কমিশনের কিছু সিদ্ধান্তের ফলে পুঁজিবাজারে সুশাসন ফিরেছে বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলছেন, একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে হলে বিনিয়োগকারীদের শিক্ষিত হতে হবে।
দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্রোকার হাউজ ফের চালু করায় শেয়ারবাজার আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন তিনি।
বর্তমান বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেন ডিবিএ সভাপতি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন সুমন।
বর্তমান পুঁজিবাজার কতটা বিনিয়োগ উপযোগী বলে আপনি মনে করেন?
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমান সরকারও পুঁজিবাজারের প্রতি আন্তরিক। ফলে সুশাসন ফিরে এসেছে পুঁজিবাজারে।
দীর্ঘ সময় ধরে আস্থার ঘাটতি ছিল। এটি দূর করে বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করেছে বর্তমান কমিশন। বিনিয়াগকারীরা যখন দেখল, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকেরা শেয়ার ধারণ না করলে স্বপদে থাকতে পারবেন না এবং প্রতিষ্ঠানের বোর্ড ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিএসইসি, মূলত তখন থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে।
নতুন কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ডিএসইর মতামত গ্রহণ না করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে ডিএসইর মতামত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আগে ডিএসইর বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সঙ্গে কমিশনের অনেক বিষয়ে দ্বিমত ছিল। ডিএসই কোনো কোম্পানির বিভিন্ন অসঙ্গতি উল্লেখ করে তালিকাভুক্ত না করার পরামর্শ দিলেও তা আমলে নিত না বিএসইসি।
এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। সবগুলো কোম্পানি পুঁজিবাজারে ভালো করছে। ফলে বিএসইসি যে কোম্পানিগুলোকে বাছাই করছে সেগুলো অবশ্যই মৌলভিত্তিক বা ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি। এ বিষয়ে ডিএসইর সঙ্গে মতের পার্থক্য নেই।
আমরা চাই ডিএসইর মতামতের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা হোক। নতুন কমিশন আসার পর আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে না। বাজার চাঙা করতে এটি ইতিবাচক দিক।
দেশের যেকোনো স্থানে ব্রোকার হাউজের শাখা ফের চালুর সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য কতটা উপযোগী?
এটি ব্রোকার হাউজগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর প্রত্যন্ত এলাকায় ব্রোকার হাউজগুলোর শাখা খোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তখন অনেক বড় বড় ব্রোকার হাউজ দেশের বিভিন্ন স্থানে শাখা খুলে বসে ছিল। লাইসেন্স না পাওয়ায় সেসব ব্রোকার হাউজ কার্যক্রম চালাতে পারেনি। কিন্তু ব্যয়ভার বহন করতে হয়েছে। এখন আর সেই বাধা নেই।
শাখা সম্প্রসারণের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আসবে। তবে ব্রোকার হাউজগুলোকে বাছাই করতে হবে কোন ধরনের বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে আসবে। অনেক অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী আছেন যারা হাতের কাছে ব্রোকার হাউজ না পাওয়ায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন না। বিএসইসির এ সিদ্ধান্তের ফলে আশা করা যাচ্ছে, পুঁজিবাজার আরও সম্প্রসারণ হবে।
ব্রোকার হাউজগুলো কীভাবে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে পারে?
বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে প্রতি বছরই বিনিয়োগ সপ্তাহ পালন করা হয়। এতে বিএসইসি, ডিএসইসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
গুজব থেকে পুঁজিবাজারকে রক্ষা করতে হলে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে হবে। কারো কথায় কান না দিয়ে বরং নিজে কোম্পানি যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করতে হবে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হলে একটি কোম্পানির কমপক্ষে পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। বিনিয়োগকারীরা যদি কোম্পানিগুলো সম্পর্কে জেনেশুনে বিনিয়োগ করে তাহলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নির্দেশ আছে যেন বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হয়। আমরা সবাই জানি, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিনা মূল্যে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। করোনার সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারের জন্য দরকার সচেতন ও শিক্ষিত বিনিয়োগকারী।
করোনার সময়ে ব্রোকার হাউজগুলো কেমন চলছে?
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে পুঁজিবাজারে নিয়মিত ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা লেনদেন হতো। ফলে ব্রোকার হাউজগুলোর আয়ও কম ছিল। করোনার কারণে সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও সে সময় অফিস ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয়েছে। দেড় মাসের মতো বন্ধ ছিল পুঁজিবাজার। এতে আয় যেমন কম হয়েছে, তেমনি পুঁজিবাজার থেকে কমেছে সরকারের রাজস্ব। করোনা-পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো থাকায় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমান অবস্থায় পুঁজিবাজারের জন্য আলাদা প্রণোদনার প্রয়োজন আছে কী?
আছে। প্রণোদনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। বলা হলো, আমরা গুরুত্বপূর্ণ খাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নই। অথচ দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তির বড় একটি খাত হচ্ছে পুঁজিবাজার।
করোনার সময় সবকিছু বন্ধ থাকায় ব্রোকার হাউজগুলোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রতিটি ব্রোকার হাউজের আয়-ব্যয়ের হিসাব আছে।
অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ব্রোকার হাউজগুলোর নিয়মিত খরচ প্রণোদনা বাবদ দেয়া হোক। ছয় মাসের জন্য প্রণোদনা দেয়া হলে দুই বছরের মধ্যে সরকারকে ফেরত দেয়ার শর্তে এ সুবিধা চাওয়া হয়। আশা করছি সরকার তা বিবেচনা করবে।
মার্জিন ঋণ পুঁজিবাজার উন্নয়নে কতটা প্রয়োজন?
মার্জিন ঋণ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমি ব্যক্তিগতভাবে মার্জিন ঋণকে নিরুৎসাহিত করি। এই ঋণের সুদ হার বাড়ানো উচিত। আপনার কাছে টাকা আছে, সেই টাকা বিনিয়োগ করে শেয়ার কিনবেন। কিন্তু মার্জিন ঋণে জড়িয়ে পড়লে আপনার ক্রয়ক্ষমতার চেয়ে বেশি শেয়ার কিনতে পারবেন। এতে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
যদি শেয়ারের দাম কমে যায় তাহলে আপনি হাউজে আসা বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু যে হাউজ থেকে ঋণ নিয়েছেন তার টিকে থাকার জন্য ফোর্স সেল বা বিনিয়োগকারীকে না জানিয়ে শেয়ার বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করতে হয়। এতে প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। কোন কোন কোম্পানিতে মার্জিন ঋণ দেয়া উচিত তা ব্রোকার হাউজগুলোকে বাছাই করে দিতে হবে। ব্রোকার হাউজ থেকে ঋণ দিয়ে খারাপ কোম্পানির শেয়ার কেনার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
ফোর্স সেল নিয়ে ব্রোকার হাউজগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এটি বন্ধ করার উপায় কী?
ফোর্স সেল বন্ধ করতে হলে মার্জিন ঋণ পরিহার করতে হবে। ব্রোকার হাউজের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। পুঁজিবাজার যখন মন্দা থাকে তখনই ফোর্স সেল বেশি হয়।
এখন পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো। ফলে ফোর্স সেল খুবই কম। মার্জিন ঋণে যেসব হিসাব পরিচালনা হয়, সেগুলোতে ফোর্স সেল বেশি হয়।
বিও হিসাব খোলার সময় আবেদনকারীদের কাছ থেকে শেয়ার বিক্রির অনুমতি নেয়া হয়। মার্জিন ঋণে শেয়ার কেনার পর শেয়ারের দাম কমে গেলে ঋণের সুদ প্রদান করতেই হয়।
এখন যদি বিনিয়োগকারী সেই সুদ প্রদান না করে তাহলে শেয়ার বিক্রি করতেই হবে। শেয়ারের দর কমে গেছে। তাই বলে ব্রোকার হাউজে আসা বন্ধ করা চলবে না। বিনিয়োগকারীর সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করে শেয়ার বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করবে ব্রোকার হাউজগুলো।
আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের কতটুকু উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন?
চেষ্টা করেছি ডিবিএকে আরও আধুনিকায়ন করতে। কতটুকু পেরেছি তা সদস্যরা বলতে পারবেন। একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার তৈরি করতে হলে বিনিয়োগাকারীদের এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। সেটিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা অনেকগুলো ওয়েবিনার করেছি। বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে করোনার সময় অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি, বিনিয়োগকারীরা সচেতন হলে পুঁজিবাজারের আরও সম্প্রসারণ হবে।
আরও পড়ুন:সরকার আসন্ন জুলাই মাস উপলক্ষে নেওয়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে পূর্বে ঘোষিত প্রতীকী ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে ফারুকী এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করেন। বলেন, এই নির্দিষ্ট উদ্যোগটি নিয়ে শুরু থেকেই অভ্যন্তরীণ বিতর্ক ছিল।
তিনি লিখেছেন, ‘জুলাই স্মরণে অনুষ্ঠানের একটা কর্মসূচি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা পর্যায় থেকেই দ্বিধা ছিল। একটা মাত্র কর্মসূচিই আমরা কয়েকবার কেটেছি, আবার যুক্ত হয়েছে। আমরা অনেকেই একমত ছিলাম ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট’ গ্রেট আইডিয়া না সম্ভবত।’
তিনি আরও বলেন, পরে আবার নানা আলোচনায় এটা ঢুকে পড়ে কর্মসূচিতে। অনেক বড় কর্মসূচি এবং বড় একটা দল কাজ করলে এরকম দুয়েকটা ভুল চোখের আড়ালে থেকে যায়।
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ধারণার বিষয়ে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়ার জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন উপদেষ্টা।
জনগণ কর্মসূচি নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে, সেই কর্মসূচি নিয়ে আপনাদের মতামত জানানোর জন্য।’
তিনি আরও বলেন, আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমরা নিজেদের মধ্যে দ্রুত সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- এক মিনিট প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি থাকছে না। সংশোধিত স্লাইড শেয়ার করে হচ্ছে।
ফারুকী লিখেছেন, ‘অন্যান্য সমস্ত কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকবে। আসুন পুনরায় সংযোগ স্থাপন করি, পুনর্গঠন করি এবং জুলাইয়ের আসল চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করি।’
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে আটকে রেখে মারধর করে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মুল আসামি আলাউদ্দিন সহ আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিন ও শ্রমিক দল নেতা মো. ফরিদ উদ্দিন। তারা ওই মামলার এজাহার নামীয় ১ ও ২ নম্বর আসামি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) মধ্যরাতে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া থেকে আলাউদ্দিন এবং ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে, বুধবার (০২ জুলাই) দুপুরে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে মামলার ৫ নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করে র্যাব। এছাড়াও, ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগীর সতিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ নিয়ে এই মামলার ৭ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহব্বত খান জানান, রাতে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি আলাউদ্দিন ও ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, বুধবার (০২ জুলাই) বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ভোলার পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) বিকাল ৩ টায় জেলা পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এখন পর্যন্ত এই মামলায় এজহারনামীয় ৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৩০ জুন) রাতে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের মোল্লার পুকুর পাড় এলাকায় চাঁদার দাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে মারধর করে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্তরা স্থানীয় শ্রমিকদল, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে কর দাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে ৫ সদস্য ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাগণ নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এক্ষেত্রে, প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তাগণ ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিককে হয়রানি করেন বলে জানা যায়।
তিনি আরও বলেন, অনেক করদাতা আগাম কর দেন। আবার কেউ কেউ বেশি কর দেন। নিয়ম হচ্ছে এই কর হিসাব-নিকাশ করার পর বেশি দেওয়া হলে তা ওই করদাতাকে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, করের বাড়তি টাকা ফেরত পেতে আরো অন্তত অর্ধেক টাকা ঘুষ বা উপহারে খরচ হয়। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তারা করের টাকা ফেরত দিতে নিজেরাও কামিয়ে নিচ্ছেন মোটা টাকা।
অভিযুক্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকুরিকালীন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও ক্ষেত্র বিশেষে আয়কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে ও নিজে লাভবান হয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে দুর্নীত, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঢাকা পূর্বের কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনার কাজী মোহাম্মদ, বেনাপোল স্থল বন্দরের কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামান, রাজশাহী সার্কেল-৭-এর উপ কর কমিশনার মো: মামুন মিয়া, আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা ও ঢাকা কর অঞ্চল-২-এর কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তথ্যানুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে দেশের বিভিন্ন গুদামে চাল ও গমের মজুদ রয়েছে ১৭.৬৪ লাখ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় তিন লাখ টন বেশি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সরকারি মজুদ, সংগ্রহ ও বিতরণ পরিস্থিতি সম্পর্কে খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ১ জুলাই দেশে চাল ও গমের মোট মজুদ ছিল ১৪.৭৩ লাখ টন। এর মধ্যে চালের মজুদ ছিল ১০.৬০ লাখ টন এবং গমের মজুদ ছিল ৪.১৩ লাখ টন।
নতুন অর্থবছরের শুরুতে চালের মজুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫.৪১ লাখ টনে।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত ও আমদানিকৃত গমের মোট সংগ্রহের তুলনায় বিতরণ বেশি হওয়ায় গমের মজুদ কমে দাঁড়িয়েছে ২.২৩ লাখ মেট্রিক টনে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয় জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসামি পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় গ্রেফতার চার আসামি হাজির রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত প্রথম কোন শুনানি শুরু হওয়ায়, সে দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে, এই মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দেয়া হয়।
তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক আসামীরা হাজির না হওয়ায়, তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. কুতুবউদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো ইয়াকুব, শহীদ মো রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্বল্যমান এ সব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতি দেশকে আবার স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তিনি বলেন, সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসে, সে জন্য গণতান্ত্রিক ঐক্য দরকার।
এ সময়ে আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজন কী? এই ব্যবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে কোনো নেতা তৈরি হবে না, নেতৃত্বের বিকাশও হবে না। আমরা চিরায়ত গণতন্ত্রের পক্ষে, যেখানে বৈধ ভোটাররা ভোট দিয়ে নিজের এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে।’
‘একজন মানুষ দীর্ঘদিন মানুষের পাশে থেকে নেতা হয়েছেন, অথচ আনুপাতিক ভোটে তাকে নয়; দলকে ভোট দিতে হবে। এরপর দল থেকে বাছাই করে এমপি ঘোষণা করা হবে—এটি আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে প্রায় ১২ কোটি ভোটার রয়েছে, সেই ১৮ কোটি মানুষের দেশে কেন এমন ভোট পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে? যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, বছরের পর বছর কারাবরণ করেছে, সেই গণতন্ত্র আজ প্রশ্নবিদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে দেশের কোনো তরুণ শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। কখন কাকে ধরে নিয়ে যাবে, আর কার রক্তাক্ত লাশ তিস্তা, গঙ্গা কিংবা শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে পাওয়া যাবে—এটাই ছিল নিত্যদিনের চিত্র। এই ভয়াবহ সময় পার করতে হয়েছে আমাদের। শেখ হাসিনার দমন-পীড়নের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসতে পারে, তার জন্য গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য প্রয়োজন।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজির সঙ্গে বিএনপির কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের জড়ানো চলবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের আচরণে যেন সাধারণ মানুষ কষ্ট না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যেন বিএনপির কাছ থেকে ন্যায়বিচার পায়, সেই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ যদি এসব অপকর্মে জড়িত থাকে, দল সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে—এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।’
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও ‘বিজয়ের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির আয়োজন করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন রংপুর (ড্যাব)।
রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়ে জুলাই সনদ তৈরির লক্ষ্যে আজ দ্বিতীয় দফার নবম দিনের মত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল এগারোটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
এছাড়া, কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন-বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশ গ্রহণ করছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজকের আলোচনায় পূর্বের অমীমাংসিত বিষয়ে অধিকতর আলোচনা হওয়ার পাশাপাশি বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা- এই তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
আজ আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেওয়ার সময় কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, আমরা কি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে, অন্যদের কি পরিমাণ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকের এ পর্যায়ে এসেছি সেটা আমাদের প্রত্যেকেরই স্মরণ রাখতে হবে। হাজারো মানুষের আত্মত্যাগই যেন হয় আমাদের দিক নির্দেশক।
তিনি আরো বলেন, ৫৩ বছরে রাষ্ট্র গঠনের এমন সুযোগ আর আসেনি। অনেক অন্যায় অত্যাচার ও নিপীড়নের মধ্য দিয়ে এ সুযোগটা আমরা পেয়েছি, এ সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না।
এর আগে, গতকাল (বুধবার) কমিশনের অষ্টম বৈঠক শুরুর প্রথমে প্রারম্ভিক বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনা ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং এভাবে আলোচনা অগ্রসর হলে এ মাসের মাঝামাঝি বা ৩য় সপ্তাহের মধ্যেই জুলাই সনদ ঘোষণা করা সম্ভব হবে।
মন্তব্য