দেশের টিভি নাটকের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের আয়োজনে শনিবার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাম্প্রতিক কাহিনিচিত্র ও অভিনয় বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনার।
সেখানে অভিনয়াঙ্গনের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন দেশের বরেণ্য, গুণী ও জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীরা। সেমিনারে আলোচনার শুরু করেন অভিনেতা-পরিচালক তৌকীর আহমেদ।
তৌকীর তার আলোচনায় নাটক, ওটিটি, সিনেমার নানা সংকট এবং তাতে অভিনয়শিল্পীদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
তৌকীরের লেখা ৬ পৃষ্ঠার আলোচনায় প্রথম পৃষ্ঠায় তিনি কিছু ইতিহাস টেনে কথা বলেন। সমস্যার কথা তিনি উল্লেখ করেন দ্বিতীয় পৃষ্ঠা থেকে।
তৌকীর বলেন, ‘১৯৯৪ সালে বেসরকারি খাতে নাটক ও অনুষ্ঠান নির্মাণ এর সিদ্ধান্ত আমাদের আকাশ সংস্কৃতির দ্বারে নিয়ে যায়। আড়াই তিন লাখ টাকার প্রডাকশন নিয়ে পাল্লা দিতে হয় কোটি কোটি টাকার প্রডাকশনের সঙ্গে। প্রতিযোগিতার মধ্যেও অনেক প্রশংসনীয় নির্মাণ ও অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে। কারণ, মানুষ তার নিজের ভাষায়, নিজের সংস্কৃতির গল্প দেখতে সব সময়ই পছন্দ করে। চলচ্চিত্রের অশ্লীলতা, সাধারণ মধ্যবিত্তকে হলবিমুখ করেছে ইতিমধ্যে, বেসরকারি টেলিভিশনগুলো খুঁজে চলেছে মুনাফার রাস্তা। মূল্যবোধ আর নীতিবোধ তখন নির্বাসনে।’
তৌকীরের মতে, এরপর নাটকে নতুন একদল নির্মাতার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যারা থিয়েটার বা বিটিভির উত্তরসূরি নন। এতে ভালো-খারাপ দুটিই হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তৌকীর।
তৌকীর বলেন, ‘বিষয়বস্তু বা প্রযোজনায় কিছু নতুনত্ব হাজির হলেও, অনেক সস্তা বিনোদন, অরুচিকর বিষয়বস্তু, ভাষার বিকৃতি, অশ্লীল ইংগিতময় দৃশ্যের আগমন ঘটে।’
যখন দর্শকের কথা বিবেচনা করে হাস্যরসাত্মক বিষয়বস্তু প্রাধান্য পেতে শুরু করে, তখন পরিমিত কমেডির পাশাপাশি ভাঁড়ামোর অনুপ্রবেশ ঘটে বলে উল্লেখ করেছেন তৌকীর।
এই অভিনেতা-পরিচালক বলেন, ‘বেসরকারি টেলিভিশনগুলো টিআরপি নামের একটি প্রহসন হাজির করে। চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোর কর্তৃত্ব ক্রমাগত অনুষ্ঠান বিভাগের হাত গলে বিপণন বিভাগের সিদ্ধান্তের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অভিনেতা-অভিনেত্রীর নিয়োগও তারা করতে শুরু করে। মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিলুপ্ত হতে থাকে, সঙ্গে আবার হাজির হয় এজেন্সির পুঁজি।
‘একসময় নাটকে কমতে থাকে চরিত্র, মূল চরিত্রের পর বাবা-মা বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র অদৃশ্য হতে থাকে, কাহিনিচিত্রের পারিবারিক চেহারাটি হারাতে থাকে, গুটিকয় অভিনেতা বাদে বাদবাকি চরিত্রাভিনেতারা বেকার হতে থাকেন।’
বেসরকারি চ্যানেলগুলোর সংখ্যা, অনিয়ম, দুর্বলতা, দুর্নীতি চ্যানেলগুলোর সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ করে বলে মনে করেন তৌকীর। তিনি আরও জানান, মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বিরতি দর্শকদের টেলিভিশনবিমুখ করে। বাস্তবতা হলো টেলিভিশন নাটক তার দশর্ক হারিয়েছে, চ্যানেলগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। টেলিভিশন কাহিনিচিত্র এখন আর অভিনয়শিল্পীদের জন্য আকর্ষণীয় পেশা নয়। শুধু টিকে থাকা।
চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ করে তৌকীর বলেন, ‘এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র দর্শকদের আস্থা হারিয়েছে আগেই। '৭০, '৮০-এর দশকের সিনেমা হলগুলোর অবস্থা সঙ্গিন, হয়নি কোনো রেনোভেশন, হাতে গোনা কয়েকটি সিনেপ্লেক্সে সিনেমার লগ্নীকৃত টাকা ওঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন প্রযোজক-নির্মাতারা। আমাদের টেলিভিশন ও মঞ্চের শিল্পীরা কখনোই এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রে পেশা তৈরি করতে পারেননি বা করতে চাননি। মূলত রুচি, শিক্ষা বা বিশ্বাসের যোজন যোজন পার্থক্যের কারণে।
‘গোলাম মুস্তাফা, শর্মিলী আহমেদ, ডলি জহুর, আবুল হায়াত, হুমায়ুন ফরিদী বা রাইসুল ইসলাম আসাদ কিছু নাম যারা বাণিজ্যিক ধারায় ব্যস্ত ও সফল হয়েছিলেন। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে সেটা তাদের শৈল্পিক বিশ্বাসের সঙ্গে আপস করেই।’
স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনয়শিল্পীরা নিঃস্বার্থভাবে, কখনও বিনা পারিশ্রমিক বা নামমাত্র পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন বলে জানান তৌকীর। বলেন, ‘সেটা শিল্পীদের কখনও কখনও তৃপ্তি দিয়েছে। স্বল্প বাজেটের এই সিনেমাগুলো শিল্পীরা কখনোই পেশা হিসেবে নিতে পারেননি।’
তৌকীরের মতে, ভবিষ্যতে যদি সিনেপ্লেক্সের সংখ্যা বাড়ে, চলচ্চিত্র ব্যবসা লাভজনক হয়ে ওঠে, তাহলে তরুণ নির্মাতাদের নতুন ধারার চলচ্চিত্রও হয়তো হতে পারে অভিনয়শিল্পীদের পেশার জায়গা। বর্তমানে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর আগমন শিল্পীদের আশাবাদী করেছে বলে উল্লেখ করেন তৌকীর।
তৌকীর বলেন, ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো বাণিজ্যের লক্ষ্যে তাদের কনটেন্ট বানাচ্ছে। সামাজিক, রাষ্টীয়, জনতার জীবনমান বা চিন্তা-চেতনা নিয়ে তারা ভাববে না, তাদের সেই দায় নেই। তাদের আছে বিভিন্ন হিসাব, সাবস্ক্রিপশনের হিসাব, ভিউয়ের হিসাব, লাইকের হিসাব, আয়, ব্যয় লাভের হিসাব। ফলে কী দেখা যাচ্ছে। ওটিটির বেশির ভাগ কাহিনিচিত্রের বিষয়বস্তু ক্রাইম বা ডিটেকটিভ অ্যাকশন। ফলে অভিনয়ের সুযোগও কমে আসছে অভিনেতার।’
কতজন দেখছে এই পেইড প্ল্যাটফর্মগুলো? এর সঠিক পরিসংখ্যান এখনও নেই বলে মন্তব্য তৌকীরের। সচ্ছল ব্যক্তিরা নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হইচই, চরকি দেখলেও নিম্নবিত্তের ভরসা ফ্রি ইউটিউব। সেখানে অনেক কিছুই পেয়ে যাচ্ছেন দর্শক।
তৌকীর বলেন, ‘ইউটিউব যেহেতু ভিউয়ের সংখ্যার ওপর নির্ভরশীল সুতরাং ভিউ হতে পারে এমন কিছুই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। কুরুচিপূর্ণ, স্কিড, নাটক, চলচ্চিত্র এখানে জনপ্রিয়। একই সঙ্গে আবির্ভাব হচ্ছে কিছু নির্মাতার, যাদের কাছে অর্থ উপার্জনই প্রধান, জনরুচি বা সামাজিক দায়বদ্ধতার কোনো বিষয় তাদের নেই। অশ্লীল ভাষা, কুরুচিপূর্ণ বিষয়বস্তু উপস্থাপন এখানে সবচেয়ে সফল।’
তৌকীর তার আলোচনায় বলেন, ‘কোয়ালিটি সিটিজেন তৈরি করার দায় কার, রাষ্ট্রের তথা সমাজের। আমরা সবাই তার অংশ। ক্রমাগত করপোরেট কালচারের অংশ হতে হতে শিল্পীরাও হয়তো হয়ে উঠবেন ওই করপোরেট মেশিনের নাট-বল্টু।’
আলোচনার শেষে তৌকীর বলেন, ‘অভিনেতার কাজটি তো সৃষ্টির, সৃষ্টির এই প্রক্রিয়া তো সহজ নয়, কখনোই সহজ ছিল না। সৃষ্টির এই কঠিন পথে তার শক্তি তো সত্য, জীবনের সেই সত্যকেই তো তিনি পুনর্নির্মাণ করেন প্রতিনিয়ত, ফুটিয়ে তোলেন প্রতিটি চরিত্রের অন্তর আত্মা। সমাজ ও মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতাই তো তার শক্তি। সেই প্রকৃত শিল্পীদের পদচারণে মুখর হোক আমাদের অভিনয়াঙ্গন।’
সেমিনারের এ আলোচনা মূলত একটি ধারণাপত্র বলে নিউজবাংলাকে জানান অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান। তিনি বলেন, ‘আলোচনা শুরু করা হলো। এরপর সবার মতামত, সবার বক্তব্য নিয়ে আমরা মূল প্রবন্ধ তৈরি করব। যা হয়তো আমাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই আলোচনা শুধু অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে নয় বরং অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা, প্রযোজক, টিভি ও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম নিয়ে।’
রওনক উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমরা ৫ বছর আগে অভিনয়কে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিলাম, সেটা হয়তো শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। সেমিনারের আলোচনাও একটা উদ্যোগ, যেটার ফল হয়তো আমরা অনেক দেরিতে পাব, কিন্তু এর উদ্যোগটা তো নিতে হবে। সুন্দর একটি সাংস্কৃতিক আবহ তৈরির লক্ষ্যেই আমাদের এই কর্মসূচি।’
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশিদ, জাহিদ হাসান, তারিন, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, বৃন্দাবন দাস, সালাউদ্দিন লাভলু, অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিমসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:ফারহান আহমেদ জোভান অভিনীত ‘রূপান্তর’ নাটকের তিনিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলী আদালতে নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রী ও পরিচালকসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাউসার উল জিহাদ এ মামলাটি করেছেন।
ইউটিউব চ্যানেল একান্ন মিডিয়া থেকে নাটকটি সরিয়ে ফেলার পর এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন নির্মাতা রাফাত মজুমদার রিংকু। তার মতে, দর্শকরা নাটকটির কনসেপ্ট হয়ত বোঝেননি।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক কিছুই দেখছি, আসলে বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় দর্শকরা নানান স্ট্যাটাস ও মন্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, ‘পরিচালক রাফাত মজুমদার রিংকু পরিচালিত এ নাটকটিতে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ ইস্যুকে প্রমোট করা হয়েছে। এ কারণে গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা জোভানকে অনলাইনে তুলোধুনা করছে নেটিজেনরা।
‘এছাড়া জোভান ও সামিরা খান মাহি দুজনের ফেসবুক পেজ গায়েব করে দেয়া হয়েছে। জোভানের ১৯ লাখের পেজ ও মাহির ২৪ লাখের লাইক-ফলো করা পেজটি আর ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
‘রূপান্তর’ নাটকটি ইউটিউবে প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয় সমালোচনা। অসংখ্য পোস্ট ও লক্ষাধিক প্রতিক্রিয়া আসে নাটকটির বিরুদ্ধে। তীব্র সমালোচনায় পড়ে নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।
জোভান বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, নাটকটি নিয়ে কেন এমন সমালোচনা করা হচ্ছে! নাটকটির ভিউ হয়েছিল নব্বই হাজার। তাহলে বাকি মানুষ তো দেখেনি! আমার মনে হয়, তারা না দেখেই সমালোচনা করছে। বিষয়টি নিয়ে আমি ঘোরের মধ্যে আছি। বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে!’
সমালোচনার মুখে জোভান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দর্শক পছন্দ করেন না এমন কোনো চরিত্রে অভিনয় করবেন না। বলেন, ‘যেহেতু মানুষ পছন্দ করছে না সেহেতু এসব আর করা যাবে না। এরপর থেকে এগুলো আর করব না।’
নেটিজেনদের কিংবা নিজের অনুসারীদের উদ্দেশে একটি ভিডিও বার্তা দিয়ে এটা নিয়ে জোভান দুঃখও প্রকাশ করেছেন।
জোভান ছাড়াও ‘রূপান্তর’ নাটকে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামিরা খান মাহি। এতে আরও অভিনয় করেছেন সাবেরী আলম ও সমাপ্তি মাসুক প্রমূখ।
নাট্যজন ইশরাত নিশাতের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার নামে মর্যাদাপূর্ণ নাট্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয় ২০২১ সালে। চলতি বছর থেকে ৯টি ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে জুড়ি বোর্ডের ‘বিশেষ স্বীকৃতি’ পেয়েছে নতুন নাট্যদল এক্টোম্যানিয়ার প্রথম প্রযোজনা ‘হ্যামলেট মেশিন’।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে শুক্রবার সন্ধ্যায় নাট্যকর্মীদের উপস্থিতিতে জুড়ি বোর্ডের ‘বিশেষ স্বীকৃতি’ দলের সদস্যদের হাতে তুলে দেন নাট্যব্যক্তিত্ব সারা যাকের।
জার্মান নাট্যকার হাইন্যার ম্যুলারের লেখা নাটকটির নির্দেশনা দেন নওরীন সাজ্জাদ।
বিশেষ স্বীকৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই অনুভূতি অতুলনীয়। এই আবেগ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
‘প্রথম প্রযোজনায় এই প্রাপ্তি আমাদের আনন্দিত করছে; উৎসাহিত করছে দারুণভাবে।’
ঢাকার মঞ্চে ২০২৩ সালে এসেছে ৭৫টি নতুন নাটক। এর মধ্যে ৩৩টি নাটক দেখে জুড়ি বোর্ড নির্বাচিতদের পুরস্কৃত করে।
নাট্যদল এক্টোম্যানিয়ার মুখ্য সম্পাদক তালহা জুবায়ের বলেন, ‘এই অর্জন আমাদের পুরো দলের। ঢাকার মঞ্চে নতুন হিসেবে এই অর্জন আমাদের উৎসাহ, সাহসের সঙ্গে দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও নতুন কিছু সৃজনের।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী থিয়েটারের যে অর্জন, সে বিবেচনায় নাট্যকর্মীদের প্রাপ্তি বা মূল্যায়নে এ রকম পুরস্কার দেয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
মঞ্চ নাটকের অবদানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পদক দেয়া হলেও সামগ্রিকভাবে কোনো পুরস্কারের প্রচলন ছিল না। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই দেশের বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব ও গুণিজনদের সম্পৃক্ত করে একটি বাস্তবায়ন কমিটি এ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
কমিটির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নামী নাট্যব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ। এর কো-চেয়ারপারসন হিসেবে রয়েছেন অভিনেত্রী সারা যাকের।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শনিবার প্রদর্শনী হবে ঢাকা পদাতিকের ৩৮তম প্রযোজনা ‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’।
একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় নাটকটির ২৯তম প্রদর্শনী হবে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানী মাস্টার দা সূর্যসেনের প্রহসনমূলক বিচার ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়বস্তুকে উপজীব্য করে নাটকটি মঞ্চে আনে ঢাকা পদাতিক।
‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’ নাটকের রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দেন নাট্যজন মাসুম আজিজ। তার মৃত্যুর পর নব নির্দেশনার কাজটি করেন অভিনেতা নাদের চৌধুরী।
এ বিষয়ে নাদের চৌধুরী বলেন, “‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ঐতিহাসিক একটি নাটক। এর রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রয়াত মাসুম আজিজ ভাই, তবে পরবর্তী সময়ে এই নাটকের কিছু কিছু জায়গায় প্রয়োজন সাপেক্ষে অলংকরণ করে আমি নব নির্দেশনার কাজটি করেছি।
“মাস্টার দা সূর্যসেন এই নাটকের প্রধান চরিত্র, যেটি আমি রূপায়ন করেছি। ঐতিহাসিক নাটকটি আমাদের এখনকার জেনারেশনের দেখা উচিত।’’
ঐতিহাসিক ব্যক্তিরা নাটকটির চরিত্র। এতে মোট ৪০টি চরিত্র রয়েছে।
চরিত্রগুলো হলো সূর্য সেন, প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত, অম্বিকা রায়, নির্মল সেন, ব্রিটিশ উকিল ও বাঙালি উকিল প্রভৃতি।
এসব চরিত্র রূপায়ন করছেন নাদের চৌধুরী, মাহবুবা হক কুমকুম, মিলটন আহমেদ, হাসনা হেনা শিল্পী, মাহাবুবুর রহমান টনি, সাবিহা জামান, শ্যামল হাসান, কাজী আমিনুর, আক্তার হোসেনসহ অনেকে।
২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়।
আরও পড়ুন:নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলার লোক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার লক্ষ্যে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির উদ্যোগে দেশব্যাপী চিরায়ত বাংলা নাটক মঞ্চায়ন কর্মসূচি উদযাপন করছে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) থিয়েটার ক্লাব।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) আইইউবি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো মনসুর বয়াতি রচিত পালা নাটক ‘দেওয়ানা মদিনা’।
নাটকটির নির্দেশনায় মো. শামীম সাগর এবং সহ-নির্দেশনায় ছিলেন মো. সাইফুল ইসলাম।
বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় ৬৪টি জেলা ও ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। দেওয়ানা মদিনা এই কর্মসুচির তৃতীয় এবং আইইউবি থিয়েটারের ২১তম প্রযোজনা।
দর্শক সারিতে উপস্থিত থেকে নাটকটি উপভোগ করেন আইইউবির উপাচার্য তানভীর হাসান, বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের উপ-পরিচালক আলী আহমেদ মুকুল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল জাবির, আইইউবি থিয়েটারের সমন্বয়ক মমতাজ পারভীন এবং আইইউবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মনসুর বয়াতি রচিত ‘দেওয়ানা মদিনা’ পালাটি মৈমনসিংহ গীতিকা সংগ্রহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকা হিসেবে সমাদৃত। বানিয়াচঙ্গের দেওয়ান সোনাফরের পুত্র আলাল ও দুলালের বিচিত্র জীবনকাহিনী এবং দুলাল ও গৃহস্থ মদিনার প্রেমকাহিনী এই পালার বিষয়বস্তু।
নাটকটিতে অভিনয় করেন আইইউবির নাট্যকর্মী শিক্ষার্থী আনিকা বুশরা শশী, মো. বাসিতুল্লাহ খান, মো. তৌহিদুল ইসলাম অঙ্কুর, সানজিদা আক্তার মীম, আশরাফুল করিম চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল মাহিন সিয়াম, মুবাল্লিক হোক মৃধা (আবিদ), সৌহার্দ্য পাল, সামিয়া রেজা মাইশা, আনিকা ফাইরোজ, মো. সৌমিক উদ্দিন মাহি, মোছা. সাদিয়া আফরিন অর্না, মুবাশশির আল জামী সিয়াম প্রমুখ।
সংগীত সহযোগিতায় ছিল ভিনস ব্যান্ড, জাহিদ হাসান, স্লাঘা অধিকারী, শরীফ মোহাম্মদ শাহজালাল পরান, এস এম শাকিল আমিন এবং আইইউবি মিউজিক ক্লাব।
ছোটপর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃত্যু নিয়ে রহস্য পুরোপুরি খোলাসা হয়নি। অভিনেত্রীর স্বজনদের বরাতে পুলিশ যদিও জানিয়েছে যে আত্মহত্যা করেছেন হিমু। তবে কয়েকটি অমীমাংসিত প্রশ্নের কারণে ঘটনাটি নিয়ে ‘কিন্তু’ থেকে যাচ্ছে।
হিমুর মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে যান তার কথিত প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রাফি ও অভিনেত্রীর মেকআপ আর্টিস্ট মিহির। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করার পর হিমুর মোবাইল ফোনটি নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন প্রেমিক রাফি।
পুলিশ তাকে খুঁজছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) উত্তরার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জ্যোতির্ময় সাহা।
এদিকে জিয়াউদ্দিন রাফির সঙ্গে সম্প্রতি হিমুর বিয়ের কথাবার্তা চলছিল বলে পরিবারের সদস্যদের বরাতে জানিয়েছেন ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম।
তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে হুমায়রা হিমুর সঙ্গে রাফির ঝগড়া চলছিল৷ হিমুকে হাসপাতালে নিয়ে এলেও মৃত্যুর খবর শুনে তিনি পালিয়ে গেছেন।
আরেকটি সংবাদমাধ্যমের খবর, হিমুর ওই প্রেমিক নিজেও বিবাহিত। আলাদা সংসার রয়েছে তার।
উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মির্জা সালাউদ্দিনের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, অভিনেত্রী হিমু ছিলেন ব্রোকেন ফ্যামিলির। তিনি তার এক পালিত ভাইকে (মিহির) নিয়ে উত্তরার ফ্ল্যাটে থাকতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য, ‘বিবাহিত ওই যুবকের (রাফি) সঙ্গে অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ছেলেটি তার ফ্ল্যাটে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন। মাঝে মাঝে তিনি হিমুর সঙ্গে থাকতেনও।’
তিনি বলেন, ‘আজ বিকেল ৩টার দিকে হিমুর বাসায় এসেছিলেন রাফি। পরে তাদের মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। হিমুর পালিত ভাই মিহির তখন ওয়াশরুমে ছিলেন। হিমু রুমে একাই ছিলেন। এরপর মিহির বের হয়ে দেখেন হিমু ফ্যানের হ্যাঙ্গারের সঙ্গে ঝুলছেন। রাফি ও মিহির তখন হিমুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’
যদিও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে হিমু আত্মহত্যা করেছেন বলেই উঠে এসেছে। আর তা সত্যি হয়ে থাকলেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে- এই আত্মহননের নেপথ্যে কে বা কারা দায়ী? কারণটাই বা কী? রাফি বিবাহিত এবং তার সংসার থাকার পরও হিমুর পরিবারের সঙ্গে তার বিয়ের কথা চলে কীভাবে? বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই কি নিভে গেল আরেকটি সুন্দর জীবনের প্রদীপ?
উত্তর মেলেনি এসব প্রশ্নের। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে একটি প্রশ্ন উঠতেই পারে- আত্মহত্যা কি সত্যিই জীবনের জটিল হিসাবের জট মেলাতে পারে?
আরও পড়ুন:অভিনেত্রী হুমায়র হিমু ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। অভিনেত্রীর পরিবারের বরাতে পুলিশ প্রাথমিকভাবে এ তথ্য পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে নিজ বাসায় ফ্যানের হ্যাঙ্গারে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। সেখান থেকে হিমুকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে উত্তরার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জ্যোতির্ময় সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুরতহাল ও পরিবারের বক্তব্যে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, হুমায়রা হিমু আত্মহত্যা করেছেন। সুরতহাল শেষে তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
পরিবারের বরাতে তিনি বলেন, ‘পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে লাশ পেয়েছে। অভিনেত্রীর পরিবার জানিয়েছে, ফ্যান লাগানোর হ্যাঙ্গারে রশি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় হিমুকে পাওয়া যায়। পরে মেকআপ আর্টিস্ট মিহির (যাকে হিমু ভাই ডাকতেন) ও প্রেমিক রাফি উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় হুমায়রা হিমুর কথিত বয়ফ্রেন্ড রাফিকে খুঁজছে পুলিশ। হিমুকে রেখে হাসপাতালে রেখে তিনি পালিয়েছেন।’
ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু মারা গেছেন।
অভিনয়শিল্লী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিউজবাংলাকে জানান।
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় থাকতেন হুমায়রা হিমু। সেখান থেকে তাকে আজ বিকেলে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নেয়া হলে ৪টা ৪৬ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
কেন ও কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি রওনক হাসান। তবে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।
২০০৬ সালে ‘ছায়াবীথি’ নামের একটি নাটকের মাধ্যমে ছোটপর্দায় নাম লেখান হিমু। অল্পদিনেই লাভ করেন জনপ্রিয়তা। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে ‘বাড়ি বাড়ি সারি সারি’, ‘হাউজফুল’, ‘গুলশান এভিনিউ’ উল্লেখযোগ্য।
চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন হিমু। ২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এ ছবি তে অরু চরিত্রে দেখা যায় তাকে। হিমুর মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে তার সহকর্মীদের মাঝে। সামাজিক মাধ্যমে সেই শোক প্রকাশ করছেন তারা।
মন্তব্য