পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বাড়াতে এক্সপোজার লিমিট গণনার হিসাব নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আলোচনায় এই বিষয়টি জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সোমবার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে এই সভা হয়।
বিএসইসি চেয়ারম্যান ব্যাংকগুলোকে বর্তমান সীমায় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিলে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এক্সপোজার নীতিমালার কারণে এটি কঠিন।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আর্থিক খাতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ করা উচিত।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার পর সংস্থাটি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করে আসছে। সম্প্রতি বিএসইসি চেয়ারম্যান দুবাইয়ে রোড শো করে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম এবং এটাকে বাজারের স্থিতিশীলতার একটি অন্তরায় হিসেবে দেখা হয়।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার দর হঠাৎ পড়ে গেলেই বিক্রি করে দেন বা তহবিলের অভাবে মূল্য সমন্বয় করতে পারেন না। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের তহবিল বড় থাকায় এই মূল্য সমন্বয় খুব একটা সমস্যা হয় না।
তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংকের বিনিয়োগ বেঁধে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে শেয়ারের দাম বাড়লে বাজারমূল্যের হিসাবে নির্ধারিত হয় এক্সপোজার লিমিট। ফলে তখন ব্যাংকগুলোতে শেয়ার বিক্রি করে দিতে হয়।
আবার কেনার পর শেয়ারের দাম কমে গেলে তখন আবার হিসাব হয় ক্রয় মূল্যে। ফলে বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয় না।
ধরা যাক, কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগের সীমা ১০০ টাকা। ব্যাংক ৮০ টাকায় শেয়ার কিনেছে। কিন্তু দাম বেড়ে সে শেয়ারের দাম হয়ে গেল ১১০ টাকা। তখন ব্যাংককে ১০ টাকার শেয়ার বিক্রি করে দিতে হয়।
আবার উল্টোটা হলে অর্থাৎ ৮০ টাকার শেয়ারের দাম কমে ৬০ টাকা হয়ে গেলে তখন ৪০ কিন্তু ৪০ টাকায় আরও বেশি শেয়ার কিনে সমন্বয়ের সুযোগ থাকে না। তখন কেনা যাবে ২০ টাকার শেয়ার।
এই এক্সপোজারের হিসাব গণনার নীতি পাল্টাতে গত কয়েক বছর ধরেই পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রাজি হচ্ছে না।
বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ সীমার কাছাকাছি থাকায় নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে।
বিদ্যমান বিধিমালা অনুসারে, একটি ব্যাংক তার রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
তখন যেসব ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার কম বিনিয়োগ আছে তাদের বিনিয়োগের আহবান জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান।
সংস্থার কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ২২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা- সিএফও সঙ্গে সভা আয়োজন করা হয়।
সভায় সৌজন্য স্বাক্ষাতে যোগ দেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
বৈঠকের বিষয়ে কমিশনার সামসুদ্দিন বলেন, ‘সভায় পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আছে কি না সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে যখন উত্থান ও পতন হয় তখন তাদেরও কিছু দায়িত্ব থাকে। সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেগুলোর সমাধানে আমরাও কাজ করব। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ের সভার মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সাংবাদিকদের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদে ৫০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে চারটি বিরোধী দলের জন্য ধার্য হয়েছে এবং সব রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে একমত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের (১৭ জুন) সভায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাবলিক অ্যাকাউন্ট, প্রিভিলেজ, ইস্টিমেশন এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দল থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সবাই একমত বলে জানিয়েছে তিনি।
বাকি স্থায়ী কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘শুধু এই চারটি কমিটি না, সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে বাকি কমিটিতেও আনুপাতিক হারে বিরোধীদলের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে।’
‘এছাড়া সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ যেখানে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সদস্য পদ বাতিলের বিধান আছে, সে বিষয়ে আস্থা ভোট এবং অর্থ বিল বাদে অন্য কোনো বিষয়ে ভোটদানে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সবাই একমত,’ বলেন তিনি।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা এই দুই বিষয়েও দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যাবে না এমন মত দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে এই দুই বিষয়ে অটল থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে ৭০নং অনুচ্ছেদে এ দুটি বিষয়ও যুক্ত করা হবে।’
নারীদের ১০০ সংরক্ষিত আসন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই এ বিষয়ে একমত। তবে নির্বাচন পদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে মতানৈক্য আছে। আশা করছি, আজকের আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সমাধানে আসা যাবে ‘
এছাড়া জুলাই সনদের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা ইশতেহার গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এ নেতা।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের আওরাখালী বাজারে বর্ষার আগমনের আগেই শুরু হয়েছে নৌকা তৈরির ব্যস্ততা। বেলাই বিল ঘিরে গড়ে ওঠা এই ঐতিহ্যবাহী নৌকার বাজারে ইতোমধ্যে কাঠমিস্ত্রিরা দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন নানা আকার-আকৃতির কাঠের নৌকা। বর্ষার পানিতে ভাসিয়ে মাছ ধরা, কৃষিকাজ কিংবা সাধারণ যাতায়াতের জন্য এসব নৌকা স্থানীয় মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের মতে, এই বাজারে প্রায় বিশটির বেশি দোকান বা কাঠের কারখানা রয়েছে, যেখানে কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক। নৌকা তৈরির মৌসুম শুরু হতেই এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। কাঠের উপর নির্ভরশীল এই শিল্পটি শুধু বর্ষাকালেই নয়, বছরের অনেকটা সময় জুড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে এলাকার বহু মানুষের জন্য।
একজন অভিজ্ঞ কারিগর জানান, "আমরা ছোট-বড় নানা আকারের নৌকা তৈরি করি। চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন এবং কাঠ ব্যবহার করে নৌকা বানানো হয়। ছোট নৌকার দাম শুরু হয় আট হাজার টাকা থেকে, আর বড় নৌকার দাম গিয়ে ঠেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকায়।"
নৌকা কিনতে আসা এক কৃষক বলেন, "প্রতি বছর বর্ষার আগে একটা নৌকা কিনতে হয়। বিলের ভেতর যাতায়াত, ফসল তোলা আর মাছ ধরার কাজে এটি খুবই দরকারি।"
এই বাজারের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সরকারি সহায়তা পেলে এই নৌকা শিল্প আরও প্রসারিত হতে পারে। নৌকা রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলে দেশের বাইরেও এই হস্তশিল্পের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অনেকেই।
প্রাকৃতিক জলাভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আওরাখালীর এই নৌকা বাজার শুধুই ব্যবসার স্থান নয়—এটি গ্রামীণ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্ষা যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই যেন এখানে নতুন জীবনের স্পন্দন ফিরে আসছে।
চট্টগ্রামে আবারও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ছয় দিনে মোট ৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। যেকোনো সময় রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অথচ ঘোষিত দুই করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে আইসোলেশন বেড প্রস্তুত করা ছাড়া আর কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তবে হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কোনো বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। টিকিট কাউন্টার, ল্যাব, জরুরি বিভাগ, ডাক্তারের কক্ষ, ঔষধাগার সব জায়গায় রোগীদের ভিড়। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। তা ছাড়া কারও কারও মুখে মাস্কও নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৭টির ভেন্টিলেটর নষ্ট। মাত্র একটি সচল থাকলেও মাঝে মধ্যে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। অথচ ২০২০ সালে করোনা মহামারির শুরুতে এখানে প্রথমে ১০টি, পরে আরও ৮টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়। মোট ১৮টি নিবিড় পরিচর্যা বেড স্থাপন করলেও এখন সেগুলোর যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়ে আছে। এগুলো মেরামতের জন্য ঢাকা থেকে লোক আসবে। সেগুলো দ্রুত মেরামতের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৮টিতে রোগী ভর্তি করা হলেও মাত্র একটির ভেন্টিলেটর চালু আছে। বেশির ভাগ মনিটর নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সেবা চালু থাকলে হাইফ্লো নজেল অক্সিজেন ও অন্য যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। হাসপাতালে সরকার অনুমোদিত পদের সংখ্যা সব মিলিয়ে ২৪২টি। বর্তমানে সংযুক্তি, ওএসডি, নিয়মিতসহ ১২৬ জন ডাক্তার আছেন। নার্স আছেন ১৩৪ জন। চিকিৎসক, নার্স, স্টাফসহ মোট জনবল আছে ৩৫৬ জন। তবে সবাই নিয়মিত নয়। ২০২০ সালে করোনা রোগীদের জন্য এখানে ২২ জন চিকিৎসককে আনা হলেও বর্তমানে তারা কেউই নেই। সবাইকে ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে। ২০২৪ সালের কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালে ১৭৭ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৪২ জন। এর মধ্যে ২০ জন চিকিৎসক বিভিন্ন বিভাগে প্রশাসনিক পালন করছেন। সে জন্য রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন না।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. একরাম হোসেন বলেন, ‘মেডিসিন ওয়ার্ডে ২০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য ৫টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি সব আইসিইউ শিগগিরই প্রস্তুত হয়ে যাবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ডাক্তার, নার্সসহ জনবল বাড়ানোর জন্য অধিদপ্তরে বলেছি। করোনা পরীক্ষার জন্য ২ হাজার কিটের জন্য আমরা চাহিদা পাঠিয়েছিলাম। সেগুলো আসা শুরু হয়েছে। শিগগিরই আমরা করোনা পরীক্ষা শুরু করতে পারব।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের ৪০ হাজার কিটের চাহিদা দেওয়া আছে। আপাতত ১ হাজার কিট এসেছে। আমরা যেখানে যত প্রয়োজন কিট দেব। বেশি প্রয়োজন হলেও আনা যাবে। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন, সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করছি।’
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আওতাধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মাতৃসদন ও শিশু হাসপাতাল (মেমন-২) এর পরিস্থিতিও একই। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ডাক্তার আছেন মাত্র ৪ জন ও নার্স আছেন ১৪ জন। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. হুসনে আরা বলেন, ‘আমাদের ১০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তত রাখা হয়েছে। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো প্রস্তুতি নেই। ঈদের ছুটি থাকায় আপাতত রোগীর সংখ্যা কম। চসিক মেয়র বলেছেন করোনা পরীক্ষার জন্য আমাদের কিট কিনে দেওয়া হবে। এরপর আমরা পরীক্ষা শুরু করব। আমাদের হাসপাতালে অক্সিজেন আছে; কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা, আইসিইউ ব্যবস্থা নেই। বাইরে থেকে করোনা পরীক্ষা করে আমাদের এখানে আইসোলেট করা যাবে।’
নওগাঁয় বাজারে উঠতে শুরু করেছে আম। বাজারে ক্ষীরসাপাত/হিমসাগর, নাক ফজলি, ল্যাংড়া/হাড়িভাঙ্গা ও আম্রপালি আম পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রশাসনের নিয়ম মানতে চান না ব্যবসায়িরা। ব্যবসায়িদের আগমন কম হওয়ায় ও সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ আম চাষীরা। এতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে চাষীদের। প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানোর দাবী চাষীদের।
জেলার সাপাহার উপজেলা সদরে বৃহৎ আমের বাজারে প্রায় ৩৫০টি আড়ৎ রয়েছে। এখন পর্যন্ত চালু হয়েছে ৮০-৯০ টি। যেখানে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- এ বছর জেলায় আম বাগানের পরিমাণ ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। যা থেকে প্রায় ৪ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার অধিক বাণিজ্যের আশা।
বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় এ জেলার আম অত্যন্ত সুস্বাদু । ফলে দেশজুড়ে আমের বেশ কদর রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বাজারে আসতে শুরু করেছে আম। সাপাহার উপজেলা সদরে জিরো পয়েন্টে আমের বৃহৎ বাজার। আমের ভরা মৌসুমে জিরো পয়েন্ট থেকে গোডাউনপাড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের এক পাশে বসে আমের বাজার। তবে মৌসুমের শুরুতে এক কিলোমিটার জুড়ে বাজার বসেছে। বাজারে ল্যাংড়া, খিরসা/ হিমসাগর, নাকফজলি, হাড়ি ভাংগা, আম্রপালি ও ব্যানানা ম্যাংগো পাওয়া যাচ্ছে।
চাষীরা বাগান থেকে আম পেড়ে সকাল থেকে ভ্যান, ভটভটি সহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছে। তবে ব্যবসায়িদের আনাগোনা কম থাকায় বেচাকেনা কম। বিক্রির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে চাষীদের। আবার দামও তুলনামুলক কম। প্রতিমণ আম ল্যাংড়া ৮০০-১৫০০ টাকা, নাকফজলি ও খিরসা/ হিমসাগর ১২০০-১৬০০ টাকা, হাড়ি ভাংগা ১৫০০-২৫০০ টাকা, আম্রপালি ২২০০-২৮০০ টাকা এবং ব্যানানা ম্যাংগো ২৫০০-২৮০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর আম সংগ্রহের যে সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে তা কাজে আসছে না। প্রচন্ড গরমে আম পেঁকে ঝরে পড়ছে। এ কারণে সব ধরনের আম প্রায় ১০ দিন আগেই বাজারে চলে আসছে।
আম চাষীদের দীর্ঘ দিনের দাবী ছিল কেজি দরে আম বেচা-কেনা। দাবীর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে কেজি দরে আম বেচাকেনা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন, ব্যবসায়ী, আড়ৎদার ও আম চাষীদের নিয়ে আলোচনা হয়। কেজিদরে আম বেচাকেনার কথা থাকলেও বাস্তবে তার উল্টোচিত্র। ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কাছে হার মানছে চাষীরা। তারা ক্যারেট সহ ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। কেজি দরে আম বেচা-কেনা করতে সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমের বাজারে সচেতনতামুলক মাইকিং করা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। প্রশাসনের দায়সারা ভাব মনে করছেন আম চাষীরা।
আম চাষীরা বলছেন, ‘মৌসুমের শুরু থেকে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড খরা বিরাজ করছিল। গাছে মুকুলের পরিমান বেশি দেখা দিলেও আম আসার পরিমাণ ছিল কম। ভাল দাম পাওয়ার কথা থাকলেও তার উল্টোচিত্র। আম চাষীদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে কেজি দরে আম বেচা-কেনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। তবে কেজি দরে আম বেচাকেনা চালু হলে লাভবান হবেন চাষীরা।
উপজেলার কোরালডাঙ্গা গ্রামের আম চাষী আব্দুল মতিন বলেন, তিনবিঘা জমিতে আম্রপালি জাতের আমবাগান রয়েছে। প্রচন্ড গরমের কারণে গাছ থেকে আম ঝরে পড়ছে। বাধ্য হয়ে আম নামাতে হচ্ছে। কিন্তু বাজারে আমের দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর মৌসুমের শুরুতে তিন হাজার টাকার ওপরে মণ বিক্রি হয়েছে। আর এ বছর দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ। আবার ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যবসায়িরা কেজি দরে কিনতে চাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আগের নিয়মে দিতে হচ্ছে।
সাপাহার গোডাউন পাড়ায় বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক এর উদ্যোক্তা আম চাষী সোহেল রানা বলেন- কেজি দরে আম বেচাকেনা নিয়ে আম চাষীদের দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে সবার সম্মতিক্রমে এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কেজি দরে আম বেচাকেনার কথা থাকলেও বাস্তবে তার উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। তারা কেজি দরে আম কিনতে চাচ্ছেন না। আড়ৎদার ও ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট করে আম বেচা-কেনা বন্ধ করে দেয়। প্রশাসন শুধু মাইকিং করে দায় সারতে চাচ্ছেন। কেজি-দরে আম বেচাকেনা বাস্তবায়ন করতে প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। এটা বাস্তবায়ন হলে আম চাষীরা লাভবান হবে।
সাপাহার আড়ৎদার সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তিক সাহা বলেন, ‘প্রশাসনের নিয়ম মানতে চান না ব্যবসায়িরা। কেজি দরে আম না কিনে ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে কিনছেন তারা। ওজন বিভ্রান্ত হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ি এখনো এ বাজারে আসছে না। এতে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে। আমের মণের ওজন নির্ধারণ করা না হলে ব্যবসায়িরা আসতে চাচ্ছে না। অন্য জেলাগুলোতে আগের নিয়মে আম বেচা-কেনা হচ্ছে। তিনি বলেন- কেজি দরে আম কেনা হলে বাছাই করে ভালগুলো কেনা হচ্ছে। এতে করে আম চাষীরা চিল্লাপাল্লা করছে। তারাও এ ঝামেলা চাননা বলেন গড় ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুর দিকে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে কেজি দরে আম বেচা-কেনা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন, ব্যবসায়ী, আড়ৎদার ও আম চাষীদের সাথে আলোচনা হয়। ইতোমধ্যে জেলায় আম বেচাকেনা শুরু হয়েছে।’
ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৫ দিনে সারা দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত এবং ১১৮২ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রতিবেদনে তিনি বলেন, একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত এবং ১১৯৪ জন আহত হয়েছেন।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে কিছু যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে লেগে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের বাড়ি যেতে হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকায় আবারও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পাশাপাশি মৌসুমি বায়ু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয়, অন্যান্য অঞ্চলে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণও হতে পারে।
এ ছাড়া আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবিরের সই করা পৃথক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে বলেও নিয়মিত আবহাওয়া বুলেটিনে জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপমাত্রা কমার এই ধারা আগামীকালও অব্যাহত থাকতে পারে এবং তার পরের অন্তত তিন দিন প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত নিয়ে আগামী তিন দিনের পূর্বাভাসে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারও একই ধরনের আবহাওয়া থাকতে পারে। অর্থাৎ রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি দেশের কিছু স্থানে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা শনিবার, এমনকি তার পরের পাঁচ দিনও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
মন্তব্য