অস্ট্রেলিয়ার ‘সিডনি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (এসএফএফ) ২০২২’ কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিযোগিতা পর্বের জুরিদের নাম ঘোষণা করেছে। সেখানে পাঁচ বিচারকের মধ্যে একজন হলেন দেশের খ্যতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
দেশটির বিনোদনমূলক একটি সংবাদমাধ্যম বিষয়টি জানিয়েছে।
এই বিচারকরা প্রতিযোগিতা বিভাগের ১২টি সিনেমার মধ্যে থেকে একটিকে পুরস্কার দেয়ার জন্য চূড়ান্ত করবেন। উৎসব শুরু হবে ৮ জুন, চলবে ১৯ জুন পর্যন্ত।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে অন্য জুরিরা হলেন অভিনেতা/পরিচালক ডেভিড ওয়েনহাম (অস্ট্রেলিয়া); তিনি জুরি সভাপতিও, বাফটা মনোনীত লেখক ও পরিচালক জেনিফার পিডম (অস্ট্রেলিয়া), বার্লিন গোল্ডেন বিয়ার বিজয়ী লেখক-পরিচালক-প্রযোজক সেমিহ কাপলানোলু (তুরস্ক) এবং কাওয়াকিতা মেমোরিয়াল ফিল্ম ইনস্টিটিউট, টোকিওর নির্বাহী পরিচালক ইউকা সাকানো (জাপান)।
এবার উৎসবের ১৩তম আসর। এসএফএফ এ সাহসী, এবং আধুনিক চলচ্চিত্রকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯ জুন স্টেট থিয়েটারে পর্দা নামবে উৎসবের। সেদিন বিজয়ীর নামও ঘোষণা করা হবে।
এসএসএফ পরিচালক নাশেন মুডলি বলেছেন, ‘অফিসিয়াল প্রতিযোগিতায় দারুণ সব সিনেমা এবং পরিচালকদের কাজ থাকবে। জুরিদের কাজ কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে।’
ঈদে বঙ্গ নিয়ে আসছে জনপ্রিয় নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ্র নিরীক্ষাধর্মী প্রজেক্ট সিঙ্গেল স্ক্রিন স্টোরি। একটি দৃশ্যে একটি গল্প- এভাবে ১৪টি ভিন্ন ধারার শর্ট ফিল্ম নিয়ে গড়ে উঠেছে এই প্রোডাকশনটি।
নির্মাতা বান্নাহ্ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে যে গল্পগুলো বলা হয়েছে, সেগুলো একটা সিকোয়েন্সের। গল্পগুলোর দৈর্ঘ্য একেকটার একেকরকম। কোনোটা দেড় মিনিট, কোনোটা ৮ মিনিট। নানা দৈর্ঘ্যের কাজ আছে এখানে।’
সাইন্স ফিকশন, অ্যান্থলজি, হরর, ফ্যান্টাসি, রোমান্স, ফ্যামিলি-সোশ্যাল-ইমোশনাল-ইয়ুথ ড্রামা, ডার্ক ড্রামা, থ্রিলারসহ বিভিন্ন জনরায় এক্সপেরিমেন্ট করেছেন পরিচালক।
গল্পগুলো হলো- সায়েন্স ফিকশন জনরার ইনকামার, পোস্ট মেরিডিয়ান এরা, সুপার হিরো, সোশ্যাল ড্রামা জনরার শর্ট ফিল্ম টয়, ডার্ক থ্রিলার হি ইজ নো মোর, রোম্যান্টিক জনরার শর্ট ফিল্ম লাভ রুম, রোমান্স-থ্রিলার জনরার শর্ট ফিল্ম ফার্স্ট ডেট, ডার্ক-ড্রামা শর্ট ফিল্ম সেপুক্ক, সোশ্যাল ড্রামা জনরার ডিপ্রেশন, ইমোশনাল শর্ট ফিল্ম হ্যাপি বার্থডে টু মি, ইয়ুথ ড্রামা ফাদার, ফ্যামিলি ড্রামা জনরার শর্ট ফিল্ম অ্যাংরি ওল্ড ম্যান, হরর শর্ট ফিল্ম মর্গ, হরর থ্রিলার এভিল ডিকশন।
সংবাদি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বঙ্গ সবসময় চেষ্টা করে আসছে দর্শকদের ভালো কনটেন্ট পৌঁছে দিতে। দক্ষ পরিচালক, আর একঝাঁক জনপ্রিয় তারকা অভিনয়শিল্পীর মাধ্যমে শর্টফিল্ম গুলো নির্মাণ করা হয়েছে দর্শকদের ঈদ আনন্দ দেবার জন্য।
শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ তৈরির আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার এফবিসিসিআই আয়োজিত পাওয়ার, এনার্জি অ্যান্ড ইউটিলিটিজ-বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির তৃতীয় সভায় এ আহ্বান জানান তিনি।
সংগঠনের সহসভাপতি এম এ মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ জ্বালানি খাতে আগের থেকে অনেক বেশি উন্নত। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে বিদ্যুতের এ সংকট মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ কেরতে হবে।’
গত এক দশকে দেশে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নতির পর দেশের শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে লোডশেডিং শব্দটিও সরকার ব্যবহার করত না। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের যাওয়া-আসাকে সরবরাহ লাইনের বিভ্রাট হিসেবে বলা হতো। সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়েছে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তরল গ্যাস ও এলএনজির দাম এক বছরে ১০ গুণ হয়ে যাওয়ার পর স্পট মার্কেট থেকে আর গ্যাস না কেনার সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। গ্যাস সংকটের কারণেই ঘাটতি প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট। পরিকল্পিত লোডশেডিং করেই পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে সরকার।
এই পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ স্পষ্ট। ভীষণ উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরাও। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থায় উৎপাদন চালিয়ে গেলে খরচ পড়ে যায় বেশি। আবার গত এক যুগের নানা পদক্ষেপের কারণে সব কারখানায় বিকল্প ব্যবস্থাপনা সেভাবে গড়েও ওঠেনি।
গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হলে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়ার তাগিদ দেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ আবুল কাসেম খান। বিদ্যুৎ খাতের চুক্তিগুলো পুনরায় বিবেচনা করার আহ্বানও জানান তিনি।
জ্বালানি নিরাপত্তার উন্নয়নে জোর দিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান ও এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশিদ বলেন, ‘আগামীতে জ্বালানি খাতে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশের রপ্তানি অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। এমতাবস্থায় এ খাতে শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।’
বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সভায় উপস্থিত সদস্যরা।
আরও পড়ুন:মেক্সিকান চিত্রশিল্পী ফ্রিদা কাহলোর জীবন ও কর্মের নতুন ব্যাখ্যা এবং সম্পূর্ণ নতুন আলোয় তার সৃষ্টিকর্মকে আবিষ্কার ও উপস্থাপন করতে যাচ্ছে সৌধ সোসাইটি অফ পোয়েট্রি অ্যান্ড ইন্ডিয়ান মিউজিক।
বিশ্বের অন্যতম প্রধান আর্ট ভেন্যু যুক্তরাজ্যের রয়্যাল আলবার্ট হলের এলগার রুমে এ ভিন্নমাত্রার পরিবেশনা মঞ্চায়ন হবে ১৩ জুলাই, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।
ব্রিটেনে দক্ষিণ এশীয় শিল্প, সাহিত্য ও সংগীত নিয়ে কাজ করে আসছে সৌধ। সংগঠনটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
কবি টি এম আহমেদ কায়সারের পরিচালনায় এই বিশেষ আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যোগ দেবেন হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয়ধারার জনপ্রিয় ভায়োলিন বাদক বিদুষী কালা রামনাথ। তবলা সংগত করবেন পণ্ডিত সাঞ্জু সাহাই। পুরো পরিবেশনা শেষ হবে বাংলাদেশের রাধারমন দত্ত রচিত ‘কারে দেখাব মনের দুঃখ গো’ গানের মধ্য দিয়ে। গানটি গাইবেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি কণ্ঠশিল্পী শাপলা সালিক।
ফ্রিদার চিত্রকর্ম ও সংগীতের মধ্যকার অন্তর্নিহিত অন্বয়, পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে রচিত পাণ্ডুলিপি থেকে পাঠ করবেন কবি ও গদ্যশিল্পী শ্রী গাঙ্গুলি। ফ্রিদা কাহলোর নির্বাচিত চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শিতব্য ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাণ করেছেন তরুণ চলচ্চিত্রকার মকবুল চৌধুরি। নেপথ্য ব্যবস্থাপনায় থাকছেন কবি শামীম শাহান।
রয়্যাল আলবার্ট হলে কোনো সাউথ এশিয়ান শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শিল্প-সমবায়ী উদ্যোগের ঘটনা ‘একেবারেই বিরল এবং বিপুল সম্মানের’ বলে জানান সৌধ-এর পরিচালক টি এম আহমেদ কায়সার।
নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িতদের বিচার চায় উদীচী।
ধর্ম অবমাননার অজুহাতে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতোর মালা পরিয়ে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত এবং এর পেছনে ইন্ধনদাতাদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। একই সঙ্গে এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যেরও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ উদীচী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে জানান, গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে নড়াইলের ওই কলেজে শিক্ষক লাঞ্ছনার পেছনে শুধু ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগই কারণ নয়। কলেজটিতে কিছুদিন আগে অবৈধভাবে কয়েকজনকে নিয়োগের বিরোধিতা করেন স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের রোষানলে পড়েন তিনি। পরে কলেজের এক ছাত্রের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে একদল মানুষ কলেজে হামলা করলে তিনি কলেজের নিরাপত্তা রক্ষায় ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিকভাবেই সহায়তা চেয়ে পুলিশকে ফোন করেন।
এ ঘটনায় অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন এবং স্বপন কুমার বিশ্বাসও ধর্ম অবমাননা করেছেন বলে গুজব রটিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করে তোলা হয়।
পুলিশের উপস্থিতিতেই অধ্যক্ষসহ তিনজনের গলায় জুতোর মালা পরিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পুলিশের ভ্যানে তোলা হয়। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে স্পষ্ট বোঝা যায়।
উদীচী মনে করে, প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালানো হলেও তা ঠেকাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন। শুধু তাই নয়, অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো তাকে অসম্মানিত করার পূর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। কেননা, তাদের উপস্থিতিতেই বিনা বাধায় ওই শিক্ষকের গলায় জুতোর মালা পরানো হয়।
এত কিছুর পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন, পুলিশ কিছু করার আগেই উত্তেজিত জনতা লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে, তখন সেটি নিছক দায়িত্বহীন মন্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে ব্যর্থতার দায়ে নড়াইলের পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা সেখানে ঘটনার ১১ দিন পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, দায়িত্বে কারো গাফিলতি ছিল কি না তিনি তা খতিয়ে দেখবেন। এসব মন্তব্য এবং অহেতুক কালক্ষেপণের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে কি না সে প্রশ্নও তোলেন উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
অতীতে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত, নওগাঁর আমোদিনী পাল বা মুন্সিগঞ্জের হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে হেনস্তা ও হয়রানির ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার ফলেই বারবার শিক্ষকদের লাঞ্ছনার এমন ঘটনা ঘটছে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক বদিউর রহমান ও অমিত রঞ্জন দে।
নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনার সুষ্ঠু বিচার না হলে প্রগতিশীল সংগঠনসমূহ এবং শিক্ষক সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে উদীচী দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলবে বলেও বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দেন উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে আলাদা দুটি চেক প্রতারণা মামলায় আশির দশকের সংগীত শিল্পী আবদুল মান্নান রানাকে এক বছর করে দুবছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
একই রায়ে তাকে এক কোটি ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮২৯ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
সোমবার চট্টগ্রামের চতুর্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আফরোজা জেসমিন কলির আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন।
আবদুল মান্নান রানা নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। তিনি আশির দশকের জনপ্রিয় প্লেব্যাক শিল্পী।
তার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার অভিযোগে দুটি মামলা করেছিলেন বোনজামাই আবদুল্লাহ আল হারুন।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী তপন কুমার দাশ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের শুরুর দিকে বোনজামাই আবদুল্লাহ আর হারুনের কাছ থেকে এক কোটি ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮২৯ টাকা ধার নেন রানা। ওই বছরের ২৮ মে দুটি চেকের মাধ্য়মে অর্থ ফেরত দেন তিনি। চেকগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় ডিজঅনার হয়।
হারুন আইনি নোটিশ পাঠালেও নির্দিষ্ট সময়ে রানা অর্থ পরিশোধ না করায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদলতে দুটি চেকের বিপরীতে দুটি মামলা করেন তিনি।
আইনজীবী তপন কুমার দাশ বলেন, ‘দুই মামলায় আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের পর সাত জনের সাক্ষ্য় গ্রহণ শেষে সোমবার আদালত রায় ঘোষণা করেন। দুই মামলার রায়ে আবদুল মান্নান রানাকে এক বছর করে দুই বছরের জেল এবং চেকের সমপরিমাণ অর্থ জারমানা করা হয়।’
রায় ঘোষণার সময় আবদুল মান্নান রানা আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলেন জানান তিনি।
আরও পড়ুন:প্রমত্তা পদ্মার দুটি প্রান্ত মাওয়া ও জাজিরা। দুই কূলে দুজন দাঁড়িয়ে ‘এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি, মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলে যায়’ গানটি গাওয়ার আর সুযোগ নেই। কারণ দুকূল এক হয়েছে।
দুই কূলকে এক করেছে পদ্মা মহুমুখী সেতু। শনিবার সকালে সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় প্রকল্প দেশে এটাই প্রথম। তাই পদ্মা সেতু মানে স্বপ্নজয়, পদ্মা সেতু মানে দেশের সক্ষমতার প্রতীক।
সারা দেশে সব পেশাজীবী বিভিন্নভাবে আনন্দ উদযাপন করছেন। নৃত্যশিল্পী মোফাস্সাল আল আলিফ ও মাটি সিদ্দিকী জুটি তাদের কাজের মাধ্যমে পদ্মা সেতু চালুর আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
শুক্রবার আলিফ তার ফেসবুকে কিছু ছবি পোস্ট করেন। ছবিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আনন্দ-উদযাপন, আলিঙ্গন ও দূরত্ব ঘুচে যাওয়ার আবেদন।
আলিফ ছবিগুলোর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘দূরত্ব কমল, স্বপ্ন আজ সত্যি হলো।’ যদিও ছবি দেখে আর ক্যাপশন পড়ার প্রয়োজন হয় না।
এ ছবিগুলোর পেছনের গল্প, কোরিওগ্রাফি এবং পরিকল্পনার কথা জানতে নিউজবাংলা কথা বলে আলিফের সঙ্গে।
আলিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা যৌথ কাজ। এই কাজটির মূল পরিকল্পনা করেছে ফটোগ্রাফি প্ল্যাটফর্ম মোমেন্টওয়ালা। পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে অনেকেই যার যার জায়গা থেকে উদযাপন করছেন। এ উদযাপনে আমরাও শামিল হতে চেয়েছি, সে জন্যই কাজটি করা।’
বিস্তারিত জানিয়ে আলিফ বলেন, ‘আমরা কোনো পূর্ব-অনুমতি না নিয়েই গিয়েছিলাম পদ্মা সেতুতে ছবি তুলতে। যেসব জায়গায় ছবি তুলতে চেয়েছিলাম, তার কোনো জায়গাতেই ছবি তুলতে পারিনি। বিকেলের দিকে পৌঁছে অনেকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আমরা যে ছবিগুলো তুলেছি, সেগুলো একটি রেস্ট্রুরেন্টের ছাদে তোলা। সেখানেও কিছু অসুবিধা ছিল। খুব তাড়াতাড়ি করে ছবিগুলো তুলে চলে এসেছি, দিনের আলোও নিভে যাচ্ছিল।’
আলিফ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বাবিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি যান মুম্বাইতে। নৃত্যের ওপর কোর্স করে ২০২০-এ ঢাকায় ফেরেন। এখন তিনি নাচ শেখান এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন আয়োজনে প্রফেশনালি কাজ করছেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ছবি কেমন হওয়া উচিত? তা ভাবতে গিয়ে আলিফের একটি বিষয়ই মনে হয়েছে, সেটি হলো দূরত্ব কমে যাওয়ার বিষয়টি।
আলিফ বলেন, ‘এখন আর অপেক্ষা নয়, সেই আনন্দটাই আমরা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি ছবির মধ্যে। ছবি দেখে অনেকে আবার মনে করতে পারেন, এ বুঝি শুধু ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার আনন্দ; তা কিন্তু নয়। দুই কূল এক হয়েছে, এখন সব অপেক্ষারই অবসান ঘটল, সেই আনন্দটাই তুলে আনার চেষ্টা করেছি।’
ছবিতে আলিফের সহশিল্পী মাটি সিদ্দিকী। তারা দুজন জুটি হয়ে অনেক কাজ করেছেন। অনেক থিমের ওপরেই কাজ করা হয়েছে তাদের। অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে তারা কাজ করে বলে জানান আলিফ।
এই প্রজেক্টের মূল পরিকল্পনাকারী নাজমুল হোসেন। তিনি ছবিগুলো তুলেছেন এবং মোমেন্টওয়ালা ফটোগ্রাফি প্ল্যাটফর্মের কর্ণধার তিনি।
১৯ জুন তোলা ছবিগুলো কীভাবে এবং কী পরিকল্পনায় তোলা হলো, সেই গল্পই জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে।
নাজমুল বলেন, ‘আমি, আলিফ অনেক দিন ধরেই একে ওপরকে চিনি। পদ্মা সেতুতে ছবি তোলার পরিকল্পনার কথা জানাতেই আলিফ জানান যে, সে আর মাটি মিলে কাজটি করবেন। আমি ভেবেছিলাম নৌকা নিয়ে ব্রিজের নিচের অংশে নানাভাবে ছবি তুলব। স্পটে যাওয়ার পর আরও অনেক কিছুই করা যাবে ভেবেছিলাম। কিন্তু তার কিছুই করা যায়নি অনুমতি না থাকার কারণে। যে ছবিগুলো দেখছেন সেগুলো আসলে মূল পরিকল্পনার ১০ ভাগও না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অল্প একটু জায়গার মধ্যে অল্প কিছুক্ষণ ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল দিনের আলোয় ছবি তোলার। কিছুই হয়নি। আলিফের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে জন্য, অল্প সময়ের মধ্যেই কিছু ছবি তোলা গেছে। ওইটুকু সময়ের মধ্যে আমরা যে অনেক পরিকল্পনা করেছি তা না। যেটা মনে এসেছে সেটাই করেছি।’
ছবিগুলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাজমুল বলেন, ‘এখানে একটা সংযোগ তৈরি হলো। দুই পারের মানুষের সংযোগ। ছবিতে যে আলিঙ্গন দেখছেন, এ আলিঙ্গন যে কারও হতে পারে। এ আলিঙ্গনের মাধ্যমে যেন সব দূরত্ব ঘুচে যায়।’
মনের মতো করে ছবি তুলতে পারেননি নাজমুল ইসলাম, মনের মতো কোরিওগ্রাফিও করতে পারেননি আলিফ-মাটি। সুযোগ হলে সেই কাজগুলো করে দর্শকদের সামনে আনতে চান।
স্বপ্ন জয়ের আনন্দে পুরো দেশ। জলে ভাসতে থাকা স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে পদ্মা সেতু হয়ে। শনিবার সেতুটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের স্বপ্নই যে শুধু পূরণ হয়েছে তা নয়। পদ্মা সেতু দেশের সক্ষমতার প্রতীক।
তাই সেতু চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে আনন্দে মেতেছে পুরো দেশ। গানে গানে সেই আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস করেছেন দেশসেরা কয়েকজন শিল্পী।
পদ্মা সেতুর অফিশিয়াল থিম সংয়ের কথা এমন- ‘তুমি অবিচল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তুমি ধুমকেতু/বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন দেশ তুমি দিলে পদ্মা সেতু/পেরিয়ে সকল অপশক্তি শত সহস্র বাধা/পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করা আত্মমর্যাদা/মাথা নোয়াবার নয় বাঙালি যেহেতু/বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন দেশ তুমি দিলে মর্যাদা পদ্মা সেতু’।
কবীর বকুলের কথায় গানটির সুর-সংগীত করেছেন কিশোর দাস। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন, রফিকুল আলম, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কুমার বিশ্বজিৎ, বাপ্পা মজুমদার, মমতাজ বেগম, দিলশাদ নাহার কনা, ইমরান মাহমুদুল, নিশিতা বড়ুয়া ও কিশোর দাশ।
গানটি নিয়ে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘স্রষ্টার কাছে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছেও কৃতজ্ঞ, আমাদের এমন একটি গৌরব ও মর্যাদা এনে দেয়ার জন্য।’
বাপ্পা মজুমদার বলেন, ‘স্বপ্নটাকে চোখের সামনে দেখে এক আনন্দ লাগল, কী বলব! এ এক বিস্ময়। আমরা সবাই খুব খুশি।’
কনা বলেন, ‘শুটিং করতে গিয়ে যখন সেতুটি কাছ থেকে দেখলাম, তখন মনটা ভরে গেছে। এর আগে টিভিতে বা অনেক দূর থেকে দেখেছি। খুবই ভালো লাগছে।’
গান নিয়ে ইমরান বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু। এতটা বছর আমরা অপেক্ষা করেছি সেতুটির জন্য, যাতে আমাদের জীবনযাত্রার মান অনেক সহজ হয়। সেই সময়টা চলে এসেছে, আমরা সবাই খুব খুশি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য