দেশে চালের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত চাল আছে। তবু বাড়ছে দাম। মজুতদাররা বাজারে না ছেড়ে চাল ধরে রাখছেন বলেই দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে বেসরকারিভাবে কার কাছে কত মজুত আছে, সেটা অজানা।
এদিকে, আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে সরকারের চালের বাফার মজুতও।
বাজার থেকে প্রায় দেড় কেজি মোটা চালের আগের দাম দিয়ে এখন এক কেজি কেনাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
দেশে চিকন চালের ৬০ ভাগ হয় মিনিকেট। মোটা চাল ৩০-৩৪ ভাগ। বাকিটা হয় অন্যান্য সরু চাল।
কৃষি শুমারি ২০০৮ অনুযায়ী, দেশে মোট পরিবার বা খানা সংখ্যা ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৩টি। এখানে ১ কোটি ৩৫ লাখ ১২ হাজার ৫৮০টি পরিবার কৃষিবহির্ভূত। আর কৃষিকাজে যুক্ত এমন পরিবার এক কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ১৮৩টি।
তবে কৃষিতে যুক্ত পরিবারগুলোর অন্তত ৪৫-৫০ লাখ পরিবার ধান চাষ করলেও পরিবারের চাহিদা মেটাতে কিংবা অন্য ফসলে বিনিয়োগের অর্থের যোগান পেতে জমি থেকে ফসল তোলার পরই তারা তা বাজার দামে বিক্রি করে দেয়। ফলে মৌসুম শেষে এসব পরিবারে মাস চলার মতো চাল থাকে না। তাদেরকেও বাজার থেকে চাল কিনেই খেতে হয়।
কারা এই মজুতের অদৃশ্য পকেট
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অদৃশ্য পকেটের তালিকায় রয়েছে ৩ হাজার ৫০০টি অটো রাইস মিল এবং ১৮ হাজার ৫০০ রাইস মিল, যারা দেশে ধান-চালের বড় ক্রেতা এবং সরবরাহকারী।
চালের মজুত রয়েছে অন্তত ১৭টি বড় করপোরেট কোম্পানির কাছেও, যারা গত কয়েক বছরে খাদ্যপণ্যের বাজারে প্রবেশ করেছে। তাদের অনেকে সরাসরি চালের ব্যবসার পাশাপাশি খাদ্যবহির্ভূত পণ্য তৈরি করছে, যার উপকরণ হিসেবে চালের প্রয়োজন হচ্ছে।
বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণা বলছে, প্রতিবছর দেশে উৎপাদিত চালের ২৪-২৬ শতাংশ এই বড় কোম্পানিগুলোর খাদ্যবহির্ভূত পণ্য তৈরির পেছনে চলে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম জানান, নিয়মিত আড়তদার, ফড়িয়া, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা, এমনকি বড় মাপের কৃষকও ধান-চাল মজুত করেন।
তিনি দাবি করেন, এক শ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ীও চাল মজুত করেছেন। এরা উৎপাদন মৌসুম এলেই লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ধান-চাল কিনে নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় মজুত রাখেন, আর বাজারে দাম বাড়লে চাল ছাড়েন। তবে মিলারদের কাছে চালের পর্যাপ্ত মজুত নেই। চাইলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা খতিয়ে দেখতে পারে।
সরকার কী করছে
চাল মজুতের এসব অদৃশ্য পকেটের খবর সরকারের নীতিনির্ধারকেরা ভালো করেই জানেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘সরকারের মজুত কমেছে এটা সত্যি। তবে বেসরকারি খাতে বিভিন্ন পকেটে চাল রয়েছে, সেই তথ্য সরকারের কাছে আছে।’
কার কাছে কত মজুত, তথ্য তিনি দিতে না পারলেও জানান, মজুতের পকেটগুলো মনিটর করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মজুত ও সংরক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী, চাল সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান ১৫ দিনে যে চাল উৎপাদন করবে, তার পাঁচ গুণ চাল তিন মাস পর্যন্ত মজুত রাখতে পারে। আগে এই নিয়ম বহাল থাকলেও এখন বাজার পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ বাড়াতে এই নীতিমালা সংশোধন করে সরকার তা এক মাসে নামিয়ে এনেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মজুতদাররা কেউ নীতিমালার সংশোধনী মানছেন না। এমনকি কারা কোথায় কতদিন বা কত মাস চাল ধরে রাখছেন, তার তথ্যও সরকার সুনির্দিষ্টভাবে জানে না।
তাছাড়া বেসরকারি খাতে হস্তক্ষেপে সরকারের আইনি সীমাবদ্ধতা আছে। দুর্বলতা আছে রাষ্ট্রীয় মজুত তলানিতে নামারও। কারণ বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের বড় অস্ত্র হচ্ছে বাফার মজুত। এসব কারণে সরকার মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারছে না। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এখন চাল আমদানিতে যেতে হচ্ছে।
পদক্ষেপে কার কোথায় কোথায় ঘাটতি
ধান-চাল উৎপাদনে সঠিক তথ্যের অভাব, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের মজুত কমে যাওয়া এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে ভোক্তারা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো যার যার দায়িত্ব ঠিক সময়ে সঠিকভাবে পালন করলে দেশে চাল সংকটের সুযোগ তৈরি হতো না।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ধান উৎপাদন নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলনে ভুল ছিল। খাদ্য মন্ত্রণালয় উৎপাদন খরচের চেয়ে ধান ও চালের দাম কম ধরায় সরকারের খাদ্য সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়। অথচ সে সময় খোলা বাজারে ধানের দাম ছিল বাড়তি। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল দিতে রাজি হয়নি মিলাররা। সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকেও কেনার উদ্যোগ নেয়নি।
এ পরিস্থিতিতে চাল সংকটের পূর্বাভাস পায় সরকার। চাহিদা মেটাতে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই চাল আমদানির সবুজ সংকেত দেয়া হয় খাদ্য মন্ত্রণালয়কে।
গত বছর ১৩ জুলাই আমদানির অনুমোদন মিললেও অক্টোবর পর্যন্ত কোনো আমদানির উদ্যোগ নেয়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়। আবার রাজস্ব কমে যাবে এমন আশঙ্কায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করোনা পরিস্থিতিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে ভোক্তা স্বার্থে শুল্ক কমানোর আগাম উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ক লিয়াজো পদক্ষেপে অনেক বিলম্ব ঘটে। আর চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে তদারকি দুর্বলতার অভিযোগ তো আছেই। আবার আমদানির নিবন্ধন নিয়েও আমদানিকারকদের চাল আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আজকে চাল সংকটের দায় নিতে হবে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে। তারা যদি ওই সময় থেকে আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করত, তাহলে সরকারের মজুত পরিস্থিতিও এতোটা খারাপ হতো না। বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতো না। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার থেকেও তখন কম দামে চাল আমদানি করা সম্ভব হতো। যার সুফল পেত ভোক্তারা।’
তবে এ অভিযোগের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক, আমরা আগেই আমদানির অনুমতি নিয়েছিলাম। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের কৃষকের স্বার্থও বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। তারা যাতে ধানের ভালো দাম পায়, সে দিকটিও সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। এর জন্যই চাল আমদানিতে এই দীর্ঘসূত্রতা।
‘তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের সর্বত্র যখন আমদানি-রফতানিতে একটা অচলাবস্থা চলেছে, সেখানে একটু সময় লাগতেই পারে। তবে আমরা বসে ছিলাম না।’
খাদ্য সচিব জানান, এরই মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে দেড় লাখ টন চাল দেশে আসবে। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতেও ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে আমদানির নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। সেই চাল আসা শুরু হয়েছে।
৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ৭৭ হাজার টন চালের এলসি খোলা হয়। আর নিস্পত্তি হয় ৬১ হাজার টনের। এখন নিয়মিত বিরতিতে চাল আসবে। এতে দামও তুলনামূলক কমে আসবে।
আমদানির নিবন্ধন নেয়া সত্ত্বেও চাল আনতে দীর্ঘসূত্রতার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বাবু বলেন, ‘৬২ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিয়ে দেশে সেই চাল কত দামে বিক্রি করব? যদিও শুল্ক কমানো হয়েছে, তবে সঠিক সময়ে তা করা হয়নি। আবার যেটুকু কমানো হয়েছে, তাতে বাজারে চালের দাম কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাখা কঠিন। এই শুল্ক হার ২০ শতাংশের নিচে নির্ধারণ হওয়া উচিত ছিল।’
আমদানির দীর্ঘসূত্রতার পেছনে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়কেই দোষারোপ করেন।
যে কারণে কমল সরকারের মজুত
গত বছর ১৪ অক্টোবর দেশে খাদ্যশস্যের মোট মজুতের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৯৫ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুত ছিল ৮ লাখ ৮৩ হাজার টন। তবে করোনা মহামারি ও কয়েক দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা দেয়ায় খাদ্যশস্য মজুত কমেছে।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার এ খাতে চাল বিতরণ করেছে ২ লাখ ৭৭ হাজার টন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অন্যান্য খাতেও চাল বিতরণ করায় মজুত নেমে এসেছে ৫ লাখ টনে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ২৬ এপ্রিল থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মজুত বাড়াতে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্য নিলেও কিনতে পেরেছিল ৬ লাখ ৮০ হাজার টন। একইভাবে দেড় লাখ টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্য নিয়ে কিনতে পারে ৯৯ হাজার টন। বোরো ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৮ লাখ টন। কিন্তু কিনতে পেরেছে মাত্র ২ লাখ ২০ হাজার টন, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
এই ধান চাল আকারে ধরা হলে অভিযান মৌসুমে সরকার মোট চাল সংগ্রহ করতে পারে ৮ লাখ ৩১ হাজার ৪৬১ টন। এর বাইরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট চাল আমদানি হয়েছে মাত্র ৪ হাজার টন। এসব মিলে চালের মজুত কিছুটা বাড়লেও তা গুদামে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। অর্থাৎ সরকারের মজুত বিভিন্ন উন্নয়ন সহায়তার কারণে প্রতিনিয়ত কমতে থাকে।
বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কেএ ম খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘এবার ধানের সরবরাহ প্রথম থেকেই কম ছিল। আগে প্রতিদিন ৫০ গাড়ি ধান কেনা হতো। এবার তা ১০ গাড়িও পাইনি। ফলে কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম ছিল বেশি। পণ্যের দাম বাড়া-কমা নির্ভর করে উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর। সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়ে। এখন সেটাই হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:বেশ কয়েকদিন পর গতকাল সকালে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকার শীর্ষ পাঁচ থেকে বের হয়েছিল পাকিস্তানের লাহোর। তবে এক দিন পরই বায়ুমানে ফের অবনতি হয়েছে শহরটির। অন্যদিকে, কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে ঢাকার বাতাসের।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টায় লাহোরের বাতাসের একিউআই সূচক ছিল ১৫৩, দূষণের এই মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত।
কণা দূষণের এই সূচক ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর ১৫১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে ৩০০-এর বেশি যেকোনো সূচক।
দীর্ঘদিন একিউআই স্কোর ১৫০ বা তার ওপরে থাকা লাহোরের বাতাসের মান গতকাল সকালে ১২৪-এ নামে। সেইসঙ্গে দূষিত শহরগুলোর তালিকার শীর্ষ পাঁচ থেকেও বের হতে সক্ষম হয় শহরটি। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই তা আবারও পুরনো জায়গায় ফিরে গেছে পাকিস্তানের এই শহর।
আজ বায়ুদূষণে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ শহর হয়েছে লাহোর। ১৫৬ একিউআই স্কোর নিয়ে তার ঠিক উপরে রয়েছে মিসরের কায়রো। আর ১৮৯ একিউআই স্কোর নিয়ে আজ সকালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাস বিরাজ করছে চিলির সান্তিয়াগোতে।
কেমন আছে ঢাকা
এদিকে, বর্ষার কারণে বেশ কয়েকদিন ধরে ঢাকার বায়ুমান ‘মাঝারি’ অবস্থায় রয়েছে। গতকালও তা-ই ছিল, তবে আজ বাতাসের মানে তার চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে ঢাকার।
আজ সকালে ৭১ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকার ৩১তম স্থানে অবস্থান করছে ঢাকা। গতকাল সকালে এই স্কোর ছিল ৭৯।
সাধারণত বায়ুদূষণের সূচক (এইকিআই) শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তারপর থেকে ১০০ পর্যন্ত একিউআই স্কোর ‘মাঝারি’।
এই সময়ে ভারতের রাজধানী দিল্লির বায়ুমানও ‘মাঝারি’ শ্রেণিতে ছিল, তবে গতকাল সকালের মতোই তা ঢাকার চেয়ে কিছুটা খারাপ। একই সময়ে দিল্লির বাতাসের সূচক ৮৯ এবং দূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় অবস্থান ছিল ২০তম।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
পাবনা সাঁথিয়ায় উপজেলায় ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে উপজেলার ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের পূর্ব বনগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে ২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন— পাবনার সুজানগর উপজেলার শান্তিপুর এলাকার মৃত হাসেম মোল্লার ছেলে আবেদ আলী (৩৭) এবং আতাইকুলা থানার এলাকার কারিগর পাড়ার ইরাদ আলী প্রামানিকের ছেলে মনসুর আলী (৪০)।
মাধপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বাসটি ঢাকা থেকে পাবনার দিকে যাচ্ছিল, বিপরীত দিক থেকে আসছিল পাথরবোঝাই ট্রাকটি। এরপর ঘটনাস্থলে এসে যানদুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের ৩ যাত্রী নিহত হন এবং আহত হন আরও অন্তত ১০ জন।
আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে ওসি বলেন, তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ভুয়া পাসপোর্ট ও কাগজপত্র তৈরি করে নারীদের বিদেশে পাচারের অভিযোগে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক স্বপন কুমার রায় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বিএমইটি'র উপপরিচালক (বহির্গমন) মো. সাজ্জাদ হোসেন সরকার, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন উল্লাহ আকন্দ, জনশক্তি জরিপ কর্মকর্তা মো. নিজামউদ্দিন পাটোয়ারি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আজাদ হোসেন, এইচ. এ. ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার, মো. আনোয়ার হোসেন, কে. এইচ. ওভারসিজের ম্যানেজিং পার্টনার মো. সালাউদ্দিন, মক্কা ওভারসিজের মালিক মো. জামাল হোসেন, ম্যানেজিং পার্টনারের তাসনিম ওভারসিজ মো. আনোয়ার হোসেন ভূঞা এবং এস. এম. ম্যানপাওয়ারের পার্টনার একরামুল হক।
এর আগে বৃহস্পতিবা কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও বিভিন্ন এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে দুদক।
দুদক সূত্র জানা যায়, বিভিন্ন এজেন্সি পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে গমনেচ্ছু নারীদের ‘প্রত্যাগত’ হিসেবে দেখানোর জন্য ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে। প্রকৃত আবেদনকারীর পরিবর্তে অন্য ব্যক্তির পাসপোর্ট নম্বর রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে আবেদন দাখিল করা হয়। এসব জাল পাসপোর্টকে আসল হিসেবে উপস্থাপন করে বিএমইটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের সংরক্ষিত ডাটাবেজ যাচাই না করে, এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগসাজশে, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশে ৯ জন জাল পাসপোর্টধারী নারীকে ছাড়পত্র প্রদানে অনুমোদনের জন্য নোট উপস্থাপন করেন।
সূত্র আরও জানায়, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে ২৫ বছরের কম বয়সি ৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীকে ছাড়পত্র প্রদানে অনুমোদনের জন্য নোট উপস্থাপন করা হয়। এই কার্যকলাপে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে জালিয়াতি ও নিয়মবহির্ভূতভাবে ছাড়পত্র গ্রহণে সহায়তা করা হয়।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল দুজনই জীবন ঘনিষ্ঠ কবি ছিলেন। জীবন ঘনিষ্ঠ বলেই তারা মানুষের কল্যাণ ও মনুষ্যত্বের বিকাশের কথা বলেছেন।
বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে দৈশিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল পাঠ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারে ছোটকাল থেকে বড় হয়েছি, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল দুজনেই সেখানে ছিল। প্রতিটি মানুষের জীবনে সুখ, দুঃখ, আনন্দ, উল্লাস, ভালোলাগা, ভালবাসা, সমস্যা থাকতে পারে। কারও জীবন সংগ্রামী কিংবা স্বাচ্ছন্দ্যের হতে পারে। সাহিত্য, কবিতা ও সঙ্গীত আমাদের জীবনের এ বিষয়গুলো লাঘব করতে সহায়তা করে।
তিনি বলেন, মধ্যযুগের কবি বলেছেন, ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য’ নজরুলের কণ্ঠেও শুনেছি, ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান’, রবীন্দ্রনাথ বঙ্গজননীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ‘মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে।’
সি আর আবরার বলেন, বর্তমানে আমরা দৈশিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখব, মানুষ হিসেবে আমাদের যে কর্তব্য তা পালনে আমরা উদাসীন, নিষ্ক্রিয় ও ব্যর্থ। একজনের প্রতি অন্যজনের মানবিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা আজ বিলুপ্ত প্রায়। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে অন্যকে নির্যাতিত ও নিপীড়িত করতে আমরা কুণ্ঠা বোধ করি না, দ্বিধান্বিত হই না। বিশ্বের চারিদিকে আজ রণ দামামা বেজে উঠেছে। ফলে লাঞ্ছিত হচ্ছে মানুষ, বিপন্ন হচ্ছে মানবতা। এই নৈরাজ্য ও অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধেই নজরুল রণ হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি সেই দিন হব শান্ত/যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না।’ রবীন্দ্রনাথ চরম বিপর্যয়ের মধ্যেও মানুষের কল্যাণ বোধের প্রতি আস্থা হারাতে চাননি; বলেছিলেন, ‘মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ।’
ড. আবরার বলেন, এই প্রসঙ্গে দার্শনিক উইল ডুরান্টের একটি কথা স্মরণ করি। জীবনের শেষ বয়সে তিনি বেশ কয়েক খণ্ডে লিখেছিলেন ‘দ্য স্টোরি অব সিভিলাইজেশন।’ এই বইটি লেখার পর তিনি মানুষের ইতিহাস সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি যখনই মানুষের ইতিহাসের দিকে তাকিয়েছি, তখন মনে হয়েছে, এ যেন রক্তবাহী এক নদী। মানুষ পরস্পরের প্রতি নিষ্ঠুরতায়, ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে যে রক্ত ঝরিয়েছে তাই বয়ে নিয়ে চলেছে এই ভয়াবহ নদীর স্রোত। তা দেখে আমি বেদনায় বিষণ্ণ হয়েছি। কিন্তু আমি যখন এই নদীর দুই তীরের দিকে তাকিয়েছি, তখন দেখলাম, সেখানে মানুষ কবিতার ছন্দে, গানের সুরে, সমুন্নত ভাস্কর্যে জীবনের জয়গাথা রচনা করে চলেছে।’
ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ বিষয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘(প্রত্যার্পণের জন্য দিল্লিকে) আমরা একটি চিঠি পাঠিয়েছি। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে আবারও উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
তবে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘অনুশোচনা’ আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘অনুশোচনা’ শব্দটিকে ‘লোডেড টার্ম’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘কে কতটুকু অনুতপ্ত, তা আমি জানি না। তবে আমরা বিষয়টিকে এভাবেই দেখছি যে, প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে আবারও উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে একটি কূটনৈতিক নোট পাঠায়, যেখানে প্রত্যার্পণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করা হয়। ভারত সরকার তখন তা গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে।
পানি বণ্টন ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি এবং আগামী বছর মেয়াদোত্তীর্ণ হতে চলা ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের মতো বিষয়গুলো দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে বলে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
‘এই বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য এবং আমরা সেই পথেই এগোচ্ছি,’ বলেন উপদেষ্টা।
সম্প্রতি ঢাকা, বেইজিং ও ইসলামাবাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠককে গণমাধ্যমে সার্কের বিকল্প জোট হিসেবে প্রচার করার বিষয়টিকেও নাকচ করে দেন মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই ব্যাখ্যা মোটেও সঠিক নয়। তিনি আরও যোগ করেন, ‘বৈঠকটি কখনোই সার্কের বিকল্প ছিল না। এটি ছিল সহযোগিতার কিছু ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনার জন্য একটি বৈঠক এবং এটি কোনোভাবেই কোনো জোট নয়।’
ফেনীর বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘ঘুরে দাঁড়াবে ফেনী’ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় শহরের এক রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে সফল সমাপ্তি টানা হয়। গত ১০ মাসে এ কর্মসূচির আওতায় গৃহনির্মাণ ও মেরামতে প্রায় ৬০ লাখ টাকার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যা বেসরকারি উদ্যোগে বেশ বড় কার্যক্রম। এরমধ্যে নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়েছে ২০ টি, মেরামত হয়েছে ২৫ টি ঘর। এরমধ্যে দুটি মাদ্রাসা ভবন রয়েছে। এছাড়াও ২৫টি পরিবারকে ২ বান্ডেল করে টিন ও নগদ ২০ হাজার করে দেয় হয়েছে নিজ নিজ ঘর মেরামতের জন্য। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এমন ১০ জনকে দেয়া হয় ক্ষুদ্র ব্যবসার পুঁজি। চিকিৎসা অনুদান দেয়া হয়েছে আরও ২০ জনকে।
এ উদ্যোগের অন্যতম সমন্বয়ক শরিফুল ইসলাম অপুর পরিচালনায় পুরো প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন সমন্বয়ক ও সংবাদকর্মী আসাদুজ্জামান দারা। এ সময়ে অর্থ সহায়তা প্রদানকারি ১৯ টি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
দীর্ঘ ১০ মাসব্যাপী জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে ঘুরে বেসরকারি উদ্যোগে এ বিশাল কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে বলে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা মতামত দেন। সাংবাদিকদের মধ্যে থেকে মতামত ব্যক্ত করেন শাহজালাল ভুইয়া, আরিফুর রহমান, সফিউল্লাহ রিপন, কপিল মাহমুদ, এম এ আকাশ। ঘর গ্রহণকারীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ছাগলনাইয়া লাংগল মোড়া গ্রামের জাহিদ হাসান।
ঘুরে দাঁড়াবে ফেনীর সমন্বয়কদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন নাসির উদ্দিন সাইমুম ও জালাল উদ্দিন বাবলু৷ এছাড়াও সমন্বয়কদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিবুল হক রাসেল, হারুন উর রশিদ, শান্তি চৌধুরী, মুহাম্মদ আবু তাহের ভুইয়া, ইমন উল হক, রিয়াজ উদ্দিন রবিন, কামরুল হাসান রানা, ওসমান গনি রাসেল ও মোহাইমিন তাজিম।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল সাতটায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির এই প্রবীণ সদস্যের বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
অ্যাডভোকেট মির্জা কছির উদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাস করে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে আমৃত্যু তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও দুই কন্যা রেখে গেছেন। তার তিন ছেলে-মেয়েই আইনপেশায় নিয়োজিত। বড় ছেলে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মির্জা শোয়েব মুহিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। সাতকানিয়ার প্রয়াত চিকিৎসক মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ মরহুমের বড় ভাই। দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখার তার ভাতিজা।
চট্টগ্রাম আদালত ভবনে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বেলা সাড়ে ১২টায়। এতে অংশ নেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম ও মহানগর দায়রা জজ মো. হাসানুল ইসলাম। আরও অংশ নেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরীসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা, জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জামায়াতে মহানগরের আমির নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
মরহুমের গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ার উপজেলার মাদার্শার দেওদীঘি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাকে রাষ্ট্রীয় মার্যাদায় পুলিশের একটি চৌকস দল ‘গার্ড অফ অনার’ প্রদান করে। এতে উপস্থিত ছিলেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস, সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারিস্তা করিম, সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ।
বিকালে তৃতীয় ও শেষ জানাজার পর মাদার্শা বুড়িপুকুর মসজিদের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
বিভিন্ন মহলের শোক
অ্যাডভোকেট মির্জা কছির উদ্দিনের মৃত্যুতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও শোক জানিয়েছে— সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি, সাতকানিয়া উপজেলা আইনজীবী সমিতি, সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ-চট্টগ্রাম, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সাংবাদিক ফোরাম, চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ, সাতকানিয়া ল’ইয়ার্স সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএসএম বজলুর রশিদ মিন্টু।
এছাড়া সাতকানিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে সুকান্ত বিকাশ ধর, দিদারুল আলম, জাহেদ হোসাইন, হারুনর রশিদ, ইকবাল মুন্না, তারেক হোসাইন, সাইফুল ইসলাম, মিনহাজ বাঙালি, মো.আরিফুল ইসলাম, মামুনুল হক, মোহাম্মদ হোছাইন, মাসুদুল করিম, টিআই খাইরু,লোহাগাড়ার তাজউদ্দীন, দেলোয়ার হোসেন রশিদীসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন গভীর শোক জানিয়েছে।
মন্তব্য