করোনার কারণে অর্থনীতিতে তৈরি হওয়া ক্ষত কাটাতে আরও এক বছর লাগবে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি মনে করেন, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও এখনও পুনরুদ্ধার হয়নি। পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে হলে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প-এমএমই, গ্রামীণ অর্থনীতিসহ ‘লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা, অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিই আগামীতে অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ হবে।
সরকারি ব্যয় ও ভোট বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে এই অর্থনীতিদিব বলেন, যত বেশি ব্যয় হবে, তত বেশি ভোগ সৃষ্টি হবে। চাঙ্গা হবে অর্থনীতি।
অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি, আগামী বাজেট ভাবনাসহ নানা বিষয় নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন এই অর্থনীতিবিদ।
করোনা পরবর্তী অর্থনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী ?
করোনার প্রথম দিকে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। কঠিন সময় পার হয়ে ধীর ধীরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে সম্প্রতি গতি আগের চেয়ে শ্লথ হয়েছে।
এই বার্তা আমাদের মতো দেশে খুবই গুরুত্ব বহন করে। কারণ, অনেকেই এখনও কর্মহীন। তাদের পক্ষে টিকে থাকাইটাই কঠিন। অর্থনীতি গতিশীল থাকলে মানুষের আয় রোজগারের সুযোগ তৈরি হয়।
সংক্রমণের শুরুর দিকে ঝুঁকি নিয়ে অর্থনীতি খুলে দেয় সরকার। এর সুফলও মিলেছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি এবং সেবা খাতে কাজের সুযোগ তৈরি হয়। ফলে কম সময়ে ঘুরে দাঁড়ায় অর্থনীতি। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানো আর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এক নয়।
ঘুরে দাঁড়ানোর চালেঞ্জ কাটিয়ে উঠা গেছে। এখন পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
তবে এটা ঠিক, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে।
করোনা মহামারির মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ অর্জনকে কীভাবে দেখছেন ?
দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা ও বিশ্বব্যাপী হুন্ডি বন্ধের ফলে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার অন্যতম কারণ রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহ।
প্রবাসীরা বেশি টাকা পাঠানোর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ স্ফীত হয়েছে। এটি চার হাজার ৩০০ কোটি ডলার (৪৩ বিলিয়ন) ছাড়িয়ে গেছে। আবার আমদানি কম হওয়ায় রির্জাভ বেড়েছে।
করোনা মহামারির মধ্যেও দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
এর একটি ইতিবাচক দিক আছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়কালে বেশি রিজার্ভ থাকার কারণে সহজেই অর্থ পাওয়া গেছে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে। কারণ, তারা মনে করে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে বাংলাদেশের।
চলতি অর্থবছরে আট মাস চলছে। সামনে অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী ?
এ মুহূর্তে অর্থনীতির দুটি চ্যালেঞ্জ। একটি হলো ভোগ ব্যয় চাঙ্গা করা। অন্যটি রাজস্ব আদায় বাড়ানো।
মানুষ কাজ হারিয়েছে, কাজ কম পাচ্ছে, কম আয় করছে। ফলে যে মাত্রায় গতিশীল হওয়ার দারকার অর্থনীতি, সেটি হচ্ছে না।
অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় না বাড়লে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে না। এ জন্য বেসরকারি বিনিয়োগের দিকে না থাকিয়ে কর্মসৃজনমূলক প্রকল্প নিতে হবে সরকারকে।
দ্ধিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা। আমদানি–রপ্তানি কামার কারণে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কম রাজস্ব আহরণ সরকারের জন্য বড় দুর্ভাবনা।
ব্যয় কমার কারণ কী ?
সম্পদের সীমাবদ্ধতা তেমন নেই। কারণ, রাজস্ব আহরণ কম হলেও ব্যাংক এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি থকে প্রচুর ঋণ নিচ্ছে সরকার। বিদেশি ঋণও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সরকারের সম্পদের ঘাটতি আছে,- এমনটি বলার সুযোগ নেই।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। যেসব প্রকল্পে কাজের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, সেগুলো প্রাধিকার দিয়ে যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
কিন্তু এখানে বড় দুর্বলতা আছে। দেখা যায়, অনেক বড় প্রকল্পে বেশি বরাদ্দ দেয়া হলেও তা ঠিকমতো খরচ করতে পারে না। টাকা ফেরত যাচ্ছে। অর্থবছরের শুরুতে ব্যয়ের দিকে বেশি নজর দিলে এ অবস্থা হতো না।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ কি যথেষ্ট বলে আপনি মনে করেন ?
প্রণোদনা ঘোষণার ফলে স্বস্তি দেখা দেয় অর্থনীতিতে। কিন্তু দুর্বল দিক হচ্ছে পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়ন না হওয়া। বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য দেয়া ঋণের শতভাগ ব্যয় হলেও পিছিয়ে ক্ষুদ্র,অতিক্ষুদ্র,মাঝারি ও কৃষিখাত। অথচ এসব খাতই অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি।
পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে হলে লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা সুবিধা দিতে হবে। ক্ষুদ্র,অতিক্ষুদ্রসহ এসএমই, সেবা ,অ-প্রাতিষ্ঠানিক, গ্রামীণ অর্থনীতিকে এ সুবিধা দিতে হবে।
ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে ক্ষুদ্রঋণ দানকারি সংস্থার, এনিজও এবং স্থানীয় পর্যায়ে সমিতির মাধ্যমে ঋণসহায়তা দিতে হবে। ঋণসুবিধার পাশাপাশি কর সুবিধা দেয়া যেতে পারে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে কোন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া উচিত?
কর্মসংস্থানের জন্য রপ্তানিমুখী খাতের অবশ্যই গুরুত্ব রয়েছে। এর বাইরে কৃষিভিত্তিক, এসএমই, পরিবহন, পর্যটন খাতে বেশি সুবিধা দিতে হবে। সহজ শর্ত ও কম সুদে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি এসব খাতের কর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি খাতে আরও বিনিযোগ বাড়াতে হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের জন্য। এখন থেকে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় থেকে বলে দিতে হবে, তারা যাতে এমন প্রকল্প প্রস্তাব রাখে যেখানে বেশি কাজের সুযোগ তৈরি হয়।
চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন -জিডিপি কত হতে পারে বলে আপনি মনে করেন ?
বিগত অর্থবছরের উপর ভিত্তি করে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রাক্কলণ করা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এটি অর্জন সম্ভব নয়।
পূর্ণাঙ্গ তথ্য উপাত্ত নেই। ফলে এ বছর জিডিপি কত হবে তা হিসাব করা কঠিন।
গত অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত অর্থনীতি স্বাভাবিক ছিল। এর পর থেকে কয়েক মাস স্থবির হয়ে পড়ে অর্থনীতি। ফলে প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়।
সেই অবস্থান থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এখনও আগের চেহারায় ফিরে যেতে পারেনি। আশা করা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের মতো বা তার কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি হতে পারে এবছর।
অর্থনীতি আগের চেহারায় ফিরে পেতে আর কত সময় অপেক্ষা করতে হবে ?
বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটি বড় সাফল্য আমাদের জন্য। মানুষ পুরো আয় করতে না পারলেও রোজগার বন্ধ হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজের সুযোগ সীমিত এখনও। যারা চাকরি হারিয়েছে কাজ পায়নি তারা।
যারা এখনও বেকার বা অর্ধ বেকার বা পূর্ণ আয় করতে পারছেন না, এদের স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে যেতে সময় লাগবে।
কিন্তু আশার দিক হলো, স্বল্প আয় ও খেটেখাওয়া মানুষ আয়- রোজগার করছে। এদের সংখ্যাই বেশি। অর্থনীতি পুরোপুরি সচল হতে ২০২১ সাল লাগবে।
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে আন্তর্জাতিক বাজারে নানা সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?
২০১৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শুল্ক দিয়ে ওই দেশের বাজারে প্রবেশ করছে। এ সুবিধা না থাকায় পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি খুবে বেশি না হলেও খারাপ করছে না বাংলাদেশ।
শুল্কসুবিধা না থাকলে আমরা পারব না, এ ধারণা ঠিক না। দেশের উদ্যোক্তরা এখন যথেষ্ঠ সামর্থ্য অর্জন করেছেন। খরচ কীভাবে কমানো যায় সেই দিকে নজর দিচ্ছেন তারা। উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরি করছে, যাতে আরও বেশি মুনাফা করা যায়।
শুল্ক সুবিধা উঠে গেলে অবশ্যই বাংলাদেশের উপর চাপ বাড়বে। কিন্তু কিন্তু এটি না হলে যে সক্ষমতা হারিয়ে যাবে তা ভাবার কারণ নেই। অতীতে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ।
এ জন্য উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে।
এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতার বড় একটা হাতিয়ার হতে পারে এফডিআই। এ সুযোগটি যেন কোনোভাবেই অবহেলা না করা হয়।
এলডিসি থেকে উত্তরণে দুই বছর সময় চেয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্ততি পর্বে এ সময় কি পর্যাপ্ত ?
স্বাভাবিক সময়ে ২০২৪ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ। করোনার কারণে অর্থনীতি দুর্বল হওয়ায় তা থেকে পিছিয়েছে। এ জন্য সরকার দুই বছর সময় চেয়েছে এবং বাড়তি সময় চাওয়াটা যুক্তিসঙ্গত।
আরও সময় নিলে ভালো হতো। তবে সরকার মনে করছে, কাজটি দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারবে এবং অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সেই বিবেচনায় দুই বছর সময় যুক্তিসঙ্গত।
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে জবাবদিহি, সমন্বয় ও তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও পানি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ব্যবস্থায় তরুণ প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশন ও চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইনসিনারেশনের বিকল্প হিসেবে উন্নত প্রযুক্তির মতো নিরাপদ ও ব্যবহারিক সমাধান গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রানা ফ্লাওয়ার্স-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বৈঠকে শিক্ষা, সামাজিক খাত ও তরুণদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগ জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে রানা ফ্লাওয়ার্স শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব—যেমন বন্যা, অপুষ্টি ও শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাহত হওয়া উল্লেখ করে বলেন, ইউনিসেফ তরুণদের জলবায়ু সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বিভিন্ন জেলায় তরুণদের নিয়ে পরামর্শ সভার পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব দেন এবং নিয়মিতভাবে তরুণদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগের জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
পরিবেশ সচেতনতা তৈরির অংশ হিসেবে ইউনিসেফ একটি যৌথ ডকুমেন্টারি সিরিজ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়, যেখানে শিশুদের পরিবেশবান্ধব বার্তা স্থান পাবে। উপদেষ্টা এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
বৈঠকে ইউনিসেফ ও মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পরিবেশ শিক্ষাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ও স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু উদ্যোগ পরিচালনার ব্যাপারে একমত পোষণ করে। পরিকল্পনায় পুনর্ব্যবহার, বর্জ্য পৃথকীকরণ এবং শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে জরুরি প্রস্তুতির কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চিফ অব ওয়াশ পিটার জর্জ এল ম্যাস, চিফ অব ফিল্ড সার্ভিসেস ফ্রাঙ্কো গার্সিয়া এবং প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (জলবায়ু) ভ্যালেন্টিনা স্পিনেডি।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফ উভয় পক্ষই জলবায়ুবান্ধব নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ও দেশের টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করে।
এক সময় গ্রামবাংলার প্রকৃতিতে যেসব গাছ ছিল অত্যন্ত পরিচিত ও উপকারি, আজ তার অনেকগুলোই ‘বিলুপ্তপ্রায়’। বন অধিদপ্তরের আয়োজনে বৃক্ষমেলায় হারিয়ে যাওয়া, দুর্লভ এবং ‘বিলুপ্তপ্রায়’ গাছগুলো স্থান পেয়েছে এবার। মঙ্গলবার (০১ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বৃক্ষমেলা ঘুরে দেখা গেছে, দর্শনার্থীরা খুঁজে খুঁজে এসব গাছ কিনছেন। কেউবা আবার ছবি তুলে নিচ্ছেন। অনেক গাছের নাম কেউ কেউ শোনেননি কখনও। অনেক বৃক্ষপ্রেমী আবার অনেকে নিজের শৈশবের স্মৃতির সঙ্গে মেলাতে পেরে আবেগাপ্লুত হচ্ছেন।
নার্সারির মালিক ও বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঔষধি, ফল, ফুল, বনজ, শোভাবর্ধনকারী ও মশলা জাতীয় বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ গাছের মধ্যে রয়েছে বাঁশপাতা, দোলনচাঁপা, চিত্তাগাছ, পারুল, রুদ্রপালাশ, গুটিজাম, জৈষ্ঠ্যমধু, বনসাই, শতমূল, কাউ, রক্ত চন্দন, পানবিলাসী, বিলাতী গাব, অশ্বোক, স্বর্পগন্ধা, বনখেজুর, বালবোরক্স, লম্বা ট্রায়াস অর্কিড ও বলগাছসহ বহু প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় গাছ। এসব গাছের সঙ্গে গাছের পরিচয় ছোট সাইনবোর্ড দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া রয়েছে।
এছাড়া নার্সারির বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন, শোভাবর্ধনকারী গাছ পাকুড়, কুর্চি, ঝিনুক, মোচা, মহুয়া গাছ। কাঠ গাছের মধ্যে রয়েছে, গর্জন, লোহাকাঠ, ছাতিম, ওয়াটার ব্যাম্বো। ফুলের মধ্যে, সোনালু, ককসিয়া, গার্ডেনিয়া, টিপু সুলতান, শিমুল, অঞ্জনা, মহুয়া উল্লেখযোগ্য।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ন, নির্বিচারে বন উজাড়, কাঠের ব্যবসা এবং বনায়নের অভাবে এসব গাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব গাছ সংরক্ষণ করা না গেলে শুধু প্রকৃতির ভারসাম্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, হারিয়ে যাবে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের একটি বড় অংশ। এজন্য মেলা থেকে শুধু গাছ কেনা নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দেশীয় প্রজাতির গাছ বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার করাও জরুরি।
বৃক্ষমেলায় অংশ নেওয়া খান নার্সারির ম্যানেজার জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা চেষ্টা করি বিলুপ্তপ্রায় গাছের চারা তৈরি করার। মানুষও আবার আগ্রহ দেখাচ্ছে এসব গাছ রোপণে। তবে সরকারের উচিত এসব গাছ রক্ষায় ভূমিকা রাখা।
কিংশুক ও গ্রিন হাউস নার্সারির বিক্রয়কর্মী রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা যেহুতু নার্সারি করি সব ধরনের গাছই রাখতে হয়। মানুষ বইখাতা দেখে অনেক গাছ কিনতে চায়। সে কারণে আমরা সব ধরনের গাছ বহু কষ্টে সংগ্রহে রাখি। নার্সারিগুলো বন-জঙ্গল ঘুরে ঘুরে বিলুপ্তপ্রায় গাছ সংগ্রহ করেন।
বৃক্ষমেলায় কথা হয় রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে আসা নীলা আলমগীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ঢাকার অনেক নার্সারিত ঘুরেছি। মন মতো গাছ পাইনা। কিন্ত মেলায় এসে এমন অনেক গাছ পেয়েছি, যেগুলো জীবনেও দেখিনি। মহুয়া গাছ, আর পারুল গাছ কিনেছি। পান বিলাসী গাছও নিয়েছি।
মেলায় আসা বৃক্ষপ্রেমীরা বলছেন, বৃক্ষমেলা শুধু গাছ বিক্রির জায়গা নয়, বরং দেশীয় প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবন করার একটা জায়গা। সময় এসেছে নিজ নিজ এলাকায় এসব বিলুপ্তপ্রায় গাছ রোপণ ও সংরক্ষণে সক্রিয় হওয়ার।
প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১০০ জনকে আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২০ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বাসস’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির ছয়টি মামলার আজ ধার্য তারিখ ছিল। পাঁচ মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামিরা পলাতক অবস্থায় রয়েছেন মর্মে প্রতিবেদন এসেছে। অপর এক মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১২ জন আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। এদিন গেজেট প্রকাশ হয়ে আসেনি। আদালত ছয় মামলারই গেজেট প্রকাশের জন্য নির্দেশ দেন। ছয় মামলারই আগামী ২০ জুলাই পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব মামলায় চার্জশিট আমলে নিয়ে শেখ হাসিনাসহ ১০০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি বলে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর আইনুযায়ী আসামিদেন আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন আদালত। গেজেট প্রকাশ হয়ে আসলে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।
শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে দেশ গঠনে জুলাই পদযাত্রার কার্যক্রম শুরু করলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)’র নেতারা।
মোনাজাত শেষে আবু সাঈদের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
আজ (১ জুলাই) দুপুরে কেন্দ্রীয় নেতারা আবু সাঈদের বাড়িতে যান।
পরে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শুধু স্বৈরাচারী সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না, নতুন বন্দোবস্তের জন্য ছাত্র আন্দোলন ছিল। এই আন্দোলনে যারা সংহতি প্রকাশ করেছেন, তাদের চেতনাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিচার ব্যবস্থা, নতুন সংবিধান, জুলাই সনদসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এনসিপি মাঠে থাকবে।
যৌক্তিক সংস্কারে প্রয়োজনে আবারো সংগঠিত হয়ে ছাত্র-জনতাকে নিয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন নাহিদ ইসলাম। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে কোনো টালবাহানা সহ্য করা হবে না। দরকার হলে আবারো রাজপথে নামবো। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরেই নির্বাচন দিতে হবে, অন্যথায় সেই নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না।
দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ন্যায়সঙ্গগত সংস্কার ও মানুষের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত এক পা পিছিয়ে আসবে না এনসিপি।
নেতারা জানান, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে এই কর্মসূচি চালু হয়েছে। তারা বলেন, জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপে যেতে চায় এনসিপি, কারণ গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ। এই পদযাত্রার মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষের মতামত ও প্রত্যাশা সরাসরি জানার সুযোগ তৈরি করতে চায়।
বিকালে শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনাস্থলসহ রংপুর নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করবেন তারা।
শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা ও পদযাত্রার সূচনা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা। ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি চলবে ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত।
কবর জিয়ারতে অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হবে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর শহীদ মিনার থেকে। পরে রংপুরে পার্কের মোড় থেকে বিকেল ৩টায় পদযাত্রা শুরু হয়ে লালবাগ-শাপলা-জাহাজ কোম্পানির মোড় হয়ে টাউন হল মাঠে পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ডিসির মোড় হয়ে ধাপ হয়ে মেডিকেল মোড় হয়ে চেকপোস্টে সমাপনী হবে।
জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছর ১৬ জুলাই দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। ছাত্রদের সবাই সরে গেলেও আবু সাঈদ হাতে একটি লাঠি নিয়ে দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান।
এই অবস্থায় পুলিশ আনুমানিক ৫০-৬০ ফুট দূর থেকে তার ওপর ছররা গুলি ছোড়ে। পুলিশের অবস্থানে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। তারপরও অবস্থান থেকে একচুল সরেননি আবু সাঈদ, সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে, বিএনপির বিশেষ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আজ বিকালে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনা সভা শুরু হবে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিখি হিসেবে থাকবেন বলে আশা করছি।’
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিকাল তিনটায় এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হবে। সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।’
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনের কর্মসূচির প্রথম ধাপ এটি। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও পেশাজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আলোচনা সভার ব্যানারে লেখা আছে, ‘গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠান।
এই আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সভাপতিত্ব করবেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ও বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও নিখোঁজ হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের পরিবার-পরিজন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য দেবেন। এছাড়া বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের নেতারাও এতে বক্তব্য রাখবেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিএনপি ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির মধ্যে আছে, বিজয় মিছিল, মৌন মিছিল, ছাত্র সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, রক্তদান, গ্রাফিতি অঙ্কন, পথনাটক, ফুটবল টুর্নামেন্ট, শিশু অধিকার বিষয়ক অনুষ্ঠান, ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ অন্তত ২২টি ভিন্নধর্মী আয়োজন।
মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ‘আলোর আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বল’ শীর্ষক মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির মাধ্যমে জুলাই-আগস্টে বিএনপির কর্মযজ্ঞের সূচনা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, সদস্য ও সমর্থকরা যতক্ষণ না জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো শুরু করে, দুঃখ প্রকাশ না করে-ততক্ষণ পর্যন্ত তারা শান্তি পাবে না।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ শফিকুল আলম আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, “আমরা মাটি থেকে আপনাদের কুৎসিত প্রভাবের দাগ মুছে ফেলব এবং তা রক্ত দিয়ে ধুয়ে ফেলব। আপনারা কখনও শান্তি পাবেন না—যতক্ষণ না শহীদ ও আহতদের প্রতি সম্মান দেখান। যতক্ষণ না আপনি ‘দুঃখিত’ বলেন।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করেছি প্রায় দশ মাস—যাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, সদস্যবৃন্দ এবং তাদের সমর্থকরা দুঃখ প্রকাশ করে এবং একটি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টায় আমাদের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু গত বছরের জুলাই থেকে আপনারা যা করেছেন তা হল শহীদদের নিয়ে উপহাস, আমাদের সংগ্রামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং ১৭ কোটি মানুষকে ‘জঙ্গি’ বলে কলঙ্কিত করেছেন—এই আশায় যে, আপনার ঔপনিবেশিক প্রভুরা এসে আবারো আপনাদের হাতে দেশ তুলে দেবে, যেন লুণ্ঠন ও বিশৃঙ্খলার আরেকটি অধ্যায় শুরু করতে পারেন’।
‘দুঃখিত, এবার আর তা হবে না। জুলাই আমাদের সাহসী করেছে। জুলাই আমাদের শিখিয়েছে প্রতিকূলতার মুখেও মাথা তুলে দাঁড়াতে। জুলাই আমাদের ডিএনএ-তে স্থায়ীভাবে এক বিরল সাহসের জিন প্রবেশ করিয়েছে। আমরা আর আগের মতো নই,’ তিনি বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, জুলাই আমাদের শিখিয়েছে হাল না ছেড়ে ঝড়ের মতো গুলির মধ্যেও দাঁড়িয়ে থাকার দৃঢ়তা। জুলাই আমাদের ভুলতে দেয় না আমাদের শহীদদের, যাদের আপনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছেন; যাদের চোখ উপড়ে নিয়েছেন, যাদের আত্মাকে ছিন্নভিন্ন করেছেন।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আপনাদের সঙ্গে কখনও শান্তি হবে না—যতক্ষণ না আপনি ‘দুঃখিত’ বলেন, যতক্ষণ না আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার হাতে রক্ত দেখতে পান।’
মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে লড়ব—আমাদের জমিতে, নদীতে, পাহাড়ে। আমরা লড়ব ভার্চুয়াল জগতেও। আপনারা গণহত্যার সহযোগী ও মানবাধিকারের ডাকাত, আমরা আপনাদের মুখোশ খুলে ফেলব।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করে বলেছেন, যে লক্ষ্য নিয়ে তরুণ ছাত্র, জনতা, রিকশাচালক, শ্রমিকরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন-সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে আমরা গত বছরের প্রতিটি দিনকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করব। এই অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আবার নতুন করে শপথ নেব এবং এটা আমরা প্রতি বছর করব, যাতে স্বৈরাচার আর যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে।
আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ ইতিহাসের এক গৌরবময় ক্ষণ। এক বছর আগে, এই জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান রচনা করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছিল। জুলাই ছিল দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এক অমোঘ ডাক, জনতার এক জাগরণ। সেই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল— “ফ্যাসিবাদের বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থাণের স্বপ্ন ছিল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ এই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করার যে অনুষ্ঠানমালা নিয়েছি, এটা শুধু ভাবাবেগের বিষয় নয়, ক্ষোভ প্রকাশের বিষয় নয়। আমরা ১৬ বছর পরে বিরাট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং যে কারণে অভ্যুত্থান হয়েছিল, তাৎক্ষণিক তাঁর যে লক্ষ্য ছিল সেটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তাঁর পেছনে ছিল একটা বিরাট স্বপ্ন- নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
স্বৈরাচার যেন আর কখনও ফিরে আসতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা প্রতি বছর এই সময়টা উদযাপন করব যাতে পরবর্তীতে আবার এই অভ্যুত্থান করার জন্য ১৬ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়। আমরা প্রতি বছর এটা করব, যাতে স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলেই তাৎক্ষণিক ভাবে আমরা তার বিনাশ করতে পারি।
সেটার জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান পুনরুত্থান কর্মসূচি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বৈরাচারের প্রথম পাতা মেলার আগেই যেন আমরা তাকে ধরে ফেলতে পারি। ১৬ বছর যেন আমাদের অপেক্ষা করতে না হয়।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে জুলাই গণঅভ্যুত্থাণে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে গভীর গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, সেই সব তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, রিকশাচালকদের—যারা রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছিলেন; সাহস, ত্যাগ আর দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন’।
জুলাইকে ঐক্যের মাসে পরিনত করার আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, আমরা আজ মাসব্যাপী যে কর্মসূচির সূচনা করছি, তা শুধুই স্মরণ নয় বরং একটি নতুন শপথ। গত বছরের জুলাইয়ে এ দেশের সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আমরা চাই, এই জুলাইয়ে সেই ঐক্য আবার সুসংহত হোক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য— জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার দাবি জানানো এবং রক্তের বিনিময়ে পাওয়া সংস্কারের এই সুযোগকে হারিয়ে না ফেলা। আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন, কিন্তু মস্ত বড় সম্ভাবনাও আছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনগণ যখন জেগে ওঠে, তখন কোনো শক্তিই তাদের রুখে দিতে পারে না। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমি আপনাদের আহ্বান জানাই—আসুন, এই জুলাই মাসকে পরিণত করি গণজাগরণের মাসে; ঐক্যের মাসে’।
জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক। আমাদের ঐক্য সর্বমুখী হোক, অটুট হোক আমাদের এই অনুষ্ঠানমালার লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য