কারাগার ওয়েব সিরিজে চঞ্চল চৌধুরীর লুক প্রকাশ হওয়ার পর আবারও যেন নড়েচড়ে বসেছেন দর্শক। আর ট্রেইলার প্রকাশের পর তো নানা প্রশ্নের জন্ম নিচ্ছে দর্শকমনে।
দর্শকদের সেই কৌতূহল মিটবে ১৯ আগস্ট, সিরিজটি প্রকাশের পর। তার আগে কারাগার সিরিজটি নিয়ে নিউজবাংলা সঙ্গে কথা বলেছেন এর পরিচালক সৈয়দ আহমেদ শাওকী।
তিনি এখন রয়েছেন কলকাতায়। সেখানে সিরিজটির পোস্ট-প্রোডাশনের কাজ করছেন। শাওকী জানান, কারাগার সিরিজকে তিনি মিস্ট্রি বা রহস্যের বুননে বলতে চেয়েছেন।
শাওকী বলেন, ‘কারাগার মূলত বাংলাদেশের পার্টিকুলার একটি ইতিহাসের গল্প। যেটা বলতে গিয়ে আমরা মিস্ট্রি জনরাকে টুল হিসেবে ব্যবহার করেছি।’
সিরিজের ট্রেইলারে শোনা যায় চঞ্চল চৌধুরী কারাগারে বন্দি হয়ে আছেন ২৫০ বছর। তাহলে চঞ্চল আসলে কী? মানুষ না অন্য কিছু? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাওকী বলেন, ‘চঞ্চল চৌধুরীর চরিত্রটি হিস্টোরিক্যাল। মূলত তিনি গুরুত্বপূর্ণ হিস্ট্রির সাক্ষী। রহস্যময় তো বটেই। তবে কোন হিস্ট্রির কোন পাতার সাক্ষী, সেটা জানতে আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।’
ইতিহাস যেখানে আছে, সেখানে তো টাইম পিরিয়ডের বিষয় রয়েছে। সিরিজে সেটা কীভাবে ধরা দেবে, তা জানাতে চাননি শাওকী।
পরিচালক নিজেই জানান, ট্রেইলার প্রকাশের পর কিছু বিষয় নিয়ে দর্শকের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে এবং সেগুলো তিনি জানতেও পেরেছেন। যার মধ্যে রয়েছে মীরজাফরের মৃত্যু।
ট্রেইলারে চঞ্চল বলেন, মীরজাফরকে তিনি খুন করেছেন। কিন্তু ইতিহাস বলছে মীরজাফর কুষ্ঠ রোগে মারা গিয়েছিলেন। তাহলে কি তথ্যটি ভুল দেয়া হয়েছে? শাওকী বলেন, ‘না, এমন আরও অনেক বিষয় নিয়ে আমরা ট্রেইলারে প্রশ্ন তুলেছি এবং আমরাই এর উত্তর দিয়েছি সিরিজে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু এটাই না, অনেকে বলছেন ২৫০ বছর আগের একজন মানুষ সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝল কীভাবে। এসব কনফিউশন দূর হবে আশা করি।’
মিস্ট্রি জনরাকে টুল হিসেবে ব্যবহার করে নির্মিত কারাগার সিরিজে রাখা উত্তরগুলো কি যৌক্তিক না মিস্ট্রি আকারে দেয়া হয়েছে- জানতে চাইলে শাওকী বলেন, ‘এটা বলা কঠিন। আমরা উত্তর দিয়েছি, এখন দর্শকরা এটাকে কীভাবে গ্রহণ করবেন সেটা তাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।’
চঞ্চলকে নিয়ে শাওকী নির্মাণ করেছিলেন তাকদীর। যেখানে তারা কনটেমপোরারি সময়কে ধরতে চেয়েছিলেন আর কারাগার-এ রাখতে চেয়েছেন হিস্ট্রি এলিমেন্ট, জানান শাওকী।
তিনি বলেন, ‘আমরা গল্পটা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম এটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। এক সিরিজে সব বলা সম্ভব হচ্ছে না। খেয়াল করলে দেখবেন, এটা কারাগার পার্ট ওয়ান।’
শাওকী আরও বলেন, ‘অনেক কেন-রই উত্তর এখন দেয়া যাচ্ছে না। আশা করছি সিরিজটি মুক্তি পেলে সব কেন’র উত্তর দর্শকরা পাবেন।’
কারাগার ওয়েব সিরিজের গল্প লিখেছেন নেয়ামত উল্লাহ মাসুম। এটি মুক্তি পাবে হইচই ওয়েব প্ল্যাটফর্মে। গল্পের ধারণা দিয়ে জানানো হয়েছে, আকাশনগর সেন্ট্রাল জেলে ৩২৫ জন কয়েদি। একদিন হেড-কাউন্টের সময় পাওয়া গেল একজন অতিরিক্ত কয়েদি। কয়েদি কম হলে চিন্তার বিষয়, বেশি হলে আরও চিন্তার বিষয়। কে এই কয়েদি? আর যে সেল কি না ৫০ বছর ধরে বন্ধ, সেই ১৪৫ নাম্বার সেলে কয়েদি কীভাবে এলো?
এতে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, ইন্তেখাব দিনার, বিজরী বরকতউল্লাহ্, তাসনিয়া ফারিণ, এফ এস নাঈম, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, এ কে আজাদ সেতুসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:পাঁচ বছর পর সিনেমা প্রদর্শন ব্যবসায় নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় প্রেক্ষাগৃহ যশোরের মণিহার। শুক্রবার থেকে সেখানে প্রদর্শন শুরু হয়েছে মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত সিনেমা হাওয়া। সিনেমাটি দেখতে যেন ঢল নেমেছে দর্শকদের।
মণিহার কর্তৃপক্ষ নিউজবাংলাকে জানান, তিন দিনে ১০টি শোতে প্রায় ১১ হাজার দর্শক সিনেমাটি দেখেছেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) প্রেক্ষাগৃহে টিকিট বিক্রির পরিমাণ ৩ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা। এক দিনে এমন সেল হয়নি গত ৫ বছরে।
এর আগে মনপুরা, আয়নাবাজি, বস-২ সিনেমায় ব্যবসা ভালো হয়েছিল। তবে সেই রেকর্ডও ভেঙেছে হাওয়া। দিনের মধ্যে বিকেল ও সন্ধ্যার শো-তে দর্শকদের ভিড় বেশি। শনি ও রোববারও দর্শকদের উপস্থিতি ছিল বাঁধভাঙা।
মণিহারের টিকিট বিক্রেতা শামীম হোসেন বলেন, ‘তিন দিনে ১০টি শো প্রায় হাউসফুল হয়েছে। দর্শকদের এই উন্মাদনা দেখে আমাদের খুব ভালো লাগছে।’
মণিহার সিনেমা হলের টিকিট পরিদর্শক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হলে দর্শক ফিরে আসায় খুবই ভালো লাগছে। এমন ভালো সিনেমা নির্মিত হলে দর্শকও ফিরবে।’
শহরের বেজপাড়া এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সাদা সাদা কালা কালা গান শুনে সিনেমা দেখার মনস্থির করলাম। যে কারণে অনেক কষ্ট করে টিকিট সংগ্রহ করে সিনেমাটি দেখেছি। ভালো লেগেছে।
উপশহর এলাকার সোহেল রানা বলেন, ‘পরিবার নিয়ে দেখার মতো সিনেমা। এ ধরনের সিনেমা নির্মাণ হলে বাংলা চলচ্চিত্র আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।’
যশোর মণিহার সিনেমা হলের ম্যানেজার তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘গত ৪-৫ বছর পর এমন দর্শকদের সাড়া পাওয়া গেল।’
মণিহারে ব্ল্যাকেও টিকিট বিক্রি হয়েছে। ‘এই টিকিন নেন টিকিট। ওপরে দ্বিতীয় তলায় (এসি) ১৫০। নিচে ১২০। এই টিকিট নেন টিকিট।’
যশোর মণিহারে দর্শককে উদ্দেশ্য করে টিকিট ব্ল্যাকারদের এমন হাঁকডাক দেয়ার দৃশ্য বহু বছর দেখেননি মণিহার সিনেমার হল চত্বরে চা-পান বিক্রেতা নজরুল। তার ভাষ্যমতে, ‘এখন তো আর ভালো সিনেমা হয় না, তাই দর্শকও আসে না। দর্শক ফিরেছে, সঙ্গে ব্ল্যাকারও বেড়েছে।’
পরাণ সিনেমাতেও ভালো দর্শকের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। তার চেয়ে দর্শক দ্বিগুণ হাওয়া সিনেমাতে, জানান মণিহার কর্তৃপক্ষ।
মণিহার সিনেমা হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মিঠু জানান, ১৯৮৩ সালে সোহেল রানা-সুচরিতা অভিনীত ও দেওয়ান নজরুল পরিচালিত জনি সিনেমা দিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল মণিহার।
যাত্রার শুরু থেকেই ৯০ দশক পর্যন্ত ১৪৩০ সিটের মণিহারে দিনে চারটি শোতেই নামত দর্শকের ঢল। কিন্তু নব্বই দশকের পর দর্শক খরা শুরু হয়।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্মিত শনিবার বিকেল বা স্যাটারডে আফটারনুন সিনেমা তিন বছর ধরে আটকে আছে সেন্সর ও আপিল বোর্ডে।
এ নিয়ে রোববার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন এই নির্মাতা।
ফারুকী লিখেছেন, ‘আজকে সকাল সকাল মনটা খারাপ হয়ে গেল! এ রকম কত সকাল যে আমার গেছে। আমি একটা ছবি বানাইছি শনিবার বিকেল নামে। যেটা সেন্সর বোর্ড সদস্যরা দেখে বিভিন্ন পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিয়ে বললেন, আমরা দ্রুতই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি।
‘তারপর এক অদৃশ্য ইশারায় ছবিটার দ্বিতীয় শো করে তারা। এরপর বলে দিল, ছবি ব্যান। আমরা আপিল করলাম। আজকে সাড়ে তিন বছর হলো আপিলের। কোনো উত্তর নাই। এবং আমাদেরও বুঝি কিছু বলার নাই। কারণ তারাপদ রায়ের কবিতার মতো আমাদের কখন সর্বনাশ হয়ে গেছে আমরা টেরও পাইনি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আজকে শনিবার বিকেলের ওপর ইস্টার্নকিকের রিভিউটা হঠাৎ সাজেস্ট করল আমাকে অ্যালগোরিদম। এটা আমি আগে পড়ি নাই। পড়ে মনে হইলো আমরা ফুল, পাখি, লতা, পাতা নিয়া ছবি বানাইলে ‘‘ঠিক আছে”! এমন কিছু বানানো যাবে না যেখানে আমাদের চেহারা দেখা যায়।’
‘কিন্তু আমি তো চিরকাল সেইসব গল্পই বলে আসছি যেখানে আমাদের চেহারা দেখা যায়, সেটা প্রেমের গল্পই হোক আর রাজনীতির গল্পই হোক। আমি তো অন্য কিছু পারি না। তাহলে পাখি সব যে রব করবে, সেটা কি নতুন সুরে করতে হবে? নতুন সুর শিখতে হবে?’
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সেন্সরে জমা দেয়ার পর সেন্সর বোর্ড একাধিকবার দেখেছে সিনেমাটি। কিন্তু ‘স্পর্শকাতর বিষয়’ এবং ‘দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে’ উল্লেখ করে সিনেমাটিকে নিষিদ্ধ বা ব্যান করা হয়।
আপিলের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সেন্সর বোর্ডের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে রোববার দুপুরে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি বেশি দিন হয়নি, বিষয়টি নিয়ে আমি জানতামই না। আমি নোট করে রাখছি, খোঁজ নেব।’
তবে সেন্সর বোর্ডের উপপরিচালক মোমিনুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বছর দেড়েক আগে আপিল বিভাগ সিনেমাটি দেখেছিল, এরপর নতুন কোনো অগ্রগতি বিষয়ে আমি জানি না। আমাদের হাতে নেই, এটা আসলে এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।’
বাংলাদেশ, ভারত ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত শনিবার বিকেল। প্রযোজনায় আরও আছে জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ছবিয়াল এবং ভারতের শ্যাম সুন্দর দে।
এতে অভিনয় করেছেন অস্কার মনোনীত ওমর সিনেমার অভিনেতা ইয়াদ হুরানি, নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাহিদ হাসান, ইরেশ জাকের, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকে।
আরও পড়ুন:বিয়ে সব খানে, সব মানুষেরই জীবনে আনন্দের একটি বিষয়। এই আনন্দের বহিঃপ্রকাশে দেখা যায় নজরকাড়া আয়োজন। কিন্তু সেই আনন্দের পর অনেক সময় কষ্ট এসে হানা দেয় সংসারে।
সংসারে স্বামী-স্ত্রীর জীবনে নানা সমস্যা আসে, সেগুলো উতরে ওঠেন অনেকে। তবে কিছু সমস্যা থেকে যায় না বলা। সেগুলোরই একটি বৈবাহিক ধর্ষণ। আর এই ধর্ষণ ঘটনার ধর্ষক প্রায় সব সময় পুরুষ।
বিয়ের পর স্ত্রীর শরীর যেন পুরোপুরি স্বামীর- এমন ধারণায় ঘটতে থাকে বৈবাহিক ধর্ষণ। এমন ঘটনা নিয়ে ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেছেন নির্মাতা সায়ন্তন ঘোষাল।
হইচইতে প্রকাশ পাওয়া সিরিজটির নাম সম্পূর্ণা। এটি নির্মাণ করে প্রশংসা পাচ্ছেন নির্মাতা। কলকাতার সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে লিখছেন অনেকেই।
সিরিজটিতে একটি পরিবারকে দেখান হয়েছে, যেখানে বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার বাড়ির ছোট বউয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজনন্দিনী পাল। রাজনন্দিনী পালের স্বামী রুকু বা রক্তিমের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনুভব কাঞ্জিলাল। প্রায় প্রতি রাতেই রাজনন্দিনীকে শারীরিক নির্যাতন করেন অনুভব।
সব জেনে চুপ করে থাকেন রাজনন্দিনীর ভাসুর; এ চরিত্রের অভিনেতা প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শাশুড়ি চরিত্রে লাবণী সরকার, শ্বশুর রজত গঙ্গোপাধ্যায় এবং বাড়ির বড় বউয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহিনী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সিরিজে কী ঘটতে যাচ্ছে তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। সেই অর্থে সিরিজটি হয়ে উঠেছে প্রেডিক্টেবল। কিন্তু সায়ন্তন যে বিষয়টি নির্বাচন করেছেন, সেটি খুবই সময়োপযোগী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনে প্রকাশিত সম্পূর্ণা সিরিজের রিভিউয়ে আকাশ মিশ্র লিখেছেন, ‘সহজ কথায় বলতে গেলে এই সিরিজ একেবারেই অভিনয়ের জন্য দেখতে পারেন। কারণ সম্পূর্ণা সিরিজে সোহিনী নিজের এক শ শতাংশ উজাড় করে দিয়েছেন। প্রতিটি ফ্রেমে অসাধারণ তিনি। অভিনয়ের দিক থেকে সোহিনীর পর যার নাম আসে, তিনি হলেন লাবণী সরকার। অনেকগুলো শেড রয়েছে তার চরিত্রে। কখনও মা, কখনও শাশুড়ি, কখনও আবার সব সম্পর্ক ভুলে নারীর প্রতীক। সোহিনী ও লাবণীর অভিনয়ই এই সিরিজের সেরা প্রাপ্তি। বিষয় হিসেবে বৈবাহিক ধর্ষণকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই বাহবা প্রাপ্তি সায়ন্তনের। তবে চিত্রনাট্য আরও একটু শক্তপোক্ত হলে সিরিজটি জমে যেত।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজএইটটিন বাংলায় স্বরলিপি দাসগুপ্তা সম্পূর্ণা নিয়ে লিখেছেন, ‘সম্পর্কে গেলে প্রেমিকার সঙ্গে যখন যা খুশি করার যেন একটা অদৃশ্য ছাড়পত্র থাকে। এহেন কাঠামোয় ম্যারিটাল রেপ বিষয়টি যেন কিছু মানুষের কাছে সোনার পাথরবাটির মতো। বিয়ের পরে তো স্ত্রীর শরীরের মালিকানা স্বামীর কাছেই! স্বামী কি কখনও স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে পারে নাকি? সমাজের এই গতে বাঁধা প্রশ্নগুলিকেই উত্তর দিতে পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল মারিট্যাল রেপ-কে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষায় ওয়েব সিরিজ বানিয়ে ফেলেছেন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘সেভাবে চেনা জানা না থাকলেও, ইচ্ছে অনিচ্ছের কথা না ভেবেই পাত্র পাত্রী পৌঁছে যায় ফুল শয্যার রাতে। এমনটাই হয়ে এসেছে। কারণ সমাজ বলে দিয়েছে, এমনই করতে হয়। সেই নিয়ম মেনেই, ফুলশয্যার বিছানায় অপেক্ষারত লাজুক নন্দিনীর কাছে পৌঁছায় রুকু। নন্দিনীর মালিকানা এবার তার। চোয়াল শক্ত হয় রুকুর। পৌরুষ প্রকাশ করার সময় তার। নন্দিনী কী চাইছে তা জানার প্রয়োজনই মনে করে না সে। প্রথম রাতেই ম্যারিটাল রেপ-এর শিকার নন্দিনী।’
এমন সাহসী ও জরুরি বিষয় নিয়ে সিরিজ নির্মাণের জন্য সায়ন্তন ঘোষালকে কুর্ণিশ করেছেন স্বরলিপি।
৬ পর্বের সিরেজে বের হয়ে আসে সমাজের ভদ্র-নম্র একটি চরিত্রের ভেতরের চেহারা। স্বরলিপি লেখেন, ‘সিরেজে ক্লাইম্যাক্সের জন্য টানটান অপেক্ষা নেই। শেষটাও হয়তো সামান্য প্রেডিক্টেবল। কিন্তু তবুও এই ওয়েব সিরিজ শেষ পর্যন্ত দেখতে ইচ্ছে করবে।’
সায়ন্ত এর আগে নির্মাণ করেছেন ইণ্দু, গোরা, লালবাজার, ডার্ক ওয়েব, ব্যোমকেশসহ বেশ কটি ওয়েবসিরিজ।
আরও পড়ুন:তুমুল জনপ্রিয় হওয়া হাওয়া সিনেমার সাদা সাদা কালা কালা গানের গীতিকার-সুরকার হাশিম মাহমুদ। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর এসকেএস টাওয়ারের স্টার সিনেপ্লেক্সে হাওয়া সিনেমাটি দেখেছেন তিনি।
হাশিম মাহমুদ, তার মা, ভাই-স্বজনসহ ৫০ জন এসেছিলেন সিনেমাটি দেখতে। সিনেমাটির পরিচালক, শিল্পী, কলাকুশলীরাও ছিলেন এ প্রদর্শনীতে।
সিনেমা দেখা শেষে হাশিম মাহমুদ সাংবাদিকদের তার প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘সিনেমাটি দেখে ভালো লেগেছে। আমার গানটি দেশের মানুষ পছন্দ করেছে, এটা অনেক বড় পাওয়া।’
হাশিম মাহমুদ শারীরিক অসুস্থ এবং সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত।
হাশিম মাহমুদের সঙ্গে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি যখন চারুকলার শিক্ষার্থী তখন হাশিম ভাইকে পেয়েছি। উনাকে চিনি ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে। উনার গান এখন সারা দেশের মানুষ শুনছে, এর চেয়ে বড় বিষয় আর কী হতে পারে।’
মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, ‘চারুকলায় চঞ্চল ভাই আমার তিন বছর সিনিয়র ছিল। সেখানে আমার হাশিম ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। আমরা সবাই মিলে হাওয়া বানিয়েছি। সবাই মিলে সিনেমাটি দেখতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তবে হাশিম ভাইয়ের সুর ও গানের সঙ্গে দেশের মানুষ পরিচিত হলো, এটা অনেক বড় পাওয়া।’
হাশিম মাহমুদকে নিজের বাসায় রাখতে চেয়েছিলেন চঞ্চল চৌধুরী, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি তার। ফিরে গেছেন নারায়ণগঞ্জ।
নিউজবাংলাকে সিনেমাসংশ্লিষ্ট হৃদয় জুলফিকার জানান, নারায়ণগঞ্জ ফেরার পথে চারুকলা গিয়েছিলেন হাশিম মাহমুদ। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর চারুকলায় আসা হলো হাশিমের।
আরও পড়ুন:লুঙ্গি পরে স্টার সিনেপ্লেক্সে আসায় টিকিট না পওয়া সেই ব্যক্তি বৃহস্পতিবার রাতে সিনেমা দেখলেন স্টার সিনেপ্লেক্সের সনি স্কয়ারে।
সেই ব্যক্তির নাম সামান আলী সরকার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার শোতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা পরাণ সিনেমাটি দেখেছেন।
রাতে সনি স্কয়ারে সামান আলীর সঙ্গে দেখা করতে ছুটে গিয়েছিলেন পরাণ সিনেমার অন্যতম দুই অভিনয়শিল্পী বিদ্যা সিনহা মিম ও শরিফুল রাজ।
সামান আলীর সঙ্গে দেখা হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়েছেন মিম।
সেই পোস্টে মিম লেখেন, ‘সামান আলী সরকার চাচার সঙ্গে দেখা হলো। একদম সাদাসিধে একজন মানুষ, ভালো মনের মানুষ। পরাণ নিয়ে চাচার উচ্ছ্বাস আমাকে ছুঁয়ে গেছে। স্টার সিনেপ্লেক্সকে ধন্যবাদ ভুল বোঝাবুঝির এতটা দ্রুত অবসান করায়।
তিনি আরও লেখেন, ‘পরাণ জনমানুষের সিনেমা। পরাণ নিয়ে সবার এত উচ্ছ্বাস, আবেগ— দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে।’
এর আগে বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সামান আলী সরকারের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, লুঙ্গি পরে আসায় তার কাছে টিকিট বিক্রি করেনি।
সেই ভিডিওটি শেয়ার করে মিম লিখেছিলেন, ‘এই বৃদ্ধ বাবার সন্ধান দিতে পারবেন কেউ? আমাকে শুধু ইনবক্সে তার নাম্বার বা ঠিকানা ম্যানেজ করে দিন প্লিজ। আমি নিজে তার সঙ্গে বসে পরাণ দেখব। আমরা ছবিটা দেখব, বাবা-মেয়ে গল্প করব। আমাকে কেউ একটু যোগাড় করে দেন প্লিজ।
‘তাকে খুঁজে পেতে আমাদের সাহায্য করুন। উনি লুঙ্গি পড়েই পরাণ দেখবে আমার টিম সহ।’
পরবর্তীতে সামান আলীর টিকিট না পাওয়ার এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতিও দিয়েছে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এবং তাকে খুঁজে নিয়ে এসে বৃহস্পতিবার সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করে।
আরও পড়ুন:নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন ও তার টিমের জন্য হাওয়া সিনেমা নতুন রকমের সাহস। সিনেমাটি মুক্তির পর তেমনটাই মনে হচ্ছে তাদের। এক কথায় সফল বা বিফল না বললেও হাওয়া সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের যে উচ্ছ্বাস, তা সুমনকে নতুন কিছু তথ্য দিচ্ছে।
যেমন, সুমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে সিনেমার নিয়মিত যে ভাষা, হাওয়া সিনেমাটি তার থেকে কিছুটা আলাদা। সেটা একটা শঙ্কার বিষয় ছিল। কিন্তু দর্শক যেভাবে সিনেমাটিকে নিয়েছে তাতে নতুন ভাষায়, নতুন ধরনের গল্পে সিনেমা নির্মাণের সাহস পেয়েছি। এই সাহস শুধু আমরাই না, আমার ধারণা অনেকেই পেয়েছেন।’
শুক্রবার থেকে হাওয়া সিনেমা প্রদর্শিত হবে ৪১ প্রেক্ষাগৃহে। ২৩ থেকে ৪১ প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি প্রদর্শিত হওয়াটাও বোঝায় দর্শকদের আগ্রহের কথা।
সুমন প্রথম দিকে বেশি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি না দিতে চাইলেও, এখন তিনি এটি বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে, ‘দর্শকরা সিনেমাটি দেখতে চাইছে। তাদেরকেই যদি সিনেমাটি না দেখাতে পারি, তাহলে আর কাকে দেখাব।’
নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন। ছবি: নিউজবাংলা
এমন পরিস্থিতি তো পরিচালকের কাছে উদযাপনের মতো। কিন্তু সুমন উদযাপন করছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি উদযাপন করছি না। সিনেমা নির্মাণ করাটাই আমার কাছে উদযাপনের মতো।’
সিনেমা দেখে দর্শকরা প্রচুর রিভিউ দিচ্ছেন। অনেক কিছুই যেমন সুমনকে বিব্রত করছে, আবার অনেকগুলো তাকে চমকেও দিচ্ছে। তবে পরিচালক ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন বিষয়গুলো।
রিভিউয়ের ব্যাপারে সুমন বলেন, ‘বিধান রিবেরুর লেখা রিভিউ পড়ে আমি চমকে গেছি। তিনি যে বিষয়গুলো লিখেছেন, আমরা গল্প ও স্ক্রিপ্ট রিসার্চে সেভাবেই ভেবেছিলাম। যার মধ্যে সমাজতন্ত্র, বিভেদ, প্রেম, কাম, হিংসা, উঁচু-নিচু বিষয়সহ অনেক বিষয় ছিল। মানে জাহাজটাকেই আমরা সোসাইটি হিসেবে কল্পনা করে কাজগুলো করেছিলাম। নাসির উদ্দীন ইউসুফের লেখা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এ ছাড়া আরও ৪০-৫০টা লেখা পড়ে আমার ভালো লেগেছে।’
হাওয়া সিনেমা চলছে, আরও চলুক, বিদেশেও সিনেমাটি প্রদর্শিত হচ্ছে। সুমন খবর রাখছেন সবকিছুরই, তবে এর মধ্যে চিন্তা করছেন তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও।
সুমনের দ্বিতীয় সিনেমা শুরু হতে পারে আগামী বছর। তিনি জানান, এখনই যে কাজটি শুরু হচ্ছে এমন না। সময় নেবেন তিনি। এখন সেকেন্ড ড্রাফটে আছে স্ক্রিপ্টটি। স্ক্রিপ্ট, আর্টিস্ট নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।
জয়া আহসানের প্রযোজনায় সরকারি অনুদানের সিনেমাটিই হবে সুমনের দ্বিতীয় সিনেমা। যার ওয়ার্কিং টাইটেল রইদ। সিনেমার নামটি পরিবর্তন হতে পারে।
সুমন বলেন, ‘দ্বিতীয় সিনেমায় ঋতুর বিষয় রয়েছে। আবার সাগরের বিষয়ও রয়েছে। তবে এটি সাগরের গল্প না।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য