মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন সময়ে বাস্তব সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে পজিটিভ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
জানুয়ারি ১৬, ২০২০ তারিখে পুঁজিবাজারে যখন লেনদেন তলানিতে চলে যাচ্ছিল, বিনিয়োগকারীরা যখন হতাশায় ভুগছিল, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আইসিবি যখন বিনিয়োগে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছিল, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের পলিসি মেকারদের সাথে একটি সভা করেন। উক্ত সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছয়টি short-term ও long-term measures পুঁজিবাজারে প্রয়োগ করার নির্দেশ প্রদান করেন। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো
- পুঁজিবাজারে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বাড়িয়ে সক্ষমতা বাড়ানো;
- মার্চেন্ট ব্যাংক ও ইনস্টিটিউশনদের জন্য সহজ ক্রেডিট সুবিধা;
- রাষ্ট্র ও মালিকানাধীন আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানো;
- স্টক মার্কেটে কনফিডেন্স আনার পদক্ষেপ নেয়া;
- ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া এবং
- আইপিওর মাধ্যমে ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানি, বহুজাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা।
ইতিমধ্যেই প্রত্যেক ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং যা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে ডিভিডেন্ড দেয়ার ব্যাপারে যুগান্তকারী আইন পাস করেছে, অর্থাৎ কোম্পানির Retained Earnings থেকে একটি অংশ ডিভিডেন্ড অবশ্যই দিতে হবে এবং ডিভিডেন্ড হিসেবে ক্যাশ যা দেবে, তার ৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিতে পারবে।
গত ১০ বছর যদি আমরা দেখি প্রায় সকল কোম্পানি শুধু বোনাস শেয়ার দিতে উৎসাহিত ছিল। এতে করে স্পন্সর/ডিরেক্টর/প্রমোটাররা লাভবান হতো আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
কোভিড-১৯-এর কারণে বাজার যখন তলানিতে চলে যাচ্ছিল, তখন ১৯ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রত্যেক শেয়ারে একটি যৌক্তিক ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দিয়েছিল, যা ছিল একবারে ঐতিহাসিক। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীর শেয়ারের দাম একটি নির্দিষ্ট প্রাইসের নিচে ট্রেড হবে না।
অনেকে আমরা ফ্লোর প্রাইস নিয়ে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু আজ প্রমাণ হয়, ওইটা ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, যা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সর্বনিম্ন দামে শেয়ার বিক্রি থেকে রক্ষা করেছে।
কোভিড-১৯-এর কারণে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বর্তমান সরকার বাজেটে যে সুযোগ দিয়েছে, তা আরও ঐতিহাসিক এবং যুগান্তকারী। সুদের হার ছয়-নয় নির্ধারণ করা, কালো টাকা সাদা করার সহজ সুবিধা যা পুঁজিবাজারের তারল্যের জন্য অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছে, তাতে করে বাজারে টাকা ঢুকতে শুরু করেছে, যা পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করতে বড় ধরনের সহায়তা করছে।
বন্ড মার্কেটকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করার জন্য Up-Front এ ট্যাক্স কর্তনের প্রভিশনটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে লেনদেনের ওপর আরোপিত ট্যাক্স বিনিয়োগকারীর স্বার্থে বিলুপ্ত করা হয়েছে। জিরো কুপন বন্ডের আয়কে করমুক্ত করা হয়েছে। বন্ড মার্কেট নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু হয়েছে এবং খুব শিগগিরই এর সুফল দেশব্যাপী পেতে শুরু করবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রস্তাবিত টাকা ১০০০ কোটি মিউনিসিপ্যাল বন্ডের একটি বড় উদাহরণ।
বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং সরকার পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা/জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ব্যবস্থার সাথে জড়িত সকল লিস্টেড কোম্পানি, ব্রোকার, স্টক এক্সচেঞ্জ ডিলার, ইস্যুয়ার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অডিটর, অ্যাসেট ম্যানেজার, অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন কোম্পানিসহ সকলকে সঠিক আইন মেনে ব্যবসা করার স্বার্থে নির্দেশ প্রদান করেছে।
কোনো প্রকার অনিয়ম বা প্রতারণা করা চলবে না। যেমন: স্পন্সর/ডিরেক্টর/প্রমোটার সবাইকে (একক ও সম্মিলিতভাবে) ২% থেকে ৩০% শেয়ার ধারণ করতে হবে। পুঁজিবাজারের জন্য এটা খুব ভালো দিক যে, ইতিমধ্যেই ভালো মৌলভিত্তিক অনেক কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ২% থেকে ৩০% শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা পরিপালন করেছে।
আমি মনে করি যেসব কোম্পানি ২% থেকে ৩০% শেয়ার ধারণ প্রতিপালনের জন্য সময় চেয়েছে, তাদের তা প্রদান করা যেতে পারে। যারা এ বিষয়ে এখনও সম্পূর্ণ উদাসীন, তাদের পর্ষদ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা উচিত।
কোম্পানিগুলোতে ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর নিয়োগ দিতে হবে যারা নিজ স্বার্থের বাইরে শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা করবে। তারা স্পন্সর ডিরেক্টরদের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।
সরকার পুঁজিবাজারে সুশাসনে প্রচণ্ড গুরুত্বারোপ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার Z-Category কোম্পানির মানদণ্ড ঢেলে সাজানো হয়েছে। কোম্পানির যারা নিয়মিত এজিএম করে না, ডিভিডেন্ড দেয় না, পুঞ্জীভূত লোকসান পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে বেশি ইত্যাদি।
Z-Category Settlement Period change করা হয়েছে। স্পন্সর/ডিরেক্টর/প্রমোটারদের Block Module এ রাখা হয়েছে। Dutch-Action Method চালু করা হয়েছে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির ক্ষেত্রে। লক-ইন পিরিয়ড শুরু হয় প্রথম লেনদেনের তারিখের ওপর ভিত্তি করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজার নিয়ে ১০ বছর আগে তার দূরদর্শী বক্তব্যে বলেছিলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ আসবে পুঁজিবাজার থেকে। ব্যাংক শুধু দেবে স্টার্ট আপ/ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। এর জন্য ভালো ভালো সরকারি শেয়ার পর্যায়ক্রমে ক্যাপিটাল মার্কেটে ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। কিন্তু আমাদের যারা এটা বাস্তবায়ন করবেন, তারা সে সময় বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, মিনিস্ট্রি অব ফাইন্যান্স/ ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিনিস্ট্রি/ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জেসহ অন্যরা সে রকম কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি, যার ফলে ব্যাংক থেকে সব শিল্পপতি লোন নিতে পছন্দ করেন, কারণ সেখানে কোনো জবাবদিহিতা নাই।
এই কারণে বিগত ১০ বছরে ব্যাংক প্রদত্ত বিপুল পরিমাণ লোন, Non-Performing Loan-এ পরিণত হয়েছে, যা অর্থনীতিতে ঋণখেলাপির একটি কালচার তৈরি করেছে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিএসইসি গত ১০ বছরে অনেক আইন সংশোধন করেছে, রুলস তৈরি করেছে, আবার নিজেদের মতো আইন/রুলস বানিয়েছে যা পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো এক্সচেঞ্জে প্রযোজ্য নয়। পুঁজিবাজার চলবে কঠোর নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে। সুবিধামতো বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। ইনডেক্সকে নিয়ন্ত্রণ করাও ছিল একটি মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। বাজার চলবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহের মাধ্যমে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে এই বাজারকে ভালো করার সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এর প্রয়োগও শুরু হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা কখন কোন শেয়ার কিনবে, কেন কিনবেন, কোন দামে কিনবেন, এসব তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিন্তু তারা চায় Circular Trade, Insider trade ও মার্কেট ম্যানিপুলেশন যাতে বন্ধ হয়, বিভিন্ন লিস্টেড সিকিউরিটিজের Earnings Per Share, Price Earnings Ratio, Net Asset Value, Companies Growth, Reserve, Business Expansion এর তথ্য যেন ঠিক থাকে।
সরকারের পলিসি হচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ পার্টিসিপেশন বাড়ানো। সেই জন্য ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ডিপোজিটের সুদের হার কম হওয়ায় বাজার যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে থাকে তাহলে অবশ্যই পুঁজিবাজার হবে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার টাকার প্রধান উৎস এবং ব্যাংক থেকে টাকা নেয়ার চাপও কমে যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিভিডেন্ড পলিসির কারণে সকলে এর সুফল পেতে শুরু করেছে। প্রতিটি ভালো লিস্টেড কোম্পানি ভালো ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়া শুরু করছে এবং এই বছরে কোভিড-১৯ সত্ত্বেও আমরা দেখতে পাচ্ছি বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ভালো মুনাফা করেছে। তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ৯ মাসের মুনাফা এর ভালো উদাহরণ।
আমার বক্তব্য হলো এখন আমরা যারা পুঁজিবাজারের সাথে জড়িত, যেমন: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ ব্যাংক, মিনিস্ট্রি অব ফাইন্যান্স, লিস্টেড কোম্পানি, ট্রেক হোল্ডার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সবাই যার যে দায়িত্ব আছে, তা যদি সঠিকভাবে পালন করি, তাহলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অনেক দূর যাবে এবং অর্থনীতিতে ভালো অবদান রাখবে।
আমরা যেন ইমোশন দিয়ে না চলি, আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন মেনে চলি, বাজারে যার যার অবস্থান থেকে সঠিক কাজগুলো করি। এখানে ব্যর্থতার সুযোগ নাই।
যার যার দায়িত্বের জবাব তাকেই দিতে হবে। তিনি যদি নেতৃত্বে থাকেন তাহলে ইমোশন থেকে বের হয়ে কাজ করতে হবে।
বন্ড মার্কেট, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এসএমই মার্কেট, এটিবি বোর্ডকে effective করতে হবে। নতুন নতুন প্রোডাক্ট যেমন Sukuk, ETF চালু করতে হবে। আমরা যেন একক সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ না করি, যে যেখানে দায়িত্বে আছি, নিয়ম মেনে কাজটা করি। কারও ব্যর্থতার দায় কেউ নেবে না। আমাদের সেটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। দিনের শেষে সবাইকে তার কাজের জবাবদিহিতা করতে হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সে যত প্রভাবশালী হোক।
আসুন আমরা যার যার অবস্থান থেকে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করি, সবাই মিলে বিনিয়োগকারীদের সঞ্চিত টাকার একটি অংশ পুঁজিবাজারে আনার পথ করে দেই, যাতে করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে; অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় এবং সর্বোপরি দেশ অনেক এগিয়ে যায়। অন্তত আগামী ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ইনশাআল্লাহ বাজার মূলধন জিডিপি অনুপাত বর্তমান ১৪ শতাংশ থেকে অন্তত ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়।
লেখক: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য