সব ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের অনেক সময় বাকি থাকলেও প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
কমপক্ষে দুই বছর পর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে বামপন্থি দলগুলো, তা জানতে আলাপ হয় তিন নেতার সঙ্গে। তাদের বক্তব্যে নির্বাচনি ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি দলগুলোর মনোভাব উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
আগামী নির্বাচন নিয়ে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারের ব্যাপারে তার দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
সেলিম বলেন, ‘নির্বাচনে কেউ কোনো পয়সা খরচ করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন সবার জন্য (প্রার্থী) পোস্টার ছাপিয়ে দেবে; তার জীবনবৃত্তান্ত ছাপিয়ে দেবে, কর্মসূচি ছাপিয়ে দেবে। এগুলো নিয়ে আমাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা ও সুপারিশমালা আমরা ২০ বছর ধরে সব সরকারের কাছে দিয়ে যাচ্ছি। সব ইলেকশন কমিশনের কাছে দেয়া আছে।’
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে সেলিম বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হলো এখন আমাদের অগ্রাধিকার। নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আমাদের কথা হলো, বিধি-বিধান, আইন করে সেটা করতে হবে।’
সিপিবি নির্বাচনে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতি বলেন, ‘ইলেকশন করব কী করব না, আমাদের আন্দোলনের পটভূমিতে আমরা যখন ইলেকশন আসবে, সেটা কী ধরনের ইলেকশন হচ্ছে, সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নেই।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে এখন পর্যন্ত একটা অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ন্যূনতম কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নাই। কিন্তু আমাদের তো একটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে ২০২৩ সাল শেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের।
‘এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট, দলীয় সরকারের অধীনে বাস্তবে বাংলাদেশে এখন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। এটা বিশেষ করে আমরা দেখছি যে, গত কয়েকটি নির্বাচনে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচন ও ২০১৮ সালের যে তামাশাপূর্ণ নির্বাচন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে, আমাদের এখানে দলীয় সরকারের অধীনে বাস্তবে মানুষের ভোটাধিকার অস্বীকৃত এবং সরকার এমন কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না, যে নির্বাচনে তারা হেরে যেতে পারে। গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা বাস্তবে বিপর্যস্ত হয়েছে। পুরো নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর একটা গণহতাশা, গণ-অনাস্থা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনি ব্যবস্থাকে প্রকৃতপক্ষে বিদায় দেয়া হয়েছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই নির্বাচন, এখানে একটা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার ছাড়া ভোটের ন্যূনতম অধিকার, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে, পছন্দের দল বা প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে—এর কোনো সুযোগ হবে না।
‘সে কারণে আমরা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকেও বলেছি যে, এই সরকারকে অবশ্যই নির্বাচনের আগেই পদত্যাগ করতে হবে, পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে।’
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে সরকারি দলের বক্তব্যের বিষয়ে সাইফুল হক বলেন, ‘সরকারি দল থেকে বলছে তারা সংবিধানের বাইরে যাবে না। সংবিধান তো একটা কাগুজে ব্যাপার। সংবিধান তো মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য। সর্বশেষ সংবিধান সংশোধনের আগে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, কমপক্ষে আরও দুটি নির্বাচন তদারকি সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।
‘পরবর্তী সময়ে সরকার সংবিধান সংশোধন করে এটাকে বাতিল করবে। সুতরাং দেশের জন্য, মানুষের প্রয়োজনে আমরা মনে করি যে প্রয়োজনবোধে এটা সংশোধন করে নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের জায়গাটায় যাওয়া দরকার।’
নির্বাচন নিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তুতি কেমন, তা জানতে চাওয়া হয় সাইফুল হকের কাছে।
তিনি বলেন, ‘প্রস্তুতির দিক থেকে আমরা তো প্রথমত নির্বাচনপন্থি দল নই; বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বা আমাদের বাম জোট, আমরা আন্দোলনের জোট। আমরা একটা গণবিপ্লবের পার্টি বা গণবিপ্লবের জোট। তার পরও আমরা নির্বাচনটাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সংগ্রাম হিসেবে বিবেচনা করি।
‘আমরা ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করেছি, প্রত্যাখ্যান করেছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা আবার অংশগ্রহণ করেছি। এই বছর আমাদের জোট থেকে তিনটি প্রতীকে আমরা নির্বাচন করেছি। ওয়ার্কার্স পার্টি কোদাল মার্কায়, বাসদ মই মার্কায় আর সিপিবি কাস্তে মার্কায়। সুতরাং নির্বাচন তো আমরা নিশ্চয়ই করতে চাই। তার জন্য একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের ভাবনাটা হচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, এই ১১টা নির্বাচনের মধ্যে মোটামুটি চারটি নির্বাচন ছাড়া বাকি সব নির্বাচন নিয়ে শুধু প্রশ্ন। এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে, রাজনৈতিক মহলের মধ্যে প্রশ্ন আছে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন বলতে পারি। যে চারটি আপাত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছিল, সেই চারটি ছিল দলীয় সরকারের বাইরে নির্বাচন পরিচালনা করার মাধ্যমে। যেমন: ১৯৯১ সালের, ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচন, ২০০১ সালের এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন।
‘এই চারটা নির্বাচন তুলনামূলকভাবে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবমুক্ত আপাত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছিল। আর বাকি সব নির্বাচনই, দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সব কটি নির্বাচনই গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা করতে পারেনি। এ কারণে আমরা বলেছিলাম যে, ১১টি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, দলীয় সরকারের নির্বাচন করা আমাদের এখানে, অন্তত গণতান্ত্রিক যতটুকু মূল্যবোধ থাকবে, দলীয় সরকারের অধীনেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে। সেই মূল্যবোধের চর্চাটাও ক্ষমতাসীন দল করে না। প্রশাসন ও পুলিশকে ব্যবহার করে নির্বাচনকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করে।’
নির্বাচন নিয়ে বামপন্থি দলগুলোর প্রস্তাব বিষয়ে রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘বামপন্থি দলগুলোর পক্ষ থেকে তিনটা প্রস্তাব আমাদের ছিল। প্রথমত, নির্বাচনকে ক্ষমতাসীন দলের প্রশাসনিক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। ২ নম্বর হচ্ছে, আমাদের এখন যে উইনার টেকস অল প্রবণতা, অর্থাৎ যে বিজয়ী হলো সে-ই সব আর যে হেরে গেল সব হারাল, এটার পরিবর্তে আমরা চেয়েছিলাম সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা। ৩ নম্বর হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন মর্যাদাসম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে কালো টাকা, পেশিশক্তি এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারমুক্ত নির্বাচন করতে হবে। এ রকম একটা পরিস্থিতি আমরা প্রত্যাশা করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই তিনটা কাজ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, অবাধও হবে না এবং তা গ্রহণযোগ্যও হবে না। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের এই পরিবেশটা তৈরির জন্য দীর্ঘদিন কথা বলে আসছি।
‘সেদিকে নজর না দিয়ে শুধু নির্বাচনের কথা বলে আমাদের একটা নির্বাচনি বাধ্যবাধকতা এবং তামাশার নির্বাচনের মধ্যে আটকে ফেলার চেষ্টা বারবার চলছে। এই জন্য আমরা একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি যে, বিগত নির্বাচনের যে দৃষ্টান্ত সেই দৃষ্টান্ত আমাদের বলে যে ওই ধরনের নির্বাচন হলে তা দেশের গণতন্ত্রকে কোনোভাবেই সংহত করবে না।’
২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বলা হয়েছিল এটা একটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু সেই নির্বাচনের পর আমরা দেখলাম গণতান্ত্রিক নিয়মবিধি কোনোটাই রক্ষিত হয়নি। ২০১৮ সালে বলা হয়েছিল, আসুন আমরা সবাই মিলে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করি; আমাদের ওপর ভরসা রাখুন, আস্থা রাখুন। ২০১৪ সালের নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে নিয়ম রক্ষিত হয়নি, ২০১৮ সালের আস্থা রক্ষার নির্বাচনে আস্থাটা রক্ষা হয়নি।
‘২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে তারা অনেকে বলছেন, এখন প্রশাসনের খবরদারিমুক্ত, হস্তক্ষেপমুক্ত নির্বাচন হবে। ফলে আগের দুটিতে যেহেতু কথা রাখতে পারেনি, পরেরটাতে যে কথা রক্ষিত হবে, এতে কোনো ভরসা নাই। সে কারণে আমরা বলি যে নির্বাচনের আগে গণতান্ত্রিক পরিবেশটা খুবই দরকার। সেটার জন্য আমরা কথা বলছি। ফলে এখনই আমরা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার কোনো বিষয়ে আলোচনা করছি না। আমরা বলছি, নির্বাচনের পরিবেশটার বিষয়ে।’
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আইনের বিষয়ে রতন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য আমাদের সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, একটা নির্বাচন কমিশন আইন হইবে এবং এই আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ প্রদান করা হইবে।’
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নির্বাচন কমিশন ও কমিশনার নিয়োগ নিয়ে আইন না থাকায় আক্ষেপ করেন রতন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ৫০ বছরে যারাই ছিলেন, তারা সব সময় সংবিধানের দোহাই দেন, কিন্তু নির্বাচন যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অঙ্গ, সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ করবার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন আইন থাকা দরকার। সেই আইন তারা এখন পর্যন্ত প্রদান করেননি। ফলে কখনও চাপে এবং কখনও গণ-আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছে, আর কখনও কখনও নিজেদের মর্জিমতো নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিয়েছে।
‘ফলে নির্বাচন কমিশন এখানে কখনও মর্যাদাপূর্ণও হয় নাই, স্বাধীনও হয় নাই এবং নির্বাচন কমিশন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে নাই। সার্চ কমিটির নামে যে কমিটি গঠন প্রক্রিয়াটায় আছে যে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রস্তাব দিবেন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে, রাষ্ট্রপতি তার মধ্য থেকে বেছে নেবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, সার্চ কমিটির মাধ্যমেও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার চাইতেও নির্বাচন কমিশনার যারা হয়ে যান তাদের গায়ে দলীয় লেবেল এঁটে দেয়া হয় এবং তারাও নিরপেক্ষভাবে আর কাজ করতে পারেন না।’
সরকারের কাছে এখনও সময় আছে মন্তব্য করে জ্যেষ্ঠ এ রাজনীতিক বলেন, ‘আমরা মনে করি, এখনও সময় আছে। পার্লামেন্টে যেহেতু একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ও যেকোনো ধরনের সংশোধনী আনার যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে ক্ষমতাসীন দলের, তারা যদি একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য একটা নির্বাচন কমিশন আইন করতে চান, এটা যথেষ্ট সময়।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ক্ষমা প্রার্থনা কমপক্ষে তিনবার চেয়েছি। অধ্যাপক গোলাম আজম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং আমিও চেয়েছি। শুধু এখন নয়, ৪৭ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামী দ্বারা কেউ যদি কোনো কষ্ট পেয়ে থাকেন অথবা কারও কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে আমি সব ব্যক্তি এবং সংগঠনের পক্ষে নিঃশর্তে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ক্ষমার বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, এ ক্ষমা গোটা জাতি হইলেও চাই, ব্যক্তি হইলেও চাই, কোনো অসুবিধা নাই। আমরা কেউ কখনো বলিনি—আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে।
জামায়াত আমির বলেন, আমাদের ১০০টার মধ্যে ৯৯টা সিদ্ধান্ত সঠিক, একটা তো বেঠিক হতে পারে। সেই বেঠিক একটা সিদ্ধান্তের জন্য জাতির ক্ষতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমার কোনো সিদ্ধান্তের জন্য যদি জাতির ক্ষতি হয় তাহলে আমার মাফ চাইতে অসুবিধা কোথায়?
ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী সংখ্যালঘুরা নির্বিঘ্নে থাকবে বলে উল্লেখ করেন ডা. শফিকুর রহমান।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দিতে কোনো আইনগত বাঁধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির (উত্তরাঞ্চল) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন কাউকে খুশি করার জন্য এ সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আমাদের দেখাক কোন আইনে শাপলা প্রতীক এনসিপিকে দেওয়া যাবে না। রোববার দিনাজপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সমন্বয় সভা শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, যে নির্বাচন কমিশন একটি রাজনৈতিক দলকে তাদের প্রাপ্য মার্কা দেয়ার সৎ সাহস দেখাতে পারে না, আমরা মনে করি সেই কমিশনের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এই বাংলাদেশে হতে পারে না। এনসিপি আমাদের জায়গা থেকে অবশ্যই প্রত্যাশা করি, যে আমরা শাপলা প্রতীক পেয়েই আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো। এটা যদি তারা আমাদের সাথে অন্যায় করে, তাহলে আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পূর্বে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো রাস্তাঘাটে নেমে হাহাকার করতো। কর্মসূচী দিয়ে হাহাকার করতো। আমরা অনেক অফিস দেখেছি যে, অফিসের সামনে ১০ জন লোক দাড়ানোর মতো ছিল না, বড় বড় রাজনৈতিক দলের অফিস। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জনগণ তখনই রাস্তায় নেমেছে, যাদের ওপর জনগণ আস্থা রেখেছে। এখন যদি জনগণের ওই আস্থার প্রতিদান কেউ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দল না দেয়, জনগণ তাদের মতো করে আগামীতে যখন সুযোগ হবে জনগণ তার সুফল দেখাবে। আমরা স্পষ্ট করে বলি, আপনারা ইতিহাস থেকে দয়া করে শিক্ষা নেন। জুলাই সনদ আপনারাও চান, আমরাও চাই। আপনারা যদি জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণা পত্রের মতো নাম কাওয়াস্তে একটি পেপার চান, ওই সনদ আমরা চাই না।
এর আগে তিনি জেলা এনপিসির সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। জেলা এনপির প্রধান সমন্বয়কারী ফয়সনাল করিম সোয়েবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. আতিক মুজাহিদ ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ডা. মো. আব্দুল আহাদসহ প্রমুখ নেতারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা আহ্বায়ক কমিটির ১ নং সদস্য মানিকগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এস.এ জিন্নাহ কবির বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক জাতির সামনে ঘোষিত রাস্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফায় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ কীভাবে চলবে, শিক্ষিত যুবকদের চাকরি ব্যবস্থা করা হবে, চাকরী যতদিন না হবে তাদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল সরকার ক্রয় করবে। ৩১ দফায় কৃষকদের কৃষি উপকরণ, কৃষক-শ্রমিক গ্রাম-গঞ্জে খেটে খাওয়া দিনমুজুর, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের কথা রয়েছে। শনিবার রাতে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা কলিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বিএনপির উদ্যোগে তালুকনগক ডিগ্রী কলেজ মাঠে তারেক রহমানের ৩১ দফার প্রচারণা সভা ও লিফলেট বিতরণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে হবে। আমি নির্বাচিত হলে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরের উন্নয়ন ও কৃষক শ্রমিক, দু:স্থ জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করব।
তালুকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে ও কলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক আব্দুস সামাদ এবং উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার রবিউজ্জল রবির সঞ্চলানায় আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোস্তাক হোসেন দিপু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, জেলা বিএনপি সাবেক কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি লোকমান হোসেনসহ নেতারা।
শেরপুর-১ (সদর) আসনের বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলোচিত নেত্রী সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, আমি সংসদে যেতে পারলে শেরপুরের দেড় থেকে দুই লাখ বেকারের চাকরির ব্যবস্থা করব ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, আমাকে আপনারা জাতীয় সংসদে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীরা যাতে শুধু ঘরে বসে না থাকে সে জন্য তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, আমি সম্মানিত শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন করি এবং একাত্মতা প্রকাশ করছি। তাদের চাকরি জাতীয়করণের জন্য আমি চেষ্টা করব।
ডা. প্রিয়াঙ্কা গত শনিবার সন্ধায় শহরের ৫নং ওয়ার্ডের খরমপুর মহল্লার ডা. সেকান্দর আলী কলেজ মাঠে জেলা বিএনপির আয়োজিত এক নারী সমাবেশে এসব কথা বলেন।
জেলা মহিলা দলের সভাপতি সুলতানা রাজিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ নারী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সদস্য সচিব ও অধ্যক্ষ এবিএম মামুনুর রশিদ পলাশ, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. হযরত আলী, সদস্য সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মো. জাফর আলী. বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম স্বপন, প্রভাষক শফিউল আলম চান, রেজাউল করিম রুমি, শ্রমিক দল নেতা মো. শওকত হোসেনসহ আরও অনেকে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হলে তৎকালীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আমাকে পরাজিত করা হয়। তারপরেও এ আসনের সকল নারীরা আমার সাথে ছিলেন সে জন্য আমি এই নারীদের ছেড়ে কখনোই চলে যাব না। আমি আপনাদের ঋণের কথা কখনোই ভুলতে পারব না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষর হওয়ার পর দেশে নির্বাচন নিয়ে আর কোন সমস্যা নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে বলে বিএনপি প্রত্যাশা করে।
শনিবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা প্রসঙ্গে দুদু বলেন, সবার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। সকলের ভিন্নমত পোষনের সুযোগ আছে। যেসব দল ভিন্নমত পোষণ করে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি আমাদের ধারণা তারা ভবিষ্যতে স্বাক্ষর করবে। কেননা, প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, যেসব দল স্বাক্ষর করেনি, তাদের জন্য ভবিষ্যতেও সুযোগ আছে।
বিএনপি সরকার গঠন করলে ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে দেশের উন্নয়ন গতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে বলেও মন্তব্য করেন শামসুজ্জামান দুদু।
নির্বাচনী প্রচারণায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এম এ তালহাসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আহত ও শহীদ পরিবারের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে অভিযোগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, শহীদ পরিবার অনুষ্ঠানে প্রাপ্য সম্মান পাননি বরং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
আখতার হোসেন বলেন, শহীদ পরিবাররাই জুলাই সনদ আয়োজনের মূল আকর্ষণ হলেও, তাদের মঞ্চ থেকে দূরে সরিয়ে বসিয়ে অমর্যাদা করা হয়েছে। আহতদের ওপর হামলা চালিয়ে এবং অসম্মান করে জুলাই সনদকে ‘পাওয়ার এলিট’-এর সেটেলমেন্ট বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতরা কিছু দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যবদ্ধ কমিশন জুলাই সনদের অঙ্গীকারের পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দিলেও, শুরুতে যদি বিষয়টি আমলে নেওয়া হতো তাহলে তাদের রাজপথে নামতে হতো না।
তিনি বলেন, সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না করে আহত যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করছি।
এনসিপি সদস্য সচিব আরও বলেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বৈধতা নিশ্চিত না করেই এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিকে পরিষ্কার ধারণা না দিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে। জুলাই সনদের কোনো আইনভিত্তি না দেওয়া, বাস্তবায়ন আদেশ প্রকাশ না করা এবং পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে না আনার কারণে আমরা আনুষ্ঠানিকতার জন্য স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছি।
তিনি বলেন, এনসিপি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ৭২ সালের বন্দোবস্ত বিলোপ করে নতুন সাংবিধানিক অগ্রযাত্রায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিচার সংস্কারের অংশ হিসেবে জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে ‘জুলাই পথযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছে এনসিপি। রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জনগণ এই দাবিতে এনসিপিকে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছে। একই সঙ্গে আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারে জোরালো ভূমিকা রেখেছি।
আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখা হয়েছে। সনদের আইনিভিত্তি হিসেবে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’-এর উল্লেখ নেই। আমরা বলেছি, অভ্যুত্থান-পরবর্তী যেকোনো বন্দোবস্তের নৈতিক ও আইনিভিত্তি থাকতে হবে। কিন্তু সনদে জনগণের সার্বভৌম ও গাঠনিক ক্ষমতার প্রকৃত মৌলিক সত্যের কোনো উল্লেখ নেই।
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদের আওতাভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের এমন কিছু অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যা বিদ্যমান সংবিধানের তথাকথিত বেসিক স্ট্রাকচারের আওতাভুক্ত। ফলে ৭২ সালের সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে থেকে এই পরিবর্তনগুলো ভবিষ্যতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এতে জুলাই সনদ জনগণের সঙ্গে একটি সাংবিধানিক প্রতারণায় পরিণত হবে।
এ কারণে এনসিপি সরকারপ্রধান ড. ইউনূসকে গণভোটের পূর্বে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির আহ্বান জানিয়েছে—যাতে এর আইনভিত্তি, বৈধতা ও জুলাই অবস্থান স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
শেষে আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নিয়ে আগামী কয়েকদিনের আলোচনায় আমরা জনগণের পাশে থাকব। কোনো অবস্থাতেই জুলাই সনদকে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো আইনিভিত্তিহীন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল বা ‘জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্টে’ পরিণত করা যাবে না। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ইচ্ছাকে ধারণ করে জুলাই সনদের আইনিভিত্তি ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
যুব ও নারী সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ঢাকসু, জাকসু ও চাকসুতে যুব সমাজ ছাত্রশিবিরের ওপর আস্থা রেখেছে। সব জায়গায় একই চিত্র। মেয়েদের ও তরুণদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর। আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে। এর প্রতিচ্ছবি জাতি আগামীতে দেখবে ইনশাআল্লাহ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ঢাকা-১৫ নির্বাচনী আসনের এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ইসলামের ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা ও অবদানের কথা তুলে ধরেন বক্তব্যজুড়ে।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা অভিভূত হয়ে লক্ষ্য করছি, দুটো সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে—একটি আমাদের যুবসমাজ, আরেকটি আমাদের মায়েদের সমাজ। আজ পর্যন্ত তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হয়ে গেছে। সব জায়গায় একই চিত্র—মেয়েদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর; তরুণদের আস্থা ছাত্রশিবিরের ওপর। এরই প্রতিচ্ছবি আগামীতে বাংলাদেশ দেখবে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘৯১ শতাংশ মুসলমানের দেশে আমাদের মায়েদের সম্মান ঘরে-বাইরে কোথাও নেই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর কোরআন এবং রাসূলের জীবনী থেকে সেই শিক্ষা নিয়েছে যে আমাদের মায়ের জাতিকে মায়ের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। এই রাষ্ট্রে বাস্তব প্রয়োজনে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখবেন।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইমান, ধর্মবিশ্বাস—এসবের হিসাব নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। আমরা এই রাষ্ট্রের মানুষকে সম্মান করব। তারা এ দেশের নাগরিক। আমরা দেখব না সে কোন ধর্মের, কোন দলের, তার গায়ের রং কী, মুখের ভাষা কী, সে পাহাড়ে থাকে নাকি সমতলে থাকে। সে আমার ভাই, সে আমার বোন, সে এই দেশের নাগরিক—সেই হিসেবে আমরা তাদেরকে পরিচালনা করব।’
শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো প্রাধান্য আছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আছে। এ দেশের অর্থনীতি ভাঙাচোরা, উল্টে পড়া, ধসে যাওয়া। দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করে প্রকৃত সেবকদের হাতে তুলে দিতে হবে। সেই লোকটা আমাদের দলের হতে পারে, না-ও হতে পারে। সেই লোকটা মুসলমান হতে পারে, অন্য ধর্মেরও হতে পারে। যে এই দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত, তার হাতে এই দায়িত্বের চাবি তুলে দেওয়া হবে। এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ আমরা গড়ে তুলতে চাই।’
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাইছি, যেখানে শাসকেরা জনগণের কাছে তাদের ত্রুটি ও ঘাটতির জন্য মাফ চাইবে। তারা কারও কাছ থেকে প্রশংসা চাইবে না, বাহবা চাইবে না, কোনো স্লোগান চাইবে না, যেমন “অমুক ভাই, তমুক ভাই জিন্দাবাদ”—এটা চাইবে না। তাদের অন্তর ভয়ে কাঁপবে, জনগণের এই বোঝা “আমার কাঁধে যেটা দেওয়া হয়েছে, আমি তা বহন করতে পারছি কি না”—এই ভেবে।
তিনি বলেন, যে সমাজে যুব সমাজ সিদ্ধান্ত নেয় এবং নারীরা এগিয়ে আসে, সেই সমাজ ও জাতি কখনো পরিবর্তন না হয়ে পারে না।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গীকার তুলে ধরে বলেন, আমাদের প্রথম অঙ্গীকার, একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। শিক্ষা ভালো না হলে জাতি কখনো ভালো হতে পারে না। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।
দ্বিতীয়ত, সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে দুর্নীতি বাসা গেঁড়ে বসে আছে। এই দুর্নীতি থাকবে না। এজন্য যত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, করবো ইনশাআল্লাহ। লড়াই করবো, হিমালয়ের মতো পর্বত সমান বাধা আসলেও দুর্নীতির অস্তিত্ব যেন আসমান থেকে মাটিতে নামিয়ে আনতে পারি।
তৃতীয়ত, প্রত্যেকটি মানুষ যেন তার প্রাপ্ত হক বা ন্যায়বিচার পান, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এজন্য যেন আবাল-বৃদ্ধ, বনিতা, নারী ও শিশু কাউকে চেষ্টা করতে না হয়।
মন্তব্য