পুঁজিবাজারে উত্থান বা পতন, বাজারে চাঙ্গাভাব বা মন্দা- যে কোনো পরিস্থিই থাকুক না কেন, মাস তিনেক ধরে পুঁজিবাজারে বেক্সিমকো লিমিটেডের কদর কমছেই না।
বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে এই কোম্পানিটি। হাতে গোনা এক দুই দিন ছাড়া প্রতি দিনই লেনদেনের শীর্ষে থাকছে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের পারিবারিক কোম্পানিটি।
২০১০ সালের মহাধসের পর সাত থেকে আট বছর ঘুমানো শেয়ারটি জেগে উঠে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে কেন- এই বিষয়টি জানার চেষ্টা করছেন বহুজন।
গত তিন মাসে এই শেয়ারটিতে যারা কিনেছেন, তারা বেশ ভালো মুনাফা পেয়েছেন। ২০ টাকা থেকে টানা বেড়ে ৫০ এক কোটায় এরপর ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকার ঘরে গেছে শেয়ারটি।
মাঝে কিছুটা দরপতন হয়ে আবার নামে ৭০ টাকার ঘরে। কিন্তু পরে আবার বাড়ে দাম। এখান থেকে ৯০ টাকার ঘরে পৌঁছতে সময় লাগেনি।
এর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডের মূল্য সংবেদনশীল বেশ কিছু তথ্য এসেছে। করোনাকালে যখন দেশের রপ্তানি আয় তলানিতে পড়ে, তখন পিপিই তৈরি করে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে তারা। বিদ্যুৎকেন্দ্রেও বিনিয়োগ করেছে কোম্পানিটি।
ভারত থেকে করোনার টিকা আনতে এই গ্রুপের আরেক কোম্পানি বেক্মিমকো ফার্মা হয়েছে লোকাল এজেন্ট এবং তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা আনায় প্রতি ডোজে এক ডলার করে পাবে তারা।
আবার প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছে পিপিই পার্ক। বছরে এখান থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানির আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখান থেকে।
বুধবার সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসেও বেক্সিমকো লিমিটেড নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের। এদিন বাজারে যত লেনদেন তার এক তৃতীয়াংশই হয়েছে এই একটি শেয়ারের হাতবদলে।
এদিন লেনদেন হয়েছে ৮৬৩ কোটি ৮৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে এক বেক্সিমকোর লেনদেন হয়েছে ২৫৮ কোটি ৭৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকার।
যদিও গত কয়েকদিনে শেয়ারটির দর টাকা বৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা দিয়েছিল, তাতে ছেদ পড়েছে। আগের দিনের তুলনায় ৫ টাকা ৬০ পয়সা দর হারিয়েছে শেয়ারটি।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেনযোগ্য শেয়ার বা ফ্রি ফ্রট শেয়ার আছে বেক্সিমকোর। আর নানা ইতিবাচক খবরে বিনিয়োগকারীরা এখন আকৃষ্ট হয়েছেন।
কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ৮৭ কোটি ৬৩ লাখেরও বেশি। এর ৩০.৫৫ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। বাকি প্রায় ৭০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ২৯ কোটি শেয়ার লেনদেনের যোগ্য।
গত ২৫ জানুয়ারি সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে বেক্সিমকোর। সেদিন তিন কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার ১৩৩টি শেয়ার কেনাবেচা হয়। আজ হাতবদল হয়েছে দুই কোটি ৮২ লাখ ৫৩ হাজার ১৩৭টি।
গত ২ ডিসেম্বরের পরে কখনও এক দিনে এক কোটির কমে শেয়ার কেনাবেচা হয়নি এই কোম্পানিটির। এর মধ্যে ২৬ কার্যদিবস দিনে দুইরও বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে এই একটি কোম্পানির।
বুধবার বেক্সিমকো গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারেও ছিল তুমুল আগ্রহ। সবচেয়ে বেশি লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল এটি।
এদিন বেক্সিমকো ফার্মার ৪১ লাখ ৯২ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮০ কোটি টাকা।
আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণার আগে পরে তুমুল আগ্রহ তৈরি হওয়া বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড-বিএটিবিসির শেয়ারের অবস্থান তৃতীয়তে। একটির বিপরীতে দুটি বোনাস শেয়ার পাবেন এর বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনছেন তারা।
বুধবার এর তিন লাখ ৯৩ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকয়।
লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও দর ধরে রাখতে পেরেছে নতুন তালিকাভুক্ত রবি। নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলে বড় দর পতনের যে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সেটি হয়নি এই শেয়ারের ক্ষেত্রে।
আগের দিনের ধারাবাহিকায় আজও সামান্য দর হারিয়েছে শেয়ারটি। তবে শতকরা হিসাবে তা ১.৪৩ মাত্র।
কোম্পানিটির ৯১ লাখ ৬৭ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকায়।
আজ পুঁজিবাজারে সার্বিক লেনদেনে ৫৬ শতাংশ ভূমিকা ছিল পাঁচ কোম্পানির। মোট লেনদেন হয়েছে ৮৬৩ কোটি টাকা। পাঁচ কোম্পানির মোট লেনদেন হয়েছে ৪৮৫ কোটি টাকা।
বিমা খাতে আবার উত্থান
লেনদেনের শুরুতেই দর বাড়তে থাকে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের। ৪৯টি বিমা কোম্পানির মধ্যে সাড়ে নয় শতাংশের বেশি দর বেড়েছে ২৪টি কোম্পানির।
এই খাতের মাত্র একটির দর কমেছে। দুইটির দর পাল্টায়নি। আর বাকি ৪৬টির দর বেড়েছে।
লেনদেনর শুরুর এক ঘণ্টায় শীর্ষ দর বৃদ্ধি পাওয়া ৩৭ কোম্পানির সবগুলোই ছিল বিমার। এমনকি শেয়ার বিক্রেতা শূন্য হয়ে পরে ১৭ কোম্পানির।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমা কোম্পানির শেয়ার নিয়ে আগেও কারসাজি হয়েছে। তখন বিমার শেয়ারের দর বাড়ানো হয়েছিল। এতে সিংহভাগ বিনিয়োগকারী লোকসান করেছে।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যেসব বিনিয়োগকারী আছে তাদের কতজন বিমা সম্পর্কে জানে? কিন্ত বিমার শেয়ারের দর বাড়ছে এটা শোনেই কিনতে আগ্রহী হয়ে যায়। তবে দর বাড়লেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এর মুনাফা নিতে পারে না।’
ইসলামী ইন্স্যুন্সের সচিব মুজিবর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশেষ কোনো কারণ নেই বিমার শেয়ারের দর বাড়ার। পুঁজিবাজারের কোনো কারণ ছাড়াই দর বাড়ে।’
স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের সচিব ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার মুন্সী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমা নিয়ে এমন কোনো তথ্য জানা নেই যাতে পুঁজিবাজারে এই খাতের এমন প্রভাব পড়তে পারে। তবে সম্প্রতি সময়ে আইডিআরএ যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে এজেন্ট কমিশন বাতিল, পরিচালকদের পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার ধারণ ইত্যাদির প্রভাব থাকতে পারে।’
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ২৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫০৩ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস এক দশমিক ৬৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৫০ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১২০ পয়েন্ট।
এ সময়ে ৩৪৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০১টির, কমেছে ১৪১টির, পাল্টায়নি ১০২টির।
এ সময়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের-সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৬৬ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৪১ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২৪০ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ১০৭টির ও পাল্টায়নি ৫৭টির। লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি টাকা।
আগ্রহ অনাগ্রহের কোম্পানি
বুধবার দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশ কোম্পানি মধ্যে নয়টি ছিল বিমার। এরমধ্যে জনতা ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ দশ শতাংশ। এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের নয় দশমিক ৯৮ শতাংশ, মিরাক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের দর বেড়েছে নয় দশমিক ৯৬ শতাংশ, প্রভাতি ইন্সেরেন্সের নয় দশমিক ৯৪ শতাংশ, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের নয় দশমিক ৯২ শতাংশ।
এছাড়া এ তালিকায় ছিল অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স ও ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স।
দর পতনের দিক দিয়ে বুধবার শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, যার পাঁচ দশমিক ৮৭ শতাংশ দর কমেছে। এছাড়া এ তালিকায় ছিল মাইডাস ফিন্যান্স, শাইনপুকুর সিরামিক, এসএস স্ট্রিল, যমুনা ব্যাংক, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য