ব্যক্তি আয়করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সোমবার এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ছে না জানানোর এক দিন পরই এ প্রজ্ঞাপন জারি হলো।
প্রজ্ঞাপনে এনবিআর বলেছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার ২০২০-২১ করবর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ৩০ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।
রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানিয়েছিলেন, আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ছে না।
বলেছিলেন, ‘রিটার্ন জমার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বরই থাকছে। তবে নির্ধারিত সময়ে যারা আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না তাদের জন্য সময় বাড়ানোর সুযোগ থাকবে।’
আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা হয়। সে বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, জরিমানার বিধান বাধ্যতামূলক নয়। করদাতা যথাসময়ে রিটার্ন জমা না দেয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে জরিমানা মওকুফ করা হবে।
এনবিআর কর্মকর্তরা বলছেন, অনেক কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত; যারা করসেবা দেন। বিশেষ করে কর আইনজীবীদের অনেকেই করোনায় অসুস্থ। এছাড়া ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা সময় বাড়ানোর দাবি জানান। এসব বিবেচনায় করদাতাদের সুবিধার্থে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, করোনার প্রভাবে এ বছর রিটার্ন জমার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যে ভাবেই হোক এটি বাড়াতে হবে। গতবারের মতো না পারলেও কাছাকাছি রাখতে চায় সরকার। তা না হলে দুর্নাম হবে। যে কারণে বিশেষ ক্ষমতা বলে সময় বাড়ানো হয়েছে।
গত বছর মোট ২২ লাখ করদাতা রিটার্ন জমা দেন। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে ১৫ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছে। বর্তমানে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ৫০ লাখের বেশি।
জমা পড়া রিটার্নের বড় অংশ চাকরিজীবী ও পেশাজীবী। করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ায় এবার তাদের রিটার্নের সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে জানান এনবিআর কর্মকর্তরা।
রিটার্ন জমার সময় বার বার বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে ২০১৬ সালে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ৩০ নভেম্বর আয়কর দিবসে রিটার্ন দাখিল শেষ দিন নির্দিষ্ট করা হয়। এ নিয়ে সে বছরই সংসদে আইন পাস হয়।
এনবিআর বলেছে, দেশে কোনো মহামারি কিংবা দুর্যোগ পরিস্থিতি হলে বিশেষ ব্যবস্থায় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে সরকারের। এর অংশ হিসেবে করোনা সংক্রমণের মধ্যে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ১৮৪ জি ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার কথা বিবেচনা করে নতুন দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি নীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালের পর যখন আমরা এলডিসি থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হব, আমরা কিছু সুযোগ পাব... আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং দেশের আরও উন্নয়ন করতে আমাদের সেই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।’
সরকারি বাসভবন গণভবনে রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির ১১তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সোমবার প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর ইউএনবির
তিনি উল্লেখ করেন, একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর লক্ষ্য হবে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতেও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে থাকায় বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে খাদ্য সামগ্রী আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে আমরা খাদ্য সামগ্রী রপ্তানি করতে পারতাম। আমরা এর জন্য উদ্যোগ নিতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন এবং সেসব পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। সরকার রপ্তানি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভারত গ্রহণের পর, আমরা এক বছরের ভিত্তিতে নীতির পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি নীতি প্রণয়নের পদক্ষেপ নিয়েছি। অর্জনগুলো ধরে রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের কোনো বিকল্প নেই।’
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘...কিন্তু এর পর আমরা কী করব? এরই মধ্যে, আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছি। আমি মনে করি আগামী দিনে আমরা কী করব বা আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব তা বিবেচনা করার এটাই সঠিক সময়।’
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার কথা মাথায় রেখে অর্থনীতির জন্য পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সারা বিশ্বে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। আমাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে, আমাদের রপ্তানি ঝুড়িতে নতুন আইটেম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে এবং প্রতিটি সেক্টরকে উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত করেছে কারণ সরকারের একার পক্ষে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, রপ্তানি খাতের উন্নয়নের জন্য একটি কৌশল গ্রহণ করতে হবে এবং পণ্য চিহ্নিত করতে হবে। এ জন্য আমরা একটি সম্ভাব্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি-২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে।
প্রধানমন্ত্রী আইসিটি এবং ডিজিটাল ডিভাইস, আরএমজি, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা ও মাঝারি ওজনের শিল্প, মোটর যান এবং ইলেকট্রনিক মোটর গাড়ির কথা উল্লেখ করে পণ্য বৈচিত্র্যের কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, সরকার দেশ-বিদেশের বিনিয়োগ নিয়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরীসহ জয় পেয়েছেন আওয়ামীপন্থি গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদের ২৫ প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ রোববার এ ফল ঘোষণা করেন।
এই নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৪, ১১ ও ১৪ মার্চ ঢাকার বাইরের কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ হয়।
গত ১৮ মার্চ ঢাকায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। গণনা শেষে ১৯ মার্চ ফল ঘোষণা করা হয়।
ঈদ ও রমজানসহ বিভিন্ন পার্বণ সামনে রেখে বরাবরই রেমিট্যান্সে বাড়তি প্রবাহ তৈরি হয়। ব্যতিক্রম হচ্ছে না এবারও। রমজান মাস সামনে রেখে বাড়তে শুরু করেছে রেমিট্যান্স। পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। চলতি মার্চ মাসের ১৭ দিনেই ১১৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন তারা।
ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১০৭ টাকা দেয়া হচ্ছে। সে হিসাবে এই ১৭ দিনে ১২ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৭৩৩ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) আট মাস ১৭ দিনে ১ হাজার ৫১৮ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্স প্রবাহে বাড়তি গতি আসায় স্ফীত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে ২৩ মার্চ (চাঁদ দেখাসাপেক্ষে)। রোজা ও ঈদ সামনে রেখে আগামী দিনগুলোতে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে আশা করা যায়।
দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক রেমিট্যান্সের প্রবাহ টানা তিন মাস বাড়ার পর ফেব্রুয়ারিতে হোঁচট খায়। ওই মাসে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তার আগের তিন মাসে এসেছিল যথাক্রমে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ, ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ও ১৯৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। সে হিসাবে প্রতিদিন এসেছিল ৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার।
মার্চ মাসে এই সূচকে ফের গতি ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, এই মাসের প্রথম ১৭ দিনে ১১৬ কোটি ৪২ লাখ ডলারের যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ১৫ কোটি ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৯৮ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার ডলার। আর ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এই গতিতে রেমিট্যান্স এলে মাস শেষে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন ব্যাংকাররা।
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স।
২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম ছিল।
চলতি অর্থবছরটা বেশ উল্লম্ফনের মধ্য দিয়েই শুরু হয়। প্রথম মাস জুলাইয়ে ২১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। পরের মাস সেপ্টেম্বরে এক ধাক্কায় তা নেমে আসে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে। অক্টোবরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে।
রেমিট্যান্সে নিম্নগতি থেমে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয় নভেম্বরে। এই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার। আর ডিসেম্বরে আসে ১৭০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তা বেড়ে হয় ১৯৬ কোটি ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তা আবার ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারে নেমে যায়।
ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স কমার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘প্রতি বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে অন্যান্য মাসের চেয়ে রেমিট্যান্স কিছুটা কম আসে। কারণ ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে শেষ হয়।’
বর্তমানে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই রোজা ও দুই ঈদের আগে রেমিট্যান্স বাড়ে; এবারও তাই হচ্ছে। দুই-তিন দিন পর রোজা শুরু হবে। রোজা সামনে রেখে প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের বাড়তি প্রয়োজন মেটাতে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।
‘এই ইতিবাচক ধারা রোজার ঈদ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি। এরপর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও রেমিট্যান্স বাড়বে।’
ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় বেশি টাকা পাওয়ার জন্য মাঝে কয়েক মাস প্রবাসীরা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠিয়েছেন। এর ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে গিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক হুন্ডির বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
বাড়ছে রিজার্ভ
রোববার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। গত ৭ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ায় গত কয়েক দিনে তা কিছুটা বেড়ে ৩১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
আরও পড়ুন:গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চান্দিনা শাখা ১৯ মার্চ ২০২৩ তারিখ হতে নতুন ঠিকানা ‘সাহা প্লাজা’, ৫৪৪ মধ্যবাজার, চান্দিনা পৌরসভা, চান্দিনা, কুমিল্লায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। পূর্বে এই শাখার কার্যক্রম আলহাজ্ব ডা. রোসমত আলী সুপার মার্কেট, চান্দিনা পৌরসভা, চান্দিনা, কুমিল্লা হতে পরিচালিত হতো।
ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মশিউর রহমান জেহাদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শাখাটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় ব্যাংকের ইভিপি ও জেনারেল সার্ভিসেস ডিভিশনের প্রধান জুলফিকার আলী খান, চান্দিনা শাখার ব্যবস্থাপক এবং ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাসহ আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথি ও গ্রাহকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বস্ত ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক দেশব্যাপী স্বকীয়তা বজায় রেখে সেবা প্রদান করবে বলে অনুষ্ঠানে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ ঘিরে জালনোট চক্রের তৎপরতা বেড়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে এমন অপতৎপরতা রোধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অফ কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ রোববার সার্কুলারের মাধ্যমে এই নির্দেশ দিয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে জাল নোট প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে ঢাকা শহর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিসসহ নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সন্ধ্যার পর কমপক্ষে এক ঘণ্টা এই সতর্কতা প্রচার করতে হবে।
উল্লিখিত ভিডিও চিত্রটি ব্যাংকের শাখাগুলোতে গ্রাহকদের জন্য স্থাপিত টিভি মনিটরগুলোতে পুরো ব্যাংকিং সময়ে দেখাতে হবে। এ নির্দেশনা অনুযায়ী শাখায় উচ্চ মূল্যমানের নোট গ্রহণ ও প্রদানকালে এবং এটিএম মেশিনে টাকা ফিডিংয়ের আগে আবশ্যিকভাবে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন দিয়ে নোট পরীক্ষা করতে হবে।
চিনির দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমাতে ব্যবসায়ীরা রাজি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, ‘চিনির শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর কারণে কেজিতে সাড়ে ৪ টাকার মতো কমে আসবে। আমরা ব্যবসায়ীদের চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমানোর অনুরোধ করছি। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। রোজার প্রথম সপ্তাহেই কম দামের চিনি বাজারে পাওয়া যাবে।’
রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভা শেষে সাংবাদিকদের টিপু মুনশি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘ট্যারিফ হ্রাসকৃত চিনি এখনো বাজারে আসেনি। রোজার প্রথম সপ্তাহে ট্যারিফ সুবিধায় আমদানি হওয়া পণ্য পাওয়া যাবে। মিলগেটর মূল্য থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রায় ৫/৬ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি হয়। আমদানিকারকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মিলগেটের দামে ট্রাকসেলে তারা চিনি বিক্রি করবেন। এতে ভোক্তাদের ৫ থেকে ৬ টাকা সাশ্রয় হবে।’
রোজায় চিনির কোনো সংকট হবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে চিনির যে মজুদ আছে এবং যে পরিমাণ চিনি পাইপলাইনে রয়েছে, তাতে সরবরাহে কোনো ঘাটতি হবে না।’
রোজায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, শাকসবজিসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কোনো পণ্যের ঘাটতি বা মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।’
প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহবান জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘এক সঙ্গে বেশি পণ্য ক্রয় করে বাজারে কোনো ধরনের প্যানিক (আতঙ্ক) সৃষ্টি করবেন না।’
চাহিদা মত পেঁয়াজ আমদানি করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। রোজার মাসে আমরা পেঁয়াজের বাজার নিবিড় মনিটারিং করবো। কোনো কারণে দাম বেড়ে গেলে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হবে।’
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে নজরদারি বাড়ানো হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘রোজা উপলক্ষে বেগুন, টমেটো, শসা, মুরগির মাংসসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যায়। সেই সুযোগে মহাসড়কে খাদ্যদ্রব্য ও শাক সবজি আনার পথে কোনোভাবেই যেন চাঁদাবাজি না হয় সে ব্যাপারে কঠোর মনিটারিং করা হবে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সকল জেলা প্রশাসনকেও বলা হবে।’
টিসিবির মাধ্যমে সরকার নিত্যপণ্যে ভর্তুকি দিচ্ছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য দেয়া হচ্ছে। সে হিসাবে প্রায় ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে ২০ শতাংশ মানুষকে যদি ধরা হয়, তাহলেও দেখা যায় টিসিবির মাধ্যমে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন। এবার রোজার মাসে দুইবার করে টিসিবির পণ্য দেয়া হবে। সাধারণ মানুষকে সহায়তা দিতে সরকার বছরে টিসিবির মাধ্যমে ৯৮০০ কোটি টাকার ভর্তুকি দিচ্ছে।’
অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘কোনো ব্যবসায়ী অবৈধভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাজারে মুরগির দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে।’
বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। কিন্তু দেশে মার্কিন ডলারের বাড়তি দাম থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যহ্রাসের সুফলটা পাওয়া যাচ্ছে না।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে টাস্কফোর্স সভায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রোববার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। একইসঙ্গে কমেছে লেনদেনও।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২০৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৫২ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক দশমিক ৯৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ২১৭ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩১৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯টির, কমেছে ৮৫টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২১৩টির।
ডিএসইতে ৪৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে রোববার, যা আগের কার্যদিবস থেকে ৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা কম। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৪৮৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার।
অপরদিকে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩২৩ পয়েন্ট।
সিএসইতে ১৩১টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১০টির দর বেড়েছে, কমেছে ৪৫টির। দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৬টির। সিএসইতে ২৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য