দেশের বাইরে কনসার্ট শেষ করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন ইনডিপেনডেন্ট আর্টিস্ট আরমীন মুসা। নিজেকে ইনডিপেনডেন্ট আর্টিস্ট বলেন তিনি।
দেশের বাইরে আরমীন যে কনসার্ট করেন বা করে আসলেন, সেগুলো অ্যারেঞ্জ করা, অংশ নেয়ার যে প্রক্রিয়া সেগুলো আরও অনেক শিল্পীর মতো না। অনেক শিল্পী আছেন, যাদের বিভিন্ন ইভেন্টে বা কনসার্টে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু আরমীনের ক্ষেত্রে বা ইনডিপেনডেন্ট আর্টিস্টের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন না।
নিউজবাংলাকে আরমীন বললেন, ‘যারা কমার্শিয়াল আর্টিস্ট, তাদের অনেক আমন্ত্রণ থাকে, ইনডিপেনডেন্ট আর্টিস্টদের সাধারণত এত আমন্ত্রণ থাকে না। আমাদের যেটা করতে হয়, আমরা সিভি পাঠাই, গান পাঠাই; আমরা যাচাই করে দেখি যে কোথায় আমাদের টাইপের মিউজিক শুনতে আগ্রহী, সেসব ভেন্যুতে আমরা যোগাযোগ করি।
‘ইনডিপেনডেন্ট আর্টিস্টের চরিত্র হলো, আমরা নিজেরটা নিজে করি। আমাদের ম্যানেজার নাই, বুকিং এজেন্ট নাই। কমার্শিয়াল আর্টিস্টদের যেমন অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, এজেন্সি শো অ্যারেঞ্জ করে দেয়, আমাদের ক্ষেত্রে সেটা হয় না।
‘আমি ওয়ার্ল্ড মিউজিক করি, কিন্তু ইনডিপেনডেন্ট শিল্পী হওয়ায় আমার জন্য আসলে জায়গা অনেক কম। তো আমাকে ছোট ছোট জায়গা খুঁজে বের করে নিতে হয়।’
তবে কেউ যদি আরমীনকে বাণিজ্যিক শোয়ে আমন্ত্রণ জানান, তিনি অবশ্যই করবেন এবং করেনও।
সম্প্রতি তিনি মাল্টায় কনসার্ট করে এসেছেন। ওপরের কথাগুলো আরও যৌক্তিক করার জন্য আয়োজনটির উদাহরণ টানেন তিনি। বলেন, ‘মহামারির আগে আমার একটু ওয়ার্ল্ড ট্যুর করার পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ হয়ে আমেরিকা যাব। পরে তো সেটা আর হয় নাই। ওই সময় আমি যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, তাদের মধ্য থেকে মাল্টার ভেন্যু থেকে আমাকে জানাল, ওয়েলকাম করল কনসার্ট করার জন্য, তাই সেখানে গিয়ে কনসার্ট করেছি।’
সেখানে আরমীনের দুটি শো ছিল। যাওয়ার সপ্তাহে এবং আসার সপ্তাহে কনসার্ট করেছেন, মাঝখানের সময়টা ঘুরেছেন। এক মাসের মতো ছিলেন বলে জানান আরমীন।
সম্প্রতি আরমীনের ক্যারিয়ারে বা আরমীনের সঙ্গে যা হয়েছে, তা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ঘটনা। আগামীতে এই ঘটনা অনুপ্রেরণা দেবে দেশের সংগীতশিল্পীদের। বিদেশেও এগিয়ে যাবে বাংলা ভাষার গান ও সুর।
আরমীন তার ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়েছেন বার্কলি কলেজ অব মিউজিক থেকে। সেখানকার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে তৈরি হয়েছে একটি অ্যালবাম। সেখানে রয়েছেন ওস্তাদ জাকির হোসেন, শ্রেয়া ঘোষাল, শঙ্কর মহাদেবন, বিজয় প্রকাশসহ আরও অনেক গুণী শিল্পীর অংশগ্রহণ। তাদের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশের আরমীনও।
আরমীন জানান, ইন্ডিয়ান মিউজিক নিয়ে এটা একটা আমেরিকান অ্যালবাম। এতে দশটা গান রয়েছে এবং ডিজিটালি প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে ১০ নম্বর ট্র্যাকটি আরমীনের; গানের নাম ‘জাগো পিয়া’।
না, এটা কোনো রোমান্টিক গান নয়। আবার সুরেও রয়েছে বাংলা ও ওয়েস্টার্নের মিশ্রণ। আরমীন বলেন, ‘গানটা রোমান্টিক না। এই গানটা মূলত ফিলসফিক্যাল, আমার মা ড. নাশিদ কামালের লেখা। গানে নিজেকে নিজে বলা হচ্ছে যে সামনে তাকাও, এগিয়ে যাও।’
গানটির সুর করেছেন আরমীন। সুর নিয়ে তার ভাষ্য, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে যে এটা ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন মিলিয়ে। এটা যেহেতু বাংলা গান, আমি সেই ঢঙেই সুর করেছি, তবে ট্রাডিশনাল বাংলা সুর হয় নাই, সেখানে আমার নিজস্ব কিছু ছোঁয়া আছে।’
ভারতীয় পণ্ডিত সংগীতজ্ঞদের সঙ্গে বাংলাদেশের শিল্পীদের গান গাওয়া বা একই অ্যালবামে থাকার ঘটনা প্রথম নয়। তবে আরমীন যে প্রক্রিয়ায় এ অ্যালবামে স্থান করে নিয়েছেন, সেটি প্রথম।
আরমীনের মতে, ‘বার্কলি স্কুল অফ মিউজিকে আমি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পড়তে গিয়েছি। আমার পরে আরও তিনজন পড়ছে এখন। তাদের নিয়েও আশা করছি অনেক ভালো ভালো কাজ হবে। তবে হ্যাঁ, বার্কলিতে প্রথম বাংলা গান গাওয়া হয়েছে আমার মাধ্যমে।’
কথাটি যখন বলছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, প্রথম কোন বাংলা গানটি গেয়েছিলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মনে করলেন আরমীন। বললেন, ‘সম্ভবত মিলন হবে কত দিনে। লালনগীতি করেছিলাম। মনে হয় এটাই করেছিলাম।’
বার্কলিতে ওয়েস্টার্ন মিউজিকে পড়াশোনা করেছেন আরমীন। সে জন্য শুধু যে ইংলিশ গান করতে চান তিনি এমন না। আবার শুধু বাংলা গানও করতে চান না। তিনি চান ভার্সেটাইল হয়ে এগিয়ে যেতে।
আরমীন বার্কলিতে ছিলেন বলে হয়তো এখন দেশের অনেকেই সেখানে পড়তে আগ্রহী হন। তেমন ভারতীয় অ্যালবামে তার গান গাওয়া কি পারবে বাংলা ভাষার গান ও সুরকে একটু হলেও এগিয়ে নিতে বিশ্ব সংগীত মঞ্চে?
আরমীন বলেন, ‘আমি আশা করি, আমি যখন বাংলা গান গাইব তখন মানুষ সেটাকে গ্লোবাল পারসপেকটিভে দেখবে, যখন ইংলিশ গান গাইব তখনও যেন সেটা গ্লোবাল পারসপেকটিভে দেখে। অন্য শ্রোতারা বাংলা গান শুনেছে এটাকে আমি অনেক বড় কোনো ঘটনা হিসেবে দেখতে চাই না। আবার এটাকে ছোট করেও দেখছি না। কিন্তু এটা যেন সাধারণ বিষয় হয়, আমরা যেন বলতে পারি- এটা তো হতেই পারে।’
৭ বছর আগে বার্কলি শেষ করেছেন আরমীন। এখন সংগীত নিয়ে নানা রকম কাজ করছেন। ‘ঘাসফড়িং কয়্যার’ নামে ১৭ জনের একটি গানের দল রয়েছে আরমীনের। ইউটিউবে গানের পাশাপাশি নিজের লেখা কবিতাও পড়েন। তিনি অবশ্য জানান কবিতা নিয়ে তার কোনো পরিকল্পনা নাই। কবিতা তিনি নিজের জন্য লেখেন। আরমীন নিজের লেখা কবিতাকে আহামরি কিছু মনে করেন না। তবে কোনো পাবলিকেশন চাইলে পাবলিশ করার ইচ্ছা আছে তার।
বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে ‘মাশরুম এন্টারটেইনমেন্ট’ নামের একটি অনলাইন অডিও ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছিলেন আরমীন। এখন আর প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গে নেই তিনি। কারণ, ‘ব্যবসা করতে গেলে একটা মেন্টালিটির মধ্যে থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন শেষ হওয়ার পর মনে হয়েছে আর্টিস্টদের ব্যবসা করা ঠিক না। আমার ব্যবসা করতে চাইলে শুধু ব্যবসায়ীই হতে হবে। তাই যারা ব্যবসা করতে চায় তারা করুক, আমি আর্টিস্ট হতে চাই। মাশরুম এন্টারটেইনমেন্ট এখনও চলছে।’
পুরোনো খবর রেখে নতুন খবরও দিলেন আরমীন। বললেন, অডিওর জনপ্রিয় সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তার নতুন এক্সটেন্ডেট প্লে (ইপি) প্রকাশ পেয়েছে।
ইপি টার্মটা বোঝানোর জন্য আরমীন বলেন, ‘যখন একটা গান প্রকাশ হয় তখন সেটা সিঙ্গেল। যখন ৯-১০টা গান প্রকাশ পায় সেটার নাম অ্যালবাম। আর যখন সিঙ্গেলের বেশি ও অ্যালবামের কম সময় এবং পরিমাণের গান প্রকাশ করা হয় সেটা ইপি বা এক্সটেন্ডেট প্লে।’
নিজের নতুন ইপি নিয়ে আরমীন বলেন, ‘২৬ আগস্ট জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক অডিও প্ল্যাটফর্মে একটা ইপি প্রকাশ পেয়েছে আমার। অস্ট্রেলিয়ায় কিছু গান গেয়েছিলাম। সেই গানগুলো আমি ইপি আকারে ছেড়েছি এবং সেখানে ৪টা কবিতাও আছে।’
মহামারির সময়ে লেখা বেশ কিছু বাংলা ও ইংরেজি গান লেখা হয়েছে আরমীনের। তার দাবি সেগুলো নাকি দুঃখের, কারণ সময়টাই ছিল সে রকম। ওই কাজগুলো প্রকাশ পেলে তার ধারণা আরমীনের একটা নতুন সাইড পাবেন শ্রোতারা।
আরও পড়ুন:‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই, যার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শনিবার তার মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহ থেকেই এ শিল্পী হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই স্নায়ু এবং নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, প্রতুলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত তাকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শিল্পীর ফুসফুসেও সংক্রমণ দেখা দেয়। দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
প্রতুলের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান হলো ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথী রে’। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার গানের গুণমুগ্ধ ছিলেন। মমতার তত্ত্বাবধানেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। শৈশব থেকেই গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়ার ঝোঁক ছিল তার।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে পাদপ্রদীপের আলোয় আনে তার গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এ ছাড়া সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন তিনি।
তার মতে, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কেবল তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। সেই একক সাধনা তখন সকলের হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ স্মরণে বর্ণাঢ্য এক লাইভ কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে।
দেশীয় ব্যান্ডগুলো গানে গানে শ্রদ্ধা জানাবে সংগীতশিল্পীকে।
‘শাফিন আহমেদ: ইকোস অব আ লিজেন্ড’ শিরোনামের কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও লিঙ্ক রোডের আলোকিতে। সেখানে শাফিনের গাওয়া কালজয়ী গানগুলো শোনাবে তার সাবেক ব্যান্ড মাইলসের সদস্যরা।
এ ছাড়াও কনসার্টে পারফর্ম করবে দেশের প্রথম সারির ব্যান্ড ফিডব্যাক, দলছুট, আর্টসেল ও অ্যাভয়েড রাফা ও শাফিন আহমেদের ছেলে য়াজরাফ অজি।
গানের পাশাপাশি এ আয়োজনে আরও থাকছে শাফিন আহমেদের ঘটনাবহুল জীবন ও সংগীত ক্যারিয়ার নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী। এ ট্রিবিউট কনসার্টের আয়োজন করেছে ভেলভেট ইভেন্টস।
আয়োজকরা জানান, শুরুতে শাফিন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে ১৪ ফেব্রুয়ারি কনসার্টের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পবিত্র শবে বরাতের কারণে তা এক দিন এগিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাত ৯টায় শুরু হবে কনসার্ট। সন্ধ্যা ছয়টায় দর্শকের জন্য খুলে দেওয়া হবে ভেন্যুর দরজা।
এ কনসার্ট আয়োজন চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। দর্শক টিকিট কেটে আয়োজনটি উপভোগ করতে পারবেন।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বেশ কয়েকটি কনসার্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন শাফিন আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে দ্বিতীয় কনসার্টের দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর সেখান থেকে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।
দুই দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ২৪ জুলাই মারা যান শিল্পী কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের সন্তান শাফিন আহমেদ।
আরও পড়ুন:রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে শুক্রবার ‘আমাদের সাবিনা ইয়াসমিন: আমি আছি থাকব’ অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে মঞ্চে অুসুস্থ হয়ে পড়েন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানটির এক বছরের বিরতির পরে মঞ্চ পবিরেবশনায় ফিরে এসেছিলেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সংগীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার বলেন,‘কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী তার পরিবেশনা চলাকালে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন এবং মঞ্চেই পড়ে যান। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ইউনাইটেড হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এই মুহূর্তে তার চিকিৎসা চলছে। তবে তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।’
দিঠি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে দুই-এক দিনের মধ্যেই বাসায় ফিরবেন জনপ্রিয় এ গায়িকা।
গতকালের অনুষ্ঠানটিতে কিংবদন্তি গায়িকা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মঞ্চে ফিরে এসেছিলেন। কারণ তিনি সিঙ্গাপুরে তার নিয়মিত চিকিৎসার কারণে এক বছর ধরে এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি।
দৈনিক প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ শিল্পী জানান, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এরপর চার মাসে ৩০ সেশন রেডিওথেরাপি দিতে হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ২০২৩ সালের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে বেশ কয়েকটি স্টেজ শো করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। এরপর তাকে আর মঞ্চে পারফর্ম করার জন্য পাওয়া যায়নি।
আয়োজকরা জানান, শনিবারও একই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার কথা ছিল সাবিনার। এরপর চট্টগ্রামে আরেকটি শোতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার।
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের শীতার্ত মানুষের মধ্যে শনিবার প্রায় দুই হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে চালিতাডাংগা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে উপস্থিত হয়ে শীতার্তদের হাতে কম্বল তুলে দেন এলাকার সন্তান বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা বলেন, ‘একজন মানুষের জন্য একটি কম্বল সাধারণ ব্যাপার। তাদের জন্য এ শীতে কষ্ট লাগবের জন্য আরও কিছু করতে পারলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। সারা দেশের মতো সিরাজগঞ্জে শীতের শুরুতে যমুনা নদীর পাড়ের অবস্থিত গ্রামগুলো শীতে কাঁপছে। এ কারণে বেড়েছে গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগ।
‘এলাকার গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষ শীতের তীব্রতায় কষ্ট পাচ্ছেন। তাই তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। একজন মানুষ হয়ে আর একজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সকলের নৈতিক দায়িত্ব।’
ওই সময় সমাজের সব বিত্তবান মানুষকে অসহায় শীতার্ত নারী-পুরুষদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
কম্বল পাওয়া মহেলা বেওয়া বলেন, ‘তীব্র শীত ও কনকনে ঠান্ডায় যখন কাহিল আমরা, এই সময়ে কম্বল আমাগো খুব উপকার করল। এই শীতে কম্বল গায়ে দিয়ে একটু আরামে ঘুমাতে পারব।
‘শীতে কম্বল দিয়ে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করছে আমাগো গ্রামের মেয়ে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা।’
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন কাজিপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদুল রহমান বাবলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাল মিয়া, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম খোকন, ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ইমরুল কায়েস (সবুর), লক্ষ্মীপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী কামরুল হাসান তরু, তার মেয়ে কামরুন্নাহার তনুসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:একুশে পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাপিয়া সারোয়ারের স্বামী সারওয়ার আলম।
তিনি জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে শিল্পীর দাফন সম্পন্ন হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন পাপিয়া। গত মাসে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন গুণী এ শিল্পী, যার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্বামী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
পাপিয়া সারোয়ার ১৯৫২ সালের ২১ নভেম্বর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রসংগীত অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন।
বেতার ও টিভিতে ১৯৬৭ সাল থেকে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন পাপিয়া। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।
১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে ভারতে যান।
দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা পেয়েছেন পাপিয়া সারোয়ার। তার ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ও গায়কীর প্রশংসা ছিল সংগীতাঙ্গনে।
আধুনিক গানেও আছে তার সাফল্য। ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাকে আপামর বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দিয়েছে।
সংগীতবোদ্ধাদের মতে, আধুনিক গান বাছাইয়ে বেশ সচেতন ছিলেন বলে তার অ্যালবামের সংখ্যা কম। তার সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশপানে হাত বাড়ালাম’ প্রকাশ হয় ২০১৩ সালে।
পাপিয়া সারোয়ার ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০২১ সালে পান একুশে পদক।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে রোববার দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নামী সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন।
বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনামলে পেশাগত কাজকর্মে বারবার বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয় বেবী নাজীনের সংগীতজীবন।
বাংলাদেশ বেতার-টিভি-মঞ্চ কোনো মাধ্যমেই বেবী নাজনীন স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেননি। একপর্যায়ে দেশ ছাড়তেই বাধ্য হন তিনি।
দেশের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছেও সমাদৃত হন বেবী নাজনীন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এ শিল্পী।
সাড়ে চার দশকের ক্যারিয়ারে আধুনিক সংগীতের অর্ধশতাধিক একক অডিও অ্যালবামসহ অসংখ্য দ্বৈত অডিও অ্যালবামে গান গেয়েছেন তিনি।
ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আশা ভোঁসলে, বাপ্পি লাহিড়ী, কুমার শানু, কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গেও একাধিক অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার।
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণির তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন দেশের চলচ্চিত্র, অডিও মাধ্যমে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দেন।
আরও পড়ুন:রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’র অনুকূলে ঢাকার লালমাটিয়ায় বন্দোবস্ত দেয়া খাসজমির অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাস জমি-১ অধিশাখার উপসচিব মো. আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।
পত্রে বলা হয়, এ জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে সুরের ধারার চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পক্ষে অনুমোদিত হয়েছিল। জমিটি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রামচন্দ্রপুর মৌজায় অবস্থিত।
এতে উল্লেখ করা হয়, বাতিল হওয়া জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত, যার দাগ নম্বর সিএস ও এসএ-৬৯২, আরএস-১৮৯৫, সিটি-১১৬৬৭ এবং ১১৪১২। মোট জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক পাঁচ এক দুই শূন্য একর। এ জমির সিএস ও আরএস রেকর্ডে ‘খাল’ হিসেবে শ্রেণিকরণ থাকার কারণে এ বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।
মন্তব্য