আপাতত যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত টিকাই নিচ্ছে সরকার। প্রথম ধাপে তিন কোটি টিকা কেনা হবে। প্রতি ডোজ ৫ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪২৫ টাকা। অর্থাৎ ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
যদি সব টিকা অক্সফোর্ডের কেনা হয়, তাহলে সরল অঙ্কে ১৬ কোটি লোকের জন্য ৩২ কোটি ডোজ টিকা কিনতে খরচ হবে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা।
করোনা খাতে সরকারের বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকার পুরোটা ব্যয় করলেও টিকা কেনার ব্যয় কুলাবে না। এ ছাড়া টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণে বিপুল অবকাঠামো তৈরির পেছনে অনেক টাকা খরচ হবে। বিতরণ ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ লাগবে।
এই বিপুল এলাহি কারবারের জন্য কতটুকু প্রস্তুত সরকার?
এই প্রশ্ন জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের।
অক্সফোর্ডের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও মডার্নার টিকাও আছে প্রতিযোগিতায়। ওই দুই কোম্পানির কোনোটার টিকা কিনলে আরও বড় বাজেট লাগবে। কেননা এই দুই কোম্পানির টিকা কয়েক গুণ ব্যয়বহুল। সে তুলনায় অক্সফোর্ডের টিকা সস্তা।
করোনার টিকা বিনা মূল্যে বিতরণের কথা ভাবছে সরকার। যদি তাই হয়, তাহলে সরকারের ভতুর্কি আরও বাড়বে। রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় বাজেট বাস্তবায়নে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে বাজেট ঘাটতি। এ অবস্থায় বিনা মূল্যে টিকা দিলে সরকারের আর্থিক চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের সবার জন্য ভালো মানের করোনার টিকা নিশ্চিত করতে হলে প্রচুর অর্থের দরকার। এত অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য কি সরকারের আছে? যদি না থাকে তাহলে জোগান কোথা থেকে আসবে?
করোনার টিকা হাতে পাওয়ার পর এর ব্যবস্থাপনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নান মনে করেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় পর্যায়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সেটি বাস্তবায়নের কৌশল তৈরি করবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থায় তিন কোটি টিকা সংরক্ষণের সামর্থ্য সরকারের আছে। টিকা কেনার সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যে টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণ করা যাবে, সেই টিকাই কেনা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে টিকা কেনার অর্থের উৎস নিয়ে নিশ্চিন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনার টিকার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দই দেয়া আছে। যদি তাতে না কুলায় অন্য খাত থেকে টাকা এনে এখানে বাড়তি বরাদ্দ দেয়া হবে। কারণ করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পরিষ্কার।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ততটা নির্ভার হতে পারছেন না। তারা মনে করেন, করোনার টিকা সবার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। বিতরণ ব্যবস্থা সরকারের জন্য হবে বড় চ্যালেঞ্জ। সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া না হলে এটি সফল হবে না।
থোক বরাদ্দে টান পড়বে
চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন মিলে মোট বরাদ্দ ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর বাইরে করোনা সংকট মোকাবিলায় বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়।
বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয় বরাদ্দ থাকে, তার ৯০ শতাংশ যায় বেতন-ভাতা ও প্রকল্পের কেনাকাটায়। ফলে টিকা এলে কিনতে হবে থোক বরাদ্দের টাকা থেকেই। তেমনটাই জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, একটা কৌশলগত সুবিধার দিক হলো টিকা কিনতে একসঙ্গে সব টাকা লাগবে না। ধাপে ধাপে টিকা আনা হবে। কাজেই এবারের বাজেটে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া আছে, তাতে কোনো সমস্যা হবে না।
টিকা আসবে বিভিন্ন দেশ থেকে
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রথম ধাপে টিকা কেনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৮০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়। এরই মধ্যে ৭৩৫ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজির অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহন করার মতো সক্ষমতা নেই দেশের।
ডা. নজরুল বলেন, ‘টিকা উৎপাদন যেমন, তেমনি বাজারজাতকরণও একটি জটিল প্রক্রিয়া। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের সব দেশ টিকা চায়। বিশেষ করে ধনী দেশগুলো; বাংলাদেশও চায়। তবে আমাদের ধনী দেশগুলোর মতো টাকার জোর নেই। এর মধ্যে অনেক ধনী দেশ ভ্যাকসিনের সংগ্রহে অগাম টাকা দিয়ে রেখেছে।’
ডা. মো. নজরুল বলেন, ‘ধনী দেশের তুলনায় আমাদের দেশের সক্ষমতাও অনেক কম। অন্যান্য দেশ মাথাপিছু ১০টি টিকা নিশ্চিত করলেও বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে ১০০ জনে ১০ জনের টিকা।
‘আমরা সরকারকে অগ্রিম টাকা দেয়ার পরিকল্পনা দিয়েছিলাম। তবে অনেক পরে সরকার টিকা উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশেনর (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ডা. মাহবুব-ই রশিদ বলেন, টিকা আনার পর সরকার কীভাবে বিতরণ ও সংরক্ষণ করবে, সে বিষয়ে একটি বিশদ পরিকল্পনা করতে হবে।
তিনি আরও জানান, সংরক্ষণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কিছু হিমাগার আছে। এগুলোর অবকাঠমোর অবস্থা ভালো নয়। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এসব হিমাগার সংস্কার করতে হবে।
বিনা মূল্যে টিকা দিলে জটিলতা বাড়তে পারে। সরকারের ওপর চাপ কমাতে বিতরণ ব্যবস্থায় বেবসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা আনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কেননা তিন কোটি টিকা দিয়ে দেশের সব জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমাদের আরও টিকা লাগবে এবং তা আনা হবে পযার্য়ক্রমে।’
অর্থের জোগান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘থোক বরাদ্দ থেকে টিকার জন্য বড় একটি অংশ ব্যয় করা হবে। এ ছাড়া বাড়তি টাকা পেতে বিশ্বব্যাংক এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থার কাছে আবেদন করা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কাজেই করোনার টিকা কেনায় টাকার কোনো সমস্যা হবে না।’
সরকারের পরিকল্পনা
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সঠিক সময়ে টিকা পেতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে প্রধান উপদেষ্টা করে ২৬ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন কর্মকৌশল তৈরি করছে। যারা টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহন করবে তাদের একটি তালিকা তৈরি হচ্ছে।
এ কাজ শেষ হলে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য সব স্তরে আবশ্যকীয়ভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও ধারণক্ষমতা মূল্যায়ন, নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম জোরদার, নিরাপদ টিকা তদারকি নিশ্চিত টিকা আমদানি ও মাঠ পর্যায়ে বিতরণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে বাজেট ও কী পরিমাণ জনবল লাগবে সে বিষয়ে কাজ চলছে। এ জন্য একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পরিকল্পনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি এই প্রকল্পের প্রস্তাব তৈরি করেছে।
কারা আগে টিকা পাবে
টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে একই নিয়ম মানা হয়। বয়স্ক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখ কাতারে (ফ্রন্টলাইনার) যারা আছেন, প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বাংলাদেশেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে।
স্বাস্থ্যকর্মী ও সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের প্রথমে করোনা টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। দেশে ষাটোর্ধ্ব লোকজনকে এ টিকা দেয়া হবে। এরপর টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবী। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, যারা করোনার মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন, তাদের ও প্রথম ধাপে টিকা দেয়া হবে বলে জানান অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
টিকা সংরক্ষণ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে যেসব টিকা সংরক্ষণাগার রয়েছে, সেগুলোক আগামী ডিসেম্বরের করোনা টিকা রাখার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া তাপমাত্রা সংরক্ষণের জন্য নতুন ফ্রিজ কেনার কেনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এগুলো কিছু সরকার কিনবে; কিছু দাতারা দেবে।
সিরাম ইন্সটিটিউটের তথ্য বলছে, দুই থেক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকা সংরক্ষণ করতে হবে। এমন তাপমাত্রার মধ্যে হলে টিকা সংরক্ষণে কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া নতুন কোনো কোম্পানির কাছ থেকে টিকা নেয়ার আগে তাপমাত্রার বিষয়টি মাথায় রাখবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ফ্রিজ কেনা শেষে বিমানে করে টিকা দেশে নিয়ে আসা হবে। এরপর নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার সেন্ট্রাল মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে। দেশের তাপমাত্রা নিশ্চিত করে ফ্রিজে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে টিকা।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য