পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদের মতে বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ শিক্ষার অভাব। তার মতে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির মৌলভিত্তি, ভবিষ্যৎ লভ্যাংশের সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে লেনদেন করে গুজবের ভিত্তিতে।
পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগাকারীদের মতো ডে ট্রেডারের ভূমিকা, ব্যাংকগুলোর বাজারবিমুখতার পাশাপাশি শেয়ার দর কমলে অযথাই আতঙ্কিত হয়ে যাওয়াও পুঁজিবাজারের বিকাশের বড় অন্তরায়।
তার মতে, বাজারে ভালো কোম্পানির ঘাটতি রয়েছে। বলেছেন, বাজার চাঙা করতে হলে আরও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও বাড়াতে হবে।
মূলধন কাঠামোর ভিত্তিতে লভ্যাংশ ঘোষণার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য সমস্যার হবে না বলেও মনে করেন আবু আহমেদ। তার মতে, দামের ওঠানামা স্বাভাবিক ঘটনা, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন আবু আহমেদ।
বর্তমান পুঁজিবাজার সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক পতন প্রত্যাশিত নয়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। কারণ, বিগত সময়ে যেভাবে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, সেখানে হঠাৎ করে এমন পতন অনাকাঙ্ক্ষিত।
মনে করা হয়েছিল, সূচক ৫ হাজার ৯০০ এর মধ্যে থাকবে। কিন্তু সূচক এখন ৫ হাজার পাঁচশতে নেমেছে। ফলে অনেক বিনিয়োগকারী হতাশ। এর কিছু কারণও আছে। আগে শেয়ার দর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ট্রেডিং কিংবা সিরিয়াল ট্রেডিং কাজ করেছে, ফলে পরে স্থায়ী হয়নি দাম।
অনেকগুলো কোম্পানি আইপিওতে আসার পর শেয়ারের দর সাতগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া আইপিওর শেয়ার নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হয়ে শেয়ার কিনেছে। এখন সেই দাম নেই, অনেক কমে গেছে। জোয়ারের সময় কয়েকটি শেয়ারের দর বেড়েছে। আর যখন ভাটা হয়েছে তখন সেগুলোর দাম বাড়েনি। আতঙ্কে বিক্রি করে দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ডে (প্রতিদিনের) ট্রেডিংয়ে বিশ্বাসী। যখনই মুনাফা হয় তখনই তারা শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যান, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের আচরণ করলে বাজার ধরে রাখা কঠিন। অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এখন রিটেইল ইনভেস্টর বা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো আচরণ করেন।
পুঁজিবাজারে দামের ওঠানামা থাকবে। এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাজার নিচে নেমে এলে সস্তায় শেয়ার পাওয়া যাবে, এর বাড়তি সুবিধা আছে।
এ বিষয়টি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বোঝালে তারা বুঝবেন না। বিষয়টি বোঝাবে আইসিবি, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, কিন্তু দেখা যায়, যখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেন তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও একই পথে হাঁটেন। ফলে শেয়ারের দর কমে আসে। কেউ কেনে না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
বর্তমান বাজারের সমস্যা আসলে কী?
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দ্রুত ধনী হতে চান। তাদের মার্কেট সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। কোম্পানি সম্পর্কে জানাশোনা নেই। গুজবের ভিত্তিতে লেনদেন করে। কিছুদিন আগে তারা বিমা খাতের পেছনে ছুটেছে। এ খাতের শেয়ারের দর তিন চারগুণ বেড়েছে।
বিমার শেয়ার দর সে জায়গায় এখন আর নেই। তারপর তারা ছুটেছেন মিউচ্যুয়াল ফান্ডে। সেটার দর বাড়ার পর শেষ পর্যন্ত টেকেনি। সব বিনিয়োগকারী মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিক্রি করে বের হয়ে গেছেন। তারপর যান আইপিওতে, তখন প্রায় সবগুলোর দর তিন চারগুণ বাড়লেও শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি। রবির শেয়ার বেড়ে হয়েছিল সাতগুণ।
বাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের অভাব আছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে।
ব্যাংকগুলো তাদের শেয়ারধারীদের কত লভ্যাংশ দিতে পারবে, তা নির্ধারণ করে সম্প্রতি নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সিদ্ধান্ত কতটা পুঁজিবাজারবান্ধব?
এ পদক্ষেপ পুঁজিবাজারের জন্য খুব বেশি সমস্যা তৈরি করবে না। এটা ব্যাংকের কু-ঋণ ও রিজার্ভ রক্ষায় করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাচ্ছে না, ব্যাংকগুলো এখন বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করে পরে বিপদে পড়ুক। কারণ, করোনার সময় ব্যাংকগুলোর ঋণ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল। তার পরেও বেশির ভাগ ব্যাংকের ২০২০ সালের শেষে মুনাফা বেড়েছে। তারা চাইলে বেশি হারে লভ্যাংশ দিতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খুব কম সংখ্যক ব্যাংকই এ হারে লভ্যাংশ দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চায়, গ্রাহকদের সুরক্ষায় ব্যাংকের নিরাপত্তা। লভ্যাংশ প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকের মূলধন যাতে দুর্বল হয়ে না যায়, সেজন্যই তাদের একটি গাইডলাইন দেয়া হয়েছে।
বিমার শেয়ার নিয়ে আসলে হচ্ছেটা কী?
বিমা খাত চলে গুজবের উপর। বিমার এত উত্থান হওয়ার কারণ নেই। কিছু দিন আগে বিমা খাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরের পুরানো এক নির্দেশনা নিয়ে পুঁজিবাজারে বিমা খাতের দর বাড়ানো হয়েছে। এখন এজেন্ট সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এজেন্ট না থাকলে বিমা কোম্পানির আয় কত বাড়বে, তা আমার বোধগম্য নয়। এজন্য বিমার শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের বুঝেশুনে কেনা উচিত।
বিমা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের স্পষ্ট ধারণা নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমার শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে বোঝা যাবে বিমা খাতের প্রকৃত অবস্থাটা কী।
অনেক নতুন কোম্পানির আইপিও আসছে। পুঁজিবাজারের জন্য এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
পুঁজিবাজার বিকাশের জন্য আইপিওর আরও প্রয়োজন আছে, কিন্তু মানসম্পন্ন আইপিও আসছে না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, ভালো কোম্পানির আইপিও আসতে হলে তাদের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। আমি চেয়ারম্যানের কথায় একমত। এ ব্যবস্থা নিতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয়।
ভালো কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজার থেকে টাকা নেয়ার প্রয়োজন নেই, বরং তাদের প্রয়োজন কর সুবিধা। এ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে নতুন আইপিও-এর সঙ্গে ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। এ সব বিষয়ে প্রতি বছর প্রাক-বাজেট আলোচনায় বলা হলেও নীতি নির্ধারকদের ভাবনায় ঘাটতি রয়েছে।
বুকবিল্ডিং সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
এ পদ্ধতিতে বেশ কিছু কোম্পানির আইপিও এসেছে। সেগুলোর দর অস্বাভাবিক ছিল। এখানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শেয়ারের দর নির্ধারণ করা হয়।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানির শেয়ারের দর নির্ধারণ করেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এই নিয়মে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ শেয়ার পান তা একটা সময় পর্যন্ত লক-ইন থাকার কথা থাকলেও এখন তা নেই।
এটা উঠিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। ফলে বুক বিল্ডিং ব্যবস্থায় যখন কোনো কোম্পানি শেয়ার লেনদেন করে, তখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকারীরা কারসাজি করে শেয়ার বিক্রি করেন। এই অনিয়ম ঠেকাতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারে অবশ্যই অন্তত তিন থেকে ছয় মাসের লক-ইন রাখতে হবে।
বিএসইসি সম্প্রতি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে দর নির্ধারণের একটি গাইডলাইন দিয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ।
লটারির বদলে আনুপাতিকহারে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে বলে আপনি মনে করেন?
ভালো পদক্ষেপ, তবে লটারিতে শেয়ার না দিয়ে আনুপাতিক হারে বরাদ্দের যে বিধান রাখা হচ্ছে তাতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা উচিত। মার্চেন্ট ব্যাংক, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদা কোটা রাখার প্রয়োজন নেই। যেহেতু আনুপাতিকহারে শেয়ার বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, তাই সবার জন্য সমান সুবিধা রাখা উচিত।
ডিজিটাল বুথ ও ব্রোকার হাউজের শাখা খোলার সিদ্ধান্ত কতটা পুঁজিবাজার বান্ধব?
২০১০ সালের পর থেকে ব্রোকার হাউজের শাখা খোলা বন্ধ ছিল। এখন আবার দেয়া হচ্ছে। উপজেলা পর্যন্ত ব্রোকার হাউজের শাখা, ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি দেয়া ঠিক হয়নি।
উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে যখন শাখা চলে যাবে তখন পুঁজিবাজার সম্পর্কে জানেন না এমন লোকজনও এখানে এসে বিনিয়োগ করবেন। না জেনে, না বুঝে শেয়ার কিনবে, ফলে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে। বিদেশে বুথ করা হচ্ছে, সেটা ঠিক আছে। তবে উপজেলাতে যাওয়া ঠিক হবে না।
ব্যাংকের শেয়ারের দর তলানিতে। এর কারণ কী?
ব্যাংকের শেয়ার শুরু থেকেই মন্দায়। কু-ঋণের কারণেই মূলত এ খাতের উন্নয়ন হচ্ছে না। ব্যাংকের অনেক ভালো খবর আছে, কিন্তু সেগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই।
অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকে বিনিয়োগ লাভজনক। অবশ্যই এখানে বিনিয়োগ করা উচিত। ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, কিন্তু তারা অনেকটাই অকার্যকর।
বিএসইসির সাম্প্রতিক কার্যক্রম সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিএসইসি ভালো করছে। তাদের অনেক উদ্যোগ ইতিবাচক। বিশেষ করে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা খুবই ভালো। এছাড়া বন্ড আনার চেষ্টা করছে। তারপর আইপিওতে লটারি পদ্ধতির পরিবর্তন করছে। তবে বিএসইসি একার পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব নয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরকে যুক্ত হতে হবে।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য