মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তুরস্কের সম্পৃক্ততা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার গণভবনে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবুসোলুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার।
তিনি বলেন, সাক্ষাতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে তুরস্ককে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা। এদেরকে ফিরিয়ে নিতে একাধিক চুক্তি করেও কথা রাখেনি মিয়ানমার। এ নিয়ে একাধিকবার বিরক্তি প্রকাশ করেছে ঢাকা।
এর মধ্যে কক্সবাজার থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে প্রথমবারের মতো সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের পর রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। সে সময় মানবিক কারণে বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত খুলে দেয়।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তুরস্ক রোহিঙ্গাদের জন্য নানা সাহায্য সহযোগিতা পাঠিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের স্ত্রী কক্সবাজার ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে গেছেন।
বাংলাদেশ সফরে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবুসোলু কথা বলেন রোহিঙ্গাদেরকে নিয়েও। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে যে ‘আত্মত্যাগ’ করেছে তা তুরস্ক গভীরভাবে উপলব্ধি করে।
এক প্রশ্নে তুর্কি মন্ত্রী জানান, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এরদোয়ান সরকার খুবই আন্তরিক। এ বিষয়ে তুরস্ক বাংলাদেশের পাশে আছে।
এই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক ও নির্মাণ খাতে সহযোগিতার আগ্রহের কথাও জানান তুর্কি মন্ত্রী। তার দেশ বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি এবং যৌথ উদ্যোগে যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।
তুর্কি মন্ত্রী বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। নির্মাণ খাতে অংশগ্রহণ চায়। বাড়াতে চায় বাণিজ্য।
তুর্কি মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রীও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বিশাল আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ বাজার থাকার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এখানে বিনিয়োগ করলে দুই দেশই লাভবান হবে।
তুর্কি মন্ত্রী বলেন, তুরস্ক বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মূল্য দেয়। বাণিজ্যিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য যা কিছু করার তার দেশ সেটা করবে।
জ্বালানি থেকে পর্যটন, সব খাতেই তুরস্ক বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে বলেও জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
লেবাননের বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’ মেরামত করে দেয়ায় তুরস্ককে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ অথবা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানকে জানানো আমন্ত্রণের বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এরদোয়ানের মন্ত্রী জানান, করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে আগামী মার্চে তার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করতে পারেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, বাংলাদেশের অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসাও করেন তুর্কি মন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ প্রশংসা করার মতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশে তুর্কি রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দুই দিনের সফরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবুসোলু। বুধবার সকালে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগ করেন।
২০১২ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর এরদোয়ানের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তবে সম্প্রতি এরদোয়ান সরকারের নানা পদক্ষেপে দুই দেশ কাছাকাছি এসেছে। করোনা পরিস্থিতিতে তুরস্ক একাধিকবার বাংলাদেশকে চিকিৎসা সরঞ্জাম উপহার দিয়েছে।
সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে আঙ্কারা। বাংলাদেশে ফায়ার স্টেশন স্থাপন এবং অতি দরিদ্র মানুষকে ঘর করে দেয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে এরদোয়ান সরকার।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উত্তরা এলাকায় দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত (২৩), তার আত্মীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নাইমুল হক (৩২) এবং জাবেদ আলম খান (৫৫)।
উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, শনিবার (২৯ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে উত্তরা পূর্ব থানাধীন আজমপুর মোড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। এ সময় ময়মনসিংহ থেকে আসা পাথরবোঝাই একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন বলে জানান তিনি। ওসি বলেন, অপরজনকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই মারা যান।
তিনি আরও জানান, মরদেহগুলো শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।
নিহতরা কাছাকাছি একটি হাসপাতালে রোগী দেখতে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে এবং এর চালক রাকিবুল ইসলামকে (৪২) আটক করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
এবার ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আগামী ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে এই পদযাত্রা পালওন করা হবে।
রবিবার (২৯ জুন) সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আগামী ১ জুলাই থেকে আমরা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উদযাপন করবো। দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেছে। আমাদের অনেক প্রাপ্তি যেমন আছে, তেমনি অপ্রাপ্তিও রয়েছে। জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক ৩৬ দিন স্মরণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপির কর্মসূচি ও বাস্তবায়ন সেলের সম্পাদক অনিক রায়, যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি অনুমোদন ও গ্রহণ করে ২০১৮ সালের আপিল বিভাগের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে যে আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ, সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন সর্ব্বোচ আদালত।
রবিবার (২৯ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
এই আদেশের ফলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে হাইকোর্টে যে রিট শুনানি চলছে, তা নিষ্পত্তি করতে আর কোনো বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে, গত ২৬ জুন নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির বহুল আলোচিত গেজেট গ্রহণ করে ২০১৮ সালে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদনের রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।
আদালতে সেদিন রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
রিভিউ শুনানির পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, আজ শুনানিকালে বলেছি যে বিচার বিভাগকে ‘অ্যাসল্ট করে’ এই শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করা হয়েছিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে। কারণ, তার আগে নয়জন বিচারপতি এ বিষয়ে ভিন্ন আদেশ দিয়েছিলেন। এটি বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে তৎকালীন সরকার বাধ্য করেছিল নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের গেজেট-সংক্রান্ত আদেশ দিতে। এটি দ্রুত রিভিউ করা প্রয়োজন বলেই আদালতের অনুমতি নিয়ে রিভিউটি করা হয়।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
১২ দফা নির্দেশনার মধ্যে ছিল
১. সংবিধানের ১৫২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সব বিভাগের কাজ সার্ভিস অব রিপাবলিকের ভেতরে পড়বে। তবে বিচার বিভাগের কাজ ও অবকাঠামোর সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের সিভিল সার্ভিসের অনেক ভিন্নতা রয়েছে। বিচার বিভাগকে অন্যান্য সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে একত্রিত করা যাবে না।
২. বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা এবং নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারিক কাজ করতে পারবেন না।
৩. সিভিল সার্ভিস অর্ডার ১৯৮০ অনুযায়ী সব ম্যাজিস্ট্রেটকে পিএসসির অধীনে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়। একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি।
৪. এই রায় পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা এবং কমিশন গঠন করতে হবে।
৫. সংবিধানের ১১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়ারির সবার চাকরির বিধিমালা (নিয়োগ, পদায়ন, বদলি পদোন্নতি ও ছুটিসহ অন্যান্য) প্রণয়ন করবেন।
৬. রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা প্রণয়ন করবে।
৭. সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের থাকবে।
৮. বিচার বিভাগ জাতীয় সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকবে না এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব বিচারক স্বাধীনভাবে কাজ করবেন।
৯. জুডিশিয়ারির (নিম্ন আদালত) বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনো হাত থাকবে না। এই বাজেট সুপ্রিম কোর্ট প্রণয়ন এবং বরাদ্দ করবে।
১০. জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যরা প্রশাসনিক আদালতের আওতাভুক্ত থাকবেন।
১১. এই রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগ পৃথককরণের জন্য সংবিধানে কোনো সংশোধন করার প্রয়োজন নেই। তবে পৃথককরণ আরও অর্থবহ করতে যদি সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তবে তা করা যাবে।
১২. জুডিশিয়াল পে-কমিশন জুডিশিয়ারির সদস্যদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ না করবে, ততদিন পর্যন্ত বর্তমান অবকাঠামো অনুযায়ী তার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
২০০৫ সালে এই রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
রাজধানীর উত্তরায় ‘মব’ সৃষ্টি করে ‘হোটেল মিলিনা’ নামের একটি আবাসিক হোটেল দখলের চেষ্টা করা হয়। এমন অভিযোগে ৯ জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)।
রোববার র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শনিবার দুপুরে শফিক মোল্লা নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে হোটেল মিলিনিার মালিক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে পূর্বের ব্যবসায়িক সূত্র ধরে ‘মব’ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। সেসময় ১০টি মোটরসাইকেলে করে কমপক্ষে ২৪ জন জোরপূর্বক হোটেলটি দখল করতে যায়।
এ সময় দূর থেকে ওই ঘটনার কিছু ছবি ধারণ করেন র্যাব-১ এর এক গোয়েন্দা সদস্য। ছবি ধারণের সময় ‘মব’ সৃষ্টিকারীরা র্যাব সদস্যদের ঘেরাও করে এবং ছবি তুলতে বাধা দেয়। এ ঘটনার পর র্যাব-১ এবং উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া এবং ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে মোট ৯ জনকে আটক করা হয়। তারা হলেন, মো. সাজ্জাদ হোসেন (২৮), মো. শফিক মোল্লা (৩০), মো. আরিফুল ইসলাম (৩০), মো. তন্ময় হোসেন শাওন (২৭), মো. রবিউল ইসলাম (২৫), মো. আনোয়ার হোসেন আশিক (২৭), মো. সাইফুল ইসলাম সাগর (২৭), মো. জালাল খান (৩০) ও মো. আমির (২১)।
আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে শিয়ালের কামড়ে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শনিবার (২৮ জুন) ভোরে হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামের বেপারীসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের একটি নির্জন জঙ্গলে মাটির গর্তে ১৫ থেকে ২০টি শিয়ালের একটি বাসা রয়েছে। সেখান থেকে শনিবার ভোরের দিকে দুটি শিয়াল বেরিয়ে এসে পাশের কয়েকটি বাড়িতে ঢুকে কামড়াতে শুরু করে। এতে ১০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে দুজনকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গ্রামবাসীর ধারণা, শিয়াল দুটি ক্ষুধার্ত ছিল বলেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য কালাম বেপারী ও কবির হোসেন মোল্লা ইউএনবিকে জানান, ভোরে লোকজন ঘুম থেকে উঠে বাইরে আসার পর, রাস্তায় থাকা দুটি শিয়াল একত্র হয়ে যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই হঠাৎ করে কামড়ে দিয়েছে। অনেকে হাতে পাওয়া লাঠিসোটা দিয়ে প্রতিহত করে রক্ষা পান।
কালাম বেপারীর দেওয়া তথ্যমতে আহতদের মধ্যে আছেন— বেপারী বাড়ির মৃত গফুর বেপারীর ছেলে বারেক বেপারী (৬০), মহসিনের ছেলে রনি (২০), কালাম বেপারীর ছেলে জসিম বেপারী (৩০), মৃত শাহালমের ছেলে রেহান (২০), রাজ্জাক বেপারীর ছেলে হাছান বেপারী (১৫), পণ্ডিত বাড়ির মিজির ছেলে রুবেল (৪০), মৃত লতিফ বেপারীর ছেলে আবু তাহের (৪০), আবু মিয়ার ছেলে লতিফ, রুহুল আমিনের ছেলে রুবেলসহ আরও কয়েকজন।
আরেক ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, ‘শিয়ালের কামড়ে বারেক বেপারীর অবস্থা একটু বেশি খারাপ। বন্যপ্রাণী আইন রক্ষা করে কীভাবে শিয়াল প্রতিহত করা যায়, তা নিয়ে আমরা গ্রামবাসী মিলে চিন্তা করছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিয়াল ধরে বনে ছেড়ে দেওয়া আমাদের কাজ। কিন্তু জনবল না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্থানীয়রা শিয়াল ধরে দিলে আমরা বনে অবমুক্ত করে দেব।’
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে তিনজন মাদকসেবীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেন। অভিযানে তাকে সহযোগিতা করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল।
রবিবার (২৯ জুন) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান। তিনি জানান, মাদক সেবনের অপরাধে লস্করপুর এলাকার মাছাদ আহম্মদ (৩০), মাগুরা এলাকার জুলহাস (৩৫) ও জয়পাশা এলাকার শিমুল হোসেন আক্তারকে (৩৫) বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়। পরে মাছাদ ও জুলহাসকে তিনদিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড এবং শিমুলকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ফেনীতে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সিগন্যাল না মেনে অটোরিকশাটি রেললাইনে উঠে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (২৮ জুন) রাতে ফেনী শহরের গোডাউন কোয়ার্টার রেলগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের হাফেজুল ইসলাম (৪০) ও তার মা ফাতেমাতুজ্জোহরা (৬৩)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেনী রেলস্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছালে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা সিগন্যাল অমান্য করে রেললাইনে উঠে পড়ে। এ সময় ট্রেনটি এসে অটোরিকশাটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে সেটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে অটোরিকশায় থাকা দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা তাদের ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাফেজুল ইসলামকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢামেকে নেওয়ার পথে ফাতেমাতুজ্জোহরাও মারা যান বলে জানান তাদের আত্মীয় মাসুম বিল্লাহ।
প্রত্যক্ষদর্শী দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘অটোরিকশাটি হাসপাতাল থেকে ট্রাংক রোডের দিকে যাচ্ছিল। সিগন্যাল অমান্য করে রেললাইনে উঠলে ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়।’
তিনি আরও জানান, অটোরিকশায় চালকসহ পাঁচজন ছিলেন। দুর্ঘটনার মুহূর্তে তিনজন নেমে পড়ায় তারা রক্ষা পান।
ফেনী রেলস্টেশন মাস্টার মো. হারুন জানান, চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেনীর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগমুহূর্তে, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে দুর্ঘটনার পরও রেল চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।
এ বিষয়ে ফেনী রেলস্টেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বলেন, ‘নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় লাকসাম জিআরপি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলার প্রক্রিয়া চলছে।’
মন্তব্য