দেশে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য গতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী। তিনি বলছেন, এ জন্য ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব-আইপিওতে ভালো কোম্পানি ও সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন ডিএসই পরিচালক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন সুমন।
পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
সূচক ও লেনদেন বাড়ছে। দীর্ঘ সময় ধরে পতনের ধারা ছিল পুঁজিবাজারে, এখন সে জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটা ইতিবাচক।
শেয়ারবাজারে গতি আসার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমানো, কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের এককভাবে দুই শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ ক্রয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উদ্যোগ গ্রহণ, সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনকারী কোম্পানিগুলোকে বিএসইসিতে ডেকে কাউন্সেলিং করা। এসব পদক্ষেপের ফলে চাঙা হচ্ছে পুঁজিবাজার।
আগে নিয়ম ছিল, বিনিয়োগকারী চাইলে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে আবেদন করতে পারত। সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়াগে বাধ্যবাধকতা ছিল না। নতুন নিয়মে, আইপিওতে আবেদন করতে হলে সেকেন্ডারি মার্কেটে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। এর ফলে সেকেন্ডারি মার্কেটেও বিনিয়োগের সুযোগ আরও অবারিত হয়েছে। বিএসইসির এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী, এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
বর্তমানে পুঁজিবাজারে অনেক কোম্পানি আছে যেগুলোতে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কম। বিনিয়োগকারীদের সেসব কোম্পানির সন্ধান করতে হবে।
এখন প্রতিদিন গড়ে হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। অনেক কোম্পানি লভ্যাংশও ভালো দিচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারী যদি লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য শেয়ার ধরে রাখে তাতেও ক্ষতি নেই। এ ছাড়া প্রতিদিনের লেনদেনেও মুনাফার সুযোগ রয়েছে।
যত ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে পুঁজিবাজারের গ্রহণযোগ্যতা ততই বাড়বে। লেনদেন ও মূলধন যত বাড়বে ততই নতুন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের প্রতি আকৃষ্ট হবে।
পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে হলে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে?
বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। বিনিয়োগকারীদের হতাশা কাটাতে হবে। বিনিয়োগকারীরা লাভবান হলে বাজার আরও বড় হবে। নতুন বিনিয়োগকারী আসবে।
শিল্পায়নে মূল মাধ্যম হচ্ছে পুঁজিবাজার। ফলে এই বাজারকে শক্তিশালী করতেই হবে। এ জন্য ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে হবে। আর্থিক প্রতিবেদন স্বচ্ছ হতে হবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির। কারণ, এ প্রতিবেদন দেখে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। আর্থিক প্রতিবেদন যত স্বচ্ছ হবে পুঁজিবাজারও তত শক্তিশালী হবে।
বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে কী করা উচিত?
আমাদের বন্ড মার্কেট আছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড আছে। কিন্তু এগুলোর তেমন গতি নেই। এ মার্কেটগুলোর বড় হওয়ার সুযোগ আছে। কারণ, একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত। শুধু লেনদেন করে বাজার বড় করা যাবে না। নতুন বিনিয়োগকারী না আসলে মার্কেট বড় হবে না। এজন্য ভালো আইপিও প্রয়োজন। ভালো আইপিও আসলে আরও গতিশীল হবে পুঁজিবাজার।
ডিএসইর লেনদেনে প্রযুক্তির উন্নয়নে কী উদ্যোগ নেয়া উচিত?
প্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতে হলে আন্তর্জাতিক মানের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেসে (এপিআই) যুক্ত হতে হবে। এর মাধ্যমে ব্রোকার হাউজগুলো নিজেদের সফটওয়্যার তৈরি করতে পারবে। এটা বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। সেগুলো অনেকটাই অতিক্রম করা গেছে।
উন্নত দেশে স্টক এক্সচেঞ্জ কখনও ব্রোকারদের সফটওয়ার প্রদান করে না। তারা এপিআই লিংক দিয়ে দেয়, তা দিয়ে ব্রোকার হাউজগুলো তাদের ট্রেডিং সফটওয়্যার তৈরি করে।
এখন যে সফটওয়্যার আমরা ব্যবহার করছি সেটা ডিএসইর নিজস্ব। আমাদের এখানে অনেক ছোট ছোট ব্রোকার হাউজ আছে। তাদের আয় কম, ফলে লেনদেনও কম হয়। যাদের আয় কম তাদের জন্য এপিআই গ্রহণ যৌক্তিক হবে না। কারণ, আধুনিক এ প্রযুক্তি ব্যয়বহুল। পুঁজিবাজার বড় হয়েছে, এখন থেকে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে হবে।
কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসাবে চীন থেকে ৩৭ মিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তি সহায়তা পাওয়ার কথা। সেটি কি আমরা পেয়েছি?
পেলেও ব্যবহার করা হয়নি। কারণ, আমরা এখন যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি তার একটি ম্যাচিং ইঞ্জিন। এর মাধ্যমে ব্রোকার হাউজগুলো তাদের প্রতিদিনের লেনদেনের তথ্য ডিএসইকে সরবরাহ করে থাকে।
এটি নেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক প্রতিষ্ঠান থেকে। অপরটি ফ্লাক্স টিটি বা ট্রেডিং সফটওয়্যার। এটার মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচা করা হয়। এই প্রযুক্তি নেয়া হয়েছে ফ্রান্স থেকে। দুটি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে ডিএসইর সঙ্গে চুক্তি আছে, যার মেয়াদ শেষে হবে ২০২৪ সালে।
কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসাবে আমরা চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোটিয়ামকে নিয়েছি। তারা ৩৭ মিলিয়ন ডলার বা ৩১৪ কোটি টাকার প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করবে ডিএসইতে। আগামীতে চীনের প্রযুক্তি কাজে লাগানো হবে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। চীনের প্রযুক্তি বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে দৈনিক ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও কোনো সমস্যা হবে না।
পুঁজিবাজারে বাইব্যাক সম্পর্কে কিছু বলুন...
বাইব্যাকের জন্য আইন আছে। আমাদের পুঁজিবাজারে এখনও সেটা কার্যকর করা হয়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাইব্যাক কে করবে? কোম্পানি আইনে বলা আছে, এটা প্রতিষ্ঠান করবে।
কোনো পরিচালক বাইব্যাক করতে পারে না। যদি বাইব্যাক করে তাহলে পরিচালক বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে কম দামে কিনতে পারে। এতে পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও কোম্পানির কোনো সুবিধা নেই।
নিয়ম অনুযায়ী, বাইব্যাক করবে কোম্পানি। কোম্পানির যে রিজার্ভ আছে তা থেকে বাইব্যাক করবে। বিনিয়োগাকারীরা মনে করেন, বাইব্যাক হচ্ছে যখন শেয়ারের দর কমবে তখন পরিচালকরা নিজের টাকা দিয়ে শেয়ার কিনবে, কিন্তু এ ধারণা ঠিক না।
ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে সবচেয়ে বড় সমস্যা লেনদেন জটিলতা, এর উন্নয়নে পরামর্শ কী?
সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন করে না- এমন কোম্পানিগুলো মূলত ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেট তালিকাভুক্ত। বর্তমানে ওটিসি মার্কেটে কাগজে এবং ইলকেট্রনিক- উভয় ধরনের শেয়ার লেনদেন হয়। তবে বেশির ভাগই কাগজে শেয়ার।
আমরা যখন বিকল্প মার্কেট তৈরি করব তখন ওটিসি মার্কেট থেকে ইলেকট্রনিক শেয়ারের কোম্পানিগুলোকে আলাদা করতে পারব। ফলে লেনদেন সহজ হবে।
নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে কোন বিষয়গুলোতে নজর দেয়া উচিত?
পুঁজিবাজারে খারাপ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বিএসইসি ও ডিএসইকে দায়ী করা হয়, কিন্তু যারা কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে নিয়ে আসে তাদের সম্পর্কে কিছুই বলা হয় না।
আইন আছে, ইস্যুয়ার পুঁজিবাজারে খারাপ কোম্পানি নিয়ে আসলে জরিমানাসহ লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে, কিন্তু এ আইনের প্রয়োগ নেই।
উন্নত দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থা শুধু মনিটরিং করে। নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার দায়িত্ব ইস্যুয়ারের। তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ স্টক এক্সচেঞ্জে কাগজপত্র জমা দেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এটা বিশ্বাস করে, ইস্যুয়ার যেহেতু কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে নিয়ে এসেছে, ফলে সেটা ভালো হবে।
যদি কোম্পানি খারাপ হয় তাহলে জরিমানা করে ইস্যুয়ার প্রতিষ্ঠানকে কিন্তু আমাদের এখানে তা করা হয় না। ফলে ইস্যুয়াররা শুধু নতুন কোম্পানি আনার কাজটিই করে থাকে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য