সব ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের অনেক সময় বাকি থাকলেও প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
কমপক্ষে দুই বছর পর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে বামপন্থি দলগুলো, তা জানতে আলাপ হয় তিন নেতার সঙ্গে। তাদের বক্তব্যে নির্বাচনি ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি দলগুলোর মনোভাব উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)
আগামী নির্বাচন নিয়ে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারের ব্যাপারে তার দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
সেলিম বলেন, ‘নির্বাচনে কেউ কোনো পয়সা খরচ করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন সবার জন্য (প্রার্থী) পোস্টার ছাপিয়ে দেবে; তার জীবনবৃত্তান্ত ছাপিয়ে দেবে, কর্মসূচি ছাপিয়ে দেবে। এগুলো নিয়ে আমাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা ও সুপারিশমালা আমরা ২০ বছর ধরে সব সরকারের কাছে দিয়ে যাচ্ছি। সব ইলেকশন কমিশনের কাছে দেয়া আছে।’
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে সেলিম বলেন, ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হলো এখন আমাদের অগ্রাধিকার। নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আমাদের কথা হলো, বিধি-বিধান, আইন করে সেটা করতে হবে।’
সিপিবি নির্বাচনে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতি বলেন, ‘ইলেকশন করব কী করব না, আমাদের আন্দোলনের পটভূমিতে আমরা যখন ইলেকশন আসবে, সেটা কী ধরনের ইলেকশন হচ্ছে, সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নেই।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে এখন পর্যন্ত একটা অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ন্যূনতম কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নাই। কিন্তু আমাদের তো একটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে ২০২৩ সাল শেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের।
‘এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট, দলীয় সরকারের অধীনে বাস্তবে বাংলাদেশে এখন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। এটা বিশেষ করে আমরা দেখছি যে, গত কয়েকটি নির্বাচনে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচন ও ২০১৮ সালের যে তামাশাপূর্ণ নির্বাচন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে, আমাদের এখানে দলীয় সরকারের অধীনে বাস্তবে মানুষের ভোটাধিকার অস্বীকৃত এবং সরকার এমন কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না, যে নির্বাচনে তারা হেরে যেতে পারে। গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা বাস্তবে বিপর্যস্ত হয়েছে। পুরো নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর একটা গণহতাশা, গণ-অনাস্থা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনি ব্যবস্থাকে প্রকৃতপক্ষে বিদায় দেয়া হয়েছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই নির্বাচন, এখানে একটা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার ছাড়া ভোটের ন্যূনতম অধিকার, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে, পছন্দের দল বা প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে—এর কোনো সুযোগ হবে না।
‘সে কারণে আমরা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকেও বলেছি যে, এই সরকারকে অবশ্যই নির্বাচনের আগেই পদত্যাগ করতে হবে, পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে।’
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে সরকারি দলের বক্তব্যের বিষয়ে সাইফুল হক বলেন, ‘সরকারি দল থেকে বলছে তারা সংবিধানের বাইরে যাবে না। সংবিধান তো একটা কাগুজে ব্যাপার। সংবিধান তো মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য। সর্বশেষ সংবিধান সংশোধনের আগে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, কমপক্ষে আরও দুটি নির্বাচন তদারকি সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।
‘পরবর্তী সময়ে সরকার সংবিধান সংশোধন করে এটাকে বাতিল করবে। সুতরাং দেশের জন্য, মানুষের প্রয়োজনে আমরা মনে করি যে প্রয়োজনবোধে এটা সংশোধন করে নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের জায়গাটায় যাওয়া দরকার।’
নির্বাচন নিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তুতি কেমন, তা জানতে চাওয়া হয় সাইফুল হকের কাছে।
তিনি বলেন, ‘প্রস্তুতির দিক থেকে আমরা তো প্রথমত নির্বাচনপন্থি দল নই; বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বা আমাদের বাম জোট, আমরা আন্দোলনের জোট। আমরা একটা গণবিপ্লবের পার্টি বা গণবিপ্লবের জোট। তার পরও আমরা নির্বাচনটাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সংগ্রাম হিসেবে বিবেচনা করি।
‘আমরা ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করেছি, প্রত্যাখ্যান করেছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা আবার অংশগ্রহণ করেছি। এই বছর আমাদের জোট থেকে তিনটি প্রতীকে আমরা নির্বাচন করেছি। ওয়ার্কার্স পার্টি কোদাল মার্কায়, বাসদ মই মার্কায় আর সিপিবি কাস্তে মার্কায়। সুতরাং নির্বাচন তো আমরা নিশ্চয়ই করতে চাই। তার জন্য একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের ভাবনাটা হচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, এই ১১টা নির্বাচনের মধ্যে মোটামুটি চারটি নির্বাচন ছাড়া বাকি সব নির্বাচন নিয়ে শুধু প্রশ্ন। এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে, রাজনৈতিক মহলের মধ্যে প্রশ্ন আছে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন বলতে পারি। যে চারটি আপাত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছিল, সেই চারটি ছিল দলীয় সরকারের বাইরে নির্বাচন পরিচালনা করার মাধ্যমে। যেমন: ১৯৯১ সালের, ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচন, ২০০১ সালের এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন।
‘এই চারটা নির্বাচন তুলনামূলকভাবে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবমুক্ত আপাত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছিল। আর বাকি সব নির্বাচনই, দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সব কটি নির্বাচনই গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা করতে পারেনি। এ কারণে আমরা বলেছিলাম যে, ১১টি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, দলীয় সরকারের নির্বাচন করা আমাদের এখানে, অন্তত গণতান্ত্রিক যতটুকু মূল্যবোধ থাকবে, দলীয় সরকারের অধীনেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে। সেই মূল্যবোধের চর্চাটাও ক্ষমতাসীন দল করে না। প্রশাসন ও পুলিশকে ব্যবহার করে নির্বাচনকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করে।’
নির্বাচন নিয়ে বামপন্থি দলগুলোর প্রস্তাব বিষয়ে রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘বামপন্থি দলগুলোর পক্ষ থেকে তিনটা প্রস্তাব আমাদের ছিল। প্রথমত, নির্বাচনকে ক্ষমতাসীন দলের প্রশাসনিক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। ২ নম্বর হচ্ছে, আমাদের এখন যে উইনার টেকস অল প্রবণতা, অর্থাৎ যে বিজয়ী হলো সে-ই সব আর যে হেরে গেল সব হারাল, এটার পরিবর্তে আমরা চেয়েছিলাম সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা। ৩ নম্বর হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন মর্যাদাসম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে কালো টাকা, পেশিশক্তি এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারমুক্ত নির্বাচন করতে হবে। এ রকম একটা পরিস্থিতি আমরা প্রত্যাশা করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই তিনটা কাজ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, অবাধও হবে না এবং তা গ্রহণযোগ্যও হবে না। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের এই পরিবেশটা তৈরির জন্য দীর্ঘদিন কথা বলে আসছি।
‘সেদিকে নজর না দিয়ে শুধু নির্বাচনের কথা বলে আমাদের একটা নির্বাচনি বাধ্যবাধকতা এবং তামাশার নির্বাচনের মধ্যে আটকে ফেলার চেষ্টা বারবার চলছে। এই জন্য আমরা একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি যে, বিগত নির্বাচনের যে দৃষ্টান্ত সেই দৃষ্টান্ত আমাদের বলে যে ওই ধরনের নির্বাচন হলে তা দেশের গণতন্ত্রকে কোনোভাবেই সংহত করবে না।’
২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বলা হয়েছিল এটা একটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু সেই নির্বাচনের পর আমরা দেখলাম গণতান্ত্রিক নিয়মবিধি কোনোটাই রক্ষিত হয়নি। ২০১৮ সালে বলা হয়েছিল, আসুন আমরা সবাই মিলে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করি; আমাদের ওপর ভরসা রাখুন, আস্থা রাখুন। ২০১৪ সালের নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে নিয়ম রক্ষিত হয়নি, ২০১৮ সালের আস্থা রক্ষার নির্বাচনে আস্থাটা রক্ষা হয়নি।
‘২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে তারা অনেকে বলছেন, এখন প্রশাসনের খবরদারিমুক্ত, হস্তক্ষেপমুক্ত নির্বাচন হবে। ফলে আগের দুটিতে যেহেতু কথা রাখতে পারেনি, পরেরটাতে যে কথা রক্ষিত হবে, এতে কোনো ভরসা নাই। সে কারণে আমরা বলি যে নির্বাচনের আগে গণতান্ত্রিক পরিবেশটা খুবই দরকার। সেটার জন্য আমরা কথা বলছি। ফলে এখনই আমরা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার কোনো বিষয়ে আলোচনা করছি না। আমরা বলছি, নির্বাচনের পরিবেশটার বিষয়ে।’
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আইনের বিষয়ে রতন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য আমাদের সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, একটা নির্বাচন কমিশন আইন হইবে এবং এই আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ প্রদান করা হইবে।’
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নির্বাচন কমিশন ও কমিশনার নিয়োগ নিয়ে আইন না থাকায় আক্ষেপ করেন রতন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ৫০ বছরে যারাই ছিলেন, তারা সব সময় সংবিধানের দোহাই দেন, কিন্তু নির্বাচন যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অঙ্গ, সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ করবার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন আইন থাকা দরকার। সেই আইন তারা এখন পর্যন্ত প্রদান করেননি। ফলে কখনও চাপে এবং কখনও গণ-আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছে, আর কখনও কখনও নিজেদের মর্জিমতো নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিয়েছে।
‘ফলে নির্বাচন কমিশন এখানে কখনও মর্যাদাপূর্ণও হয় নাই, স্বাধীনও হয় নাই এবং নির্বাচন কমিশন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে নাই। সার্চ কমিটির নামে যে কমিটি গঠন প্রক্রিয়াটায় আছে যে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রস্তাব দিবেন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে, রাষ্ট্রপতি তার মধ্য থেকে বেছে নেবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, সার্চ কমিটির মাধ্যমেও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার চাইতেও নির্বাচন কমিশনার যারা হয়ে যান তাদের গায়ে দলীয় লেবেল এঁটে দেয়া হয় এবং তারাও নিরপেক্ষভাবে আর কাজ করতে পারেন না।’
সরকারের কাছে এখনও সময় আছে মন্তব্য করে জ্যেষ্ঠ এ রাজনীতিক বলেন, ‘আমরা মনে করি, এখনও সময় আছে। পার্লামেন্টে যেহেতু একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ও যেকোনো ধরনের সংশোধনী আনার যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে ক্ষমতাসীন দলের, তারা যদি একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য একটা নির্বাচন কমিশন আইন করতে চান, এটা যথেষ্ট সময়।’
এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে অকার্যকর ও গতানুগতিক এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দরিদ্রতার মতো অর্থনৈতিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে এবারের বাজেট সুর্নিদিষ্ট কৌশল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে অন্তর্বতী সরকারকে। আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট তৈরি করবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম স্তর তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মতামত নিতে পারত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি এমনটি হতো, তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হত। এটি দেশের বিভিন্ন অংশের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করত। কিন্তু সেই সুযোগটি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, বাজেটটি একপেশে, অংশগ্রহণমূলক নয় এবং গতানুগতিক হয়ে গেছে। এতে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন নেই।’
বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এই ধরনের আলোচনা আরও জরুরি ছিল, যেহেতু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে বিএনপি।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।
বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি, যার জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কম সুযোগের স্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটটি অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্নীতিপ্রবণ প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে গুমের অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। মঙ্গলবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিন এই অভিযোগ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাদের নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন সালাহউদ্দিন। এ সময়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ আইনজীবীরা সাথে ছিলেন। পরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে দেন তিনি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। অন্যদিকে তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।
সে সময় সালাহউদ্দিন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। পরে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হন নাহিদ। তবে নাহিদ ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) উপদেষ্টা পদে থাকাবস্থায় লক করে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এনআইডির তথ্য ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থাটি।
তবে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় ৫ দিন পর আনলক করে দেওয়া হয় নাহিদের এনআইডি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে এনটিএমসি জানায়, ‘ভণ্ডবাবা’ গ্রুপের অ্যাডমিন নাহিদ ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তার এনআইডির নম্বরও দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে। এরপর তদন্তে নামে অনুবিভাগ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর লক করা হয় নাহিদের এনআইডি।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, ‘ভণ্ডবাবা’ হোয়াটসঅ্যাপের কোনো গ্রুপ নয়। এটি টেলিগ্রামের একটি গ্রুপ। আর নাহিদ ওই গ্রুপের অ্যাডমিন নন।
তার এনআইডির বিপরীতে কোনো তথ্য পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডি আনলক করে দেয় সংস্থাটি।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু এই ভোটার কর্তৃক ডাটা সরবরাহ করার বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, সেহেতু মো. নাহিদ ইসলামের এনআইডি আনলক করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নথি উত্থাপন করা হলে ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডির মহাপরিচালক তখন এনআইডিটি আনলক করার সিদ্ধান্ত দেন।
এভাবেই পাঁচ দিনের জন্য লক থাকে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এনআইডি।
বর্তমান এনআইডি মহাপরিচালক এসএম হুমাযুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময় আমি ছিলাম না। তাই সেটি আমার বিবেচনার বিষয় নয়। আর পুরোনো বিষয় যেটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সেটির মতামতও দিতে চাই না।
মন্তব্য