কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষ পাবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান। প্রবৃদ্ধির বির্তকে না গিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় বেশি নজর এবং মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনার ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান মনে করছেন, শুধু রপ্তানি খাতের ওপর নির্ভর করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। পাশাপাশি দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব, দারিদ্র্য পরিস্থিতি, আয়-বৈষম্যসহ অর্থনীতির নানা বিষয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ইকনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু কাওসার।
বর্তমান অর্থনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। এই অভিঘাত অপ্রত্যাশিত। অর্থনীতিতে এমন সংকট আগে কখনও দেখা যায়নি। অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টার কারণে কঠিন সময় পার হয়েছে, তবু সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
লকডাউন দেয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে অবস্থার কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পখাতের দিকে যথাযথ নজর দেয়া গেলে সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণ সম্ভব যাবে।
করোনার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। একে কীভাবে দেখছেন?
সংকটকালীন অর্থনীতির জন্য অবশ্যই এটা ভালো খবর। তবে রপ্তানির জন্য রিজার্ভ বাড়েনি, বরং করোনায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে রপ্তানি খাতে। বৈধ চ্যানেল এবং সরকারের দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়ায় রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। রিজার্ভ বৃদ্ধির এটি অন্যতম কারণ।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আমদানি কমে গেছে। এর সঙ্গে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সম্পর্ক রয়েছে। আমদানি কমায় ডলারের চাহিদাও কমেছে। ফলে রিজার্ভ বাড়ার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি দিকই রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের অর্ধেকের বেশি পার হয়েছে, আগামীতে অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ কী?
অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজন বিবেচনায় তিনটি বড় খাত হলো দারিদ্র্য, অসাম্য ও শ্রমবাজার। করোনা এই তিনটি খাতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবে অনেকেই নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। পাশাপাশি অসাম্য বেড়েছে।
অসংখ্য গরিব পরিবারের ছেলেমেয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সঠিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে। এখন প্রধান কাজ ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ কি পর্যাপ্ত?
এটা অবশ্যই সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ। প্রণোদনার সুফল মিলেছে, ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে।
তবে প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু খাতে, বিশেষ করে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে সুবিধা বেশি পেলেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প বা এসএমই খাতে হতাশাজনক চিত্র দেখা যায়। এই প্যাকেজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি আরও বাড়বে।
আগামী অর্থবছরের (২০২১-২০২২) বাজেটে কোন খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া উচিত?
জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনে দুটি বড় খাত হচ্ছে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। গত দুই দশক ধরে এ দুটি খাতের শক্তিশালী অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে করোনার প্রভাব বেড়েছে। ফলে বৈশ্বিক পরিসরে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় রপ্তানি খাতের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে অর্থনীতি পনুরুদ্ধার সম্ভব নয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে রপ্তানি খাতের পাশাপাশি দেশীয় শিল্পে আরও বেশি সুরক্ষা দিতে হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সে অনুযায়ী নীতি ও সহায়তা প্রদান করতে হবে।
রাজস্ব আহরণের অবস্থা ভালো নয়, করোনাকালে আরও খারাপ হয়েছে। রাজস্ব আদায় কম হলে সরকারের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ব্যাহত হবে। ফলে রাজস্ব খাতে কার্যকর সংস্কারের পদক্ষেপ থাকতে হবে আগামী বাজেটে।
কোন ধরনের সংস্কার করলে অর্থনীতির গতি আরও বাড়বে?
কর ও ভ্যাটে বাস্তবমুখী ও কার্যকর সংস্কার করতে হবে। আর্থিক খাতে নজর দিতে হবে। সংকটের সময়ে সংস্কারের বড় ধরনের সুযোগ থাকে। চাইলে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে সরকার। সংস্কারের বিষয়ে সরকারের নির্দিষ্ট কমিটমেন্ট থাকাতে হবে বাজেট।
ব্যাংক খাতে কমিশন গঠন নিয়ে কথা উঠেছিল। উদ্যাগ নেয়া হলেও পরে বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হলে কমিশন গঠন জরুরি।
সানেমের সাম্প্রতিক জরিপে দেশে দারিদ্র্যহার দ্বিগুণ বাড়ার তথ্য গ্রহণ করেনি সরকার। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
করোনাকালে দেশে দারিদ্র্য বাড়লেও এ বিষয়ে কোনো জরিপ হয়নি। কতটা দারিদ্র্য বেড়েছে, এর সমাধানে কোন ধরনের নীতি সহায়তা নেয়া প্রয়োজন, সে বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেশব্যাপী জরিপ করেছে সানেম। তথ্য উপাত্তের বিষয়ে যে কেউ ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু এটাকে প্রত্যাখ্যান করা ঠিক নয়। প্রকৃত চিত্রের জন্য বরং আরও ব্যাপকভিত্তিক জরিপের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চাইলে এটা করতে পারে। এখনও সময় আছে।
কোন পদ্ধতিতে এই জরিপ করা হয়েছে?
দেশব্যাপী প্রায় ছয় হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালানো হয়। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের মতামত নেয়া হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহে সীমাবদ্ধতা ছিল। ঝুঁকি এড়াতে টেলিফোনে মতামত নেয়া হয়। ছয় হাজার খানা জরিপ কিন্তু কম সংখ্যা নয়। আমাদের উদ্যোগগুলো অবাস্তব নয়। বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে, এতে কোনো ধরনের ভুল নেই।
গরিব ও ধনীর মধ্যে আয় বৈষম্য বেড়েছে বলে জরিপের তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ কী?
নতুন করে যারা গরিব হয়েছেন তারা নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। করোনা সেই সব কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। শহরের বিভিন্ন হোটেল–রেস্তরাঁসহ ছোট ছোট কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জীবিকা নির্বাহে অনেকেই নানান কাজ করছিলেন, করোনার কারণে হঠাৎ করে কাজ চলে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় আয়-রোজগার।
ক্ষেত্রবিশেষে ধনীদেরও ক্ষতি হয়েছে, তবে গরিবের তুলনায় কম। অর্থাৎ ধনীদের আয় অতটা কমেনি, যতটা কমেছে গরিবের। সামগ্রিকভাবে করোনাকালে আয়–বৈষম্য বেড়েছে।
প্রবৃদ্ধি বাড়লেও জনগণ কী সুফল পাচ্ছে?
উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেই এর সুফল পাওয়া যাবে তা ঠিক না। প্রবৃদ্ধি হতে হবে ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক)। গত কয়েক বছর ধরে শ্রম বাজারের ওপরে যে তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস তাতে দেখা গেছে, জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও কমেছে কর্মসংস্থান।
কর্মসংস্থান না হলে প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষ পাবে না। মুষ্ঠিমেয় বেশি সুবিধা পাবে। তাই, প্রবৃদ্ধির সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে কর্মসংস্থানের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেসব খাতে কাজের সম্ভাবনা সেসব খাতে বেশি করে নীতি-সহায়তা দিতে হবে। ফলে মানুষের আয়-রোজগারের সুযোগ আরও বাড়বে।
বর্তমান সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ। এতগুলো হয়তে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, তবে আগামী কয়েক বছরে মধ্যে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। পাশাপাশি ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ, এসব খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।
বৈষম্য বাড়ার কারণ কী?
উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বৈষম্যের সম্পর্ক আছে। যেসব দেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে সেসব দেশেও বৈষম্য বাড়ছে। এর একটা কারণ হতে পারে নীতি প্রণয়নে অসঙ্গতি।
বাংলাদেশে কর নীতিতে সমস্যা আছে। ধনীদের ওপর কর আরোপের বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। পাশাপাশি গরিবের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি ও তাদের কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। শহরের লোক যেভাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সুবিধা পাচ্ছে, গ্রামে সে ভাবে পাচ্ছে না। এসব বিষয়ে নজর না দিলে বৈষম্য কমবে না।
চলতি অর্থবছরে জিডিপি কত হতে পারে?
এটা বলা কঠিন। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিতর্ক আছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ ভিন্ন ভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়েছে। মতভেদ আছে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে।
প্রবৃদ্ধির হার কত হলো সে বিষয়ে বিতর্ক না করে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায়। এ জন্য সঠিক নীতি ও কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা ও এসএমই খাত পুনরুদ্ধারের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সে ক্ষেত্র প্রবৃদ্ধি কম হলেও তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। প্রবৃদ্ধির হারের দিকে না তাকিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি ত্বরান্বিত করাই হচ্ছে বেশি জরুরি।
অর্থনীতি আগের চেহারায় ফিরতে কত সময় অপেক্ষা করতে হবে?
সংকট এখনও আছে। কারণ, করোনা বিদায় নেয়নি, নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ইউরোপে এবং যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর নতুন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে। ফলে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। পৃথিবীর সব মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে আরও সময় লাগবে।
সহসাই এখান থেকে মুক্তি মিলবে না। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশে এখন প্রয়োজন মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনা। বাজেট এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বাইরে কমপক্ষে দুই বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে, যেখানে থাকবে সংকট মোকাবিলার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। অর্থনীতির আগের চেহারায় ফিরে আসতে আরও দুই বছর লাগবে।
বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কেও থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ কামনা করেছেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে শুক্রবার গভর্নমেন্ট হাউসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেতা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসাকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি তাকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণেরও প্রস্তাবও দিয়েছি।’
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি, একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্টে (এলওআই) সই করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত।
‘সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গতিশীল অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ ও গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখি।’
বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান পরিসর বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সহজীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) আশ্বস্ত করেছি। আমি থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করার ও শুধু থাইল্যান্ডের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:দেশের দুটি জেলায় অতি তীব্র ও ১৬টিতে তীব্র দাবদাহ চলছে জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে জানানো হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা এবং খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার (১০ জেলার মধ্যে বাকি আটটি) ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
তাপমাত্রার বিষয়ে অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেতা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউএনবি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান থাই প্রধানমন্ত্রী।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় নথিতে সই করা হয়। দুই নেতার মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গভর্নমেন্ট হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দলের দেয়া গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসের অতিথি বইয়ে সই করার আগে স্রেথা থাভিসিন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
গভর্নমেন্ট হাউস ত্যাগ করার আগে শেখ হাসিনা সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন। সূত্র: ইউএনবি
তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনটি দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নির্দিষ্ট কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং অবমূল্যায়ন করেছে, যা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ও কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর।’
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মুখপাত্র বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন প্রতিবেদনে স্থান পায়নি। অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
‘প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়লে স্পষ্ট হবে যে এতে পৃথকভাবে রিপোর্ট করা বা কথিত ঘটনাগুলোর পরিপূর্ণ রেফারেন্স দেয়া হয়নি। এটি সরলীকরণ অনুমাননির্ভর তথ্যে ভরপুর।’
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করেছে, ফিলিস্তিনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত।
‘বেশিরভাগই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার (বেনামী উৎসসহ) কাছ থেকে পাওয়া অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমর্থিত।’
‘প্রতিবেদনটি সহজাত পক্ষপাতদুষ্ট, এটি বেশ স্পষ্ট।’
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অব্যাহত আগ্রহের প্রশংসা করেছে।
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যতই প্রত্যাশা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। মানবাধিকার কোনো শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তবে আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতা প্রায়ই এসব অধিকার আদায়ের গতিকে সীমাবদ্ধ করে।’
‘বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
‘যেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নতি প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা মেয়াদে মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থবহ অগ্রগতি করতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করবেন, এ জাতীয় প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, প্রবীণদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারের সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং আরও অনেক কিছুতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এটি বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে এবং এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
‘এ ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণা থেকে জনসাধারণের জীবন, শৃঙ্খলা ও সম্পত্তি রক্ষায় আইনানুগ পদক্ষেপ এবং প্রতিকারের চেষ্টা করার রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকেও প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে। এটি খুবই হাস্যকর।’
তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছে এবং যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের আন্তরিক সমর্থন ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের নির্বাচন বর্জন সত্ত্বেও ৪২ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদনে বার বার বেশকিছু অভিযোগ বা অনুযোগ উঠে এসেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
‘উদাহরণস্বরূপ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা মিয়ানমারের নাগরিক বা বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতির বৈধ দাবিকে ক্ষুণ্ন করছে।’
অন্য একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে দেশের সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থী ‘আদিবাসী জনগণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা অযৌক্তিক উত্তেজনা ও বিভাজনকে উসকে দেয়ার প্রচেষ্টার নামান্তর।
“আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিনিময় করা অকাট্য প্রমাণ বা তথ্য বাদ দিয়েছে বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
“উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শাহীন মিয়া ও মোহাম্মদ রাজু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যাতে ঘটনাগুলো আইনের আওতাভুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। জেসমিন সুলতানার ক্ষেত্রে যে বিচারিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি, বিশেষ করে চলমান যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়টি।”
মুখপাত্র বলেন, ‘একইভাবে শ্রম অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধকরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’
‘বরাবরের মতোই প্রতিবেদনে আইনগত কর্মকাণ্ডের চিত্র ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও কারখানা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি সম্পত্তি বা ব্যবস্থাপনা কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে অযাচিত বাধা বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের গৃহীত আইনানুগ পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
‘প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গৃহীত প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে প্রতিবেদনে মানবাধিকারের পদ্ধতিগত অপব্যবহারের অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ঘটনাগুলো প্রকাশের প্রবণতা বজায় রাখা হয়েছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যাশায় রয়েছে।’
আরও পড়ুন:শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দুহাত ভরে তার বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনি এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাসহ ১৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের নিবন্ধন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কোনো খালি বাস্কেট নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ভরা বাস্কেট। আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহারের। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি (বিজ্ঞাপন), ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’
অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়িসহ বাংলাদেশের মোট ১৪টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করা হয়।
সেগুলো হলো যথাক্রমে- গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা।
এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য