এক মাসের কম সময়ে আবার হাজার কোটি টাকা লেনদেন দেখল পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীরা। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে সোমবার পর্যন্ত পুঁজিবাজারের টানা সূচক বেড়েছে। তবে লেনদেনে স্থিতাবস্থা ছিল সাতশ থেকে আটশ কোটি টাকায়।
মঙ্গলবার সেই সে ধারা ভেঙে হাজার কোটি টাকা লেনদেন সামনে আসলো বিনিয়োগকারীদের।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সপ্তাহের ব্যবধানে অনেক কোম্পানির শেয়ার দর তলানিতে নেমে এসেছিল। একই সঙ্গে লেনদেনের শীর্ষে থাকা অনেক কোম্পানির শেয়ার দর কমে আসায় এখন আবার নতুন করে সেগুলোতে বিনিয়োগ হচ্ছে। ফলে বাড়ছে লেনদেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে লেনদেনে গতি হারিয়ে ফেলে বেক্সিমকো লিমিটেড ও রবি আজিয়াটা। মঙ্গলবার আবারও এ দুই কোম্পানিগুলো স্বপদে ফিরে আসে।
একই সঙ্গে দামি শেয়ারের দাপট মঙ্গলবারও অব্যাহত ছিল। সদ্য লেনদেন শুরু হওয়া লুব রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের শেয়ার দরও আগের নতুন কোম্পানিগুলোর মতো দিনের সর্বোচ্চ বেড়েছে।
লেনদেন
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৮২ কোটি টাকা।
লেনদেনে হঠাৎ এমন গতি নতুন করে আস্থায় ফিরেছে বিনিয়োগকারীরা। সোমবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারের ইস্যু ব্যবস্থাপকদের নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ কড়া ভাষা জেড ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করেন। বলেন, জেড ক্যাটাগরিতে পড়ে থেকে ফায়দা লোটার দিন নেই।
যে কোম্পানি পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত হবে সে কোম্পানিকে অবশ্যই সকল আইন কানুন মেনে পুঁজিবাজারে থাকতে হবে।
সেমিনারে মার্চেন্ট ব্যাংকের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছাইদুর রহমানও পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগসহ ইস্যু ব্যবস্থাপকদের আরও দায়িত্বশীল হয়ে কার্যক্রম চালানোর পরমার্শ দেন।
এছাড়া ডিসেম্বর অর্থ বছর শেষ হওয়া কোম্পানিগুলো এখন লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। ফলে পুঁজিবাজারের প্রতি এ সময়টিতে বেশি আগ্রহ থাকে বিনিয়োগাকরীদের।
বাজারে গুজবও আছে এ বছর ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা কোম্পানিগুলো করোনা সময় ব্যয় কম হওয়ায় তাদের আয় বেশি হবে। তাই লভ্যাংশও বেশি পাওয়া যাবে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে সীমা বেধে দিলেও বর্তমানে ব্যাংকের শেয়ারের যে দর আছে তাতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ আর ১৫ শতাংশ বোনাসেও ভালো রিটার্ন পাবে বিনিয়োগকারীরা এমন মন্তব্যও করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, লেনদেন হঠাৎ বাড়ার পেছনে কারণ হচ্ছে এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো লভ্যাংশ দেবে। বিমা কোম্পানিগুলোও লভ্যাংশ দেবার দ্বার প্রান্তে। এর কারণেই মূলত বিনিয়োগকারীরা এখন নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে লেনদেন কম হওয়ায় অনেক কোম্পানির শেয়ার দর কমেছিল। এখন সেগুলোতেও নতুন বিনিয়োগ উপযোগী হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সবশেষ লেনদেনের চিত্র।
লেনদেনের ২১ শতাংশ বেক্সিমকো রবির
সপ্তাহের শুরুতে গতি হারিয়ে ফেলা বেক্সিমকো লিমিটেড ও রবি আজিয়াটা মঙ্গলবার আবারও উঠে এসেছে লেনদেনের শীর্ষ তালিকায়। এদিন বেক্সিমকো লিমিটেডের ১ কোটি ৬৮ লাখ ৮২ হাজার ৪২৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪২ কোটি ৭২ লাখ টাকায়।
এছাড়া রবি আজিয়াটার ২ কোটি ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭২৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৯ কোটি ৬ লাখ টাকায়। মঙ্গলবার মোট লেনদেনে এই দুই কোম্পানির অংশগ্রহণ ছিল ২১ শতাংশ।
বেতার তরঙ্গ নিলামে গ্রামীণফোন (জিপি) ও রবি আজিয়াটার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে সফল হয়েছে গ্রামীণফোন। ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে শেষ নয় নম্বর ব্লকে ৫ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গ প্রতি মেগাহার্টজ ৪৬ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলারে কিনে নিয়েছে গ্রামীণফোন। নিলামে রবি পিছিয়ে থাকলেও পুঁজিবাজারে গ্রামীণফোন ও রবির লড়াই এখনও চলছে।
বলা হচ্ছে, গ্রামীণফোনের শেয়ার প্রতি দরের কাছাকাছি যাবে রবি। এ নিয়ে ফেইসবুকভিত্তিক পুঁজিবাজার গ্রুপে প্রায়শ উঠে আসে বিভিন্ন পোস্ট।
মঙ্গলবার রবির শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৪০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৫২ টাকা ৪০ পয়সা। আগের দিন যা ছিল ৫০ টাকা। তবে এদিন গ্রামীণফোনের শেয়ার দর কমেছে ২ টাকা ৯০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৩৪৯ টাকায়।
গত তিন চার মাসে বেক্সিমকো লিমিটেডের পিপিই পার্ক স্থাপন, সুকুক বন্ড ছেড়ে তিন হাজার কোটি টাকা উত্তলনের নানা খবরে এগিয়ে ছিল কোম্পানিটি। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকা ওপরে উঠে। তারপর কিছুটা কমে ৮০ টাকা নামে। মঙ্গলবার আবার ৮০ টাকা থেকে বাড়তে শুরু করে বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৮৪ টাকা ৪০ পয়সায়।
দামি শেয়ারের দাপট অব্যাহত
চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে পুঁজিবাজারে দামি শেয়ারের যে দাপট শুরু হয়েছিল তা মঙ্গলবারও অব্যাহত ছিল। বেড়েছে পুঁজিবাজারে হাজার টাকার ওপর অবহিত মূল্যের শেয়ারের।
মঙ্গলবার রেকিডবেনকিউজারের শেয়ার প্রতি ৪৩ টাকা ৭০ পয়সা বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৭১১ টাকায়। ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেডের শেয়ার প্রতি ৪৬ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮৯২ টাকায়। বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিটি শেয়ারের দর মঙ্গলবার বেড়েছে ১০৬ টাকা ৮০ পয়সা। দিন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮১৬ টাকায়।
দর বেড়েছে ১ হাজার ৩৪৭ টাকায় লেনদেন হওয়া লিন্ডে বিডির। ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির প্রতিটি শেয়ার দর ৩৭ টাকা বেড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৭৫ টাকায়।
কেন বাড়ছে দামি শেয়ারের দর এমন উত্তরে আবু আহমেদ বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রতি বছরই বিনিয়াগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। এতে এসব কোম্পানির প্রতি আস্থা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এছাড়া দর কিছুটা কম থাকায় এসব কোম্পানির প্রতি আগ্রহও তৈরি হয়েছে।’
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১২ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৯১ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক দশমিক ৯২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৬ পয়েন্ট। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৫ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭২১ কোটি টাকা। এতে একদিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৩২২ কোটি টাকা।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৮০টির, কমেছে ২৪৪টির ও পাল্টায়নি ১২১টির।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএএসপিআই ৬ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৬৮ পয়েন্টে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৪২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৩টির, কমেছে ৯৬টির, ও দর পাল্টায়নি ৬৩টির। এদিন সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।
আগ্রহ ও অনাগ্রহের কোম্পানি
মঙ্গলবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল লুব রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড। লেনদেনের শুরুর দিনে কোম্পানিটির মাত্র ৫টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৭ টাকায় লেনদেন শুরু হওয়া এই কোম্পানির দিনের সর্বোচ্চ দর ৪০ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে।
এছাড়া দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে ছিল রহিমাফুড, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এছাড়া এ তালিকায় ছিল জিকিউ বলপেন, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৬ দশমিক ০২ শতাংশ, পেনিন সুলার চট্টগ্রাম লিমিটেড শেয়ার দর বেড়েছে ৫ দশমিক ১১ শতাংশ।
লাফার্জ হোলসিম, রবি, গোল্ডেনসন ও শাইনপুকুর ছিল দর বৃদ্ধির পাওয়া শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায়।
লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে সোমবার গ্রিন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লেনদেন বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার লেনদেন শুরু হওয়ায় এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দরে কোনো সার্কিট ব্রেকার ছিল না। ফলে এদিন কোম্পানির শেয়ার কমেছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
২০২০ সালে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে পরিচালনা পর্ষদ মোট ৩১ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যার ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ ও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বোনাস।
এছাড়া ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্স ফান্ডের ইউনিটি প্রতি দর কমেছে ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া এ তালিকায় ছিল প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড।
আরও পড়ুন:ভাষাসৈনিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আহমদ রফিক ছিলেন ভাষা আন্দোলনের এক অগ্রগণ্য সাক্ষী ও সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন অনন্য কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রবীন্দ্রতত্ত্বচর্চার দিশারি। শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন।
রবীন্দ্রচর্চার ক্ষেত্রে তার অবদান দুই বাংলায় সমানভাবে শ্রদ্ধার আসন পেয়েছে। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছে, যা তাঁর বিদগ্ধতার স্বীকৃতি।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দেশের সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার জগতে আহমদ রফিকের প্রয়াণ এক অপূরণীয় ক্ষতি। দৃষ্টিশক্তি ও শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি শেষ দিন পর্যন্ত জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে গেছেন।’
মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, ‘আহমদ রফিকের জীবন ও কর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে তাকে স্মরণ করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, শুভানুধ্যায়ী ও সাহিত্য-সংস্কৃতিমনা জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনো চেপে বৃষ্টি। গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দিন একই অবস্থা ছিল। ফলে সাগরে জোয়ার ও ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বাতাসের গতিবেগ।
এই বৈরী পরিবেশ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের দমাতে পারেনি। শারদীয় দুর্গোৎসব ও টানা চারদিনের ছুটিকে ঘিরে পর্যটকদের ঢল নেমেছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে। ছুটির এ সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভ্রমণপিপাসুদের আগমনে জমজমাট হয়ে উঠেছে সৈকত শহরের হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসা।
সমুদ্রস্নান, পাহাড় ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটকরা। যদিও নিম্নচাপের কারণে দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি কিছুটা ভ্রমণে বিঘ্ন ঘটিয়েছে, তবে অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে উপভোগ করছেন ভিন্নধর্মী আনন্দ।
শহরের কলাতলী, লাবণী, সুগন্ধা, দরিয়ানগর ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী ও টেকনাফ এলাকায় পর্যটকদের চোখে পড়ার মতো ভিড় দেখা যাচ্ছে। হোটেল-মোটেলের বেশিরভাগ রুম ইতোমধ্যে বুকড হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক অগ্রিম বুকিং না করায় বিপাকে পড়েছেন।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ সময়ে পর্যটকদের আগমন অর্থনৈতিকভাবে স্বস্তি দিলেও অব্যবস্থাপনা, যানজট এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় অনেক পর্যটক ভোগান্তির মুখে পড়ছেন।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড সদস্যরা সমন্বিত টহল দিচ্ছেন। শিশু হারানো রোধে চালু হয়েছে বিশেষ হেল্পডেস্ক। যানজট নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ, তবে শহরের কিছু অংশে যানবাহন চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বিমান সংস্থা বাড়তি ফ্লাইট চালু করেছে। পাশাপাশি রেলও চালু করেছে বিশেষ ট্রেন, এবং বাস সংস্থাগুলোরও অতিরিক্ত ট্রিপ রয়েছে। তবে মহাসড়কে যানজট ভ্রমণকে কিছুটা ক্লান্তিকর করে তুলেছে। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ পর্যটকদের জন্য বাড়তি আনন্দের উৎস।
সমুদ্রস্নানে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক রয়েছে লাইফগার্ড দল। পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, এই ছুটিতে কক্সবাজারে কয়েক শত কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, শহর ও আশপাশের এলাকায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুযোগ রয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকদের ব্যাপক সাড়া পর্যটন খাতের জন্য ইতিবাচক বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, বছরে কক্সবাজারে প্রায় ৩০-৪০ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন, যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
এদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে গতকাল সৈকতের লাবণী পয়েন্টে লাখো পর্যটক ও পুণ্যার্থী ভিড় করেন। এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে সৈকতে জড়ো করা হয়। বিকেল ৫টার দিকে পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের শেষে একে একে প্রতিমাগুলো উত্তাল সাগরে ভাসানো হয়।
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর দিনে নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাজধানীসহ সারা দেশের নদী ও পুকুরে চলে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই মণ্ডপগুলোতে ভক্তদের ভিড় দেখা যায়। ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়ে বিজয়ার প্রার্থনা করেন। এরপর শোভাযাত্রা করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জন স্থলে। ঢাক-ঢোল, উলুধ্বনি আর শঙ্খধ্বনিতে মুখর ছিল পরিবেশ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ বলছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর আনন্দ, শান্তিতে পূজা উদযাপন হয়েছে।
সারাদেশে এ বছর ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৫৮ টি। এসব মণ্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে লাগানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা এবং স্বেচ্ছাসেবক কমিটি করা হয় মণ্ডপ পাহারার জন্য।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: দেবী দুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে শুরু হয় একে একে প্রতিমা বিসর্জন। এ সময় বিসর্জন দেখতে মানুষের ঢল নামে। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল।
তবে বৈরী আহাওয়া থাকায় প্রতিমা বিসর্জনে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে ভক্তদের। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ছাড়াও নগরীর পাথরঘাটা গঙ্গাবাড়ি এলাকায় কর্ণফুলীতে, কালুরঘাট এলাকায়, কাট্টলী রানী রাসমনি ঘাটেও প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বৃহম্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ট্রাকবাহী প্রতিমা নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পূজারী ও ভক্তরা জড়ো হতে শুরু করেন পতেঙ্গা সৈকতে। এরপর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের পালা।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মো. সুলতান আহসান উদ্দীন জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সাগরে প্রতিমা বিসর্জন দিচ্ছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ও আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে গত রোববার সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এদিন ধূপধুনচি, পঞ্চপ্রদীপ আর ঢাকের বাদ্যের তালে আসনে অধিষ্ঠিত হন দেবী দুর্গা। বোধনের ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়েই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ৫ দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা।
এবার নগরীর প্রধান পূজামণ্ডপ জেএমসেন হলসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৯২টি পূজামণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় মোট পূজামন্ডপের সংখ্যা ২ হাজার ২০২টি। এর মধ্যে প্রতিমা পূজামন্ডপের সংখ্যা এক হাজার ৫৮৫টি এবং ঘট পূজার সংখ্যা ছিল ৬১৭টি।
গাংনী প্রতিনিধি জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উসৎব দুর্গা পুজা। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি এবারে নির্বিঘ্নে পুজা উদযাপনের লক্ষে সীমান্ত এলাকার পুজামন্ডব গুলোতে টহল সহ নিরাপত্তায় কাজ করছে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন ৪৭ বিজিবি ।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিজয়া দশমীতে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদহ পূজামণ্ডব পরিদর্শন করেন কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি)র সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল আহসান হাবীব পিএসসি, জি।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, লেঃ কর্ণেল মো. মাহবুব মোর্শেদ রহমান পিএসসি, অধিনায়ক কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন ৪৭ বিজিবি, মেজর মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম অতিরিক্ত পরিচালক, কুষ্টিয়া সেক্টর।
পরির্দশনকালে পূজা কমিটির সদস্যদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তাদের হাতে উপহার তুলে দেন।
কর্ণেল আহসান হাবীব পিএসসি, জি, সেক্টর কমান্ডার কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) জানিয়েছেন, বিজিরি মহাপরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনা ছিল, আমরা বিজিবি সদস্যরা সিমান্তের নিকটবর্তী এবং দায়িত্বপূর্ণ এলাকা আছে। সেই জায়গাগুলোতে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করব যাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই বোনেরা উৎসবমুখর পরিবেশে নিবিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পারে। আপনারা জানেন বাংলাদেশে আবহমান কাল থেকেই সুন্দর একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে চলেছে। এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের যে উৎসব আছে সেগুলো উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে পালন করি। ঠিক একই ভাবে এবারো পালন করছি। আমাদের মহাপরিচালকের নির্দেশনা আছে বিজিবি হবে সিমান্তের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। সেই আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক আমরা সবার সাথে মিলে মিশে আপনাদের পাশে আছি। যে কোনো অনুষ্ঠানে দুর্যোগ কিংবা কল্যানে জনগনের সাথে আছি।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোণায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজার মহানবমী অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৫১৪টি পূজামনণ্ডপে দুর্গাপূজার মহানবমীতে ভক্তরা দেবীর পায়ে ফুল, বেরপাতা দিয়ে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করেন। ঢাকেরবাদ্য, উলুধনি, চন্ডীপাঠ, পূজাঅর্চনা ও ভক্তদের উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল মণ্ডপগুলো। এ ছাড়াও প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেবীর প্রতি অঞ্জলি নিবেদনের সময় দেশ ও সমাজের শান্তি, রক্ষায় প্রার্থনা করেন। নেত্রকোনা জেলা শহরসহ উপজেলাগুলোতেও একইভাবে ছিল উৎসবে সরব। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান ও পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানি, জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. আনোয়ারুল হক, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম হিলালিসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন। অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীবৃন্দ বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। পূজাণ্ডপের নিরাপত্তায়, আনসার, সেনা বাহিনী, র্যাব ও বিজিবির টহল দল কাজ করছে।
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষদিন বিজয়া দশমীতে প্রতীমা বিসর্জনকে ঘিরে লাখো মানুষের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। বৃহস্পতিবার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে বিজয়া সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা।
জেলার সাত উপজেলার মণ্ডপের প্রতীমা ট্রাকে করে সৈকতে আনা হয়। পাশাপাশি পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকেও প্রতিমা বহর যোগ দেয়। অন্যদিকে চকরিয়া ও পেকুয়ার প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হয় মাতামুহুরী নদীতে। বিকেল পাঁচটার দিকে মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে প্রতিমাগুলো সাগরে বিসর্জন দেওয়া হয়।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু বলেন, ‘প্রশাসনের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দূর-দূরান্ত থেকে আসা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সাগর তীরে একত্রিত হয়ে মা দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছেন।’
তিন স্তরের নিরাপত্তা: আয়োজনকে ঘিরে সৈকতে ছিল কঠোর নিরাপত্তা। সকাল থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা টহল দেন। জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসন একটি কন্ট্রোল রুমও চালু করে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিতে প্রশাসন সবসময় সচেষ্ট রয়েছে।’
পর্যটকের ঢল: বিজয়া দশমী ও চার দিনের ছুটি ঘিরে কক্সবাজারে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটবে বলে জানিয়েছে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি। সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘হোটেলগুলোর শতভাগ রুম আগেই বুক হয়ে গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়ার জন্য মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতীমা বিসর্জন দেখতে আসা ব্যবসায়ী রাতুল দে বলেন, ‘কক্সবাজারের আয়োজনটাই দেশের সবচেয়ে বড়। মা-কে বিদায় দিতে এসেছি। প্রশাসনের সেবা প্রশংসনীয়।’
এদিকে সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করেছে।
সী সেইফ লাইফ গার্ডের কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘লাইফগার্ড সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। তবে গুপ্তখাল এলাকায় গোসল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পর্যটকদের সচেতন থাকা জরুরি।’
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ‘পূজা এখন সার্বজনিন। সবাই মিলে মিশে বাঙালিয়ানা উৎসব পারন করেছি। এখানে কোনো বেধাবেদ ছিল না, বাঙালি উৎসব পেলেই মাতে। হোক সেটা পূজা কিংবা ঈদ। এবার নিরাপদে নির্বিঘ্নে দূর্গাপূজা পালন হয়েছে। আজসহ বিগত দুই দিনে ২৫টি পূজামণ্ডপ পরিদশর্ন শেষে এসব কথা বলেন বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সদেস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুইয়া। বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জ উপজেলা কায়েত পাড়া ইউনিয়ন নয়া মাটি,দেল পাড়া নাওড়া সহ কয়েকটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন সভাপতি রূপগঞ্জ থানা বিএনপি, কায়েত পাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট গোলজার হোসেন ভুইয়া, আনোয়ার মোল্লা, বকতিয়ার উদ্দিন আহমেদ, ফরিদ আহমেদ যুবরাজ, আমিনুল ইসলাম প্রিন্স ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রূপগঞ্জ থানা যুবদল,নুর হাসান বাবুল সদস্য সচিব রূপগঞ্জ থানা যুবদল, হাজী সেলিম সভাপতি কায়েত পাড়া ইউনিয়ন বিএনপি, মো. কামাল নাছের সভাপতি কায়েত পাড়া ইউনিয়ন যুবদল, মো. মামুন মিয়া সাধারণ সম্পাদক কায়েত পাড়া ইউনিয়ন যুবদল, শিপলু জাহান শান্ত, মো. আবু বকর ছিদ্দিক ভূইয়া সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক কায়েত পাড়া ইউনিয়ন যুবদল,আকতার হোসেন সভাপতি ৫ নং ওয়ার্ড যুবদল,সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক, মো. নাসির উদ্দিন সিনিয়র সহ সভাপতি ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি, ফারুক ভূইয়া সাধারণ সম্পাদক কায়েত পাড়া ইউনিয়ন কৃষক দল,দীল মোহাম্মদ দিলু সাংগঠনিক সম্পাদক ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি,আলি আহমেদ সহ সাধারণ সম্পাদক ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপিসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন, এবং দিপু ভূইয়ার পক্ষ থেকে পূজামণ্ডপগুলোতে নগদ আর্থিক সহযোগিতা করেন মো. মামুন মিয়া।
সিলেট ব্যুরো জানান, পাঁচ দিনের পূজা-অর্চনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সুরমা নদীর তীরে হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে দেবী দুর্গার প্রতিমা বির্সজন দেওয়া হয়। সুরমার তীরজুড়ে ছিল বিষাদের সুর।
গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই বিকেল থেকে ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টার বাজনার তালে তালে বিভিন্ন মন্দির, পাড়া ও মহল্লা থেকে শোভাযাত্রা নেওয়া হয় সুরমার তীরে। পরে নৌকায় নদীর মাঝখানে দেওয়া হয় বিসর্জন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম, এসএমপি পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক, নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মৃত্যঞ্জয় ধর ভোলা, হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সিলেট জেলার আহ্বায়ক ও কল্যাণ ফ্রন্টের ট্রাস্ট্রি সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, সিলেট জেলা হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সিলেট জেলার সদস্য সচিব কল্লোল জ্যোতি বিশ্বাস, মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মলয় লাল ধর, মুন্না ঘোষ, হিরন্ময় দেব, রনি পাল, বাপ্পি বড়ুয়া।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সিলেট জেলা ও মহানগরে ৬১৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সিলেট নগরে সার্বজনীন ১৪২টি ও পারিবারিক ২০টি পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া জেলায় সার্বজনীন ৪২৭টি ও পারিবারিক ২৯টি পূজা হয়।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ নগরীর কাচারিঘাট সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদে আনন্দঘন পরিবেশে মহানগরের সব প্রতিমার বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ।
প্রতিমা বিসর্জন ঘাটে এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতারু উল আলম, র্যাব-১৪ এর মহাপরিচালক মহিবুল ইসলাম খান, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজিদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
বিসর্জনকে ঘিরে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করে। র্যাব সদস্যরা নৌকা নিয়ে নদীতে বিশেষ টহল দেয়।
এ বছর ময়মনসিংহ জেলায় ৭৮১টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই জেলার প্রতিটি উপজেলায় পূজা সম্পন্ন হয়।
ইসরায়েলের জলসীমা থেকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌকা আটকের ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ইউরোপের দেশ ইতালি, গ্রিস, স্পেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড এবং তুরস্ক ছাড়াও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে মালয়েশিয়া, আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশ্ব নেতারা।
ইতালির শহর রোম, নেপলস, মিলান ও তুরিনে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ও ‘সবকিছু বন্ধ করো’ ইত্যাদি স্লোগানে আন্দোলন শুরু হলে রোম এবং নেপলসে মেট্রো স্টেশন এবং রেলস্টেশন বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
গ্রিসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যে, তারা যেন আটক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং কনস্যুলার সুরক্ষার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেয়।
আটক হওয়া আদারা নৌকায় থাকা নবনির্বাচিত আইনপ্রণেতা সেলেস্টে ফিয়েরোকে মুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের বিক্ষোভকারীরা।
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভো ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন,আমাদের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করা, নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়া এবং দ্রুত দেশে ফেরানোই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্তদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আমাদের সকলের জন্যই উদ্বেগের বিষয়।
ফ্লোটিলায় থাকা ফরাসি নাগরিকদের কনস্যুলার সেবা দিতে এবং বিলম্ব ছাড়াই ফ্রান্সে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ফ্লোটিলায় আটক মালয়েশীয় নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
তিনি বলেন, ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে সব ধরনের বৈধ ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইসরায়েল শুধু ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার অগ্রাহ্য করেনি, বরং বৈশ্বিক বিবেককেও পদদলিত করেছে।
একটি ছাড়া ফ্লোটিলার সব জাহাজ আটক, গ্রেপ্তার ৩১৭ স্বেচ্ছাসেবী
গাজা উপত্যকার উদ্দেশে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। অন্তত ৩১৭ জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।
ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজাগামী ত্রাণবাহী ৪৪টি জাহাজের মধ্যে একটি জাহাজ ছাড়া সবগুলোকে আটক করা হয়েছে।
আটক হওয়া কর্মীরা এসেছেন নানা দেশ থেকে—স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল, তুরস্ক, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ৩৭টি দেশের নাগরিক রয়েছেন তাদের মধ্যে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, আটককৃতদের ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নেওয়া হচ্ছে, সেখান থেকে তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে।
ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, মিকেনো নামের একটি জাহাজ গাজার আঞ্চলিক জলসীমায় প্রবেশ করেছিল। তবে উপকূল থেকে মাত্র ৯.৩ নটিক্যাল মাইল দূরে থাকতেই এর সিগন্যাল হারিয়ে যায়।
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, বহু বছরের ইসরায়েলি অবরোধ চ্যালেঞ্জ করতে তারা গাজা অভিমুখে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী তাদের জাহাজ ঘিরে ফেলে।
অ্যাক্টিভিস্টরা জানান, জ্যামিংয়ের কারণে জাহাজগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজ বহরের কাছে পৌঁছে দিক পরিবর্তনের নির্দেশ দিচ্ছে।
‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ব্রেকিং দ্য সিজ অন গাজা’ জানায়, আমরা এখন জায়নিস্ট (ইসরায়েলি) সেনাদের হামলার শিকার।
তারা আরও জানায়, আমাদের জাহাজগুলোকে অবৈধভাবে আটকে দেওয়া হচ্ছে। ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সামরিক বাহিনী জাহাজে প্রবেশ করেছে।
ফ্লোটিলার নৌযানগুলোর মধ্যে মাত্র চারটির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে
ইসরায়েলের নৌবাহিনী ১৩টি নৌযান আটকের পর বাকি যে ৩০টি নৌযান গাজার উপকূলের উদ্দেশে যাত্রা অব্যাহত রেখেছিল, সেগুলোর মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৪টির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
এই নৌযানগুলো হলো শিরিন, সামারটাইম জং, মিকেনো এবং মেরিনেত্তি। বাকি ২৬টি নৌযান কী অবস্থায় আছে, সেগুলো যাত্রা অব্যাহত রেখেছে না কি ইসরায়েলের নৌবাহিনীর হাতে আটক হয়েছে— সেসব তথ্য কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ট্র্যাকার সিস্টেম ফ্লোটিলা ট্র্যাকারের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
শিরিন এবং সামারটাইম জং বহরের নৌযান হলেও সেগুলোতে ত্রাণসামগ্রী ছিল না। এ দুটি নৌযানে ছিলেন আইনজীবীরা। গত ৩১ আগস্ট গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মিশন শুরু হওয়ার পর আইনি সাহায্যের জন্য এই দুটি নৌকায় আইনজীবীদের রাখা হয়েছিল।
অন্যদিকে ত্রাণবাহী নৌযান মিকেনো এবং মেরিনেত্তি গাজার জলসীমার কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল। যাত্রা অব্যাহত থাকলে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুরের মধ্যে গাজার উপকূলে নোঙ্গর ফেলার কথা ছিল নৌযান দুটির।
কিন্তু বাংলাদেশ সময় ১১টা ২১ মিনিটের পর থেকে মিকেনো, মেরিনেত্তি, শিরিন এবং সামারটাইম জং-এর কোনো খবর পাচ্ছে না ফ্লোটিলা ট্র্যাকার।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সুমুদ নুসানতারা—এই চার আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঐক্যমঞ্চ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বন্দর থেকে খাদ্য ও ওষুধে পূর্ণ ৪৩টি নৌযানের বহর নিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা দেয় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। জাহাজগুলোতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আছেন সুইডেনের পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক বর্ণবাদবিরোধী নেতা ও প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা এবং তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিলসহ ৪৪টি দেশের ৫০০ জন নাগরিক। এই নাগরিকদের কেউ পার্লামেন্টারিয়ান, কেউ আইনজীবী, কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী এবং কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী।
বুধবার ভূমধ্যসাগরের গাজা উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছিল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহর। সেদিন সন্ধ্যার পর গাজা উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় নৌবহরের চারপাশ ঘিরে ধরে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং বহরের ১৩টি নৌযান আটক করে। আটক নৌযানগুলোর মধ্যে কয়েকটির নাম জানা গেছে— স্পেক্টার, অ্যালমা, সাইরাস, হুগা, মালি প্রভৃতি।
আটক নৌযানগুলোতে ছিলেন দুই শতাধিক যাত্রী এবং ক্রু। তাদের সবাইকে ইসরায়েলের বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কিন্তু ১৩টি নৌযান আটকের পরও গাজার উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল বাকি ৩০টি নৌযান।
দীর্ঘ আড়াই বছর পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত কেওক্রাডং। ফলে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যটক সমাগম ঘটেছে এই পর্বতশৃঙ্গে। বৃহস্পতিবার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং পর্বতের অবস্থান বান্দরবানের রুমায়। নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রায় আড়াই বছর অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ভ্রমণ পিপাসুরা এই পর্যটন কেন্দ্রটি ভ্রমণ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। ১ অক্টোবর থেকে উন্মুক্ত হওয়ায় ব্যাপক পর্যটকের সমাগম ঘটে কেন্দ্রটিতে।
রুমা টুরিস্ট গাইডের লাইনম্যান লাল রৌকল বম জানান, ‘কেওক্রাডং পর্বত ভ্রমণ করতে ৬৩০ জন পর্যটক গিয়েছিলেন। আজ দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫০০’র বেশি পর্যটক গমন করেছে। দিনের বাকি অংশে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, কেওক্রাডং পর্বত কেন্দ্রটি আরও জনপ্রিয় এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ওই এলাকায় বিশ্রামাগার, শৌচাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার সীমিত ও বগালেক পরবর্তী অংশে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধকরণে বর্তমান ছুটি পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।
ভোলার লালমোহনে একটি ব্রিজের জন্য দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। দেড় বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
সরেজমিনে জানা যায়, ৩০ বছর আগে উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তরুল্লা সেন্টার ও বিশ্বাসের পাড় এলাকার মধ্যবর্তী নাজিরপুর খালের ওপর প্রায় ৩০ মিটার লম্বা আয়রন ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় দেড় বছর আগে ব্রিজটির সামনের অংশ ভেঙে গেছে। আর এতে করে চরমভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কালমা ইউনিয়নের চর ছকিনা, তরুল্লা সেন্টার, বিশ্বাসের পাড় ও বদরপুর ইউনিয়নের চর টিটিয়া গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
কালমা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. শাহ আলম জানান, এ ব্রিজ দিয়ে অনেক ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করতে। বিশেষ করে অটোরিকশা, মোটরসাইকেল বোরাক, টেম্পু ও নসিমন। কয়েক বছর আগে ব্রিজটির মধ্যবর্তী দুটি অংশ ভেঙে বড় গর্তে পরিণত হয়। পরে স্থানীয়রা কাঠ দিয়ে গর্ত আটকে দেয়। ব্রিজের রেলিং ভেঙে গেছে। প্রায় দেড় বছর আগে ব্রিজটির সামনের অংশ ভেঙে গেছে। এখন ব্রিজ দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
তারা আরো জানান, ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার এখন মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপারও ঝুঁকি হয়ে পড়েছে। অনেকে ব্রিজ দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে পরে গিয়ে আহত হয়েছেন।
বিশ্বাসের পাড় গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইসমাইল বিশ্বাস জানান, লালমোহন থেকে তাদের এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র পথ এটি। ব্রিজ পার হয়ে আমাদের যাতায়াত করতে যেতে হয়। কিন্তু ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার তারা এখন ব্রিজের কাছে এসে পায়ে হেঁটে বাড়িতে যেতে হয়। বাড়ির জন্য বাজার ও চাউলের বস্তা নিয়ে যেতে তাদের অনেক কষ্ট হয়।
একই এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল হক জানান, ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার তাদের গ্রামের রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট হয়। কোনো যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে না পারায় ভোগান্তিতে পরতে হয়। অনেক সময় রোগীদের বাড়িতে থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ভাঙা ব্রিজ পার হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়।
স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার জানায়, প্রতিদিন ভাঙা ব্রিজ পার হয় স্কুলে যেতে হয়। ভয় নিয়েও ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় আমাদের।
মো. মানিক হাওলাদার জানান, দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজটি ভাঙা অবস্থায় মরণফাঁদে পরিণত হলেও সংস্কার কিংবা নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের। দ্রুত ভাঙা ব্রিজটি অপসরণ করে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলার এলজিইডির উপজেলার প্রকৌশলী রাজীব সাহা জানান, ওই আয়রন ব্রিজসহ লালমোহন উপজেলার আরও কয়েকটি ব্রিজ নতুন করে নির্মাণের জন্য তারা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণ করে জনগণের ভোগান্তি দূর করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরে বজ্রপাতে নজর আলী মিয়া (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তার স্ত্রী জুলেখা বেগম (৪০) গুরুতর আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার মোক্তারামপুর কান্দাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝে বাড়ির পাশে ডোবা থেকে নজর আলী ও তার স্ত্রী কচুরিপানা তুলছিলেন। ওইসময় বজ্রপাতে তারা দুজন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে সলিমগঞ্জ অলিউর রহমান জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নজর আলী মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। তার স্ত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। তার স্ত্রীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য