দেশীয় পাদুকা শিল্পে বহুজাতিক কোম্পানি বাটার দাপুটে রাজত্বে ভাটা পড়েছে। করোনাভাইরাসের কালে হঠাৎ ধসে বাটার বিক্রি তলানিতে। বিপুল পরিমাণ পরিচালন ব্যয়ের কারণে লোকসান ব্যাপক।
শুধু অভ্যন্তরীণ বিক্রিই কমেনি, কমছে রপ্তানিও। এসবের প্রভাব পড়েছে মোট আয়ে।
চলতি বছর তিন প্রান্তিকে কোম্পানির লোকসান হয়েছে ১০৭ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার ২০৬ টাকার।
দীর্ঘকাল বাংলাদেশে শীর্ষ অবস্থানে থেকেও এখন তারা ব্যবসা হারাতে বসেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা।
এতে উঠে এসেছে শীর্ষে থাকার লড়াইয়ে কোম্পানির বাকিতে ব্যবসার নীতি অনুসরণ এবং বছরজুড়ে স্টক লটের মাল ডিসকাউন্ট মূল্যে বিক্রিসহ আরও অনেক তথ্য।
গত এক দশকে দেশীয় কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতাতেও পড়তে হয়েছে বাটাকে। এই সময়ে অন্তত ডজনখানেক দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড দেশে ব্যবসার পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে। তাদের নতুন নতুন স্টাইল ও ডিজাইন বাজারে সাড়া ফেলেছে এবং নিজেদের আলাদা ক্রেতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
এই সময়ে দেশে বাটার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, বে সুজ, ওরিয়ন, ইনসোল, ক্রিসেন্ট, প্রাণ-আরএফএল, ইউএস-বাংলা ও রানারের মতো প্রতিষ্ঠান। লেদারেক্স, জিলস ভাইব্রেন্টের মতো কিছু কোম্পানিও দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজস্ব শো-রুম দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে।
এর বাইরে দেশে আসছে আমদানি করা জুতাও। আকর্ষণীয় এসব জুতা বিভিন্ন শো-রুমের পাশাপাশি খোলা বাজারেও তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
আবার সরকার নতুন ভ্যাট আইন প্রবর্তনের ফলে বেচাকেনায় এ বিষয়ক সৃষ্ট জটিলতাও ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
কোম্পানির ব্যবসায় ধসের আরেকটি কারণ হচ্ছে, সারা দেশে বাটার যত পাইকারি ডিপো, হোলসেল ডিলার এবং রিটেইল আউটলেট রয়েছে, তার বেশিরভাগই সপ্তাহে গড়ে দেড় দিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে বাকি সময়ে লক্ষ্যমাত্রার পণ্য বিক্রি অর্জন হচ্ছে না।
বিক্রি কমার এই মিছিলে গত বছর মার্চে নতুন উপসর্গ হিসেবে যোগ হয়েছে করোনার নেতিবাচক প্রভাব। এতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বাটার ব্যবসায়ও মারাত্মক ধস নামে। চলতি বছর কোম্পানিটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।
বাটার আয়ে প্রথম ধাক্কা আসে ২০১৯ সালে। ২০১৮ সালে যেখানে কোম্পানির মোট আয় ছিল ৯৫২ কোটি ১৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, সেখানে পরের বছর আয় কমে দাঁড়ায় ৮৫৭ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকায়।
যদিও এর আগের বছরগুলোতে কোম্পানির ব্যবসা তুলনামূলক ভালো ছিল। ২০১৭ সালে আয় ছিল ৯০৪ কোটি ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৫ টাকা। ২০১৬ সালে ছিল ৮৭৮ কোটি ৪৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৭ টাকা।
২০২০ সালের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখনও প্রস্তুত হয়নি। তবে কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে বাটা আয় করেছে ৩৪৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার ২২৬ টাকা। অথচ ২০১৯ সালের একই সময়ে কোম্পানির এই আয় ছিল ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৯ টাকা।
২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির হাতে ২৬৬ কোটি ৯২ লাখ ৭৬ হাজার ৯৪ টাকার বিক্রিত পণ্যের মজুত ছিল, যা ক্রেতার অভাবে বিক্রি করা যায়নি।
এ সময় স্থানীয়ভাবে জুতা বিক্রি হয় ৩৩০ কোটি ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ৫৪১ টাকার। আর হোসিয়ারি ও এক্সেসরিজ বিক্রি হয় ১৩ কোটি ৬৪ লাখ এক হাজার ৭৭৪ টাকার।
একই সময়ে জুতা এবং হোসিয়ারি ও এক্সেসরিজ মিলে বাটা ব্র্যান্ডের পণ্য রপ্তানি হয় ৬৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯১১ টাকার। আগের বছরের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৫ লাখ ৪ হাজার ১১৬ টাকার।
এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক, বিক্রয় ও সরবরাহজনিত ব্যয় হয়েছে ১৮৪ কোটি ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৪ টাকা। ফলে পরিচালন মুনাফা ১০৭ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার ২০৬ টাকা লোকসানে পরিণত হয়।
বাংলাদেশে বাটা কোম্পানির দুইটি কারখানা রয়েছে। এর একটি গাজীপুরের টঙ্গী ও অপরটি ঢাকার ধামরাইয়ে। কারখানা দুইটির সম্মিলিতভাবে দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার জোড়া জুতা।
২০০৯ সালে জুতা বিক্রি হয় তিন কোটি জোড়া। এর ১০ বছর পর ২০১৮ সালে জুতা বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় তিন কোটি ২৯ লাখ জোড়ায়। এরপরই কমতে থাকে বিক্রি। তবে সর্বশেষ কত কোটি জোড়ায় নেমে আসে তা এবারের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
সারা দেশে বাটা বাংলাদেশের হোলসেল ডিপো রয়েছে ১৩টি। এই হোলসেল ডিপোর মাধ্যমে ৪৭১টি অনুমোদিত হোলসেল ডিলার এবং ৬৯০টি ডিলার সাপোর্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাটা জুতা বাজারজাত হয়ে থাকে। আর বাটা সিটি স্টোর, বাটা বাজার এবং বাটা ফ্যামেলি শপসহ সারা দেশে আরও রয়েছে ২৪২টি রিটেইল আউটলেট।
বাটার নিরীক্ষা প্রতিবেদনে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানিটির চেয়ারম্যান রাজীব গোপালা কৃষ্ণানের একটি মন্তব্য উল্লেখ করা আছে। সেখানে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে দেশ দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সাধারণ ছুটির আওতায় ছিল। এর ফলে তারা নিয়মিত ব্যবসা হারিয়েছেন।
বাংলাদেশের ব্যবসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোম্পানির বিক্রিত পণ্যের ৮১ ভাগই হয়ে থাকে খুচরা চ্যানেলে। আর পাইকারি চ্যানেলে হয়ে থাকে ১৯ শতাংশ। আবার পাইকারি চ্যানেলের বেশির ভাগ বিক্রিই হয়ে থাকে বাকিতে।
‘অন্যদিকে বাটার মোট ব্যবসার ২৫ শতাংশ অবদান রাখে প্রতি বছর ঈদুল ফিতর। করোনায় সাধারণ ছুটির কারণে গত বছর আমরা তা সম্পূর্ণরূপে হারিয়েছি।’
তিনি বলেন, ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা অব্যাহত রাখার জন্যই ডিলারদের কাছে বাকিতে পণ্য বিক্রি করতে হয়। তবে এই বাকি আগের বছরে তুলনায় ৩৬ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
বাটা বাংলাদেশের রপ্তানি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ সালেহীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে টানা চার মাস কারখানা বন্ধ ছিল। আগস্টে কারখানা চালু হলেও উৎপাদন সীমিত করা হয়। আগের তুলনায় এখন উৎপাদন ৫০ ভাগ কম হচ্ছে। তা ছাড়া আগের পণ্য বিক্রি না হওয়ায় নতুন-পুরনো মিলে স্টকও বেড়েছে।’
করোনাকাল তাদের ব্যবসার কতটা ক্ষতি করেছে, তার একটি উদাহরণ দেন সালেহীন। বলেন, ‘দেশে সর্বোবৃহৎ রিটেইল শপ বসুন্ধরা সিটিতে যেখানে অন্যান্য রোজায় দিনে গড়ে এক কোটি টাকা বিক্রি হতো, গত রোজায় সেখানে এক জোড়া জুতাও বিক্রি হয়নি। এমন দিনই গেছে বেশির ভাগ সময়। অন্যান্য শো-রুমে বেচাবিক্রির অবস্থা কী ছিল এর থেকেই অনুমান করা যায়।’
ব্যবসার এই প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দরে। গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে শেয়ার। তাও বিনিয়োগকারীদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। প্রতিদিন নগণ্যসংখ্যক শেয়ার বিক্রি হয়।
কোম্পানিটির সবশেষ শেয়ার দর ৬৪০ টাকা ২০ পয়সা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী বাটার ফ্লোর প্রাইস ঠিক হয়েছে ৬৯৩ টাকা ২০ পয়সা। কোম্পানির অবস্থা যাই হোক না কেন আপাতত এর নিচে নামবে না দাম। এই বিষয়টি না থাকলে কোম্পানির বর্তমান অবস্থায় শেয়ারদর কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, তা নিয়ে নিয়ে অবশ্য আছে প্রশ্ন।
১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা এক কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ারের সংখ্যা ৭০ শতাংশ। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ১৯.৪১ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ১.৮১ শতাংশ। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৮.৭৮ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন।
কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য আছে ৩৬৪ কোটি ৬৫ টাকা।
কোম্পানিটির রিজার্ভে আছে ৪৭৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। চলতি বছরের নয় মাসেই রিজার্ভের ২২ শতাংশ লোকসান হয়ে গেছে।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২৪ সালে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের নামে পাওনা রয়েছে ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় ( প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা ধরে ) যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে যার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ ফ্রাঁ। এখনকার বিনিময় হার ধরলে যার পরিমাণ ৩৯৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৩ গুণ। ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশের কাছে সুইজারল্যান্ডের দায় ছিল ৫ কোটি ৮৪ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় ৮৭৬ কোটি টাকা।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে দায়ের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, আমনাতকারীদের পাওনা এবং পুঁজিবাজারে বাংলাদেশের নামে বিনিয়োগের অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, যা বাণিজ্য কেন্দ্রিক অর্থ বলে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার করা সম্পদ হতে পারে বলে ধারণা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কয়েক বছর ধরে সুইজারল্যান্ড বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বা বিএফআইইউ সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগও করেছিল। কিন্তু ব্যক্তির তালিকা সম্বলিত কোনো তথ্য তারা দেয়নি।
সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্য দেশের নামে অর্থ গচ্ছিত রাখে তাহলে তা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা পরিসংখ্যানের মধ্যে আসেনি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।
বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের শ্রীলঙ্কায় তথ্য-প্রযুক্তি ও ওষুধ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার উপপররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্র এবং উপ-অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমা।
গতকাল বৃহস্পতিবার কলম্বোয় শ্রীলঙ্কা সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এই আহ্বান জানান তারা। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি দেশটির পররাষ্ট্র ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি বৈঠকে অংশ নেয়।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেতারা শ্রীলঙ্কার উপপররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্র এবং উপঅর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমার সঙ্গে কলম্বোতে তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে আরুন হেমাচন্দ্র বলেন, দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হলে আগামীতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করেছে এবং বাংলাদেশ সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।
বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এলে সরকার পূর্ণ সহায়তা দেবে।
তিনি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের তার দেশের সম্ভাবনাময় খাতসমূহে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং এলক্ষ্যে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানসমূহে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ জানান, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ধারা পরিবর্তন হচ্ছে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যদিও বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক, তবে প্রযুক্তি, পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং উদ্ভাবনের দিক থেকে শ্রীলংকা বেশ এগিয়ে রয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে দুদেশের বেসরকারিখাতের যৌথ উদ্যোগে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ উভয় দেশের মধ্যে একটি এফটিএ স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগণের মধ্যকার সংযোগ আরও সুদৃঢ় হবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রীলংকার ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে অত্যন্ত আগ্রহী এবং শ্রীলংকার উদ্যোক্তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলংঙ্কার অর্থনীতি প্রায় একই ধাঁচের যেখানে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বাস্তবিক অর্থে ততটা কার্যকর হবে না। এক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ডিসিসিআই’র ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পৃথক এক বৈঠকে শ্রীলংকার উপ-অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমা বলেন, আমাদের একসাথে কাজ করার অবারিত সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবা, ঔষধ, চা, জ্বালানি, আর্থিক সেবা ও পর্যটন খাত যৌথ বিনিয়োগের জন্য প্রচুর সম্ভাবনাময়।
তিনি জানান, শ্রীলংকা ইতোমধ্যেই একটি উচ্চাভিলাষী ডিজিটাল রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে এবং এই পরিকল্পনার অধীনে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশকে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রাষ্ট্রে রূপান্তর এবং প্রতিটি সেবা স্বয়ংক্রিয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, শ্রীলংকায় অত্যাধুনিক ডেটা সেন্টার স্থাপনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ এগিয়ে আসতে পারেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের শ্রীলংকার ঔষধ শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। যাতে দেশটির স্থানীয় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী ও সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তব্য আরও কঠোর করার পর মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজারে পতন ঘটে, যা যুদ্ধকে আরও সম্প্রসারণ করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পঞ্চম দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দাবি করেন এবং মার্কিন হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেন।
ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ সূচক ০.৭ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪২,২১৫.৮০ পয়েন্টে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৮ শতাংশ কমে ৫,৯৮২.৭২ পয়েন্টে এবং প্রযুক্তি খাতভিত্তিক ন্যাশডাক কম্পোজিট ০.৯ শতাংশ কমে ১৯,৫২১.০৯ পয়েন্টে নেমে আসে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ এখন বিনিয়োগকারীদের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। একই সময়ে তারা ফেডারেল রিজার্ভের দিকে নজর রাখছে। যা বর্তমানে দুই দিনের আর্থিক নীতিমালা বৈঠকে রয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভ আপাতত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, কারণ, তারা ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে মুদ্রাস্ফীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছে।
গতকাল বুধবার ফেড তাদের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রকাশ করবে, যাতে থাকবে প্রবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য।
এদিকে, বিনিয়োগকারীরা দুর্বল অর্থনৈতিক তথ্যের প্রভাবও মূল্যায়ন করছেন। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মোট খুচরা বিক্রি এপ্রিলের তুলনায় ০.৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭১৫.৪ বিলিয়ন ডলারে। এই তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, এপ্রিলে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় যে ভোক্তারা আগেভাগে পণ্য কিনে নিয়েছিলেন, মে মাসে সেই কেনাকাটার গতি কমে গেছে।
এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ১১টি খাতের মধ্যে ১০টিতেই দরপতন হয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল জ্বালানি খাত, যা তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
প্রতিরক্ষা খাতভুক্ত কোম্পানিগুলোও লাভ করেছে। লকহিড মার্টিন ২.৬ শতাংশ এবং নর্থরপ গ্রুমান ১.২ শতাংশ বেড়েছে।
তরুণদের কাছে জনপ্রিয় টেক ব্র্যান্ড রিয়েলমি কোম্পানির স্মার্টফোনের খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয়ে সম্প্রতি ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছে। রিয়েলমি সার্ভিস ডে উপলক্ষ্যে এই ক্যাম্পেইনের অফার চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত।
এ ক্যাম্পেইন চলাকালে ইউজাররা সকল অ্যাকসেসরিজ ও সেফগার্ড সার্ভিসে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট লুফে নিতে পারবেন। শুধুমাত্র দেশজুড়ে অবস্থিত রিয়েলমি’র অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারগুলো থেকে এই অফার পেতে পারবেন গ্রাহকরা।
এছাড়াও- স্মার্টফোনের ওয়ারেন্টি বিষয়ক সার্ভিস, ক্লিনিং ও মেইনটেন্যান্স, সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন, প্রটেক্টিভ পেপার ফিল্মস ও প্রটেক্টিভ ফোন কেসে থাকবে বিভিন্ন ছাড়।
এখানে উল্লেখ্য যে- ঘোষিত অফারটি শুধুমাত্র রিয়েলমি’র অফিসিয়াল স্মার্টফোনগুলোর জন্যই প্রযোজ্য।
এসব অফার ছাড়াও- রিয়েলমি অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারে ডিভাইস পাঠানোর ক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের রিয়েলমি অথরাইজড কালেকশন পয়েন্টস ব্যবহার করতে পারবেন।
অফার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইউজাররা ফেসবুকে রিয়েলমি’র অফিসিয়াল আফটার-সেল সার্ভিস পেজ "realme Service BD" ভিজিট করতে পারেন।
তাই ভিজিট করুন আপনার কাছেরই কোনো আউটলেট এবং ক্যাম্পেইন শেষের আগেই ডিসকাউন্ট উপভোগ করুন
১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ৪০তম সভা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, গুলশান-১, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মুঃ ফরীদ উদ্দীন আহমদ। সভায় পর্ষদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মোঃ হুমায়ুন কবীর, স্বতন্ত্র পরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম জাহীদ, জনাব মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সর্বজনাব শফিউদ্দিন আহমেদ এবং মোহাম্মদ ইকবাল কার্যপোলক্ষ্যে সভায় যোগদান করেন। সভায় ব্যাংকের ব্যবসা বাণিজ্য, আমানত ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আদায়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
জনতা ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান ১৫ জুন রোববার জনতা ব্যাংক স্টাফ কলেজ ঢাকা কর্তৃক আয়োজিত ২৫ (পঁচিশ) দিন ব্যাপী ফাউন্ডেশন কোর্স ফর অফিসার্স (ব্যাচ ০৫/২০২৫) শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধন করেন। উক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সে জনতা ব্যাংকের ৫০ জন সিনিয়র অফিসার অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনতা ব্যাংক স্টাফ কলেজের ডিজিএম-স্টাফ কলেজ ইনচার্জসহ অন্যান্য নির্বাহী ও অনুষদ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা-চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে, দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির।
সারাদিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫৯ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১৬ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৫ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭ কোম্পানির মধ্যে ৩১৫ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৩৬ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৪৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির। বিশেষ করে লভ্যাংশ দেওয়া ভালো কোম্পানির এ ক্যাটাগরির ২১৭ কোম্পানির মধ্যে ১৭৯ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৫ এবং অপরিবর্তিত আছে ৪৬ কোম্পানির শেয়ারমূল্য।
ডিএসই ব্লক মার্কেটে ২৫ কোম্পানির ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। লাভেলো সর্বোচ্চ ১৭ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
গতদিনের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সারাদিনে ৪১৭ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ২৬৩ কোটি টাকা।
৯.৮৬ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স এবং সাড়ে ৩ শতাংশ দাম কমে তলানিতে শ্যামপুর সুগ্যার মিল।
চট্টগ্রামেও উত্থান
ঢাকার মতো সূচক বেড়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই), সারাদিনের লেনদেনে সার্বিক সূচক বেড়েছে ৬০ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ১৮৪ কোম্পানির মধ্যে ১১৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৫৩ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা এর আগের সবশেষ কার্যদিবসে ছিল ১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স এবং ৯ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে ইসলামী ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।
মন্তব্য