সংশয় থাকলেও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হওয়া জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছে নতুন করে প্রস্তাব রাখবে বাংলাদেশ।
চলতি বছর মার্চে অনুষ্ঠেয় ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট- টিকফার বৈঠকে প্রস্তাবটি জোরেশোরে তুলবে সরকার।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ ‘অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে বৈঠকটি হবে। বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বৈঠকে স্থগিত জিএসপি সচল করার পাশাপাশি জিএসপি বহিঃর্ভূত বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত তৈরি পোশাককেও এই সুবিধা অন্তর্ভূক্তির অনুরোধ জানাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বিষয়ক নিয়মিত আলোচনার একমাত্র প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে- টিকফা ফোরাম। প্রতিবছর মার্চের প্রথম সপ্তাহে স্বার্থসংশ্লিষ্ট আলোচনার জন্য দুই দেশের মধ্যে এই বৈঠক হয়। পঞ্চম বৈঠকটি গত বছর ৫ মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এবার ৬ষ্ঠ বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআর কার্যালয়ে হওয়ার কথা রয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যেতে না পারলে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করবে দুই দেশ। এখন টিকফা ফোরামে আলোচনার জন্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে অবস্থানপত্র তৈরি করছে বাংলাদেশ। সেখানে জিএসপির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারসহ তৈরি পোশাককে জিএসপিভুক্ত করাসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত ১০-১২টি বিষয় বাংলাদেশ আলোচনার জন্য উপস্থাপন করবে।
স্বল্পোন্নত সব দেশকেই নিজেদের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘জেনারেলাইজড সিষ্টেম অফ প্রেফারেন্সেস-জিএসপি স্কিম বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার আওতায় শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছে। স্বল্পোন্নত হিসেবে বাংলাদেশও এই বাজারে রপ্তানির ৯৭ শতাংশ পণ্যে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছিল।
অন্য পণ্যে পেলেও তৈরি পোশাকে বাংলাদেশ কখনই জিএসপি সুবিধা পেতো না। আবার দেশটিতে রপ্তানির ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা থাকলেও সক্ষমতার অভাবে বাংলাদেশ তালিকাভুক্ত সংশ্লিষ্ট পণ্যের মধ্যে রপ্তানি করতে পারে খুব সামান্যই, যেখানে শুল্ক সুবিধার আকার মাত্র ০.২৫ শতাংশ। সেটিও স্থগিত হয়ে যায় ২০১২ সালে সাভারে সংঘটিত রানা প্লাজা ট্রাজ্যাডির পর।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের (ইউএসটিআর) ওয়েবসাইটে দেখানো ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের গড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যেখানে একক খাত হিসেবে শুধু তৈরি পোশাকই যায় প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের। বাকিটা অন্যান্য পণ্যের।
অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
জানা গেছে, বিশ্বের শিল্প দুর্ঘটনার ইতিহাসে স্মরণীয় ট্রাজ্যাডির একটি হলো সাভারে রানা প্লাজায় ধস। এই দুর্ঘটনার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী শ্রমিক সংগঠনগুলো এর দায় চাপায় বাংলাদশ সরকার ও উদ্যোক্তাদের ওপর। তারা ইউএসটিআর কার্যালয়ে শ্রম অধিকার ইস্যুতে চরম অবহেলার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা কেড়ে নেয়ার জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসনের ওপর চাপ দেয়।
তখন ওবামা প্রশাসনের নির্দেশে যতদিন না কর্ম পরিবেশ ও শ্রম অধিকারের উন্নয়ন না হয়, ততদিন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত রাখার আদেশ জারি করে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ।
পাশাপাশি শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে চাপিয়ে দেয় ১৬ শর্ত। যার তদারকিতে ব্র্যান্ড বায়ারদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বাংলাদেশে অভিষেক হয়। এতে বাংলাদেশের পোশাকখাতে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হলেও সাত বছরেও মেলেনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের প্রত্যাহার আদেশ।
তা সত্বেও বাংলাদেশ এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে কখনও মৌখিক এবং কখনও লিখিত এজেন্ডা নিয়ে আগের পাঁচটি টিকফা ফোরামের বৈঠকে অংশ নেয়। কিন্তু বরফ গলেনি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন বা সরকারের কাছে জিএসপি সুবিধা চাওয়ার বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে কি-না জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন রোববার রাতে নিউজবাংলাকে জানান, নতুন সরকারের কাছে জিএসপি পূণর্বিবেচনার বিষয়টিতে তো বাংলাদেশ আশা রাখতেই পারে। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও দুই দেশের মধ্যকার আলোচনার প্ল্যাটফর্ম টিকফা মিটিংয়ে জিএসপি ইস্যুতে এবার সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই দেশের দূতাবাস পর্যায়ে কূটনৈতিক চেষ্টাও চালিয়ে নেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘জিএসপি ফিরে পাওয়ার প্রায় সব শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করেছে। তারা হয়তো আমাদের শর্ত দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের তাগিদেই পোশাকখাতের সংস্কার ও উন্নতি করেছে। কিছু কাজ চলমান রয়েছে, যা দ্রুত শেষ হবে। ভবিষ্যতে কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশ হবে একটি আদর্শ রাষ্ট্র। আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি ফিরে পাওয়ার আশা রাখতেই পারি।’
এদিকে জিএসপি ফিরে পাওয়ার ইস্যুতে নতুন করে আলোচনায় আনার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, প্রশাসন পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকার এসেছে। একটি সুযোগ হয়েছেই, তাই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত টিকফা ফোরামের আলোচনায় জিএসপি ইস্যুতে অধিক গুরুত্ব দেয়া।
বাংলাদেশের জিএসপি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুক- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পেলাম কী পেলাম না, সে দিকে না গিয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে এটাও ঠিক- যে কারণে জিএসপি স্থগিত হলো তার উত্তরণে যেসব শর্ত ছিল, সেগুলো ঠিকঠাকভাবে পূরণ হলো কী হলো না, সেটাই কিন্তু পুণর্বিবেচনার একমাত্র মানদণ্ড।’
সংশয় প্রকাশ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনার নতুন সুযোগ তৈরি হলেও মনে রাখতে হবে, মার্কিন প্রশাসনে রিপাবলিকানদের চেয়ে ডেমোক্রেটিকরা শ্রম ও মানবাধিকার ইস্যুতে খুব রক্ষণশীল। ডেমোক্রেটিক ওবামা প্রশাসন বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করেছিল। কিন্তু রিপাবলিকান ট্রাম্প প্রশাসনও যেখানে আমাদের জিএসপি ফিরিয়ে দেয়নি, সেখানে আরেক ডেমোক্রেটিক প্রশাসনের (জো বাইডেন) অভিষেক ঘটেছে, যিনি ওবামার অনেক নীতি আদেশ বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে শর্ত পূরণের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে না পারলে জিএসপি ফিরে পাওয়ার ভবিষ্যত অন্ধকারেই থেকে যাবে।’
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দাবদাহ। এ সময়ে অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে করণীয় কী কী, তা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার।
এক ভিডিওবার্তায় তিনি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন, যা তার ভাষায় তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকের জন্য।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সতর্কতা
সম্মানিত দর্শকমণ্ডলী, প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে এবং এটি আরও কিছুদিন ধরে কন্টিনিউ করতে পারে। এ সময় কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে জন্য এই তাপদাহের সময় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া লাগবে।
বিশেষ করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক হওয়া লাগবে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং যন্ত্রাংশ ব্যবহারের সময় এটি একটানা দীর্ঘসময় ব্যবহার না করে মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া লাগবে এবং এগুলো যারা পরিচালনা করেন, শ্রমিক যারা তাদেরও কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে একটানা কাজ না করিয়ে মাঝে মাঝে তাদেরকেও বিরতি দিতে হবে। তাহলে কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার শঙ্কা হ্রাস পাবে এবং সীমিত থাকবে।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত রাখা
সকল ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না, এখনই চেক করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা বদলে ফেলতে হবে। একটি বৈদ্যুতিক লাইন থেকে অথবা একটি মাল্টিপ্লাগ থেকে অতিরিক্ত সংযোগ নেয়া যাবে না। এই জাতীয় সংযোগ থেকে কিন্তু দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারে সতর্কতা
বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যখন ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে, সব ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। অফ করে রাখতে হবে।
রান্নার ক্ষেত্রে সতর্কতা
এ ছাড়া আমরা আবাসিক ভবনে যারা রান্নার কাজ করি, রান্না রেখে দূরে সরে যাওয়া যাবে না। রান্না শেষে অবশ্যই চুলা পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং গ্রামেগঞ্জে রান্না করছি যেখানে ছাই যেন উত্তপ্ত না থাকে, ছাইও নিশ্চিন্তভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে।
ধূমপান পরিহার
আবাসিক ভবন ও কারখানায় কোনোভাবেই কিন্তু ধূমপান করা যাবে না। অপরিহার্য ক্ষেত্রে বাইরে যারা ধূমপান করবেন, বিড়ি-সিগারেটের শেষ অংশ সতর্কভাবে, সচেতনভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং গাড়িতে চলাচলের সময় ধূমপান করে যেখানে সেখানে কিন্তু সিগারেটের অংশ ফেলা যাবে না।
বারবিকিউ পার্টি না করা
বাড়ির ছাদে, বারান্দায় অথবা আশপাশে দাহ্য বস্তু আছে, এমন খোলা জায়গায় এ সময় বারবিকিউ পার্টি করবেন না। কারণ একটি স্ফূলিঙ্গ উড়ে গিয়ে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে। এই সময় ক্যাম্প ফায়ার, ফানুস ওড়ানো অথবা আতশবাজিকে পুরোপুরি না বলুন।
গাড়িতে অবস্থান ও পার্কিংয়ে সতর্কতা
ফিলিং স্টেশন থেকে তেল ও গ্যাস সংগ্রহের সময় অনুগ্রহপূর্বক কেউ গাড়িতে অবস্থান করবেন না। সবাই সচেতন থাকবেন। বিশেষ করে ফিলিং স্টেশনের মালিক এবং যারা কর্মরত আছেন, তাদের এ ব্যাপারে অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
এ সময় সরাসরি রোদ পড়ে এমন জায়গায় গাড়ি পার্কিং করবেন না। গাড়ি ছায়ার মধ্যে পার্কিং করবেন বা যেখানে ছায়া আছে, এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করবেন।
আগুন নিয়ে খেলা পরিহার
এ সময় বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলতে দেবেন না এবং আপনার হাতের কাছে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সংরক্ষণ করুন। সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না, তা পরীক্ষা করুন এবং এগুলোর সামনে কোনো ব্যারিয়ার তৈরি করবেন না।
ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা পেতে
আপনার সতর্কতা এবং আপনার প্রতিবেশীকে সতর্ক করার মধ্য দিয়ে কিন্তু নিরাপদ থাকা সম্ভব। এ ছাড়া আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের মোবাইলে নিকটস্থ ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বর সেভ করে রাখুন। যেকোনো সময় ফায়ার সার্ভিসকে দ্রুত রেসপন্স করার জন্য ১৬১৬৩ হটলাইন অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কিংবা নিকটতম ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বরে দ্রুত কল করুন এবং ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করুন।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক যাত্রায় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও এক হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।
ঈদযাত্রায় অন্যান্য পথে দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত, পাঁচজন আহত হয়েছে।
‘সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত ও ১ হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ মানুষের বেশি যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায় যানবাহনে গতি বেড়েছে।
‘দেশের সবকটি সড়ক-মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেছে। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৯৮ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছিল।
‘বিগত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ০৮ শতাংশ, আহত ১৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ও সেই সঙ্গে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অস্থান নিয়ে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
শনিবারের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
তাপপ্রবাহ নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং বরিশালের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে যা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য স্থানে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য