সংঘবদ্ধ ধর্ষণের উসকানি ও আবহ থাকায় বডি স্প্রের বিজ্ঞাপনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ভারতে।
বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটিতে দেখানো হয়েছে, চারজন পুরুষ একটি সুপারমলে একজন ভীতসন্ত্রস্ত নারীকে উদ্দেশ করে তার পেছন থেকে বলেন, ‘‘আমরা চার জন, তিনি একা, কে ‘সট’ নেবে?’’
শঙ্কিত নারীটি ঘাড় ঘুরিয়ে তাদের দিকে তাকালে ইঙ্গিতপূর্ণ কথাটি অন্য প্রসঙ্গে নিয়ে যান। ওই চার যুবক দেখাতে চান সেলফে সাজিয়ে রাখা সট নামের বডি স্প্রে নিয়ে কথা বলছেন তারা। তারা এমন ভান করেন যে কে কার আগে এই বিশেষ ব্র্যান্ডের বডি স্প্রেটি সেলফ থেকে নেবে তাই নিয়ে কথা হচ্ছিল তাদের মধ্যে।
কমার্শিয়ালটি নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অনেক তারকা অভিনেতা বিজ্ঞাপনটির সমালোচনা করে বলেন, এতে স্পষ্টতই নারীর প্রতি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের আবহ রয়েছে।
বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, রিচা চাড্ডা এবং ফারহান আখতারসহ অনেকে এই বিজ্ঞাপনের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
অনেকে বলেন, বিজ্ঞাপনটি এমন এক সময় সম্প্রচার শুরু করে যখন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হায়দরাবাদে এক নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এবং এর প্রতিবাদে উত্তাল গোটা ভারত। গত সপ্তাহে পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে ওই নারীকে তাদের গাড়িতে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।
শনিবার দিল্লি কমিশন ফর উইমেনের চেয়ারম্যান স্বাতী মালিওয়াল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে লিখিত অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘এই বিজ্ঞাপনটি স্পষ্টতই নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ও হয়রানি প্রচার করছে এবং পুরুষদের মধ্যে ধর্ষক মানসিকতাকে উসকে দিচ্ছে। বিজ্ঞাপনটির নেতিবাচক প্রভাব খুবই ভয়াবহ এবং গণমাধ্যমে এটি সম্প্রচারের অনুমতি দেয়া উচিত হবে না।’
অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি বন্ধ করে দেয় মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে টুইটার এবং ইউটিউবকে তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে এটি সরাতে নির্দেশ দেয়।
টুইটারকে দেয়া বার্তায় মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘শালীনতা এবং নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকলে এমন নেতিবাচকভাবে নারীকে এই বিজ্ঞাপনে উপস্থাপন করা যেত না। এর মাধ্যমে গণমাধ্যম ও কোম্পানিটি ডিজিটাল মিডিয়া আইনে উল্লেখিত নৈতিকতার ধারাকে লঙ্ঘন করেছে।’
সোমবার একটি বিবৃতিতে কোম্পানিটি লেয়ার সটের বিজ্ঞাপনের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বলে, ‘তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কারও অনুভূতি বা নারীকে হেয়ভাবে উপস্থাপন করে আঘাত করতে চায়নি।’
বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নেয়ার পরও এটি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।
বিজ্ঞাপনটি নিয়ে বিরক্তি ও হতাশা প্রকাশকারীদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী রিচা চাড্ডা। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের নোংরামি প্রকাশ পেয়েছে এতে। তারা ঘৃণ্য জিনিস তৈরি করেছে।’
বিজ্ঞাপনটিকে লজ্জাজনক ও বিরক্তিকর উল্লেখ করে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে এটি সরিয়ে নেয়ায় মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ।’
পরিচালক ও অভিনেতা ফারহান আখতার বলেন, এই বিজ্ঞাপনে নির্মাতাদের নিচু ও ঘৃণ্য মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:ভারতের জনপ্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট AltNews-এর প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের ও সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি একটি অপদার্থ দল।’
আসানসোলে মঙ্গলবার এক কর্মিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা বলেন।
বিজেপি নেতৃত্বকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘যখন আপনাদের নেতারা ধর্ম নিয়ে মিথ্যা বলেন, ঘৃণা ছড়ান, তখন আপনারা তাদের গ্রেপ্তার করেন না। আর আমরা কথা বললে খুনি বানিয়ে দেন। জুবায়েরকে কেন গ্রেপ্তার করলেন? তিস্তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে? ওরা কী করেছেন? গোটা দুনিয়া এর নিন্দা করছে।’
AltNews-এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ জুবায়েরকে সোমবার গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন খবরকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন এই জুবায়ের। দিল্লি পুলিশের তরফে বলা হয়, দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলে জুবায়েরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয় সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদকে। গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে গুজরাট এটিএস মুম্বাইয়ের বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
মহানবীকে (সা.) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার নাম উল্লেখ না করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘আমি নাম নেব না। আমরা নাম নিতে চাই না। কিন্তু যারা ধর্ম তুলে গালাগালি করেন, তাদের আপনারা গ্রেপ্তার করেন না কেন? তবে আমাদের সরকার তাকে সমন পাঠিয়েছে। আমরা ছাড়ব না।’
আরও পড়ুন:জার্মানির এলমাউতে জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলো এবং ভারতসহ এর পাঁচটি অংশীদার দেশ সোমবার ‘২০২২ রেজিলিয়েন্স (সহনশীলতা) ডেমোক্রেসি স্টেটমেন্ট’-এ স্বাক্ষর করেছে। এতে ‘সুশীল সমাজের স্বাধীনতা ও বৈচিত্র্য রক্ষা’ এবং ‘অনলাইন ও অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ থাকার কথা ঘোষণা রয়েছে।
ওই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক টুইটারকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক অ্যাকাউন্ট ও আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ফ্রিডম হাউস, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং কৃষকদের বিক্ষোভের সমর্থকদের কিছু টুইট ব্লক করতে বলা হয়েছিল।
২৬ জুন টুইটারের প্রকাশ করা এক নথিতে এ তথ্য পাওয়া গেছে। লুমেন ডাটাবেজে দাখিল করা নথি অনুসারে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২৯ ডিসেম্বর এসব অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
খবরটি প্রথম ‘এনট্র্যাকার’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে খবরটি প্রথম প্রকাশ পায়। তাতে দাবি করা হয়েছে, বিষয়বস্তু অপসারণে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধগুলো ২৪ ব্যাচে এসেছিলো। কিন্তু রোববার টুইটারে তা প্রকাশ করা হয়েছে (দৃশ্যত প্রয়োগ করা হয়েছে)।
অনলাইন তথ্য বা পোস্ট অপসারণের অনুরোধগুলো ট্র্যাক করে লুমেন ডাটাবেজ৷ এই ডাটাবেজে গুগল, ফেসবুক ও টুইটারের মতো নেতৃস্থানীয় ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর ওয়েব লিঙ্ক বা অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
টুইটারে প্রকাশ করা নথি অনুসারে, সামাজিক নেটওয়ার্কটিকে সরকার আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ফ্রিডম হাউসের টুইটগুলোকে ব্লক করতে বলেছিল- যা বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেটে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকার নিয়ে গবেষণা এবং সমর্থন করে। নথি অনুসারে, সরকার টুইটারকে বিধায়ক জার্নাইল সিংসহ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির সদস্যদের টুইটগুলো ব্লক করার অনুরোধ করেছিল।
কিষাণ একতা মোর্চার অ্যাকাউন্ট ব্লক করতে সরকার টুইটারকে অনুরোধ করেছিল। সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, কৃষক ইউনিয়নগুলোর যৌথ মঞ্চ সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা (এসকেএম) তাদের টুইটগুলো ব্লক করতে সরকারের অনুরোধের তীব্র সমালোচনা ও আপত্তি জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে কিষাণ মোর্চা বলেছে, ‘সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা কোনো সতর্কবাণী ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত টুইটার অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করার তীব্র বিরোধিতা করছে৷ টুইটার ভারতে প্রায় এক ডজন টুইটার অ্যাকাউন্ট আটকে রেখেছে, যার মধ্যে @kisanektamorcha খামার আন্দোলনে যুক্ত টুইটার হ্যান্ডেল রয়েছে।’
সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কমিটি ফর প্রটেকশন অফ জার্নালিস্ট’ সাংবাদিক রানা আইয়ুব ও সিজে ওয়ারলেম্যানের টুইট ব্লক করার ভারত সরকারের পদক্ষেপের নিন্দা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জার্মানিতে জি-৭ সম্মেলনে অংশ নেয়ার পর এক বিবৃতিতে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘জার্মানি, আর্জেন্টিনা, কানাডা, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের গণতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে।
‘উন্মুক্ত গণ বিতর্ক, স্বাধীন ও বহুত্ববাদী মিডিয়া এবং অনলাইন ও অফলাইনে তথ্যের অবাধ প্রবাহ সক্ষম করে, যা নাগরিক এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য বৈধতা, স্বচ্ছতা, দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে।
দুটি খবরে মোদি সরকারের দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
আরও পড়ুন:ভারতের জনপ্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট AltNews-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের নিন্দা করেছে এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া। ভারতের প্রেস ক্লাবও জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে।
এডিটরস গিল্ড মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘AltNews-এর সতর্ক নজরদারি সমাজে মেরুকরণের হাতিয়ার হিসেবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ব্যবহারকারী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব জাগিয়ে তোলার কাজে সংশ্লিষ্টদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল।
‘২০২০ সালের এক মামলায় জুবায়েরকে দিল্লি পুলিশের বিশেষ শাখায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। এই মামলায় গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে সুরক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। জুবায়ের যখন সমনের জবাব দিয়েছিলেন, তখন চলতি জুন মাসের শুরুতে শুরু হওয়া একটি অপরাধমূলক তদন্তের ক্ষেত্রে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জুবায়েরের ২০১৮ সালের একটি পোস্ট ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে- এমন একটি বেনামি টুইটার হ্যান্ডেল-এর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
গিল্ড দাবি করেছে, দিল্লি পুলিশ অবিলম্বে জুবায়েরকে মুক্তি দিক। কারণ জার্মানিতে জি-৭ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো জোরদার করতে অনলাইন ও অফলাইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করে একটি স্থিতিস্থাপক গণতন্ত্র নিশ্চিত করার জন্য এটি প্রয়োজন।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন গিল্ডের সভাপতি সীমা মুস্তাফা, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কাপুর ও কোষাধ্যক্ষ অনন্ত নাথ।
সংবাদের নিরপেক্ষতা, সংবাদমাধ্যমের ঋজু অবস্থান, সাংবাদিকতার মৌলিক দর্শন যখন প্রশ্নের মুখে তখন বিকল্প সংবাদের ধারণা তৈরিতে কাজ করছিল AltNews। ফ্যাক্ট চেকিং জার্নালিজমকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে এই প্রতিষ্ঠান। তা নিয়ে যখন জাতীয় রাজনীতি নতুন করে আন্দোলিত হচ্ছে তখন জুবায়ের সম্পর্কে আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে।
পুলিশি হেফাজতে থাকা এই সাংবাদিকের নাম রয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সম্ভাব্যদের তালিকায়। নরওয়ের রাজধানী অসলোর পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট চলতি বছরের মে মাসে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সম্ভাব্যদের নিয়ে যে তালিকা করেছে তাতে জুবায়েরের নাম রয়েছে। AltNews-এর আরেক প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহার নামও রয়েছে ওই তালিকায়। সে সঙ্গে ভারত থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য পিআরআইও-এর সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম রয়েছে বিশিষ্ট সমাজকর্মী হর্ষ মন্দারের।
ভারতের রাজনৈতিক মহলেও জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের বিরোধিতায় একাধিক নেতা সরব হয়েছেন। সোমবার তাকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে টুইট করে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সত্যের একটি কণ্ঠকে গ্রেপ্তার করলেও আরও হাজার হাজার কণ্ঠের জন্ম হবে।’
কংগ্রেস এমপি শশী থারুর জুবায়েরের গ্রেপ্তারকে ‘সত্যের ওপর আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তার মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘AltNews একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দিয়ে আসছে।’
কংগ্রেসের আরেক এমপি জয়রাম রমেশ বলেন, ‘সাংবাদিক জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ প্রতিহিংসামূলক কাজ করেছে। কারণ AltNews সরকারের বানোয়াট দাবিগুলোকে তুলে এনেছে।’
আইনজীবী-কর্মী প্রশান্ত ভূষণও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা ঘৃণাত্মক বক্তব্য প্রকাশ করছে, এই সরকার তাদের অনুসরণ করছে। জুবায়েরকে গ্রেপ্তার সত্যের ওপর আক্রমণ। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে।’
জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই নোবেল শান্তি পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকার প্রসঙ্গ টানছেন। কেউ কেউ বলছেন, এটাই ভারত। যেখানে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিকে জেলে ঢোকানো হয়।
এখানে বলে রাখা ভালও, পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর সঙ্গে নোবেল কমিটির কোনো সম্পর্ক নেই। তারা কেবল সুপারিশ করে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে AltNews-এর যাত্রা শুরু হয়। এটি বিশ্বের প্রথম সারির ফ্যাক্ট-চেকিং আউটলেটগুলোর একটি। এর প্রতিষ্ঠাতারা বছরের পর বছর ধরে অনলাইন ট্রোলিং ও পুলিশি মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষ করে ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন:জর্ডানের লোহিত সাগরের আকাবা বন্দরে বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাসের পাত্র ছিদ্র হয়ে ১১ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবারের এ দুর্ঘনায় আড়াই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্যাস ভর্তি কন্টেইনার সরাতে দিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২৫ থেকে ৩০ টনের কন্টেইনারটি জিবুতিতে যাচ্ছিল।
সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে, উপরের দিকে তোলা হচ্ছে কন্টেইনার। এরপর হঠাৎ তা নিচে পড়ে যায়। এরপর কন্টেইনার থেকে গ্যাস বের হতে থাকে। ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারদিক।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহত ১৯৯ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
বন্দর থেকে ১০ মাইল দূরে আকাবা শহরের বাসিন্দাদের বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘর-বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে বলে কর্তৃপক্ষ।
ক্লোরিন গ্যাস সাধারণত শিল্প এবং গৃহস্থালি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রা এবং চাপে এই গ্যাস দেখতে হলুদ-সবুজ। শ্বাস বা কোনোভাবে শরীরে প্রবেশ কিংবা ত্বকের সংস্পর্শে আসলে ক্লোরিন শরীরের কোষ ক্ষতিগ্রসন্ত করে। এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় ক্রেমেনচুক শহরের একটি শপিংমলে আঘাত হেনেছে রুশ মিসাইল। এতে অন্তত ১১ জন সাধারণ ইউক্রেনীয়র মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, হামলার ঘটনায় ১১ জন নিহত হওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় পলটাভা অঞ্চলের গভর্নর দিমিত্র লুনিন। ধ্বংসস্তপের মধ্যে আরও মৃতদেহ আছে কি-না খুঁজে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া আহত ৫০ জনের মধ্যে ২১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি ও ২৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, জানান লুনিন। এই ঘটনাকে তিনি সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ ওই শপিংমলের আশপাশে কিংবা কাছাকাছি এলাকায়ও কোনো সামরিক কর্মকাণ্ড ছিল না।
ক্রেমেনচুকের শপিংমলে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব অ্যান্টনি ব্লিংকেনও। রুশ এই হামলায় পুরো বিশ্ব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বলে এক টুইটে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে ওই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দাবি করেন, মিসাইল আঘাত হানার সময় ওই শপিংমলে অন্তত ১ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, রুশ মিসাইল হামলায় লুহানস্কের অন্তর্ভুক্ত লিশিচানস্ক শহরে আরও অন্তত ৮ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গভর্নর সেরহি গাইডাই। ওই হামলায় আরও ২১ জন আহত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ শহরে ৫ জন সাধারণ মানুষ নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন এমন খবর দিয়েছেন ওই শহরের গভর্নর ওলেহ সিনেহুবয়।
আরও পড়ুন:ভারতের জনপ্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট AltNews-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও শত্রুতা প্রচারের অভিযোগে সোমবার দিল্লি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে৷
জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, শশী থারুরসহ একাধিক এমপি।
২০২০ সালের পুরনো এক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার দিল্লিতে ডেকে নেয়ার পর জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাকে নতুন এক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। টুইটার হ্যান্ডেল ‘@balajikijaiin’-এর এক অভিযোগের ভিত্তিতে এ মাসেই মামলাটি দায়ের করা হয়।
নতুন এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, জুবায়ের ‘একটি নির্দিষ্ট ধর্মের দেবতাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করার জন্য’ একটি ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ছবি টুইট করেছেন। তার এই টুইটটি ২০১৮ সালের মার্চ মাসে করা।
ওয়েবসাইটটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা বলেন, ‘২০২০ সালের একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোহাম্মদ জুবায়েরকে দিল্লিতে ডাকা হয়েছিল। ওই মামলায় আদালত তাকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই নতুন এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও আমাদের কোনো এফআইআর কপি দেয়া হচ্ছে না।’
পুলিশ স্বীকার করেছে, জুবায়েরকে মূলত একটি পুরনো মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু নতুন মামলায় ‘পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকার পর’ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিতে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করবে পুলিশ।
২০২০ সালের পুরনো মামলাটি টুইটারে একটি মেয়েকে হয়রানির অভিযোগে দায়ের করা হয়েছিল। মোহাম্মদ জুবায়ের তার নাতনির সঙ্গে প্রোফাইল ছবি পুনরায় পোস্ট করে এক ব্যক্তির অপমানজনক অনলাইন আচরণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার মুখ ঝাপসা করে দিয়েছিলেন। পুলিশ ইতোমধ্যে আদালতকে বলেছে, জুবায়েরের বিরুদ্ধে এই টুইটের জন্য কোনো অপরাধ গণ্য করা হয়নি।
এদিকে সাংবাদিক জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন বিশেষত কংগ্রেসের নেতারা সরব হয়েছেন।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে টুইট করে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সত্যের একটি কণ্ঠকে গ্রেপ্তার করলেও আরও হাজার হাজার কণ্ঠের জন্ম হবে।’
কংগ্রেস এমপি শশী থারুর জুবায়েরের গ্রেপ্তারকে ‘সত্যের ওপর আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তার মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘AltNews একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দিয়ে আসছে।’
কংগ্রেসের আরেক এমপি জয়রাম রমেশ বলেন, ‘সাংবাদিক জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ প্রতিহিংসামূলক কাজ করেছে। কারণ AltNews সরকারের বানোয়াট দাবিগুলোকে তুলে এনেছে।’
আইনজীবী-কর্মী প্রশান্ত ভূষণও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা ঘৃণাত্মক বক্তব্য প্রকাশ করছে, এই সরকার তাদের অনুসরণ করছে। যুবায়েরকে গ্রেপ্তার সত্যের ওপর আক্রমণ। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে AltNews-এর যাত্রা শুরু হয়। এটি বিশ্বের প্রথম সারির ফ্যাক্ট-চেকিং আউটলেটগুলোর একটি। এর প্রতিষ্ঠাতারা বছরের পর বছর ধরে অনলাইন ট্রোলিং ও পুলিশি মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষ করে ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন:ইরান দ্বিতীয়বারের মতো মহাকাশে স্যাটেলাইট বহনে সক্ষম রকেটের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেসটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমেদ হুসেনি জানিয়েছেন, তিন পর্যায়ে স্যাটেলাইট বহনে সক্ষম রকেট জুলজানাহর পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কঠিন প্রপালশন পর্যায় ও তরল প্রপালশন পর্যায়। রকেটের তৃতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতেই হোসেইনি বলেছিলেন যে প্রতিটি গবেষণার জন্য উৎক্ষেপণের সময় জুলজানাহর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং মূল্যায়ন করা হয়।
আরও দুটি জুলজানাহর পরীক্ষামূলক রকেট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
আশা করা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির সংযোজন ও সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জুলজানাহ স্যাটেলাইট বহনে সক্ষম রকেট ৫০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পেলোড বহনে সক্ষম হবে।
এর আগে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে জুলজানাহ স্যাটেলাইট ক্যারিয়ার রকেটকে উৎক্ষেপণ করেছিল।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাতি ইমাম হুসাইন (র.)-এর ঘোড়ার নামানুসারে এই স্যাটেলাইট ক্যারিয়ার রকেটের নামকরণ করা হয়েছে জুলজানাহ। রকেটটি ২৫.৫ মিটার লম্বা এবং এর ওজন প্রায় ৫২ টন।
ইরান বরাবরই বলে আসছে, পরমাণু কর্মসূচির মতোই দেশটির স্যাটেলাইট কর্মসূচির উদ্দেশ্যও শান্তিপূর্ণ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে আসছে। তারা মনে করছে, ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের অংশ হিসেবে সামরিক প্রয়োগের লক্ষ্য থাকতে পারে ইরানের স্যাটেলাইট কর্মসূচির।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য