করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশিদের জন্য নয় শ্রেণির ভিসা চালু করল ভারত। তবে যারা ঘুরতে যেতে চান, তাদেরকে আরো অপেক্ষায় থাকতে হবে। কারণ, পর্যটন ভিসা চালু করেনি।
শুক্রবার ভারতীয় হাইকমিশন চিকিৎসা, ব্যবসা, চাকরি, এন্ট্রি, সাংবাদিক, কূটনীতিক, কর্মকর্তা, জাতিসংঘের কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘের কূটনীতিকদের জন্য ভিসা চালুর জন্য আবেদনের কথা জানিয়েছে।
শিগগিরই অন্যান্য সব শ্রেণির ভিসা দেয়া শুরু করবে দেশটি।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব রোধে গত ১২ মার্চ থেকে সব দেশের নাগরিকদের ভিসা দেয়া স্থগিত ঘোষণা করেছিল ভারত।
সূত্র: ইউএনবি
দেশে উৎপাদিত ও সংযোজিত মোটরসাইকেলের গতি আরও বাড়াতে চায় সরকার। বর্তমানে সর্বনিম্ন ৮০ সিসি থেকে সর্বোচ্চ ১৬০ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন ফোর স্ট্রোক ও টু স্ট্রোক মোটরসাইকেল স্থানীয়ভাবে বাজারজাত হচ্ছে। সরকার চায় এগুলোকে ২৫০ সিসির ওপরে নিয়ে যেতে।
মোটরসাইকেল উৎপাদনে এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ১০ কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। এদের সম্মিলিত বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ হাজার লোকের।
কোম্পানিগুলো যার যার সক্ষমতা অনুযায়ী ইতোমধ্যে দেশে মোটরসাইকেলের একটা স্থায়ী বাজার তৈরি করেছে। এখন চেষ্টা সেই বাজার অংশীদারত্বকে আরও বড় করার। এ জন্য ক্রেতা টানতে মোটরসাইকেলে যুক্ত করা হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। নতুন ডিজাইন করা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে ইঞ্জিনের শক্তি। এ উদ্যোক্তাদের নীতি-সহায়তা দিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিতে চায় সরকার। এবারের বাজেটে সেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
দেশে এখন প্রতি ৫৪ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন। পাঁচ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল প্রতি ১৬১ জনে মাত্র একজন। ছবি: নিউজবাংলা
ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন চারটি ধাপে জ্বালানিকে ব্যবহার উপযোগী করে। এটি একই সঙ্গে যেমন জ্বালানি-সাশ্রয়ী, তেমনি মাইলেজ বেশি, শব্দ কম এবং তুলনামূলক পরিবেশবান্ধব। অন্যদিকে টু স্ট্রোক ইঞ্জিন দুই ধাপে জ্বালানিকে ব্যবহার উপযোগী করে। তবে এ জ্বালানির একটি বড় অংশ অব্যবহৃত থাকে। ফলে এর জ্বালানিও বেশি লাগে এবং এটি কালো ধোঁয়া উৎপন্ন করে।
সরকারের পরিকল্পনা হলো আগামীতে দেশে তৈরি সব ধরনের মোটরসাইকেল হবে আরও বেশি গতিসম্পন্ন। তাই কারখানায় ফোর স্ট্রোক বা টু স্ট্রোক ইঞ্জিন মোটরসাইকেলের উৎপাদন বা সংযোজন পর্যায়েই দুই চাকার এই বাহনটির গতি ২৫০ সিসির ওপরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ খাতে বিনিয়োগ করা কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার অংশ হিসেবে উচ্চগতির মোটরসাইকেল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে।
বাজেটে কী পেল মোটরসাইকেল খাত
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, দেশে ২৫০ সিসির ঊর্ধ্বের ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল প্রস্তুত করার কারখানা গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে ২৫০ সিসি পর্যন্ত মোটারসাইকেল আমদানিতে ফোর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ এবং টু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত আছে।
অর্থমন্ত্রী ২৫০ সিসির ঊর্ধ্বের ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল আমদানিতে ফোর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ এবং টু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ বহাল রাখার প্রস্তাব করেছেন বাজেটে।
খাতসংশ্লিষ্টরা এই বাজেট পদক্ষেপের পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, মোটরসাইকেল ইস্যুতে অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে রাজস্ব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় মোটরসাইকেল শিল্পের সক্ষমতা বাড়ানো ও উৎপাদিত কিংবা সংযোজিত মোটরসাইকেলের গতিকে উন্নত দেশের মতো করা, যাতে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করেও উন্নত দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়। একই সঙ্গে আমদানিনির্ভর বিদেশি মোটরসাইকেলের প্রতি ঝোঁক কমিয়ে ক্রেতাকে দেশে তৈরি মোটরসাইকেল কিনতে উৎসাহিত করাও উদ্দেশ্য।
এ ক্ষেত্রে আরেকটি উদ্দেশ্য হলো বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে মোটরসাইকেলের মতো বিলাসপণ্যের আমদানি ঠেকাতে ক্রেতাকে নিরুৎসাহিত করা, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অহেতুক অপচয় রোধ করতে ভূমিকা রাখবে।
বাড়ছে মোটরসাইকেলের ব্যবহার
দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্থানীয় উৎপাদনও। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এখন প্রতি ৫৪ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। পাঁচ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল প্রতি ১৬১ জনে মাত্র একজন। অর্থাৎ ব্যবহারকারী বেড়েছে প্রায় তিন গুণ (২ দশমিক ৯৮ গুণ)। এখন দেশে সর্বনিম্ন ৭৭ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে প্রায় সব ব্র্যান্ডের যেকোনো মডেলের মোটরসাইকেল মিলছে।
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ২৯ লাখ ৯১ হাজার।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, সম্প্রতি দেশে ভাড়ায় চালিত অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল বৃদ্ধির কারণে এর ক্রয়-বিক্রয় এবং নিবন্ধনের হারও ঊর্ধ্বমুখী। নিবন্ধিত প্রায় ৩০ লাখ মোটরসাইকেলের মধ্যে ২৫ শতাংশই চলাচল করছে ঢাকায়।
মোটরসাইকেলের বাজার
বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ) তথ্যমতে, ২০১৭ সালে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি হতো। ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২৩টিতে। ২০১৭ সালে মোটরসাইকেলের বাজার ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার। সেটি ২০১৯ সালে বেড়ে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
সংগঠনটির তথ্যমতে, ২০১৪ সালে দেশে সবকটি ব্র্যান্ড মিলে মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ইউনিট। ২০১৮ সালে সেই বিক্রি বেড়ে হয় ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ ইউনিট, যা ২০১৯ সালে এসে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ ইউনিটে।
দেশে উৎপাদিত ও সংযোজিত মোটরসাইকেল বর্তমানে সর্বনিম্ন ৮০ সিসি ও সর্বোচ্চ ১৬০ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন ফোর স্ট্রোক ও টু স্ট্রোক। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোটরসাইকেলকে ২৫০ সিসির ওপরে নিয়ে যেতে চায় সরকার। ছবি: সংগৃহীত
এর মধ্যে বাজার অংশীদারত্বের হিসাব অনুযায়ী ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজের একক অংশীদারত্ব ছিল ৫৩ শতাংশ এবং টিভিএসের ১২ শতাংশ। এ ছাড়া ভারতীয় ও জাপানি ব্র্যান্ড হিরো হোন্ডার ১৫ শতাংশ এবং দেশীয় ব্র্যান্ড রানারের ৮ শতাংশ। বাকি ১২ শতাংশের বাজার ছিল দেশীয় ও বিদেশি অন্য ব্র্যান্ডগুলোর। তবে বাজার অংশীদারত্বে ক্রমেই প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ইয়ামাহা, সুজুকি ও মাহেন্দ্রাও।
আগামীর সম্ভাবনা যেখানে
খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের দাবি, সরকারের নীতি-সহায়তার কারণেই মোটরসাইকেল শিল্পে এই বিপ্লব ঘটেছে। তবে উন্নতির এখনও অনেক বাকি। মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে প্রতি চারজনে একজন মোটরসাকেল ব্যবহারকারী। ভারতে সেটি প্রতি ২০ জনে একজন। সেদিক থেকে বাংলাদেশ জনবহুল হয়েও মোটরসাইকেল ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে। আর এটাই হলো দেশের মোটরসাইকেলের বাজারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার জায়গা। যার ওপর দাঁড়িয়ে আজ দেশে বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, আগামীর বাংলাদেশে মোটরসাইকেল শিল্পের সম্ভাবনা বিরাট।
এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন নিউজবাংলাকে বলেন, সরকারের নীতি-সহায়তার কারণেই মোটরসাইকেল শিল্পে বিপ্লব ঘটেছে। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছেন। খাতটির উন্নয়নে ভবিষ্যতেও প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। তিনি জানান, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি এ শিল্প খাতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোরও উদ্যোগ রয়েছে।
লক্ষ্য প্রতি বছর ১০ লাখ ইউনিট উৎপাদন
শিল্প মন্ত্রণালয়ের দাবি, চাহিদার ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল দেশেই উৎপাদন হয়। বাকি ৪০ শতাংশ এখনও আমদানি হয়। তবে সরকারের মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতি ২০১৭ অনুযায়ী, প্রতি বছর ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হারে মোটরসাইকেল উৎপাদন প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবে ২০২৭ সালের মধ্যে সরকার স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেলের উৎপাদন বছরে ১০ লাখ ইউনিটে নিয়ে যেতে চায়। এর পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
মোটরসাইকেলে বাজার মাত করছে যারা
বর্তমানে ভারতের বাজাজ, টিভিএস ও হিরো, জাপানের হোন্ডা, সুজুকি ও ইয়ামাহার মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিদেশি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে কারখানা স্থাপন করেছে। কোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশি কোম্পানি, কারিগরি সহায়তা দিয়েছে ব্র্যান্ডের মূল প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের একক বিনিয়োগের মাধ্যমে রানার, গ্রামীণ মোটরস, লিফান, রোডমাস্টারের মতো স্থানীয় ব্র্যান্ডও ইতোমধ্যে সুপরিচিত হয়ে গেছে।
পাশাপাশি এসব কোম্পানির মাধ্যমে এ শিল্পের যন্ত্রাংশ তৈরিতে রানার ইন্ডাস্ট্রিজ, নিটল মেশিনারিজ, কিউভিসিসহ বিভিন্ন সহযোগী শিল্পও গড়ে উঠেছে। বাজারজাতকারী এসব প্রতিষ্ঠান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৈশ্বিক সর্বশেষ প্রযুক্তির সমন্বয়ে ক্রেতার রুচি অনুযায়ী সামনে আনছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের নতুন নতুন মডেল, যা বাজারে আসামাত্র লুফে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
যেভাবে দেখছে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো
দেশে ভারতের হিরো ও জাপানোর হোন্ডা ব্র্যান্ডের পরিবেশক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নিটল-নিলয় গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ নিউজবাংলাকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মোটরসাইকেলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ, চাহিদা ও ক্রয়ক্ষমতা সমান্তরাল বাড়ছে। এখন এটি মোটেও বিলাসপণ্য নয়। বরং দ্রুত সময়ে সবার গন্তব্যে পৌঁছানোর নিরাপদ ও অত্যাবশ্যকীয় বাহন।’
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের মূল বার্তা হচ্ছে: সরকার স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে চায়। সক্ষমতা বাড়াতে চায়। এ ক্ষেত্রে ২৫০ সিসি পর্যন্ত সুরক্ষা শুল্ক বা সম্পূরক শুল্কের উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় কোম্পানিগুলোও যাতে সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। আবার এ পদক্ষেপ নেয়ার আরেকটি সময়োপযোগী উদ্দেশ্য হলো, সারা বিশ্ব এখন অর্থনৈতিকভাবে খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমদানি যতটা সংকুচিত করা যাবে, বৈশ্বিক ঝুঁকি তত কম থাকবে। ফলে রিজার্ভও সুরক্ষিত থাকবে। এখানে পদক্ষেপ একটি, কিন্তু কাজ হয়েছে দুটি।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও দেশীয় ব্র্যান্ড ‘রানার’-এর উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪ অনুযায়ী সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে, উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কারখানায় কম্পোনেন্ট কাজে ব্যবহার ছাড়া দেশে ১৬৫ সিসির ঊর্ধ্বে কোনো মোটরসাইকেল আমদানি করা যাবে না। তবে শুধু পুলিশ বাহিনীর কাজে ব্যবহার প্রয়োজনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণসাপেক্ষে আমদানি করার সুযোগ রাখা হলেও বাকিদের জন্য তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
‘প্রস্তাবিত বাজেটে ২৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল আমদানিতে ২৫০ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন ফোর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ ও টু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্কারোপের হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি সেই অর্থে কিছু যায় আসে না। কারণ দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার বিষয়টি আমদানিনীতির মাধ্যমেই সুস্পষ্ট করা হয়েছে। রাজস্ব পদক্ষেপের আওতায় কম শুল্কেই উদ্যোক্তারা শিল্পের প্রয়োজনে আনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এখানে আমদানিকারকদের সঙ্গে দেশীয় শিল্পের কোনো সম্পর্ক নেই।
‘তবে এটা ঠিক, এখন পর্যন্ত দেশে মোটরসাইকেল শিল্পের যে অগ্রগতি সেটি সরকারের নীতি-সহায়তার ওপর ভর করেই হয়েছে। সামনে সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে যদি কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং বাংলাদেশে আরও বেশি হয়। এর জন্য স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদনের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। যত বেশি উৎপাদন স্থানীয়ভাবে করতে পারব, তত বেশি যন্ত্রাংশ স্থানীয় মার্কেট থেকেই কেনা সম্ভব হবে। তখন প্রতিযোগিতার বাজারে দামও কমে আসবে, যা আমাদের মোটরসাইকেলের বাজারে টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়াবে।’
দেশে ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসিআই মোটরসের অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার ও ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বাংলাদেশের হেড অফ মার্কেটিং হুসেইন মোহাম্মদ অপশন বলেন, ‘দেশে এখন ৮০, ১১০, ১২৫, ১৩৫, ১৫০, ১৫৫ ও ১৬০ সিসির গতিবেগসম্পন্ন মোটরসাইকেল বাজারজাত হচ্ছে। এই মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ হয় দীর্ঘমেয়াদি। অথচ কোনো নতুন মডেল কিংবা ভিন্ন ভিন্ন সিসির মোটরসাইকেল উৎপাদনে ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যান্টের প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে যে বিনিয়োগ করতে হয়, তা খুবই ব্যয়বহুল।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোম্পানিগুলোর সেই ব্যয়বহুল বিনিয়োগ সক্ষমতা এখন নেই। তবে সবাই চায় তাদের সক্ষমতাকে আরও ছাড়িয়ে যেতে। নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে। সেই চেষ্টাও হয়তো অনেকে করছে। তবে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা দেয়ার যে চেষ্টা হয়েছে, তা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। এখনই তার সুফল পাওয়া যাবে না, তবে ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত হচ্ছে।’
সামনে যত চ্যালেঞ্জ
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটরসাইকেল শিল্পের বর্তমানে চার চ্যালেঞ্জ আছে।
প্রথমত, মোটরসাইকেল শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের ৭০ শতাংশ এখনও আমদানিনির্ভর। বাকি ৩০ শতাংশ স্থানীয় জোগান আসে। তাই মোটরসাইকেল শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা সহযোগী শিল্প কিংবা ভেন্ডরের উন্নয়ন প্রয়োজন, যারা কারখানার জন্য বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করবে।
দ্বিতীয়ত, মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ব্যয় হ্রাস।
তৃতীয়ত, সহজ শর্তে ক্রেতাকে মোটরসাইকেল কেনায় ঋণ প্রদান।
চতুর্থত, মোটরসাইকেল চালনার প্রশিক্ষণের জন্য সহায়তা প্রদান।
বিদেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত আনা ও করপোরেট কর হ্রাসের সুবিধা পেতে শর্ত শিথিলসহ কিছু সংশোধনী এনে প্রস্তাবিত অর্থবিল পাস হচ্ছে।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাজেট বিষয়ে এসব সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন এবং পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হবে। সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২-২৩ প্রস্তাবিত অর্থবছরের বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য রাখবেন।
যেসব সংশোধনী আনা হচ্ছে, সেগুলো মূলত আয়কর, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং আমদানি শুল্কসংক্রান্ত। গত ৯ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী, তাতে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে বিভিন্ন খাতে করহার বৃদ্ধি, করারোপসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়।
এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট মহল কিছু ক্ষেত্রে এসব কর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং তা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবারের মতো এবারও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হচ্ছে।
অর্থবিল পাসের পরের দিন অর্থাৎ ৩০ জুন পাস হবে প্রস্তাবিত বাজেট, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
আগের দুই বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটে শেয়ারবাজারে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড উভয় ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানের চেয়ে করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়। তবে এই সুবিধা পেতে কঠিন শর্ত জুড়ে দেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, কোনো কোম্পানিকে এই সুবিধা পেতে হলে তাকে অব্যশই বছরে ১২ লাখ টাকার বেশি লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে করতে হবে। তা না হলে আগের রেটে কর পরিশোধ করতে হবে। কোম্পানি ছোট হোক বা বড়, সবার ক্ষেত্রে একই শর্ত প্রযোজ্য।
মূলত অর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সব লেনদেনকে ব্যাংকিং চ্যানেলের আওতায় নিয়ে আসার এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এ শর্তের বিরোধিতা করে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এর মাধ্যমে ‘ক্যাশলেস লেনদেন’ (নগদ মুদ্রাবিহীন লেনদেন) চালু করতে যাচ্ছে সরকার, যা বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে সম্ভব নয়। বাজেটের এ উদ্যোগ কার্যকর হলে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কঠিন হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এটি বাতিল হচ্ছে না। বরং ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে শর্ত শিথিল করে এখানে কিছুটা ছাড় দেয়া হচ্ছে। কোম্পানির লেনদেন ১২ লাখ টাকার পরিবর্তে ৩৬ লাখ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো কোম্পানি বছরে ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন ব্যাংকের বাইরে করতে পারবে। এর বেশি লেনদেন করতে হলে অব্যশই ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে।
যেসব কোম্পানি কম হারে করপোরেট কর দিতে চাইবে, তাদের অবশ্যই এই শর্ত মানতে হবে।
অস্থাবর সম্পত্তি আনতে চাইলে ৭ শতাংশ কর
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে নগদ টাকাসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আনার ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর দিয়ে বৈধ করার ঘোষণা দেয়া হয়।
বাজেট ঘোষণার পর দেশজুড়ে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে।
জানা যায়, সরকার তার অবস্থান থেকে সরেনি। তবে শর্ত কিছু শিথিল করে এ ক্ষেত্রে কিছুটা সংশোধনী আনা হচ্ছে।
বাজেটে বলা হয়, বিদেশে অবস্থিত কেউ যদি অস্থাবর সম্পত্তি বৈধ ঘোষণা করতে চান, তা হলে ১০ শতাংশ কর দিলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।
সূত্র জানায়, এখানে করের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে।
অন্য দুটি– নগদ টাকা এবং স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে শর্ত একই রাখা হচ্ছে।
কিছু পণ্যের কর প্রস্তাবে সংশোধনী
ব্যবসায়ীর দাবির মুখে ল্যাপটপ কম্পিউটার, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ কিছু পণ্যের করহার তুলে দেয়া হতে পারে।
বাজেট ঘোষণায় কম্পিউটার-ল্যাপটপ আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। সংশোধনীতে এই পণ্যটির ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার হতে পারে।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। স্থানীয় শিল্পের বিকাশের ধারা অব্যাহত রাখতে মোবাইল সেটের ওপর থেকে এই কর প্রত্যাহার হতে পারে।
কম্পিউটার প্রিন্টার আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলেও তা প্রত্যাহার হতে পারে।
আরও পড়ুন:আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।
৩০ জুনের মধ্যে পদত্যাগ করার কথা বলা হলেও এখন তা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ মঙ্গলবার এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করেছে।
এর আগে, ১২মে তারিখে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বা পর্ষদ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত সহায়ক কমিটি যথা- নির্বাহী কমিটি, অডিট কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত ব্যক্তি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে গঠিত ও পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বা ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদ বা গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, পরিচালক বা সদস্য হতে পারবেন না।
কেউ এরকম থাকলে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। একইসঙ্গে পদ শূন্যের পরে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে হবে।
এছাড়া কোনো ব্যক্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, মনোনীত, প্রতিনিধি বা স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ন্যূনতম এক বছর দায়িত্ব পালন করলে মেয়াদপূর্তি, অবসর বা অব্যাহতির পর আর ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত বা চুক্তিভিত্তিক পদে নিযুক্ত হতে পারবেন না।
এরকম কাউকে নিয়োগ দেয়া হলে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অব্যাহতি দিতে হবে। পদ শূন্যের পরে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে হবে।
তবে এই সিদ্ধান্ত কিছুটা ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগের এ নির্দেশনা পরিপালনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করা হয়। সার্বিক বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট পদ হতে পদত্যাগ বা অব্যাহতি গ্রহণের মাধ্যমে পদ শূন্য করার সময়সীমা ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া, আগে জারি করা প্রজ্ঞাপনের অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত থাকবে।
টাকার মান আরও কমেছে। এক দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে ৫০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা।
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে মঙ্গলবার এক ডলারের জন্য ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা খরচ করতে হয়েছে; সোমবার লেগেছিল ৯২ টাকা ৯৫ পয়সা।
এই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এখন টাকা-ডলারের বিনিময় হার ঠিক হয়ে থাকে। আজ (মঙ্গলবার) ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। দাম নির্ধারিত হয়েছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। এটাই আজকের আন্তব্যাংক দর।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ।
গত বছরের ৩০ জুন প্রতি ডলারের জন্য ৮৪ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এক মাস আগে ৩০ মে লেগেছিল ৮৯ টাকা।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে আমেরিকান ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও তা ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। এরপরও কিছুতেই বাগে আসছে না ডলারের তেজি ভাব।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, বাজারে তার চেয়ে ৩-৪ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করলেও ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় এনেছে ৯৬-৯৭ টাকায়, আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করেছে ৯৮ থেকে ৯৯ টাকা দামে। এর আগে মে মাসে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছিল। এখন ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রেই এ দাম ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। আগে ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলারের বিনিময় মূল্য উঠেছিল সর্বোচ্চ ৯৭ টাকা পর্যন্ত।
মঙ্গলবার খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ৯৭ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক মঙ্গলবার ৯৫ টাকা ৯৫ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯৬ টাকায়। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক ৯৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে।
গত বছরের আগস্ট থেকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে; দুর্বল হচ্ছে টাকা। তার আগে এক বছরেরও বেশি সময় ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ডলারের বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের মঙ্গলবার পর্যন্ত (১১ মাস ২৮ দিন, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ২৮ জুন পর্যন্ত) ৭৫০ কোটি (৭.৫০ বিলিয়ন) ডলারের মত বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।
করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারে নিচে নামার শঙ্কা
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০কোটি) ডলারের নিচে নেমে এসেছে। মঙ্গলবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তথন রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গত বছরের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৭৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্সের ১১ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ১১ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ১৯ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম।
তবে রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই ১১ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৭ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন:
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম রুটের অংশবিশেষ চালুর প্রস্তুতির মধ্যে দ্বিতীয় রুটের ঋণচুক্তি করে ফেলল সরকার।
মেট্রোরেল লাইন-৫ নামে এই রুটটি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে মিরপুর ও গুলশান হয়ে বাড্ডার ভাটারা পর্যন্ত বিস্তৃত। ২০৩০ সালের মধ্যে এই রুটটি চালু করার প্রাথমিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
১৯ দশমিক ৬ কিলোমিটারের এই লাইন করতে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা আপাতত দেবে ১৪০ কোটি ডলার। ডলারের সঙ্গে টাকার বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এটি বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী, এই ঋণের সুদহার ০.৭০ শতাংশ। কনসালট্যান্সি সার্ভিস ০.০১ শতাংশ। ১০ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
বুধবার বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বা ইআরডি ও জাপান দূতাবাসের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি হয়। চুক্তিটি হয় ভার্চুয়ালি।
ইআরডির বিদায়ী সিনিয়র সচিব (বর্তমানে অর্থসচিব) ফাতিমা ইয়াসমীন এবং বাংলাদেশে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি। জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এতে অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে সংস্থাটি মোট কত টাকা দেবে, সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
কোন পথে যাবে এই রেল
প্রথম লাইনটির পুরোটাই উড়াল রেলপথ করা হচ্ছে। তবে নতুন যে রুটটি করা হচ্ছে, সেটির অর্ধেক হবে উড়াল, অর্ধেক পাতালে।
আওতায় ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পথ মাটির নিচ দিয়ে এবং বাকি ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার উড়াল রেল নির্মাণ করা হবে।
এই রেল নির্মাণ হবে হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী হয়ে টেকনিক্যাল দিয়ে মিরপুর ১ হয়ে মিরপুর ১০ দিয়ে মিরপুর ১৪ ও কচুক্ষেত হয়ে বনানী ও গুলশান-২ হয়ে নতুন বাজার ও ভাটারা পর্যন্ত।
এই রুটে স্টেশন ধরা হয়েছে ১৪টি । এগুলো হলো: হেমায়েতপুর, বালিয়ারপুর, মধুমতি, আমিনবাজার, গাবতলী, দারুসসালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুন বাজার ও ভাটারা।
এর মধ্যে উড়াল পথ হবে হেমায়েতপুর থেকে আমিন বাজার এবং নতুন বাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত। আমিনবাজার থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত পুরোটা যাবে মাটির নিচ দিয়ে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২০৩০ সালে প্রতিদিন ৯ লাখ ২৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে বলে প্রাথমিকভাবে ধরা হয়েছে।
প্রতিটি একমুখী মেট্রো ট্রেন সাড়ে তিন মিনিট পরপর ছাড়বে। ট্রেনটির সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩০৮৮ জন।
প্রথম রুটও জাইকার টাকায়
মেট্রোরেলের প্রথম রুট এমআরটি-৬-এর কাজ চলছে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। এই রুটটিও জাপানি সহযোগিতা সংস্থার ঋণে হচ্ছে।
এই প্রকল্পে জাইকা থেকে ১৭ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়। অনুমোদিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
তবে প্রকল্প পরে মতিঝিল ছাড়িয়ে কমলাপুর পর্যন্ত করার পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া হবে ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
পুরো প্রকল্প ২০২৪ সালে সমাপ্ত হওয়ার কথা। তবে চলতি বছরই উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রুট চালু করে দেয়া হবে। আর এক বছর পর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু করার সিদ্ধান্ত আছে।
ঢাকায় মেট্রোর ৬টি রুট করার পরিকল্পনা
রাজধানীকে দুঃসহ যানজট থেকে মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ছয়টি মেট্রোরেলের রুট চালুর পরিকল্পনা আছে সরকারের।
রাজধানীর উত্তরা, মতিঝিল, শাহবাগ, কমলাপুর, পূর্বাচল, মিরপুর-১০ ও বনানীকে ছুঁয়ে যাওয়া মোট ৭১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেল নেটওয়ার্কটি যাতায়াতের সময় ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ কমবে বলে আশা করছে সরকার।
আরও পড়ুন:বন্ধ হওয়ার পাঁচ বছর পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে আবার বাজারে ফিরছে এমারেল্ড অয়েলের ধানের কুঁড়ার তেল ‘স্পন্দন’।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে স্পন্দন রাইস ব্র্যান অয়েলের নতুন করে মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাপানি বিনিয়োগে পরিচালিত মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শেরপুরের কারখানাটিতে উৎপাদন শুরু হয়। গত ছয় মাসে ৪৫ কোটি টাকার তেল বাজারজাত করা হয়েছে। এরই মধ্যে কোম্পানিটি না লাভ-না লোকসানে চলে এসেছে।
এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মিনোরি বাংলাদেশের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এমারেল্ড অয়েলের দুটি প্রোডাকশন ইউনিট আছে। এর একটির ধানের কুঁড়া ক্র্যাশ করার ক্ষমতা ১৮০ টন, অপরটির ক্ষমতা ১৫০ টন।
‘ইউনিট দুটির দৈনিক মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩৩০ টন। গ্যাসের অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে শুধু ১৮০ টনের ইউনিটটি সচল আছে। এই ইউনিটে ধানের কুঁড়া ক্র্যাশ করে ৩৫ টনের মতো অপরিশোধিত তেল পাওয়া যায়। এখান থেকে দৈনিক পরিশোধিত তেল পাওয়া যায় প্রায় ২৬ টন। এ সক্ষমতা নিয়ে আমরা প্রতিদিন প্রায় ২৬ টন তেল বাজারজাত করতে পারব।’
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৬ সালে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মিনোরি বাংলাদেশ কোম্পানিটির ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে মালিকানায় আসে।
উৎপাদন শুরুর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ব্রেক ইভেনে (আয় ও ব্যয় সমান) পর্যায়ে চলে এসেছেন তারা। তবে গ্যাসসংকটে পুরো উৎপাদনক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছেন না। সেটি করা গেলে শিগগিরই শেয়ারধারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবেন।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেসব বন্ধ কোম্পানিতে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করছে তার মধ্যে এমারেল্ড তৃতীয়, যেগুলো উৎপাদনে চলে এসেছে। এর আগে আলহাজ টেক্সটাইল ও রিংসাইন টেক্সটাইল উৎপাদন শুরু করে।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলও উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ফ্যামিলে টেক্স বন্ধ-এমন খবরে বোর্ড পুনর্গঠন করা হলেও নতুন বোর্ড গিয়ে দেখেছে উৎপাদন আসলে চলছে। আর যার তত্ত্বাবধায়কে উৎপাদন চলছে, তাকে দিয়েই কোম্পানিতে প্রাণ ফেরানোর পক্ষে তারা।
এমারেল্ডের আয়োজনে বিনিয়োগকারীদের মুনাফার আশ্বাস দেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মিনোরি বাংলাদেশের পরিচালক আফজাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো এটিকে একটি লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত করা এবং বছরের এবং বছরের শেষে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করা।’
দেশের ভোজ্যতেলের সংকট নিরসনে স্পন্দন ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন এমারেল্ড এমডি। সেই সঙ্গে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের দুটি বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রথমটি হলো গ্যাসের সংকট। দ্বিতীয়টি ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল। কোম্পানিটি যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিতাস গ্যাসের বকেয়া ছিল ৩২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২১ সালে তিতাস গ্যাস লাইন চার্জসহ এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা বকেয়া বিলের একটি স্টেটমেন্ট দেয়। এ টাকার পুরোটাই শোধ করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসইসি কমিশনার রুমানা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় একটি বন্ধ কোম্পানি পুনরায় চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি ভালো করছে, এবং কোম্পানির যে লক্ষ্য সেটি অর্জনের মধ্যে দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।’
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কমিশন থেকে আমাদের বলা হলো, কিছু করার জন্য। মিনোরির মামুন মিয়া এলেন। তখন আমরা বললাম, লেটস স্টার্ট।
‘এমডি বলে গেছেন, লভ্যাংশ দেবেন। আমরা আশা করি হবে। এই কোম্পানির কিছুই ছিল না। ২০২২ জানুয়ারি প্রডাকশন শুরু করে ৪৫ কোটি টাকার মতো তেল বাজারজাত করেছে। আমি মনে করি, বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর নিয়ে আসবে। স্পন্দন পুঁজিবাজারের স্পন্দন ফিরিয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করি।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এমারেল্ড দেশের বাজারের পাশাপাশি দেশের বাইরেও তেল পাঠাবে। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে বিএসইসি কর্মকর্তা বলেন, ‘রপ্তানি করলে আনকনভেনশনাল খাত থেকে কারেন্সি আসবে। যোগ্য ডিরেক্টর আছেন। শেয়ার হোল্ডার ডিরেক্টররাও পরিশ্রম করছেন। কোম্পানি সফল হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
ল্যাবএইড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল খাদ্য তত্ত্ববিদ নুসরাত জাহান দীপা, ল্যাবএইড হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিয়াক বিভাগের লোকমান হোসেন, এমারেল্ড অয়েলের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ও মিনোরি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মিয়া মামুনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এমারেল্ড অয়েল ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হয় এবং ২০১১ সালে স্পন্দন-ব্র্যান্ডেড রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন শুরু করে। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে।
২০১৬ সালে এমারেল্ড অয়েল ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা লাভ করে এবং শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। ওই বছরই কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
লোকসান এবং কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা না করার কারণে কোম্পানিটির শেয়ার ২০১৮ সাল থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরির অধীনে লেনদেন হচ্ছে।
আরও পড়ুন:ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদেরও ঋণ পরিশোধে আবার ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আদায়যোগ্য ঋণের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ শোধ করলে খেলাপি হবেন না কোনো গ্রাহক।
এ সুবিধা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে মঙ্গলবার এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক চিহ্নিত বন্যা কবলিত জেলায় কৃষি ঋণ ও সিএমএসএমই ক্ষেত্রেও এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি করা যাবে না। তবে গ্রাহক প্রকৃতপক্ষে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কিনা তা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিশ্চিত করতে হবে।
সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো সার্কুলারে আরও বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ শ্রেণীকরণে এর আগেও কিছু ছাড় দেয়া হয়। ২০২১ সালের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে ঋণের কিস্তির ন্যূনতম ২৫ শতাংশ শোধ করলে খেলাপি করা হয়নি।
সম্প্রতি নতুন করে করোনাভাইরাসের বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ বেশ কিছু জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি না করার সুবিধা দেয়া হয়েছে।
এর ফলে কোনো গ্রাহক চলতি বছরের জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর প্রান্তিকে কিস্তির ৫০ শতাংশ ত্রৈমাসিকের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করলে তিনি খেলাপি হবেন না।
সার্কুলারে বলা হয়, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদেরকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ সুবিধা দেবে। দেরিতে পরিশোধের কারণে কোনো গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না। আবার কোনো ধরনের অতিরিক্ত মাশুল, সুদ বা কমিশন আদায় করা যাবে না।
এই নির্দেশনা আনুযায়ী ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে একই নিয়মে শ্রেণীকরণের আওতাভুক্ত হবে।
আরও বলা হয়েছে, সার্কুলারের আওতায় সুবিধা পাওয়া ঋণে আরোপিত সুদ আয়খাতে স্থানান্তর করা যাবে।
প্রতি ত্রৈমাসিকের শেষ কর্মদিবসের এ নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণ হিসাবের যথানিয়মে শ্রেণিকরণ করে সিআইবি-তে রিপোর্ট করতে হবে।
এ নির্দেশনা শিগগির কার্যকর হবে।
মন্তব্য