ঋণ জালিয়াতিতে জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি মনে করছেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের প্রণোদনা সুবিধা দেয়া ঠিক হবে না।
খেলাপি ঋণ সম্পর্কে তার অভিমত, এটি কমেছে, তবে তা কাগজে-কলমে। করোনার মধ্যে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হতে পারে বলে আশাবাদী তিনি।
করোনাকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্সসহ অর্থনীতির নানা ইস্যুতে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজেনেসের অধ্যাপক ড. সালেহউদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু কাওসার ও শেখ শাফায়াত হোসেন।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এ পর্যন্ত ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এসব প্যাকেজ বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জগুলো কী?
করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে একেবারে তছনছ করে দিয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আমরা অনেক পণ্য আমদানি-রফতানি করি। বৈদেশিক লেনদেন করি। দেশের অভ্যন্তরে শিল্প-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে আগে থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, অনিয়ম –দুর্নীতিসহ নানাবিধ সমস্যা ছিল, করোনার মধ্যে তা আরও প্রকট হয়েছে।
আমাদের সমস্যা অন্যদের তুলনায় একটু বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে সরকার। আমি মনে করি, প্যাকেজগুলো মোটামুটি বিস্তৃত। আমাদের যে পরিমাণ সম্পদ আছে সে তুলনায় এসব প্যাকেজ যথাযথ। সমস্যা হলো, প্যাকেজগুলো ব্যাংকনির্ভর। ফলে এই প্যাকেজ বাস্তবায়নই মূল চ্যালেঞ্জ।
প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নগদ জমার বাধ্যবাধকতা (সিআরআর) ও নীতি সুদহারে ছাড়সহ নানা ধরনের সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর নগদ অর্থ চলে এসেছে। ব্যাংকগুলো বলতে পারবে না যে, তারা টাকার অভাবে ঋণ দিতে পারছে না। চার-পাঁচ মাসের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণের গতি অত্যন্ত ধীর। ফলে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া রফতানি ও কৃষিখাত যথাযথভাবে অগ্রাধিকার পায়নি, ফলে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। অনেকে চাকরি হারিয়েছে, অনেকে অর্ধেক বেতনে কাজ করছে। রফতানি খাত কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও তৈরি পোশাক খাতের বৈচিত্র্যকরণ না হওয়ায় এ খাতেও কিছুটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধি আশাব্যাঞ্জক, কিন্তু তা ধরে রাখা কঠিন হবে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখনও সেভাবে আসেনি।
প্রণোদনা তহবিলের বেশি সুবিধা পাচ্ছেন বড় ব্যবসায়ীরা। ক্ষুদ্র উদ্যাক্তরা তুলনামূলক কম সুবিধা পাচ্ছেন। অথচ জিডিপির ২৫ শতাংশ অবদান রাখা এসএমই খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপনার বক্তব্য কী?
এটা দুঃখজনক ব্যাপার। কেবল জিডিপির প্রবৃদ্ধি দেখলে হবে না, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৮৫ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে আসে। এসব খাতে যথাযথভাবে প্রণোদনা না দিলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না। এখানে বড় ঘাটতি আছে।
বড় শিল্পের প্রণোদনার ঋণ বিতরণ ইতোমধ্যে শেষ। ব্যাংক কর্মকর্তারা বড় গ্রাহকদের প্রতি বেশি নমনীয়। এটা ঠিক নয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা গতানুগতিক কাজ করছেন। তাদের উচিত এখন যুদ্ধের ময়দানে যেভাবে সবাই কাজ করে, তেমনটা করা।
ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যারা কখনো ঋণ পায়নি, বেশি টাকা দরকার তাদেরই। অথচ, ব্যাংক বলছে, লেনদেনের রেকর্ড না থাকলে ঋণ পাবে না।
এই অজুহাত দেখালে হবে না। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিটি ব্যাংককে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ বিতরণে আলাদা করে নির্দেশ দিতে হবে।
এসএমই খাতের সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংককে আলাদা করে বসতে হবে। দলবল নিয়ে বসে কোনো কাজ হয় না। আমি গভর্নর ছিলাম। এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে। সেখানে সব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসলে তারা অনেক নীতি বাক্য বলে একসময় চলে যাবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রেক্ষাপটে বাড়তি প্রণোদনার দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
এ দাবি তারাই করছে, যারা প্রণোদনার সুবিধা পেয়েছে। যারা যত সুবিধা পান, তত বেশি সুবিধা চান।
কারা নতুন করে দাবি তুলেছে তা সবাই জানে। ছোট-মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের দাবি করতে পারছে না। তাদের কণ্ঠ অনেক ক্ষীণ।
আমি মনে করি, বড়দের জন্য প্যাকেজ সুবিধা চট করে বাড়ানো ঠিক হবে না। কারণ, এর জন্য সরকারের বাজেটের বিষয় রয়েছে। অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা আছে। যেটা করা দরকার তা হলো, বর্তমান প্যাকেজের আওতায়, ছোটদের জন্য দেয়া বরাদ্দ দ্রুত শেষ করা।
করোনার মধ্যে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও খলাপি বলা যাবে না। ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেকই সমালোচনা করে বলেছেন, খেলাপিদের আরও ছাড় দিয়েছে সরকার। আপনি কী মনে করেন?
কিছুদিন পর আবার দাবি উঠবে এই সুবিধাও আরও বাড়িয়ে দাও। যত বেশি সুবিধা দেবে সরকার, ততই চাইবে ঋণ খেলাপিরা।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, করোনার আগে যেসব ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি টাকা ফেরত দেয়নি, কিংবা পরিচালনার ভুলে যাদের ব্যবসা ডুবে গেছে- তারা যদি এখন প্রণোদনা নিয়ে ব্যবসা চালাতে চায় সেটা কঠিন হবে। এদের পেছনে টাকা ঢালা অপচয় হবে। যাদের ব্যবসা সম্ভাবনাময়, তাদেরকে সুবিধা দিলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
সুবিধার সময় আরও বাড়ানো উচিত বলে কি আপনি মনে করেন?
একটা সময়ের পর এ সুবিধা তুলে নিতে হবে। সুবিধার তো শেষ নেই। যত বেশি দেয়া হবে, প্রত্যাশা ততই বাড়বে। এ বিষয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানে আসতে হবে।
২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ১১ হাজার কোটি টাকা। সেটা এখন বেড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
একের পর এক ঋণ অবলোপন সুবিধা দিয়ে ব্যাংকগুলোর স্থিতিপত্র (ব্যালেন্স শিট) থেকে কু-ঋণ বাদ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে (প্রভিশনিং) বড় ধরনের ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বেশি মুনাফা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এভাবে কাগজে-কলমে খেলাপিঋণ কম দেখানো হচ্ছে।
এখন সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া দরকার ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার ওপর। তাছাড়া ঋণজালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে খেলাপি ঋণ বাড়তেই থাকবে।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন ব্যবসার স্বার্থে এ ছাড় দেয়া হয়েছে। আপনি কি মনে করেন সরকারের এ সিদ্ধান্তে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে?
কথাটা ঠিক নয়। যদি ধরে নেই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ছাড় দেয়া হয়েছে তাহলে এর প্রতিফলন কোথায়? কর্মসংস্থান কি বেড়েছে? মানুষের আয় কি বেড়েছে? ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা কি ঘুরে দাঁড়িয়েছে? এখনো তেমন কিছু আমরা দেখতে পাইনি।
করোনা মহামারির মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ অর্জনকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
রিজার্ভ বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে। রফতানির তুলনায় আমদানি এখন কম। এটা একটি বড় কারণ। নিট বৈদেশিক আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি অবদান রাখছেন প্রবাসীরা। আমি তাদের বলি ‘আনসাং হিরো’। তাদের অনেকেই হয়ত দেশে ফিরে আসবে বলে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।
রফতানি খাতে সরকারকে অনেক ধরনের প্রণোদনা দিতে হয়। সে তুলনায় রেমিট্যান্সে প্রণোদনা কম। তবে শিল্প খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কম বলে রিজার্ভ বাড়লেও তাতে লাভ নেই।
সার্বিক অর্থনীতিতে এই রিজার্ভের কোনো প্রতিফলন দেখছি না। হ্যাঁ, একটা ইতিবাচক দিক হচ্ছে রিজার্ভ বাড়ায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী হচ্ছে ।
ব্যাংকে অলস টাকা থাকার বিষয়টি যেমন, বাড়তি রিজার্ভও আমার কাছে তেমন মনে হয়। তার মানে আবার এই নয় যে, বাড়তি রিজার্ভ হঠাৎ করে অন্য কোথাও বিনিয়োগ কিংবা অবকাঠামো খাতে ব্যয় করতে হবে। সেটা আবার হিতে বিপরীতে হতে পারে।
ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে একটি কমিশন গঠনের দাবি বহু পুরানো। প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে সরকার। এ কমিশন করা কী উচিত?
অবশ্যই দরকার। কেন সরকার পিছিয়ে গেল বুঝলাম না। ব্যাংক খাতে নানা ধরনের সংস্কারের ফলে ২০০৯ সালের আগে এ খাতের ইতিবাচক অবদান ছিল।
গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতের আইনি কাঠামো কিছুটা পেছনে হেঁটেছে। আইন সংশোধন করে ব্যাংক পরিচালনায় একই পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণ ও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এটা মোটেই ঠিক হয়নি। এজন্যই কমিশন দরকার।
সরকার যদি কমিশন না করতে চায়, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে একটি টাস্কফোর্স করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ব্যাংক খাতের বিভিন্ন মানদণ্ড নির্ধারণ ও নীতি কাঠামো প্রণয়নের কাজ হতে পারে।
তবে হইচই করে বা ঢাকঢোল পিটিয়ে কোনো কিছু করার দরকার নেই। এখানে আলোচনা হবে খোলামেলা। কয়েকজন মিলে গোপনে বৈঠক করে পরে একটি প্রতিবেদন দিলে, তা আলোর মুখ দেখবে না।
আইএমএফের সাম্প্রতিক ওয়ার্ল্ড আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের শীর্ষ তিনে থাকবে বাংলাদেশ। মাথাপিছু জাতীয় আয় ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে...
গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভালো করছে। অন্য অনেক দেশের তুলনায় সত্যিই ভালো করছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রবৃদ্ধির এই সংখ্যাটি একটি সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই সংখ্যাটি মানুষের পুরোপুরি কল্যাণ বহন করে না।
মানুষের জীবন যাত্রার মান, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা, যাতায়াতের সুব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন-এসব সূচকের সঙ্গে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সামাঞ্জস্য নয়। প্রবৃদ্ধি বেশি হলেও মানুষের জীবন মানে যে উন্নতি হচ্ছে তেমনটি নয়। প্রবৃদ্ধির সুফল সবাই যাতে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
সামনে অর্থনীতির প্রধান চ্যলেঞ্জগুলো কী?
অর্থনীতি কিছুটা মন্থর হলেও গতিহীন হয়ে পড়েনি। এটা একটা ভালো দিক। তবে কয়েকটি খাত যেমন- কৃষি ও কর্মসংস্থানে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল শস্য নয়, প্রযুক্তিগত চাষাবাদ, উদ্যানতত্ত্ব এসব খাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। কেননা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা একটা বড় বিষয়। শুধু চালে স্বয়ংসম্পন্ন হলে চলবে না, অন্য খাতেও সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠানো এবং যারা দেশে ফিরে আসছে তাদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করতে হবে।
আইএমএফ সম্প্রতি বলেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতি ফের শ্লথ হয়ে গেছে। আপনি কী মনে করেন?
বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রথম থেকেই শ্লথ হয়ে পড়েছে। চীন ছাড়া সব দেশেরই অবস্থা একই। সেক্ষেত্রে আগের মতো জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮/৯ শতাংশ হবে না। তবে অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা ও কর্মসংস্থানে বেশি নজর দিতেই হবে।
দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির যে ধারা তার সঙ্গে পুঁজিবাজারের তেমন সামঞ্জস্য নেই, আপনার বক্তব্য কী?
এটা ঠিক যে, আমাদের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সেভাবে হয়নি। অন্যান্য দেশে দেখা যায়, সেখানকার অর্থনীতি বাড়তে থাকলে পুঁজিবাজার অর্থায়নের বড় কেন্দ্রে পরিণত হয়। আমাদের দেশে এটা উল্টো। এখানে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সবাই ব্যবসা করতে চায়, পরে খেলপি হয়। পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন ব্যাংক নির্ভর শিল্পখাত দেখা যায় না।
সময় এসেছে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের দিকে যাওয়ার। এখান থেকে অর্থ নিয়ে বড় শিল্প কারখানায় দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে, কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা সেদিকে যেতে পারছি না।
পুঁজিবাজারের সমস্যা আছে। এখানে তথ্য পাচার ও নানা ধরনের কারসাজি হয়। দুইবার বড় কেলেঙ্কারি হলেও কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের কোনো বিচার হয়নি।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারি দিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করা যাবে না। ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আরও আসতে হবে। বন্ড বাজার শক্তিশালী করতে হবে। বাজারে এখন সবই সরকারি বন্ড, করপোরেট খাতে বন্ড বাড়াতে হবে।
চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ ভিন্ন ভিন্ন পূর্বাভাস দিয়েছে। দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আপনার মতে এবার জিডিপি কত হতে পারে?
আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পূর্বাভাস নিয়ে আমি কখনোই সন্তুষ্ট নই। এসব সংস্থার হিসাবে বিস্তর ব্যবধান। তবে চলতি অর্থবছরে সরকার নির্ধারিত ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না। আমার ধারণা, এবার প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হতে পারে।
করোনার মধ্যে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে তা হবে অনেক ভালো। কারণ, পৃথিবীর অনেক দেশেরই এবার ২ থেকে ৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে না, সে দিক থেকে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (১৪ জুলাই) পুঁজিবাজারে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন কমেছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার (১৪ জুলাই) ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১১০৪ ও ১৯০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে ৫৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১০০ কোটি টাকা কম। আগের দিন ডিএসইতে ৬৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
সোমবার (১৪ জুলাই) ডিএসইতে ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৬টি কোম্পানির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, খান ব্রাদার্স, বিচ হ্যাচারি, বিএটিবিসি, সী পার্ল, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইসলামী ব্যাংক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রি, রহিমা ফুড ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই সোমবার (১৪ জুলাই) ২৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৯৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১০৮টির, কমেছে ৯৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি কোম্পানির শেয়ার দর।
সোমবার (১৪ জুলাই) সিএসইতে ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা কম। আগের দিন সিএসইতে ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ার ফলে মার্কিন ডলারের দাম টাকার তুলনায় গত এক সপ্তাহ ধরে কমছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই ডলার কেনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলারের দাম ১২১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে, যা বেশিরভাগ ব্যাংকের দেওয়া প্রায় ১২০ টাকা দামের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম স্থির রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনেছে।
তিনি বলেন, যদি ডলারের বিনিময় হার টাকার তুলনায় বেড়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক একইভাবে নিলামের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে।
তিনি আরও বলেন, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার যেন স্থির থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো সময় বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন ট্রেজারি কর্মকর্তা জানান, রোববার প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২০ টাকা। আজ তা বেড়ে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার অধিকাংশ ব্যাংক প্রতি ডলারের বিনিময় হার প্রায় ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। এক সপ্তাহ আগে এই হার ছিল ১২৩ টাকারও বেশি।
চীনের রপ্তানি ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে গত জুন মাসে, যা পূর্বাভাসের চেয়েও ভালো ফলাফল। এ সময় ওয়াশিংটন ও বেইজিং পরস্পরের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক কমাতে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছায়।
বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
চীনের শুল্ক প্রশাসনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুনে রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে ব্লুমবার্গের করা সমীক্ষায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া, একই মাসে চীনের আমদানিও ১.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটিও পূর্বাভাস দেওয়া ০.৩ শতাংশের চেয়ে ভালো।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ (১.০৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে আসে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১২ দিন) ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে মে মাসে দেশে এসেছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এ শুল্ক কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এই কথা জানান।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, সোমবার থেকে এ পর্যন্ত ট্রাম্পের এমন ধরনের ২০টিরও বেশি চিঠি গেছে বিশ্বের নানা দেশের নেতার কাছে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবেই এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটি বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ এই হুমকিতে আলোচনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
একইসঙ্গে কানাডা ও মেক্সিকো উভয়ই ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করছে, যাতে উত্তর আমেরিকার তিন দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (ইউএসএমসিএ) আবার সঠিক পথে ফিরে আসে।
২০২০ সালের জুলাইয়ে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পুরোনো (নাফটা) বাতিল করে ইউএসএমসিএ চালু করা হয়। ২০২৬ সালের জুলাইয়ে এর পরবর্তী পর্যালোচনা হওয়ার কথা। তবে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প নানা দেশে শুল্ক আরোপ করে পর্যালোচনার প্রক্রিয়াই অস্থির করে তুলেছেন।
শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায় কানাডা ও মেক্সিকোর বহু পণ্যের ওপর। কানাডার জ্বালানির ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়।
বাণিজ্যের পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচার ঠেকাতে যথেষ্ট উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগে প্রতিবেশী এ দুই দেশকে একাধিকবার সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প।
তবে পরবর্তীতে ইউএসএমসিএ চুক্তির আওতায় থাকা পণ্যের ক্ষেত্রে তিনি ছাড় দেন, যার ফলে বড় পরিসরের পণ্য শুল্কমুক্ত হয়।
বৃহস্পতিবারের চিঠিটি এমন এক সময় এলো, যখন ট্রাম্প ও কার্নির মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হচ্ছিল। এমনকি এর আগে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানো নিয়েও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
গত ৬ মে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হোয়াইট হাউসে এসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পরের মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনেও আবার দেখা হয় দুই নেতার। সম্মেলনে ট্রাম্পকে বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান বিশ্বনেতারা।
এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর কানাডা যে কর আরোপ করেছিল, তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে ট্রাম্প আলোচনার টেবিল ত্যাগ করলেও পরে আবার আলোচনা শুরুর পথ খুলে যায়।
অন্যদিকে, এনবিসি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, যেসব দেশকে এখনো এ ধরনের চিঠি পাঠানো হয়নি, তাদের ওপরও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের বিষয়টি বিবেচনায় আছে। সেটিও কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।
তিনি জানান, ব্রাজিলের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যদি এর আগেই কোনো সমঝোতা না হয়।
এনবিসি’কে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি দেশের উদ্দেশে চিঠি পাঠানো হবে ‘আজ বা আগামীকাল (শুক্রবার)’।
এদিকে, ট্রাম্পের হুমকির পর বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তবে দেশটি পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছে।
ট্রাম্পের পাঠানো চিঠিতে ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর প্রতি আচরণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সবজি ও ফলমূল রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্যমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিদেশে নতুন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ায় খুলনা থেকে পাট, পাটজাত পণ্য এবং চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে।
ইপিবি আরও জানায়, বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতির কারণেও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ৩৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরে একই সময়ে আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি টাকায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১৩ হাজার ১৯ দশমিক ৮০ টন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এছাড়া কুচিয়া, কাঁকড়া, সবজি, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে।
মাসভিত্তিক রপ্তানি আয়ের হিসাবে দেখা যায়, খুলনা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা জুলাইয়ে ৫১৭ কোটি ৬৮ লাখ, আগস্টে ৪৪৭ কোটি ৫৩ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৬০১ কোটি ৯৮ লাখ, অক্টোবরে ৫৬৬ কোটি ৯৬ লাখ, নভেম্বরে ৫২৩ কোটি ১৩ লাখ, ডিসেম্বরে ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ, জানুয়ারিতে ৪২৩ কোটি ৬৫ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৪০২ কোটি ৫২ লাখ, মার্চে ৪৩৮ কোটি ৯১ লাখ, এপ্রিলে ৫৫০ কোটি ৮৭ লাখ, মে মাসে ৬১১ কোটি ৬৯ লাখ এবং ২০২৫ সালের জুনে ৪২৯ কোটি ১১ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছেন।
খুলনা ইপিবির পরিচালক জিনাত আরা জানান, বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নতি, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ফিরে আসায় রপ্তানি বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সরকারি পাটকল ও চিংড়ি কারখানা বন্ধসহ নানা কারণে খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি কমে গিয়েছিল।’
পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সম্প্রতি খুলনা সফর করেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, খুলনা অঞ্চল পাট, চিংড়ি ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে তার আগের গৌরব ফিরে পাবে। সরকার বন্ধ থাকা পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে সেগুলো পুনরায় চালু করা যায়।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)’র সাবেক সহ-সভাপতি মো. আবদুল বাকী বাসসকে বলেন, ‘খুলনার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন দেশে অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশের কারণে চিংড়ি, পাট, পাটজাত পণ্য ও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, খুলনায় মোট ৬৩টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন ও বৈদেশিক চাহিদা কমে যাওয়ায় ৩৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে পাট ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ পাট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ)-এর সাবেক সহ-সভাপতি ও পাট ব্যবসায়ী শরীফ ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। খুলনায় এর বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে তিনি অভিযোগ করেছেন, পতিত সরকার দেশের পাট খাত ধ্বংস করে দিয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরীক্ষক এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যখন একটি দেশের ব্যবসা পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পান, তখন তারা সেই অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।’
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং সামিট’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংক এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শাসনে এফআরসি’র ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সৌলেমানে কুলিবালি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, দেশীয় ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা প্রতিবেদন স্বচ্ছভাবে এবং যথাযথ তথ্যসহ উপস্থাপন করা উচিত।
তিনি বলেন, একটি সুদৃঢ়, সহনশীল ও ভবিষ্যতমুখী আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব ব্যাংকে রিস্ক-বেসড সুপারভিশন (আরবিএস) চালু করা হবে।
মূল প্রবন্ধে এফআরসি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ যখন একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল একটি সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করছে যা আর্থিক প্রতিবেদন, নিরীক্ষা, মূল্যায়ন এবং সঠিক মানদণ্ডে সততা, শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।’
তিনি আরও বলেন, এফআরসি চায় সব পক্ষ যেন পূর্ণ প্রকাশসহ সত্য আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে, যাতে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকৃত ও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব—আয়কর ও ভ্যাট—সংগ্রহ করতে পারে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ভুয়া বা মিথ্যা আর্থিক প্রতিবেদনই কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর প্রধান হাতিয়ার।’
মন্তব্য