করোনা পরিস্থিতিতে কেমন আছে দেশের অর্থনীতি, বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ দেশের সামনে- এসব নিয়ে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা–পিআরআই ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন করোনাকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ২০২২ সালের মধ্যে আগের চেহারায় ফিরবে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, খেলাপিঋণ, ব্যাংক খাত, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু কাওসার।
করোনার সময়ে দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারলেও আগের অবস্থায় এখনও ফেরেনি। এত দ্রুত সম্ভব নয়। কারণ, করোনা সংক্রমণ দেশে ও বহির্বিশ্বে ফের বাড়ছে। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা গেছে। করোনা স্থায়ী হলে এর প্রভাব আরও বেশি সময় চলবে। আমি মনে করি, ২০২২ সালের প্রথম দিকে দেশের অর্থনীতি আগের চেহারায় ফিরবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতি ফের শ্লথ হয়ে গেছে। আপনি কী মনে করেন?
বিশ্বব্যাপী যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। দুইভাবে দেশকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রভাবিত করবে, প্রথমত: আমাদের প্রধান রফতানি বাজার ইউরোপ এবং আমেরিকায় ফের লকডাউন শুরু হয়েছে। ফলে মানুষের মনে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
করোনার ব্যাপকতা ওই সব দেশে বেড়ে গেছে। মৃত্যু হারও বাড়ছে। ফলে বহির্বিশ্ব থেকে দেশের রফতানি খাতে আরেকটা ধাক্কা আসবে। দ্বিতীয়ত: দেশের অভ্যন্তরেও করোনার বিস্তার বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে একটা ধাক্কা দিচ্ছে।
লকডাউন না থাকায় প্রভাব কম হচ্ছে। আগে একটা ধারণা ছিল, আগামী মার্চ থেকে জুনের মধ্যে করোনার প্রভাব থেকে বের হতে পারব, কিন্তু তা থেকে পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউ না এলে হয়তে কিছু ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হতো পারত। এখন দেখা যাচ্ছে, করোনার পুরোপুরি প্রভাব থেকে বের হয়ে আসা ২০২২ সালের আগে সম্ভব নয়।
ভ্যাকসিন বিতরণে এখনও কার্যকর পরিকল্পনা দেখছি না। ভ্যাকসিন আসার পর ফ্রেব্রুয়ারি–মার্চের দিকে বিতরণ শুরু হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এটা চলবে এক থেকে দেড় বছর। সে ক্ষেত্র আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমেরিকা হয়ত ছয় মাসের মধ্যে তাদের ভ্যাকসিন বিতরণ কার্যক্রম শেষ করে ফেলবে। আমরা সেটা পারব না। আমাদের সময় লাগবে।
দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের বাড়তি প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরও প্রণোদনা দেয়ার দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
ছোট পরিসরে আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ নেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে রফতানি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের জন্য। জিডিপির বিবেচনায় কৃষির পরেই এসএমই হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় খাত। কাজেই, এ খাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ জন্য বাড়াতে হবে ঋণ।
অভিযোগ উঠেছে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বড় ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। ক্ষুদ্র উদ্যেক্তারা তেমন পচ্ছেন না। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নেয়া ঋণের প্রায় পুরোটাই ব্যবহার করেছে। এ খাতে ব্যবহার খুব দ্রুত হয়েছে এবং ফলও পাওয়া গেছে। এর ফলে রফতানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজ ভালোভাবে কাজ করায় ইতিবাচক ফল এসেছে।
বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া সহজ। তাদের ঋণের পরিমাণ গড়ে ১০ থেকে ২০ কোটি টাকার বেশি। বড় ঋণ অনুমোদন দেয়া ব্যাংকের জন্য সহজ। সমস্যা হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসএমই প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে। ঋণ বিতরণে কিছু ব্যাংক এগিয়ে থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান তা পারছে না।
ওইসব ব্যাংকের হয়ত এসএমই কার্যক্রম সেভাবে নেই। সব ব্যাংকই এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে পারবে তা ভাবা ঠিক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংককে বলব, যারা সফলভাবে পারছে, তাদের মাধ্যমে আরও বেশি ঋণ দেয়া হোক। তা হলে এসএমইতে ঋণের প্রবাহ বাড়বে।
করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ অর্জনকে কীভাবে দেখছেন?
দুর্বল অর্থনীতিতে রিজার্ভ বাড়ে। এটা অনেক দেশেই পরীক্ষিত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনার কারণে জিডিপি ১০ শতাংশ কমে গেছে।
ফলে তাদের রিজার্ভ দ্রুত বাড়ছে। কারণ হচ্ছে, যখন একটা দেশের অর্থনীতি দুবর্ল হয় তখন তাদের আমদানিও কম থাকে। আমদানি ব্যয় কম হলে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা লেনদেনের ভারসাম্য শক্তিশালী হয়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। করোনাকালে কমে গেছে আমদানি। একইসঙ্গে আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ শক্তিশালী হওয়ায় বর্তমানে লেনদেনের ভারসাম্য একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে। এসব কারণে বেড়েছে রিজার্ভ। রিজার্ভ বৃদ্ধি সামগ্রিক অর্থনীতির দুর্বলতারই লক্ষণ। এটা শক্তিশালী অর্থনীতির কারণ হয় না।
যদি আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি, আমদানি ও রফতানি আরও ভালো হতো এবং এসবের মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ত তাহলে সেটা হতো ভিন্ন চিত্র। সেই চিত্র পাচ্ছি না। দুর্বল অর্থনীতির অংশ হিসেবে রির্জাভের উল্লম্ফন দেখতে পারছি।
রেমিট্যান্সে যে পরিবর্তনটা দেখতে পারছি তা পরিষ্কার নয়। এই সময়ে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে রেমিট্যান্স বাড়ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের কেন বাড়ছে?
অনেক কারণ হতে পারে। একটা কারণ হতে পারে প্রবাসীরা তাদের সঞ্চয় পাঠাচ্ছেন। অন্য কারণ হতে পারে, যারা স্থায়ীভাবে প্রবাসে বাস করছেন, দেশে তাদের আত্মীয়দের জন্য বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।
তৃতীয়ত, দেশে সঞ্চয়পত্রসহ অন্যখাতে বিনিয়োগের জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন। চতুর্থত, এখন মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তড়িৎগতিতে রেমিট্যান্স পাঠানো যায়।
সবশেষ, দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা। সবমিলে রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
আইএমএফের সাম্প্রতিক ওয়ার্ল্ড আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর জিডিপি অর্জনে বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি। মাথাপিছু জাতীয় আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এ সাফল্য সম্পর্কে কিছু বলুন।
ভারতে গত কয়েক বছর ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালো হয়নি। নোট বাতিল (ডিমনিটালাইজেশন), ভ্যাট প্রবর্তন, বিভিন্ন প্রদেশে দাঙ্গাহাঙ্গামাসহ নানা কারণে ভারতের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সেই সঙ্গে আছে করোনার বিশাল ধাক্কা। করোনা প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে হ্যান্ডেল করতে পারেনি ভারত সরকার। এসব কারণে সমাজে অস্থিরতার পাশাপাশি ভারতে অর্থনীতি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমি মনে করি, নিজেদের আয়নাতে আমাদেরকেই দেখতে হবে। ভারতের সঙ্গে তুলনা করে লাভ নেই। ভারত যখন আবার, নিজেদের ঘুড়িয়ে নিতে পারবে, তখন হয়ত বাংলাদেশেকে পেছনে ফেলে সামনে চলে যেতে পারবে। ভারতের দিকে না তাকিয়ে আমাদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে না, সেটা আমরা জানি। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা অর্জন করতে পারলে সেটি হবে দেশের জন্য বড় পাওনা।
তবে চলতি অর্থবছরের জন্য সরকারের প্রাক্কলিত ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। চীনের অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারপরেও চীনের প্রবৃদ্ধি হবে এবার ২ শতাংশ।
কাজেই বাংলাদেশে এবার ২ থেকে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে সেটিই বড় অর্জন বলে আমি মনে করি। তবে আপেক্ষিকভাবে ভারতের চাইতে ভালো আছে বাংলাদেশ। তারই প্রতিফলন ঘটেছে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা ভালো। ফলে ডলারের সঙ্গে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল আছে। এটা একটা ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। পক্ষান্তরে ভারতের মুদ্রার মান আমাদের চেয় কমে গেছে। যে কারণে বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে ভারত।
করোনাকালে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশাধ না করলেও খলাপি বলা যাবে না। ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেকই সমালোচনা করে বলেছেন, খেলাপিদের আরও ছাড় দিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রী বলেছেন ব্যবসার স্বার্থে এ ছাড় দেয়া হয়েছে। আপনি কি মনে করেন?
করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের আরও সহায়তা দরকার। এই সময়ে ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশ এ ধরনের সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশ একই নীতি অনুসরণ করছে।
আমি মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ সুবিধা ডিসেম্বর পর্যন্ত আছে। এটাকে বাড়িয়ে আগামী মার্চ-জুন পর্যন্ত করা যেতে পারে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলায় এর প্রয়োজন রয়েছে।
ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে একটি ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবি বহু পুরনো। সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে সরকার। ব্যাংক কমিশন গঠন করা উচিত বলে কি আপনি মনে করেন?
কমিশন সরকার করুক আর না করুক, সমস্যা আছে এবং তা সমাধান করতে হবে। দুই-তিন বছর আগে সরকার কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। পরে এর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। আমরা দেখেছি, ভারতে তিনটি ব্যাংক বসে গেছে গত কয়েক মাসে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, ওই সব খারাপ ব্যাংককে একীভূত (মার্জার) করা হয়েছে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে।
বাংলাদেশেও একীভূত করতে হবে। ছোট ও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে দিতে হবে বড় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে। দুর্বল ব্যাংকগুলো থাকার কোনো মানে হয় না। সরকারের উচিত হবে কোন ব্যাংক টেকসই হবে আর কোনটি হবে না- তা শনাক্ত করে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।
রাজস্ব আদায়ে ধীর গতি কীভাবে বাড়ানো যায়?
আপৎকালীন সময়ে হঠাৎ করে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো যাবে না এবং এর জন্য অতিরিক্ত উদ্যোগ নেয়া ঠিক হবে না। সরকারকে বুঝতে হবে রাজস্ব আয়ে পতন একদিকে হয়নি। গত সাত-আট বছর ধরে চলছে। গত অর্থবছর নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ বছর সামান্য প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
এ বছর সরকারের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৪০ শতাংশের বেশি। অবাস্তব এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। বর্তমানে রাজস্ব আয়ের যে প্রবণতা দেখা যায়, তা চলতে থাকলে অর্থবছর শেষে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি হবে। এই ঘাটতি কীভাবে কমানো যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। সরকারের উচিত হবে বিশাল ঘাটতিকে সামনে রেখে কীভাবে ব্যয়কে পুনর্বিন্যাস করা যায় তার কর্মকৌশল ঠিক করা।
তবে এ বছর বাজেট ঘাটতি বাড়বে, তাতে উদ্বেগের কিছু নেই। ব্যয় বেশি সংকোচনের দরকার নেই। ঘাটতি বাড়িয়ে আপৎকালীন সময়ে পাড়ি দিতে হবে।
তবে এটাই শেষ নয়, আমাদের অবশ্যই রাজস্ব বাড়াতে হবে। রাজস্ব না বাড়ালে অচল হয়ে যাবে বাংলাদেশ। সরকারও অচল হয়ে যেতে পারে। সে জন্য রাজস্ব খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। আইন পরিবর্তন করতে হবে। প্রশাসনিক কাঠামো আধুনিক করতে হবে। এনবিআরসহ গোটা রাজস্ব বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন করতে হবে।
চাল, পেঁয়াজ, আলুসহ অনেক পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে। সরকার কি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? বাজার স্থিতিশীল করতে কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
সরকারকে বুঝতে হবে চালের বাজারে ঘাটতি আছে। চালের বাজারে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সে জন্য আমদানিকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমন ধান নেমে গেছে, তবু চালের দাম কমছে না। ব্যবসায়ীরা জানে এ বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসল। সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত চাল মজুত নেই। এসব কারণে দাম বাড়ছে।
চালের দাম সহনশীল রাখতে হবে। এ জন্য আমদানি শুল্ক আরও কমানো বা প্রত্যাহার করতে হবে। তা হলে চাল আমদানি সহজ হবে।
শাক সবজির দাম নিয়ে চিন্তিত নই। আগামী ১৫ দিনে ২০ দিনে শাকসবজির সরবরাহ আরও বাড়বে। তখন দাম কমে যাবে। আলুর মৌসুমে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আলুর ফলন তেমন হবে না। পেঁয়াজের ফলনও ভালো হবে না। ভারত হয়ত পেঁয়াজ রফতানি থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। সরবরাহ বাড়াতে পারলে দাম কমবে। এখানে মুদ্রা নীতি প্রয়োগ করে সরকারের কিছু করার নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ আছে বলে আমার মনে হয় না। বাজারের ক্ষেত্রে সরকার হচ্ছে ঠুঁটো জগন্নাথ।
চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাস চলছে। সামনে অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ কী?
করোনাকে প্রতিরোধ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। করোনা এখনও আমাদের সঙ্গে আছে এবং এর প্রভাবে আমাদের অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়েছে।
দ্বিতীয় ঢেউ আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনাকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ২০২২ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতি আগের চেহারায় ফিরে যেতে পারবে বলে আমি আশাবাদী। এটা কিন্তু খারাপ নয়। যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। ইউরোপ যাবে ২০২৩ এর শেষে। কাজেই আমরা ওই সব দেশের চেয়ে আগে স্বাভাবিক অবস্থায় যেতে পারব। বিশ্বপ্রেক্ষাপটে সেটা হবে আমাদের বড় অর্জন। এজন্য ভ্যাকসিন বিতরণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।
আরও পড়ুন:২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ক ১৩,৫০০ কোটি টাকার নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ সময়কালে এই ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি আমানত সংগ্রহে ব্যাংকটির টেকসইতার প্রতিফলন।
বিগত কয়েক বছর ধরে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের এই লক্ষণীয় ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্যাংকটির ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের এমন মাইলফলক ব্যাংকিং খাতে আমানত সংগ্রহে নতুন বেঞ্চমার্ক তৈরি করে চলেছে।
এই সাফল্য উদ্যাপনের লক্ষ্যে ব্যাংকটি ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ঢাকায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজনে ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগ দেন ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও তারেক রেফাত উল্লাহ খান এবং ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক শেখ মোহাম্মদ আশফাক। এ সময় ব্র্যাংকটির ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের রিজিওনাল হেড, ক্লাস্টার হেড এবং ব্রাঞ্চ ম্যানেজারসহ উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র জোনাল হেড (নর্থ) এ. কে. এম. তারেক এবং সিনিয়র জোনাল হেড (সাউথ) তাহের হাসান আল মামুন।
ব্যাংকের এমন সাফল্যে গ্রাহক আস্থা এবং গ্রাহকদের সাথে সুসম্পর্কের বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও তারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন, “গ্রাহকের সাথে আস্থার সম্পর্ককে আমরা আমানত সংগ্রহে সবচেয়ে বড় দক্ষতা হিসেবে দেখি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের বাকি সময়ে এবং সামনের বছরগুলোতেও ডিপোজিট প্রবৃদ্ধিতে আমাদের এমন সাফল্য অব্যাহত থাকবে।”
ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি.:
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি. ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ২৯৮টি শাখা ও উপশাখা, ৩৩০টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১,১১৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং দশ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৪ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সুইসকন্টাক্ট-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো শক্তিশালী করা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিডা সম্মেলন কক্ষে ওই সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, চুক্তির আওতায় তিনটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- প্রমাণনির্ভর বিনিয়োগ পরিবেশ বিশ্লেষণ ও সমন্বয় জোরদার, বিডাকে একটি বিশ্বমানের বিনিয়োগ প্রচার সংস্থা হিসেবে শক্তিশালী করা ও খাতভিত্তিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ উন্নয়ন।
অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, বিডা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগ নীতিমালা সংস্কার, সেবার ডিজিটালাইজেশন এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জোরদারে কাজ করছে। সুইসকন্টাক্ট ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি প্রকল্পের আওতায় বিডার সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন পৌরসভায় ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে।
বিডার জনসংযোগ দপ্তর জানায়, আগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিডা ও সুইসকন্টাক্ট এখন নতুন একটি উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত হয়েছে, যা বিডার ‘হিট ম্যাপ’ অনুযায়ী বিভিন্ন খাতভিত্তিক বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হবে।
বিডা চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনে সরকার নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সুইসকন্টাক্টের সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব আমাদের ‘ইনভেস্টর-ফার্স্ট’ মডেল বাস্তবায়নের পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীরা যেন বাংলাদেশকে দক্ষ, সেবাবান্ধব ও সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে অনুভব করেন।
বিডা জানায়, সুইসকন্টাক্ট দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের টেকসই উন্নয়ন, বাণিজ্য প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণে কাজ করে আসছে। সংস্থাটি বিশ্বাস করে, এই সহযোগিতা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, বিশেষ করে তরুণ ও নারীদের জন্য।
বিডা ও সুইসকন্টাক্ট উভয় প্রতিষ্ঠানই আশা প্রকাশ করেছে, এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নত হবে, মানসম্পন্ন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং টেকসই শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) ১৮তম নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন এবং মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হন।
বেপজায় যোগদানের আগে মোয়াজ্জেম হোসেন সপ্তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) এবং বরিশালে এরিয়া কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তিনি ১৯৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন লাভ করেন। তার দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন কমান্ড, স্টাফ এবং নির্দেশনামূলক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ব্যতিক্রমধর্মী নেতৃত্ব ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করেছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন দুইটি আর্টিলারি ব্রিগেড ও দুইটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের কমান্ড করেছেন। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) প্লাটুন কমান্ডার, সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে একটি ডিভিশনের কর্নেল স্টাফ এবং পরিচালক (বাজেট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি রাজধানীর মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) থেকে স্নাতক এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) থেকে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি) ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি) সম্পন্ন করেছেন।
এছাড়া তিনি বিদেশে উন্নত সামরিক প্রশিক্ষণ ও মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে চীনের নানজিং আর্টিলারি একাডেমি ও পাকিস্তানের স্কুল অব আর্টিলারি রয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে এমফিল সম্পন্ন করেছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে পিএইচডি করছেন।
বাংলাদেশ টেকসই পোশাক উৎপাদনে বৈশ্বিক নেতৃত্ব আরও সুদৃঢ় করেছে, কারণ নতুন করে পাঁচটি কারখানা লিড (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে।
সর্বশেষ এই সংযোজনের ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সর্বাধিক ২৬৮টি লিড-সার্টিফায়েড কারখানার অধিকারী। এর মধ্যে ১১৪টি পেয়েছে প্লাটিনাম ও ১৩৫টি পেয়েছে গোল্ড সার্টিফিকেশন।
এই পাঁচটি নতুন কারখানাসহ বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি সর্বোচ্চ রেটপ্রাপ্ত লিড সার্টিফায়েড কারখানার মধ্যে ৬৮টি বাংলাদেশে অবস্থিত, যা দেশের পোশাক শিল্পের পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও জ্বালানি দক্ষতার ধারাবাহিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
নতুন সার্টিফিকেশন পাওয়া পাঁচটি কারখানা হলো- পাকিজা নিট কম্পোজিট লিমিটেড, সাভার, ঢাকা ঙ+গ: এক্সিস্টিং বিল্ডিং ৪.১ ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্ট পেয়ে লিড প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে; ফ্যাশন পালস লিমিটেড, বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, ঢাকা বিডি+সি: নিউ কন্সট্রাকশন ভি৮ ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্ট পেয়ে লিড প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন পেয়েছে; গাভা প্রাইভেট লিমিটেড, প্লট ১১৪১২০, ঢাকা ইউ+ঈ: নিউ কন্সট্রাকশন ভি৪ ক্যাটাগরিতে ৮৭ পয়েন্টে লিড প্লাটিনাম সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে; ভিজুয়াল নিটওয়্যারস লিমিটেড, চট্টগ্রাম ঙ+গ: এক্সিস্টিং বিল্ডিং ভি৪.১ ক্যাটাগরিতে ৭৬ পয়েন্ট পেয়ে লিড গোল্ড সার্টিফিকেশন পেয়েছে; এবং ট্যালিসম্যান পারফরম্যান্স লিমিটেড, সিইপিজেড, চট্টগ্রাম ইউ+ঈ: নিউ কন্সট্রাকশন ভি৪ ক্যাটাগরিতে ৬২ পয়েন্ট পেয়ে লিড গোল্ড সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে।
এই নতুন সংযোজনগুলো বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের টেকসই উৎপাদন এবং বৈশ্বিক সবুজ রূপান্তরের ধারাবাহিক অগ্রগতিকে আরো জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। গত এক দশকে দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব মানদণ্ড গ্রহণের মাধ্যমে এক ধরনের সবুজ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছে।
লিড-সার্টিফায়েড কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইইউজিবিসি)-এর কঠোর টেকসই মানদণ্ড অনুসরণ করে, যেখানে জ্বালানি ও পানির দক্ষ ব্যবহার, কার্বন নির্গমন হ্রাস, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর ভূমিকা এবং সবুজ শিল্পায়নে সরকারের সহায়ক নীতিমালাকে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সবুজ কারখানার সংখ্যা শুধু দেশকে একটি দায়িত্বশীল উৎপাদন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে না, বরং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্প ভবিষ্যতের লক্ষ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বস্ত্র ও পাট, বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, প্রায় ১০০ কোটি টাকার ফান্ড দিয়ে জেডিপিসির মাধ্যমে প্রায় ১০০৬ জন উদ্যোক্তার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে চেষ্টা করছি বাজারে পাটের একটা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন যাতে আনতে পারি।
অতীতের মতো আমরা কী করে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি। পাটের স্কোয়ার মিটার, মাইলেজ, এর পরিধি বাড়াতে গবেষণার দরকার। র্যাপিং (মোড়ক) উপকরণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পাটের বিশাল বাজার আছে।
বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্যোগে টেকসই উন্নয়নে পাটের ভূমিকাবিষয়ক সেমিনার ‘হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও ফাতেমা আহমেদ ট্রাস্ট লেকচার-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ‘ফিউচার ক্যাপ্টেন’ উল্লেখ করে বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, আপনারা অনেক জায়গায় রিফাইন্ড ক্যারেক্টার দেখিয়েছেন। বলেছেন মানি না। পাটব্যাগের জন্য কালচারাল চেঞ্জ (সাংস্কৃতিক পরিবর্তন) দরকার আমাদের, কাউকে বাধ্য করে নয়। পাটপণ্য ইনোভেশন ও খরচ কমিয়ে এর বাণিজ্যিক সফলতা তৈরি করতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে যা প্লাস্টিককে হারাতে পারে। এজন্য নীতি, পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টার সমন্বিত উদ্যোগ রাখতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ে। আপনারা যেখানে কাজ করবেন সে প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ করতে কাজ করতে হবে। শ্রেষ্ঠত্ব তৈরি করতে হবে।
বক্তব্য শেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের (বুটেক্স) উপাচার্য প্রফেসর ড. ইঞ্জি. মো. জুলহাস উদ্দিন প্রধান অতিথি উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন-এর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম দেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করতে পাট চাষ ও এর রপ্তানি এবং এর ভবিষ্যতের নানা দিক উপস্থাপন করেন। সেইসাথে আগামী বাণিজ্য মেলায় একমাত্র পাটব্যাগ প্রচলনের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রাশিদা আখতার খানম, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক ড. নারগিস আখতার, আইইবির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইঞ্জি. খান মঞ্জুর মোরশেদ, আইটিইটির আহ্বায়ক ইঞ্জি. আহসানুল করিম কায়সার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, সরকার ভিসা ফি প্রদানের প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজড এবং সামগ্রিক ভিসা নীতিমালা সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ভিসা ফি প্রদানের প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল করার কাজ চলছে। পরিকল্পিত এই সংস্কারের ফলে আবেদনকারীরা ঘরে বসেই অনলাইনে ফি পরিশোধ করতে পারবেন। ফলে ফি প্রদানের জন্য শারীরিকভাবে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন হবে না।’
বুধবার রাজধানীতে বিডার মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে ‘ওয়ার্ক পারমিট ও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স প্রসেস’ বিষয়ক এক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ‘সরকার সামগ্রিক ভিসা নীতিমালার ক্ষেত্রেও বড় পরিসরে সংস্কারের কাজ করছে।
এই বিস্তৃত নীতি সংস্কারের লক্ষ্য হলো বর্তমান ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের বিদ্যমান নানা সমস্যার সমাধান করা।’
তিনি বলেন, ‘অনলাইন সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। আগে যেখানে ৩৪টি নথি জমা দিতে হতো, সেখানে এখন তা কমিয়ে ১১টিতে আনা হয়েছে। এটি একটি বড় অর্জন, কারণ অতীতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনার কারণে নানা দপ্তর থেকে একাধিক নথি চাওয়া হতো।’
বিডা চেয়ারম্যান জোর দিয়ে বলেন, ‘বিডাসহ সরকারের সব কার্যক্রমে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো আপসের সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কিছু করতে চাই না যা জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বা আপসের সম্ভাবনা তৈরি করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বিডা- সকলের লক্ষ্য এক এবং আমরা একই উদ্দেশে কাজ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই- সব সংস্থা যেন সমন্বিতভাবে কাজ করে সমস্যা সমাধান করে এবং জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়।’
কর্মশালায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিডা তাদের নিজ নিজ উপস্থাপনা তুলে ধরেছে।
এতে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন ও বিডা মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক বক্তৃতা দেন।
আরিফুল হক জানান, কর্মশালায় এসবি, এনএসআই, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর নির্দিষ্ট তথ্য ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘সব সংস্থা একই পরিবারের সদস্য হিসেবে একই উদ্দেশে কাজ করছে।’
আরিফুল হক মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন তাদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যা নিয়মিতভাবে জানান। কারণ এসব তথ্যই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সহজ করবে।
শরীয়াহ্ ভিত্তিক ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. আমদানি, রপ্তানী ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিকল্পে গ্রাহকদেরকে সকল প্রকার সহযোগিতা করছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের ১৭৪ টি শাখা ও উপ-শাখায় এ সেবা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছে।
মন্তব্য