করোনা পরিস্থিতিতে নতুন করে প্রণোদনার পাশাপাশি আগের ঋণ পরিশোধে আরও সময় চায় শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
সংগঠনের সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, করোনার প্রথম ধাক্কা তারা কোনো রকমে কাটিয়ে উঠেছেন। তবে ইউরোপে দ্বিতীয় ধাক্কার পর এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সরকার সহায়তার হাত না বাড়ালে উত্তরণ কঠিন হবে।
শনিবার রাজধানীতে এক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে রুবানা এসব কথা বলেন।
‘করেনা পরিস্থিতিতে পোশাকের মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে কি গার্মেন্ট খাত পুনরুদ্ধার সম্ভব?’- এ বিষয়ে এই সংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ফর ডায়ালগ- সিপিডি।
সরকারের নীতি সহায়তা চেয়ে রুবানা বলেন, ‘আগে পোশাকখাতে যে ঋণ দেয়া হয়েছে, তার পরিশোধে গ্রেস পিরিয়ড সুবিধাসহ দুই বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছরে পরিশোধে মালিকদের দাবির প্রতি সরকার সহানূভূতিশীল হবেন। পাশাপাশি নতুন করে প্রণোদনার উদ্যোগ নেবেন।’
গত মার্চে করোনা মহামারি শুরুর পর পোশাক খাতের রপ্তানি থমকে দাড়ায়। শ্রমিকদের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন পরিশোধ করতে চার শতাংশ সুদে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয় পোশাক খাতে। জুলাই মাসে দেয়া হয় আরও প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এই ঋণ আসছে চলতি জানুয়ারি থেকে পরিশোধের কথা ছিল।
তবে ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার পর পোশাক রপ্তানিতে আবার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
রুবানা বলেন, ‘করোনার প্রথম ধাক্কায় রপ্তানি খারাপ অবস্থায় এসেছিল। সেটা মোটামুটি ওভারকাম করা গেছে। কিন্তু এখন আবার দ্বিতীয় ওয়েভে আবারও এর গতি শ্লথ হয়ে গেছে। দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। যা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।’
শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে রুবানা হক বলেন ‘নিশ্চয় আপনারা আমাদের গালি দেবেন। গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। অধিকার চাইবেন। কিন্তু এখন সেই সময়টি না। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই সংকট মোকাবেলা করি।’
ঐক্যের ডাক
সংলাপে পোশাকখাত পুনরুদ্ধারে ঐক্যের ডাক দেন, মালিক-সরকার ও শ্রমিক নেতারা।
তারা বলেন, এখন বিভেদের সময় নয়। দরকার সব পক্ষের ঐক্য। এই ঐক্যবদ্ধ চেষ্টাই পারবে বৈশ্বিক এই সংকটে পোশাক খাতকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে।
বক্তারা বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় পোশাক খাত আবারও সংকটে পড়েছে। এটা শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ নয়, বৈশ্বিকও। যা কারও একার পক্ষে মোকাবিলা সম্ভব নয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন ‘দ্বিতীয় ওয়েভের কারণে সরকার নিশ্চয় পোশাকখাতে আবারও সাহায্যের হাত বাড়াবে। আগে যে ঋণ দেয়া হয়েছে তার মেয়াদ আরও বাড়ানো দরকার। এ বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করবে।’
শ্রমিকদের সহানুভূতি দেখানোর অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘এই সংকটের মধ্যেও শ্রমিকদের প্রতি মালিকদের বিশেষ নজর রাখতে হবে, যাতে কোনো অবস্থায় শ্রমিকরা বিপদগ্রস্ত না হয়।
‘পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে হবে শ্রমিকদের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বায়াররা। তাই বায়ারদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে এই শ্রমিকদের কথা ভাবতে হবে।’
সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘করোনায় পোশাকখাতে সাপ্লাই চেইনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে। কমেছে দামও। শ্রমিকদের এতে সমস্যা হচ্ছে। এটা একটা চক্রাকার সমস্যা। যার সমাধান সম্মিলিত উদ্যোগেই সম্ভব। এটা যত দ্রুত হবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।’
সভাপতির বক্তব্যে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পোশাকখাত এখন বৈশ্বিক মূল্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে। কীভাবে এর চ্যালেঞ্জ উত্তরণের মধ্যদিয়ে খাতটি টেকসই করা যায়, সেটাই সবার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। নতুবা এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হবে।’
নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত এইআর হ্যারি ভারওয়েইজ বলেন, ‘করোনা সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বায়াররাও। অনেক চেইন শপ বন্ধ। চাহিদা এবং দাম দুটোই কমেছে। তবে পরিস্থিতি এরকম থাকবে না। নিশ্চয়ই সমস্যা একদিন আমরা কাটিয়ে ওঠব। তাই বায়ারদেরও শ্রমিক স্বার্থে দাম পুনঃমূল্যায়নে মনোযোগী হওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ওয়াকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘শ্রমিকরা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। মালিকদের উচিত শ্রমিকদের সুরক্ষায় নজর রাখা। এক্ষেত্রে মালিক, বায়ার এবং সরকারকে এই তিন পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে বায়ারদেরই দায়ভার বেশি বহন করতে হবে।’
শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার বলেন, ‘আমরা পোশাকখাতকে অবশ্যই বাঁচাব। তবে মালিকদেরও শ্রমিকদের কথা চিন্তা করতে হবে।’
মূল প্রবন্ধে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘২০০৭-০৮ সালে যখন বিশ্ব অর্থনেতিক মন্দা তৈরি হয়েছিল তখনও তৈরি পোশাকখাত এত বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েনি।
‘এর কারণ হচ্ছে দেশীয় উদ্যোক্তা এবং বৈশ্বিক ক্রেতা কেউ-ই এ সংকটের সঙ্গে পরিচিত নয়। ফলে পোশাকের সাপ্লাই চেইনে একটা বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দাম ও চাহিদা কমায় দেশে রপ্তানি কমে যাচ্ছে। ফলে পোশাকখাতে শ্রমিক ছাঁটাই, কারখানা লে অফ, ওভারটাইম হ্রাস, মজুরি কম সব কিছুই ঘটছে। এর পুনরুদ্ধার যদি দ্রুততর না হয় এবং সহজীকরণ না হয় তাহলে এসডিজির অর্জন ব্যাহত হতে পারে।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) প্রদত্ত প্লাটিনাম লিড সনদ পেয়েছে বাংলাদেশের আরও একটি কারখানা।
ভবন নকশা, নির্মাণ ও পরিচালনায় টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী সদস্যপদভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইউএসজিবিসির তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত পোশাক কারখানা কটন ফিল্ড বিডি লিমিটেড কারখানাটি ১১০ এর মধ্যে ৮৬ স্কোর করেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর তথ্য অনুসারে, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এখন ২৩০টি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) প্রত্যায়িত কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ৯২টি প্লাটিনাম স্ট্যাটাস এবং ১২৪টি গোল্ড স্ট্যাটাস অর্জন করেছে।
শুধু তাই নয়, বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সর্বোচ্চ রেটপ্রাপ্ত লিড সার্টিফায়েড কারখানার মধ্যে এখন বাংলাদেশেরই ৬২টি।
ব্যাংকিং খাতকে লক্ষ্যবস্তু করে সাইবার হামলা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় সব তফসিলি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পেমেন্ট সেবাদানকারীদের সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ সাইবার সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সের (বিসিএসআই) নিয়মিত তথ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের পর শুক্রবার এই সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কিছু ব্যাংক ডুয়াল-কারেন্সি কার্ডে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত অবৈধ লেনদেনের শিকার হয়েছে, যা দেশব্যাপী সাধারণ গ্রাহকদের প্রভাবিত করছে।
নির্দেশনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার অপরাধীদের ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপকে তুলে ধরেছে, যারা অনবরত জনসাধারণ এবং ব্যাংক গ্রাহকদের একইভাবে হয়রানি করছে।
সাইবার হামলার এই ঊর্ধ্বগতি শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী সাইবার হুমকি বৃদ্ধির প্রবণতাকে চিহ্নিত করে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে, যেখানে ম্যালওয়্যার আক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বার বার ঘটে থাকে।
এসব সাইবার হুমকি প্রতিরোধে তথ্য আদান-প্রদান, যাচাইকরণ বৃদ্ধি, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) ব্যবহার, টু-ফ্যাক্টর/মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, লগইন প্রচেষ্টার সংখ্যা সীমিত রাখাসহ বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকটি বর্ণিত ঝুঁকির বিষয়ে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পরিচালক (আইসিটি) তদারকি করবেন বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাজস্ব কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আদেশ (এসআরও) জারি করেছে।
এর আগে খাদ্য অধিদপ্তর দেশের সামগ্রিক চালের মজুদ নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) চালের দাম পরিস্থিতি নিয়ে খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরকে আরেকটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
দু’টি প্রতিবেদনেই চালের ওপর সব ধরনের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়তার জন্য গত ২০ অক্টোবর এনবিআর আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে।
সরকার নভেম্বর মাসে ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা মূল্য ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমিয়ে ১০৫ টাকা করেছে, তবে অকটেন ও পেট্রলের দাম আগের মতো যথাক্রমে ১২৫ ও ১২১ টাকা রাখা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘১ নভেম্বর থেকে খুচরা ক্রেতাদের আর্থিক সাশ্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এই মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।’
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্ববাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে ২০২৩ সালের মার্চে স্বয়ংক্রিয় জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালু করে।
শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘর্মেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ প্রথমবারের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) যাচ্ছেন। এমন খবরে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার।
দেশের দুই শেয়ারবাজারে বুধবার উল্লেখযোগ্য উত্থানের ধারাবাহিকতা দেখা গেছে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারও। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট ডিএসইর সূচক বৃদ্ধি শুরু হয়। সূচক বৃদ্ধির এই ধারা ১১ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ওই চারদিনে সূচকের উত্থান হয় ৭৮৬ পয়েন্ট। এরপর ১২ আগস্ট শুরু হয় ধারাবাহিক পতন।
টানা দরপতন আর লেনদেন খরার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মূল্যসূচক। সে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে এ বাজারটিতেও সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস দুই শেয়ারবাজারেই মূল্যসূচক বাড়লো।
গতকাল বুধবার থেকে বাজার বড় আকারে ঘুরে দাঁড়ায়। ওইদিন ডিএসইর সূচকে বেড়েছে ১১৮ পয়েন্টের বেশি। আর আজ বৃহস্পতিবার বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা শেয়ারবাজারের গুরুত্ব অনুধাবন করে নিজেই বিএসইসিতে যাচ্ছেন। যেখানে এর আগে কোনো মন্ত্রী বা উপদেষ্টা যাননি। শেয়ারবাজারের জন্য এটি একটি ভিন্ন বার্তা। শেয়ারবাজারের প্রতি অর্থ উপদেষ্টার এমন আগ্রহের কারণে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জানান, শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসব সহায়তার আওতাভুক্ত হবেন ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
রাশেদ মাকসুদ বলেন, অর্থ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নীতি সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার মধ্যে কিছু থাকবে স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য, আর কিছু বিষয় মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
যেসব নীতি পদক্ষেপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল জোগানে সহায়তা, জরিমানার মাধ্যমে বিএসইসির আদায় করা অর্থ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি ভালো ও লাভজনক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে আইপিও আইন সংস্কার ও কর প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।
পদক্ষেপগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- শেয়ারবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে এক দিনে নামিয়ে আনা, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমাণ অনাদায়ি পুঞ্জীভূত ঋণাত্মক ঋণ (নেগেটিভ ইক্যুইটি) রয়েছে চূড়ান্তভাবে সেগুলোর নিষ্পত্তি করা, উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে মূলধনি মুনাফার কর হার কমানো, শেয়ার পুনঃক্রয় ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস আরোপ না করা এবং সুশাসন ও আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব দীপাবলি (কালীপূজা) উপলক্ষে ভারতে সরকারি ছুটির কারণে বৃহস্পতিবার বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল কাস্টমস হাউস ও বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও নিয়মিত রয়েছে।
আগামীকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় শনিবার সকাল থেকে ফের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম যথারীতি চলবে এ বন্দরে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘দীপাবলি উপলক্ষে ভারতের পেট্রাপোলের ব্যবসায়ীরা সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। মূলত বুধবার বিকেল থেকেই ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
‘এ বিষয়ে তারা আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তবে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমসে স্বাভাবিক নিয়মে কার্যক্রম চলছে। শনিবার সকাল থেকে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি চালু হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ‘ভারতে দীপাবলি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি হবে না, তবে বন্দর ও কাস্টমসের সকল কার্যক্রম চালু রয়েছে।
‘ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা খালি ট্রাক ফেরত যাওয়ার জন্য চেকপোস্ট কার্গো শাখা খোলা। সেই সাথে দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক।’
আরও পড়ুন:ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা চাহিদামতো তুলতে না পারায় ন্যাশনাল ব্যাংকের সিলেট নগরের শিবগঞ্জ শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন গ্রাহকরা। এতে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে শাহপরাণ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের শিবগঞ্জ শাখায় তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। এর আগে সোমবার গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জে ন্যাশনাল ব্যাংকের আরেকটি শাখায় তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় তারা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভকারী গ্রাহকরা জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকের শিবগঞ্জ ব্রাঞ্চে বেশ কয়েকদিন থেকে নিজেদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে এসে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গ্রাহকরা বিভিন্ন অংকের চেক নিয়ে নগদ উত্তোলনের জন্য গেলে তাদের দেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। কারণ জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন অর্ধশতাধিক গ্রাহক।
ন্যাশনাল ব্যাংকের শিবগঞ্জ ব্রাঞ্চের সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার সাব্বির হানান বলেন, ‘গ্রাহকদের চাহিদামতো টাকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ নানা গুজবে গ্রাহকরা এখন শুধু টাকা তুলতে আসছেন। কেউ জমা দিচ্ছেন না।
‘গ্রাহকরা একসঙ্গে টাকা উত্তোলনের জন্য ভিড় করায় ব্যাংকের শাখাগুলোতে পর্যাপ্ত নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন জানান, বিক্ষোভের খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্রাহকদের বুঝিয়ে গেটের তালা খোলা হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডির সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি টাকা পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য