করোনা মহামারির কারণে গেল দুই বছর নববর্ষে তেমন আয়োজন না হলেও এবার বাংলা নতুন বছর ১৪২৯ বরণ করতে নানা আয়োজনে মেতেছে বাঙালি।
বর্ষবরণের উৎসবে সবার মাঝে ফিরেছে প্রাণের উচ্ছ্বাস। বৈশাখী সাজে সেজেছে তরুণ-তরুণীরা। পিছিয়ে নেই শিশু-বয়স্করাও। পুরোনো গ্লানি পেছনে ফেলে নতুনের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রত্যাশা সবার।
করোনাপূর্ব সময়ের মতো নতুন বর্ষকে বরণ করে নিয়েছে চট্টগ্রামবাসী। চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি সিরিষ তলায় আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশগ্রহণ করে সংগীত ভবন, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, অদিতি সংগীত নিকেতন, সৃজামি, রাগেশ্রীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। চট্টগ্রামের নববর্ষ উদযাপন পরিষদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠান চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
পুরোনো জরাকে মুছে দিয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে সবার আহবান, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো..’ এ ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় তুলে ধরা হয়েছে দেশীয় ও আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে।
তিন কন্যা ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এসেছেন খুলশীর দেলোয়ার হোসেন ও জাহানারা পারভীন দম্পতি। জাহানারা পারভীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পবিত্র রমজান হলেও দুই বছর পর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এসেছি। বরাবরের মতোই নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে পুরোনো জরাজীর্ণ ও সংকীর্ণতা মুছে মঙ্গলময় হোক নতুন বর্ষ।’
কাজীর দেউড়ি এলাকার ইকবাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তো ভেবেছি রমজানে মানুষজন খুব একটা আসবে না। এখানে এসে দেখি পরিস্থিতি ভিন্ন। আমার তো মনে হয় আমার মতো অধিকাংশই এখানে রোজা রেখে বর্ষবরণের উৎসবে এসেছেন। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ুক অসাম্প্রদায়িকতা। নতুন বছর শুভ হোক, শুভ নববর্ষ।’
‘শিল্পের প্রয়োজন, বিবেকের জন্য, জীবনের জন্য’ প্রতিপাদ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হয়েছে বর্ষবরণের প্রধান আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টায় নগরীর বাদশা মিয়া রোডস্থ চারুকলা ক্যাম্পাস থেকে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কমার দে, চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরীসহ চবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শোভাযাত্রায় লোকজ পাখি ও ঘোড়ার দুটি মোটিফ (ডামি) ছিল। এর বাইরে চারুকলার শিক্ষার্থীরা বাহারি রঙের মুখোশ ও সরা নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীদের বাইরেও সাবেক শিক্ষার্থীসহ ছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।
ঢোল-বাদ্যের তালে তালে শোভাযাত্রাটি চারুকলা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে নগরীর কাজীর দেউড়ি ঘুরে বেলা ১১টায় চারুকলা ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
অতীতের সব গ্লানি ও বিভেদ ভুলে বাংলা নববর্ষ বাঙালির ঐক্যকে আরও সুসংহত করার প্রত্যাশা নিয়ে খুলনায় উদযাপিত হয়েছে পয়লা বৈশাখ। এ উপলক্ষে নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক থেকে বৃহস্পতিবার সকালে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ছাড়াও শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মাহাবুব হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা শিশু একাডেমিসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে।
কুমিল্লায় এবার পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রায় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু একটি টেপা পুতুল। মঙ্গল শোভাযাত্রায় টেপা পুতুলটিকে ঘিরে সড়কের দুই পাশে থাকা মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। টেপা পুতুলটির উচ্চতা ১৪ ফুট, প্রস্থে ৬ ফুট।
এটি তৈরি করেন কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষক সামিউল ইসলাম জাহেদ। তিনি বলেন, ‘পুতুলটিকে আমি আনন্দের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছি। কারণ, দেখলে মনে হবে পুতুলটি নাচ করছে। গত দুই বছর করোনার মহামারির কারণে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। এ বছর করোনামুক্ত। তাই আমাদের আনন্দ লাগছে। সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ এই টেপা পুতুল।’
পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার বলেন, ‘টেপা পুতুলটি একটি চঞ্চল চপলা কিশোরীর মতো। এই ফাগুনে ধান ক্ষেতের আল ধরে মাথায় বেণি ঝুলিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি ফেরা কোনো কিশোরীর মতোই লাগছে এটি।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষক সামিউলের তৈরি টেপা পুতুলটি খুবই ভালো লেগেছে। তার পুতুলটির বার্তা আনন্দ। আমরা আসলেই এ বছর আনন্দ করতে পারছি।’
উত্তরের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামে গ্রামে বয়োজ্যেষ্ঠদের পাশাপাশি শিশুরাও মজেছে বর্ষবরণের আমেজে। নতুন পোশাকে সেজেছে শিশুরা। চুরি, আলতা, টিপ আর বাঙালি ভাজে শাড়ি পড়ে নতুন বছরকে বরণ করেছে তারাও।
সদরের আকচা ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাটিতে করে শিশুদের কেউ বনভোজনের খাবার উপকরণ, কেউ আবার মশলা নিয়ে যাচ্ছে নদীর ধারে।
জিজ্ঞেস করলে ৯ বছরের শিশু প্রতিভা রানী বলে, নদীর ধারে বৈশাখ উপলক্ষে মেলা বসেছে। সেখানেই ডালের তৈরি বরা ভেজে বোনভোজন করবে তারা। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ এলেই তারা এমন আনন্দে মেতে ওঠে। এ সময় মেলায় অতিথিদের আপ্যায়ন করে বকশিসও নেয় তারা।
সে বকশিসের টাকায় নাগরদোলা, দোলনা, ঘোরায় চড়াসহ চুরি ফিতা কিনে মেলা থেকে। এমনটি জানি শিশু দিয়া মনি বলেন, ‘আজ আমার খুব আনন্দ লাগছে।’
অভিভাবক নিরঞ্জণা দেবি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদের কাছে নতুন দিনের নতুন আমেজ। আমরা গ্রামের যারা অভিভাবক আছি, তারা সবাই শিশুদের সাজিয়ে দেই। নতুন বছর তাদের যেন আনন্দে কাটে, বিপদ যেন তাদের ছুঁতে না পারে।’
এছাড়াও আজকের দিনে এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় হালখাতা, মাছধরা, রঙ মাখাসহ নানা রকম আয়োজন দেখা গেছে বৈশাখ ঘিরে। এর আগে সকলে সুখ ও মঙ্গল কামনায় মঙ্গল শোভাযাত্রাও করেছে জেলাবাসী।
বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে রাজশাহী শহরেও। বর্ষবরণে দেখা গেছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
নগরীর ঘোষপাড়ায় পদ্মাপাড়ের বটতলায় নতুন বছরের নতুন সূর্যকে বরণের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা। গানে, নাচে পুরো আয়োজন ছিল প্রাণবন্ত।
বৃহস্পতিবার ভোরে ঘোষপাড়া পদ্মা মন্দিরের পাশে বটতলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণে মেতে ওঠেন তারা। পরে মহানগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেখানে যোগ দেন নানা সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে রাজশাহী কলেজ। শোভাযাত্রাটি রবীন্দ্রনাথ ভবন থেকে বের হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে পুনরায় সেখানে গিয়ে শেষ হয়। এ ছাড়া বেলা ১১টায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রা করেন। পরে সাড়ে ১১টার দিকে ঘুড়ি উৎসবের উদ্বোধন করেন উপাচার্য।
এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণ নিয়ে বড় কোনো আয়োজন ছিল না। প্রতি বছর রাবির মঙ্গল শোভাযাত্রা ব্যাপক আলোচিত হলেও এবারে ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়নি। চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন।
মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণে মেতেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীও। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো..’ গানে গানে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে বিসিক।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নাটোরে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের মহারাজা জগদীন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।
বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গজল এলাকার অর্ধবঙ্গেশ্বরী রাণী ভবানী রাজবাড়ি চত্বরের মুক্তমঞ্চে গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। পরে মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এ ছাড়া সেখানে আয়োজন করা হয় গ্রামীণ মেলা।
শোভাযাত্রায় নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ও পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাসহ বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
আরও পড়ুন:পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের আলোচিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও নিগার সুলতানা জ্যোতি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারা বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান।
নতুন বছরের আগের দিন শনিবার রাতে ফেসবুকে ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে সাকিব লিখেন, ‘শুভ নববর্ষ! আশা করি আমাদের সবার জীবনে এই নতুন বছর অঢেল সুখ, শান্তি এবং আনন্দ নিয়ে আসবে।’
নিজ ভেরিফায়েড পেজে ‘শুভ নববর্ষ ১৪৩১’ লেখা একটি পোস্টার শেয়ার করে ওপেনার তামিম ইকবাল এক বাক্যে লিখেন, ‘সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।’
এ দুই তারকা ছাড়াও অনেকেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেন, ‘নববর্ষে নবরূপ রাঙিয়ে দিক প্রতিটি মুহূর্ত। সুন্দর সমৃদ্ধ হোক আগামীর দিনগুলো। শুভ নববর্ষ সকলকে।’
নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ লিখেন, ‘আনন্দ, উন্নতি ও শুভকামনার বার্তা নিয়ে নতুন বছরের সূচনায় ভরে উঠুক সকলের জীবন। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ ১৪৩১।’
জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি লিখেন, ‘নববর্ষে নবরূপ রাঙিয়ে দিক প্রতিটি মুহূর্ত। সুন্দর সমৃদ্ধ হোক আগামীর দিনগুলো। শুভ নববর্ষ।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ বাংলা নববর্ষ-১৪৩১ উদযাপন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করে হয়েছে।
উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের শহীদনগর বাজারে রোববার নববর্ষ উদযাপন কমিটি ও শাপলা সবুজ সংঘের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ৩১তম বৈশাখী মেলা শুরু হয়।
বর্ষবরণ উপলক্ষে কমলগঞ্জে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের নিয়ে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বর্ষবরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নববর্ষ উদযাপন কমিটির সভাপতি পতনঊষার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান সভাপতিত্ব করেন। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পতনঊষার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার তওফিক আহমদ বাবু, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আবদুল হান্নান চিনু, আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিছবাউর রহমান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম, পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান তবারক, শাপলা সবুজ সংঘের সভাপতি নারায়ণ মল্লিক সাগর, শহীদনগর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল বশর জিল্লুল, প্রবাসী ইমদাদুল হক ইমরান, নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকসহ অনেকে।
এদিকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী মেলায় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সব পণ্যের পসরা সাজানো হয়েছে।
পহেলা বৈশাখের দিন রোববার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে সোমবার পর্যন্ত। মেলায় উঠেছে হরেক রকমের পণ্য।
মেলা দেখতে ভিড় করেছে শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সীরা। দীর্ঘদিন পর মেলা হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে আগত দর্শনার্থীরা।
আরও পড়ুন:পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে।
ঐক্য, সাংস্কৃতিক গর্ব ও স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক শোভাযাত্রাটি ঐতিহ্যবাহী শিল্পীসত্তা ও চেতনার মন্ত্রমুগ্ধকর প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে রোববার সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে আরম্ভ হয়। খবর ইউএনবির
উৎসাহী অংশগ্রহণকারীদের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা শাহবাগ, ঢাকা ক্লাব এবং শিশু পার্কের মতো ঐতিহাসিক স্থান হয়ে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা অতিক্রম করে। বর্ণিল পোশাকে সজ্জিত ও প্রতীকী নিদর্শন সম্বলিত শোভাযাত্রাটি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিধ্বনি করে এবং আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়
সৃজনশীলতা ও শৈল্পিক প্রকাশের লালনের জন্য পরিচিত চারুকলা অনুষদ সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের সূচনা স্থান। অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আয়োজিত এই আয়োজনে বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যের প্রচার ও সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গীকারের দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠে।
শোভাযাত্রাটি টিএসসিতে সমাপ্তির পথে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার বাতাস হর্ষধ্বনি, সংগীত এবং অংশগ্রহণকারী ও দর্শকদের সম্মিলিত উল্লাসে অনুরণিত হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা শুধু বাংলা নববর্ষের আগমনই উদযাপন করে না, প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালি মানুষের সহনশীলতা ও চেতনার সাক্ষ্য বহন করে।
আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে এই জাতীয় আয়োজন ঐক্য, স্থিতিস্থাপকতা ও একাত্মতার বোধকে লালন করার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব নিশ্চিত করে।
বাংলা নতুন বছর ১৪৩১ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলা নববর্ষের আগের দিন শনিবার এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা নতুন বছর ১৪৩১ আমাদের জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে।’
দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুভ নববর্ষ, ১৪৩১। উৎসবমুখর বাংলা নববর্ষের এই দিনে আমি দেশবাসীসহ সকল বাঙালিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। এটি সর্বজনীন উৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। আবহমান কাল ধরে নববর্ষের এই উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র জাতি জেগে ওঠে নবপ্রাণ স্পন্দনে, নব অঙ্গীকারে। সারা বছরের দুঃখ-জরা, মলিনতা ও ব্যর্থতাকে ভুলে বাঙালি রচনা করে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, আনন্দ ও ভালোবাসার মেলবন্ধন।’
পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যে পহেলা বৈশাখ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলত মোঘল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। কৃষিকাজের সুবিধার্থে সম্রাট আকবর ‘ফসলি সন’ হিসেবে বাংলা সন গণনার যে সূচনা করেন, তা কালের পরিক্রমায় সমগ্র বাঙালির কাছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্মারক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
“পহেলা বৈশাখ বাঙালিয়ানার প্রতিচ্ছবি। এই উদযাপন আমাদের শেকড়ের সন্ধান দেয়। এর মধ্য দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় জাতিসত্তার পরিচয়।”
বৈশাখের প্রথম দিনকেন্দ্রিক উৎসবের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির প্রতিটি ঘরে, জনজীবনে এবং আর্থ-সামাজিক সংস্কৃতিতে পহেলা বৈশাখ এক অনন্য উৎসব। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে হালখাতার পাশাপাশি যাত্রাগান, পালাগান, পুতুলনাচ, অঞ্চলভিত্তিক লোকসংগীত, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন পসরা নিয়ে মেলার বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে যেমন লোকজ-সংস্কৃতি প্রাণ ফিরে পায়, তেমনি দেশের অর্থনীতি তথা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমৃদ্ধ হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসে।’
আরও পড়ুন:‘আমার বয়স অনেক হয়েছে, তবুও আমি সুস্থ আছি নিয়মিত লাঠি খেলার কারণে। আমার যারা ওস্তাদ ছিল, সবাই মারা গেছে। তাদের শেখানো লাঠি খেলা দেখিয়ে গ্রামের মানুষকে আনন্দ দিয়ে থাকি।’
কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁ সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের সাহাজ আলী সরদার। ৬০ বছর বয়সী এ ব্যক্তি শুক্রবার বিকেলে জেলা শহরের মুক্তির মোড়ে অংশ নেন লাঠি খেলায়।
বাউল আখড়া বাড়ির চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ খেলার আয়োজন করা হয়।
লাঠি খেলা দেখতে আসা ভীমপুর এলাকার বাসিন্দা মুমিন সরদার (৩৫) বলেন, ‘গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলাটি এখন আর দেখতেই পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সংগঠন প্রতি বছর এ খেলার আয়োজন করে বলে আমরা যুবসমাজ দেখতে পারি।
‘গ্রামীণ খেলাগুলো টিকিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকে চেষ্টা করা উচিত।’
শহরের পোস্ট অফিসপাড়ার মীম বলেন, ‘আমরা সবাই এখন ভিডিও গেইমের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। তাই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো দেখলে অন্যরকম ভালো লাগে।
‘বেড়াতে এসেছিলাম। ঢোলের শব্দ শুনে এসে দেখি লাঠি খেলা হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে অনেক পুরোনো লাঠি খেলা দেখে।’
লাঠি খেলার দলের সদস্য আবদুস সামাদ (৫৫) বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন আমার বাবার কাছ থেকে লাঠি খেলা শিখেছি। একসময় প্রচুর খেলা দেখানোর জন্য দাওয়াত পেতাম।
‘এখন আর পাই না, তবে এটা ভেবে ভালো লাগে যে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এখনো লাঠি খেলাকে টিকিয়ে রেখেছেন।’
দারিয়াপুর গ্রামের সাহাজ আলী সরদার (৬০) বলেন, ‘একটা সময় ছিল প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দাওয়াত পেতাম, তবে এখন আর আগের সময় নেই।
‘সবাই বিভিন্ন ধরনের অনলাইন গেইম নিয়ে ব্যস্ত। গ্রামীণ খেলাগুলোর মাধ্যমে যুবসমাজ বিভিন্ন ধরনের নেশা থেকে বিরত থাকবে বলে আমি মনে করি।’
আয়োজনের বিষয়ে বাউল আখড়া বাড়ির সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘লাঠি খেলা হলো গ্রামীণ ঐতিহ্য। এটি যেন বিলীন না হয়ে যায়, সে জন্য আমরা আয়োজন করেছি, যাতে মানুষেরা গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত এখানে বাউল গানের আয়োজন করা হয়েছে, কিন্তু আমরা গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে কিছু করতে পারি না। কারণ লাঠি খেলাও আমাদের ঐতিহ্য। আমরা প্রতি বছর লাঠিখেলা ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে নওগাঁর এক হাজার ৩০০টি স্থানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শহরের নওজোয়ান মাঠে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন নওগাঁ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রেস ইমাম মুফতি রেজওয়ান আহম্মেদ।
ওই জামাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যরিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
এদিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ উৎসব উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসন বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভবনে সঠিক মাপ ও নিয়মে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পটকা ও আতশবাজি বন্ধ, সরকারি শিশু পরিবার, এতিমখানা, জেলখানা ও হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন। এ ছাড়াও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঈদের দিন ও পরবর্তী সময়ে তরুণদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চলাচল রোধ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়।
জেলায় সুষ্ঠুভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য ও গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়ানো হয়।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা।
বাংলাদেশের আকাশে মঙ্গলবার চাঁদ দেখা না যাওয়ায় ঈদ উদযাপন হবে বৃহস্পতিবার, তবে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এবারও ঈদ উদযাপন হয়েছে বিভিন্ন জেলায়।
দেশের নানা প্রান্তে ঈদ উদযাপনের খবর জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।
কুড়িগ্রাম
জেলার রৌমারী, রাজীবপুর ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চারটি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। আলাদা আলাদা ঈদ জামাতে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সকালে রৌমারী উপজেলার শৈলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া গ্রাম, রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব করাতিপাড়া গ্রাম ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা ও পাইকেরছড়া গ্রামে ঈদের এসব জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের জামাত আদায় করা রৌমারী উপজেলার শৈলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মোত্তালেব বলেন, ‘আমরা প্রায় পাঁচ বছর ধরে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রমজানের রোজা রাখা, ঈদের নামাজ আদায় ও ঈদ উৎসব পালন করে আসছি।’
কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পুলিশের নিরাপত্তায় পূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে কুড়িগ্রামের চারটি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক সেবায় জেলা পুলিশ সবসময় নিবেদিত।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
জেলা সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার তিন শতাধিক মানুষ বুধবার ঈদ উদযাপন করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের মোমিন টোল ও বাগানপাড়া এলাকায় সকালে দুটি ঈদের জামাতে দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাধানগর ও ছিয়াত্তর বিঘি এলাকার বিভিন্ন পরিবারের শতাধিক সদস্য সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেন ছিয়াত্তর বিঘি আম বাগানে।
গত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখার পাশাপাশি ঈদ উদযাপন করে আসছেন এসব গ্রামের লোকজন।
মৌলভীবাজার
জেলার শতাধিক পরিবারের মুসল্লিরা ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন।
সকাল সাতটায় মৌলভীবাজার শহরের সার্কিট হাউস এলাকার আহমেদ শাবিস্তা নামক বাসায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
নামাজে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নারী ও পুরুষ মুসল্লিরা অংশ নেন। এতে ইমামতি করেন উজান্ডির পির আলহাজ আব্দুল মাওফিক চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘কোরআন ও হাদিস অনুসারে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় চাঁদ দেখা গেলে রোজা এবং ঈদ করতে হয়। সেই অনুসারে আমরা আজ ঈদের নামাজ আদায় করলাম।’
ময়মনসিংহ
জেলার গৌরীপুরের বাহাদুরপুর নূরমহল সুরেশ্বর দরবার শরিফে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে।
সকাল ৯টায় ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মো. ইব্রাহিম। এ জামাতে ময়মনসিংহ সদর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, শম্ভুগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক শ আশেকান, মুরিদ ও ভক্ত অংশ নেন। নারীদের জন্য আলাদা জামাতের ব্যবস্থা করা হয়।
সুরেশ্বর দরবার শরিফের পীর সৈয়দ শাহ্ নূরে আফতাব পারভেজ নূরী বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে চাঁদের মিল রেখেই প্রতি বছর এখানে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। তাই এবারও আমরা বাংলাদেশে এক দিন আগে থেকে রোজা রাখা শুরু করি এবং ঈদুল ফিতর উদযাপন করি।’
শেরপুর
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে শেরপুরের ছয়টি গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়েছে।
গ্রামগুলো হলো সদর উপজেলার উত্তর চরখারচর ও দক্ষিণ চরখারচর, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া ও গোবিন্দনগর ছয়আনি পাড়া, নকলা উপজেলার চরকৈয়া এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার বনগাঁও চতল।
স্থানীয় লোকজন ছাড়াও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকেও মুসল্লিরা ওইসব গ্রামে ঈদের নামাজ আদায় করতে যান।
প্রতি বছর সদর উপজেলার বামনেরচর গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এবার সেখানকার বেশ কিছু মুসল্লি নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেন।
সকাল সাতটা থেকে ১০টার মধ্যে এসব গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকটি জামাতে ২০০ থেকে ২৫০ জন মুসল্লি অংশ নেন। এসব জামাতে পুরুষ মুসল্লিদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন।
টাঙ্গাইল
জেলার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের শশীনাড়া গ্রামে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে অর্ধশতাধিক পরিবার উদযাপন করছে ঈদুল ফিতর।
সকাল আটটায় স্থানীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তাতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন।
গত ১২ বছর ধরে ওই এলাকার লোকজন সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ ও রোজা পালন করে আসছেন।
ঝালকাঠি
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে জেলার রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের ডহরশংকর গ্রামে বুধবার ঈদ উদযাপন করেন স্থানীয়রা।
এ গ্রামের বসবাসরত বাসিন্দাদের একটি অংশ রোজাও রাখেন এক দিন আগে থেকে। তাদের মতে, যেকোনো দেশে চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন করা যাবে।
ডহরশংকর গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবারের ২০০ মুসল্লি প্রতি বছর এভাবে ঈদ উদযাপন করে আসছেন। বেশ কয়েক বছর আগে এ নিয়ে এলাকার অন্য মুসল্লিদের সঙ্গে হট্টগোল হলেও বর্তমানে তারা নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করছেন।
সকাল আটটায় মঠবাড়ি ইউনিয়নের ডহরশংকর গ্রামের নাপিতের হাট এলাকায় দারুস সুন্নাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে ঈদের জামাত আদায় করা হয়। এতে পৃথক স্থানে নারীরা একই জামাতে অংশ নেন। জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম।
ঈদ উদযাপনকারী মুসল্লি মোনাসেফ মৃধা বলেন, ‘আমরা পূর্বপুরুষ থেকেই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করে আসছি। গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার এক যুগ যাবত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজে উপস্থিত হচ্ছেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য