করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও বড় অংশ পিছিয়ে আছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বাস্তবায়নের গতি ধীর এখনও।
এ প্যাকেজর আওতায় বড় গ্রাহকদের ঋণ দেয়ার ব্যাপারে ব্যাংকগুলো সক্রিয় থাকলে ও ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে তেমন আগ্রহী নয়। এ ছাড়া কৃষিঋণ, নিম্ম আয় ও প্রান্তিক চাষী, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট স্কিমসহ অন্যান্য খাতে ঋণ বিতরনের চিত্র উল্লেখ করার মতো নয়।
অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কিছু ত্রুটি থাকলেও সামিগ্রকভাবে এর সুফল মিলেছে। ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি।
ব্যাংকাররা বলেছেন, বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। ব্যবাসায়ীদের মতে, প্যাকেজের পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতিতে আরও গতি আসবে।
করোনার ধাক্কা সামলে উঠে এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি। সামষ্টিক অর্থনীতির বেশ কিছু সূচক এখন ইতিবাচক। তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ে তেজিভাব। রেমিট্যান্স আয়ে রেকর্ড। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায়। ব্যক্তি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ছে। আমদানি বাড়ছে। রাজস্ব আয়ে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাম্প্রতিক প্রকাশিত আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়, সবার্চ্চ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অর্জনে বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রার প্রশংসা করে বলেছে, করোনার মধ্যে দেশটি অর্থনীতি সুসংহত অবস্থানে রয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নিবার্হী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজর ইতিবাচক প্রভাব অবশ্যই আছে। ঋণ সহায়তা দেওয়ার ফলে পোশাক পণ্যের রফতানি বেড়েছে। তবে এসএমই ও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে শ্লথ গতি দেখা গেছে। এখানে কিছু সমস্যা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বসে এসব বিষয়ে দ্রুত সমাধন করতে হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্যাকেজের পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে আরো গতি বাড়বে অর্থনীতির।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনীতির সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলায় গত মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
এই প্যাকেজের বড় একটি অংশ আর্থিক খাতের প্রণোদনা। এতে জড়িত আটটি খাতে বাস্তবায়নাধীন অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
অবশিষ্ট অর্থ দুস্থদের জন্য এককালীন নগদ সহায়তা, ত্রাণ বিতরণ, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি ও কভিড-১৯ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনাকাটা ও চিকিৎসা সেবায় ব্যয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ এসব প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। তবে আর্থিক খাতের সব প্যাকেজই বাস্তবায়ন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বেশির ভাগ প্রণোদনা প্যাকেজ মূলত ঋণনির্ভর। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কম সুদে, সহজ শর্তে চলতি মূলধন জোগান দেয়ার লক্ষে এসব প্যাকেজ নেয়া হয়।
এসব প্যাকেজর আওতায় ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। এর অর্ধেক দেবে গ্রাহক তথা ঋণগ্রহিতা। বাকি অর্ধেক সুদ ভতুর্কি দেবে সরকার।
বাস্তবায়নের চিত্র
বড় গ্রাহকদের জন্য শিল্প ও সেবা খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকার সবচেয়ে বড় প্যাকেজ নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৮ জন গ্রাহককে ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়, যা মোট ঋণের ৮২ শতাংশ।
ব্যাংক কর্মকর্তরা বলেছেন, বড় ব্যবসায়ীরা সুসংগঠিত। প্রয়োজনীয় নথি তড়িৎ গতিতে সরবরাহ করতে পারে। ফলে ঋণ অনুমোদন তাড়াতাড়ি হচ্ছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দিতে আগ্রহী নয়।
এ খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২৭ হাজার উদ্যোক্তাকে ৫ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এ পর্যন্ত মোট ঋণের ২৯ শতাংশ পান ছোট উদোক্ত্যারা।
যোগাযোগ করা হলে সরকারি মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম নিজউবাংলাকে বলেন, এসএমই খাতে ঋণগ্রহিতার সংখ্যা বেশি। ঋণের অঙ্ক ছোট ছোট। সারা দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। ফলে ঋণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগে।
তিনি জানান, এসএমই খাতকে অগ্রাধিকার দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়া নির্দেশনা আছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ খাতের জন্য বরাদ্দের পুরো অর্থ বিতরণ করা যাবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ব্যাংকের টাকা আমানতকারীদের টাকা। ফলে ছোট গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ঋণ দিলেই হবে না। পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।
কৃষিঋণ বিতরণে ধীরগতি
কৃষকদের জন্য নেয়া প্রেণাদনা প্যাকেজে আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। করোনার ক্ষতি সামলাতে তাদের সহায়তায় ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়। এর আওতায় ৪ শতাংশ সুদে কৃষিজাত পণ্য, ফুল, ফল, মৎস্য, পোলট্রি, ডেইরি খাতে চলতি মূলধন দেওয়া হয়।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ঋণ বিতরণ করা হয়, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ শতাংশ। ঋণ পেয়েছেন ৪৭ হাজার কৃষক।
একইভাবে নিম্ন আয়, পেশাজীবী, ক্ষদু ব্যবসায়ী, প্রান্তিক চাষীদের জন্য গঠিত ৩ হাজার কোটি টাকার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। ১৭ হাজার গ্রাহককে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টকা ঋণ বিতরণ করা হয়।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কৃষিখাতের বেশির ভাগই ছোট ঋণ। যাছাই-বাছাই করে সতর্ক হয়ে ঋণ দিতে হবে। তা না হলে উপকারভোগীরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।
পোশাকসহ রফতানিমুখী শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা পরিশোধ বাবদ ১০ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই ছাড় হয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন তহবিলের ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়ে গেছে।
করোনাকালীন লকডাউন থাকায় অচল হয়ে পড়ে অর্থনীতি। এ প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে এপ্রিল এবং মে মাসে সব ধরনের ঋণের সুদ স্থগিত করে সরকার।
সুদের একটি অংশ ভর্তুকি দেওয়ার জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুদ ভতুর্কি বাবদ এখন পর্যন্ত কোনো টাকা ছাড় করা হয়নি।
প্রাক-জাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি ঋণ (প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স) স্কিম নামে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ কর্মসূচি চালু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শতভাগ রফতানিমুখী শিল্পকে সুবিধা দিতে গঠিত এ স্কিমের আওতায় এ পর্যন্ত ১৭ কোটি টাকা দেয়া হয়।
সব মিলে বড় গ্রাহকদের ঋণ বিতরেণে অগ্রগতি সন্তোজনজনক। পিছিয়ে আছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
তিনি জানান, বড় গ্রাহকেরা যেভাবে সক্রিয়, সে অনুযায়ী এসএমই উদ্যোক্তারা তৎপর নন। এর একটা কারণ হতে পারে ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যাংকগুলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। এনজিওগুলোর সঙ্গে বেশি যোগাযোগ তাদের। ফলে এখানে কিছুটা সমস্যা আছে।
প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে এসএমই খাতের কোনো বিকল্প নেই। ফলে এখানে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে বলে জানান তিনি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়লে অর্থনীতি গতিশীল হবে। সে জন্য ঋণ বিতরণ আরও বাড়াতে হবে।
এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ তুলানামূলক কম হয়েছে এ কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, বড় শিল্পখাতে বেশি ঋণ দেওয়ায় ক্ষুদ্র শিল্পে মনোযোগ কম ছিল।
এসএমই খাতে ঋণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপ আছে। সে জন্য ব্যাংকগুলো বর্তমানে এসএমই খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কৃষি ঋণের পুরোটা বিতরন করতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিতোয়ে কারাগার থেকে ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরছেন। মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানিয়েছে।
একই দিন সকালে এসব বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে মিয়ানমারের নৌ-জাহাজ চিন ডুইন সিতোয়ে বন্দর ত্যাগ করেছে। জাহাজটি রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে কক্সবাজারে আসছে।
বুধবার জাহাজটি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় পৌঁছবে এবং পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের নাগরিকদের হস্তান্তর করা হবে।
দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশি ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার, ৩০ জন বান্দরবান, সাতজন রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে বাসিন্দা রয়েছেন।
ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস মিয়ানমারের জাহাজটির বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে। সর্বোচ্চসংখ্যক যাচাই করে বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রুত ও সহজে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনায় দূতাবাস মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থানরত ১৪৪ জন ‘যাচাই করা বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের কারাভোগের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে বা ক্ষমা পেয়েছেন’ তাদেরকে সিতোয়ে কারাগারে আনার উদ্যোগ নেয়।
পাশাপাশি আরও ২৯ জন যাচাই করা বাংলাদেশি নাগরিক, যারা এখনও কারাভোগ করছেন কিংবা বিচারাধীন, একইসঙ্গে তাদেরও মুক্তি দেয়ার বিষয়টি মিয়ানমারের কাছে তুলে ধরা হয়। এর ভিত্তিতে সাজা মওকুফ করে তাদেরকেও দেশে পাঠানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ গত বছরের ৩ অক্টোবর দুই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমারে কারাভোগ শেষ করা ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন:কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশে তার দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে মঙ্গলবা বিকেলে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাতার আমিরের সফর দু’দেশের মধ্যে অসাধারণ সদিচ্ছা ও বোঝাপড়া তৈরি করেছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও সুসংহত এবং পরবর্তী স্তরে উন্নীত করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
কাতারের আমির বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে ২২-২৩ এপ্রিল দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন আমির-ই দেওয়ান প্রধান, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী, কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কাতার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান, কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির (কিউআইএ) এশিয়া ও আফ্রিকা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান, এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং কাতারি আমিরের নেতৃত্বে কাতারি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেন।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রশংসা করে এবং বর্ধিত পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, দু’দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং রাষ্ট্রীয়, ব্যবসা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সকল স্তরে সফর বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ককে আরও বাড়ানো ও এগিয়ে নেয়ার পন্থা ও উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে- সেগুলো ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, জনশক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদি।
উভয়পক্ষ গাজা যুদ্ধ এবং মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করেছে। উভয় নেতা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ফিলিস্তিনের সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে একটি উন্নত জ্ঞানভিত্তিক বহু-সাংস্কৃতিক সমাজ হিসাবে কাতারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও রূপান্তর এবং আমিরের নেতৃত্বে মধ্যস্থতা ও বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে কাতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের অন্যতম হওয়ার জন্য কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে প্রশংসা করেন এবং কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিয়োগ প্রসার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উভয় পক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশে সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ব্যবসা অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী, পেশাদার, নার্স, টেকনিশিয়ান, কেয়ারগিভার ইত্যাদি নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য কাতারের আমিরকে অনুরোধ করেন। আমির এতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন।
মতবিনিময়কালে কাতারের আমির ইইজেড ও কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে বিনিয়োগের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। তিনি কাতারের ফ্রি ইকোনমিক জোন সম্পর্কেও বৈঠকে অবহিত করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল পাঠানোর অনুরোধ জানান।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলের নেতারা বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে মোট ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।
উভয় নেতা কাতারের আমিরের নামে ইসিবি সার্কেল থেকে কালশী পয়েন্ট পর্যন্ত একটি বিশেষ এভিনিউ এবং রাজধানীর মিরপুরে একটি পার্কের নামকরণ ও উদ্বোধন প্রত্যক্ষ করেন।
আমির ও তার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
পরে আমির বঙ্গভবনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর তার সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেয়া আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।
মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে বিগত ২০২৩ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র: ইউএনবি
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস মঙ্গলবার বলেছে, ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে (এইচআরআর) থাকা দেশভিত্তিক প্রতিবেদনগুলো আইনি সিদ্ধান্ত, দেশগুলোর ক্রমবিন্যাস বা তুলনা করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট প্রকাশিত ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ দলিল। প্রায় পাঁচ দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট (এইচআরআর) সদ্য গত ২০২৩ সালে ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলকে নিয়ে কাজ করেছে। মানবাধিকার প্রতিবেদনে পৃথকভাবে মানবাধিকার অবমাননা ও লঙ্ঘনের ওপর বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের বিস্তৃত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এটা সরকার, মানবাধিকারের সমর্থনে কাজ করা ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং নির্দিষ্ট দেশ ও অঞ্চলগুলোতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারযোগ্য একটি হাতিয়ার সরবরাহ করে।
মানবাধিকার প্রতিবেদনটি ওয়াশিংটন ও বিভিন্ন দেশের মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটে তাদের সহকর্মীদের বেশ কিছু মাসের কাজের প্রতিনিধিত্ব করে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে সঠিক তথ্যের প্রয়োজন হলে কংগ্রেস, এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ ও অভিবাসন আদালতকে সহায়তা করে।
মানবাধিকার প্রতিবেদন সুশীল সমাজের কাজ সম্পর্কেও জানায়, যার মাঝে অন্তর্ভুক্ত আছে মানবাধিকার রক্ষাকারীসহ বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতা, স্কলার, অভিবাসন বিচারক, আশ্রয় কর্মকর্তা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সরকার।
অন্যান্য দেশের প্রতিবেদনের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিবেদনটি state.gov এ পাওয়া যাবে।
পাহাড়ে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ বিরোধী যৌথ অভিযানের কারণে বান্দরবানের থানচি, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আমাদের পার্বত্য তিনটি উপজেলাতে বিশেষ করে বান্দরবানের থানচি, রুমা এবং রোয়াংছড়িতে যৌথ বাহিনীর অপারেশন চলমান রয়েছে। আপাতত এই তিনটি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পরে সুবিধাজনক সময়ে আয়োজনের চেষ্টা করব।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। থানচি, রোয়াংছড়িতে আগামী ৮ মে ও রুমায় ২১ মে ভোট হওয়ার কথা ছিল।
গত ২ এপ্রিল রুমার সোনালি ব্যাংকে ডাকাতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র লুট করা হয়। এছাড়া ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করা হলেও পরে ছাড়া পান তিনি। পর দিন রুমায় সোনালি ও কৃষি ব্যাংকে দিন দুপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
এ সব ঘটনায় কেএনএফ জড়িত বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। এরপর যৌথ বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত ২১ নারীসহ ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেএনএফ-এর সদস্য অভিযানে নিহতও হয়েছেন।
নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সভায় নির্বাচন কমিশন সদস্য, সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দপ্তর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি এবং পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
সফররত কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মঙ্গলবার এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়।
পাঁচ চুক্তির মধ্যে রয়েছে- উভয় দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি, দ্বৈতকর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত চুক্তি, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি, সাগরপথে পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি এবং দু দেশের ব্যবসা সংগঠনের মধ্যে যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তি।
পাঁচ সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে- কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, শ্রমশক্তির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক এবং বন্দর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।
চুক্তিগুলোর মধ্যে প্রথমটিতে কাতারের পক্ষে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ আল থানি ও বাংলাদেশের পক্ষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, দ্বিতীয়টিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, তৃতীয়টিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, চতুর্থটিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং পঞ্চমটিতে কাতার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান শেখ খলিফা বিন জসিম আল থানি ও বাংলাদেশের ফেডারেশন অব চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম সই করেন।
সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে সব কটিতে কাতারের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সই করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে একান্ত বৈঠক হয় শেখ হাসিনা ও শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পৌঁছালে মঙ্গলবার সকালে কাতারের আমিরকে ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কদিন ধরেই দাবদাহে পুড়ছে জনজীবন। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। দিনভর তীব্র তাপপ্রবাহ, তবে রাতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে। এই অবস্থা থেকে আপাতত মুক্তি মিলছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ যেভাবে বয়ে যাচ্ছে, আরও কটা দিন এভাবেই তা চলবে। কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে এতে গরম তেমন একটা কমবে না।
মঙ্গলবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এতে বলা হয়, সিলেট বিভাগে দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশের দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংম পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
পরবর্তী পাঁচ দিনের আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
এর আগে সোমবার চলমান তাপপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে ৭২ ঘণ্টার জন্য দেশজুড়ের রেড অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তার আগেও গত ১৯ এপ্রিল তিন দিনের হিট অ্যালার্ট দেয়া হয়। অ্যালার্ট থাকবে ২৫ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত।
টানা কদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী, পাবনা, বরিশালেও প্রচণ্ড গরম। সোমবার খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে সোমবার।
এদিন রাত ৯টায় ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে পোস্টে এ কথা জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে সোমবার রাত ৯টায়। এ সময় ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।
পোস্টে জানানো হয়, বর্তমানে দেশব্যাপী চলছে তীব্র তাপদাহ। এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ বিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে জনজীবনে স্বস্তি বজায় রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর আগে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল রোববার ১৫ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট।
মন্তব্য