বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ওয়ারফেজ ৪০ বছরে পা দিয়েছে ৬ জুন।
বেশ কিছু অ্যালবাম, পুরস্কার, অসাধারণ ও হিট গানের সঙ্গে বাংলাদেশের সংগীত জগতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে ব্যান্ডটি। তা ছাড়া গানের কথা ও সুরের মধ্য দিয়ে কয়েক প্রজন্ম ধরে সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে তারা।
গত সপ্তাহে কোক স্টুডিও বাংলায় নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ হয়েছে ওয়ারফেজের বিখ্যাত গান ‘অবাক ভালোবাসা’। গানটি নতুন করে প্রমাণ করল কিছু গান, কিছু সুর কখনও পুরোনো হয় না। কয়েক প্রজন্ম পরও এসব গান আবার নতুন করে ফিরে আসে।
গানটির নতুন সংস্করণ ইউটিউবে ৭০ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। এমন সময়ে এর আদি সংস্করণের কথাও আমাদের মনে পড়ে যায়।
আজ থেকে ৩০ বছর আগে ‘অবাক ভালোবাসা’ নামের অ্যালবামে মুক্তি পায় এ গান। অ্যালবামটি তো হিট হয়েছিলই, সেই সঙ্গে অবাক ভালোবাসা গানটিও।
বেশ কিছু চমৎকার উপাদান এতে যুক্ত করা হয়েছিল। শুরুতেই কয়েক মিনিটের সেই গিটার সলো, পাথরে ধাক্কা খাওয়া ঢেউয়ের শব্দ, আকাশে উড়তে থাকা গাঙচিলের ডাক, আর তারপর অসাধারণ কথা ও সুরের সমন্বয়। তখনকার তরুণরা গানটিকে লুফে নিয়েছিল।
প্রায় তিন দশক পর প্রকাশিত অবাক ভালোবাসা গানের নতুন সংস্করণটি বর্তমান সময়ের তরুণদের ভালোবাসা পাচ্ছে। গানটিতে অংশ নিয়েছেন ওয়ারফেজের বর্তমান সদস্যরা শেখ মনিরুল আলম টিপু, ইব্রাহিম আহমেদ কমল (লিড গিটার), পলাশ নূর (ভোকাল), সামির হাফিজ (লিড গিটার), নাইম হক রজার (বেইজ গিটার) ও শামস মনসুর গণি (কিবোর্ড)। এতে পারফর্ম করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এসেছিলেন ব্যান্ডটির সাবেক ভোকাল ও এই গানের স্রষ্টা বাবনা করিম। আরও ছিলেন একঝাঁক শিল্পী, যারা গানের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন ও ভোকালাইজ করেছেন।
টিপু বলেন, ‘গত নভেম্বরে অর্ণব কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় সিজনের ব্যাপারে আমার সাথে যোগাযোগ করে। তারা একটা এপিসোডে ওয়ারফেজকে ফিচার করতে চাইছিল। বিভিন্ন শর্ত, নানা বিষয়ে একমত হওয়ার পরে আমরা এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করলাম।’
টিপু জানান, তারা প্রথমে তাদের অন্য একটি হিট গান ‘একটি ছেলে’ নতুনভাবে করতে চাইছিলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের বর্তমান ভোকাল পলাশ এই গানটা চমৎকার গায়। আমরা সবাই ভাবছিলাম এই গানটা দারুণ হবে, কিন্তু কোক স্টুডিও টিমের পছন্দ ছিল ‘অবাক ভালোবাসা’। অনেক চিন্তাভাবনার পর আমরা কোকের সিদ্ধান্তই মেনে নিলাম। সাথে সাথেই আমরা গানটি যার লেখা ও সুর করা, সেই বাবনা করিমের সাথে যোগাযোগ করলাম।”
টিপুর মতে, পুরো ব্যাপারটাই ছিল একটি দলীয় প্রচেষ্টা। নতুন সংস্করণটির প্রযোজনায় অর্ণব আর সামিরের সঙ্গে তিনি নিজেও কাজ করেছেন।
অবাক ভালোবাসা গানের ভিজ্যুয়াল পরিচালনায় ছিলেন ডোপ প্রোডাকশনের কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। এর সেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয় অন্তত ৩০০ কেজি বালি।
আর্ট ডিরেক্টর শিহাব নূর এবং কস্টিউম ডিজাইনার নিশাত দিশার সঙ্গে মিলে কৃষ্ণেন্দু আর তার টিম একটি চমৎকার ডিজাইন তৈরি করেছেন। এখানে ছিল কক্সবাজারের সমুদ্র, ‘অ্যাঞ্জেল ড্রপ’ নামের একটি ক্যাফে এবং নীলচে আভার সন্ধ্যাবেলা।
বেড়ে ওঠার সময়ে গানটি কৃষ্ণেন্দুর ভীষণ প্রিয় ছিল। তিনি বলেন, ‘অবাক ভালোবাসা শুনে আমার সবসময়ই শান্ত সমুদ্র আর রাতের তারাভরা আকাশের কথা মনে পড়ে। সেই কারণে ভিজ্যুয়ালের ক্ষেত্রে আমরা নীল আর সাদা টোন নিয়ে কাজ করেছি।’
পরিচালক আরও জানান, লাইভ শ্যুট করা সবসময়ই বেশ ঝামেলার। সেটে কাজ করার সময় প্রযুক্তিগত নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে অডিও ও ভিডিও দুটি টিম মিলে একটি টিম হয়েই কাজ করেছিল।
অবাক ভালোবাসা গানের গীতিকার ও সুরকার বাবনা করিম জানান, গানটি মুক্তি পাওয়ার বছর দুয়েক আগে ১৯৯২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনি গানটি লিখেছিলেন। তার ভাষায়, ‘আমার মাথায় প্রথমে সুরটা এসেছিল। গানের কথা এসেছে আরও পরে।’
১৯৯৪ সালে ‘অবাক ভালোবাসা’ নামের অ্যালবামটি মুক্তি পাওয়ার পর ব্যান্ডটি ‘কোকা-কোলা ব্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’-এর খোঁজ পায়।
প্রতিযোগিতায় এই গান জমা দেয়ার জন্য খুবই আগ্রহী ছিল ব্যান্ডটি, কিন্তু তাদের সাড়ে তিন হাজার টাকার মতো ঘাটতি ছিল।
এ নিয়ে টিপু বলেন, ‘প্রতিযোগিতার বিচারকরা আমাদের কাছে পাঁচটি ক্রোম ক্যাসেটে গানটির রেকর্ড, গানের কথা এবং গঠন (কনস্ট্রাক্ট) চেয়েছিলেন। বাবনা বা আমার কারও কাছেই ওই টাকা ছিল না। তাই আমি রেইনবোর কবির ভাইয়ের কাছে গেলাম। তিনি সাথে সাথেই আমাকে টাকাটা দিলেন এবং নিজেই ক্রোম ক্যাসেটগুলোও রেকর্ড করে দিলেন।’
অনুমিতভাবেই প্রতিযোগিতায় তারা প্রথম স্থান লাভ করে ৫০ হাজার টাকা জিতে নেন। এর ফলে নিঃসন্দেহে ব্যান্ডটি এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছে; সংগীত জগতে তাদের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে।
এখন তিন দশক পরে এসে ভাগ্যই যেন ওয়ারফেজ আর কোকা-কোলাকে আবার এক মঞ্চে নিয়ে এলো। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় সিজনে যুক্ত হলো জনপ্রিয় ব্যান্ডটি।
কোক স্টুডিও বাংলার নতুন সংস্করণের প্রযোজনা ও সেট নিয়ে বাবনা করিম বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে আমার চমৎকার লেগেছে। আর দুটো ভিন্ন স্কেলকেও বেশ ভালোভাবেই মেলানো হয়েছে।’
আদি সংস্করণ ও নতুন সংস্করণের উল্লেখযোগ্য পার্থক্যটির দিকে নির্দেশ করে বাবনা বলেন, ‘এটা করার কারণ হলো পলাশ আর আমি দুই ধরনের স্কেলে গান করি।’
বাবনা করিম যে স্কেলের পরিবর্তনের কথা বলছেন, তা হলো সেটে নতুন সংস্করণটি লাইভ গাওয়ার সময় ই মাইনর থেকে সি মাইনরে চলে যাওয়া। অনেক সময় পারফরম্যান্সকে আরও শৈল্পিক করে তোলার জন্য একাধিক স্কেল ব্যবহার করা হয়। এ রকম ক্ষেত্রে গানের গতিতেও আসে পরিবর্তন।
দুই বা ততধিক ভোকাল একই গান গাওয়ার সময়ও স্কেলের এই পরিবর্তন দেখা যায়। অবাক ভালোবাসার ক্ষেত্রে এ কারণেই পরিবর্তনটি করা হয়।
পলাশ বলেন, ‘এই গানে আমরা সি মাইনর থেকে ই মাইনরে গিয়েছি। অর্থাৎ মোট চারবার স্কেল পাল্টেছে!’ দুজন ভোকালিস্টের স্বাচ্ছন্দ্যময় পারফর্মের সুবিধার্থে এটা করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘ঠিক কীভাবে এই ট্রানজিশনটা আনা হবে, সে ব্যাপারে ওয়ারফেজ আর অর্ণবের মাঝে দীর্ঘ আলোচনা হয়। একসময় একটা পয়েন্ট ঠিক করা হয়, যেখানে ভোকাল আর বাদ্যযন্ত্রের এই ট্রানজিশনটা সুন্দরভাবে হয়। সেদিন আমি নতুন কিছু জিনিস শিখতে পেরেছিলাম!’
নব্বই দশকের সংগীতপ্রেমী আর ওয়ারফেজের ভক্তদের স্মৃতিকাতর করে তুলেছে গানটির এ নতুন সংস্করণ, তবে নতুন আইডিয়া ও কয়্যার, বাঁশি ও পারকাশনসহ নতুন একটি সেটআপে গানটি করতে রাজি হওয়ার সাহস দেখানোর জন্য ওয়ারফেজকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।
এ থেকে স্পষ্ট যে, সংগীতের বিবর্তন কখনও থেমে থাকে না এবং কিংবদন্তি ব্যান্ড ওয়ারফেজের অবাক ভালোবাসা সব মিলিয়ে ছিল অসাধারণ।
কয়েক প্রজন্ম ধরে অবাক ভালোবাসা শ্রোতাদের খুব প্রিয় একটি গান। এটি ভালোবাসা আর সুরের শক্তিতে অনেক মানুষকে কাছে এনেছে।
এখন সময় তরুণ শিল্পীদের এগিয়ে আসার, নতুন কিছু করার। সেটা তখনই সম্ভব হবে, যখন কিংবদন্তি শিল্পীরা নতুন ধরনের জিনিসগুলো গ্রহণ করার মানসিকতা দেখান, তাদের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দেন।
লেখক: সংগীতশিল্পী
আরও পড়ুন:‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই, যার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শনিবার তার মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহ থেকেই এ শিল্পী হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই স্নায়ু এবং নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, প্রতুলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত তাকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শিল্পীর ফুসফুসেও সংক্রমণ দেখা দেয়। দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
প্রতুলের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান হলো ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথী রে’। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার গানের গুণমুগ্ধ ছিলেন। মমতার তত্ত্বাবধানেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। শৈশব থেকেই গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়ার ঝোঁক ছিল তার।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে পাদপ্রদীপের আলোয় আনে তার গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এ ছাড়া সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন তিনি।
তার মতে, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কেবল তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। সেই একক সাধনা তখন সকলের হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ স্মরণে বর্ণাঢ্য এক লাইভ কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে।
দেশীয় ব্যান্ডগুলো গানে গানে শ্রদ্ধা জানাবে সংগীতশিল্পীকে।
‘শাফিন আহমেদ: ইকোস অব আ লিজেন্ড’ শিরোনামের কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও লিঙ্ক রোডের আলোকিতে। সেখানে শাফিনের গাওয়া কালজয়ী গানগুলো শোনাবে তার সাবেক ব্যান্ড মাইলসের সদস্যরা।
এ ছাড়াও কনসার্টে পারফর্ম করবে দেশের প্রথম সারির ব্যান্ড ফিডব্যাক, দলছুট, আর্টসেল ও অ্যাভয়েড রাফা ও শাফিন আহমেদের ছেলে য়াজরাফ অজি।
গানের পাশাপাশি এ আয়োজনে আরও থাকছে শাফিন আহমেদের ঘটনাবহুল জীবন ও সংগীত ক্যারিয়ার নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী। এ ট্রিবিউট কনসার্টের আয়োজন করেছে ভেলভেট ইভেন্টস।
আয়োজকরা জানান, শুরুতে শাফিন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে ১৪ ফেব্রুয়ারি কনসার্টের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পবিত্র শবে বরাতের কারণে তা এক দিন এগিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাত ৯টায় শুরু হবে কনসার্ট। সন্ধ্যা ছয়টায় দর্শকের জন্য খুলে দেওয়া হবে ভেন্যুর দরজা।
এ কনসার্ট আয়োজন চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। দর্শক টিকিট কেটে আয়োজনটি উপভোগ করতে পারবেন।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বেশ কয়েকটি কনসার্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন শাফিন আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে দ্বিতীয় কনসার্টের দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর সেখান থেকে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।
দুই দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ২৪ জুলাই মারা যান শিল্পী কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের সন্তান শাফিন আহমেদ।
আরও পড়ুন:রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে শুক্রবার ‘আমাদের সাবিনা ইয়াসমিন: আমি আছি থাকব’ অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে মঞ্চে অুসুস্থ হয়ে পড়েন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানটির এক বছরের বিরতির পরে মঞ্চ পবিরেবশনায় ফিরে এসেছিলেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সংগীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার বলেন,‘কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী তার পরিবেশনা চলাকালে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন এবং মঞ্চেই পড়ে যান। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ইউনাইটেড হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এই মুহূর্তে তার চিকিৎসা চলছে। তবে তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।’
দিঠি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে দুই-এক দিনের মধ্যেই বাসায় ফিরবেন জনপ্রিয় এ গায়িকা।
গতকালের অনুষ্ঠানটিতে কিংবদন্তি গায়িকা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মঞ্চে ফিরে এসেছিলেন। কারণ তিনি সিঙ্গাপুরে তার নিয়মিত চিকিৎসার কারণে এক বছর ধরে এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি।
দৈনিক প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ শিল্পী জানান, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এরপর চার মাসে ৩০ সেশন রেডিওথেরাপি দিতে হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ২০২৩ সালের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে বেশ কয়েকটি স্টেজ শো করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। এরপর তাকে আর মঞ্চে পারফর্ম করার জন্য পাওয়া যায়নি।
আয়োজকরা জানান, শনিবারও একই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার কথা ছিল সাবিনার। এরপর চট্টগ্রামে আরেকটি শোতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার।
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের শীতার্ত মানুষের মধ্যে শনিবার প্রায় দুই হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে চালিতাডাংগা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে উপস্থিত হয়ে শীতার্তদের হাতে কম্বল তুলে দেন এলাকার সন্তান বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা বলেন, ‘একজন মানুষের জন্য একটি কম্বল সাধারণ ব্যাপার। তাদের জন্য এ শীতে কষ্ট লাগবের জন্য আরও কিছু করতে পারলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। সারা দেশের মতো সিরাজগঞ্জে শীতের শুরুতে যমুনা নদীর পাড়ের অবস্থিত গ্রামগুলো শীতে কাঁপছে। এ কারণে বেড়েছে গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগ।
‘এলাকার গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষ শীতের তীব্রতায় কষ্ট পাচ্ছেন। তাই তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। একজন মানুষ হয়ে আর একজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সকলের নৈতিক দায়িত্ব।’
ওই সময় সমাজের সব বিত্তবান মানুষকে অসহায় শীতার্ত নারী-পুরুষদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
কম্বল পাওয়া মহেলা বেওয়া বলেন, ‘তীব্র শীত ও কনকনে ঠান্ডায় যখন কাহিল আমরা, এই সময়ে কম্বল আমাগো খুব উপকার করল। এই শীতে কম্বল গায়ে দিয়ে একটু আরামে ঘুমাতে পারব।
‘শীতে কম্বল দিয়ে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করছে আমাগো গ্রামের মেয়ে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা।’
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন কাজিপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদুল রহমান বাবলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাল মিয়া, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম খোকন, ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ইমরুল কায়েস (সবুর), লক্ষ্মীপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী কামরুল হাসান তরু, তার মেয়ে কামরুন্নাহার তনুসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:একুশে পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাপিয়া সারোয়ারের স্বামী সারওয়ার আলম।
তিনি জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে শিল্পীর দাফন সম্পন্ন হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন পাপিয়া। গত মাসে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন গুণী এ শিল্পী, যার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্বামী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
পাপিয়া সারোয়ার ১৯৫২ সালের ২১ নভেম্বর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রসংগীত অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন।
বেতার ও টিভিতে ১৯৬৭ সাল থেকে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন পাপিয়া। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।
১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে ভারতে যান।
দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা পেয়েছেন পাপিয়া সারোয়ার। তার ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ও গায়কীর প্রশংসা ছিল সংগীতাঙ্গনে।
আধুনিক গানেও আছে তার সাফল্য। ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাকে আপামর বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দিয়েছে।
সংগীতবোদ্ধাদের মতে, আধুনিক গান বাছাইয়ে বেশ সচেতন ছিলেন বলে তার অ্যালবামের সংখ্যা কম। তার সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশপানে হাত বাড়ালাম’ প্রকাশ হয় ২০১৩ সালে।
পাপিয়া সারোয়ার ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০২১ সালে পান একুশে পদক।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে রোববার দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নামী সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন।
বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনামলে পেশাগত কাজকর্মে বারবার বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয় বেবী নাজীনের সংগীতজীবন।
বাংলাদেশ বেতার-টিভি-মঞ্চ কোনো মাধ্যমেই বেবী নাজনীন স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেননি। একপর্যায়ে দেশ ছাড়তেই বাধ্য হন তিনি।
দেশের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছেও সমাদৃত হন বেবী নাজনীন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এ শিল্পী।
সাড়ে চার দশকের ক্যারিয়ারে আধুনিক সংগীতের অর্ধশতাধিক একক অডিও অ্যালবামসহ অসংখ্য দ্বৈত অডিও অ্যালবামে গান গেয়েছেন তিনি।
ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আশা ভোঁসলে, বাপ্পি লাহিড়ী, কুমার শানু, কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গেও একাধিক অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার।
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণির তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন দেশের চলচ্চিত্র, অডিও মাধ্যমে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দেন।
আরও পড়ুন:রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’র অনুকূলে ঢাকার লালমাটিয়ায় বন্দোবস্ত দেয়া খাসজমির অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাস জমি-১ অধিশাখার উপসচিব মো. আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।
পত্রে বলা হয়, এ জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে সুরের ধারার চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পক্ষে অনুমোদিত হয়েছিল। জমিটি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রামচন্দ্রপুর মৌজায় অবস্থিত।
এতে উল্লেখ করা হয়, বাতিল হওয়া জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত, যার দাগ নম্বর সিএস ও এসএ-৬৯২, আরএস-১৮৯৫, সিটি-১১৬৬৭ এবং ১১৪১২। মোট জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক পাঁচ এক দুই শূন্য একর। এ জমির সিএস ও আরএস রেকর্ডে ‘খাল’ হিসেবে শ্রেণিকরণ থাকার কারণে এ বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।
মন্তব্য