করোনা মহামারির কারণে গেল দুই বছর নববর্ষে তেমন আয়োজন না হলেও এবার বাংলা নতুন বছর ১৪২৯ বরণ করতে নানা আয়োজনে মেতেছে বাঙালি।
বর্ষবরণের উৎসবে সবার মাঝে ফিরেছে প্রাণের উচ্ছ্বাস। বৈশাখী সাজে সেজেছে তরুণ-তরুণীরা। পিছিয়ে নেই শিশু-বয়স্করাও। পুরোনো গ্লানি পেছনে ফেলে নতুনের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রত্যাশা সবার।
করোনাপূর্ব সময়ের মতো নতুন বর্ষকে বরণ করে নিয়েছে চট্টগ্রামবাসী। চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি সিরিষ তলায় আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশগ্রহণ করে সংগীত ভবন, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, অদিতি সংগীত নিকেতন, সৃজামি, রাগেশ্রীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। চট্টগ্রামের নববর্ষ উদযাপন পরিষদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠান চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
পুরোনো জরাকে মুছে দিয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে সবার আহবান, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো..’ এ ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় তুলে ধরা হয়েছে দেশীয় ও আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে।
তিন কন্যা ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এসেছেন খুলশীর দেলোয়ার হোসেন ও জাহানারা পারভীন দম্পতি। জাহানারা পারভীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পবিত্র রমজান হলেও দুই বছর পর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এসেছি। বরাবরের মতোই নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে পুরোনো জরাজীর্ণ ও সংকীর্ণতা মুছে মঙ্গলময় হোক নতুন বর্ষ।’
কাজীর দেউড়ি এলাকার ইকবাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তো ভেবেছি রমজানে মানুষজন খুব একটা আসবে না। এখানে এসে দেখি পরিস্থিতি ভিন্ন। আমার তো মনে হয় আমার মতো অধিকাংশই এখানে রোজা রেখে বর্ষবরণের উৎসবে এসেছেন। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ুক অসাম্প্রদায়িকতা। নতুন বছর শুভ হোক, শুভ নববর্ষ।’
‘শিল্পের প্রয়োজন, বিবেকের জন্য, জীবনের জন্য’ প্রতিপাদ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হয়েছে বর্ষবরণের প্রধান আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টায় নগরীর বাদশা মিয়া রোডস্থ চারুকলা ক্যাম্পাস থেকে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কমার দে, চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরীসহ চবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শোভাযাত্রায় লোকজ পাখি ও ঘোড়ার দুটি মোটিফ (ডামি) ছিল। এর বাইরে চারুকলার শিক্ষার্থীরা বাহারি রঙের মুখোশ ও সরা নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীদের বাইরেও সাবেক শিক্ষার্থীসহ ছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।
ঢোল-বাদ্যের তালে তালে শোভাযাত্রাটি চারুকলা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে নগরীর কাজীর দেউড়ি ঘুরে বেলা ১১টায় চারুকলা ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
অতীতের সব গ্লানি ও বিভেদ ভুলে বাংলা নববর্ষ বাঙালির ঐক্যকে আরও সুসংহত করার প্রত্যাশা নিয়ে খুলনায় উদযাপিত হয়েছে পয়লা বৈশাখ। এ উপলক্ষে নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক থেকে বৃহস্পতিবার সকালে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ছাড়াও শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মাহাবুব হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা শিশু একাডেমিসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে।
কুমিল্লায় এবার পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রায় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু একটি টেপা পুতুল। মঙ্গল শোভাযাত্রায় টেপা পুতুলটিকে ঘিরে সড়কের দুই পাশে থাকা মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। টেপা পুতুলটির উচ্চতা ১৪ ফুট, প্রস্থে ৬ ফুট।
এটি তৈরি করেন কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষক সামিউল ইসলাম জাহেদ। তিনি বলেন, ‘পুতুলটিকে আমি আনন্দের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছি। কারণ, দেখলে মনে হবে পুতুলটি নাচ করছে। গত দুই বছর করোনার মহামারির কারণে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। এ বছর করোনামুক্ত। তাই আমাদের আনন্দ লাগছে। সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ এই টেপা পুতুল।’
পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার বলেন, ‘টেপা পুতুলটি একটি চঞ্চল চপলা কিশোরীর মতো। এই ফাগুনে ধান ক্ষেতের আল ধরে মাথায় বেণি ঝুলিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি ফেরা কোনো কিশোরীর মতোই লাগছে এটি।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষক সামিউলের তৈরি টেপা পুতুলটি খুবই ভালো লেগেছে। তার পুতুলটির বার্তা আনন্দ। আমরা আসলেই এ বছর আনন্দ করতে পারছি।’
উত্তরের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামে গ্রামে বয়োজ্যেষ্ঠদের পাশাপাশি শিশুরাও মজেছে বর্ষবরণের আমেজে। নতুন পোশাকে সেজেছে শিশুরা। চুরি, আলতা, টিপ আর বাঙালি ভাজে শাড়ি পড়ে নতুন বছরকে বরণ করেছে তারাও।
সদরের আকচা ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাটিতে করে শিশুদের কেউ বনভোজনের খাবার উপকরণ, কেউ আবার মশলা নিয়ে যাচ্ছে নদীর ধারে।
জিজ্ঞেস করলে ৯ বছরের শিশু প্রতিভা রানী বলে, নদীর ধারে বৈশাখ উপলক্ষে মেলা বসেছে। সেখানেই ডালের তৈরি বরা ভেজে বোনভোজন করবে তারা। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ এলেই তারা এমন আনন্দে মেতে ওঠে। এ সময় মেলায় অতিথিদের আপ্যায়ন করে বকশিসও নেয় তারা।
সে বকশিসের টাকায় নাগরদোলা, দোলনা, ঘোরায় চড়াসহ চুরি ফিতা কিনে মেলা থেকে। এমনটি জানি শিশু দিয়া মনি বলেন, ‘আজ আমার খুব আনন্দ লাগছে।’
অভিভাবক নিরঞ্জণা দেবি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদের কাছে নতুন দিনের নতুন আমেজ। আমরা গ্রামের যারা অভিভাবক আছি, তারা সবাই শিশুদের সাজিয়ে দেই। নতুন বছর তাদের যেন আনন্দে কাটে, বিপদ যেন তাদের ছুঁতে না পারে।’
এছাড়াও আজকের দিনে এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় হালখাতা, মাছধরা, রঙ মাখাসহ নানা রকম আয়োজন দেখা গেছে বৈশাখ ঘিরে। এর আগে সকলে সুখ ও মঙ্গল কামনায় মঙ্গল শোভাযাত্রাও করেছে জেলাবাসী।
বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে রাজশাহী শহরেও। বর্ষবরণে দেখা গেছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
নগরীর ঘোষপাড়ায় পদ্মাপাড়ের বটতলায় নতুন বছরের নতুন সূর্যকে বরণের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা। গানে, নাচে পুরো আয়োজন ছিল প্রাণবন্ত।
বৃহস্পতিবার ভোরে ঘোষপাড়া পদ্মা মন্দিরের পাশে বটতলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণে মেতে ওঠেন তারা। পরে মহানগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেখানে যোগ দেন নানা সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে রাজশাহী কলেজ। শোভাযাত্রাটি রবীন্দ্রনাথ ভবন থেকে বের হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে পুনরায় সেখানে গিয়ে শেষ হয়। এ ছাড়া বেলা ১১টায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রা করেন। পরে সাড়ে ১১টার দিকে ঘুড়ি উৎসবের উদ্বোধন করেন উপাচার্য।
এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণ নিয়ে বড় কোনো আয়োজন ছিল না। প্রতি বছর রাবির মঙ্গল শোভাযাত্রা ব্যাপক আলোচিত হলেও এবারে ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়নি। চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন।
মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণে মেতেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীও। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো..’ গানে গানে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে বিসিক।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নাটোরে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের মহারাজা জগদীন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।
বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গজল এলাকার অর্ধবঙ্গেশ্বরী রাণী ভবানী রাজবাড়ি চত্বরের মুক্তমঞ্চে গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। পরে মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এ ছাড়া সেখানে আয়োজন করা হয় গ্রামীণ মেলা।
শোভাযাত্রায় নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ও পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাসহ বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
আরও পড়ুন:৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুশফিকুর রহমান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম শাহাবুদ্দিন।
প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দিয়েছেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ তুলে দেবেন।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান রবিবার যে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন, তাতে বলা হয়, ‘সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করল। ছুটিকালীন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
‘তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
‘জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:চলতি বছর ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এ বছর কারা ও কতজন এ পুরস্কার পাচ্ছেন, তা জানাননি উপদেষ্টা।
সচিবালয়ে রবিবার স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি উল্লিখিত বক্তব্য দেন।
উপদেষ্টা বলেন, কমিটি কিছু নাম সুপারিশ করেছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নামের তালিকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হবে।
দেশের জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ব্যতিক্রমী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওই সময়ে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এর আগে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগত ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। র্যাবের মতো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকেও দেশের সর্বোচ্চ এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর ১০ জনের কম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য