বেকারত্বের সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
‘প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কর্মসংস্থান ইস্যু: প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বৃহস্পতিবার সংস্থাটির সন্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘দেশে যে উপায় ও সংজ্ঞায় বেকারত্ব নিরূপণ করা হয়, সে সংজ্ঞা অচল এবং অবাস্তব।’
বাংলাদেশের শ্রমশক্তি সম্পর্কিত জরিপের বেকারত্বের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এই ভাবে: ‘১৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের এমন ব্যক্তিকে বেকার বিবেচনা করা হয়েছে, যে সক্রিয়ভাবে কাজের সন্ধান করা বা কাজের জন্য প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও কোনো কাজ করেনি।’
অর্থনীতিবিদেরা এই সংজ্ঞার সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তাদের দাবি, এই সংজ্ঞা বাংলাদেশে বেকারত্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আংশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং এই সংজ্ঞা দেশের মোট উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানের মধ্যকার মৌলিক ভারসাম্যহীনতাকেই প্রতিফলিত করে।
ড. দে্বপ্রিয় দাবি করেন, ‘বেকারত্বের সঠিক সংজ্ঞা নিরূপণ এবং তা চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তকে সংস্কারের অংশ হিসাবে সামনে আনা জরুরি।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ এর হিসাব বলছে, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। বিবিএস-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে শ্রমশক্তির মোট পরিমাণ ৫ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে কাজ করছে ৫ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার জন। এর অর্থ বেকারের সংখ্যা মাত্র ২৬ লাখ ৮০ হাজার।
তবে ওয়েবিনারে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এ দেশে বেকারত্বের যে হার দেখানো হয়, সেটা সঠিক নয়। এ মুহূর্তে ১৮-২৮ বছর বয়সী যে সংখ্যক যুবক আছেন, তাদের তিনজনে একজন বেকার। শিক্ষিত বেকার হয়তো দুই জনে একজন।’
দেবপ্রিয়র এই তথ্যের সঙ্গে মিল রয়েছে লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ)। সংস্থাটির তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অর্থাৎ প্রতি দুইজনে একজনের নাম বেকারের খাতায় অন্তর্ভূক্ত।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। প্রতিষ্ঠানটি আভাস দিয়েছে, কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ৬ কোটিতে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ হবে। আইএলওর হিসাবটিকেই পর্যবেক্ষকেরা বাংলাদেশের প্রকৃত বেকারের সংখ্যা বলে মনে করেন।
ওয়েবিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে অক্সফাম বাংলাদেশ, সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ফর এসডিজিস ও সিপিডি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দাবি করেন, তথ্য-উপাত্ত সঠিক না হলে তা অন্ধকারে সাঁতার কাটার সমান। কারণ ভুল তথ্য-উপাত্তে কর্মসংস্থানের লক্ষ্য পূরন করা সম্ভব হবে না। তাই তথ্য-উপাত্তের জায়গাটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
দারিদ্র্য বিমোচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে দারিদ্র্য বিমোচন হবে কেমন করে, যদি মানুষের আয় না থাকে? আর কর্মসংস্থান না থাকলে ওই আয় টাই বা আসবে কোথা থেকে? তাই দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি হওয়া উচিত কর্মসংস্থান-কেন্দ্রিক। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এটি অন্তর্ভূক্ত করারও পরামর্শ রাখেন তিনি।
কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, `করোনা-উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চিন্তা হওয়া উচিৎ কর্মসংস্থান। তবে প্রচলিত প্রণোদনার মতো টোটকা ওষুধে কর্মসংস্থানকে বেগবান করা যাবে না। বরং এর বাইরে গিয়ে একটি স্থায়ী নীতিকাঠামোতে আমাদের আসতে হবে। কর্মসংস্থানের সামগ্রিক কাঠামোকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।‘
সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. তৌফিকুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব কে এম আব্দুস সালাম, সিপিডির নির্বাহি পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি পরিচালক ড. দীপঙ্কর দত্ত, বিআইডিএস-এর জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. নাজনীন আহমেদ, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি কামরান টি রহমান প্রমূখ।
ওয়েবিনারে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, `প্রণোদনার সুফল পেতে হলে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে যাদের স্থানীয় পর্যায়ে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা আছে, তথ্য আছে, তাদের সঙ্গে সরকারের সংযুক্ততা বাড়াতে হবে।‘
তিনি টেকসই দারিদ্য বিমোচনের লক্ষ্যে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানকে সমার্থকভাবে যুক্ত করার আহ্বান জানান।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনে কী কী সংশোধনী থাকবে, তা চূড়ান্ত করা হবে।
তবে, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় জাতীয় নির্বাচনে এখনকার মতো জেলাভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা রাখার পাশাপাশি আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা রাখারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব অনুমোদন হলে নির্বাচন কমিশন প্রতি আসনে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারবে।
বর্তমানে প্রতি জেলার সব কটি নির্বাচনী আসনের জন্য একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকেন। সাধারণত জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি) তাঁদের জেলার নির্বাচনী আসনগুলোর জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা হয়ে থাকেন।
এছাড়া প্রস্তাবিত খসড়ায় নির্বাচনী কার্যক্রমে গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দিলে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্টের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন করে ১৪টি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সংশোধনের প্রস্তাব করা বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে, তবে কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার সময় এসব বিষয়ে পুনরায় আলোচনা হবে।
‘বেশ কিছু ধারা নিয়ে মন্ত্রিসভার পর্যবেক্ষণ রয়েছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী সভায় আলোচনা করা হবে।’
সচিব বলেন, ‘আগে শুধু জেলায় একজন করে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হতো। এখন সংসদীয় আসনের ভিত্তিতে একাধিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া যাবে, সংশোধনীতে সেই প্রস্তাব করা হয়েছে।
‘বিদ্যমান আইনে সেবা প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার ৭ দিন আগে পরিশোধের বিধান রয়েছে।
‘প্রস্তাবিত আইনে প্রার্থীর বকেয়া বিল পরিশোধের সময় বাড়িয়ে মনোনয়নপত্র জমাদানের আগের দিন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সচিব মাহমুদুল হোসাইন বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এখানে একটা বিধান রাখা হয়েছে। কেউ গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের আইনানুগ কাজে বাধা দিলে সে ক্ষেত্রে ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:কোনো ব্যাংকে এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি পরিচালক না থাকার বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন ২০২৩-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।
তিনি বলেন, বর্তমানে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক থাকতে পারার বিধান রয়েছে। এটা পরিবর্তন করে এখন সর্বোচ্চ ৩ জন করা হয়েছে।
এছাড়া ভূমি উন্নয়ন কর আইন ২০২২-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে আজকের মন্ত্রিসভায়। পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একাদশ জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংলাপে আহ্বান করেননি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা জানান।
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এ চিঠি দেয়া হয়। চিঠি দেয়ার পাঁচদিন পর মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুললেন সিইসি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আপনাদের উদ্দেশে দুটো কথা বলবো। গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি, আমাদের এখান থেকে আমরা অনানুষ্ঠানিক পত্রে বিএনপি মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আনুষ্ঠানিক নয়। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারেন- এমন একটি চিঠি দিয়েছিলাম গত বৃহস্পতিবার শেষ বেলায়। বিভিন্ন বক্তব্য থেকে মনে হয় চিঠিটা উনারা পেয়েছেন।’
নির্বাচন কমিশনের আলোচনার ডাকে বিরোধী দল বিএনপি সাড়া দেবে কি না তা জানা যাবে মঙ্গলবার। নির্বাচন কমিশনের চিঠির জবাবে তাদের অবস্থান কী হবে তা নির্ধারণ করতেই স্থায়ী কমিটির সভার ডাক দিয়েছে বিএনপি। রাত ৮টায় এক ভার্চুয়াল সভা করবে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, আমি ধরেই নিয়েছি উনারা (বিএনপি) চিঠিটা পেয়েছেন।
বিএনপিকে সংলাপে আহ্বান করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংলাপ বিষয়টা কিন্তু আনুষ্ঠানিক। আমরা উনাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলেছি, আনুষ্ঠানিক না হলেও অন্তত অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আসতে পারেন। আমরা এই আমন্ত্রণ, আহ্বান অত্যন্ত বিনীতভাবে জানিয়েছি। এরপর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সত্য মিথ্যা জানলাম।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বলা হয়েছে বা অনেকে বলতে চেয়েছেন এটা সরকারের একটা কূটকৌশল। আমি আপনাদের মাধ্যমে পুরো জাতিকে অবহিত বা আশ্বস্ত করতে চাই। এই পত্রের সঙ্গে সরকারের কোনো রকম সম্পর্ক নেই বা ছিল না। যদি কেউ এটাকে কূটকৌশল মনে করতে চান, তবে এটি নির্বাচন কমিশনের কূটকৌশল হতে পারে, সরকারের কূটকৌলশ নয়।
‘আর নির্বাচন কমিশন কখনোই কূটকৌশল হিসেবে এই কাজটি করেনি। নির্বাচন কমিশন প্রথম থেকেই আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন মনে করে গণতন্ত্রের স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে বিশেষ করে দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। সংসদীয় গণতন্ত্রে দলীয় শাসনটাই হচ্ছে মূখ্য। বিদ্রোহী প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর দ্বারা কখনো সরকার গঠন করা সম্ভব না, সেজন্য আমাদেরও লক্ষ্য আমাদের দলগুলো চর্চার মাধ্যমে আরো সমৃদ্ধ হোক, আরো সংহত হোক এবং দলীয় চর্চা এবং সংস্কৃতির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চা আরো সংহত হোক। সেটা আমাদের প্রথমদিন থেকে সদিচ্ছা। সেই সদিচ্ছার প্রতিফলন আমাদের প্রথমদিন থেকে আমরা সব সময় আমাদের মাধ্যমে ঘটানোর চেষ্টা করেছি।’
আরও পড়ুন:দেশের ছয়টি বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এ ছাড়া অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে অধিদপ্তর এমন বার্তা দিয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
দিনভর আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিয়ে জানানো হয়- ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে খেপুপাড়ায় ১৬ মিলিমিটার।
সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়, সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে জো বাইডেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমি আপনাকে (শেখ হাসিনা) এবং বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা ও মুক্তির মূল্য গভীরভাবে বোঝে। কারণ তারা ১৯৭১ সালে নিজেদের ভাগ্য নিজেরা নির্ধারণ করতে এবং তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে।’
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সোমবার চিঠিটি শেয়ার করেছে। তাতে বাইডেন বলেছেন, ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের কূটনৈতিক সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একসঙ্গে অনেক কিছু অর্জন করেছে।
বাইডেন লিখেছেন, ‘বিগত অর্ধ শতাব্দীর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রগতি, জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলা, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় অংশীদারত্ব এবং একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ, গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার অর্জিত হয়েছে।’
বাইডেন প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন বলেন, ‘আপনি বাস্তবে বিশ্বের জন্য সহানুভূতি ও উদারতার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করা এবং নৃশংসতার জন্য দায়ী অপরাধীদের জবাবদিহিতার সম্মুখীন করার অঙ্গীকারে অংশীদার।’
তিনি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সবচেয়ে বড় অবদানকারী হিসেবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের রক্ষায় বাংলাদেশের প্রদর্শিত অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন।
বাইডেন বলেন, ‘আমরা গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সহ-আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই, যা বৈশ্বিক মহামারি অবসানে রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নীত করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন তার পরবর্তী নির্বাচনের কাছাকাছি আসছে, তখন আমি আমাদের উভয় দেশের জনগণ গণতন্ত্র ও সাম্যের বিষয়ে যে গভীর মূল্যবোধ পোষণ করে এবং মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি যে সম্মান প্রদর্শন করে, তা স্মরণ করছি।’
পরিশেষে তিনি বলেন, ‘(স্বাধীনতা দিবস) উদযাপনের দিনে দয়া করে আপনার এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। জয় বাংলা।’
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আটদিনের সফরে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রপতিকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি বিমান (ফ্লাইট নং বিজি-৫৮৪) মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করবে।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বাসসকে একথা জানান।
সিঙ্গাপুরে আবদুল হামিদের আটদিনের সফরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল আই সেন্টারে চোখের চিকিৎসা করার কথা রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি ৫ এপ্রিল দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন স্থাপন কাজ শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি আছে শুধু একটি স্লিপার বসানোর কাজ। ৭ মিটার দীর্ঘ স্লিপারটি বসালেই সম্পন্ন হবে লাইন নির্মাণ।
স্লিপারটি বসানো হয়ে গেলে ৩০ মার্চ মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত পুরো সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, বাকি থাকা স্লিপারটি চীন থেকে উড়োজাহাজে করে দেশে আনা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় স্লিপারটি ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছে। দ্রুতই সেটি প্রকল্পের সাইটে নেয়া হবে।
স্লিপারটি বসানোর সঙ্গে ৬ মিটারের কংক্রিটিং হবে। সেটি শক্ত হতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এই কংক্রিট পুরোপুরি শক্ত না হলে সেটির ওপর দিয়ে ট্রেন যেতে পারবে না।
সেতু-সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী জানান, শুধু একটি স্লিপার মিস ম্যাচের জন্য সেতুতে রেললাইন সম্পন্ন করায় বিলম্ব হচ্ছে। স্লিপারটি বসানোর পর রেলমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের জন্য ৩০ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ সোমবার বিকেলে বলেন, ‘স্লিপারটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানোর ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এটি বসানো হবে। তারপর কংক্রিটের কাজ করা হবে। স্লিপারটির জন্যই এখন অপেক্ষা। আমাদের ৯৯ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা রেল সেতুতে এমন ৮টি মুভমেন্ট জয়েন্ট রয়েছে। বাকি ৭টি যথাযথভাবে স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর মাঝামাঝি ৫ নম্বর মুভমেন্ট জয়েন্টের ওই ইস্পাতের স্লিপারটি বসানো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। আর মূল সেতুতে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপিত হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের ৮টি স্লিপার ছাড়া বাকিগুলো কংক্রিটের তৈরি। এগুলো ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পুরনো রেল স্টেশনের পাশে স্থাপিত কারখানায় তৈরি করেছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
একইসঙ্গে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ১৭২ কিলোমিটার রেললাইন তৈরির জন্য সব স্লিপার একই কারখানায় তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিশেষ তাপমাত্রায় মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের স্লিপারগুলো তৈরি করে আনা হয় চীন থেকে।
প্রসঙ্গত, রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেতুতে যানবাহন চালু রেখেই নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ। এখন তা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পথে।
অন্যদিকে, পদ্মা সেতু ছাড়াও প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস ও ১৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দু’পাশের স্টেশন নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ।
মন্তব্য