আপাতত যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত টিকাই নিচ্ছে সরকার। প্রথম ধাপে তিন কোটি টিকা কেনা হবে। প্রতি ডোজ ৫ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪২৫ টাকা। অর্থাৎ ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
যদি সব টিকা অক্সফোর্ডের কেনা হয়, তাহলে সরল অঙ্কে ১৬ কোটি লোকের জন্য ৩২ কোটি ডোজ টিকা কিনতে খরচ হবে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা।
করোনা খাতে সরকারের বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকার পুরোটা ব্যয় করলেও টিকা কেনার ব্যয় কুলাবে না। এ ছাড়া টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণে বিপুল অবকাঠামো তৈরির পেছনে অনেক টাকা খরচ হবে। বিতরণ ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ লাগবে।
এই বিপুল এলাহি কারবারের জন্য কতটুকু প্রস্তুত সরকার?
এই প্রশ্ন জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের।
অক্সফোর্ডের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও মডার্নার টিকাও আছে প্রতিযোগিতায়। ওই দুই কোম্পানির কোনোটার টিকা কিনলে আরও বড় বাজেট লাগবে। কেননা এই দুই কোম্পানির টিকা কয়েক গুণ ব্যয়বহুল। সে তুলনায় অক্সফোর্ডের টিকা সস্তা।
করোনার টিকা বিনা মূল্যে বিতরণের কথা ভাবছে সরকার। যদি তাই হয়, তাহলে সরকারের ভতুর্কি আরও বাড়বে। রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় বাজেট বাস্তবায়নে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে বাজেট ঘাটতি। এ অবস্থায় বিনা মূল্যে টিকা দিলে সরকারের আর্থিক চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের সবার জন্য ভালো মানের করোনার টিকা নিশ্চিত করতে হলে প্রচুর অর্থের দরকার। এত অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য কি সরকারের আছে? যদি না থাকে তাহলে জোগান কোথা থেকে আসবে?
করোনার টিকা হাতে পাওয়ার পর এর ব্যবস্থাপনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নান মনে করেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় পর্যায়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সেটি বাস্তবায়নের কৌশল তৈরি করবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থায় তিন কোটি টিকা সংরক্ষণের সামর্থ্য সরকারের আছে। টিকা কেনার সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যে টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণ করা যাবে, সেই টিকাই কেনা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে টিকা কেনার অর্থের উৎস নিয়ে নিশ্চিন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনার টিকার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দই দেয়া আছে। যদি তাতে না কুলায় অন্য খাত থেকে টাকা এনে এখানে বাড়তি বরাদ্দ দেয়া হবে। কারণ করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পরিষ্কার।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ততটা নির্ভার হতে পারছেন না। তারা মনে করেন, করোনার টিকা সবার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। বিতরণ ব্যবস্থা সরকারের জন্য হবে বড় চ্যালেঞ্জ। সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া না হলে এটি সফল হবে না।
থোক বরাদ্দে টান পড়বে
চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন মিলে মোট বরাদ্দ ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর বাইরে করোনা সংকট মোকাবিলায় বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়।
বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয় বরাদ্দ থাকে, তার ৯০ শতাংশ যায় বেতন-ভাতা ও প্রকল্পের কেনাকাটায়। ফলে টিকা এলে কিনতে হবে থোক বরাদ্দের টাকা থেকেই। তেমনটাই জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, একটা কৌশলগত সুবিধার দিক হলো টিকা কিনতে একসঙ্গে সব টাকা লাগবে না। ধাপে ধাপে টিকা আনা হবে। কাজেই এবারের বাজেটে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া আছে, তাতে কোনো সমস্যা হবে না।
টিকা আসবে বিভিন্ন দেশ থেকে
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রথম ধাপে টিকা কেনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৮০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়। এরই মধ্যে ৭৩৫ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজির অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহন করার মতো সক্ষমতা নেই দেশের।
ডা. নজরুল বলেন, ‘টিকা উৎপাদন যেমন, তেমনি বাজারজাতকরণও একটি জটিল প্রক্রিয়া। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের সব দেশ টিকা চায়। বিশেষ করে ধনী দেশগুলো; বাংলাদেশও চায়। তবে আমাদের ধনী দেশগুলোর মতো টাকার জোর নেই। এর মধ্যে অনেক ধনী দেশ ভ্যাকসিনের সংগ্রহে অগাম টাকা দিয়ে রেখেছে।’
ডা. মো. নজরুল বলেন, ‘ধনী দেশের তুলনায় আমাদের দেশের সক্ষমতাও অনেক কম। অন্যান্য দেশ মাথাপিছু ১০টি টিকা নিশ্চিত করলেও বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে ১০০ জনে ১০ জনের টিকা।
‘আমরা সরকারকে অগ্রিম টাকা দেয়ার পরিকল্পনা দিয়েছিলাম। তবে অনেক পরে সরকার টিকা উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশেনর (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ডা. মাহবুব-ই রশিদ বলেন, টিকা আনার পর সরকার কীভাবে বিতরণ ও সংরক্ষণ করবে, সে বিষয়ে একটি বিশদ পরিকল্পনা করতে হবে।
তিনি আরও জানান, সংরক্ষণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কিছু হিমাগার আছে। এগুলোর অবকাঠমোর অবস্থা ভালো নয়। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এসব হিমাগার সংস্কার করতে হবে।
বিনা মূল্যে টিকা দিলে জটিলতা বাড়তে পারে। সরকারের ওপর চাপ কমাতে বিতরণ ব্যবস্থায় বেবসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা আনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কেননা তিন কোটি টিকা দিয়ে দেশের সব জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমাদের আরও টিকা লাগবে এবং তা আনা হবে পযার্য়ক্রমে।’
অর্থের জোগান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘থোক বরাদ্দ থেকে টিকার জন্য বড় একটি অংশ ব্যয় করা হবে। এ ছাড়া বাড়তি টাকা পেতে বিশ্বব্যাংক এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থার কাছে আবেদন করা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কাজেই করোনার টিকা কেনায় টাকার কোনো সমস্যা হবে না।’
সরকারের পরিকল্পনা
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সঠিক সময়ে টিকা পেতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে প্রধান উপদেষ্টা করে ২৬ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন কর্মকৌশল তৈরি করছে। যারা টিকা সংরক্ষণ ও পরিবহন করবে তাদের একটি তালিকা তৈরি হচ্ছে।
এ কাজ শেষ হলে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য সব স্তরে আবশ্যকীয়ভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও ধারণক্ষমতা মূল্যায়ন, নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম জোরদার, নিরাপদ টিকা তদারকি নিশ্চিত টিকা আমদানি ও মাঠ পর্যায়ে বিতরণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে বাজেট ও কী পরিমাণ জনবল লাগবে সে বিষয়ে কাজ চলছে। এ জন্য একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পরিকল্পনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি এই প্রকল্পের প্রস্তাব তৈরি করেছে।
কারা আগে টিকা পাবে
টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে একই নিয়ম মানা হয়। বয়স্ক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখ কাতারে (ফ্রন্টলাইনার) যারা আছেন, প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বাংলাদেশেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে।
স্বাস্থ্যকর্মী ও সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের প্রথমে করোনা টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। দেশে ষাটোর্ধ্ব লোকজনকে এ টিকা দেয়া হবে। এরপর টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবী। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, যারা করোনার মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন, তাদের ও প্রথম ধাপে টিকা দেয়া হবে বলে জানান অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
টিকা সংরক্ষণ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে যেসব টিকা সংরক্ষণাগার রয়েছে, সেগুলোক আগামী ডিসেম্বরের করোনা টিকা রাখার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া তাপমাত্রা সংরক্ষণের জন্য নতুন ফ্রিজ কেনার কেনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এগুলো কিছু সরকার কিনবে; কিছু দাতারা দেবে।
সিরাম ইন্সটিটিউটের তথ্য বলছে, দুই থেক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকা সংরক্ষণ করতে হবে। এমন তাপমাত্রার মধ্যে হলে টিকা সংরক্ষণে কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া নতুন কোনো কোম্পানির কাছ থেকে টিকা নেয়ার আগে তাপমাত্রার বিষয়টি মাথায় রাখবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ফ্রিজ কেনা শেষে বিমানে করে টিকা দেশে নিয়ে আসা হবে। এরপর নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার সেন্ট্রাল মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে। দেশের তাপমাত্রা নিশ্চিত করে ফ্রিজে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে টিকা।
আরও পড়ুন:সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৭৪২ জন।
এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানি হয়েছে এক হাজার ৬৩২ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে রোববার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শনিবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয় ৭৪২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৫৬ এবং ঢাকার বাইরের ৫৮৬ জন।
চলতি বছরের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ১৩ হাজার ৭০৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা এক লাখ আট হাজার ২৬৯ জন। ঢাকার বাইরে আরও দুই লাখ ৫ হাজার ৪৩৭ জন আক্রান্ত হন।
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন তিন লাখ ৯ হাজার ১০৪ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা এক লাখ ৬ হাজার ৪৭০ আর ঢাকার বাইরের দুই লাখ দুই হাজার ৬৩৪ জন রয়েছেন।
আরও পড়ুন:ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬২৮ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে শুক্রবার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৩ হাজার ৩৫৮ জন ডেঙ্গুরোগী।
এতে আরও বলা, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ১২ হাজার ৩৫৯ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ লাখ ৭ হাজার ৯৭৪ জন ও ঢাকার বাইরে ২ লাখ ৪ হাজার ৩৮৫ জন।
২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৬২২ জন। এর মধ্যে বাসিন্দা ঢাকার ৯৩৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬৮৫ জন।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটির ১৪৪ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে ৭৩৩ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৪৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৮৯১ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ লাখ ৭ হাজার ৮৩৬। ঢাকার বাইরে ২ লাখ ৪ হাজার ৫৫ জন।
সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৯০ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ লাখ ৫ হাজার ৯৯১ ও ঢাকার বাইরে ২ লাখ ৭৯৯ জন।
গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ২৮১ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শিশু স্নায়ুরোগের সেবায় ইএমজি সেবা ও নিউরো-মাসকুলার ডিজঅর্ডার ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার এন্ড অটিজম (ইপনা) ও শিশু নিউরোলজী বিভাগে প্রধান অতিথি হিসেবে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এর উদ্বোধন করেন।
এসব চালু করার মাধ্যমে শিশু স্নায়ু রোগীদের চিকিৎসা ও গবেষণার জন্য নতুন একটু দ্বার উন্মোচিত হলো। নার্ভ কনডাকশন স্টাডি (এনসিএস) ও ইলেকেট্রোমায়োগ্রাম (ইএমজি) পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুদের স্নায়ুরোগ ও মাংসপেশির রোগ সনাক্ত করনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক বলেন, ‘আজ ইনিস্টিটিউট-অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিসঅর্ডার এন্ড অটিজম (ইপনা) ও শিশু নিউরোলজি বিভাগের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। ইপনায় সেবা নিতে আসা বিশেষ শিশুরা বেশ সংবেদনশীল। তাদের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। চিকিৎসকরা যেমন বিশেষ শিশুদের যত্ন দেবেন, তার চেয়ে বেশী সেবা পরিজনদের মাধ্যমে দিতে হবে। এতে বিশেষ শিশুরা দেশের সম্পদে পরিণত হবে। বিশেষ শিশুদের মেধার বিকাশে কাজ করছে ইপনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিশু স্নায়ুরোগীসহ সকল বিভাগে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা প্রদানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন বেশ মনোযোগী। শিশুদের ¯স্নায়ুরোগীদের সেবার জন্য বিশ্বে যে ধরনের সেবা দেয়া হয় সেটিও এখানে দেয়া হচ্ছে। সামনে আরও উন্নতমানের সেবা দেবার লক্ষে আমরা কাজ করছি।’
এ সময় ইপনার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহীন আক্তার, শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা, অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু, অধ্যাপক ডা. সাঈদা তাবাস্সুম আলম, সহকারী অধ্যাপক ডা. বিকাশ চন্দ্র পাল, সহকারী অধ্যাপক ডা. সানজিদা আহমেদ, অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. পবিত্র কুমার দেবনাথ প্রমখসহ বিভাগের সকল ফ্যাকালটি ও চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬১৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৬৮ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯৩ জন। আর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৭৫ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারা দেশে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩ হাজার ৫৮৭ জন রোগী। এর মধ্যে ঢাকায় ৯৭৪ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৬১৩ জন রোগী ভর্তি আছেন।
সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বুধবার (২৯ নভেম্বর) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৩ লাখ ১১ হাজার ১৪ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরেছেন ৩ লাখ ৫ হাজার ৮১২ জন।
আরও পড়ুন:ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬১০ জন।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৫৯ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ২০১ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে ৭৫৮ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৫৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
এতে আরও বলা, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ১০ হাজার ৪৬ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯ জন ও ঢাকার বাইরে ২ লাখ ২ হাজার ৫৪৭ জন।
সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৬৯ জন। ঢাকায় ১ লাখ ৫ হাজার ৫৬৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩০১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
সারা দেশে রোববার সকাল আটটা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৬০৬ জনে দাঁড়াল।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯২০ জন। নতুন এসব শনাক্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১৯ জন, আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭০১ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৩ হাজার ৪৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ১১ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৪৮২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯ হাজার ৮৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ লাখ ৭ হাজার ২৯৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ লাখ ১ হাজার ৭৮৯ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৮৮ জন। ঢাকায় ১ লাখ ৫ হাজার ৩৫৭ এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
মন্তব্য