বুকবিল্ডিং প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রানার অটোমোবাইলের দর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ঠিক করেন ৭৫ টাকায়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১০ শতাংশ ছাড়ে এই শেয়ারটি পেয়েছেন ৬৭ টাকায়।
দুই বছর যেতে না যেতেই পুঁজিবাজারে শেয়ারের দর কমে হয়েছে ৪৯ টাকা ৩০ পয়সা।
প্রশ্ন উঠেছে, বাজারে দর ৫০ টাকার নিচে হলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোন হিসাবে এর দর ৭৫ টাকা যৌক্তিক মনে করেছেন।
২০১৯ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর প্রথম বছরে ১০ শতাংশ নগদ (শেয়ার প্রতি এক টাকা) আর ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। পরের বছর আবার শেয়ার প্রতি এক টাকা করে পেয়েছেন তারা।
কেবল এই শেয়ারটি নয়, গত কয়েক বছরে বুকবিল্ডিং প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দর নির্ধারণে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যে দর ঠিক করে, তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দাম তার চেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে।
দর নির্ধারণ হওয়ার পর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১০ শতাংশ কমে শেয়ার পান। কিন্তু উচ্চমূল্যে দাম নির্ধারণ হওয়ায় আইপিওধারীদের মধ্যে যারা শেয়ার ধরে রেখেছেন, তারা আর লেনদেন শুরুর পর যারা কিনেছেন, তারা সবাই লোকসানে আছেন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সম্প্রতি কারসাজি ঠেকাতে বুকবিল্ডিং এ দর নির্ধারণে নিলাম প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনেছে এ কারণেই। কিন্তু এতদিন যেসব কোম্পানির শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তাদের কী হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিমের কথাতেই স্পষ্ট যে, এই পদ্ধতিতে বেশি দামে শেয়ার দর নির্ধারণ হয়েছে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে দর নির্ধারনে কিছু নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত দর নির্ধারণের যে প্রবণতা কমবে।’
অর্ধেক দামে বসুন্ধরা পেপার
বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড একই পন্থায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ২০১৮ সালে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিলামে কোম্পানির শেয়ারের দর নির্ধারণ করেন ৮০ টাকা। আর তা থেকে বিএসইসির নির্ধারিত ছাড়কৃত দরে বিনিয়োগকারীরা আইপিওতে এই কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন ৭২ টাকায়।
যারা এই কোম্পানির শেয়ারের দর নির্ধারণ করে দিয়েছেন তারাই শেয়ার ধরে রাখছেন না।
সেই শেয়ারের দর এখন কমতে কমতে প্রায় অর্ধেক হয়ে ৪০ টাকা ১০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
এই কোম্পানির শেয়ার পর ৩৫ টাকাতেও নেমেছিল। তবে বিএসইসির নীতিমালার কারণে এখন ৩৯ টাকা ৯০ পয়সার নিচে নামতে পারবে না। এর ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ হয়েছে এই দামে।
আইপিওতে ৭২ টাকায় শেয়ার কিনে লভ্যাংশ হিসাবে বিনিয়োগকারীরা ২০১৮ সালে ২০ শতাংশ (শেয়ারপ্রতি দুই টাকা), ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ (শেয়ার প্রতি দেড় টাকা) আর ২০২০ সালে ১০ শতাংশ (শেয়ার প্রতি এক টাকা) নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
আমান-এসকোয়ারেও লোকসান
আমান কটনের শেয়ার দর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নির্ধারণ করে দিয়েছিলে ৪০ টাকা। তা থেকে ছাড়কৃত দর ৩৬ টাকায় আইপিওতে শেয়ার পেয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজারে এখন কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ২৯ টাকা ৮০ পয়সায়।
২০১৮ ও ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ করে অর্থাৎ এক টাকা করে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
২০১৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে এসকোয়ার নিট কম্পোজিটের শেয়ার বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ৪০ টাকায়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ৪৫ টাকায়।
দেড় বছরের মাথায় শেয়ার প্রতি ৫৯ শতাংশ দর হারিয়ে লেনদেন হচ্ছে ২৩ টাকা ৬০ পয়সায়।
এই কোম্পানিটি দুই বছরে দেড় টাকা করে মোট তিন টাকা নগদ মুনাফা দিয়েছে।
দুটির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণে লোকসানে বিনিয়োগকারীরা
গত এক বছরের মধ্যে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির শেয়ার দর অবশ্য কাট অফ প্রাইসের চেয়ে বেশি আছে। তবে এর মধ্যে দুটি তালিকাভুক্ত হয়েছে একেবারে সম্প্রতি। দাম উঠানামার মধ্যে আছে। এখনও স্থিতিশীল হয়নি দাম।
তবে তালিকাভুক্তির পর দুটি কোম্পানির শেয়ার উচ্চমূল্যে কিনে এখন লোকসানে আছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ৩১ টাকায় আইপিও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৪৯ টাকা ২০ পয়সায়।
তবে লেনদেন শুরুর পর কোম্পানিটির শেয়ার পর বাড়তে বাড়তে ১০১ টাকায়ও চলে গিয়েছিল। আর বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীদের পাঁচশ কোটি টাকারও বেশি আটকে গেছে বা তারা এই পরিমাণ লোকসানে আছেন।
আরেক কোম্পানি মীর আকতার হোসেনের শেয়ার পর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নির্ধারণ করেছে ৬০ টাকায়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তা পেয়েছেন ৫৪ টাকায়। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৮১ টাকা ৭০ পয়সায়।
তবে লেনদেন শুরুর দ্বিতীয় দিনে এই কোম্পানির শেয়ার দরও ১১৭ টাকায় উঠে গিয়েছিল। পরে কমতে কমতে এই পর্যায়ে এসে নেমেছে। দাম এখনও স্থিতিশীল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বলার সময় আসেনি।
তবে এখন পর্যন্ত এই দুটি কোম্পানির কাট অফ প্রাইস নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি।
কোম্পানির শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে কিনে দেড়শ কোটি টাকারও বেশি লোকসানে আছেন বিনিয়োগকারীরা।
ভালো মুনাফা দিয়েছে ওয়ালটন
বুকবিল্ডিং প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে সবচেয়ে লাভবান হওয়া গেছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডে। কোম্পানিটি ২৫২ টাকায় আইপিও আবেদনের বিপরীতে বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে এক হাজার ১৭৮ টাকায়।
এডিএন টেলিকমের ২৭ টাকায় আইপিও আবেদন করা হলেও বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৪৪ টাকা ৬০ পয়সায়।
কী বলেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা
বিনিয়োগকারী আজমল হোসেন স্বপন বলেন, ‘এখানে প্রধান কাজ করেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে কোম্পানির শেয়ারের দর নির্ধারণ করে। এটি অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘নিলামে যে কোম্পানির শেয়ারের দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয় সে কোম্পানির বছর শেষে ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে লভ্যাংশও দিতে পারে না। ফলে সহজেই বোঝা যায় কোম্পানির শেয়ার দর নির্ধারণে কারসাজি হয়েছে।’
বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খায়রুল কমিশনের সময়ও বুক বিল্ডিং নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় এ পদ্ধতিতে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত বন্ধ ছিল। বেশি দামে আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার পর কয়েকদিন দর বাড়লেও বেশিরভাগ সময় কমছে।’
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের এই লোকসানের দায় সম্পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের, যারা কোম্পানির শেয়ার দর নির্ধারণ করেছেন। তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। কমিশন সম্প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু নীতিমালা করেছে। এখন দেখার বিষয় সেটি কতটা কার্যকর হয়।’
যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘যে পদ্ধতিতে বুকবিল্ডিং এ কোম্পানির দর নির্ধারণ করা হচ্ছে সেটিতে ওভার প্রাইসিং হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দর নির্ধারণের পর বিএসইসিকে সেটি যাচাই করা উচিত। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও পুঁজিবাজারের স্বার্থে সচেতন হওয়া উচিত।’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে অতিমূল্যায়িত করে নির্ধারণ করা হয়। ফলে পুঁজিবাজারে আসার পর যে দর ধরে রাখতে পারে না।
‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সংঘবদ্ধভাবে এ দর নির্ধারণ করে। এর পেছনে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে।’
সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, ‘কোনো কোম্পানিকে বিডিংয়ে দেয়ার আগেই সে কোম্পানির শেয়ারের সর্বোচ্চ দর কত হবে সেটি নির্ধারণ করতে হবে। তারপর বিডিংয়ে যে দরটি আসবে সেটা যাচাই করা সম্ভব হবে বেশি হয়েছে, না কম হয়েছে।’
বুক বিল্ডিং পদ্ধতি কী
পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে দুটি পদ্ধতি চালু আছে। এর মধ্যে একটি ফিক্সড প্রাইস বা স্থির মূল্য, অপরটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতি।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দরপ্রস্তাবের মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। এই দরেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কোম্পানিকে শেয়ার ছাড়ার অনুমতি প্রদান করেন।
তবে তার আগে কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রোড শো বা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, অগ্রগতি তুলে ধরা হয়।
এসবের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ারের প্রস্তাবিত দর সংগ্রহ করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দরের ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা হয় শেয়ারের মূল্য।
এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা আনুষ্ঠানিক দরপ্রস্তাবের আয়োজন করেন। যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ারের নির্ধারীত দরে শেয়ার কেনার পরিমাণ ও দর প্রস্তাব করেন।
সেখানে নির্ধারিত দরে কাট-অফ বা ছাড়কৃত দরেই নির্ধারণ করা হয় আইপিও বা সাধারণ বিনিয়োগাকারীরা কী দরে শেয়ার পাবেন।
শাস্তির আওতায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, নীতিমালায় পরিবর্তন
গত দুই বছরে তালিকাভুক্ত হওয়া ওয়ালটন, এনার্জিপ্যাক, মীর আকতার, লুব-রেফ (বাংলাদেশ) ও ইনডেক্স এগ্রোর বিডিংয়ে কাট অফ প্রাইসের তুলনায় দ্বিগুণ দর প্রস্তাব করার ঘটনাও আছে।
এ জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকি শাস্তির আওতায় এনেছে বিএসইসি।
এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে বেশ কিছু পরিবতর্ন এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিলামে অংশ নিতে আগ্রহী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান একটি কমিটি গঠন করবে। এদের মধ্যে দুইজনের নিলাম সম্পর্কে জ্ঞান, দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একই সঙ্গে ঐ কমিটির সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে।
গঠিত কমিটির সুপারিশ করবে কারা নিলামে অংশগ্রহণ করবে। তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ের ক্ষমতা থাকবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাবিত কমিটির কোম্পানির সম্পদ মূল্যায়ন, ইল্ড বিশ্লেষণ করে যথাযথ শেয়ারের দর নির্ধারণ করতে হবে।
নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে মূল্য নির্ধারণ করবেন। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, কারিগরি, পারিচালকদের অবস্থা, বাণিজ্যিক, মালিকানাসহ সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা করেই এই মূল্য ঠিক করবেন তারা।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা প্রভাব মুক্তভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তারা কোম্পানির ইস্যুকারী, ইস্যু ম্যানেজারসহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বা অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে মূল্যায়ন সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না। নিলাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের বিশ্লেষণ, সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত গোপন রাখতে হবে।
নিলাম শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে যথাযথভাবে স্বাক্ষর করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। তবে সাত দিনের মধ্যে তা কমিশনে জমা দেবেন, যাতে রিপোর্টে কোনো অসঙ্গতি আছে কি না তা যাচাই করা সম্ভব হয়। প্রতিবেদনে কোনো ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স ১৯৬৯ (অডিনেন্স নং ১৭) অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন:জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ ৯ হাজার ৩৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১১ টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
অনুমোদিত প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ৬ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ ২ হাজার ৪২৮ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৫৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প ৫টি, সংশোধিত প্রকল্প ২টি এবং ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির ৩টি প্রকল্প রয়েছে।
একনেক চেয়ারপার্সন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গতকাল রোববার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
আজকের সভায় অনুমোদিত ১১ প্রকল্পসমূহ হলো: কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন’ প্রকল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘বাপবিবোর বিদ্যমান শিল্পসমৃদ্ধ এলাকার ৩৩/১১ কেভি আউটডোর উপকেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও ক্ষমতা বর্ধন’ প্রকল্প, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লি. (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্থাপন’ প্রকল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘৫টি নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী এবং ফরিদপুর) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকাস্থ আজিমপুর সরকারি কলোনির ভেতরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (জোন-সি)’ প্রকল্প, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ২টি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেনেবল ওয়াটার সাপ্লাই (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘বান্দরবান পৌরসভা এবং বান্দরবান জেলার ৩টি উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্প, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যে অনুমোদিত ৯টি প্রকল্প সর্ম্পকে একনেক সদস্যদের অবহিত করা হয়। সেগুলো হলো ১. হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন (২য় সংশোধিত), ২. রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগে নেসকোর আওতাধীন এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্বাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ৩. বরগুনা জেলার ২টি পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৪. তিন পার্বত্য জেলায় দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৫. লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত), ৬. তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি (২য় সংশোধিত), ৭. সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৮. কপোতাক্ষ নদ ও তৎসংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধিত), ৯. বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতা কেন্দ্রিক সাক্ষরতা (২য় সংশোধিত) প্রকল্প।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের আয়কর নির্দেশিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ৪২টি ভাতা বা আয়ের উৎস করমুক্ত ঘোষণা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস করযোগ্য আয়ের আওতায় থাকবে।
এনবিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক হলেও, নির্দিষ্ট কিছু আয়ের ওপর তাদের কর দিতে হবে না। এসব করমুক্ত আয় মূলত কর্ম-সম্পর্কিত বিভিন্ন ভাতা ও ভ্রমণ সুবিধা।
করমুক্ত ঘোষিত ৪২টি আয়ের ধরন হলো- চিকিৎসা ভাতা, নববর্ষ ভাতা, বাড়িভাড়া ভাতা, শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা, শিক্ষাসহায়ক ভাতা, কার্যভার ভাতা, পাহাড়ি ভাতা, ভ্রমণ ভাতা, যাতায়াত ভাতা, টিফিন ভাতা, পোশাক ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, ধোলাই ভাতা, বিশেষ ভাতা, প্রেষণ ভাতা, প্রশিক্ষণ প্রেষণ ভাতা, জুডিশিয়াল ভাতা, চৌকি ভাতা, ডোমেস্টিক এইড অ্যালাউয়েন্স, ঝুঁকি ভাতা, অ্যাকটিং অ্যালাউয়েন্স, মোটরসাইকেল ভাতা, আর্মরার অ্যালাউয়েন্স, নিঃশর্ত যাতায়াত ভাতা, টেলিকম অ্যালাউয়েন্স, ক্লিনার ও ড্রাইভার অ্যালাউয়েন্স, মাউন্টেড পুলিশ, পিবিএক্স, সশস্ত্র শাখা, বিউগলার ও নার্সিং ভাতা, দৈনিক/খোরাকি ভাতা, ট্রাফিক অ্যালাউয়েন্স, রেশন মানি, সীমান্ত ভাতা, ব্যাটম্যান ভাতা, ইন্সট্রাকশনাল অ্যালাউয়েন্স, নিযুক্তি ও আউটফিট ভাতা এবং গার্ড পুলিশ ভাতা।
করযোগ্য আয়, মূল বেতন, উৎসব ভাতা, বোনাস এসব আয়ের ওপর আয়কর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হারে কর দিতে হবে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে ৬৩.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি হবে বাংলাদেশ থেকে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এ ঘোষণা দেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সমাপ্ত অর্থবছর ২০২৪-২৫ এ বাংলাদেশ পণ্য খাতে ৫০.০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৭% এবং পূর্ববর্তী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৮.৫৮% বেশী।
সেবা খাতের লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫০ বিলিয়নের বিপরীতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৫.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.১৩% বেশী।
অর্থবছরে রপ্তানি খাতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির গতিধারা, পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ, বিশ্ব বাণিজ্যের সাম্প্রতিক গতিধারা, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব, দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অংশীজনদের মতামত, বিগত অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা এবং লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জনের হার ও পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ইত্যাদি পর্যালোচনাপূর্বক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর পরিদর্শনে গিয়ে বস্ত্র ও নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘সরকার বিভিন্ন স্থলবন্দর প্রাইভেট সেক্টরের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করছে। একই সঙ্গে, যেসব স্থলবন্দর থেকে সরকার কোনো রাজস্ব আহরণ করতে পারছে না, সেগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
শনিবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর পরিদর্শনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে, যার মধ্যে ইতোমধ্যে চারটি স্থলবন্দর বন্ধ করা হয়েছে। আরো চারটি অলাভজনক স্থলবন্দর বন্ধের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়নশীল স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং ধাপে ধাপে এসব বন্দরের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
হিলি স্থলবন্দর সভাকক্ষে কাস্টমস, বন্দরের কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যবসায়ীরা রাস্তা-ঘাট সংস্কার, ওয়্যারহাউজ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে দ্রুত সেসব সমাধানের অনুরোধ করেন।
উপদেষ্টা হিলি স্থলবন্দর ও কাস্টমস বিভাগের বিভিন্ন অবকাঠামো ঘুরে দেখেন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, রংপুর কাস্টমসের বিভাগীয় কমিশনার অরুন কুমার বিশ্বাস, হিলি কাস্টমসের সহকারী কমিশনার এ এস এম আকরামসহ আরো অনেকেই।
স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যাদি (ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডাল) বিক্রয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীতে ৬০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে আজ (১০ আগস্ট) হতে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
শনিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে টিসিবি।
টিসিবির উপপরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন (শুক্রবার ছাড়া) এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৫টি, গাজীপুর মহানগরীতে ছয়টি, কুমিল্লা মহানগরীতে তিনটি এবং ঢাকা জেলায় আটটি, কুমিল্লা জেলায় ১২টি, ফরিদপুর জেলায় চারটি, পটুয়াখালী জেলায় পাঁচটি ও বাগেরহাট জেলায় পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ১০ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৯ দিন (শুক্রবার ছাড়া) টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। দৈনিক ট্রাক প্রতি ৫০০ জন সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্যাদি (ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডাল) বিক্রয় কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। যে কোনো ভোক্তা ট্রাক থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।
ভোক্তা প্রতি ভোজ্যতেল দুই লিটার ২৩০ টাকা, চিনি এক কেজি ৮০ টাকা এবং মসর ডাল দুই কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হবে। স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারীর কাছে বিক্রয় মূল্য আগের ন্যায় বহাল থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিকৃত বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে এই সময়ের আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে তোলা পণ্য নতুন শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছে। এ সুবিধা কাজে লাগাতে আগাম পণ্য পাঠিয়ে রফতানিকারকরা জোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, এই রফতানিতে জোয়ারের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, রফতানিকারকদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ায় প্রতিদিন অতিরিক্ত ৮০০ কনটেইনার রফতানি হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের ১৯টি ডিপোতে জমা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০টি ২০ ফুট এককের রফতানি কনটেইনার। যার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রমুখী।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ৭ আগস্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য পাঠাতে অনেকেই চেষ্টা করেছেন। তবে যারা আগাম উৎপাদন সম্পন্ন করেছিলেন, তারা ১ আগস্টের আগেই রফতানি নিশ্চিত করেছেন। ফলে জুলাই মাসে রফতানিতে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
চট্টগ্রামের এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম জানান, জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে, যার মধ্যে ৮২ কোটি ডলারের পোশাক গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এর ৬০ শতাংশ রফতানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন। পরবর্তীতে ৩১ জুলাই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের তৃতীয় দফা আলোচনার পর চুক্তির ভিত্তিতে পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামানো হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশের বেশি শুল্ক কার্যকর ছিল, ফলে মোট শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৩৫ শতাংশের বেশি। তৈরি পোশাকে আগে শুল্ক ছিল প্রায় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, শুল্ক কার্যকরের ক্ষেত্রে বন্দর থেকে পণ্য ছাড়কাল থেকেই সময় গণনা করা হয়। এপ্রিলেও একই পদ্ধতিতে ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর হয়।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহারে পাল্টা শুল্ক ছাড় থাকায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কারণ পোশাক খাত তুলানির্ভর এবং বাংলাদেশের আমদানিকৃত তুলার বড় অংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে রফতানিকারকরা আগেভাগেই কনটেইনার পাঠিয়েছেন ডিপোতে। এর প্রভাবে আগস্টেও ডিপো থেকে আমেরিকামুখী রফতানি বেশি হবে।
তিনি জানান, প্রতি মাসে গড়ে ৬০-৬৫ হাজার কনটেইনার রফতানি হলেও জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজারে; যার মধ্যে ৮১ হাজার কনটেইনার ইতোমধ্যে রফতানি হয়েছে।
গত বছরের রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের পর অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহে বড় ধরনের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে এই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশে নিট এফডিআই প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ৮৬৪.৬৩ মিলিয়ন ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ১১৪.৩১ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে বিনিয়োগ ছিল ৪০৩.৪৪ মিলিয়ন ডলার।
এই বিনিয়োগ প্রবাহ ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায়ও ৭৬.৩১ শতাংশ বেশি। তখন নিট এফডিআই ছিল ৪৯০.৪০ মিলিয়ন ডলার।
ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট বা মূলধনী বিনিয়োগেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে এটি দাঁড়ায় ৩০৪.৩৮ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৮৮.৪৩ মিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের ‘আস্থার প্রতীক’। যদিও দেশ এখনো মুদ্রা অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক ঋণের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বাসসকে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ এখনো প্রত্যাশার তুলনায় কম। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান খুবই কঠিন।
বাসসর সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, উচ্চ-প্রভাবসম্পন্ন বিনিয়োগ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের সমস্যার সমাধান এবং বড় বিনিয়োগের একটি শক্তিশালী পাইপলাইন তৈরি করা এই চারটি প্রধান অগ্রাধিকারের ওপর জোর দিচ্ছে বিডা ও বেজা।
বিডা প্রধান সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট -২০২৫’ এর সাফল্য তুলে ধরে বলেন, ৭ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ৫০টি দেশের ৪১৫ জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেন এবং এতে প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পান এবং বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত এবং লাভজনক হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, বেজা নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, যাতে বিনিয়োগ প্রক্রিয়াগুলোর বাস্তব অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায়।
ভারসাম্যপূর্ণ শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) একটি ‘জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো তিন ধাপে বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।
জাতীয় মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে ২০৪৬ সালের মধ্যে ২০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে । যা সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে কৌশলগতভাবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রস্তুত হওয়া এই মাস্টার প্ল্যানটি ভূমি অধিগ্রহণ, অবকাঠামো প্রস্তুতি এবং বিনিয়োগকারীর আস্থার মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রথম পর্যায়ে, অর্থবছর ২৫ থেকে অর্থবছর ৩০ পর্যন্ত যেগুলোর উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বা পরিকল্পনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এমন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এদিকে, দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) তাদের নতুনভাবে ডিজাইন করা ওয়েবসাইট চালু করেছে। যা বিনিয়োগ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নতুন এই প্ল্যাটফর্মে বিডার এফডিআই হিটম্যাপ অনুযায়ী সম্ভাবনাময় খাতগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, নীতিমালা, এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ফোকাল পয়েন্ট সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিডার লোগোও নতুনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
বিডা তাদের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) পোর্টালেরও হালনাগাদ সংস্করণ চালু করেছে, যার উদ্দেশ্য হলো দেশি ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য সেবার গুণগতমান বৃদ্ধি।
এই ওএসএস পোর্টালটি ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চালু করা হয় এবং বর্তমানে ৩৫টি সরকারি সংস্থা, ১২টি ব্যাংক ও ৫টি চেম্বার সংস্থার ১৩৩টি সেবা একত্রে প্রদান করে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. মনজুর হোসেন বলেন, ‘আগামী মাসগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ বজায় থাকলে বিনিয়োগ প্রবাহ আরও বাড়বে।’
এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের পথে বাধাগুলি মোকাবেলা করতে বিডা এবং বেজা কয়েক মাস ধরে আরও বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য কিছু সফল ইভেন্টের আয়োজন করেছে। এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ব্যবস্থা আরও সহজ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক আবু সাইয়েদ মো. আনোয়ার পারভেজ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেপজার ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো মেশিনারি, নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য মূলধনী খাতে (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ছাড়া) ২৯২.৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
আনোয়ার পারভেজ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৩টি নতুন বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা বেপজার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
তিনি বলেন, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ থেকে আগত বিনিয়োগকারীরা শিল্প কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে এসব চুক্তিতে সই করেছেন।
পারভেজ বলেন, ‘এই চুক্তির আওতায় মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৯৭.৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সম্ভাব্য ৫৯ হাজার ৪০৮ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করবে, যার মধ্যে রয়েছে: তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, কৃষিভিত্তিক পণ্য, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, প্যাকেজিং সামগ্রী, তাঁবু, কৃত্রিম চুল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, খেলনা এবং কম্পোজিট আইটেম।
তিনি আরও বলেন, এই বিনিয়োগগুলো চালু হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রকৃত বিনিয়োগ প্রবাহ আরও গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্য