হুহুম না… হুহুম না… ধ্বনি ছড়িয়ে পালকি চড়ে বরের বাড়িতে বধূবরণের চিরায়ত দৃশ্য হারিয়েছে আগেই। আর করোনাকালের ছোবলে সামাজিক আয়োজনেও লেগেছে মড়ক।
শীতের রুক্ষতা শেষে বসন্তের আমুদে হাওয়া গায়ে লাগলেও, বাঙালির বিয়ের আয়োজন আটকে আছে ‘সীমিত পরিসরে।’ জাঁকজমক আয়োজনের বদলে ঘরোয়া পরিবেশে হচ্ছে বিয়ে।
ফলে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে দোকানিরা বিয়ের উপকরণ দিয়ে নিজেদের পসরা মেলে ধরলেও, বিকিকিনিতে ভাটার টান। গোটা বিশেক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎসবমুখরতা না থাকায় ক্রেতাদের আনাগোনা নেই।
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড বিয়ের উপকরণের পসরা সাজিয়েছে বিয়ে বাড়ি নামে একটি দোকান। তবে দোকানে ক্রেতা নেই। অলস ভঙ্গিতে বসে দোকানি।
ভিডিও ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন দেখেই একটু আড়মোড়া ভাঙল তার। দোকানের প্রবেশমুখ বাদ দিয়ে বাকি তিন দিকেই বর সাজানোর উপকরণ। এগুলোর মধ্যে আছে শেরওয়ানি, পাগড়ি আর নাগরা জুতা।
কথা হয় দোকান মালিক জিয়ার সঙ্গে। করোনার প্রভাব খুব ভালোভাবে টের পেয়েছেন বিয়ের সামগ্রী বিক্রি করা এই দোকানি।
‘তিন মাস দোকান খুলতে পারিনি শুরুর দিকে। পরে কোরবানি ঈদের পর দোকান চালু হলেও সারা দিনে কোনো বিক্রি ছিল না। গত ডিসেম্বর থেকে একটু বিক্রি শুরু হতে থাকে। তবে বিক্রিতে এখন আর আগের মতো অবস্থা নেই।’
‘সীমিত পরিসরে বিয়ে’ তাদের বিকিকিনিকেও করেছে সীমিত, বলছিলেন জিয়া। তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের অনেক জিনিসের দাম পড়ে গেছে। আমার দোকানে শেরওয়ানিসহ বরের পরিধানের সমস্ত আইটেম পাওয়া যায়।’
দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বরের শেরওয়ানি দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু। তার দোকানের সবচেয়ে ভালো কাপড়ের শেরওয়ানির দাম ১৫ হাজার টাকা।’
এখন বাজারে জয়পুরি কাতান, জরি কাতান ও সুতার কাজ করা শেরওয়ানির কদর বেশি। আর তাই দামও একেকটার একেক রকম।
সুতার কাজ করা শেরওয়ানির দাম একটু বেশি। এ ছাড়া পায়জামা ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ওড়না ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। পাগড়ি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। নাগরা জুতা ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে বোঝা গেল, স্বল্প আয়ের মানুষ বিয়ের উপকরণ কেনার চেয়ে ভাড়ার দিকেই ঝুঁকছে বেশি।
এখন বিক্রির চেয়ে আরেকটা পন্থা বেশি চলছে বাজারে, জানালেন জিয়ার দোকানের কর্মচারী রিটন সর্দার।
রিটন বলেন, ‘এখন অনেকেই কেনার বদলে ভাড়া নিতে চান। আর কাপড় ও স্টাইলভেদে শেরওয়ানি ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে।’
ভাড়া কত আর কাপড় যে ফিরে আসবে, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে পাওয়া যায়, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা সময় ও কাপড়ের মানের ওপর ভিত্তি করে ভাড়া দেন। তবে নাগরা জুতা একবারই পরা হয় বিধায় এটা ভাড়ার বাইরে। শেরওয়ানি, পাগড়ি ও অন্য সবকিছু মিলিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ভাড়া শুরু হয়। ঢাকার বাইরে হলে একটু বেশি থাকে ভাড়া।’
এই ব্যবসায়ী জানান, ভাড়ার অতিরিক্ত আরও টাকা জমা রাখতে হয় শেরওয়ানি ও পাগড়ি নেয়ার সময়। এটা অনেকটা জামানতের মতো। এগুলো ফেরত দেয়ার সময়ই দেয়া হয় সেই টাকা।
এলিফ্যান্ট রোডের কেনাবেচার খবর নেয়ার ফাঁকেই দেখা হলো এক প্রৌঢ় ব্যক্তির সঙ্গে। নাম নাসির তালুকদার। আর কদিন পর ছেলের বিয়ে। তাই দেখেশুনে বিয়ের উপকরণ কিনতে এসেছেন তিনি। দেখছিলেন শেরওয়ানি, পাগড়ি, নাগরা, গায়েহলুদের কুলাসহ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় প্রয়োজনীয় সব অনুষঙ্গ। দরদাম আর বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় করে দোকান ঘুরে কিনবেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ছেলেকে সঙ্গে এনেছি। দেখি, সে কী পছন্দ করে। কনের শাড়ি লাল রঙের, তাই ছেলের শেরওয়ানি একটু কনট্রাস্ট করে কিনব।’
বিয়ে-সংক্রান্ত পোশাক ও বিয়ের অন্য সব জিনিসের জন্য এলিফ্যান্ট রোডের নামডাক রয়েছে। কোথাও পোশাকের দোকান আবার কোথাও গায়েহলুদের উপকরণের পসরা।
বিয়ের পোশাকি আয়োজনের বাইরে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসগুলো বিক্রি হয়, তা হলো গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের ডালা, কনের গয়না, ফুল, মাছ ডালা, ঝুড়ি, কুলাসহ আরও আনুষঙ্গিক জিনিস।
হলুদের নানা উপকরণ সাজিয়ে রেখেছে ‘বাঁধন’। দোকানমালিক কাওসার আহমেদ বলেন, তাদের দুরাবস্থার কথা।
তিনি বলেন, ‘আগে বড় পরিসরে বিয়ে হতো। জামাইয়ের সঙ্গে যারা থাকত তাদের আইটেম আমরা বিক্রি করতে পারতাম। এখন বিয়ের অনেক আয়োজন ছোট হয়ে গেছে। তাই অনেক কিছু আছে, যা আগে লাগত, এখন আর ডিমান্ড নেই। আগে যেখানে একটা বিয়েতে ২০ পিস ডালা লাগত, এখন সেখানে একটা বা দুইটা দিয়ে কাজ সারা হচ্ছে।’
দামের প্রসঙ্গে কাওসার জানালেন, মান ও ডিজাইন বুঝে ২০০ থেকে ৭০০ বা ৮০০ টাকা লাগে একটি ডালা কিনতে। আর কুলার দাম ২০০ টাকা থেকে শুরু হয়।
তিনি আরও জানালেন, ‘মেয়েদের গয়নার সেট পাওয়া যাবে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী এসব জিনিস পছন্দ করে। এ ছাড়া উপটান, চন্দন, সোহাগপুরি, আলতা আছে। এগুলোর দাম ২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।’
এলিফ্যান্ট রোডের বিয়ের সামগ্রী বিক্রির বড় দোকানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘মহাবীর।’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এই সময়ে দোকান চলছে ঠিকই, কিন্তু বেচাবিক্রি যাচ্ছেতাই বললেন তিনি।
দোকানের মালিক এ কে আজাদ বলেন, ‘এখন আর করোনার আগের ব্যবসার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়ে গেছে। একটা সময় দোকান তিন মাস বন্ধ ছিল। এরপর খুললেও সারা দিনে তেমন ক্রেতা থাকত না।
‘আমার দোকানে বিয়েতে বরের সব ধরনের পোশাক আছে। ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকার শেরওয়ানি পাওয়া যাবে এখানে। তবে মাঝখানে অনেকেই বিয়ের পোশাক ভাড়া নিতেন। এখন একটু কমে গেছে বলে আমার মনে হয়।’
মহাবীরে বিয়ের পোশাক কিনতে আসা এক ক্রেতা জানান, কনের পোশাকের ওপর নির্ভর করে সাধারণত ছেলের পোশাক কেনা হয়। তবে শেরওয়ানির ক্ষেত্রে তার কাতান পছন্দ। আর শেরওয়ানির সঙ্গে তিনি রাজস্থানি পাগড়ি পরতে চান। এখনো অনেক দোকান ঘুরে দেখা বাকি তার।
করোনার প্রকোপের পর ক্রেতাদেরও এখন বিয়ের সব জিনিসে আগ্রহ নেই। বর ও কনের পোশাকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কেনাকাটা। পোশাকের বাইরে অন্য আনুষঙ্গিক এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপহার বা সাজানোতে চলে যাচ্ছে।
রাস্তার দুই পাশজুড়ে ছোট-বড় অনেক দোকান এখানটায়। দোকানের সংখ্যা অন্তত ৫০টি। ব্যবসা মন্দা থাকায়, অনেক দোকানের ঝাঁপি খোলাও হয়নি। দোকান মালিকদের বেশির ভাগ নোয়াখালী ও চাঁদপুর জেলার বাসিন্দা। তারা জানালেন, পণ্যের জোগান আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে।
এ কে আজাদ বললেন, ‘বিয়ের পোশাক মানেই ভারতীয় কাপড়। জয়পুরি শেরওয়ানি বা রাজস্থানি পাগড়িই বেশি চায় মানুষ।’
তিনি বলেন, ‘কিছু জিনিস আছে, যা আমরা স্থানীয়ভাবে তৈরি করি। এখান থেকে দেশের দুইটি বিভাগ সিলেট ও চট্টগ্রামে বিয়ের সামগ্রী পাইকারি বিক্রি করা হয়।’
আরও পড়ুন:সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ নির্দেশনা মানছেন না কেশবপুরের ফিলিং স্টেশনের মালিকরা। সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে গত বছরের ২০ মে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন (বিআরটিএ) কর্তৃপক্ষ দেশব্যাপী ওই নির্দেশনা জারি করে।
জানা যায়, যশোরের কেশবপুর পৌর সদরের থানার ৬০ ফুট দূরে অবস্থিত মেসার্স এম ভি ফিলিং স্টেশন। এছাড়া মধ্যকুল এলাকায় কেশবপুর ফিলিং স্টেশন ও কেশবপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজের সামনে যমুনা ফিলিং স্টেশনসহ ৫টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। অন্য দুইটি সগরদাঁড়ি ও মির্জানগরে গ্রামে অবস্থিত। এসব পাম্পে হেলমেট ছাড়াই মোটরসাইকেলে অবাদে প্রেট্রোল ও অকটেন বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া ওই পাম্পগুলোতে প্রতি লিটারে ১০০ গ্রাম করে তেল কম দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সূত্র জানায়, প্যাম্পের মালিকরা বেশি মোনাফা করতে দেশের বিভিন্ন তেল ডিপো থেকে গভীর রাতে পচা ও বাদ দেয়া তেল আমদানি করে তা প্রেট্রোল ও অকটেনের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করে আসছে। ওই তেল ব্যবহারের অযোগ্য বলে একাধিক মোটরসাইকেল মিস্ত্রি এই প্রতিনিধিকে জানান। এতে যানবাহনের ইঞ্জিন বিকলসহ নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এদিকে সারাদেশে অল্প বয়সি তরুণরা মহাসড়ক ও দুরপাল্লার সড়কে দ্রুত গতিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমনকি মোটরসাইকেল চালানোকালে তারা হেলমেটসহ নিরাপত্তার সরঞ্জাম ব্যবহার করছে না। এতে সড়কে মৃত্যুর হার বাড়ছে একারনে সরকার সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ ধারা ৪৯ এর উপধারা-১, (চ) এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২ বিধি- ১৩৬, (২) অনুযায়ী মোটরসাইকেল চালক ও তার সহযাত্রীদের অবশ্যই বিএসটিআই কর্তৃক নির্দেশনা অনুযায়ী হেরমেট ব্যবহার বধ্যতা মূলক করেছে।
কেশবপুরের মোটরসাইকেল চালক আকরাম আলি, সাগর এবং নিছার আলি বলেন, পৌর শহরে অবস্থিত মেসার্স এমভি ফিলিং স্টেশন, কেশবপুর ফিলিং স্টেশন এবং যমুনা ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল ও অর্কটেন আনতে গেলে অধিকাংশ সময় লিটারে প্রায় ১০০ গ্রাম তেল কমদেয় এবং পচা দুর্গন্ধ জাতীয় তেল সরবরহ করে। এর প্রতিবাদ করলে তারা তাদের ওপর চড়াওসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়। ভুক্তভোগীরা কেশবপুরের তেল পাম্প গুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
কেশবপুর মেসার্স এমভি ফিলিং স্টেশনের মালিক সুনিল কুমার ঘোষ বলেন, এলাকার অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালক হেলমেট ব্যবহার করেনা। তাই হেলমেট ছাড়াই তেল দেয়া হয়। এছাড়া গাড়ি থেকে তেল দিতে গেলে অনেক সময় যান্ত্রীক ত্রুটির কারনে তেল কম যায় এবং মাঝেমধ্যে ডিপো থেকে দুর্গন্ধ জাতীয় তেল সরবরহ করা হয়। আমাদের বাধ্য হয়ে গ্রাহকদের কাছে ওই তেল সরবরাহ করতে হয়।
সরকার আসন্ন জুলাই মাস উপলক্ষে নেওয়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে পূর্বে ঘোষিত প্রতীকী ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে ফারুকী এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করেন। বলেন, এই নির্দিষ্ট উদ্যোগটি নিয়ে শুরু থেকেই অভ্যন্তরীণ বিতর্ক ছিল।
তিনি লিখেছেন, ‘জুলাই স্মরণে অনুষ্ঠানের একটা কর্মসূচি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা পর্যায় থেকেই দ্বিধা ছিল। একটা মাত্র কর্মসূচিই আমরা কয়েকবার কেটেছি, আবার যুক্ত হয়েছে। আমরা অনেকেই একমত ছিলাম ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট’ গ্রেট আইডিয়া না সম্ভবত।’
তিনি আরও বলেন, পরে আবার নানা আলোচনায় এটা ঢুকে পড়ে কর্মসূচিতে। অনেক বড় কর্মসূচি এবং বড় একটা দল কাজ করলে এরকম দুয়েকটা ভুল চোখের আড়ালে থেকে যায়।
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ধারণার বিষয়ে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়ার জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন উপদেষ্টা।
জনগণ কর্মসূচি নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে, সেই কর্মসূচি নিয়ে আপনাদের মতামত জানানোর জন্য।’
তিনি আরও বলেন, আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমরা নিজেদের মধ্যে দ্রুত সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- এক মিনিট প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি থাকছে না। সংশোধিত স্লাইড শেয়ার করে হচ্ছে।
ফারুকী লিখেছেন, ‘অন্যান্য সমস্ত কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকবে। আসুন পুনরায় সংযোগ স্থাপন করি, পুনর্গঠন করি এবং জুলাইয়ের আসল চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করি।’
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে আটকে রেখে মারধর করে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মুল আসামি আলাউদ্দিন সহ আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিন ও শ্রমিক দল নেতা মো. ফরিদ উদ্দিন। তারা ওই মামলার এজাহার নামীয় ১ ও ২ নম্বর আসামি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) মধ্যরাতে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া থেকে আলাউদ্দিন এবং ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে, বুধবার (০২ জুলাই) দুপুরে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে মামলার ৫ নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করে র্যাব। এছাড়াও, ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগীর সতিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ নিয়ে এই মামলার ৭ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহব্বত খান জানান, রাতে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি আলাউদ্দিন ও ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, বুধবার (০২ জুলাই) বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ভোলার পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) বিকাল ৩ টায় জেলা পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এখন পর্যন্ত এই মামলায় এজহারনামীয় ৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৩০ জুন) রাতে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের মোল্লার পুকুর পাড় এলাকায় চাঁদার দাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে মারধর করে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্তরা স্থানীয় শ্রমিকদল, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে কর দাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে ৫ সদস্য ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাগণ নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এক্ষেত্রে, প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তাগণ ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিককে হয়রানি করেন বলে জানা যায়।
তিনি আরও বলেন, অনেক করদাতা আগাম কর দেন। আবার কেউ কেউ বেশি কর দেন। নিয়ম হচ্ছে এই কর হিসাব-নিকাশ করার পর বেশি দেওয়া হলে তা ওই করদাতাকে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, করের বাড়তি টাকা ফেরত পেতে আরো অন্তত অর্ধেক টাকা ঘুষ বা উপহারে খরচ হয়। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তারা করের টাকা ফেরত দিতে নিজেরাও কামিয়ে নিচ্ছেন মোটা টাকা।
অভিযুক্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকুরিকালীন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও ক্ষেত্র বিশেষে আয়কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে ও নিজে লাভবান হয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে দুর্নীত, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঢাকা পূর্বের কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনার কাজী মোহাম্মদ, বেনাপোল স্থল বন্দরের কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামান, রাজশাহী সার্কেল-৭-এর উপ কর কমিশনার মো: মামুন মিয়া, আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা ও ঢাকা কর অঞ্চল-২-এর কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তথ্যানুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে দেশের বিভিন্ন গুদামে চাল ও গমের মজুদ রয়েছে ১৭.৬৪ লাখ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় তিন লাখ টন বেশি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সরকারি মজুদ, সংগ্রহ ও বিতরণ পরিস্থিতি সম্পর্কে খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ১ জুলাই দেশে চাল ও গমের মোট মজুদ ছিল ১৪.৭৩ লাখ টন। এর মধ্যে চালের মজুদ ছিল ১০.৬০ লাখ টন এবং গমের মজুদ ছিল ৪.১৩ লাখ টন।
নতুন অর্থবছরের শুরুতে চালের মজুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫.৪১ লাখ টনে।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত ও আমদানিকৃত গমের মোট সংগ্রহের তুলনায় বিতরণ বেশি হওয়ায় গমের মজুদ কমে দাঁড়িয়েছে ২.২৩ লাখ মেট্রিক টনে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয় জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসামি পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় গ্রেফতার চার আসামি হাজির রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত প্রথম কোন শুনানি শুরু হওয়ায়, সে দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে, এই মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দেয়া হয়।
তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক আসামীরা হাজির না হওয়ায়, তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. কুতুবউদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো ইয়াকুব, শহীদ মো রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্বল্যমান এ সব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতি দেশকে আবার স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তিনি বলেন, সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসে, সে জন্য গণতান্ত্রিক ঐক্য দরকার।
এ সময়ে আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজন কী? এই ব্যবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে কোনো নেতা তৈরি হবে না, নেতৃত্বের বিকাশও হবে না। আমরা চিরায়ত গণতন্ত্রের পক্ষে, যেখানে বৈধ ভোটাররা ভোট দিয়ে নিজের এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে।’
‘একজন মানুষ দীর্ঘদিন মানুষের পাশে থেকে নেতা হয়েছেন, অথচ আনুপাতিক ভোটে তাকে নয়; দলকে ভোট দিতে হবে। এরপর দল থেকে বাছাই করে এমপি ঘোষণা করা হবে—এটি আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে প্রায় ১২ কোটি ভোটার রয়েছে, সেই ১৮ কোটি মানুষের দেশে কেন এমন ভোট পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে? যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, বছরের পর বছর কারাবরণ করেছে, সেই গণতন্ত্র আজ প্রশ্নবিদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে দেশের কোনো তরুণ শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। কখন কাকে ধরে নিয়ে যাবে, আর কার রক্তাক্ত লাশ তিস্তা, গঙ্গা কিংবা শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে পাওয়া যাবে—এটাই ছিল নিত্যদিনের চিত্র। এই ভয়াবহ সময় পার করতে হয়েছে আমাদের। শেখ হাসিনার দমন-পীড়নের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসতে পারে, তার জন্য গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য প্রয়োজন।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজির সঙ্গে বিএনপির কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের জড়ানো চলবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের আচরণে যেন সাধারণ মানুষ কষ্ট না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যেন বিএনপির কাছ থেকে ন্যায়বিচার পায়, সেই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ যদি এসব অপকর্মে জড়িত থাকে, দল সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে—এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।’
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও ‘বিজয়ের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির আয়োজন করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন রংপুর (ড্যাব)।
মন্তব্য