চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে হঠাৎ করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিসহ দামি শেয়ারের দরে দৌরাত্ম্য দেখা গেছে। বুধবারও তা অব্যাহত ছিল। এসব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে লাফিয়ে।
মূল্য সংবেদনশীন কোনো তথ্য না থাকলেও কেন বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ারের পেছনে ছুটছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বুধবার এসব কোম্পানি লেনদেনে এগিয়ে না থাকলেও শেয়ারপ্রতি দর বৃদ্ধিতে ছিল এগিয়ে। তবে আগের দিনের সূচকের পতন অব্যাহত ছিল। কমেছে তালিকাভুক্ত সবচেয়ে ভালো কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ এর সূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনও।
মঙ্গলবার হাজার কোটি টাকার লেনদেন বিনিয়োগকারীদের নতুন স্বপ্ন দেখালেও তা টেকেনি বুধবার। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মুনাফা হলেই শেয়ার বিক্রি করে দেয়ায় বড় লেনদেন হচ্ছে না। তবে সূচক এখন সাড়ে পাঁচ হাজারে অবস্থান করায় এ ধরনের পতনকে সাময়িক বলেছেন তারা।
দামি ও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার
গত রোববার থেকে বাড়তে থাকা বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া দামি শেয়ারের দরও বেড়েছে। তালিকাভুক্ত রেকিড বেনকিউজার, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, ম্যারিকো, বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, লিন্ডে বিডিসহ দামি শেয়ার ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির মতো কোম্পানির প্রতি আগ্রহী ছিলেন বিনিয়োগকারীরা।
কেন বাড়ছে এসব কোম্পানির শেয়ার দর, প্রশ্নে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে গুজব আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য বলবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব কটি বহুজাতিক কোম্পানি স্বল্প মূলধনি।’
তিনি জানান, সম্প্রতি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০ শতাংশ বোনাস ল্ভ্যাংশ ঘোষণা করে তাদের পরিশোধিত মূলধন ৫৪০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে।
দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘মূলত এ কারণেই হঠাৎ করে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা হওয়া উচিত বলেও মনে করি না। কারণ, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের শাখা অফিসের মাধ্যমে ব্যবসা করে। অনেকগুলো আছে যাদের নিজস্ব কোনো উৎপাদন কারখানা নেই। ফলে এসব কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে আসলে কি করবে?’
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি রেকিড বেনকিউজারের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ১২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৪ হাজার ৪৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৯৬ টাকায়। কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ।
ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেডে বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে দশমিক ৪৩ শতাংশ। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১২ কোটি টাকার কিছু বেশি। কোম্পানিটি সবশেষ ২০১৯ সালে ৫৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩ হাজার ১৪১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ উঠেছে ৩ হাজার ৩৪০ টাকায়।
ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডে পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই কোম্পানির শেয়ারদরও গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাড়ছে। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ২ হাজার ৮৮ টাকা থেকে ২ হাজার ১৪৬ টাকায় উঠেছে।
বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ১০০ শতাংশ বা ১টি শেয়ারের বিপরীতে ১টি শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করেছে। এবং ২০২০ জন্য কোম্পানিটি ২৯৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
দামি শেয়ারের মধ্যে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। বুধবার কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৯২ টাকায়।
রেনেটা লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৯৫ টাকায়। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৯৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
লেনদেনে যারা এগিয়ে
বুধবার সূচক ও লেনদেন কমলেও কোম্পানিভিত্তিক লেনদেনে এগিয় ছিল রবি, সামিট পাওয়ার, লাফার্জহোলসিম, এসএস স্টিল, বেক্সিমকো।
বুধবার রবির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ১২ হাজার ১২৫টির, যার বাজারমূল্য ছিল ৫৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
শেয়ার লেনদেনের দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও টাকার অঙ্কে শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। বুধবার বেক্সিমকো লিমিটেডের ৮৭ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকায়।
লাফার্জহোলসিম লিমিটেডের লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার। সামিট পাওয়ার লিমিটেডের ৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের মোট ৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দিনের সর্বোচ্চ দরে নতুন কোম্পানির শেয়ার
৯ মার্চ থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করেছে লুব রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড। দ্বিতীয় দিনেও কোম্পানিটির শেয়ারদর ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
নতুন কোম্পানির ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রথম দুদিন শেয়ার দর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার সুযোগ থাকে। তৃতীয় দিন থেকে স্বাভাবিক নিয়মে ১০ শতাংশ করে বাড়তে পারে শেয়ারদর। এ হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিক লেনদেনে যাচ্ছে কোম্পানিটি।
বুধবার কোম্পানিটির ১ কোটি ৩২ লাখ ১৩ হাজার ২৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়। মঙ্গলবার কোম্পানিটির মাত্র ৪২১টি শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করেছে ইজেনারেশন লিমিটেড। মাত্র সাত কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর দিনের সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়ে ১০ টাকার শেয়ার পৌঁছেছে ৩৯ টাকা ৪০ পয়সায়। এখন কিছুটা উত্থান-পতন থাকলেও দর কমে আসার প্রবণতাই বেশি। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৩৭ টাকা ২০ পয়সায়।
তালিকাভুক্ত হওয়ার পরপরই বিনিয়োগকারীদের প্রবল আগ্রহের কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে যখন শেয়ার সরবরাহ বাড়ে তখন উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে লোকসান গুনতে হয়।
গত চার মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া রবি, এনার্জিপ্যাক, ডমিনোস স্টিল ও ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ার উচ্চমূল্যে কিনে এখন লোকসান গুনছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিশ্লেষক বক্তব্য
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু না। হাজার কোটি টাকায় লেনদেনের দিন যারা শেয়ার কিনেছে তারা বুধবার শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। তবে কিনতে পারবে।’
তার মতে, এটা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো যে উত্থানপতনের মধ্যেই সূচক সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টে আছে। এখানে হঠাৎ করে কোনো বড় ধরনের পতন হয়নি। আগের যেমন কয়েক দিন পুঁজিবাজার ভালো থাকার পর শেয়ার বিক্রির চাপে এক দিনেই শত পয়েন্ট সূচকের পতন হতো।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬৩ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৩ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস ৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৯ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৭৯ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এ হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৬৪ কোটি টাকা।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে সবচেয়ে কম কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। মাত্র ৬৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে লেনদেন। দর কমেছে ১৭৩টির আর পালটায়নি ১১৪টির।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৮৩ দশমিক ০৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৭৩ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ২২৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ১১৬টির ও পালটায়নি ৬০টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৬৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
আগ্রহ ও অনাগ্রহের কোম্পানি
বুধবার ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এসএস স্ট্রিল লিমিটেডের ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা ৯০ পয়সা।
তবে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল সদ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানি লুব রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড। লেনদেনের দ্বিতীয় দিনে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দর বেড়েছে।
তৃতীয় স্থানে ছিল রহিমাফুড, যার শেয়ারদর বেড়েছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার ১৯৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২১১ টাকা ৯০ পয়সা। এ ছাড়া এ তালিকায় ছিল বিকন ফার্মা, বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ, ফরচুন, লিব্রা ইনফিউশন, এক্টিভফাইন, ওয়ালটন ও লিন্ডে বিডি।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়ার ফিন্যান্স লিমিটেড, এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৪ টাকা। দর কমেছে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ ছাড়া সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের শেয়ারদর কমেছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এ তালিকায় আছে এশিয়া প্যাসিফিক ইনস্যুরেন্স, সাভার রিফ্যাক্টরিস, শাইনপুকুর সিরামিক, ইজেনারেশন লিমিটেড, মাইডাস ফিন্যান্স।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য