‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ: প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিশাল অর্জন’ শীর্ষক লাইভ ওয়েবিনার করেছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ। এতে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উপ উপাচার্য ড. শেখ মামুন খালেদ এবং ট্রাস্টি বোর্ডের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এ আরাফাত।
সুবিধা হারালেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই: মির্জ্জা আজিজ
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কারণে ২০২৬ সালের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের কিছু সুবিধা হারানোর শঙ্কা থাকলেও উদ্বেগের কিছু দেখছেন না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।
‘কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে সেটি মোকাবিলার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। এখন দরকার পরিকল্পনা নিয়ে সময়াবদ্ধ কর্মসূচির মাধ্যমে কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেদের সক্ষম করে তোলা। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বৈষম্য কমিয়ে সুষম প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা।’
যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে বাংলাদেশ সেসব ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবে বলে বিশ্বাস দেশের শীর্ষ পর্যায়ের এই অর্থনীতিবিদের।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীলে উত্তরণের প্রথম সুপারিশ পেয়েছিল তখনই বলেছিলাম, আমাদের অর্থনৈতিক যে সক্ষমতা সেটা ২০২১ সালের চূড়ান্ত রিভিউতেও অটুট থাকবে। এখন আমি আশাবাদী, উন্নয়নশীলের যে চ্যালেঞ্জ আসবে সেটাও আমরা মোকাবিলা করতে পারব। এ নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই: আহসান মনসুর
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী সময় মোকাবিলা এবং দেশকে আরও এগিয়ে নিতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
‘উন্নয়নশীলের চূড়ান্ত ধাপ সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে হলে অনেক কিছুর সঙ্গেই আপস করতে হবে। সুরক্ষা নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে উদার বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করতে হবে।’
পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালকের মতে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে বাংলাদেশ যে পর্যায়ে এসেছে সেটি সত্যিই গর্বের বিষয়। কারণ, এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ঘটনা বৈশ্বিক উন্নয়নে অনেক বড় বিষয়। এ অর্জন কারও একার নয়। দেশের আপামর জনগণের।
আহসান মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ যে ধারাবাহিক গতিতে এগোচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যেই আমরা এলডিসি থেকে বের হতে পারতাম। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি অতিরিক্ত সুরক্ষা নীতি ও সক্ষমতার অভাবে। এখন ২০২৬ সালের পর আমরা চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাব। দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই।’
বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং বাড়বে: মোস্তাফিজুর
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের যে ব্র্যান্ডিং হবে তাতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এর ফলে যে ব্র্যান্ডিং হবে তার কারণে আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থা আছে বা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিংয়ের কথা বলি, সরকার কোনো সলভেন্ট বন্ড ইত্যাদি যদি রেইজ করতে চায় তাহলে সেগুলোতে রিস্ক পারসেপশান মিলে… ইতিবাচক ফলাফল পাব বলে আশা করি।’
চারটি অভিঘাতের সম্ভাবনা তুলে ধরেন মোস্তাফিজুর। বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের বাজার সুবিধা। দ্বিতীয়ত, অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক সে সম্পর্কের মধ্যে একটা পরিবর্তন হবে। তৃতীয়ত, আমাদের অভ্যন্তরীণ নিজস্ব নীতিমালার ওপর প্রভাব। চতুর্থত, এনভায়রনমেন্ট বা যেগুলোতে শৈথিল্য আছে সেখানে আমাদের অনেক বড় পরিবর্তন হবে।
‘ওই নিয়ম নীতিগুলো যদি আমরা মেনে না চলি, তাহলে আমাদের ডব্লিউটিওতে যে ডিসপিউট সেটলমেন্ট বডি আছে সেখানে অন্যান্য দেশ আমাদের বিরুদ্ধে কেইস নিয়ে আসতে পারে এবং সেটার ফলে নেতিবাচক একটা প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে পারে।’
মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ডলার কঠিন নয়: শিবলী রুবাইয়াত
বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হবে না বলে মনে করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সবাই চাই ভালোর দিকে যেতে। মাথাপিছু আয় সাড়ে পাঁচশ ডলার ১২ বছরের মধ্যে চারগুণ বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। এই প্রবণতা ধরে রাখা গেলে এটা পাঁচ হাজার ডলারে অর্জন করা কঠিন হবে না।’
মাথাপিছু আয় বাড়লে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে আরও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে বলেও জানান দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান। বলেন, ‘এখন থেকেই দক্ষতা বাড়াতে হবে। পণ্যের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। উৎপাদনশীলতা নির্ভর অর্থনীতিতে যেতে হবে। মানব সম্পদের দক্ষাতার বিষয়ে নজর দিতে হবে।
‘উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে পণ্যের খরচ কমিয়ে আনা জরুরি। এটা নিশ্চিত করতে পারলে শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করলেও কোনো অসুবিধা হবে না। সেজন্য অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে হবে।’
পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই: মামুন খালেদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির নানা চিত্র তুলে ধরেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উপ উপাচার্য ড. শেখ মামুন খালেদ। তার মতে, এখন কেবল এগিয়ে যেতে হবে। পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘এখন ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে কী কী প্যারামিটার অর্জন করতে হবে সেদিকে নজর দিতে হবে। মানুষ এগিযে যাবে, কখনও পিছিয়ে যেতে পারে না। পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী দিন বদলের যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সেটা করতে পেরেছেন বলে মন্তব্য করেন মামুন খালেদ। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছেন। কারণ তিনি জানেন বাংলাদেশকে যদি ডিজটাল না করা হয়, তাহলে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়ব।
‘সেজন্য তিনি টেকনোলজি ফ্রেন্ডলি দেশ হিসেবে পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার যে লিডারশিপ সেটা প্রধানমন্ত্রীর আছে। এজন্য তিনি পেরেছেন।’
এক লাফে দেশ সমৃদ্ধ হবে না: এ আরাফাত
বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে হবে; সেখানে এক লাফে যাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এ আরাফাত।
তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ আছে বলে আমরা এগিয়ে যাব না, সেটি আমরা মনে করি না। এগিয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য মর্যাদার এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও বড় অপরচুনিটি।’
উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে হলে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হয় জানিয়ে এ আরাফাত বলেন, ‘২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার আমাদের যে গোল, আমরা কিন্তু এক লাফে সেখানে যেতে পারব না। আমাদের কিন্তু প্রসেসে যেতে হবে। কাজেই আমাদের স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল হতে হবে, সেখান থেকে গ্র্যাজুয়েলি উন্নত দেশের কাতারে যেতে হবে।’
বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ: চৌধুরী নাফিজ সরাফাত
আলোচনায় অংশ নেয়া সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘যে বাংলাদেশ এক সময় পরিচিত ছিল বন্যাকবলিত, দারিদ্রপীড়িত দেশ হিসেবে, সেই দেশই এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল; অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। এটা কেবলই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী এবং জাদুকরি নেতৃত্বের কারণে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কনসেপ্ট বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। কোভিড সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব তাকে জায়গা করে দিয়েছে বিশ্বের সেরা ৩ নেতার কাতারে। তার হাত ধরেই আজ আমরা স্বল্পোন্নত দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।’
বক্তব্যে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত জানান, জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির তিনটি সূচকেই পাসের চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে বাংলাদেশ। এই তিনটি সূচক হলো- মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য তিনটি সূচকের যে কোনো দুটি অর্জনের শর্ত ছিল। তবে তিনটিতেই উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ‘এক সময় যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ দিত, তারাই এখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে এক যুগে বদলে গেছে বাংলাদেশ, বিশ্ব দরবারে জায়গা করে নিয়েছে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে।
‘আর এই অর্জনের কাণ্ডারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছে নয়, বিশ্বের কাছেই এখন তার পরিচিতি- দারিদ্র্য দূরীকরণের জাদুকর।’
আরও পড়ুন:
৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুশফিকুর রহমান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম শাহাবুদ্দিন।
প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দিয়েছেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ তুলে দেবেন।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান রবিবার যে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন, তাতে বলা হয়, ‘সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করল। ছুটিকালীন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
‘তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
‘জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:চলতি বছর ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এ বছর কারা ও কতজন এ পুরস্কার পাচ্ছেন, তা জানাননি উপদেষ্টা।
সচিবালয়ে রবিবার স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি উল্লিখিত বক্তব্য দেন।
উপদেষ্টা বলেন, কমিটি কিছু নাম সুপারিশ করেছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নামের তালিকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হবে।
দেশের জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ব্যতিক্রমী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওই সময়ে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এর আগে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগত ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। র্যাবের মতো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকেও দেশের সর্বোচ্চ এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর ১০ জনের কম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য