পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে মালিকানা কমাচ্ছে সরকার।
এরই অংশ হিসেবে গত ১৫ মার্চ তিন কোটির বেশি শেয়ার বিক্রি করছে সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)।
গত ২১ ডিসেম্বর জানানো হয়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির করপোরেট স্পন্সর বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)। তাদের কাছে পাওয়ার গ্রিডের ৬০ কোটি ৩২ লাখ ৫৯ হাজার ৭৪৮টি শেয়ার। এর থেকে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪০টি শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দেয়া হয়। এই পরিমাণ শেয়ার আগামী ৯০ কার্যদিবস বা তিন মাসের বেশি সময়ে ওপেন মার্কেটে বিক্রি করা হবে। যা কিনতে পারবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
এরপর গত ১৫ মার্চ জানানো হয়, বিক্রির জন্য ঘোষণা করা ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪০টি শেয়ারের মধ্যে ৩ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩২টি শেয়ার ইতোমধ্যে বিক্রি করা হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিডের মোট শেয়ার ৭১ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৯১টি। এরমধ্যে বিপিডিবির রয়েছে ৮৪ শতাংশ বা ৬০ কোটি ৩২ লাখ ৫৯ হাজার ৭৪৮টি শেয়ার।
পাওয়ার গ্রিডের সচিব জাহাঙ্গীর আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের উচ্চ পর্যায়ে সভা হয়েছে। সেখানে অর্থমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
‘সরকারের সিদ্ধান্ত আছে ভালো কোম্পানিসহ সরকারি অংশের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নেয়ার। বর্তমানে পাওয়া গ্রিডে ৮৪ শতাংশ বিপিডিবি শেয়ার আছে। সেটি পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা হবে। সর্বশেষ তা ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
এজন্য বিপিডিবির কাছে থাকা পাওয়ার গ্রিডের মোট শেয়ার থেকে ৫ কোটি ৪২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৭টি শেয়ার বিক্রি করতে হবে।
পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তি সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৪ দশমকি ৬১ শতাংশ রিটার্ন দেয়।
কোম্পানিটির সর্বশেষ প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পাওয়ার গ্রিডের (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২০) সময়ে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ০৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৪৭ পয়সা।
আর্থিক প্রতিবেদনটি অনিরীক্ষিত হওয়ায় এটি চূড়ান্ত হিসাব নয়। অডিটেড বা নিরীক্ষত হওয়ার পর শেয়ার প্রতি আয় বাড়তে বা কমতে পারে।
২০০৬ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটিতে বর্তমানে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে আছে মোট শেয়ারের ৮০ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ শতাংশ শেয়ার। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার।
আরও পড়ুন:
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে পাকিস্তানি হাইকমিশনার ইমরান হায়দার সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ছবি: পাকিস্তানি হাইকমিশন
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সাক্ষাৎকালে দু’দেশের সাম্প্রতিক যোগাযোগ ও মন্ত্রী পর্যায়ের সফরের প্রশংসা করেন উভয়পক্ষ। এর মধ্যে গত আগস্টে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
গত এপ্রিলে রাজধানীতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ সভা সফলভাবে হওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পায়। এছাড়া দীর্ঘ বিরতির পর আগামী ২৭ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠককেও স্বাগত জানান উভয় পক্ষ।
উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, সম্প্রতি ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালুসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উভয় দেশ অগ্রগতি লাভ করেছে।
এ সময় তারা দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। পাশাপাশি একাধিক খাতে সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।বাসস
চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলায় আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে রমনা থানা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি আদালতের নির্দেশে পুনরায় তদন্তাধীন থাকায় আসামিরা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য রমনা থানা থেকে সংশ্লিষ্ট সব বিমান ও স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মামলার তদন্ত এখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে।
তাই কোনো আসামি যেন দেশ ছাড়তে না পারেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেন অভিনেতার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। তবে এতে দ্বিমত পোষণ করে সালমান শাহর পরিবার।
তাদের দাবি, সালমান শাহকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
দীর্ঘ ২৯ বছর পর অভিনেতা সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়। গত ২০ অক্টোবর সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলাকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের নির্দেশ দেন আদালত। মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেওয়া নির্দেশের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম।
সালমান শাহ হত্যা মামলায় সর্বমোট ১১ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যা মামলায় প্রধান আসামি নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। অন্য ১০ আসামিরা হলেন প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রিজভী আহমেদ ফরহাদ।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আদালতে এ হত্যা মামলায় বাদী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ।
এর আগে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর তদন্ত থেকে র্যাবকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৬ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
পরে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়।
টাস্কফোর্সের অন্য তিন সদস্য হলেন-পুলিশ সদর দপ্তর ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ থেকে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার একজন করে দুজন এবং র্যাব থেকে পরিচালক পদমর্যাদার একজন।
তবে ৬ এপ্রিল উচ্চ আদালতে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর ২২ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আরও ছয় মাস সময় দেওয়া হয়। তার ধারাবাহিকতায় রিট আবেদনটি আবার কার্যতালিকায় ওঠে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। একই সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর।
দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।
এদিকে এ মামলার বাদী পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আইনজীবী শিশির মনিরকে নিযুক্ত করা হয়। ২০১২ সালে হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত ও আসামি গ্রেফতার নিয়ে জনস্বার্থে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। সেই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জারি করা রুলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, সাগর-রুনি মামলার তদন্ত সঠিকভাবে করা এবং আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য ২০১২ সালে আমরা একটা রিট দায়ের করেছিলাম। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছিল। রুলে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল। এরপর আমাদের পৃথক একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত র্যাবের কাছে চলে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই মামলার চূড়ান্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অতীতের ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দলটি ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত যত ভুল করেছে, তার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘৪৭ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যে যেখানে যত কষ্ট পেয়েছেন আমরা বিনাশর্তে তাদের কাছে মাফ চাই।
জামায়াত আমির বলেন, এই এপোলজি (ক্ষমা প্রার্থনা) কমপক্ষে তিনবার চেয়েছি। অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং আমিও চেয়েছি। কিছুদিন আগে এ টি এম আজহার যখন জেল থেকে মুক্তি পেলেন তখনো বলেছি। শুধু এখন নয়, ’৪৭ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা কেউ যদি কোনো কষ্ট পান, কারো কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে, আমি সব ব্যক্তি এবং সংগঠনের পক্ষে নিঃশর্তে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই, আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা ভুল করি নাই বলব কিভাবে।
আমাদের ১০০টার মধ্যে ৯৯টা সিদ্ধান্ত সঠিক, একটা তো বেঠিক হতে পারে। সেই বেঠিক একটা সিদ্ধান্তের জন্য জাতির ক্ষতি হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে আমার কোনো সিদ্ধান্তের জন্য যদি জাতির ক্ষতি হয়, তাহলে আমার মাফ চাইতে অসুবিধা কোথায়।
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই পিআরসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গণভোট করতে হবে।
ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী সংখ্যালঘুরা নির্বিঘ্নে থাকবে।
জুলাই জাতীয় সনদকে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দেওয়ার ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, রাষ্ট্র আবেগের ওপর চলে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ইউট্যাব আয়োজিত ‘২৪ জুলাই গণঅভ্যুত্থান: তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক এক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যদিও কেউ বলছে যে, জুলাই গণঅভ্যত্থানের জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী এখন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সেই আইনটা, আদেশটা জারি করতে পারেন। সেটা বৈপ্লবিক কথা, ইমোশনাল কথা, রাষ্ট্র কোনো ইমোশনের ওপরে চলে না। রাষ্ট্র আইনকানুন, বিধিবিধান, নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে চলে।’
গত ১৭ আগস্ট জুলাই সনদ সই হলেও কীভাবে তা বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে এখনও সুপারিশ দেয়নি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত বুধবার এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার আবার তাদের পরাশর্ম নেবে কমিশন, তার আগে কমিশন সদস্যরা নিজেরা বৈঠক করবেন।
সুপারিশের প্রাথমিক খসড়ার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে— জুলাই সনদ বাস্তাবায়নে একটি আদেশ জারি করা হবে। সনদের অধীনে গণভোট নিয়ে একটি অধ্যাদেশ করা হবে।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমি কালকে বলতে শুনলাম যে, এটা ‘এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অর্ডার’ করে জাতীয় সনদ জারি করতে পারে এবং সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে বলা হচ্ছে যে, প্রধান উপদেষ্টা এটা জারি করতে পারেন।’
তবে প্রধান উপদেষ্টার ‘আইন জারির কোনো অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে নেই’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘অযৌক্তিকভাবে কেউ যদি বলে যে, এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অর্ডার করে এই সনদকে জারি করতে হবে।...প্রধান উপদেষ্টা তো সরকার প্রধান। সরকার প্রধানের আইন জারি করার কোনো রাইট আমাদের কনস্টিটিউশনে নেই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘যার জারি করার কথা, তিনি জারি করলেন না, যথাযথ কর্তৃপক্ষ জারি করল না, সেই বিতর্ক যাতে ভবিষ্যতে না ওঠে, সে জন্য আমরা যেন পলিটিক্যাল ইমোশন থেকে সরে আসি। এ আহ্বান আমি সব পক্ষকে জানাব।’
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল বলেছে, জনমতের চাপে অবশেষে বিএনপি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবে একমত হয়েছে। অথচ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব বিএনপির ছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকি সবাই এ (গণভোট) প্রস্তাবে একমত হয়। আমি দুটি রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ করছি না। তবে দুটি দলের একটি জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে গিয়েছে। অপর একটি রাজনৈতিক দল এখন জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে। তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। সে বিষয়ে আলাপ–আলোচনা এখন যে পর্যায়ে হচ্ছে, আমি আশা করি, হয়তো তাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে একটা যৌক্তিক সমাধানও আসবে।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি দরকার হলো আমাদের মানসিক সংস্কার। আমরা ঐকমত্য কমিশনে আইনি সংস্কার, সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে কথা বলছি। যত সংস্কারই আমরা করি না কেন, জাতীয় ভিত্তিতে যদি আমাদের মানিসক সংস্কার না হয়, সেই আইনি ভিত্তিকে আমরা বাস্তবে রূপ দিতে পারব না। এটা মোদ্দাকথা।’
জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে ১৭ অক্টোবর। তবে ওই অনুষ্ঠানে যায়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
পাঁচশ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক সোনামসজিদ। মধ্যযুগীয় সুলতানি স্থাপত্যশৈলীর এই নিদর্শনটি শুধু ইতিহাসপ্রেমী নয়, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছেও এক অনন্য আকর্ষণ।
সোনামসজিদটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামে অবস্থিত। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বিশ্বরোড মোড় থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। যাতায়াতের জন্য বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি বা অটোরিকশা সহজলভ্য।
মসজিদটি নির্মিত হয় বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রি.) শাসনামলে। প্রধান প্রবেশপথের শিলালিপি অনুযায়ী, জনৈক মজলিস-ই-মাজালিস মজলিস মনসুর ওয়ালী মুহাম্মদ বিন আলী এটি নির্মাণ করেন।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার এটি পুনঃনির্মাণ করে। ইটের তৈরি এই মসজিদের ওপর পাথরের স্তর বসানো হয়েছে।
বাইরের পরিমাপ ৮২ ফুট দ্ধ ৫২.৫ ফুট, ভেতরের পরিমাপ ৭০ ফুট ৪ ইঞ্চি দ্ধ ৪০ ফুট ৯ ইঞ্চি এবং উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। এতে রয়েছে তিনটি মাঝারি গম্বুজ, ছয়টি করে পাশের গোলাকার গম্বুজ এবং তিনটি চৌচালা গম্বুজ—যা স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য।
চারদিকে চারটি অষ্টকোণাকৃতির বুরুজ, প্রবেশপথে তোরণ, দেয়ালে খোদাইকৃত পাথরের কারুকার্য ও ইটের সজ্জা ইতিহাসপ্রেমীদের মুগ্ধ করে। মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ও শহীদ মেজর নাজমুল হক টুলুর কবর, যা দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।
পর্যটকরা এখানে এসে নামাজ আদায়সহ আশপাশের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখেন। বগুড়ার কায়েস আলী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সোনামসজিদের গল্প শুনেছি, আজ নিজ চোখে দেখে খুব ভালো লাগলো।’
রাজশাহীর মাইনুল ইসলাম দিপু বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এখানে আসার ইচ্ছে ছিল। সবকিছু দেখে আনন্দিত হলাম।’
সোনামসজিদের আশপাশে রয়েছে দারাসবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা, খঞ্জন দিঘির মসজিদ, তহখানা কমপ্লেক্স, তিন গম্বুজ মসজিদ, শাহ নিয়ামতউল্লাহর মাজার ও ধনিয়াচক মসজিদ—যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।
স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কে ভারী যানবাহনের গতিবেগের কারণে মসজিদে কম্পন অনুভূত হয়, যা স্থাপনাটিকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, ‘পুরাতন মসজিদ কোনো ক্ষতি না হয়, সেই আশঙ্কা থাকেই।’
শাহবাজপুর ইউনিয়নের কবির আলী জানান, পর্যটকরা সড়ক, টয়লেট ও বিশ্রামাগারের অভাবে সমস্যায় পড়েন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আসিফ বলেন, ‘সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য ৪৮১ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। মসজিদের সামনে ঢালাই ও উন্নত প্রযুক্তির কাঁচের দেওয়াল নির্মাণ করা হবে, যাতে কম্পনের কারণে কোনো ক্ষতি না হয়।’
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজাহার আলী বলেন, ‘সোনামসজিদসহ অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
৫০০ বছরের গৌরবময় ইতিহাসের ধারক এই সোনামসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পর্যটনের এক উজ্জ্বল প্রতীক। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটি চিরকালই এক অপূর্ব দর্শনীয় স্থান হিসেবে সমাদৃত থাকবে।
সূত্র: বাসস
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল-১-এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তি খণ্ডন শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তারা উভয়েই দুই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে সমাপনী বক্তব্য দেন রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী আমির হোসেন।
এ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকেও আসামি করা হয়েছে। তবে নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ ও মঈনুল করিম। টানা পাঁচ দিনের যুক্তিতর্কে একাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগের ইতিহাসসহ ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলের চিত্র তুলে ধরেন প্রসিকিউশন। গুম-খুন, হত্যাকাণ্ডের বর্ণনাও দেওয়া হয়। উপস্থাপন করা হয় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত।
মামলার মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার কার্যক্রম সম্পন্ন হয় ৮ অক্টোবর। গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান কামাল ও চৌধুরী মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছেন প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার। জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
মন্তব্য