ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্ম হইচইতে শুক্রবার থেকে দেখা যাবে ওয়েব সিরিজ রিফিউজি।
সিরিজের গল্প আবর্তিত ২০০৭ সালে বিহারি ক্যাম্পের বাস্তবতাকে ঘিরে। বিহারিদের নাগরিকত্ব প্রশ্নে রাষ্ট্র তখনও ছিল সিদ্ধান্তহীন।
সেই সময় ক্যাম্পের এক সাধারণ ড্রাগ ডিলার ইকবালের জীবন জড়িয়ে যায় ‘কার্বন’ নামের কুখ্যাত বৈশ্বিক সন্ত্রাসীর সঙ্গে।
স্বপ্নচারী প্রিয় বন্ধু ওয়াসিম আর জেদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মারিয়াও যুক্ত হয়ে পড়েন জটিল হয়ে ওঠা ঘটনাচক্রে। সবাই জানে, ‘কার্বন’ এগোচ্ছেন ভয়ানক কোনো পরিকল্পনা নিয়ে, কিন্তু রহস্যময় এই সন্ত্রাসীর পক্ষ-বিপক্ষ নেয়াটা যেন হয়ে ওঠে কঠিনতম বিষয়।
প্রশ্নের মুখে পড়ে যায় জাতীয়তাবোধ, বন্ধুত্ব আর দেশপ্রেম নিয়ে প্রচলিত সব বিশ্বাস।
নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদের সঙ্গে রিফিউজির ক্রিয়েটর হিসেবে আছেন ইমতিয়াজ হোসেন ও আদনান হাবিব। সিরিজটির প্রযোজনা করেছে সেন্সমেকারস।
ছয় পর্বের সিরিজ পরিচালনা করেছেন ইমতিয়াজ হোসেন। এতে ইকবাল চরিত্রে দেখা যাবে সোহেল মণ্ডলকে। এর বাইরে ওয়াসিম চরিত্রে সিরাজ শরীফ, মারিয়া চরিত্রে জাকিয়া বারী মম এবং কার্বন চরিত্রে আফজাল হোসেনকে দেখা যাবে।
সিরিজে আরও অভিনয় করেছেন মনির খান শিমুল, শাহেদ আলী, ঝুনা চৌধুরী, আমিনুর রহমান মুকুল ও সাক্ষ্য শহীদ।
কোরবানির ঈদের জন্য নাটক নির্মাণ করেছেন বরেণ্য নির্মাতা হানিফ সংকেত। নাটকের নাম রটে বটে-ঘটে না। প্রতি বছর দুই ঈদে দুটি নাটক নির্মাণ করেন তিনি।
বরাবরই তার নাটকে পাওয়া যায় আলাদা স্বাদ ও বৈচিত্র্য এবং একটি সামাজিক বক্তব্য। থাকে পারিবারিক ও সামাজিক চিত্র।
হানিফ সংকেত ছন্দে ছন্দে জানান, রটে বটে অনেক কিছুই, খুঁজলে আসল ঘটনা, আপনজনে বুঝতে পারে, কোনটা মিথ্যে রটনা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হানিফ সংকেত বলেন, ‘অনেক কিছু রটে বটে কিন্তু ঘটে না। একটি পরিবারের একমাত্র সন্তান সম্পর্কে নানান রটনা এবং তা থেকে অনেক ঘটনার জন্ম নেয়। সমসাময়িক এই নাটকটির বিভিন্ন দৃশ্যে বন্যায় অসহায় মানুষের ভোগান্তি, আমাদের মূল্যবোধ ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ফুটে উঠেছে।’
নাটকটির দৃশ্যায়ণ হয়েছে রাজধানীর মিরপুরের ফাগুন অডিও ভিশনের নিজস্ব কমপ্লেক্সে। প্রতিবারের মতো এটিও একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে নির্মিত পারিবারিক গল্পের নাটক। যেখানে মা-বাবা, ভাই-বোন, দুলাভাইয়ের মতো পরিবারের প্রিয় চরিত্রগুলো রয়েছে।
নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, দিলারা জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম, তানিয়া আহমেদ, ইরফান সাজ্জাদ, সোলায়মান খোকা, সুভাশিষ ভৌমিক, কাজী আসাদসহ অনেকে।
নাটকের সূচনা সংগীতের কথা লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী, কণ্ঠ দিয়েছেন পুলক অধিকারী ও রিয়াদ।
নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন হানিফ সংকেত। প্রচার হবে ঈদের দিন রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে, এটিএন বাংলায়।
আরও পড়ুন:দীর্ঘ সময় পর জুটি বেঁধে অভিনয় করলেন সালমান মুক্তাদির ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তাদের এক সঙ্গে দেখা যাবে আমি প্রেমিক হতে চাই নামের নাটকে।
মিষ্টি প্রেমের গল্পে নাটকটি রচনা করেছেন লিমন আহমেদ। নাটকটি পরিচালনা করেছেন জিয়াউদ্দিন আলম। সম্প্রতি এই নাটকের দৃশ্যধারণের কাজ শেষ হয়েছে। এটি প্রচার হচ্ছে রবি বিঞ্জ অ্যাপে।
নাটকটিতে সালমান ও হিমি ছাড়াও অভিনয় করেছেন মাসুম রেজওয়ান, জাকি আহমেদ জারিফ, আলভী প্রীতি, রাসেল আহমেদ, ডিকন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাটকটি নিয়ে সালমান মুক্তাদির বলেন, ‘নিজের অন্য ব্যস্ততার কারণে মাঝে অনেকদিন অভিনয় করা হয়নি। এখন কিছু কাজ করছি। দেখা যাক কতটুকু করতে পারি। একদম নিয়মিত হব কিনা জানি না তবে কাজ করব। খুব মজার একটি গল্পের নাটক। ঈদের আনন্দে এটি দর্শকের মনে বাড়তি খুশি যোগ করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি বলেন, ‘সালমানের সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। অনেকদিন পর আবারও কাজ করে ভালো লাগছে। খুব মজা করে কাজটি করেছি আমরা। মজার কিছু দৃশ্য আছে, সংলাপ আছে। দর্শক বিনোদিত হবেন বলেই আশা করছি।’
৪ বছর আগে এক সঙ্গে কাজ করেছিলেন সালমান মুক্তাদির ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি।
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) নাট্যকলা বিভাগের প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হয়েছে উইলিয়াম শেক্সপিয়র রচিত ‘এ মিডসামার নাইটস ড্রিম’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। নাট্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষ ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা প্রযোজনাটি নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জীব কুমার দে।
শেক্সপিয়র রচিত অন্যতম জনপ্রিয় ও সারা বিশ্বে অভিনীত কমেডি নাটক এটি। এথেন্সের ডিউক থিসিয়াস ও আমাজনদের রানি হিপ্পোলিটার বিয়ের পারিপার্শ্বিক ঘটনা অবলম্বনে রচিত এই নাটক। নাটকে দুই প্রণয়ীযুগল ও একদল শখের অভিনেতার অ্যাডভেঞ্চার প্রদর্শিত হয়েছে।
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন- শফিকুল, আরিফ, মৌমিতা, সাবরিনা, পরমা, অনামিকা, মৃত্তিকা, বৃষ্টি, সাবিহা, প্রিয়া, শাকিল, নিবিড়, জিন্নাত, নাফিস, মিল্টন, রিয়াজ, জান্নাতুল, লামিয়া, স্বর্ণা, উম্মেহানি, রিমি, বিথী, ফারজানা, সায়লা, সুজানা, আশরাফুল, উচ্ছ্বাস, হৃদয়, ইব্রাহিম, আলিমুল, আবেশ ও এলিন।
নাটকটির মঞ্চ আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান শামস্ শাহরিয়ার কবি। পোশাক পরিকল্পনা ও অঙ্গরচনা তত্ত্বাবধান করেন বিভাগীয় শিক্ষক আফরিন হুদা তোড়া। দেহবিন্যাস তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিভাগীয় শিক্ষক রুবাইয়া জাবীন প্রিয়তা ও কৃপাকণা তালুকদার। আলোক প্রক্ষেপণে ছিলেন মাহাবুবুর রহমান এবং মিউজিকে ইব্রাহীম এলিন ও হোসেন হৃদয়।
এছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা নেপথ্যে রয়েছেন। মঞ্চবিন্যাসে ছিলেন অনামিকা, মৌমিতা, শাকিল, দিনা, আরিফ, আলিম, নিবিড়, শাহিনুল, জান্নাতুল, সায়লা, লামিয়া, মিল্টন ও মুস্তাকিন।
নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক সঞ্জীব কুমার দে বলেন, শিক্ষায়তনে নাট্য প্রযোজনা সিলেবাসের আবর্তে চলমান। তারই ধারাবাহিকতায় জবি নাট্যকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রযোজনা এটি। এই নাট্য নির্মাণের ক্ষেত্রে ক্লাসিকের গুরুত্ব অক্ষুণ্ন রেখে সমসাময়িক বিষয়কে যুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কমেডি খুব সহজভাবে হাস্যরসের মধ্য দিয়ে জীবনের অসঙ্গতিগুলোকে সমাজের সামনে প্রকাশ করে। নাটকের কল্পকাহিনীর মূল বিষয় হলো হাস্যরস এবং প্রেম। প্রেম যেন একটা শৃঙ্খলাবিহীন হাস্যকর বিষয়। প্রেমে পড়া মানুষ অতি সহজেই জীবনের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে পরিণত হয়।
‘প্রেম আর যুক্তির সহাবস্থানের ক্ষেত্রে যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এই নাটকে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা হয়েছে। এই সংকটময় জটিল জীবনে প্রেমের জটিলতা যে হাস্যরস তৈরি করে তা দর্শক-মনকে প্রফুল্ল করবে আশা করছি।’
আরও পড়ুন:সাবিলা নূর তার বন্ধুদের নিয়ে রাস্তায় আড্ডা মারছিলেন। এ সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন অপূর্ব। তাকে দেখেই সাবিলা তার বন্ধুদের নিয়ে সিটি বাজিয়ে উত্ত্যক্ত করা শুরু করলেন অপূর্বকে! ২০২০ সালের নভেম্বরে এমন ঘটনার দেখা মেলে এক্সচেঞ্জ নাটকে।
নাটকটি জনপ্রিয়তা পাওয়ায়, সেই প্রেক্ষাপটে নাটক আসছে এবারের ঈদে। নাটকের নাম এক্সচেঞ্জ ২। আগের রূপেই হাজির হচ্ছেন সাবিলা নূর। বিপরীতে থাকছেন অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব।
সিএমভির ব্যানারে মেজবাহ উদ্দীন সুমনের চিত্রনাট্যে নাটকটি নির্মাণ করেছেন রুবেল হাসান। নাটকে দেখা যাবে, অপূর্বকে উত্ত্যক্ত করার পর এবার বিয়ে করছেন সাবিলা!
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাটকটি প্রসঙ্গে রুবেল হাসান বলেন, ‘আর নয় যৌতুক, আর নয় নারী নির্যাতন। পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ করুন। মূলত এই দিকটাই এবারের কাজটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা।’
প্রযোজক এসকে সাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, ‘নারীরা প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও মুষ্টিমেয় পুরুষের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন। কিন্তু যদি কোনো একদিন প্রকৃতি এমন করে দিত যে, এই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে পুরুষেরা- তখন আসলে কেমন হতো। তখন নিশ্চয় পুরুষরা বুঝতে পারত নারীদের যন্ত্রণার কথা। এমন পরিকল্পনা নিয়েই আমাদের এই বিশেষ প্রজেক্ট।’
ঈদ উপলক্ষে এক্সচেঞ্জ ২ নাটকটি প্রকাশ পাবে সিএমভির ইউটিউব চ্যানেলে।
আরও পড়ুন:তরুণরাই কেবল তার হাসির প্রেমে পড়েছে, এমন বললে কমই বলা হবে। ৮ থেকে ৮০- সবাই পছন্দ করছেন তাকে। যিনি দেখছেন, যেন তাকিয়ে থাকছেন কিছুক্ষণ। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে তার হাসির চর্চা আর মুগ্ধতার কথা; শেয়ার হচ্ছে তার ছবি।
সব মিলিয়ে তরুণ তুর্কি হয়ে যেন মিডিয়া দখল করতে এসেছেন তানজিম সাইয়ারা তটিনী। তার অবশ্য ‘দখল’ শব্দে আপত্তি।
‘আমি তো মাত্র শুরু করলাম। কোথায় যাব, কেমন হবে, কী করতে চাই, তার কিছুই এখনও জানি না বা ঠিক করা হয়নি।’ বললেন তটিনী।
এ অভিনেত্রীর সঙ্গে দেখা শনিবার সন্ধ্যায়, রাজধানীর ব্লকবাস্টার সিনেমা হলে। সেখানে ছিল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির অ্যান্থলজি সিনেমা এই মুহূর্ত-এর প্রিমিয়ার। সিনেমার কল্পনা নামের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন তটিনী।
আয়োজন শুরুর কিছুক্ষণ পর তটিনী ঢোকেন অনুষ্ঠানস্থলে। এসেই যে সবার নজর কেড়ে নিলেন এমন না, তবে তার ডাক পড়ল মূল স্টেজে। সেখানে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন অভিনেত্রী।
আলাদা করে কথা বলার সুযোগ চাইলে, সুযোগ দিলেন আন্তরিকতার সঙ্গেই। তখন পর্যন্ত নামের অর্থের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তিনি। ‘তটিনী’ শব্দের অর্থ নদী। কখনও শান্ত, কখনও খরস্রোতা। কথা বলার শেষ অবধি শুধু শান্ত ভাবটাই পাওয়া গেছে। তার ক্ষুরধার স্বভাবের কথা এখনও অপ্রকাশিত!
নদীপারের মানুষ জন্যই কি মেয়ের নাম তটিনী রেখেছিলেন বাবা-মা? না, সে গল্প শোনা হয়নি। তবে অভিনেত্রী যা জানালেন, সেটি এমন, ‘আমি বরিশালের মেয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমি বরিশালেই ছিলাম। ওখানেই আমার পড়ালেখা। আমার পরিবারের সবাই ওখানেই থাকেন। আমাদের যৌথ পরিবার না, তবে সবাই কাছাকাছি থাকেন। আমার ফ্যামিলির মধ্যে ভালোবাসা অনেক।’
একটি বিশেষ ব্যাপার বললেন তটিনী, সেটি হলো, ‘আমরা প্রায় সবাই পশুপাখির প্রতি সহানুভূতিশীল। আমার নানিভাই খুবই বিড়াল পালতে পছন্দ করতেন। আমিও দেখা গেছে, ছোট থেকে এখন পর্যন্ত আমার সঙ্গে একটা না একটা বিড়াল আছেই।’
‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’ এই মন্ত্রের কথা মনে হতে পারে অনেকের। তবে তটিনী ঈশ্বর পর্যন্ত যাচ্ছেন না, তটিনীর কাছে জীবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া মানে জীবনের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, সর্বোপরি মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
আবার বরিশালে ফিরে যাওয়া যাক। সেখানেই বড় হয়ে উঠছিলেন তটিনী। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পার হলেন। বিষয় ছিল বিজ্ঞান। লেখাপড়া করতে করতে তার ইচ্ছে হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়ার এবং সেই কারণেই তার প্রথম ঢাকায় আসা।
ঢাকায় আসার গল্পটা পরে, আগে জেনে নিই মেডিক্যালে পড়ার ব্যাপারে কী হলো-
‘যারা মেডিক্যালে পড়তে চান, তাদের প্রায় সবারই ইচ্ছে থাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার, কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল বরিশাল মেডিক্যালে পড়ার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা আর হয়নি।’
নিজের ইচ্ছের মৃত্যুতে ব্যথিত নন তটিনী বরং, বলা যায় খুশি। কারণ নিজের বর্তমান অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট এ অভিনেত্রী। বলেই ফেললেন, ‘আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন’।
এখন আসি ঢাকায় আসার গল্পে। ঢাকায় তটিনী এসেছিলেন মেডিক্যালের পরীক্ষা দেয়ার জন্য। পড়ুয়া সেই মেয়ের রোগীর সেবা করার স্বপ্ন কোন সময় অভিনয়ে ঠেকেছে বুঝতেই পারেননি তিনি!
‘২০১৯ সালের মার্চের কথা। আমার এক পরিচিতর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের অডিশনে যাই। একদম কৌতূহল থেকেই গিয়েছিলাম এবং কাজটি হয়ে গেল। কখনও ভাবিইনি অভিনয় করব। কাজে আসার পর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’ বলেন তটিনী।
শুরুর দিকে অনেক জড়তা কাজ করত অভিনেত্রীর। এক বছর হয়েছে নাটকে অভিনয় করছেন এবং ধীরে ধীর কাজের চাপ বাড়ছে বলে জানান তটিনী। কাজ আসাটা সমস্যা না, কিন্তু সেখান থেকে পছন্দের কাজটি নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে অভিনেত্রীর জন্য। বিবেচনা বা নির্বাচন করার মতো এতটা অভিজ্ঞতা অভিনেত্রীর না হলেও নিজের কাছে সেটি ভালো লাগছে, সেই কাজে যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন তিনি।
কাজ করতে ভালোই লাগছে তটিনীর। আগামীতে আরও ভালো কাজ করার ইচ্ছা অভিনেত্রীর। ধীরে ধীরেই এগোতে চান। আর যাই হোক ঝরে যেতে চান না তিনি।
বললেন, ‘সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সে জন্য অনেকবার ভাবছি। নেতিবাচক জিনিসটা আগে ভাবছি। চেষ্টা করব যেন সব ঠিক রেখে এগিয়ে যাওয়া যায়।’
অভিনয় জগতে এমন একজন অভিনেত্রী এসেছেন, যাকে নিয়ে অনেকেই তাদের মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন, সেই তরুণ কেমন কর্মপরিবেশ পাচ্ছেন জানতে চাইলে তটিনী বলেন, ‘আর্থিকভাবে পরিবেশটা কেমন সেটা নিয়ে এখনই মন্তব্য করার মতো অবস্থায় নেই আমি। আমার ভালোই মনে হয়েছে। তবে যেটা বেশি জরুরি নতুনদের জন্য, সেই সমর্থন আমি পেয়েছি, পাচ্ছি। দুজন মানুষের কথা আমি বিশেষ করে উল্লেখ করতে চাই, সাবরিনা আইরিন আপু ও আশফাকুজ্জামান বিপুল ভাইয়া। এদের হাত ধরেই আমার আসা। আমি অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছেন, মেজর সাবজেক্ট মার্কেটিং। তৃতীয় বর্ষ শেষ করেছেন মাত্রই। বিদ্যাপীঠ থেকে পাওয়া জ্ঞানও কাজে লাগাতে চান তিনি। চাকরি করতে চান, তবে বিষয়গুলো নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা এখনই নেই তটিনীর।
বাড়ির ছোট মেয়ে তানজিম সাইয়ারা তটিনী। স্বভাবতই আদরের। মা-বাবা, বড় ভাই আর ভাবিকে নিয়ে তার পরিবার। সেই আদর আর দর্শকের ভালোবাসা নিয়ে আপাতত শুধু এগিয়ে যাবার পালা।
ঈদে তটিনীকে দেখা যাবে আফরান নিশোর সঙ্গে বাঁচিবার হলো তার সাধ ও জোভানের বিপরীতে সুহাসিনী নাটকে।
সম্প্রতি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে অংশীদারত্বে ‘নৈঃশব্দে ৭১’ নাটক মঞ্চায়ন করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। রাজধানীর নিউ বেইলি রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মঙ্গলবার নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে।
বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ৭০ বর্ষপূর্তি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেয়া হয়।
বাংলাদেশ যুদ্ধের আগে কেমন ছিল, কীভাবে যুদ্ধ শুরু হয় এবং যুদ্ধের পরিণতির গল্প তুলে ধরার মাধ্যমে ‘নৈঃশব্দে ৭১’ নাটকে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস মঞ্চায়িত হয়। ফিজিক্যাল স্টোরি টেলিং কৌশল ব্যবহার করে নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয়।
নাটকটি পরিচালনা করেন সিঙ্গাপুরের গ্লাসগো-ভিত্তিক মঞ্চ নাটক নির্মাতা রামেশ মেয়্যাপ্পান। তিনি একইসঙ্গে ভিজ্যুয়াল ও ফিজিক্যাল থিয়েটার স্টাইল সামঞ্জস্যের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী পারফরমেন্স উপস্থাপন করেন।
৩০ মিনিটের এই পারফরমেন্সে অংশ নেন দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের ১৫ জন শিল্পী। তারা অভিনয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেন।
সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে অংশীদারত্বে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডেয়ার (ডিজঅ্যাবিলিটি আর্টস রিডিফাইনিং অ্যামপাওয়ারমেন্ট) প্রকল্পের একটি অংশ এই কার্যক্রম। ডেয়ার প্রকল্পের লক্ষ্য দেশের ডিজঅ্যাবিলিটি এবং শিল্পকলা খাতের মধ্যে সেতুবন্ধ এবং আস্থার জায়গা তৈরি করা। এটি শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতার সঙ্গে জড়িত সমাজের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পাশাপাশি শিল্পকলা, শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা ও সমাজের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করছে।
ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে অংশীদারত্বে ২০১৯ সালে ডেয়ার চালু হয়। এরপর থেকে এটি দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে কাজ করছে। এই প্রকল্পের অধীনে ডিজঅ্যাবিলিটি আর্টের একটি টেকসই প্ল্যাটফর্ম তৈরির লক্ষ্যে ডিজঅ্যাবিলিটি থিয়েটার নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায় সে সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পেতে বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পী এবং স্থানীয় নাট্য সংগঠনের শিল্পীরা একসঙ্গে কাজ করছেন।
নির্মাতা রামেশ মেয়্যাপ্পান বলেন, ‘আমাকে যখন ইশারা ভাষায় বাংলাদেশের নামের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়, তখন আমি এই দেশের ইতিহাসের পেছনের আবেগ বুঝতে সক্ষম হই। কষ্ট ও বেদনার অসাধারণ অভিব্যক্তির মাধ্যমে এই ইতিহাস তুলে ধরতে এই দুঃসাহসী দলটি যে আগ্রহ দেখিয়েছে তা সত্যিই অতুলনীয়।
‘এই মানুষগুলোর মনের কথা সবার সামনে প্রকাশের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের কথা শোনা ও বোঝার প্রচেষ্টাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ঢাকা থিয়েটারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
আরও পড়ুন:মঞ্চে থিয়েটারের নাটক নিয়মিত মঞ্চস্থ হলেও নতুন নাটক আসছে ৭ বছর পর। নতুন এ প্রযোজনার নাম ‘পোহালে শর্বরী’। এটি থিয়েটারের ৪৭তম প্রযোজনা।
সুরেন্দ্র বর্মার নাটকটি অনুবাদ করেছেন অংশুমান ভৌমিক। এটি নির্দেশনা দিচ্ছেন রামেন্দু মজুমদার। ২০০৩ সালে শেষ নাটক নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। সহকারী নির্দেশক হিসেবে আছেন ত্রপা মজুমদার।
নাটকটি মঞ্চস্থ হবে ১ ও ২ জুলাই, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায়, ৫টা ৩০ ও ৭টা ৩০ মিনিটে। এখন চলছে নাটকের মহড়া।
নিউজবাংলাকে ত্রপা মজুমদার বলেন, ‘আমরা এবার নতুন একটা কাজ করতে যাচ্ছি। সেটা হলো, নাটকে এক চারিতে দুজন করে অভিনয় করছি। অর্থাৎ প্রথম শো-তে যারা অভিনয় করবেন, দ্বিতীয় শো-তে তারা থাকবেন না। দ্বিতীয় শো-তে থাকবেন অন্য অভিনয়শিল্পীরা।’
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ত্রপা বলেন, ‘নির্দেশকের (রামেন্দু মজুমদার) মতে, এতে করে অনেক অভিনয়শিল্পী একটি প্রোডাকশনের কাজ করার সুযোগ পাবে। আর, কোনো একজন শিল্পী না থাকলে মঞ্চায়নের সমস্যা হবে না।’
নাটকের নির্দেশক রামেন্দু মজুমদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা যখন নতুন নাটকের জন্যে পাণ্ডুলিপির খোঁজ করছিলাম, তখন সুরেন্দ্র বর্মার এ নাটকটির সন্ধান দেন খ্যাতিমান সমালোচক প্রীতিভাজন অংশুমান ভৌমিক। বিষয়বস্তুর কথা জেনে উৎসাহিত হই, কারণ সমাজে নারীর অবস্থান আমরা আমাদের একাধিক নাটকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
‘মহাভারতের যুগের মাধবী থেকে আমাদের কালের কোকিলারা কেবল পুরুষের প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হয়েছে। তেমনি দেড়-দুই হাজার বছরের আশপাশে এক কালখণ্ডে রাজবংশের উত্তরাধিকারের সংকটে নারীকে তার কামনা-বাসনার কোনো মূল্য না দিয়ে নিছক সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করার এক কাহিনি বিধৃত হয়েছে এ নাটকে।’
এর পাশাপাশি নাটকে ধর্মের অনুশাসন ও রাজনীতির কূটকৌশলের কারণে পুরুষের শিকার হওয়ার বিষয়ও রয়েছে বলে জানান রামেন্দু মজুমদার।
তিনি আরও বলেন, ‘নাটকের স্থান-কাল-পাত্রের ক্ষেত্রে শিল্পের স্বাধীনতা নিয়েছি আমরা। স্থান বা পাত্র কিছুটা নির্দিষ্ট করা গেলেও কালের ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা নিয়মে নিজেদের খুব একটা বাঁধিনি– পোশাক বা মঞ্চসজ্জায় তার প্রভাব লক্ষণীয়। বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্য যেমন আজও প্রাসঙ্গিক, উপস্থাপনা রীতিও তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখারই চেষ্টা করেছি আমরা।’
নাটকটির কাজ দুই বছরের বেশি সময় আগে শুরু হয়েছিল বলে জানান নির্দেশক। করোনা মহামারির কারণে প্রস্তুতি থেমে যায়।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘নির্দেশনার সিংহভাগ কাজ করেছেন ত্রপা মজুমদার। তরুণ প্রজন্মই থিয়েটারকে এগিয়ে নিতে পারে- এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।’
সামাজিক বিধিবিধান, ব্যক্তিমানস বিশেষ করে নারীর চাওয়া-পাওয়াকে মর্যাদা দিতে এখনও উদাসীন। পোহালে শর্বরী যদি দর্শকদের এ বিষয়ে কিছুটা হলেও ভাবায়, তবেই এ প্রচেষ্টা অর্থবহ বলে জানান রামেন্দু মজুমদার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য