দেশীয় সংগীতের সুপারস্টার, ব্যান্ড সংগীতের লিজেন্ড, ভক্তদের কাছে ‘গুরু’। যার জনপ্রিয়তা রয়েছে দেশের বাইরেও। তিনি আর কেউ নন, মাহফুজ আনাম জেমস।
তার নতুন একটি গান ‘আই লাভ ইউ’ চাঁদরাতে আসার কথা শুনে নড়েচড়ে বসেছে সংগীতাঙ্গন। ভক্তরা তো বটেই, সংগীতসংশ্লিষ্টদের মধ্যেও এ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল আগ্রহ। এরই মধ্যে প্রকাশও পেয়েছে গানটির ট্রেলার।
শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে জেমস জানান, ভক্তদের জন্যই তার নতুন গান করা। তিনি বলেন, ‘এক যুগ হয়ে গেছে আরকি। এটা এমনও হতে পারত যে ১৩ বছর বা ১১ বছর পরে হচ্ছে। আমার আশপাশের যারা বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত যারা, তারা বলছিল নতুন গান করা দরকার, কিন্তু তাদের আমি ওভাবে গুরুত্ব দিইনি।
‘তবে বেশ কিছুদিন ধরে মাঠে-ময়দানে যারা আমার দর্শক-শ্রোতা, তারা ঠিক অনুরোধও না দাবি করে বসেছে যে নতুন গান লাগবে। ওদের কারণেই মনে করলাম যে এখন মনে হয় করা উচিত নতুন গান।’
ভক্তের জন্য জেমস বরাবরই উদার। ভক্তরাই তার সব- এমন কথা আগে অনেকবারই বলেছেন জেমস। অথচ সেই ভক্তের জন্য ‘নগর বাউল’ থেকে এতদিন নতুন কোনো গান করেননি তিনি।
১২টি বছর চলে গেল। মঞ্চে নিয়মিত থাকলেও নতুন কিছু করার ক্ষুধা কি ছিল না জেমসের? নাকি জেমসের শিল্পীসত্তার ক্ষয় হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিনিয়ত?
এসব জানতে শনিবার দুপুরে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয়েছিল জেমসের সহকারী রুবাইয়াত রবিন ঠাকুরকে। জেমসের পক্ষে তিনি উত্তর দিয়েছেন নিউজবাংলার ছয়টি প্রশ্নের।
প্রথম প্রশ্ন: ১২ বছর নগর বাউল থেকে কোনো কাজ করলেন না। এ সময়ের মধ্যে নতুন কোনো কাজ করতে চাননি? নাকি নতুন কাজ করার কোনো ক্ষুধা ছিল না। যদি কোনো শিল্পীর কাজ করার ক্ষুধা মরে যায়, তাহলে নাকি শিল্পীরও মৃত্যু হয়। ধারণাটি যদি ভুল হয়, সঠিকটা জানতে চাই।
জেমস: শিল্পীসত্তা তো শুধু নতুন কাজের ওপর নির্ভর করে না। মঞ্চটা হচ্ছে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। মঞ্চে আমি সব সময় সরব ছিলাম, থাকার চেষ্টা করি। আর গানের ব্যাপারটা হচ্ছে, তোমরা তো জানো যে গানের কিছু ট্রান্সফর্ম হয়েছে। অর্থাৎ প্রথমে এটা ছিল এলপি, সেখান থেকে ক্যাসেট, সেখান থেকে সিডি। এরপর কিন্তু দীর্ঘ সময় স্থবির ছিল।
অডিও প্রডাকশন, যারা এগুলো প্রডিউস করত, তারা কোন ফরমেটে যাবে এটা নিয়ে ব্যস্ত ছিল সবাই। ট্রানজিশন পিরিয়ড বলে এটাকে। সেই সময় নতুন কোনো কাজ করা হয়নি।
তুমি যেটা জিজ্ঞেস করলে যে শিল্পীসত্তার মৃত্যু, এটা একদম ইরিলিভেন্ট একটা ব্যাপার। শিল্পীসত্তার সঙ্গে নতুন প্রডাকশনের কোনো সম্পর্ক নেই।
পৃথিবীতে তুমি এমন কোনো শিল্পীর নাম বলতে পারো যে ৪০ বছর ধরে প্রতি বছর নতুন গান দিয়ে আসছে।
এমনও দেখা গেছে যে বছরে ৫০টি গান করেছি। আবার দেখা গেছে দুই বছর গ্যাপ। এটা তো সৃষ্টির ব্যাপার। যখন ফিল কাজ করবে, গান তৈরি হবে, যারা এটা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করবে তাদের সঙ্গেও ব্যাটে-বলে মেলার ব্যাপার আছে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: ১২ বছরের গ্যাপ বা ভক্তদের অপেক্ষা কী চাঁদরাতের একটি গান এবং পরবর্তী সময়ে প্রকাশিতব্য কয়েকটি গানে মিটবে?
জেমস: আমি এ পর্যন্ত যা করেছি গান এটাই এনাফ (যথেষ্ট)। যদি আমি কোনো নতুন গান নাও করি, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। আমি তো মঞ্চে সব সময় আছি। আমার গান শুনতে পাচ্ছে, আমাকে কাছাকাছি দেখতে পাচ্ছে। ওটা নতুন গানের সঙ্গে কোনো রিলেশন নেই। তার পরও ভক্তদের জন্যই আমার নতুন গানটি আমি করেছি। যেটা চাঁদরাতে প্রকাশ পাবে। আর মঞ্চে আমি সব সময় আমি গেয়ে যাব, যতক্ষণ আছি। মঞ্চেই আসল জায়গা।
তৃতীয় প্রশ্ন: সব ধরনের সুযোগ ও সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নতুন গান করা থেকে বিরত থাকলেন কেন। আগের ইমেজ, জনপ্রিয়তা ধরে রাখতেই কি আপনার বিরতি?
জেমস: অতীতের কী ইমেজ, জনপ্রিয়তা কোনটা কী ধরে রাখতে হবে, এগুলো নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত না। যখন যেটা আমার টেম্পারমেন্টের সঙ্গে স্যুট করে আমি সে কাজটাই করি। গানও যখন আমি করি, নিজের ইচ্ছামতোই করি।
এরপর গানটা বাজারে যায়, শ্রোতাদের ভালো লাগলে গ্রহণ করে, ভালো না লাগলে গ্রহণ করে না। এভাবেই চলে আসছে।
চতুর্থ প্রশ্ন: ১২ বছর ধরে নতুন কোনো কাজ না করেও আপনি স্টার অফ দ্য স্টারস, লিজেন্ড। এটা কি কোনোভাবে আপনাকে বিব্রত করে? মানে কাজ না করেও এ খ্যাতি কি আপনি নিতে চান?
জেমস: কাজ না করে কখনও খ্যাতি কি পাওয়া যায়, এটা কখনই হয় না। ক্যারিয়ারে তো আমি প্রচুর কাজ দিয়েছি। সেগুলো তো শ্রোতাপ্রিয়তাও পেয়েছে।
কাজ না করে কি খ্যাতি পাওয়া যায়, আমার প্রশ্ন হলো এখানে।
পঞ্চম প্রশ্ন: বিশ্বের অনেক রকস্টারকেই দেখা গেছে তুমুল জনপ্রিয় থাকার সময় তারা হতাশ বা ডিপ্রেশনের মতো রোগে ভুগেছেন। আপনি কি কোনো কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছেন কখনও?
জেমস: না।
ষষ্ঠ প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে কেউ যদি বয়োগ্রাফি বা সিনেমা করতে চান, সে ক্ষেত্রে আপনি অনুমতি দেবেন কি না?
জেমস: অনেকেই চেয়েছেন বা অনেকেই চান। আমরা দেখছি যে কার সঙ্গে করা যায়। এটা ভাবছি। ভবিষ্যতে বলতে পারব, এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে অনেক প্রোপোজাল আছে।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে গান ছাড়াও ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে কথা বলেছেন জেমস। জানান, বলিউডে গানের ক্যারিয়ার গড়েননি দেশ ছাড়তে হবে বলে। দেশে থাকার জন্য বলিউডে গানের ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়েছেন।
জেমসের ফটোগ্রাফির সুনাম রয়েছে। শখেই করেন কাজটি। পোর্ট্রেট ও ল্যান্ডস্কেপ ছবি তুলতে পছন্দ করেন তিনি। বলেন, ‘নির্মলেন্দু গুণের ছবি তোলার ইচ্ছা আছে। তার ছবি এখনও তোলা হয়নি।’
আরও পড়ুন:দেশের অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা ও কিংবদন্তি ব্যান্ড দল মাইলসের সাবেক প্রধান শিল্পী শাফিন আহমেদের মরদেহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসছে সোমবার বিকেলে।
কুল এক্সপোজার কমিউনিকেশন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এরশাদুল হক টিংকু আজ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় বলেন, ‘মাইলস ব্যান্ডের প্রাক্তন ভোকাল এবং বেইজিস্ট শাফিন আহমেদের মরদেহ বাংলাদেশে আসবে আজ বিকাল ৫.৩০-এ। আগামীকাল মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, বাদ জোহর আজাদ মসজিদ, গুলশান-২-এ জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় গত বুধবার শাফিন আহমেদের মৃত্যু হয়, যার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিক ফ্যানস কমিউনিটির (বিবিএমএফসি) বরাত দিয়ে ইউএনবি এ তথ্য জানিয়েছিল।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন শিল্পী ও সংগীত রচয়িতা শাফিন। সেখানে স্থানীয় সময় বুধবার হৃৎপিণ্ড ও কিডনি বিকল হয়ে তার মৃত্যু হয়।
উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী দম্পতি কমল দাসগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের সন্তান শাফিন ১৯৬১ সালের ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে রক ব্যান্ড মাইলসে যোগ দেন। দলটিতে বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের আরেক শীর্ষ তারকা সহোদর হামিন আহমেদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি।
শুরুতে মাইলসের অ্যাকাউস্টিক গিটারিস্ট ছিলেন শাফিন, যিনি ১৯৯১ সালে ব্যান্ডটির প্রধান শিল্পী ও বেইজিস্ট হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করেন।
শৈশবেই সংগীতে হাতেখড়ি হয় শাফিনের। কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে সংগীত তারকা মা-বাবার সুবাদে ৯ বছর বয়সে নজরুল সংগীতের তালিম নেয়া শুরু করেন তিনি।
ঢাকার সেন্ট জোসেফ স্কুলে পড়ালেখা শেষ করে বড় ভাই হামিনের পাশাপাশি ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন শাফিন। সে সময়ে পশ্চিমা সংগীতের প্রভাব শুরু হয় তার জীবনে।
মাইলসে ভোকালিস্ট, সংগীত রচয়িতা, বেজ গিটারিস্টের মতো ভূমিকা পালন করা শাফিন প্রথমবার ব্যান্ডটি ছাড়েন ২০০৯ সালে। এর কয়েক বছর পর ২০১৪ সালে ফের ব্যান্ডটিতে যোগ দিয়ে ২০১৭ সাল নাগাদ ছিলেন তিনি। ওই বছর আবার মাইলস ছাড়েন আলোচিত এ তারকা।
শাফিন শেষবারের মতো মাইলসে প্রবেশ করেন ২০১৮ সালে, যে যাত্রার অবসান হয় ২০২১ সালে এসে।
আরও পড়ুন:দেশের অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা ও কিংবদন্তি ব্যান্ড দল মাইলসের সাবেক প্রধান শিল্পী শাফিন আহমেদের মৃত্যু হয়েছে, যার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিক ফ্যানস কমিউনিটির (বিবিএমএফসি) বরাত দিয়ে ইউএনবি এ তথ্য জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন শিল্পী ও সংগীত রচয়িতা শাফিন। সেখানে স্থানীয় সময় বুধবার হৃৎপিণ্ড ও কিডনি বিকল হয়ে তার মৃত্যু হয়।
উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী দম্পতি কমল দাসগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের সন্তান শাফিন ১৯৬১ সালের ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে রক ব্যান্ড মাইলসে যোগ দেন। দলটিতে বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের আরেক শীর্ষ তারকা সহোদর হামিন আহমেদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি।
শুরুতে মাইলসের অ্যাকাউস্টিক গিটারিস্ট ছিলেন শাফিন, যিনি ১৯৯১ সালে ব্যান্ডটির প্রধান শিল্পী ও বেইজিস্ট হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করেন।
শৈশবেই সংগীতে হাতেখড়ি হয় শাফিনের। কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে সংগীত তারকা মা-বাবার সুবাদে ৯ বছর বয়সে নজরুল সংগীতের তালিম নেয়া শুরু করেন তিনি।
ঢাকার সেন্ট জোসেফ স্কুলে পড়ালেখা শেষ করে বড় ভাই হামিনের পাশাপাশি ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন শাফিন। সে সময়ে পশ্চিমা সংগীতের প্রভাব শুরু হয় তার জীবনে।
মাইলসে ভোকালিস্ট, সংগীত রচয়িতা, বেজ গিটারিস্টের মতো ভূমিকা পালন করা শাফিন প্রথমবার ব্যান্ডটি ছাড়েন ২০০৯ সালে। এর কয়েক বছর পর ২০১৪ সালে ফের ব্যান্ডটিতে যোগ দিয়ে ২০১৭ সাল নাগাদ ছিলেন তিনি। ওই বছর আবার মাইলস ছাড়েন আলোচিত এ তারকা।
শাফিন শেষবারের মতো মাইলসে প্রবেশ করেন ২০১৮ সালে, যে যাত্রার অবসান হয় ২০২১ সালে এসে।
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ওয়ারফেজ ৪০ বছরে পা দিয়েছে ৬ জুন।
বেশ কিছু অ্যালবাম, পুরস্কার, অসাধারণ ও হিট গানের সঙ্গে বাংলাদেশের সংগীত জগতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে ব্যান্ডটি। তা ছাড়া গানের কথা ও সুরের মধ্য দিয়ে কয়েক প্রজন্ম ধরে সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে তারা।
গত সপ্তাহে কোক স্টুডিও বাংলায় নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ হয়েছে ওয়ারফেজের বিখ্যাত গান ‘অবাক ভালোবাসা’। গানটি নতুন করে প্রমাণ করল কিছু গান, কিছু সুর কখনও পুরোনো হয় না। কয়েক প্রজন্ম পরও এসব গান আবার নতুন করে ফিরে আসে।
গানটির নতুন সংস্করণ ইউটিউবে ৭০ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। এমন সময়ে এর আদি সংস্করণের কথাও আমাদের মনে পড়ে যায়।
আজ থেকে ৩০ বছর আগে ‘অবাক ভালোবাসা’ নামের অ্যালবামে মুক্তি পায় এ গান। অ্যালবামটি তো হিট হয়েছিলই, সেই সঙ্গে অবাক ভালোবাসা গানটিও।
বেশ কিছু চমৎকার উপাদান এতে যুক্ত করা হয়েছিল। শুরুতেই কয়েক মিনিটের সেই গিটার সলো, পাথরে ধাক্কা খাওয়া ঢেউয়ের শব্দ, আকাশে উড়তে থাকা গাঙচিলের ডাক, আর তারপর অসাধারণ কথা ও সুরের সমন্বয়। তখনকার তরুণরা গানটিকে লুফে নিয়েছিল।
প্রায় তিন দশক পর প্রকাশিত অবাক ভালোবাসা গানের নতুন সংস্করণটি বর্তমান সময়ের তরুণদের ভালোবাসা পাচ্ছে। গানটিতে অংশ নিয়েছেন ওয়ারফেজের বর্তমান সদস্যরা শেখ মনিরুল আলম টিপু, ইব্রাহিম আহমেদ কমল (লিড গিটার), পলাশ নূর (ভোকাল), সামির হাফিজ (লিড গিটার), নাইম হক রজার (বেইজ গিটার) ও শামস মনসুর গণি (কিবোর্ড)। এতে পারফর্ম করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এসেছিলেন ব্যান্ডটির সাবেক ভোকাল ও এই গানের স্রষ্টা বাবনা করিম। আরও ছিলেন একঝাঁক শিল্পী, যারা গানের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন ও ভোকালাইজ করেছেন।
টিপু বলেন, ‘গত নভেম্বরে অর্ণব কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় সিজনের ব্যাপারে আমার সাথে যোগাযোগ করে। তারা একটা এপিসোডে ওয়ারফেজকে ফিচার করতে চাইছিল। বিভিন্ন শর্ত, নানা বিষয়ে একমত হওয়ার পরে আমরা এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করলাম।’
টিপু জানান, তারা প্রথমে তাদের অন্য একটি হিট গান ‘একটি ছেলে’ নতুনভাবে করতে চাইছিলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের বর্তমান ভোকাল পলাশ এই গানটা চমৎকার গায়। আমরা সবাই ভাবছিলাম এই গানটা দারুণ হবে, কিন্তু কোক স্টুডিও টিমের পছন্দ ছিল ‘অবাক ভালোবাসা’। অনেক চিন্তাভাবনার পর আমরা কোকের সিদ্ধান্তই মেনে নিলাম। সাথে সাথেই আমরা গানটি যার লেখা ও সুর করা, সেই বাবনা করিমের সাথে যোগাযোগ করলাম।”
টিপুর মতে, পুরো ব্যাপারটাই ছিল একটি দলীয় প্রচেষ্টা। নতুন সংস্করণটির প্রযোজনায় অর্ণব আর সামিরের সঙ্গে তিনি নিজেও কাজ করেছেন।
অবাক ভালোবাসা গানের ভিজ্যুয়াল পরিচালনায় ছিলেন ডোপ প্রোডাকশনের কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। এর সেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয় অন্তত ৩০০ কেজি বালি।
আর্ট ডিরেক্টর শিহাব নূর এবং কস্টিউম ডিজাইনার নিশাত দিশার সঙ্গে মিলে কৃষ্ণেন্দু আর তার টিম একটি চমৎকার ডিজাইন তৈরি করেছেন। এখানে ছিল কক্সবাজারের সমুদ্র, ‘অ্যাঞ্জেল ড্রপ’ নামের একটি ক্যাফে এবং নীলচে আভার সন্ধ্যাবেলা।
বেড়ে ওঠার সময়ে গানটি কৃষ্ণেন্দুর ভীষণ প্রিয় ছিল। তিনি বলেন, ‘অবাক ভালোবাসা শুনে আমার সবসময়ই শান্ত সমুদ্র আর রাতের তারাভরা আকাশের কথা মনে পড়ে। সেই কারণে ভিজ্যুয়ালের ক্ষেত্রে আমরা নীল আর সাদা টোন নিয়ে কাজ করেছি।’
পরিচালক আরও জানান, লাইভ শ্যুট করা সবসময়ই বেশ ঝামেলার। সেটে কাজ করার সময় প্রযুক্তিগত নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে অডিও ও ভিডিও দুটি টিম মিলে একটি টিম হয়েই কাজ করেছিল।
অবাক ভালোবাসা গানের গীতিকার ও সুরকার বাবনা করিম জানান, গানটি মুক্তি পাওয়ার বছর দুয়েক আগে ১৯৯২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনি গানটি লিখেছিলেন। তার ভাষায়, ‘আমার মাথায় প্রথমে সুরটা এসেছিল। গানের কথা এসেছে আরও পরে।’
১৯৯৪ সালে ‘অবাক ভালোবাসা’ নামের অ্যালবামটি মুক্তি পাওয়ার পর ব্যান্ডটি ‘কোকা-কোলা ব্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’-এর খোঁজ পায়।
প্রতিযোগিতায় এই গান জমা দেয়ার জন্য খুবই আগ্রহী ছিল ব্যান্ডটি, কিন্তু তাদের সাড়ে তিন হাজার টাকার মতো ঘাটতি ছিল।
এ নিয়ে টিপু বলেন, ‘প্রতিযোগিতার বিচারকরা আমাদের কাছে পাঁচটি ক্রোম ক্যাসেটে গানটির রেকর্ড, গানের কথা এবং গঠন (কনস্ট্রাক্ট) চেয়েছিলেন। বাবনা বা আমার কারও কাছেই ওই টাকা ছিল না। তাই আমি রেইনবোর কবির ভাইয়ের কাছে গেলাম। তিনি সাথে সাথেই আমাকে টাকাটা দিলেন এবং নিজেই ক্রোম ক্যাসেটগুলোও রেকর্ড করে দিলেন।’
অনুমিতভাবেই প্রতিযোগিতায় তারা প্রথম স্থান লাভ করে ৫০ হাজার টাকা জিতে নেন। এর ফলে নিঃসন্দেহে ব্যান্ডটি এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছে; সংগীত জগতে তাদের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে।
এখন তিন দশক পরে এসে ভাগ্যই যেন ওয়ারফেজ আর কোকা-কোলাকে আবার এক মঞ্চে নিয়ে এলো। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় সিজনে যুক্ত হলো জনপ্রিয় ব্যান্ডটি।
কোক স্টুডিও বাংলার নতুন সংস্করণের প্রযোজনা ও সেট নিয়ে বাবনা করিম বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে আমার চমৎকার লেগেছে। আর দুটো ভিন্ন স্কেলকেও বেশ ভালোভাবেই মেলানো হয়েছে।’
আদি সংস্করণ ও নতুন সংস্করণের উল্লেখযোগ্য পার্থক্যটির দিকে নির্দেশ করে বাবনা বলেন, ‘এটা করার কারণ হলো পলাশ আর আমি দুই ধরনের স্কেলে গান করি।’
বাবনা করিম যে স্কেলের পরিবর্তনের কথা বলছেন, তা হলো সেটে নতুন সংস্করণটি লাইভ গাওয়ার সময় ই মাইনর থেকে সি মাইনরে চলে যাওয়া। অনেক সময় পারফরম্যান্সকে আরও শৈল্পিক করে তোলার জন্য একাধিক স্কেল ব্যবহার করা হয়। এ রকম ক্ষেত্রে গানের গতিতেও আসে পরিবর্তন।
দুই বা ততধিক ভোকাল একই গান গাওয়ার সময়ও স্কেলের এই পরিবর্তন দেখা যায়। অবাক ভালোবাসার ক্ষেত্রে এ কারণেই পরিবর্তনটি করা হয়।
পলাশ বলেন, ‘এই গানে আমরা সি মাইনর থেকে ই মাইনরে গিয়েছি। অর্থাৎ মোট চারবার স্কেল পাল্টেছে!’ দুজন ভোকালিস্টের স্বাচ্ছন্দ্যময় পারফর্মের সুবিধার্থে এটা করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘ঠিক কীভাবে এই ট্রানজিশনটা আনা হবে, সে ব্যাপারে ওয়ারফেজ আর অর্ণবের মাঝে দীর্ঘ আলোচনা হয়। একসময় একটা পয়েন্ট ঠিক করা হয়, যেখানে ভোকাল আর বাদ্যযন্ত্রের এই ট্রানজিশনটা সুন্দরভাবে হয়। সেদিন আমি নতুন কিছু জিনিস শিখতে পেরেছিলাম!’
নব্বই দশকের সংগীতপ্রেমী আর ওয়ারফেজের ভক্তদের স্মৃতিকাতর করে তুলেছে গানটির এ নতুন সংস্করণ, তবে নতুন আইডিয়া ও কয়্যার, বাঁশি ও পারকাশনসহ নতুন একটি সেটআপে গানটি করতে রাজি হওয়ার সাহস দেখানোর জন্য ওয়ারফেজকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।
এ থেকে স্পষ্ট যে, সংগীতের বিবর্তন কখনও থেমে থাকে না এবং কিংবদন্তি ব্যান্ড ওয়ারফেজের অবাক ভালোবাসা সব মিলিয়ে ছিল অসাধারণ।
কয়েক প্রজন্ম ধরে অবাক ভালোবাসা শ্রোতাদের খুব প্রিয় একটি গান। এটি ভালোবাসা আর সুরের শক্তিতে অনেক মানুষকে কাছে এনেছে।
এখন সময় তরুণ শিল্পীদের এগিয়ে আসার, নতুন কিছু করার। সেটা তখনই সম্ভব হবে, যখন কিংবদন্তি শিল্পীরা নতুন ধরনের জিনিসগুলো গ্রহণ করার মানসিকতা দেখান, তাদের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দেন।
লেখক: সংগীতশিল্পী
আরও পড়ুন:ঢাকাকেন্দ্রিক যাযাবর ব্যান্ডের স্টুডিওতে পুলিশ সদস্য তালুকদার সানাউল্লাহর কথা ও সুরে ‘সেই তুমি’ শিরোনামের গানের রেকর্ডের কাজ সম্পন্ন করেছেন কণ্ঠশিল্পী সজল।
২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ‘পাওয়ার ভয়েস’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন সজল। এরপর নতুন গান প্রকাশের পাশাপাশি স্টেজ, টিভি লাইভ নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
‘সেই তুমি’ গানটির সম্পর্কে জানতে চাইলে সজল বলেন, “যাযাবর ব্যান্ডের ভোকাল ক্যাপ্টেন আমার খুব কাছের ভাই ও সহকর্মী। তার আয়োজনে আমি ‘সেই তুমি’ গান নিয়ে বেশ আশাবাদী।”
তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্য তালুকদার সানাউল্লাহ একেবারে ভিন্ন পেশার মানুষ হয়েও গান লেখা, সুর করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ জন্য আমি তাকে সম্মান জানাই।
‘পেশাগত কাজের মধ্যে থেকেও যে শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি তার যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, আমি আসলেই মুগ্ধ হয়েছি।’
এ শিল্পী বলেন, ‘আমরা ব্যান্ড মিউজিককে হারাতে বসেছি। যুগের হাওয়ার ঝড়ে আমরা মহারথীদের কষ্টে গড়া সোনালি সেই সময়ের ব্যান্ড মিউজিককে ভুলেই গেছি। সেই তুমি গানটি আমার কাছে মনে হয়েছে সেই সোনালি সময়ের ব্যান্ড মিউজিকের ক্যাসেটের গানগুলোর মতো। আশা করছি গানটি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মনের কথা তুলে ধরবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন মানুষ গান শোনার চেয়ে বেশি দেখেন। আসলে আমি মনে করি আমাদের বাংলা মিউজিককে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের অডিও গানের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। বাংলা সংস্কৃতি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার মিউজিককে বাঁচিয়ে রাখতে সকলের সাপোর্ট ভীষণভাবে প্রয়োজন। সকলের ভালোবাসায় গান করে যাচ্ছি। এ ভালোবাসা নিয়েই ভালো ভালো গান করে যেতে চাই।
‘খুব শিগগিরই প্রতিষ্ঠিত কোনো ক্যাসেট কোম্পানির ব্যানারে সেই তুমি গানটি প্রকাশিত হতে চলেছে। আমার বিশ্বাস, যেভাবে আমায় উৎসাহ দিয়ে পাশে থেকেছেন ভালোবেসে যাচ্ছেন, আগামীতেও পাশে থাকবেন এই প্রত্যাশা।’
আরও পড়ুন:মৌমিতা তাশরিন নদী; এ প্রজন্মের অন্যতম আলোচিত সংগীতশিল্পী। গ্ল্যামারাস ও মিষ্টি গায়কীর এই শিল্পী এরইমধ্যে বেশ কিছু মৌলিক গান উপহার দিয়েছেন, যেগুলো শ্রোতাপ্রিয়তাও পেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মুক্তি পেলো নদীর আরও একটি নতুন গান।
‘মন মানে না’ শিরোনামের এই গানটি প্রকাশ হয়েছে আরটিভি মিউজিকের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে।
গানটির কথা লিখেছেন আজমল কবির ও সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন হৃদয় হাসিন। আর রিদম প্রোগ্রামিং করেছেন সায়েম রহমান।
নতুন গান নিয়ে নদী বলেন, “মৌলিক গানের ক্ষেত্রে আমি একটু সময় নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। ‘মন মানে না’ গানটি বেশ মিষ্টি একটা রোমান্টিক গান। গানটির কথা যেমন সুন্দর, তেমনি এর মিউজিকটাও দারুণ।
“যারা ফোক ও মেলোডির মেলবন্ধন পছন্দ করেন, তাদের গানটি ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে মনে হয়েছে, গানটি পছন্দের তালিকায় রয়ে যাওয়ার মতো।”
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি দর্শক- শ্রোতাদের মিষ্টি একটা গান উপহার দেয়ার। তাদের কাছে গানটি ভালো লাগলে, গ্রহণযোগ্যতা পেলে আমাদের কষ্ট স্বার্থক হবে।’
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে নদীর গাওয়া ‘জলছায়া’, আসিফ আকবরের সঙ্গে ‘আজ হারাই’, একক কণ্ঠে ‘ডুবসাতার’, ‘দেশি গার্ল’সহ আরও বেশ কিছু গান বেশ শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে।
যুগ যুগ ধরে অনেক প্রতিভাবান শিল্পীর অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গন। মূলধারার গণমাধ্যম ও দর্শকদের কাছে এ শিল্পীদের অনেকেই অচেনা, তবে নিজস্ব পরিসরে তাদের রয়েছে বেশ পরিচিতি।
কয়েক বছর ধরে কিছু জনপ্রিয় সংগীত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন এমন অনেক শিল্পী। গত বছরও এমন দুজন শিল্পীকে পেয়েছে দেশ, যারা আলো ছড়িয়েছেন সংগীতাঙ্গনে।
এ দুজন হলেন আলেয়া বেগম এবং হামিদা বানু। তাদের মধ্যে ‘বাউল মাতা’ হিসেবে পরিচিত লোকসংগীত শিল্পী আলেয়া বেগমের রয়েছে দীর্ঘ ৫০ বছরের ক্যারিয়ার। বিচ্ছেদ, পালাগান, জারিগান ও আধ্যাত্মিক গানের জন্য বিখ্যাত এ শিল্পী লিখেছেন হাজারের বেশি গান। ‘গুণিন’-এর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রেও তিনি গেয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও তিনি মূলত তার আশেপাশের মানুষজন ও এলাকাবাসীর মধ্যেই পরিচিত ছিলেন।
গত বছর কোক স্টুডিও বাংলার ‘কথা কইয়ো না’ গানে আলেয়ার হৃদয়স্পর্শী পারফরম্যান্স তাকে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের নজরে নিয়ে আসে। হঠাৎই সংগীতপ্রেমীদের মধ্যে তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। স্থানীয় এ শিল্পী রাতারাতি হয়ে ওঠেন দেশের সবার প্রিয়।
গানটির সাফল্য শুধু আলেয়া বেগমকেই নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করিয়ে দেয়নি, বরং বাংলাদেশি লোকসংগীতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকেও তুলে ধরেছে।
একই ঘটনা ঘটেছে সিলেটের লোকসংগীত শিল্পী হামিদা বানুর ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন ধরে হাসন রাজার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হামিদা বানুর পেশাদার হিসেবে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল না।
কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় সিজনে ‘দিলারাম’ গান দিয়ে তিনি মঞ্চে ওঠেন। তার শ্রুতিমধুর কণ্ঠের গান সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আলেয়া বেগমের মতোই হামিদা বানুও তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
আলেয়া বেগম ও হামিদা বানুর মতোই দর্শক-শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন আরেক গ্রামীণ প্রতিভা জহুরা বাউল। ‘বনবিবি’ গানে তার শক্তিশালী ও সুরেলা কণ্ঠে মুগ্ধ হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তিনি এখন নারী শিল্পীদের জন্য অনুপ্রেরণা। গ্রামের নারীদের ওপর তার প্রভাবের বিষয়টি ‘বনবিবি’ গানে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।
এ গানে তার নেতৃত্বে বাউল নারীদের দল মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। ‘মেঘদল’-এর মতো জনপ্রিয় ব্যান্ডের সঙ্গে একই মঞ্চে গান করলেও তার শক্তিশালী পরিবেশনা বিশেষভাবে দর্শক-শ্রোতার মন জয় করে নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এ বছরের থিম ‘ইনস্পায়ার ইনক্লুশন’, যার লক্ষ্য হচ্ছে নারীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা সমাজে নিজের জায়গা সম্পর্কে জানতে পারে। এর সঙ্গে এ গল্পগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কোক স্টুডিও বাংলা আলেয়া, হামিদা ও জহুরার মতো নারীদের প্রতিভা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এর লক্ষ্য নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি অনুপ্রেরণা সৃষ্টি।
বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক ও র্যাপার বাদশা বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়। ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত এই গায়ক বাংলাদেশে এসে নাচে-গানে মাতিয়েছেন ঢাকাবাসীকে।
শুক্রবার রাতে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেকনোর নামে ‘টেকনো স্পার্ক ২০ সিরিজ মিউজিক ফেস্ট’-এ পারফর্ম করেন তিনি।
ঢাকার বসুন্ধরা কনভেনশন সিটির (আইসিসিবি) এক্সপো জোনে ছিল দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। জনপ্রিয় সব গান গেয়ে দর্শকদের বুদ করে রাখেন বাদশাহ।
বিপণন প্রতিষ্ঠান ওয়েবএবলের আয়োজনে এই কনসার্ট শুধু ঢাকাই নয় বরং অনলাইনে সরাসারি লাইভ হওয়ায় দেশের সীমনা পেরিয়ে সারা বিশ্বের সঙ্গীতপ্রেমীদের উপহার দিয়েছে জমজমাট একটি আনন্দময় সন্ধ্যা।
রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতাও পালন করা হয় কনসার্টে। মিউজিক ফেস্ট-টি উপভোগ করতে নেপাল, ভারত এবং শ্রীলঙ্কা থেকেও অনেকে টিকিট কেটে এসেছেন।
ওয়েবএবলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টেকনো স্পার্ক ২০ সিরিজ মিউজিক ফেস্টে প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক ও র্যাপার ‘বাদশাহ’। আনুষ্ঠানিভাবে বাংলাদেশে বাদশাহ'র এটি প্রথম পারফরমেন্স। প্রথম আয়োজনেই দর্শকদের মন জয় করেছেন তিনি। ঢাকায় তিনি, ‘জুগ্নু’, ‘পানি পানি’, ‘গরমি’, ‘ডিজে ওয়ালা বাবু’, ‘লেটস নাচো’, ‘কালা চশমা’, ‘কর গাই চুল’, ‘গেন্দা ফুল’, ‘আভি তো পার্টি শুরু হুই হ্যায়’ এবং পাগাল’ সহ তার জনপ্রিয় গানগুলো দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন ।
বাদশাহ তার সোশ্যাল মিডিয়া পেজে বলেন, পরম ভালোবাসা ও অভ্যর্থনার জন্য বাংলাদেশের দর্শকদের ধন্যবাদ। বাংলাদেশ পারফর্ম করে খুবই ভালো লেগেছে এবং আমি আবার এই দেশে আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। অসাধারণ এই আয়োজনের জন্য আয়োজকদের কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
টেকনো স্পার্ক ২০ সিরিজ মিউজিক ফেস্টে বাদশাহ ছাড়াও দেশি ও বিদেশি শিল্পীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এই ফেস্টে ‘ফুয়াদ এন্ড ফ্রেন্ডস’, ‘প্রিতম হাসান’, ‘জেফার’, ‘সঞ্জয়’ এবং ‘ব্ল্যাক জ্যাং’ সহ প্রশংসিত আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশি শিল্পীরা পারফর্ম করেন।
সঙ্গীত প্রযোজক এবং কম্পোজার ফুয়াদ বলেন, অসাধারণ আয়োজন ছিল। ঠিক সময়ে শুরু হয়েছে এবং সময়সূচি অনুযায়ী ঠিক সময়েই শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা এবং শিল্পীদের আতিথেয়তা সবকিছুই গোছানো ছিল।
এই মিউজিক ফেস্টটি শুধুমাত্র নাচ-গানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। অনুষ্ঠানে আগত দর্শক তাহসিন মাহমুদ বলেন, আমি শো'তে দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছি। লাইনআপ এবং ভিজ্যুয়াল ছিল ভিন্ন মাত্রার। এছাড়া আতশবাজির ঝলক ছিল অসাধারণ। এমন বড় মাপের আন্তর্জাতিক শিল্পীর উপস্থিতিতে পুরো আয়োজনটি জাকজমক পার্টির মতো মনে হয়েছিল। এত বড় আয়োজনের সব কিছুই টাইম-শিডিউল মেনে সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে।
টেকনো মোবাইলের প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক বলেন, এই আয়োজনটি প্রতিটি অর্থেই ছিল একটি গেম চেঞ্জার। আমরা এতো বড় অনুষ্ঠানের বাস্তবায়ন এবং দর্শকদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় জমজমাট সঙ্গীত আয়োজন উপহার দিতে পেরে গর্বিত।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান ওয়েবএবলের কর্নধার আনিস হান্নান চৌধুরী বলেন, দর্শকদের অগণিত সাড়া পেয়ে আমরা অভিভূত। আমরা এমন একটি কনসার্টের আয়োজন করতে চেয়েছিলাম যা বাংলাদেশে মাইলফলক হয়ে থাকবে। আশা করি আমরা তেমনি একটি আয়োজন উপহার দিতে পেরেছে। এই আয়োজন দর্শকরা অনেকদিন মনে রাখবে। বাংলাদেশের মঞ্চে আরও বড়মাপের আন্তর্জাতিক শিল্পীদের উপস্থাপন এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশীয় প্রতিভা উপস্থাপনের জন্য আমরা সামনে আরও কাজ করবো।
ওয়েবএবল-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ শাদাব মাহাবুব বলেন, আমাদের টিমের সবার অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় টেকনো স্পার্ক ২০ সিরিজ মিউজিক ফেস্ট দারুণ সফলতা পেয়েছে। দর্শকদের মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো এমন আয়োজন আরও করতে চাই। আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা আছে দেশে এবং বিদেশে আরও অনেক লাইভ অনুষ্ঠান করা এবং বিশ্বমঞ্চে আমাদের শক্ত অবস্থান তৈরি করা।
মন্তব্য