ময়মনসিংহের ফুলাবাড়িয়া উপজেলা বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী হুম গুটি খেলা। ২৬২তম আসরের এই খেলায় বিজয়ী দল পুব্বা (পূর্ব এলাকার মানুষজন)।
বিকেলে উপজেলার ৪নং বালিয়ান ইউনিয়নের তেলীগ্রামের বরইআটার বিশাল এলাকাজুড়ে ধানখেতে এ খেলা হয়। ধানকাটা শেষে বিস্তীর্ণ এলাকা এখন ফাঁকা। সেখানে ১ মণ ওজনের একটি বল দখলের এই খেলায় অংশ নেয় ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। খেলা চলে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
প্রতি বছর পৌষসংক্রান্তির দিন জমিদার আমলের তালুক-পরগনার সীমানায় এই খেলা হয়। এ খেলার নেই কোনো আয়োজক, নেই পুরস্কার। তার পরও এই খেলা ঘিরে এলাকার মানুষের আবেগের অন্ত নেই। লক্ষ্মীপুর গ্রামে দিনভর বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
প্রতিবছর একই স্থানে পৌষের শেষ বিকেলে সমবেত হয় হাজার হাজার গুটি খেলোয়াড়। তাদের মুখে শোনা যায় ‘জিততই আবা দিয়া গুটি ধররে...হেইও’ স্লোগান।
স্থানীয় প্রবীণদের কাছ থেকে জানা গেছে, মুক্তাগাছার তৎকালীন জমিদার রাজা শশীকান্তের সঙ্গে ত্রিশাল বৈলরের হেমচন্দ্র রায় জমিদারের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিদার আমলের শুরু থেকেই তালুকের প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল ১০ শতাংশে, আর পরগনার প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ করা হতো সাড়ে ৬ শতাংশে।
কথিত আছে, একই জমিদারের ভূখণ্ডে দুই নীতির তীব্র প্রতিবাদ হয়। জমির পরিমাপ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসায় তেলীগ্রামের বড়ইআটা এলাকায়, তালুক-পরগনার সীমানায় এ গুটি খেলার আয়োজন করা হয়। শর্ত ছিল গুটিটি যে দিকে যাবে তা হবে তালুক, আর পরাজিত অংশ হবে পরগনা।
আজও তালুক-পরগনার জমির পরিমাপ একই ভাবে চলছে। ১ মণ ওজনের পিতলের গুটি ঢাক-ঢোলের তালে-তালে নেচে গেয়ে তালুক-পরগনার সীমানায় আনা হয়। এরপর শুরু হয় গুটি কারা দখলে নিয়ে সেই চেষ্টা।
এই খেলাকে ঘিরে লক্ষ্মীপুর, বড়ইআটা, ভাটিপাড়া বালাশ্বর, শুভরিয়া, কালীবাজাইল, চামারবাজাইল, তেলিগ্রাম, সারুটিয়া, গড়বাজাইল, বাসনা, দেওখোলা, কুকরাইল, বরুকা, আন্ধারিয়াপাড়া, দাসবাড়ী, কাতলাসেনসহ আশপাশের গ্রামে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পরে নতুন নতুন জামা কাপড়। শতাধিক গরু জবাই হয় গ্রামের বিভিন্ন স্থানে। গুটি খেলা এক নজর দেখার জন্য দূরান্তের আত্মীয়স্বজনরা বেড়াতে আসে। এসব গ্রামের মেয়েরা নায়র আসে তাদের বাবার বাড়ি।
খেলা শুরু হয় বিকেলে। কিন্তু সকাল থেকে পার্শ্ববর্তী মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ সদর, ত্রিশাল, ভালুকা উপজেলা থেকে শত শত মানুষ সমবেত হয়।
তালুক-পরগনার সীমানা লক্ষ্মীপুর গ্রামের বড়ইআটা নতুন ব্রিজ। সেখানে এক সময় জমিদারের প্রজারা শক্তি প্রদর্শনের এই খেলায় মেতেছিল। আজও তাই করা হয়।
হাজার হাজার খেলোয়াড় ১ মণ ওজনের গুটি টানাহেঁচড়া করে। একপর্যায়ে সেটি জনসমুদ্রে হারিয়ে যায়। গুটিটি আর চোখে পড়ে না। শুধু মানুষ আর মানুষের ভিড় দেখা যায়। এ কারণে খেলাটির নামকরণ হয়েছে হুম গুটি।
তেলীগ্রাম গ্রামের মামুনুর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, অন্তত ২৬২ বছর আগে থেকে চলে আসছে এই খেলা। এই খেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের সব গ্রামে উৎসব হয়।
তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থাইক্যাই আমি এই খেলা দেখে আসতাছি। আমার মনে অয়, এই খেলা আমরার আবেগের জায়গা। মজার ঘটনা, এত এত মানুষ আসে। কাড়াকাড়ি করে। কিন্তু এই নিয়ে মারামারি অয় না। বরং সব ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া শক্তিপরীক্ষায় অংশ লই। খুব মজা হয়।’
কুয়াকাটা সৈকতে মৃত ডলফিন ভেসে আসার পর এবার পটুয়াখালীর একটি জলাশয় পাওয়া গেল জীবিত ডলফিন।
কলাপাড়া উপজেলার জালালপুর গ্রামে আন্ধারমানিক নদী-সংলগ্ন জলাশয়ে বোটলনোজ প্রজাতির একটি জীবিত ডলফিনটি পাওয়া যায়। এটির দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও প্রস্থ দেড় ফুট।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিনটিকে বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন আন্ধারমারিক নদীর মোহনায় অবমুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কলাপাড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা।
এসময় ডলফিনটিকে এক নজর দেখতে জলাশয়ের দুপাড়ে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়।
মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা জানান, শেষ বিকেলে আন্ধারমানিক নদী থেকে ডলফিনটি ভাসতে ভাসতে ওই জলাশয়ে প্রবেশ করে। পরে খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক এবং ওয়ার্ল্ড ফিশ ইকোফিশ-২ এর সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতির পরামর্শ অনুযায়ী ডলফিনটিকে উদ্ধার করে নিবিড় পর্যক্ষণে রেখে খাবার দিয়ে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করা হয়।
এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রাণিকল্যাণ ও পরিবেশবাদী সংগঠন অ্যানিম্যাল লাভার্স অফ পটুয়াখালীর সদস্য ও মো. সুজন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিনটিকে অবমুক্ত করেন।
আল মুনজির বলেন, ‘জেলেদের জালে আটকে ডলফিনটি আহত হয়। আমাদের ধারণা, পরে পথভ্রষ্ট হয়ে এটি আন্ধারমানিক নদী হয়ে জলাশয়ে ঢুকে পড়ে।’
এর আগে কখনও দক্ষিণাঞ্চলে জীবিত ডলফিন ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে পুকুরের তলদেশের মাটি খননকালে কষ্টিপাথরের বিষ্ণু মূর্তি উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার উত্তর বেতকা গ্রামের সোহেল শেখের বাড়ির পুকুরের মাটি খননকালে ওই মূর্তিটি উদ্ধার করা হয়।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসলাম হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ইউএনও জানান, সকালে উত্তর বেতকা গ্রামের সোহেল শেখের একটি পুকুরের মাটি খনন করছিলেন শ্রমিকরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোবারক শেখ ও মিতুল হোসেন নামের দুই শ্রমিক মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে মূর্তিটি দেখতে পান। পরে তারা বেতকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান শিকদার রিগ্যানকে বিষয়টি জানান। এরপর ওই জনপ্রতিনিধি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইউএনওকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে মূর্তিটি উদ্ধার করেন।
মূর্তিটি উচ্চতায় ৩৭ ইঞ্চি ও প্রস্তে ১৭ ইঞ্চি। এটি রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগারে পাঠানো হবে বলে জানান ইউএনও আসলাম হোসাইন।
আম গাছে মুকুল আসে, সেই মুকুল থেকেই হয় আম। তবে ফরিদপুরের একটি আম বাগানে দেখা মিলেছে ভিন্ন চিত্র। আম গাছের ডালে নয় বরং গাছের আমের বোঁটার গোড়া থেকে বের হয়েছে অসংখ্য আমের মুকুল। আর সেই মুকুল থেকে এরইমধ্যে ধরেছে আমের গুটি।
এমন বিস্ময়কর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ফরিদপুরের ধলার মোড়ের কাছে একটি আম বাগানে। আর এ খবর জানতে পেরে তা দেখতে ছুটে আসছেন অনেকে।
পদ্মার পারে চরের খাঁ খাঁ বিরান জমিতে সবুজের দেখা পাওয়া ভার। চোখ মেললে চারদিকে শুধু ধু ধু বালির চর। এমনই এক পরিবেশে চার বছর আগে স্থানীয় যুবক দুলাল হোসেন রুবেল তার খামার বাড়িতে শখের বসে গড়ে তোলেন ফলজ বাগান। প্রায় শতাধিক আম গাছের সঙ্গে এখানে তিনি আরও বেশ কিছু ফলের চারা রোপন করেন। এরইমধ্যে তার এই আমবাগানের গাছগুলো বড় হয়ে ফলবতী হয়ে উঠেছে। এবার তার আমবাগানে ধরেছে প্রচুর আম। তবে সব আমের ভিড়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে আমেরিকান রেড পালমার জাতের একটি আম গাছ। এই গাছের একটি আম বড় হওয়ার পরে সেই আমের বোটার মুখ থেকে নতুন করে বের হয়েছে আবার নতুন মুকুল।
বাগানের মালিক দুলাল হোসেন রুবেল বলেন, ‘আমের বোঁটার মুখে আবার নতুন করে মুকুল আসতে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি। আল্লাহ চাইলে সবই পারেন, এটি দেখে তাই প্রমাণ হলো আবার। এটি আমার কাছে আল্লাহর একটি নিদর্শন মনে হয়েছে।’
রুবেল বলেন, ‘চার বছর আগে রেড পালমার জাতের এই আম গাছটি আমি বৃক্ষমেলা থেকে কিনি। পরের বছরই ফল আসে। আর এবার এলো আম থেকে আসা এই অবাক করা আমের মুকুল।’
তিনি বলেন, ‘ধলার মোড়ের এই এলাকায় আগে আশেপাশে কোনো সবুজ ছিল না। এই জায়গটি ছিল ২০ ফুট গভীর। চার বছর লেগেছে আমার এই বাগানটি দাঁড় করাতে। এখন বাগানটি সবুজে ভরে গেছে। আমাদের এই ধলার মোড়ে আমার এই বাগানটি ছাড়া আশপাশে আর কোনো সবুজ চোখে পড়ে না।’
মূলতঃ পরিবেশের কথা বিবেচনা করেই ৬৯ শতাংশ জমির ওপর এই খামার বাড়ি গড়ে তোলেন বলে জানান রুবেল। বলেন, ‘সেখানে আম, কলা, লিচু, চালতা, সফেদাসহ নানা ফলমূলের গাছ লাগিয়েছি। এখানে রেড পালমার ছাড়াও মিয়াজাকি, বানানা ম্যাঙ্গো, দেশীয় হাড়িভাঙা, বারি ফোরসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৯০টি আম গাছ রয়েছে।
‘সামনের অংশে এবার ড্রাগন ফলের চাষ করছি। এছাড়া কবুতর ও খরগোশ পালছি। আগে কিছু গাড়ল ছিল, সেগুলো এখন চরে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
রুবেলের স্ত্রী সৈয়দা সানজিদা মিশু বলেন, ‘আমের বোঁটা থেকে এভাবে আবার আমের মুকুল ধরতে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি। মুকুল থেকে আবার নতুন করে আমের গুটিও এসেছে। এখন দেখার পালা, এই আমের গুটি কত বড় হতে পারে। যদি সেগুলো পরিপূর্ণ আম হয়ে উঠে তাহলে সেটি হবে আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার।’
জহুরুল আলম শোভন নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘আমি এই আমের ওপর মুকুল ধরার খবর জেনে দেখতে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, আমি একটি বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলাম।’
সৈয়দ মোস্তফা আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বয়স ৭৬ বছর। আমার এই দীর্ঘজীবনে আমি ফলের গায়ে এভাবে মুকুল চোখে দেখিনি বা শুনিনি। গতকাল সন্ধ্যায় আমি খবরটি শুনতে পেয়ে নিজ চোখে দেখার জন্য এসেছি। আমের বোঁটার উপরে মুকুল ধরেছে, আবার সেই মুকুল থেকে ছোট ছোট আমের গুটি বের হচ্ছে। এটি আল্লাহরই একটা নেয়ামত।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দেব নারায়ণ রায় বলেন, ‘উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলা হয় এমব্রায়োজেনোসিস (embryogenesis), যাকে বাংলায় বলা হয় বহুভ্রুনিতা। এটি একটি ভ্রূণজনিত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভ্রূণের গঠন ও বিকাশ হয়। অনেকসময় অতিরিক্ত ফলনের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় হরমোন প্রয়োগ করা হলে এমনটি ঘটে থাকে।’
কামাল হোসেন এবং লাভলী আকতার দম্পতির বাড়িতে লাউয়ের গাছে হঠাৎ করেই একটি গিঁট (গাছের শাখার সংযোগস্থল) থেকে অসংখ্য লাউয়ের ফুল বের হতে থাকে। সেই ফুল থেকে এক এক করে ধরেছে ৩৫টি লাউ। এ খবর পেয়ে অনেকেই এসে তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন লাউ দেখতে।
জনপ্রিয় কিছু সবজির মধ্যে অন্যতম হলো লাউ। এ সবজি বেশ সহজলভ্য। পুষ্টিগুণে ভরা লাউ উপাদেয় খাবার। লাউ সাধারণত একটি ডগায় একটি হয়ে থাকে। তাই এক ডাগায় ৩৫টি লাউ ধরা কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক বিষয়।
ব্যতিক্রমী এ ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের জোতনছর গ্রামে।
ওই দম্পতি জানান, তারা দুই মাস পূর্বে দেশি লাউগাছের বীজ এনে লাগিয়েছিলেন। বীজ থেকে চারটি গাছ বড় হয়ে মাচায় ওঠে। তিনটি গাছ স্বাভাবিক থাকলেও একটি গাছে হঠাৎ করেই একটি গিঁট থেকে অসংখ্য ফুল বের হতে থাকে। সেই ফুল থেকে ওই ডগায় ৩৫টি লাউ ধরেছে। লাউগুলো আস্তে আস্তে বড়ও হচ্ছে।
প্রতিবেশী বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘এক ডগায় ৩৫টি লাউ গুনে দেখেছি। এর আগে এমন দৃশ্য দেখিনি। গ্রামের উৎসুক অনেকেই লাউগাছটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানান, এক ডগায় অসংখ্য লাউ ধরা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। বিভিন্ন কারণে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, তবে গাছটি না দেখে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। শুক্রবার দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। দেশের নাগরিকদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি।
দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরুতে নাগরিকদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করতে অনেক কোম্পানি বিনামূল্যে খাবার থেকে শুরু করে ফ্রিতে ট্যাক্সি পর্যন্ত অফার করেছে।
প্রতিবারই কম ভোটার উপস্থিতির জন্য খবরের শিরোনাম হয় কর্ণাটক রাজ্যের শহর বেঙ্গালুরু। তাই ভোটারদের ভোটের মাঠে আকৃষ্ট করতে এবার রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি কোমর বেঁধে নেমেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। ভোট দেয়ার পুরস্কার হিসেবে সেখানে হোটেল, ট্যাক্সি পরিষেবা এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রণোদনা দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসব সুবিধার মধ্যে ফ্রি বিয়ার, বিনামূল্যে ট্যাক্সি রাইড এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো সুবিধাকে উল্লেখযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে বিবিসি।
এছাড়া আঙুলে ভোটের কালি দেখাতে পারলে অনেক হোটেল ক্রেতাদের বিনামূল্যে খাবার খাওয়াবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে।
বুধবার নির্বাচনি আইন লঙ্ঘন না করার শর্তে স্থানীয় হোটেল মালিক সমিতিকে ফ্রিতে বা বিশেষ ছাড়ে খাবার বিক্রির অনুমতি দিয়েছে রাজ্যের উচ্চ আদালত।
এ বিষয়ে ব্যাঙ্গালুরুর হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি পিসি রাও ডেইলি মিররকে বলেন, ‘ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে হোটেলগুলো বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছে। কেউ কেউ বিনামূল্যে কফি, ডোসা দেবে। আবার কেউ কেউ গরমে ভোটারদের জুস খাওয়াবে। কিছু হোটেল তো খাবারের ওপর বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে।’
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কর্ণাটক রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে দক্ষিণ ব্যাঙ্গালুরুতে। সেবার ওই নির্বাচনি এলাকার মোট ভোটারদের ৫৩.৭ শতাংশ নাগরিক ভোট দিয়েছিলেন।
ব্যাঙ্গালুরুর জনপ্রিয় পার্ক ‘ওয়ান্ডারলা’ ভোটারদের জন্য টিকিটে বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে। অন্যদিকে ভোট দিয়ে আসা প্রথম পঞ্চাশ জন ক্রেতাকে বিনামূল্যে বিয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘ডেক অফ ব্রুস’ নামের একটি পানশালা।
স্থানীয় রাইড শেয়ার অ্যাপ ‘ব্লু-স্মার্ট’ ভোটকেন্দ্রের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ভোটারদের রাইডে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। এছাড়া ‘র্যাপিডো’ নামের ট্যাক্সি শেয়ারিং কোম্পানি ভোটারদের বিনামূল্যে রাইড দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মিস্টার ফিলি’স নামের একটি ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ প্রথম ১০০ জন ভোটারকে বার্গার ও মিল্কশেকের ওপর ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘এটি আসলে নাগরিকদের ভোটের গুরুত্ব বোঝানো এবং আমাদের গণতন্ত্র উদযাপনের উপায়।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি, এই উদ্যোগটি ব্যাঙ্গালুরুর নাগরিকদের মধ্যে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও পরিবর্তন আনতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।’
উল্লেখ্য, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ২১টি রাজ্যের ১০২টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রথম দফা নির্বাচনে সব রাজ্যে গড়ে প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশের বেশি ভোটারের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় দেশটির ১৩ রাজ্যের ৮৯টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, কেরালা, আসাম, বিহার, মণিপুর, রাজস্থান, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং জম্মু-কাশ্মীরে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হবে।
এবার ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে সাত ধাপে, চলবে প্রায় দুই মাস ধরে। ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হবে আগামী ১ জুন এবং ৪ জুন ভোটের ফল ঘোষণা হবে।
ময়মনসিংহে মসজিদ বানিয়েছেন স্থানীয় ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়। নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চর কালীবাড়ী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে সরকারি জমিতে তারা টিনশেডের এই মসজিদ গড়ে তুলেছেন।
মসজিদটির নাম দক্ষিণ চর কালীবাড়ী আশ্রয়ণ জামে মসজিদ। চলতি মাসে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। মসজিদটির জন্য বেশ কয়েকজন স্থানীয় ট্রান্সজেন্ডার নিজেদের সময়, শ্রম ও অর্থ দিয়েছেন।
সম্প্রদায়ের নেতা ২৮ বছর বয়সী জয়িতা তনু বলেন, ‘এখন থেকে কেউ ট্রান্সজেন্ডারদের মসজিদে নামাজ পড়ায় বাধা দিতে পারবে না। কেউ আমাদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে পারবে না।’
সোনিয়া নামের ৪২ বছর বয়সী আরেকজন বলেন, ‘জীবনে আবার মসজিদে নামাজ পড়তে পারব, সেটি স্বপ্নেও ভাবিনি।’
সোনিয়া ছোটবেলায় কুরআন তেলাওয়াত করতে পছন্দ করতেন এবং ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মক্তবেও যেতেন, কিন্তু সবাই যখন বুঝতে পারেন যে তিনি ট্রান্সজেন্ডার, তখন থেকে তাকে আর মসজিদে ঢুকতে দেয়া হতো না।
সোনিয়া বলেন, ‘মানুষ আমাদের বলত, তোমরা ট্রান্সজেন্ডাররা কেন মসজিদে আসো? তোমাদের ঘরেই নামাজ পড়া উচিত, মসজিদে এসো না।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জন্য ছিল খুবই লজ্জার। তাই আমরা আর মসজিদে যেতাম না।
‘এখন এটি আমাদের মসজিদ। আর কেউ কিছু বলতে পারবে না।’
স্থানীয় ট্রান্সজেন্ডার কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘দেশে এমন মসজিদ এই প্রথম। আগেও একটি শহরে মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তবে স্থানীয়দের প্রতিবাদে তা আর হয়ে ওঠেনি।’
এ ছাড়াও ট্রান্সজেন্ডারদের উদ্যোগে একটি কবরস্থানও তৈরি করা হয়েছে।
মসজিদটির ইমাম আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘অন্য মানুষের মতো তারাও আল্লাহর সৃষ্টি। কারও সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ ধর্মে নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মানুষ। কেউ পুরুষ, কেউ নারী, কিন্তু সবাই মানুষ। কুরআন আল্লাহ সবার জন্যই নাজিল করেছেন। তাই প্রত্যেকেরই প্রার্থনা করার অধিকার রয়েছে। কেউ কাউকে অস্বীকার করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডারদের এই বিশ্বাস অন্যদের জন্য শিক্ষনীয় হতে পারে। আমি যতদিন হলো এ মসজিদে আছি, তাদের চরিত্র ও কর্ম দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’
মসজিদটিতে ট্রান্সজেন্ডারদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেকেই নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।
তোফাজ্জল হোসেন নামের ৫৩ বছর বয়সী এক মুসল্লি জানান, ট্রান্সজেন্ডারদের সম্পর্কে তার ভ্রান্ত ধারণা ছিল। তাদের সঙ্গে ওঠা-বসার মাধ্যমে সেটি দূর হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে তারা যখন আমাদের সঙ্গে থাকতে শুরু করলেন, তখন অনেকে অনেক কথাই বলতেন। কিন্তু আমরা পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে, মানুষ যা বলছে তা সঠিক নয়। তারাও অন্য মুসলমানের মতো সৎ জীবনযাপন করেন।’
ভবিষ্যতে এ মসজিদটি আরও বড় করতে চান তনু, যাতে করে আরও বেশি মানুষ নামাজ পড়তে পারেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য