কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে এক কাপ গরম চায়ের সঙ্গে অজস্র এলোমেলো শব্দ ভিজিয়ে দিয়ে গিয়েছিল কবিকে। কবি খুন হয়েছিলেন। খুনি ছিল কোনো এক জোড়া চোখ।
ক্যাফেটেরিয়া গানে এমন একটি মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছে ব্যান্ড ‘শিরোনামহীন’। ২০০৬ সালে প্রকাশ হওয়া ‘ইচ্ছে ঘুড়ি’ অ্যালবামে ছিল গানটি।
হাজার বা কোটি তরুণের মনের কথাগুলো যেন গানে গানে হাজির করেছিল ব্যান্ডটি। গানটির গীতিকার জিয়াউর রহমান জিয়া, সুর করেছিলেন জিয়া, ফারহান ও তুষার।
গানটি লেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে জিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাফেটেরিয়া যখন লিখি ও সুর করি, তখন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বুয়েট) পেরিয়ে গেছি, কিন্তু ছাত্রত্ব গায়ে লেগে আছে। এক ছাত্রের, এক তরুণের ক্যাফেটেরিয়ায় একটা মুহূর্তের গল্প এটি।’
জিয়ার ভাষ্যে ব্যান্ডকে সব সময় তরুণ থাকতে হয়। ১৪ বছর পর, অর্থাৎ ২০২০ সালে সেই জিয়ার কলমেই উঠে এলো ‘ক্যাফেটেরিয়া পেরিয়ে’ গানের কথাগুলো।
তাহলে কি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যান্ডটির বয়সও বাড়ছে? অন্তত গানের কথার ধরনে তো তাই মনে হয়।
জিয়া অবশ্য বিষয়টিকে ব্যান্ডের তারুণ্য হারানোর কোনো ইঙ্গিত বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘ক্যাফেটেরিয়া পেরিয়ে হলো সেই মোমেন্টটা রিকল করার গল্প। প্রায় সবার ক্ষেত্রেই এমনটা হয় যে তারা তাদের ফেলে আসা ক্যাম্পাসকে ফিরে দেখে। আমার নিজের ক্ষেত্রে যেটা হয়, আমি যেহেতু রাইটার, আমি বহুবার বুয়েটে বারবার ফিরে গেছি, যাচ্ছি। তার পরও একটা মিস করা ব্যাপার থাকে।’
জিয়ার মতে, ‘সময় যতই যাক, সব সময় ব্যান্ডকে তরুণ মনের থাকতে হয়, এটা ব্যান্ডের স্ট্যান্ড। কিন্তু তারা যে সময়কে রি-কল করতে পারবে না, তা তো নয়।’
‘শিরোনামহীন’-এর বয়স এখন ২৫। এপ্রিলে তারা তাদের ২৫ বছর পূর্ণ করেছে। এ সময়ের মধ্যে ব্যান্ডটি শ্রোতাদের উপহার দিয়েছে অনেকগুলো জনপ্রিয় গান। সুর ও গানের কথার চমৎকারিত্বে শ্রোতাদের মধ্যে শিরোনামহীন-এর রয়েছে ভিন্ন একটি আবেদন।
শ্রোতাদের অনেকের মতে, শিরোনামহীন নাগরিক কবিয়াল। প্রথম অ্যালবাম থেকেই ব্যান্ডটির গানের কথা ও সুরে নগরজীবন এবং জীবন-সংগ্রামের কথা উঠে এসেছে রূপক হিসেবে।
যুবক নাবিকের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনচিত্র, জনাকীর্ণ নগরদৃশ্য, ব্যস্ত ট্রাফিকের জীবন, শহুরে সংকট, শহুরে জীবনধারা ও তার কিছু বড় দৃষ্টিকোণ মূলত আধুনিক শহুরে মানুষের জীবনবোধ এবং নিত্য সংগ্রামচিত্রেরই বিবরণ।
শিরোনামহীন কি এমনই হতে চেয়েছিল? জিয়া বলেন, ‘ব্যান্ডটি এমন হতে চেয়েছিল বললে ভুল হবে, আবার হলেও মন্দ হয় না। নাগরিক কথাটিই এসেছে এ জন্য যে আমাদের গানের কথায় নাগরিক ছোঁয়া আছে। যেহেতু আমরা নগরের মানুষ, ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা নগরে। সে জন্য এটা অটোমেটিক্যালি রাইট। তা ছাড়া এই ভোকাবুলারিটা শিরোনামহীন কাব্যিকতার মাধ্যমে যেভাবে প্রকাশ করেছে, সেটা তার নিজস্বতাকে বহন করেছে।’
জিয়া আরও যোগ করেন, ‘কাব্যিকতার বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি, যেমন, গীতিকবিতা। গান কিন্তু একটা সুরের বিষয়, আমরা এখানে স্পেশাল ভোকাবুলারিটা প্রতিষ্ঠিত করলাম, সেটা আমাদের এ ধরনের একটি পরিচয় যদি এনে দেয়, তাহলে সেটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যেরই বিষয়।’
শিরোনামহীন তার ২৫ বছরে নিজস্ব ঢঙের বাইরে যেতে চায়নি বলে জানান এ ব্যান্ডের আরেক সদস্য কাজী আহমেদ সাফিন। তিনি বলেন, ‘শিরোনামহীন সব সময় একটা জনরায় কাজ করার চেষ্টা করে। যেকোনো কাজেই আমরা চেষ্টা করি আমাদের ছাপটা যেন থাকে।’
এই ২৫ বছরে শিরোনামহীনের শ্রোতা কিছু হলেও পরিবর্তন হয়েছে বলে স্বীকার করেন সাফিন। একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় গান স্টুডেন্ট লাইফেই সবাই বেশি শোনে। ব্যান্ডের প্রথম দিকে অনেককেই চিনতাম, যারা আমাদের প্রতি কনসার্টে যেত। তাদের এখন পাই না। তারা এখন আমাদের ফোন করেন, নতুন গানের ব্যাপারে কথা বলেন, কিন্তু কনসার্টে যেতে পারেন না।’
নতুন শ্রোতা আসার ফলে শিরোনামহীন সাউন্ড এবং গানের কথার ধরনে কিছু পরিবর্তনের কথা ভাবছে কি না জানতে চাইলে সাফিন বলেন, ‘ব্যান্ড এসব নিয়ে ভাবছে না। ব্যান্ড যেভাবে গান করে আসছিল, সেভাবেই করার পরিকল্পনা এখনও।’
এ প্রসঙ্গে জিয়া বলেন, ‘দেখুন আমি যখন স্কুলে পড়ি, তখন থেকে মাসুদ রানা পড়ি, জেমস বন্ড দেখি। ওর যে পাঠক বা দর্শক, সেটা ডে টু ডে চেঞ্জ হচ্ছে। পাঠক, দর্শক, শ্রোতা চেঞ্জ হলেও মাসুদ রানাকে তার মতোই থাকতে হবে, জেমস বন্ডকে তার মতো থাকতে হবে, তরুণদের জায়গায় নতুন তরুণ আসবে, কিন্তু শিরোনামহীনকে তার মতোই থাকতে হবে। তার বয়সটা ঠিক একইভাবে বাড়তে পারবে না। অন্তত আমাদের গানের বয়সটা বাড়তে পারবে না। গানটাকে একই স্ট্যান্ডার্ডে ধরে রাখতে হবে। সেটার জন্য আমরা খুব সচেষ্ট থাকি।’
ব্যান্ডের একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভেঙে না যাওয়া, লাইনআপ ঠিক রাখা। ব্যান্ডের সদস্য পরিবর্তন শিরোনামহীন-এর ক্ষেত্রে অনেকবারই হয়েছে। তবে শ্রোতাদের চোখে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হয় ২০১৭ সালে, যখন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট তানজীর তুহিন ব্যান্ড ছেড়ে চলে যান।
জিয়া বলেন, ‘যেকোনো পরিবর্তন হলে ব্যান্ডে তার প্রভাব পড়ে। সাউন্ড চেঞ্জ হয়ে যায়। তার চেয়েও বড় বিষয়, ব্যান্ড নিজেকে লো ফিল করে, অফ ফিল করে। সেই জায়গা থেকে ২০১৭ খুবই ক্রুশ্যাল ছিল।’
ব্যান্ডে নতুন ভোকালিস্ট হিসেবে যুক্ত হন শেখ ইশতিয়াক। ২০১৭ সালের পর থেকে তার কণ্ঠেই প্রকাশ পাচ্ছে শিরোনামহীন-এর গান। তিনি কেমন করছেন? তার উত্তর শ্রোতারাই দিয়েছেন ‘জাদুকর’, ‘এই অবেলায়’, ‘কাশফুলের শহর দেখা’ গানগুলো ভালোবাসার মাধ্যমে।
শেখ ইশতিয়াক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন থেকে মিউজিক বোঝা শুরু, তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল আমি রক মিউজিক নিয়ে কাজ করব এবং ব্যান্ডে কাজ করব। এর আগে আমার অনেকগুলো ব্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স আছে। একটা সময় এসে শিরোনামহীন-এর সঙ্গে যখন কাজ করার ব্যাপারটা আসে, তখন আমার মনে হয় এখানে কাজ করা দরকার। এতে করে আমার ইচ্ছেই শুধু পূরণ হবে না, সঙ্গে অনেক কিছু শিখতে পারব।’
ইশতিয়াক মনে করেন, শিরোনামহীন তার মতো করে, একই স্ট্যান্ডার্ডে গান করছে। সেখানে তার কণ্ঠ শ্রোতারা পছন্দ করছে কি না, সেটা শ্রোতারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে তার কণ্ঠে কিছু গান শ্রোতারা পছন্দ করেছেন বলে মনে হচ্ছে তার।
তিনি বলেন, ‘ব্যান্ড সদস্য যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে এবং এটি একটি নিয়মিত ঘটনা ব্যান্ডের ক্ষেত্রে। যেটাই হোক, শিরোনামহীন তার ঢঙেই থাকবে। যখন আমরা যে লাইনআপে থাকি, তখন সেটাকেই সবচেয়ে ভালো লাইনআপ মনে হয়।’
ব্যান্ডে নতুন কাউকে যুক্ত করা বা নতুন কাউকে প্রস্তুত করার কোনো প্রক্রিয়া শিরোনামহীনের আপাতত নেই বলেও জানান সাফিন।
২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের অনেক জায়গায় কনসার্টে অংশ নিয়েছে শিরোনামহীন। সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে ২৬ মে। সেদিন ব্যান্ডটি মঞ্চে উঠবে অর্কেস্ট্রার সঙ্গে। ভারতের মুম্বাইয়ের সিম্ফনি অর্কেস্ট্রার সঙ্গে বাজাবে ব্যান্ডটি। দেশের নামকরা, খ্যাতিমান মিউজিয়ানরাও সেদিন শিরোনামহীনকে সম্মান জানিয়ে বাজাবে শিরোনামহীন-এর হয়ে।
জিয়া জানান, দেশে এমন ঘটনা নতুন হলেও গ্লোবাল মিউজিকে এ রকম আয়োজনের উদাহরণ রয়েছে। মেটালিকা এবং স্করপিয়নস-এর বিখ্যাত লাইভ অ্যালবাম ‘এস অ্যান্ড এম’ কিংবা বার্লিন ফিলহারমোনিকের সঙ্গে অর্কেস্ট্রার আয়োজন দেখা গেছে।
জিয়া বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদের অনেক প্রস্তুতি। আমাদের আলাদা আলাদা ট্র্যাক বানাতে হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতিও নিতে হচ্ছে, কারণ আমরা একটা নোটও ভুল করতে চাই না। এ রকম আয়োজন করতে অনেক পরিশ্রম ও খরচ। এ ধরনের আয়োজন ব্যান্ডের লাইমটাইমে একবারই হয়।’
নতুন অ্যালবামও আসবে শিরোনামহীনের। অ্যালবামের নাম ‘পারফিউম’। এতে থাকবে আটটি গান, যার বেশ কিছু গান এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক ‘পারফিউম’ প্রকাশ হবে ২৬ মে।
শিরোনামহীন-এর বর্তমান লাইনআপ: জিয়াউর রহমান জিয়া (গীতিকার, সুরকার, বেস, চেলো, সরোদ), কাজী আহমাদ শাফিন (ড্রাম, সরোদ, বাঁশি), দিয়াত খান (লিড গিটার), শেখ ইশতিয়াক (ভোকাল), সাইমন চৌধুরী (কিবোর্ড)।
আরও পড়ুন:‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই, যার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শনিবার তার মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহ থেকেই এ শিল্পী হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই স্নায়ু এবং নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, প্রতুলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত তাকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শিল্পীর ফুসফুসেও সংক্রমণ দেখা দেয়। দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
প্রতুলের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান হলো ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথী রে’। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার গানের গুণমুগ্ধ ছিলেন। মমতার তত্ত্বাবধানেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। শৈশব থেকেই গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়ার ঝোঁক ছিল তার।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে পাদপ্রদীপের আলোয় আনে তার গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এ ছাড়া সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন তিনি।
তার মতে, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কেবল তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। সেই একক সাধনা তখন সকলের হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ স্মরণে বর্ণাঢ্য এক লাইভ কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে।
দেশীয় ব্যান্ডগুলো গানে গানে শ্রদ্ধা জানাবে সংগীতশিল্পীকে।
‘শাফিন আহমেদ: ইকোস অব আ লিজেন্ড’ শিরোনামের কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও লিঙ্ক রোডের আলোকিতে। সেখানে শাফিনের গাওয়া কালজয়ী গানগুলো শোনাবে তার সাবেক ব্যান্ড মাইলসের সদস্যরা।
এ ছাড়াও কনসার্টে পারফর্ম করবে দেশের প্রথম সারির ব্যান্ড ফিডব্যাক, দলছুট, আর্টসেল ও অ্যাভয়েড রাফা ও শাফিন আহমেদের ছেলে য়াজরাফ অজি।
গানের পাশাপাশি এ আয়োজনে আরও থাকছে শাফিন আহমেদের ঘটনাবহুল জীবন ও সংগীত ক্যারিয়ার নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী। এ ট্রিবিউট কনসার্টের আয়োজন করেছে ভেলভেট ইভেন্টস।
আয়োজকরা জানান, শুরুতে শাফিন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে ১৪ ফেব্রুয়ারি কনসার্টের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পবিত্র শবে বরাতের কারণে তা এক দিন এগিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাত ৯টায় শুরু হবে কনসার্ট। সন্ধ্যা ছয়টায় দর্শকের জন্য খুলে দেওয়া হবে ভেন্যুর দরজা।
এ কনসার্ট আয়োজন চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। দর্শক টিকিট কেটে আয়োজনটি উপভোগ করতে পারবেন।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বেশ কয়েকটি কনসার্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন শাফিন আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে দ্বিতীয় কনসার্টের দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর সেখান থেকে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।
দুই দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ২৪ জুলাই মারা যান শিল্পী কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের সন্তান শাফিন আহমেদ।
আরও পড়ুন:রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে শুক্রবার ‘আমাদের সাবিনা ইয়াসমিন: আমি আছি থাকব’ অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে মঞ্চে অুসুস্থ হয়ে পড়েন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানটির এক বছরের বিরতির পরে মঞ্চ পবিরেবশনায় ফিরে এসেছিলেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সংগীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার বলেন,‘কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী তার পরিবেশনা চলাকালে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন এবং মঞ্চেই পড়ে যান। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ইউনাইটেড হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এই মুহূর্তে তার চিকিৎসা চলছে। তবে তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।’
দিঠি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে দুই-এক দিনের মধ্যেই বাসায় ফিরবেন জনপ্রিয় এ গায়িকা।
গতকালের অনুষ্ঠানটিতে কিংবদন্তি গায়িকা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মঞ্চে ফিরে এসেছিলেন। কারণ তিনি সিঙ্গাপুরে তার নিয়মিত চিকিৎসার কারণে এক বছর ধরে এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি।
দৈনিক প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ শিল্পী জানান, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এরপর চার মাসে ৩০ সেশন রেডিওথেরাপি দিতে হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ২০২৩ সালের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে বেশ কয়েকটি স্টেজ শো করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। এরপর তাকে আর মঞ্চে পারফর্ম করার জন্য পাওয়া যায়নি।
আয়োজকরা জানান, শনিবারও একই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার কথা ছিল সাবিনার। এরপর চট্টগ্রামে আরেকটি শোতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার।
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের শীতার্ত মানুষের মধ্যে শনিবার প্রায় দুই হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে চালিতাডাংগা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে উপস্থিত হয়ে শীতার্তদের হাতে কম্বল তুলে দেন এলাকার সন্তান বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা বলেন, ‘একজন মানুষের জন্য একটি কম্বল সাধারণ ব্যাপার। তাদের জন্য এ শীতে কষ্ট লাগবের জন্য আরও কিছু করতে পারলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। সারা দেশের মতো সিরাজগঞ্জে শীতের শুরুতে যমুনা নদীর পাড়ের অবস্থিত গ্রামগুলো শীতে কাঁপছে। এ কারণে বেড়েছে গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগ।
‘এলাকার গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষ শীতের তীব্রতায় কষ্ট পাচ্ছেন। তাই তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। একজন মানুষ হয়ে আর একজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সকলের নৈতিক দায়িত্ব।’
ওই সময় সমাজের সব বিত্তবান মানুষকে অসহায় শীতার্ত নারী-পুরুষদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
কম্বল পাওয়া মহেলা বেওয়া বলেন, ‘তীব্র শীত ও কনকনে ঠান্ডায় যখন কাহিল আমরা, এই সময়ে কম্বল আমাগো খুব উপকার করল। এই শীতে কম্বল গায়ে দিয়ে একটু আরামে ঘুমাতে পারব।
‘শীতে কম্বল দিয়ে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করছে আমাগো গ্রামের মেয়ে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা।’
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন কাজিপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদুল রহমান বাবলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাল মিয়া, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম খোকন, ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ইমরুল কায়েস (সবুর), লক্ষ্মীপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী কামরুল হাসান তরু, তার মেয়ে কামরুন্নাহার তনুসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:একুশে পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাপিয়া সারোয়ারের স্বামী সারওয়ার আলম।
তিনি জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে শিল্পীর দাফন সম্পন্ন হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন পাপিয়া। গত মাসে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন গুণী এ শিল্পী, যার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্বামী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।
পাপিয়া সারোয়ার ১৯৫২ সালের ২১ নভেম্বর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রসংগীত অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন।
বেতার ও টিভিতে ১৯৬৭ সাল থেকে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন পাপিয়া। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।
১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে ভারতে যান।
দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা পেয়েছেন পাপিয়া সারোয়ার। তার ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ও গায়কীর প্রশংসা ছিল সংগীতাঙ্গনে।
আধুনিক গানেও আছে তার সাফল্য। ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাকে আপামর বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দিয়েছে।
সংগীতবোদ্ধাদের মতে, আধুনিক গান বাছাইয়ে বেশ সচেতন ছিলেন বলে তার অ্যালবামের সংখ্যা কম। তার সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশপানে হাত বাড়ালাম’ প্রকাশ হয় ২০১৩ সালে।
পাপিয়া সারোয়ার ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০২১ সালে পান একুশে পদক।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে রোববার দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নামী সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন।
বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনামলে পেশাগত কাজকর্মে বারবার বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয় বেবী নাজীনের সংগীতজীবন।
বাংলাদেশ বেতার-টিভি-মঞ্চ কোনো মাধ্যমেই বেবী নাজনীন স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেননি। একপর্যায়ে দেশ ছাড়তেই বাধ্য হন তিনি।
দেশের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছেও সমাদৃত হন বেবী নাজনীন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এ শিল্পী।
সাড়ে চার দশকের ক্যারিয়ারে আধুনিক সংগীতের অর্ধশতাধিক একক অডিও অ্যালবামসহ অসংখ্য দ্বৈত অডিও অ্যালবামে গান গেয়েছেন তিনি।
ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আশা ভোঁসলে, বাপ্পি লাহিড়ী, কুমার শানু, কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গেও একাধিক অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার।
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণির তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন দেশের চলচ্চিত্র, অডিও মাধ্যমে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দেন।
আরও পড়ুন:রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’র অনুকূলে ঢাকার লালমাটিয়ায় বন্দোবস্ত দেয়া খাসজমির অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাস জমি-১ অধিশাখার উপসচিব মো. আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।
পত্রে বলা হয়, এ জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তে সুরের ধারার চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পক্ষে অনুমোদিত হয়েছিল। জমিটি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রামচন্দ্রপুর মৌজায় অবস্থিত।
এতে উল্লেখ করা হয়, বাতিল হওয়া জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত, যার দাগ নম্বর সিএস ও এসএ-৬৯২, আরএস-১৮৯৫, সিটি-১১৬৬৭ এবং ১১৪১২। মোট জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক পাঁচ এক দুই শূন্য একর। এ জমির সিএস ও আরএস রেকর্ডে ‘খাল’ হিসেবে শ্রেণিকরণ থাকার কারণে এ বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে।
মন্তব্য