দেশে চালের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত চাল আছে। তবু বাড়ছে দাম। মজুতদাররা বাজারে না ছেড়ে চাল ধরে রাখছেন বলেই দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে বেসরকারিভাবে কার কাছে কত মজুত আছে, সেটা অজানা।
এদিকে, আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে সরকারের চালের বাফার মজুতও।
বাজার থেকে প্রায় দেড় কেজি মোটা চালের আগের দাম দিয়ে এখন এক কেজি কেনাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
দেশে চিকন চালের ৬০ ভাগ হয় মিনিকেট। মোটা চাল ৩০-৩৪ ভাগ। বাকিটা হয় অন্যান্য সরু চাল।
কৃষি শুমারি ২০০৮ অনুযায়ী, দেশে মোট পরিবার বা খানা সংখ্যা ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৩টি। এখানে ১ কোটি ৩৫ লাখ ১২ হাজার ৫৮০টি পরিবার কৃষিবহির্ভূত। আর কৃষিকাজে যুক্ত এমন পরিবার এক কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ১৮৩টি।
তবে কৃষিতে যুক্ত পরিবারগুলোর অন্তত ৪৫-৫০ লাখ পরিবার ধান চাষ করলেও পরিবারের চাহিদা মেটাতে কিংবা অন্য ফসলে বিনিয়োগের অর্থের যোগান পেতে জমি থেকে ফসল তোলার পরই তারা তা বাজার দামে বিক্রি করে দেয়। ফলে মৌসুম শেষে এসব পরিবারে মাস চলার মতো চাল থাকে না। তাদেরকেও বাজার থেকে চাল কিনেই খেতে হয়।
কারা এই মজুতের অদৃশ্য পকেট
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অদৃশ্য পকেটের তালিকায় রয়েছে ৩ হাজার ৫০০টি অটো রাইস মিল এবং ১৮ হাজার ৫০০ রাইস মিল, যারা দেশে ধান-চালের বড় ক্রেতা এবং সরবরাহকারী।
চালের মজুত রয়েছে অন্তত ১৭টি বড় করপোরেট কোম্পানির কাছেও, যারা গত কয়েক বছরে খাদ্যপণ্যের বাজারে প্রবেশ করেছে। তাদের অনেকে সরাসরি চালের ব্যবসার পাশাপাশি খাদ্যবহির্ভূত পণ্য তৈরি করছে, যার উপকরণ হিসেবে চালের প্রয়োজন হচ্ছে।
বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণা বলছে, প্রতিবছর দেশে উৎপাদিত চালের ২৪-২৬ শতাংশ এই বড় কোম্পানিগুলোর খাদ্যবহির্ভূত পণ্য তৈরির পেছনে চলে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম জানান, নিয়মিত আড়তদার, ফড়িয়া, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা, এমনকি বড় মাপের কৃষকও ধান-চাল মজুত করেন।
তিনি দাবি করেন, এক শ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ীও চাল মজুত করেছেন। এরা উৎপাদন মৌসুম এলেই লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ধান-চাল কিনে নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় মজুত রাখেন, আর বাজারে দাম বাড়লে চাল ছাড়েন। তবে মিলারদের কাছে চালের পর্যাপ্ত মজুত নেই। চাইলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা খতিয়ে দেখতে পারে।
সরকার কী করছে
চাল মজুতের এসব অদৃশ্য পকেটের খবর সরকারের নীতিনির্ধারকেরা ভালো করেই জানেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘সরকারের মজুত কমেছে এটা সত্যি। তবে বেসরকারি খাতে বিভিন্ন পকেটে চাল রয়েছে, সেই তথ্য সরকারের কাছে আছে।’
কার কাছে কত মজুত, তথ্য তিনি দিতে না পারলেও জানান, মজুতের পকেটগুলো মনিটর করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, মজুত ও সংরক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী, চাল সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান ১৫ দিনে যে চাল উৎপাদন করবে, তার পাঁচ গুণ চাল তিন মাস পর্যন্ত মজুত রাখতে পারে। আগে এই নিয়ম বহাল থাকলেও এখন বাজার পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ বাড়াতে এই নীতিমালা সংশোধন করে সরকার তা এক মাসে নামিয়ে এনেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মজুতদাররা কেউ নীতিমালার সংশোধনী মানছেন না। এমনকি কারা কোথায় কতদিন বা কত মাস চাল ধরে রাখছেন, তার তথ্যও সরকার সুনির্দিষ্টভাবে জানে না।
তাছাড়া বেসরকারি খাতে হস্তক্ষেপে সরকারের আইনি সীমাবদ্ধতা আছে। দুর্বলতা আছে রাষ্ট্রীয় মজুত তলানিতে নামারও। কারণ বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের বড় অস্ত্র হচ্ছে বাফার মজুত। এসব কারণে সরকার মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারছে না। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এখন চাল আমদানিতে যেতে হচ্ছে।
পদক্ষেপে কার কোথায় কোথায় ঘাটতি
ধান-চাল উৎপাদনে সঠিক তথ্যের অভাব, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের মজুত কমে যাওয়া এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে ভোক্তারা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো যার যার দায়িত্ব ঠিক সময়ে সঠিকভাবে পালন করলে দেশে চাল সংকটের সুযোগ তৈরি হতো না।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ধান উৎপাদন নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রাক্কলনে ভুল ছিল। খাদ্য মন্ত্রণালয় উৎপাদন খরচের চেয়ে ধান ও চালের দাম কম ধরায় সরকারের খাদ্য সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়। অথচ সে সময় খোলা বাজারে ধানের দাম ছিল বাড়তি। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল দিতে রাজি হয়নি মিলাররা। সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকেও কেনার উদ্যোগ নেয়নি।
এ পরিস্থিতিতে চাল সংকটের পূর্বাভাস পায় সরকার। চাহিদা মেটাতে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই চাল আমদানির সবুজ সংকেত দেয়া হয় খাদ্য মন্ত্রণালয়কে।
গত বছর ১৩ জুলাই আমদানির অনুমোদন মিললেও অক্টোবর পর্যন্ত কোনো আমদানির উদ্যোগ নেয়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়। আবার রাজস্ব কমে যাবে এমন আশঙ্কায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করোনা পরিস্থিতিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে ভোক্তা স্বার্থে শুল্ক কমানোর আগাম উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ক লিয়াজো পদক্ষেপে অনেক বিলম্ব ঘটে। আর চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে তদারকি দুর্বলতার অভিযোগ তো আছেই। আবার আমদানির নিবন্ধন নিয়েও আমদানিকারকদের চাল আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আজকে চাল সংকটের দায় নিতে হবে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে। তারা যদি ওই সময় থেকে আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করত, তাহলে সরকারের মজুত পরিস্থিতিও এতোটা খারাপ হতো না। বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতো না। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার থেকেও তখন কম দামে চাল আমদানি করা সম্ভব হতো। যার সুফল পেত ভোক্তারা।’
তবে এ অভিযোগের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক, আমরা আগেই আমদানির অনুমতি নিয়েছিলাম। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের কৃষকের স্বার্থও বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। তারা যাতে ধানের ভালো দাম পায়, সে দিকটিও সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। এর জন্যই চাল আমদানিতে এই দীর্ঘসূত্রতা।
‘তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের সর্বত্র যখন আমদানি-রফতানিতে একটা অচলাবস্থা চলেছে, সেখানে একটু সময় লাগতেই পারে। তবে আমরা বসে ছিলাম না।’
খাদ্য সচিব জানান, এরই মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে দেড় লাখ টন চাল দেশে আসবে। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতেও ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে আমদানির নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। সেই চাল আসা শুরু হয়েছে।
৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ৭৭ হাজার টন চালের এলসি খোলা হয়। আর নিস্পত্তি হয় ৬১ হাজার টনের। এখন নিয়মিত বিরতিতে চাল আসবে। এতে দামও তুলনামূলক কমে আসবে।
আমদানির নিবন্ধন নেয়া সত্ত্বেও চাল আনতে দীর্ঘসূত্রতার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বাবু বলেন, ‘৬২ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিয়ে দেশে সেই চাল কত দামে বিক্রি করব? যদিও শুল্ক কমানো হয়েছে, তবে সঠিক সময়ে তা করা হয়নি। আবার যেটুকু কমানো হয়েছে, তাতে বাজারে চালের দাম কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাখা কঠিন। এই শুল্ক হার ২০ শতাংশের নিচে নির্ধারণ হওয়া উচিত ছিল।’
আমদানির দীর্ঘসূত্রতার পেছনে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়কেই দোষারোপ করেন।
যে কারণে কমল সরকারের মজুত
গত বছর ১৪ অক্টোবর দেশে খাদ্যশস্যের মোট মজুতের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৯৫ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুত ছিল ৮ লাখ ৮৩ হাজার টন। তবে করোনা মহামারি ও কয়েক দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা দেয়ায় খাদ্যশস্য মজুত কমেছে।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার এ খাতে চাল বিতরণ করেছে ২ লাখ ৭৭ হাজার টন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অন্যান্য খাতেও চাল বিতরণ করায় মজুত নেমে এসেছে ৫ লাখ টনে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ২৬ এপ্রিল থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মজুত বাড়াতে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্য নিলেও কিনতে পেরেছিল ৬ লাখ ৮০ হাজার টন। একইভাবে দেড় লাখ টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্য নিয়ে কিনতে পারে ৯৯ হাজার টন। বোরো ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৮ লাখ টন। কিন্তু কিনতে পেরেছে মাত্র ২ লাখ ২০ হাজার টন, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
এই ধান চাল আকারে ধরা হলে অভিযান মৌসুমে সরকার মোট চাল সংগ্রহ করতে পারে ৮ লাখ ৩১ হাজার ৪৬১ টন। এর বাইরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট চাল আমদানি হয়েছে মাত্র ৪ হাজার টন। এসব মিলে চালের মজুত কিছুটা বাড়লেও তা গুদামে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। অর্থাৎ সরকারের মজুত বিভিন্ন উন্নয়ন সহায়তার কারণে প্রতিনিয়ত কমতে থাকে।
বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কেএ ম খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘এবার ধানের সরবরাহ প্রথম থেকেই কম ছিল। আগে প্রতিদিন ৫০ গাড়ি ধান কেনা হতো। এবার তা ১০ গাড়িও পাইনি। ফলে কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম ছিল বেশি। পণ্যের দাম বাড়া-কমা নির্ভর করে উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর। সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়ে। এখন সেটাই হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:দুর্গাপূজার আগে দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম বলেছেন, এ উৎসবে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা।
প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ উৎসব নিশ্চিত করতে আনসার ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিঘ্ন উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘সব পূজামণ্ডপে ধর্মীয় উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে এ উৎসব উদযাপন করা হবে।’
আইজিপি তিন স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘পূজা সামনে রেখে আমরা প্রতিটি জায়গায় টহল বাড়িয়েছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আনসার ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি জেলায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন রয়েছে এবং সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা তৎপর রয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় ও নৌ অঞ্চল মনিটরিং করছে কোস্টগার্ড ও বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট।’
আইজিপি বাধাবিপত্তির বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, বিশেষত সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া রোধে সাইবার নজরদারি বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, ‘এখানে বিশৃঙ্খলার কোনো জায়গা নেই। কেউ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ কর্মকর্তা আরও জানান, নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে, যাতে নাগরিকরা উৎসব চলাকালীন যেকোনো ঘটনা বা উদ্বেগের কথা জানাতে পারেন।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারে সাগরে গোসলে নেমে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সমুদ্র সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে সোমবার সকাল ৯টার দিকে নিখোঁজের ঘটনা ঘটে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. মাসুদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বেলা দেড়টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিখোঁজ মোহাম্মদ আসমাইন (১৩) কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার করিমুল হকের ছেলে। সে কক্সবাজার ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
নিখোঁজের স্বজনদের বরাতে মাসুদুল ইসলাম জানান, সকালে কক্সবাজার সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে মোহাম্মদ আসমাইনসহ ছয় বন্ধু সাগরে গোসলে নামে। একপর্যায়ে স্রোতের টানে তিনজন ভেসে যায়। ওই সময় সেখানে উপস্থিত অন্য বন্ধুদের চিৎকারে স্থানীয় লাইফগার্ড কর্মীরা তাদের উদ্ধারে নামেন।
লাইফগার্ড কর্মীরা দুজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও অপর একজন ভেসে যায়। পরে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার বলেন, নিখোঁজ স্কুলছাত্রের সন্ধানে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিচ কর্মী ও লাইফগার্ড কর্মীদের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা চালান। বেলা দেড়টার দিকে নিথর অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন:টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে সৃষ্ট বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ।
বৃষ্টি না হওয়ায় রোববার দুপুরের পর থেকে উন্নতির লক্ষণ স্পষ্ট হতে থাকে।
জেলার চারটি পাহাড়ি নদীর পানি আরও কমেছে। এসব নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, তবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও মৃগী নদীতে।
পানি বৃদ্ধি পেলেও এসব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এদিকে গত চার দিনে বন্যার পানিতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সোমবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর পানি ১৩৮ সেন্টিমিটার, চেল্লাখালী নদীর পানি ৭৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল।
কমেনি দুর্ভোগ
জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ। এখনও প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সংকট রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
জেলার অনেক দুর্গম এলাকায় এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি। আর বিশুদ্ধ পানির সংকট ও শৌচাগারের সমস্যা তো রয়েছেই।
ফসলহানি ও মাছের ঘেরের ক্ষতি
কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া এক হাজার হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলায় মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ছয় হাজারেরও বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে সব হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষক ও মৎস্যচাষিরা।
বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বন্যার কারণে অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলেজ বন্ধ রয়েছে।
জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৪১টি। এর মধ্যে বন্যার শিকার হয়েছে ৩০১টি। এর মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।
‘যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে, সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুলের ভেতরে পানি না উঠলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে।’
জেলায় মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরি, কলেজসহ ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।
শেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রেজওয়ান বলেন, ‘বন্যার জন্য আমাদের শেরপুর জেলায় প্রায় ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। আমরা প্রতিনিয়ত সেগুলোর তথ্য রাখছি। পানি কমে গেলে সেগুলো খুলে দেয়া হবে।’
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছি। আমাদের এ কাজে সেনাবাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন। সবাই মিলে আমরা এ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’
ডিসি জানান, এরই মধ্যে ১০ হাজারের মতো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বন্যাদুর্গত এলাকায়। আরও ২৫ হাজারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে যে পাঁচ হাজার পাওয়া গেছে, তা বিতরণ করা হবে।
আরও পড়ুন:খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় রোববার সন্ধ্যায় তাকে আটক করা হয়েছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত থেকে রোববার সন্ধ্যায় সাবেক এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে আটক করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। এর আগে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিছুদিন পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যু হলে তিনি ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
নেত্রকোণার মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়াকে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন নূরুল আলম কামাল মণ্ডল নামে এক কৃষক লীগ নেতা।
জানা গেছে, ওই কৃষক লীগ নেতা প্রতিবেশী খায়রুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসকের কাছে। পরে ওই অভিযোগের সূত্রে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়। এ নিয়ে এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়।
প্রতারণা করে তার নাম ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে খায়রুল ইসলাম চট্টগ্রাম থেকে সম্প্রতি এলাকায় এসেছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন যে তার নাম ব্যবহার করে কৃষক লীগ নেতা নূরুল আলম কামাল মণ্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় ওই কৃষক লীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেন খায়রুল ইসলাম।
রোববার সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।
খায়রুল ইসলাম নেত্রকোণার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মৃত সুলতু মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রামে পরিবারসহ বসবাস করেন এবং সেখানে দিনমজুরের কাজ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত নূরুল আলম কামাল মণ্ডল মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মাওলানা আব্দুল মন্নাফের ছেলে। তিনি মদন উপজেলা শাখা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
স্থানীয় লোকজন ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল থেকে রাজস্ব আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে গত ৪ সেপ্টেম্বর মদনের ইউএনওর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন গোবিন্দশ্রী গ্রামের খায়রুল ইসলাম। কিন্তু খায়রুল ইসলাম কয়েক বছর ধরে জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
খায়রুল ইসলাম নিরক্ষর। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার টিপসহি থাকলেও অভিযোগে খায়রুল ইসলামের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে খায়রুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করেন। খবর পেয়ে তিনি চট্টগ্রাম থেকে মদনে আসেন। পরে জানতে পারেন তার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কৃষক লীগ নেতা গোবিন্দশ্রী গ্রামের প্রতিবেশী নূরুল আলম কামাল মণ্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ দায়ের করেছেন।
প্রতারণা করে হয়রানি করার জন্য কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে ২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন খায়রুল ইসলাম।
খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। ছয় মাস আগে একবার বাড়িতে এসেছিলাম। এর পর আর বাড়ি আসা হয়নি। এখন আমার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ইউএনও স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি তো ইউএনও স্যারকে চিনি না। জীবনে কখনও তাকে দেখিনি। আমি জীবনে ডিসি স্যারের অফিসেও যাইনি।’
তিনি বলেন, ‘বাড়িতে এসে জানতে পারলাম প্রতিবেশী কৃষক লীগ নেতা কামাল মণ্ডল আমার নাম ব্যবহার করে ডিসি অফিসে অভিযোগ করেছেন। ওই ভুয়া অভিযোগপত্রে দেখলাম আমার স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ আমি নিরক্ষর মানুষ, ভোটার আইডিতেও টিপসহি দিয়েছি। তাই এই ঘটনায় জড়িত কামাল মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডিসি মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আমি চাই এমন প্রতারণা করার সাহস আর কেউ যেস না করে।’
গোবিন্দশ্রী গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কৃষক লীগ নেতা কামাল মণ্ডল দলীয় প্রভাবে এলাকার খাল ও খাস জমি দখল করে বিক্রি করেছেন। প্রভাব টিকিয়ে রাখতে কয়েক মাস আগে তিনি সাংবাদিক পরিচয়ে কার্ডও নিয়েছেন। খায়রুল ইসলামের মতো একজন নিরীহ মানুষের নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার আমরা প্রতিবাদ জানাই।’
অভিযুক্ত কৃষক লীগ নেতা কে এইচ এম নূরুল আলম কামাল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এটা কাদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।’
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘গত মাসে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার খবর শুনেছি। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে প্রশাসন অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে যথাযথ নেবে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ এ কাজ করে থাকলে তদন্তের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসুক। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে যেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।’
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘দুটি অভিযোগই পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:নওগাঁয় পৃথক ঘটনা-দুর্ঘটনায় চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়, একজন ছোট ভাইয়ের আঘাতে এবং একটি শিশু রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারায়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ধনজইল মোড়ে মোটরসাইকেলের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত চার্জারের ধাক্কায় মনিরুল ইসলাম ও সারাফাত হোসেন নামে দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
মহাদেবপুর থানার ওসি হাসমত আলী জানান, সারাফাত উপজেলার জয়পুর সরদারপাড়া গ্রামের মাহমুদুল হাসানের ছেলে ও ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের ছাত্র। আর মনিরুল ইসলাম উপজেলার গোঁফানগর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে ও শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজের ছাত্র।
সারাফাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।
অপর ঘটনায় ধামইরহাট উপজেলার রসুলবিল রাঙ্গামাটি গ্রামে বাবলু হোসেনের ছেলে মামুনুর রশীদ ও ছোট ভাই মাইনুর রহমান রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। এতে ছোট ভাই মাইনুর রহমানের আঘাতে বড় ভাই মামুনুর রশীদ গুরুত্র জখম হন। তাকে পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক মামুনুর রশীদকে মৃত ঘোষণা করেন।
ধামইরহাট থানার ওসি রাইসুল ইসলাম জানান, উপজেলার রসুলবিল রাঙ্গামাটি গ্রামে বাবলু হোসেনের ছেলে মামুনুর রশীদ ও ছোট ভাই মাইনুর রহমান রোববার মাগরিবের আজানের সময় জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়। এ সময় ছোট ভাই মাইনুর রহমানের আঘাতে বড় ভাই মামুনুর রশীদ গুরুতর জখম হন। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাইনুরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
অন্যদিকে বিকেল ৫টার দিকে বদলগাছীতে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় মরিয়ম আক্তার নামে ছয় বছর বয়সী এক শিশু প্রাণ হারায়।
বদলগাছী থানার ওসি শাহজাহান আলী জানান, মিঠাপুর পশ্চিমপাড়া দইভান্ডার মোড়ে সানোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় গোবরচাঁপা থেকে আক্কেলপুরগামী শসা বোঝাই একটি ট্রাক শিশু মরিয়মকে চাপা দিলে সে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে আক্কেলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে মারা যায়। উত্তেজিত জনতা ট্রাকচালক ফিদাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক গ্রামের আফসার হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।
আরও পড়ুন:স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আসন্ন দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রীশ্রী রমনা কালীমন্দির পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ইতোমধ্যে আট দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
তাছাড়া দুর্গাপূজায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পর্যাপ্ত সদস্যের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী মোতায়েন থাকবে। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তথ্য পেতে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এবার সব পূজামণ্ডপে পূজা উদযাপন কমিটির মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবকদের রাত ৩টার পর পূজামণ্ডপে পাওয়া যায় না। এবার কোনো স্বেচ্ছাসেবক কোনো পূজামণ্ডপ ছেড়ে যাবেন না। তারা ২৪ ঘন্টাই দায়িত্ব পালন করবেন। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবেন। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করতে সুবিধা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ অনেক কিছুই বলছে- সেটা আপনারা জানেন। আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা সত্যি ঘটনা মিডিয়ায় তুলে ধরবেন। আমরা সত্যি ঘটনা সবাইকে জানাতে চাই।’
হিন্দুদের নিয়ে বছরের পর বছর যে নীলনকশা ও ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেগুলো বন্ধ হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনারাই আমাদের সাহায্য করতে পারেন। আপনারা বিষয়টি জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারেন। অনুরোধ করবো, আপনারা সবসময় সত্যিটা প্রকাশ করবেন। যদি কোথাও আমাদের ঘাটতি থাকে, সেটা আমরা ঠিক বা পূরণ করে নেব। ভুল থাকলে সংশোধন করে নেব।’
বিগত ১৫ বছরে রামু ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও সহিংস ঘটনার বিচার হয়নি। সেসব ঘটনার পুনঃতদন্ত ও বিচার হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। বর্তমান সরকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।’
পরিদর্শনকালে শ্রীশ্রী রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম পূজা পরিচালনা পরিষদের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস ও সদস্য সচিব বিশ্বজিৎ ভদ্রসহ মন্দিরের পূজা পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য