সংশয় থাকলেও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হওয়া জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছে নতুন করে প্রস্তাব রাখবে বাংলাদেশ।
চলতি বছর মার্চে অনুষ্ঠেয় ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট- টিকফার বৈঠকে প্রস্তাবটি জোরেশোরে তুলবে সরকার।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ ‘অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে বৈঠকটি হবে। বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বৈঠকে স্থগিত জিএসপি সচল করার পাশাপাশি জিএসপি বহিঃর্ভূত বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত তৈরি পোশাককেও এই সুবিধা অন্তর্ভূক্তির অনুরোধ জানাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বিষয়ক নিয়মিত আলোচনার একমাত্র প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে- টিকফা ফোরাম। প্রতিবছর মার্চের প্রথম সপ্তাহে স্বার্থসংশ্লিষ্ট আলোচনার জন্য দুই দেশের মধ্যে এই বৈঠক হয়। পঞ্চম বৈঠকটি গত বছর ৫ মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এবার ৬ষ্ঠ বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআর কার্যালয়ে হওয়ার কথা রয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যেতে না পারলে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করবে দুই দেশ। এখন টিকফা ফোরামে আলোচনার জন্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে অবস্থানপত্র তৈরি করছে বাংলাদেশ। সেখানে জিএসপির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারসহ তৈরি পোশাককে জিএসপিভুক্ত করাসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত ১০-১২টি বিষয় বাংলাদেশ আলোচনার জন্য উপস্থাপন করবে।
স্বল্পোন্নত সব দেশকেই নিজেদের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘জেনারেলাইজড সিষ্টেম অফ প্রেফারেন্সেস-জিএসপি স্কিম বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার আওতায় শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছে। স্বল্পোন্নত হিসেবে বাংলাদেশও এই বাজারে রপ্তানির ৯৭ শতাংশ পণ্যে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছিল।
অন্য পণ্যে পেলেও তৈরি পোশাকে বাংলাদেশ কখনই জিএসপি সুবিধা পেতো না। আবার দেশটিতে রপ্তানির ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা থাকলেও সক্ষমতার অভাবে বাংলাদেশ তালিকাভুক্ত সংশ্লিষ্ট পণ্যের মধ্যে রপ্তানি করতে পারে খুব সামান্যই, যেখানে শুল্ক সুবিধার আকার মাত্র ০.২৫ শতাংশ। সেটিও স্থগিত হয়ে যায় ২০১২ সালে সাভারে সংঘটিত রানা প্লাজা ট্রাজ্যাডির পর।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের (ইউএসটিআর) ওয়েবসাইটে দেখানো ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের গড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যেখানে একক খাত হিসেবে শুধু তৈরি পোশাকই যায় প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের। বাকিটা অন্যান্য পণ্যের।
অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
জানা গেছে, বিশ্বের শিল্প দুর্ঘটনার ইতিহাসে স্মরণীয় ট্রাজ্যাডির একটি হলো সাভারে রানা প্লাজায় ধস। এই দুর্ঘটনার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী শ্রমিক সংগঠনগুলো এর দায় চাপায় বাংলাদশ সরকার ও উদ্যোক্তাদের ওপর। তারা ইউএসটিআর কার্যালয়ে শ্রম অধিকার ইস্যুতে চরম অবহেলার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা কেড়ে নেয়ার জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসনের ওপর চাপ দেয়।
তখন ওবামা প্রশাসনের নির্দেশে যতদিন না কর্ম পরিবেশ ও শ্রম অধিকারের উন্নয়ন না হয়, ততদিন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত রাখার আদেশ জারি করে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ।
পাশাপাশি শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে চাপিয়ে দেয় ১৬ শর্ত। যার তদারকিতে ব্র্যান্ড বায়ারদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বাংলাদেশে অভিষেক হয়। এতে বাংলাদেশের পোশাকখাতে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হলেও সাত বছরেও মেলেনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের প্রত্যাহার আদেশ।
তা সত্বেও বাংলাদেশ এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে কখনও মৌখিক এবং কখনও লিখিত এজেন্ডা নিয়ে আগের পাঁচটি টিকফা ফোরামের বৈঠকে অংশ নেয়। কিন্তু বরফ গলেনি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন বা সরকারের কাছে জিএসপি সুবিধা চাওয়ার বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে কি-না জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন রোববার রাতে নিউজবাংলাকে জানান, নতুন সরকারের কাছে জিএসপি পূণর্বিবেচনার বিষয়টিতে তো বাংলাদেশ আশা রাখতেই পারে। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও দুই দেশের মধ্যকার আলোচনার প্ল্যাটফর্ম টিকফা মিটিংয়ে জিএসপি ইস্যুতে এবার সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই দেশের দূতাবাস পর্যায়ে কূটনৈতিক চেষ্টাও চালিয়ে নেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘জিএসপি ফিরে পাওয়ার প্রায় সব শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করেছে। তারা হয়তো আমাদের শর্ত দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের তাগিদেই পোশাকখাতের সংস্কার ও উন্নতি করেছে। কিছু কাজ চলমান রয়েছে, যা দ্রুত শেষ হবে। ভবিষ্যতে কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশ হবে একটি আদর্শ রাষ্ট্র। আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি ফিরে পাওয়ার আশা রাখতেই পারি।’
এদিকে জিএসপি ফিরে পাওয়ার ইস্যুতে নতুন করে আলোচনায় আনার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, প্রশাসন পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকার এসেছে। একটি সুযোগ হয়েছেই, তাই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত টিকফা ফোরামের আলোচনায় জিএসপি ইস্যুতে অধিক গুরুত্ব দেয়া।
বাংলাদেশের জিএসপি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুক- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পেলাম কী পেলাম না, সে দিকে না গিয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে এটাও ঠিক- যে কারণে জিএসপি স্থগিত হলো তার উত্তরণে যেসব শর্ত ছিল, সেগুলো ঠিকঠাকভাবে পূরণ হলো কী হলো না, সেটাই কিন্তু পুণর্বিবেচনার একমাত্র মানদণ্ড।’
সংশয় প্রকাশ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনার নতুন সুযোগ তৈরি হলেও মনে রাখতে হবে, মার্কিন প্রশাসনে রিপাবলিকানদের চেয়ে ডেমোক্রেটিকরা শ্রম ও মানবাধিকার ইস্যুতে খুব রক্ষণশীল। ডেমোক্রেটিক ওবামা প্রশাসন বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করেছিল। কিন্তু রিপাবলিকান ট্রাম্প প্রশাসনও যেখানে আমাদের জিএসপি ফিরিয়ে দেয়নি, সেখানে আরেক ডেমোক্রেটিক প্রশাসনের (জো বাইডেন) অভিষেক ঘটেছে, যিনি ওবামার অনেক নীতি আদেশ বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে শর্ত পূরণের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে না পারলে জিএসপি ফিরে পাওয়ার ভবিষ্যত অন্ধকারেই থেকে যাবে।’
সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’
বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।
এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিএম হাউসে উভয়ের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ও কায়রোতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানান।
এদিকে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি পত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ পত্রে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় সে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভয়াবহ এ দুর্যোগে নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এ পত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কঠিন এ সময়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগণ তাদের অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে। প্রয়োজনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা ও করাচীর মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল দ্রুত পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা বিষয়ে উভয়দেশের শিক্ষার্থী বিনিময়ে বৃত্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, ধর্মবিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রী সরদার ইউসুফ খান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতা তারার, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ ও শরীফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক মুফতি জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠন করা হবে, যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়।’ এর পাশাপাশি পুলিশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘এই দুই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ কাজে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী যুক্ত থাকবেন।’
সভায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়েছেন যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যেন নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। শফিকুল আলম জানান, ‘কিছু মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরামর্শক বা অন্যভাবে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়েও সভায় আলোকপাত করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় ফুটবল দলকে দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে চার মাস করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ও গ্রাম সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কর্মকর্তাদের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হবে। পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নকালে প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের অগ্রগতিমূলক প্রত্যয়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রাখা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি যত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেগুলোর ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ধরন-মান ইত্যাদির মানদণ্ড নির্ধারণ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে র্যাংকিং করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করতে হবে। তারা সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পদ্ধতিগতভাবে, স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দর্শন জানতে হবে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের তথ্য সেখানে থাকবে।’
সভায় সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রশিক্ষণ হালনাগাদকৃত কারিক্যুলামে মাঠপর্যায়ে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও প্রেষণ অনুমোদন করা যাবে।
কর্মচারীদের সততা ও নৈতিকতা বিকাশ এবং দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে সদ্গুণ, নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান ও আচরণবিধি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি নির্বাহী কমিটি (ইসিএনটিসি) গঠন করা হয়।
জাতীয় লেখক ফোরাম আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে হওয়া এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠেনর সভাপতি ড. দেওয়ান আযাদ রহমান, মহাসচিব কবি-কথাসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আবদুল মান্নানসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকরা। অনুষ্ঠানটি একটি সাধারণ প্রাণবন্ত আড্ডার মধ্যেই শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ৩টি পর্বে সাজানো হয়েছে। প্রতি পর্বে চারজন কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কবি-কথা সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সরকার প্রদত্ত সুদমুক্ত ঋণ যথাসময়ে ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএ-এর সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কারখানার মালিকদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে সরকার বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইলস লিমিটেড, রোয়ার ফ্যাশন লিমিটেড, মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড এবং গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লিমিটেডকে অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় তহবিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ চুক্তির আওতায় উক্ত অর্থ পরিশোধ করছেন না।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। তাদের পাসপোর্ট জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকজন পলাতক মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি পলাতক মালিক ও প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, "এই ঋণের টাকা শ্রমিকের টাকা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এ টাকা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।"
তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানের জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হলেও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঋণের সকল টাকা পরিশোধ করতে বলেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-কে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলের নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ওই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।
বাংলাদেশে সফররত ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. মাহমুদ সিদকি আল-হাব্বাশের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল মঙ্গলবার এক বৈঠকে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। আজ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন জানান।
ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. আল-হাব্বাশ বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের স্থায়ী সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
ফিলিস্তিনিদের নিরন্তর সমর্থনের জন্য দেশটির প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের ওপরও জোর দেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে ড. আল-হাব্বাশ তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।
মন্তব্য