উৎপাদন বন্ধ চার প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ পুনর্গঠনের পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বছরের পর বছর লভ্যাংশ না দেয়া, লোকসানি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলছেন বিনিয়োগকারীরা।
তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ সতর্ক করে দিয়েছেন, পর্ষদ পুনর্গঠন মানেই কোম্পানি উৎপাদনে আসবে না। হুট করে শেয়ার কিনলে বিনিয়োগ আটকে যেতে পারে।
লোকসানি, বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রথমে রিংসাইন টেক্সটাইল, পরে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও ফ্যামিলি টেক্সের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
এই ঘটনায় আরও যেসব প্রতিষ্ঠানে বছরে পর বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ বা যেগুলো লভ্যাংশ দিচ্ছে না, সেগুলোর শেয়ার বেশি দামে কিনতে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন বহু বিনিয়োগকারী।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন বোর্ড কোম্পানিগুলো চালু করবে না। চালু করা সম্ভব কি না, কীভাবে চালু করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দেবে। তারা কোম্পানি অবসায়নের পরামর্শও দিতে পারে।
কিন্তু এসব বিষয় বিবেচনা না করেই তিনটি কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠনের পর দুটি কার্যদিবসে লোকসানি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
পুঁজিবাজারে একদিনে শেয়ারের দর সর্বোচ্চ কত বাড়তে পারে, তাকে বলা হয় সার্কিট ব্রেকার। শেয়ারের দরের ওপর নির্ভর করে ৪.৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ার সুযোগ আছে।
দুর্বল শেয়ারের বেশিরভাগই ১০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে। তবে শতাংশের হিসাবে কখনও কখনও দর বৃদ্ধির হার কম হয়।
যেমন কোনো শেয়ারের দর ২.৫০ টাকা হলে সেটি ২০ পয়সার বেশি বাড়তে পারবে না। কারণ, শেয়ারের দর বাড়া বা কমার হিসাব ১০ পয়সাতে হয়।
মঙ্গলবার সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধির প্রান্তসীমা ছুঁয়েছে যে ১৪টি কোম্পানি, তার মধ্যে ১০টিই বন্ধ, লোকসানি কোম্পানি। আর সর্বাধিক দর বৃদ্ধির তালিকায় থাকা ২০টি কোম্পানির ১৬টিই লোকসানি বা বন্ধ প্রতিষ্ঠান।
এসব কোম্পানির মধ্যে বেশ কয়েকটির দর দুই টাকা থেকে পাঁচ টাকার মধ্যে নেমে এসেছিল, যদিও এগুলোর অভিহিত মূল্য ১০ টাকা।
আগের দিনও ছিল একই চিত্র। সেদিনও সর্বাধিক দর বাড়া কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগই ছিল লোকসানি কোম্পানি।
কেন বাড়তি দাম দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শেয়ার কিনছেন- প্রশ্ন ছিল সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের শেয়ার কেনা আব্দুর রহমানের কাছে।
২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটির শেয়ার দর দুই টাকায় নেমে এসেছিল।
বোর্ড পুনর্গঠনের খবরে সোমবার শতকরা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ২০ পয়সা দাম বাড়ে কোম্পানিটির। মঙ্গলবারও ২০ পয়সাই দাম বাড়ার সুযোগ ছিল, তার বেড়েছেও তা।
বেশি দাম দিয়ে শেয়ার কেনার যুক্তি হিসেবে আব্দুর রহমান বলেন, জেড ক্যাটাগরি বা দুর্বল কোম্পানিগুলোর সবগুলোকেই নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। কোম্পানিগুলোকে লভ্যাংশ সহ কোম্পানির চালু করার জন্য চাপ দেবে বিএসইসি। এমন হলে কোম্পানির শেয়ার দর বর্তমান জায়গায় থাকবে না। বেড়ে হবে অনেক বেশি। তাই এখন কম দর থাকতেই কিনে নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘এখনই সুযোগ। বেশি করে কিনে রাখতে হবে। পরে পাওয়া যাবে না।’
কিন্ত পর্ষদ পুনঃগঠন হলেই তো কোম্পানি চালু হচ্ছে না, এতে সময় প্রয়োজন। আর কোম্পানি চালু হবে কি না সেটাও তো বলা হয়নি, তাহলে কেন কিনছেন দুর্বল কোম্পানির শেয়ার?
জবাবে বললেন, ‘বিএসইসি একবার যেহেতু উদ্যোগ নিয়েছে সেহেতু সব কোম্পানিগুলোকেই একে একে সংশোধন করবেন। তখন এই দামে আর শেয়ার পাওয়া যাবে না।’
কেমন ছিল জেড ক্যাটাগরির লেনদেন
সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ শেয়ারের দর বেড়েছে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের।
বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে মালিকপক্ষ হাওয়া হয়ে যাওয়ার পর সাতদিন আগেও এই কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ৭ টাকা।
গত দুই দিনে সর্বোচ্চ বেড়ে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়ে হয়েছে ১২ টাকা ১০ পয়সা। লেনদেনেও আসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
দুই কার্যদিবস আগে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৪ হাজার ১৬২টি। সোমবার লেনদেন হয়েছে তিন লাখ ৭৪ হাজার ৬৬১টি। পরদিন লেনদেন আরও বেড়ে হয়েছে নয় লাখ পাঁচ হাজার ৯৬০টি।
চার টাকা ২০ পয়সার তাল্লু স্পিনিং এর দাম সর্বোচ্চ বাড়া সম্ভব ছিল চার টাকা ৬০ পয়সা পর্যন্ত। বেড়েছেও তাই।
আগের দিন যেখানে ২৭ হাজার ৫৭টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, সেখানে আজ বিক্রি হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৪৪৩টি।
একদিনে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা বাড়ার সুযোগ থাকা জাহিন টেক্সটাইলের দর বেড়েছে এই পরিমাণই। এখন কোম্পানির শেয়ার দর ৫ টাকা ৮০ পয়সা।
আগের দিন ৭৯ হাজার ৯৬৩টি শেয়ার হাতবদল হলেও আজ বিক্রি হয়েছে তিন লাখ ২২ হাজার ১০৫টি।
পি কে হালদারের লুণ্ঠনের শিকার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ফাইনান্সের শেয়ার দরও ছুঁয়েছে শেয়ারদরের প্রান্তসীমা।
আগের দিন তিন লাখ দুই হাজার ৪৮৯টি শেয়ার হাতবদল হলেও এক দিনের ব্যবধানেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৯৩ হাজার ৬৩০টি।
আরেক লোকসানি প্রতিষ্ঠান ইমামবাটনের শেয়ারদরও দরবৃদ্ধির প্রান্তসীমা ছুঁয়ে হয়েছে ২০ টাকা ৪০ পয়সা।
দুই দিন আগে যেখানে হাতবদল হয় ১০ হাজার ৯৬৪টি শেয়ার, সেখানে মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৫৪ হাজার ৩০৫টি।
প্রান্তসীমা ৬০ পয়সা বেড়ে অ্যাপোলো ইস্পাতের দর এখন সাত টাকা ১০ পয়সা।
সোমবার যেখানে লেনদেন ছিল আট লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৯টি, সেখানে একদিনে তা বেড়ে হয়েছে ৫১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭১টি।
ফাস ফিনান্সের শেয়ারদরও সর্বোচ্চ ৪০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ৩০ পয়সা।
আগের দিন হাতবদল হয়েছিল তিন লাখ ৬২ হাজার ৮৯৯টি। আজ বিক্রি হয়েছে নয় লাখ ৩৪ হাজার ৪৮৭টি।
আর এন স্পিনিং এর শেয়ার দরও সর্বোচ্চ ৩০ পয়সা বেড়ে হয়েছে চার টাকা ১০ পয়সা।
দুই দিন আগে এক লাখ ৩৩ হাজার ১২৬টি শেয়ার হাতবদল হলেও সেটি বেড়ে হয়েছে নয় লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৬টি।
দুই দিন আগে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের শেয়ার হাতবদল হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬৬৩টি। পরদিন হাতবদল হয় ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪টি। আজ হাতবদল হয়েছে ২০ লাখ ৬৩ হাজার ৬৭৫টি।
আরও বেশি হাতবদল হতে পারত। শেয়ারটির প্রচুর ক্রয়াদেশ থাকলেও বিক্রির আদেশ ছিল না।
একইভাবে বেড়েছে লোকসানি মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং, ফ্যামিলিটেক্স, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেডের শেয়ার দর।
কী বলছেন বাজার বিশ্লেষক
আবু আহমেদ সতর্ক করেছেন বিনিয়োগকারীদের। তিনি বলেন, ‘বিএসইসি মনে করেছে দুর্বল কোম্পানিগুলোর সচল করতে পর্ষদ পুনর্গঠন করা উচিত। তাই তারা সেটি করেছে। এটা অবশ্যই প্রশংসীয় উদ্যোগ। কিন্ত তাদের এই উদ্যোগকে কাজ লাগিয়ে একটি গ্রুপ বাজারে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার লেনদেনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।’
জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে কি না, বিএসইসিকে তা খতিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি এও বলেন যে, ‘এগুলোর দর বাড়তে পারে। কিন্তু সর্বোচ্চ দর বাড়া সন্দেহের।’
আরও পড়ুন:টানা বর্ষণ ও উত্তাল সাগরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিরামহীন বৃষ্টিপাতে দ্বীপটির পাঁচটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় সংকট, খাদ্য সংকট ও পানিবন্দি দুর্ভোগে পড়েছেন। গত বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। জোয়ারের পানির সঙ্গে ঢেউ বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপের পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মাঝেরপাড়া, নজরুলপাড়া ও কোনাপাড়া পুরোপুরি প্লাবিত হয়ে গেছে।
মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা ফাহমিদা বলেন, ‘আমাদের ঘর পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। রান্নার সুযোগ নেই, পরিবারের কেউ খেয়ে উঠতে পারেনি। ঘর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ারও জায়গা নেই। এমন দুর্ভোগের কথা জানান দ্বীপের আরও অনেকে।’
সেন্টমার্টিন ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা দুদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বীপের মানুষ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘টানা বর্ষণে দ্বীপের পাঁচটি গ্রামে কয়েকশ ঘর পানিবন্দি হয়েছে। পাশাপাশি জোয়ারের ধাক্কায় ঘাটে নোঙর করা একটি ফিশিং ট্রলারও ডুবে গেছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল কালাম বলেন, ‘আমি কোনো স্লুইসগেট বন্ধ করিনি। আমার পাশের বাড়ির খলিল নামের এক ব্যক্তি সীমানা দেওয়ার সময় গেট বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা দ্রুত তা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
দ্বীপবাসীরা বলছেন, ঝড়-বৃষ্টি বা জলোচ্ছ্বাস এলেই এমন পানিবন্দি দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। তবে এবার স্লুইসগেট বন্ধ থাকায় অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে সেন্টমার্টিনে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। মূলত স্লুইসগেট বন্ধ থাকায় এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে গেট খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। বৃষ্টি থামলে আশা করি পানি নেমে যাবে।’
মাদারীপুরে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিভাগ ছাড়ব না, অন্য বিভাগে যাব না-ব্যানার ও স্লোগানে এক উম্মুক্ত আলোচনা সভা। বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদারীপুর পৌর কমিনিউটি সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবী, মানবাধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ ৪ উপজেলার মানুষ। উল্লেখ্য, সম্প্রতি মাদারীপুর জেলাকে ঢাকা বিভাগ থেকে নবগঠিত ফরিদপুর জেলার সাথে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন গণমাধ্যম, পত্র-পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন উম্মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, মাদারীপুর জেলা বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা থেকে ১৯৮৪ সালে স্বতন্ত্র একটি আলাদা জেলা হিসেবে গঠিত হয়েছিল। তখন থেকে মাদারীপুর একটি সম্পূর্ণ আলাদা জেলা। এ জেলার মানুষের চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিসিয়াল কাজ-কর্ম, সংস্কৃতি সবই ঢাকার সাথে হয়ে থাকে। মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরে এ জেলার মানুষের তেমন কোনো চলাচল নেই। পদ্মা ব্রিজ মাদারীপুর অংশ থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ৩৭ কি. মি. এবং মাদারীপুরের শেষাংশ টেকেরহাট বন্দর থেকে ফরিদপুরের দূরত্ব ৫০ কি.মি.। আলোচনায় বক্তারা আরও বলেন, কোনো অবস্থাতেই আমরা মাদারীপুরবাসী ফরিদপুর বিভাগে যাব না, আমরা ঢাকা বিভাগেই থাকব, প্রয়োজনে এ জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত। তারা আরও বলেন, এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না এলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব, প্রয়োজনে রক্তও যদি দিতে হয় তবে তাই দেব- ঢাকা বিভাগ ছাড়ব না।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দুই পরিবারের স্বেচ্ছাচারিতায় রাস্তা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক পরিবার। বাধ্য হয়ে রাস্তা খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মোহাম্মদ আলী প্রধান প্লাজার সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ভুক্তভোগী পরিবারের তিন শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিল। মানববন্ধন শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলটি আব্দুল্লাহপুর গ্রাম থেকে শুরু হয়ে ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডে এসে শেষ হয়।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা দোলোয়ার হোসেন, শুধু দুটি পরিবারের জন্য আমরা প্রায় একশটি পরিবারের ছয় শতাধিক সদস্য অবর্ণীয় দুর্ভোগে রয়েছি। বারবার তাদের রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হলেও তারা আমাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এখন জনগণের রাস্তার জায়গা বন্ধ করে ওই জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করার পরিকল্পনা করছে তাই বাধ্য হয়ে আমাদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি।
স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মাত্র দুটি পরিবারের জন্য একশ পরিবারের মানুষ জিম্মি হয়ে রয়েছে। দুটি পরিবারে আপত্তিতে ১০০০ ফুট রাস্তার ৮২ ফুট বাদে বাকি অংশের কাজ শেষ হয়েছে দীর্ঘদিন। আমাদের অবস্থা এ রকম একজন মানুষ মারা গেলে তার খাটিয়া বের করা যায় না। একজন লোক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রাস্তার জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে আমরা মাঠে নেমেছি।’
প্রসঙ্গত ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাউশিয়া বহুমুখী উন্নয়ন সমিতি মার্কেটের পিছনে যারা বসতি তৈরি করেছেন তারা মূলত বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা মানুষ। শুরুতে বিক্ষিপ্তভাবে বসতি তৈরি করলেও বর্তমানে এটি একটি গ্রাম যার নাম আব্দুল্লাহপুর। সম্প্রতি ওই দুই পরিবারের সদস্যরা রাস্তাটির এই অংশ দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে থাকলে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। পরে সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
চন্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। পরবর্তী ৫ দিন রাজধানীসহ দেশব্যাপী পূজামণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনার মধ্যদিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে। পরের বছর শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে যা তার বাবার গৃহ। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও শহর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি জসীম উদ্দীন (৫৬) মারা গেছেন।
তার অকাল মৃত্যুতে জেলা বিএনপি ও মহানগর বিএনপি শোক প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সাবেরা আলাউদ্দিন। ভিপি জসীম উদ্দীন তার দেবর।
তিনি জানান, গত রোববার রাত ১১টার দিকে কুমিল্লা সদর উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে ব্রেনস্ট্রোক করলে দ্রুত তাকে নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান তিনি।
মৃত্যুকালে ভিপি জসীম উদ্দীন এক ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন,বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহের সুমন, সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, সাবেক মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মাহবুবুল আলম চপল, বিএনপির কুমিল্লা দঃজেলার নব কমিটির সদস্য মোজাহিদ চৌধুরী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
৫০টি প্রতীক থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) নিজেদের মার্কা বাছাই করতে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন সহায়তা শাখার উপ-সচিব মো. রফিকুল ইসলাম দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে ইসির দেওয়া ৫০টি প্রতীকের তালিকায় নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী শাপলা অন্তর্ভুক্ত নেই।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এনসিপি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে, যা প্রাথমিক পর্যালোচনায় বিবেচিত হয়েছে। আবেদনপত্রে প্রতীক হিসেবে পছন্দের ক্রমানুযায়ী শাপলা, কলম ও মোবাইল ফোন উল্লেখ করা হয়; যা পরে পরিবর্তন (শাপলা, লাল শাপলা বা সাদা শাপলা) করা হয়। উল্লেখ্য, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৯ (১) অনুযায়ী প্রার্থিত প্রতীক শাপলা অন্তর্ভুক্ত নেই।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধান উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই আদেশ বা বিধিমালার অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনও দল মনোনীত সব প্রার্থীর জন্য নির্ধারিত প্রতীক থেকে পছন্দ করা যেকোনও একটি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে এবং এইভাবে বরাদ্দ করা প্রতীক দলটির জন্য সংরক্ষিত থাকবে, যদি না তারা পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত প্রতীকগুলোর মধ্য থেকে অন্য কোনও প্রতীক লাভের জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে। দলের নিবন্ধনের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৯(১)-এ উল্লিখিত প্রতীকের তালিকা থেকে বরাদ্দ হয়নি এমন একটি প্রতীক পছন্দ করে নির্বাচন কমিশনকে আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
যে ৫০টি প্রতীক থেকে এনসিপিকে তাদের মার্কা পছন্দ করতে বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে– আলমারি, খাট, উটপাখি, ঘুড়ি, কাপ-পিরিচ, চশমা, দালান, বেগুন, চার্জার লাইট, কম্পিউটার, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, ফ্রিজ, তবলা, বক, মোরগ, কলম, তরমুজ, বাঁশি, লাউ, কলস, চিংড়ি, থালা, বেঞ্চ, লিচু, দোলনা, প্রজাপতি, বেলুন, ফুটবল, ফুলের টব, মোড়া, বালতি, কলা, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক, ময়ূর, মোবাইল ফোন, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, স্যুটকেস, হরিণ, হাঁস ও হেলিকপ্টার।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রথমে শাপলা, কলম ও মোবাইল ফোনের যেকোনও একটি প্রতীক তাদের দেওয়ার জন্য আবেদন জানায়। তার কিছু দিন পর সে আবেদনে সংশোধন এনে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলা দেওয়ার আবেদন করে।
এদিকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইসি সচিব বলেছেন, এনসিপি শাপলা প্রতীক পাচ্ছে না। আমাদের ১১৫টার যে শিডিউল করা হয়েছে সেখানে শাপলা প্রতীক নেই। নিয়মটা হলো, সংরক্ষিত প্রতীক যেটা আছে সেটার ভেতর থেকে একটা নিতে হবে। সে প্রতীকে যদি শাপলা না থাকে তাহলে দেওয়ার সুযোগটা কোথায়?
গত ২২ সেপ্টেম্বর এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, আমরা আজও শাপলা, সাদা শাপলা, লাল শাপলা চেয়েছি। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরছি না। এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু এই তিনটি প্রতীকের মাধ্যমেই নিবন্ধন হতে হবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব) এর মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, সারাদেশে ৩৩ হাজারের উপরে পূজামণ্ডপ রয়েছে। আমরা তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। এটা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ না। আপনারা যারা সুধী সমাজের ও রাজনৈতিক নেতারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, পূজামণ্ডপের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মোটামোটি ভালোভাবেই পূজা সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের সম্প্রীতির বাংলাদেশ ও সকল ধর্মের বাংলাদেশে কোনো নাশকতাকারীকে আমরা কোনোভাবে ছাড় দেব না।
গত বুধবার বিকেলে নারাণগঞ্জ শহরের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার পূজামণ্ডপের মধ্যে ৪৯টি মণ্ডপে কিছু নাশকতাকারী বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছিল। তবে আমরা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এ পর্যন্ত ১৯ জনের বেশি নাশকতাকারীকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসব এখন পর্যন্ত যেভাবে চলেছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, সবচেয়ে ভালো হতো যদি এই ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর বেষ্টনীর মধ্যে না থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেদিন আমরা পালন করতে পারবো, সেদিনই প্রকৃত আনন্দ হবে। এখন আমাদের এভাবেই করতে হচ্ছে। আশা করি, সেদিন আসবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বিএনপি নেতা আবু জাফর আহমেদ বাবুল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শংকর কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনসহ প্রমুখ।
মন্তব্য