করোনা মহামারি, অসাধু ব্যবসায়ীদের আগ্রাসন আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য- এই তিনে মিলে বড় কষ্টে দিন কাটছে সাতক্ষীরার কলারোয়ার পালপাড়ার টালি কারিগরদের। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে সম্ভাবনাময় টালিশিল্প।
একসময় এই শিল্প সাতক্ষীরার অর্থনীতির খাতে এক নম্বরে থাকলেও আজ তা ধ্বংসের দ্বারে। পেশা হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিকরা।
দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু টালি কারখানা আধুনিক না হওয়া, উৎপাদন খরচ বাড়লেও টালির দাম না বাড়া, সরকারের সুদৃষ্টির অভাব ও সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়া এই শিল্প ধ্বংসের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তবে এখনো হাতে গোনা কয়েকজন কারখানামালিক এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদেরই একজন মুরারীকাটি গ্রামের পালপাড়ার প্রয়াত রামকৃষ্ণ পালের ছেলে গোস্ট চন্দ্র পাল। বর্তমানে কলরোয়া টালি কারখানা মালিক সমিতির সভাপতি জানান, ১৯৪৭ সাল থেকে তার পূর্বপূরুষরা এই শিল্পের সঙ্গে ছিলেন।
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করলেও পেশা হিসেবে জাতপেশাকেই আঁকড়ে ধরে থাকা গোস্ট চন্দ্র জানান, ২০১৯ সালে বিদেশে টালি রপ্তানি করে কারখানামালিকরা আয় করেছেন প্রায় ১২-১৩ কোটি টাকা।
‘এখানে প্রায় ৪০টা টালি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় না হলেও চার হাজারের মতো মানুষ কাজ করে। বছরে ৬ থেকে ৭ মাস টালি বানানো ও বিক্রি হয়। অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয় টালি বানানোর মৌসুম। চলে মে-জুন পর্যন্ত। বাকি সময় বর্ষা থাকায় টালি তৈরি হয় না।’
তিন ধরনের টালি বেশি তৈরি করেন পালপাড়ার কারিগরেরা- ছাদের টালি, দেয়াল টালি ও মেঝের টালি। নকশা ও সাইজের ওপর ভিত্তি করে এসব টালি আবার ২০-৪০ প্রকার হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে ১২০ প্রকার টালি তৈরি হয় এই পল্লিতে।
একেকটি টালির একেক রকম নাম। তাদের মধ্যে স্কয়ার, রেকট্যাংগুলার, স্টেপ টাইলস, হেক্সা গোনার, স্কাটিং প্রভেনসালেহ প্রভৃতি। প্রতি পিস টালির দাম ৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
স্কয়ার টালি সাধারণত দেয়ালের শোভাবর্ধনে, ঘরের চালের ছাউনিতে ব্যবহার করা হয়। ঘরের মেঝে সাজানোর জন্য রয়েছে ফুলের আকারে প্রভেনসালেহ টালি। প্রতি পিস প্রভেনসালের দাম ২৫-৩০ টাকা। এভাবে একেকটি টালির নকশা, গঠন ও আকার অনুযায়ী দামের হেরফের রয়েছে। দাম সস্তা হলেও এগুলোর সৌন্দর্য, গুণমান ও স্থায়িত্ব অতুলনীয়।
ঘর সাজানোর জন্য শিল্পীরা তৈরি করেছেন সার্কেল টাইলস। চারটি সার্কেল টাইলস নিয়ে একটি সেট। এক সেট সার্কেল টাইলসের দাম ৪০-৫০ টাকা।
গোস্ট চন্দ্র পাল আরও বলেন, ‘সাতক্ষীরার বানানো এসব টালি মোংলা বন্দর দিয়ে দুবাই ও ইউরোপ যায়। দুবাই থেকে আবার কিছু টালি প্রসেসিং হয়ে আমেরিকা যায়। বর্তমানে ফ্রান্সের বাজার ধরার চেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো মেশিন বা যন্ত্র ছাড়াই কারিগররা তাদের হাতের স্পর্শে মাটি দিয়ে এসব টালি বানায়। টালি রোদে শুকানোর পর চুল্লিতে বা পনে পোড়ানো হয়।
‘১৬ ঘণ্টা বিশেষ নিয়মে পনে জ্বাল দিতে হয়। জ্বাল দেয়ায় হেরফের হলে টালির আকার-আকৃতি ও পোড়ের কম-বেশি হয়। এতে টালির মান ভালো হয় না। মাসে একবার একটি পনে টালি পোড়ানো হয়।’
গোস্ট চন্দ্র জানান, সরকার চাইলে এই শিল্প থেকে তারা অনেক টাকা আয় করতে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনে এই শিল্প মেলা ভূমিকা রাখতে পারে।
টালিশিল্পের বিকাশে কিছু প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এলাকার কারখানামালিকরা ঐক্যবদ্ধ না। ফলে টালির দাম একেক জায়গায় একেক রকম। মহাজনরা বাকিতে টালি কিনে সময়মতো বিল দেয় না।’
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি ও শ্রীপতিপুর এলাকায় প্রথমে টালি উৎপাদন শুরু হয়। পরে আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামে পর্যায়ক্রমে ৪০টি কারখানা গড়ে উঠলেও তা এখন কমে মাত্র ১০-১৫টিতে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে কলারোয়ায় মেঝে ও দেয়ালের জন্য টালি নির্মাণ শুরু হয়। সে সময় রাফাইলো আলদোঁ নামের এক ইতালির ব্যবসায়ী অসেন বাংলাদেশে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তিনি নারায়ণগঞ্জে টালি তৈরির কাজ শুরু করেন। কিন্তু সেখানকার মাটি টালি তৈরির উপযুক্ত না হওয়ায় তিনি দেশে ফিরে যান।
রাফাইলো আলদোঁ ফিরে গেলেও তার বাংলাদেশি প্রতিনিধি রুহুল আমিন দেশের বিভিন্ন স্থানে টালি তৈরির জন্য মাটি খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এসে পেয়ে যান টালি তৈরির উপযোগী মাটি।
তখন কলারোয়ায় শুধু ছাউনির কাজে ব্যবহৃত টালি (স্থানীয় নাম ‘খোলা’) তৈরি করা হতো। মূলত তিনি এই টালি দেখেই বুঝতে পারেন এখানকার মাটি দিয়েই রপ্তানিযোগ্য টালি তৈরি সম্ভব।
তাই ‘কারার এক্সপোর্ট ইমপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মালিক রুহুল আমিন কলারোয়ার পালদের পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি রপ্তানিযোগ্য টালির সম্ভাবনার গল্প শোনান। সেই সূচনা। এরপর থেকে শুরু হয় বিভিন্ন নকশার টালি তৈরি। প্রথম দিকে এখানকার টালি ইতালিতে রপ্তানি হতো। এ কারণে কলারোয়ার এই এলাকা ধীরে ধীরে ‘ইতালিনগর’ এবং পোড়া মাটির টালি ‘ই-টালি’ নামে পরিচিত হতে থাকে।
প্রথম দিকে বাংলাদেশে এই টালি শুধু ঘরের ছাউনিতে ব্যবহার করা হলেও ইতালিতে এই টালি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ছাদের ওপর ছাড়াও ঘরের মেঝে ও দেয়ালে ব্যবহার করা হতো।
বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহৃত এই ‘ই-টালি’ অল্প দিনেই নজর কাড়ে জার্মান, দুবাই, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে কলারোয়ার মাটির তৈরি টালি রপ্তানি হতে থাকে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে।
তবে টালি রপ্তানির সেই যুগ এখন শুধুই কালের সাক্ষী। আগে যেখানে বছরে চারশ কনটেইনার টালি বিদেশে রপ্তানি করা হতো, এখন তা হয় একশ। কমে এসেছে টালির দামও।
মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ছোট টালি প্রতি পিস পাঁচ থেকে আট টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার উৎপাদন খরচও প্রতি পিস সাড়ে পাঁচ টাকা। অন্যদিকে বড় টালি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০-১০০ টাকা দরে, যা প্রতি পিস উৎপাদন খরচ প্রায় ৪৫-৯০ টাকা। অসাধু ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষদ্র ক্ষুদ্র কারখানামালিকরা এই টালি ব্যবসা থেকে সরে পড়ছেন।
টালি কারখারশ্রমিক ফতেমা খাতুন বলেন, ‘এই শিল্প আমাদের রুটি রুজি। টালি ছাঁটাই, ব্রাশ করা, তোলা, রং করার কাজ করি। দিনে মজুরি পাই মাত্র ২০০ টাকা। এর ওপরেই কোনো রকমে বেঁচে আছি আমরা। টালির কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমরাও শেষ হয়ে যাব।’
রুহুল আমিন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টালির কারখানায় কাজ করে পাই ৪০০ টাকা। খুব কষ্টে সংসার চলে। টালির কারখানা না থাকলে আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব জানি না।’
সাতক্ষীরা পল্লি চেতনা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘কলারোয়ার টালিশিল্প সাতক্ষীরা জেলার ঐতিহ্য। টাইলসের চেয়ে টালির গুণগত মান অনেক ভালো। টালি একশ বছর পর্যন্ত অক্ষত থাকে। এতে সহজে নোনা ধরে না। দামও কম। টিকে বেশি দিন। দেখতেও চমৎকার। কিন্তু এটি এখন বিলুপ্তির পথে। এই শিল্পকে রক্ষা করা দরকার। এই শিল্প রক্ষায় আমি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি।’
সরকার আসন্ন জুলাই মাস উপলক্ষে নেওয়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে পূর্বে ঘোষিত প্রতীকী ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে ফারুকী এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করেন। বলেন, এই নির্দিষ্ট উদ্যোগটি নিয়ে শুরু থেকেই অভ্যন্তরীণ বিতর্ক ছিল।
তিনি লিখেছেন, ‘জুলাই স্মরণে অনুষ্ঠানের একটা কর্মসূচি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা পর্যায় থেকেই দ্বিধা ছিল। একটা মাত্র কর্মসূচিই আমরা কয়েকবার কেটেছি, আবার যুক্ত হয়েছে। আমরা অনেকেই একমত ছিলাম ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট’ গ্রেট আইডিয়া না সম্ভবত।’
তিনি আরও বলেন, পরে আবার নানা আলোচনায় এটা ঢুকে পড়ে কর্মসূচিতে। অনেক বড় কর্মসূচি এবং বড় একটা দল কাজ করলে এরকম দুয়েকটা ভুল চোখের আড়ালে থেকে যায়।
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ধারণার বিষয়ে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়ার জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন উপদেষ্টা।
জনগণ কর্মসূচি নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে, সেই কর্মসূচি নিয়ে আপনাদের মতামত জানানোর জন্য।’
তিনি আরও বলেন, আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমরা নিজেদের মধ্যে দ্রুত সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- এক মিনিট প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি থাকছে না। সংশোধিত স্লাইড শেয়ার করে হচ্ছে।
ফারুকী লিখেছেন, ‘অন্যান্য সমস্ত কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকবে। আসুন পুনরায় সংযোগ স্থাপন করি, পুনর্গঠন করি এবং জুলাইয়ের আসল চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করি।’
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে আটকে রেখে মারধর করে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মুল আসামি আলাউদ্দিন সহ আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিন ও শ্রমিক দল নেতা মো. ফরিদ উদ্দিন। তারা ওই মামলার এজাহার নামীয় ১ ও ২ নম্বর আসামি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) মধ্যরাতে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া থেকে আলাউদ্দিন এবং ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে, বুধবার (০২ জুলাই) দুপুরে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে মামলার ৫ নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করে র্যাব। এছাড়াও, ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগীর সতিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ নিয়ে এই মামলার ৭ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহব্বত খান জানান, রাতে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি আলাউদ্দিন ও ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, বুধবার (০২ জুলাই) বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ভোলার পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) বিকাল ৩ টায় জেলা পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এখন পর্যন্ত এই মামলায় এজহারনামীয় ৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৩০ জুন) রাতে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের মোল্লার পুকুর পাড় এলাকায় চাঁদার দাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে মারধর করে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্তরা স্থানীয় শ্রমিকদল, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে কর দাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে ৫ সদস্য ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাগণ নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এক্ষেত্রে, প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তাগণ ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিককে হয়রানি করেন বলে জানা যায়।
তিনি আরও বলেন, অনেক করদাতা আগাম কর দেন। আবার কেউ কেউ বেশি কর দেন। নিয়ম হচ্ছে এই কর হিসাব-নিকাশ করার পর বেশি দেওয়া হলে তা ওই করদাতাকে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, করের বাড়তি টাকা ফেরত পেতে আরো অন্তত অর্ধেক টাকা ঘুষ বা উপহারে খরচ হয়। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তারা করের টাকা ফেরত দিতে নিজেরাও কামিয়ে নিচ্ছেন মোটা টাকা।
অভিযুক্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকুরিকালীন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও ক্ষেত্র বিশেষে আয়কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে ও নিজে লাভবান হয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে দুর্নীত, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঢাকা পূর্বের কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনার কাজী মোহাম্মদ, বেনাপোল স্থল বন্দরের কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামান, রাজশাহী সার্কেল-৭-এর উপ কর কমিশনার মো: মামুন মিয়া, আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা ও ঢাকা কর অঞ্চল-২-এর কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তথ্যানুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে দেশের বিভিন্ন গুদামে চাল ও গমের মজুদ রয়েছে ১৭.৬৪ লাখ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় তিন লাখ টন বেশি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সরকারি মজুদ, সংগ্রহ ও বিতরণ পরিস্থিতি সম্পর্কে খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ১ জুলাই দেশে চাল ও গমের মোট মজুদ ছিল ১৪.৭৩ লাখ টন। এর মধ্যে চালের মজুদ ছিল ১০.৬০ লাখ টন এবং গমের মজুদ ছিল ৪.১৩ লাখ টন।
নতুন অর্থবছরের শুরুতে চালের মজুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫.৪১ লাখ টনে।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত ও আমদানিকৃত গমের মোট সংগ্রহের তুলনায় বিতরণ বেশি হওয়ায় গমের মজুদ কমে দাঁড়িয়েছে ২.২৩ লাখ মেট্রিক টনে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয় জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসামি পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় গ্রেফতার চার আসামি হাজির রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত প্রথম কোন শুনানি শুরু হওয়ায়, সে দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে, এই মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দেয়া হয়।
তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক আসামীরা হাজির না হওয়ায়, তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. কুতুবউদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো ইয়াকুব, শহীদ মো রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্বল্যমান এ সব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতি দেশকে আবার স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তিনি বলেন, সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসে, সে জন্য গণতান্ত্রিক ঐক্য দরকার।
এ সময়ে আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজন কী? এই ব্যবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে কোনো নেতা তৈরি হবে না, নেতৃত্বের বিকাশও হবে না। আমরা চিরায়ত গণতন্ত্রের পক্ষে, যেখানে বৈধ ভোটাররা ভোট দিয়ে নিজের এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে।’
‘একজন মানুষ দীর্ঘদিন মানুষের পাশে থেকে নেতা হয়েছেন, অথচ আনুপাতিক ভোটে তাকে নয়; দলকে ভোট দিতে হবে। এরপর দল থেকে বাছাই করে এমপি ঘোষণা করা হবে—এটি আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে প্রায় ১২ কোটি ভোটার রয়েছে, সেই ১৮ কোটি মানুষের দেশে কেন এমন ভোট পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে? যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, বছরের পর বছর কারাবরণ করেছে, সেই গণতন্ত্র আজ প্রশ্নবিদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে দেশের কোনো তরুণ শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। কখন কাকে ধরে নিয়ে যাবে, আর কার রক্তাক্ত লাশ তিস্তা, গঙ্গা কিংবা শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে পাওয়া যাবে—এটাই ছিল নিত্যদিনের চিত্র। এই ভয়াবহ সময় পার করতে হয়েছে আমাদের। শেখ হাসিনার দমন-পীড়নের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসতে পারে, তার জন্য গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য প্রয়োজন।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজির সঙ্গে বিএনপির কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের জড়ানো চলবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের আচরণে যেন সাধারণ মানুষ কষ্ট না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যেন বিএনপির কাছ থেকে ন্যায়বিচার পায়, সেই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ যদি এসব অপকর্মে জড়িত থাকে, দল সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে—এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।’
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও ‘বিজয়ের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির আয়োজন করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন রংপুর (ড্যাব)।
রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়ে জুলাই সনদ তৈরির লক্ষ্যে আজ দ্বিতীয় দফার নবম দিনের মত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল এগারোটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
এছাড়া, কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন-বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশ গ্রহণ করছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজকের আলোচনায় পূর্বের অমীমাংসিত বিষয়ে অধিকতর আলোচনা হওয়ার পাশাপাশি বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা- এই তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
আজ আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেওয়ার সময় কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, আমরা কি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে, অন্যদের কি পরিমাণ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকের এ পর্যায়ে এসেছি সেটা আমাদের প্রত্যেকেরই স্মরণ রাখতে হবে। হাজারো মানুষের আত্মত্যাগই যেন হয় আমাদের দিক নির্দেশক।
তিনি আরো বলেন, ৫৩ বছরে রাষ্ট্র গঠনের এমন সুযোগ আর আসেনি। অনেক অন্যায় অত্যাচার ও নিপীড়নের মধ্য দিয়ে এ সুযোগটা আমরা পেয়েছি, এ সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না।
এর আগে, গতকাল (বুধবার) কমিশনের অষ্টম বৈঠক শুরুর প্রথমে প্রারম্ভিক বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনা ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং এভাবে আলোচনা অগ্রসর হলে এ মাসের মাঝামাঝি বা ৩য় সপ্তাহের মধ্যেই জুলাই সনদ ঘোষণা করা সম্ভব হবে।
মন্তব্য