এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪৫ টাকা ৯০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৩০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪৭.০৫ শতাংশ।
ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৩০ টাকা ৯০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ১৮ টাকা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪১.৭৪ শতাংশ।
গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৬৯ টাকা ৫০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ২০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৫৬.৫৪ শতাংশ।
গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৭৩ টাকা ৪০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকা ৭০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২৪.১১ শতাংশ।
ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪৭ টাকা ৭০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ টাকা ৫০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২৩.৪৮ শতাংশ।
জনতা ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪৪ টাকা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৬.৩৬ শতাংশ।
কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ২৬ টাকা ৪০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩১.৯৫ শতাংশ।
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৫২ টাকা ৪০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ৩১ টাকা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪০.৮৩ শতাংশ।
নিটোল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৭৬ টাকা ৮০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা ৩০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪৭.৫২ শতাংশ।
নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৫৩ টাকা ৫০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকা ৯০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪৪.১১ শতাংশ।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ১৬১ টাকা ৩০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ১০৬ টাকা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৪.২৮ শতাংশ।
পিপলস ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৫৭ টাকা। সেটি এখন কমে হয়েছে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪২.৯৮ শতাংশ।
ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৫০ টাকা ৫০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ৩২ টাকা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৬.৬৩ শতাংশ।
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম গত জুলাইয়ে দাম ৩০ টাকা ছিল। পরে তা ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এখন ৬০ টাকার নিচে নেমে যায়।
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ১০০ টাকা ৪০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ৫৮ টাকা ৩০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪১.৯৩ শতাংশ।
প্রগতি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৭৬ টাকা ৯০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭ টাকা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৮.৮৮ শতাংশ।
প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৫৫ টাকা ৪০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪৭.৬৫ শতাংশ।
প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ১০২ টাকা ৭০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৭১ টাকা ৬০। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩০.২৮ শতাংশ।
পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৩৯ টাকা ৪০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ২০। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪৩.৬৫ শতাংশ।
রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৭৩ টাকা ৪০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪ টাকা ১০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২৬.২৯ শতাংশ।
রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৬২ টাকা ১০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৪০। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩০.১১ শতাংশ।
রূপালী ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪৮ টাকা ৫০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ২৮ টাকা ৫০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪১.২৩ শতাংশ।
সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৭১ টাকা ৩০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ৪২ টাকা ১০ পয়সা। কোম্পানিটি শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৪০.৯৫ শতাংশ।
স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৩৯ টাকা ৩০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ২৪ টাকা ৩০ পয়সা। কোম্পানিটি শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৮.১৬ শতাংশ।
তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৫৫ টাকা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা ৭০ পয়সা। কোম্পানিটি শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২৬ শতাংশ।
ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৬৩ টাকা ৮০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৭.৪৬ শতাংশ।
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম গত জুলাইয়ে ৩০ টাকায় লেনদেন হওয়া শেয়ারের দর এক পর্যায়ে ১২০ টাকা ছুঁই ছুঁই হয়ে যায়। পরে দাম কমে ৯০ টাকার আশেপাশে হয়।
জীবন বিমায় সর্বোচ্চ কমেছে ৩৪ শতাংশ
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৯০ টাকা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৬৭ টাকা ৯০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২৪.২৫ শতাংশ।
ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৬০ টাকা ৯০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা ১০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৪.১৫ শতাংশ।
মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৭৮ টাকা ৮০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৫৬ টাকা ৪০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২৮.৪২ শতাংশ।
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ২৮০ টাকা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২৪০ টাকা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ১৪.২৮ শতাংশ।
পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ২৫ টাকা ৭০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৬০ পয়সায়। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২৭.৬২ শতাংশ।
প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ১৪৩ টাকা ২০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ৮৮ টাকা ৩০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩১.৩৫ শতাংশ।
প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৬৮ টাকা। সেটি এখন কমে হয়েছে ৪৮ টাকা ৫০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২৮.৬৭ শতাংশ।
রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৭২ টাকা ৯০ পয়সা। সেটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ৫০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৮.৯৫ শতাংশ।
সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ৩৯ টাকা ৩০ পয়সা। সেটি এখন কমে হয়েছে ২৪ টাকা ৩০ পয়সায়। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ৩৮.১৬ শতাংশ।
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সর্বোচ্চ উঠেছিল ২৬ টাকা। সেটি এখন কমে হয়েছে ২০ টাকা ৪০ পয়সা। শতকরা হিসাবে দর হারিয়েছে ২১.৫৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য