মিশরের পিরামিড বিশ্বজুড়ে নান্দনিকতার এক আশ্চর্যের নাম। কিন্তু অনেকেই জানেন না আফ্রিকার অনেক স্থাপত্যের মধ্যেও আছে ঠিক একই নান্দনিকতা।
স্থপতি আদিল ডালবাই এবং মুকাসা তাই পুরো দুনিয়াকে এর জানান দিতে চান সাব-সাহারান আফ্রিকা প্রকাশিত সাত খণ্ডের আর্কিটেকচারাল গাইডের মাধ্যমে। সম্প্রতি তারা এ দলের অংশ হিসেবে কাজ করছেন।
তাদের গভীর গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল পূর্বযুগের ভবনগুলো। ঔপনিবেশিক সময়ে সেনেগালের রাজধানী ডাকারে নির্মিত সম্প্রতি সংস্কার করা রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু করে আধুনিক মাস্টারপিসের জন্য কাজ করেছেন এ দুই স্থপতি।
আফ্রিকার ১২টি উদ্ভাবনী, ঐতিহাসিক এবং আইকনিক ভবনগুলো হলো-
১. কাসুবি সমাধি, উগান্ডা– ১৮৮২
উগান্ডার রাজধানী কামপালায় কয়েক হেক্টর কৃষি জমি জুড়ে তৈরি কাসুবির রয়েল কমপ্লেক্স হলো বুগান্ডা রাজ্যের রাজাদের সমাধিস্থল। মূলত কাঠ এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ থেকে নির্মিত হয়েছিল এটি।
ভেতরে একটি পবিত্র বন প্রতিলিপি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ৫২টি বুগান্ডা গোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য উপরের দিকে রয়েছে ৫২টি বৃত্তাকার রিং।
২. লিডেটা মার্কেট, ইথিওপিয়া– ২০১৭
শপিং সেন্টারটি ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় ‘ভিলাল্টা স্টুডিও’ তৈরি করেছে, যা হালকা ওজনের কংক্রিট দিয়ে তৈরি। নকশায় ছিদ্রযুক্ত মুখোমুখি রয়েছে যা প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভবনের চকচকে সাদা খোলকে সাজানো কাট-আউট প্যাটার্নটি একটি ঐতিহ্যবাহী ইথিওপীয় কাপড়ের অনুকরণ করে বানানো।
৩. হিকমা কমপ্লেক্স, নাইজেরিয়া- ২০১৮
আর্কিটেকচার স্টুডিও এটেলিয়ার মাসোমির নাইজেরিয়ান প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম কামারা, স্টুডিও চাহারের ইয়াসামান ইসমাইলির যৌথ উদ্যোগে সাবেক একটি হাউসা মসজিদকে পুনরুদ্ধার করা হয়।এতে একটি কমিউনিটি স্পেস আর লাইব্রেরিও রয়েছে।
ডালবাইয়ের জন্য প্রকল্পটি পুরাতন এবং নতুনের অবিচ্ছিন্ন মিশ্রণে বিশেষভাবে তৈরি।
জার্মান এই স্থপতি বিবিসিকে বলেন, ‘এটি স্পষ্টতই একটি সমসাময়িক ভবন যা নাইজেরিয়ান ঐতিহ্যকে গভীরভাবে প্রকাশ করে।
‘শুধুমাত্র সাংস্কৃতিকভাবে নয়, প্রযুক্তিগতভাবেও এটি পুরানো ভবনগুলোর কৌশল ও উপকরণের উপর নির্ভর করে।’
৪. মারোপেং ভিজিটরস সেন্টার, সাউথ আফ্রিকা– ২০০৬
মারোপেং একটি অত্যাধুনিক পর্যটন কেন্দ্র যা আধুনিক মানুষের প্রাথমিক বিকাশ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করতে তৈরি করা হয়েছে।
এই আইকনিক স্ট্রাকচারটি সাউথ আফ্রিকার প্রতিষ্ঠান (GAPP Architects ও MMA Studio) দিয়ে ডিজাইন করা।
৫. মেরোস এর পিরামিড, সুদান–৩০০খৃস্টাব্দ
এই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটটি একসময় প্রাচীন কুশাইট সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। এর খনন থেকে প্রাসাদ, মন্দির এবং রাজকীয় গোসলখানার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
এই পিরামিডগুলো বেলেপাথরের ব্লক দিয়ে নির্মিত হয়েছিল।
৬. বাসোথো হাউস, লেসোথো
লেসোথোতে ‘লিটেমা’ হলো একটি ম্যুরাল, ডেকোরেশন খোদাই করা আর মোজাইক দিয়ে তৈরি।
মাটি ইট, প্লাস্টার দিয়ে নির্মিত ঘরটি উর্বরতা এবং ত্যাগের রক্তের প্রতীক লাল রঙে আঁকা। বিশুদ্ধতা ও শান্তির প্রতিনিধিত্ব করছে সাদা। পূর্বপুরুষদের উল্লেখ করার জন্য কালো, আর বৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আঁকা অন্ধকার মেঘ।
৭. কেনেথ ডাইক লাইব্রেরি, নাইজেরিয়া–১৯৫৪
গ্রন্থাগারটি নকশা করেছিলেন ইংল্যান্ডে আধুনিক আন্দোলনের পথিকৃৎ ম্যাক্সওয়েল ফ্রাই এবং জেন ড্রু। এটি ইবাদান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের অংশ।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ এটি প্রতিষ্ঠা করে। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের গ্রন্থাগারটি সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে একটি ভবনের মধ্যে তাপ কমিয়ে আনে।
৮. মালির বিখ্যাত মসজিদ জেনি, ত্রয়োদশ শতাব্দী
এ মসজিদটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির তৈরি কাঠামো। মসজিদটি জেনি শহরের প্রতীক,যা থেকে ৮০০ থেকে ১২৫০ সালের মধ্যে বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হয়েছিল।
ভবনটির মসৃণ ভাস্কর্যযুক্ত দেয়ালগুলো রোদে শুকানো ইট, বালি, মর্টার ও প্লাস্টারের একটি কোট দিয়ে নির্মিত।
প্রতি বছর শহরের অধিবাসীরা সাম্প্রদায়িকভাবে একটি একদিনের ইভেন্টের সময় মসজিদটি পুনরায় প্লাস্টার করে যা ক্র্যাপিসেজ দে লা গ্র্যান্ড মসজিদ (গ্রেট মসজিদের প্লাস্টারিং) নামে পরিচিত।
৯.সম্রাট ফ্যাসিলাইডের প্রাসাদ, ইথিওপিয়া- ১৭ শতকের শুরু
প্রাসাদটি ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর গন্ডারে অবস্থিত, যা ‘ফাসিল ঘেবি’ (রয়েল এনক্লোসার) নামে পরিচিত।
এতে রয়েছে একটি দুর্গযুক্ত প্রাঙ্গন।রয়েছে ২০টি প্রাসাদ, রাজকীয় ভবন, বিস্তৃতভাবে সাজানো গীর্জা, মঠ ও অন্য কিছু ভবন।
এই ভবনগুলোর নকশা জেসুইট মিশনারিদের গন্ডারে আনা বারোক শৈলী দিয়ে প্রভাবিত হয়েছিল।
১০. ডোমিনিকান চ্যাপেল, নাইজেরিয়া-১৯৭৩
শিল্পী দেমাস নোভোকো ভাস্কর্য উপাদান, আর আধুনিকতার সঙ্গে নাইজেরিয়ান স্থানীয় ভাষাশৈলীর স্থাপত্যের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন।
আছে খোদাই করা কাঠের কলাম। ছোট রেলিং আর গেটগুলোতে বিস্তৃত ধাতব কাজও রয়েছে।
১১. গ্রেট মসজিদ, বেনিন–(১৯১২-১৯৩৫)
বেনিনের রাজধানী পোর্ট-নভোতে অবস্থিত মসজিদটি উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলীয় রাজ্য বাহিয়াতে ১৭ ও ১৮ শতকের গির্জার আদলে নির্মিত আফ্রো-ব্রাজিলীয় স্থাপত্যের একটি আকর্ষণীয় উদাহরণ।
উজ্জ্বল হলুদ, বাদামী, সবুজ এবং নীল রঙের এ প্যালেট বাহিয়ার ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
এটি পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল বরাবর আফ্রো-ব্রাজিলিয়ান মসজিদের একটি।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মুক্তি পাওয়া ক্রীতদাসদের বংশধর দিয়ে বানানো হয় এ মসজিদ।
১২. মাপুংগুবে ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার, সাউথ আফ্রিকা-২০০৯
মাপুংগুয়ে ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে একটি পাথুরে ল্যান্ডস্কেপে অবস্থিত কেন্দ্রটি। ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার ফেস্টিভালে সাউথ আফ্রিকার স্থপতি পিটার রিচ ২০০৯ ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতেছে এই স্থাপত্যের জন্য।
মাটির মিশ্রণ তৈরির জন্য নির্মাণস্থল থেকে মাটি ও পাঁচ শতাংশ অতিরিক্ত সিমেন্ট ব্যবহার করে ইট তৈরি করা হয়েছিল এর জন্য।
আরও পড়ুন:পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে একটি যাত্রীবাহী বাস সেতু থেকে নদীতে পড়ে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানায়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে মালিয়ান শহর কেনিয়েবা থেকে বুরকিনা ফাসো যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাসটিতে মালিসহ পশ্চিম আফ্রিকার অন্য দেশের নাগরিকও ছিলেন।
পশ্চিম আফ্রিকায় বেশির ভাগ গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া ও বেপরোয়াভাবে চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।
২০২৩ সালে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকাতে বিশ্বের যানবাহন সুবিধার মাত্র দুই শতাংশ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে মহাদেশটিতে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর একটি মসজিদে হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে একই দিনে একটি ক্যাথলিক গির্জায় হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
একটি নিরাপত্তা সূত্র এএফপিকে জানায়, স্থানীয় সময় রোববার ভোর ৫টার দিকে ফজরের নামাজের সময় কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি নাটিয়াবোনি শহরের একটি মসজিদে ঢুকে হামলা চালায়। এতে নামাজে থাকা অনেক মুসলিম নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই পুরুষ। নিহতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
বেনিন এবং টোগোর সীমান্তের কাছাকাছি বুরকিনার এ অঞ্চলটি ২০১৮ সাল থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্বারা নিয়মিত আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
এদিকে মসজিদে হামলার একই দিনে বুরকিনা ফাসোর সাহেল অঞ্চলের ডোরি শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এসসাকানে গ্রামে সমাবেশের সময় একটি ক্যাথলিক গির্জায় হামলা করা হয়। এতে কমপক্ষে ১৫ জন বেসামরিক নিহত এবং দুজন আহত হয়েছে বলে জানান গির্জার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
সম্প্রতি বুরকিনা ফাসোর উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি সামরিক দলও হামলার শিকার হয়।
আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট (এসিএলইডি) অনুসারে, ২০১২ সালে মালি থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় বুরকিনা ফাসোতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা গেছে। জাতিসংঘ বলছে, দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বুরকিনা ফাসোর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এলাকা বর্তমানে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। দেশটির কর্তৃপক্ষ মালি থেকে আসা আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এসব গোষ্ঠী সাহেল অঞ্চলের বিশাল অংশ দখল করেছে এবং লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।
এ ছাড়া গত তিন বছরে দেশটির মসজিদ ও গির্জাগুলোকে বারবারই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে গ্যাস বিস্ফোরণ থেকে আগুন লেগে দুইজন নিহত ও ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
নাইরোবির এমবাকাসি পাড়ায় স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাতে একটি গ্যাস রিফিলিং কোম্পানিতে বিস্ফোরণটি ঘটে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
দেশটির সরকারের মুখপাত্র আইজ্যাক মওয়াউরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, আগুনের ঘটনায় গ্যাস রিফিলিং কোম্পানির ভবনটি পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে দগ্ধ অবস্থায় দুইজনকে হাসপাতালে নেয়া হলে তাদের মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও ২২২ জনের মতো আহত হয়েছে।
রয়টার্সকে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এ আগুন নিকটবর্তী একটি টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। এতে ওই স্থানের বেশ কয়েকটি যানবাহন এবং বাণিজ্যিক ও আবাসিক সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
কেনিয়ার রেড ক্রস জানিয়েছে, নাইরোবির বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২৭১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:আফ্রিকার দেশ মালিতে এক দশক পর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার।
মিশনটির মুখপাত্র ফাতৌমাতা কাবার বরাত দিয়ে সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মালিতে জাতিসংঘের ইউএন মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্টাবিলাইজেশন মিশন ইন মালি (এমআইএনইউএসএমএ) নামে পরিচিত মিশনটির রাজধানী বামাকোর সদর দপ্তরে জাতিসংঘের পতাকা নামিয়ে ফেলেছে।
মুখপাত্র কাবা জানান, পতাকা নামিয়ে ফেলার বিষয়টি প্রতীকী, যা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি বোঝায়।
তবে মিশনের কিছু কাজকর্ম এখনও চলছে, যেগুলো জানুয়ারির পর সমাপ্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
দেশটিতে ২০১৩ সালে শান্তিরক্ষী মোতায়েন করেছিল জাতিসংঘ। ২০২০ সালে সামরিক সরকার মালির শাসনক্ষমতা নেয়ার পর গত জুনে তারা এ শান্তিরক্ষা মিশনটি বন্ধ করার দাবি জানায়।
তারা আর মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতি দেখতে চায় না বলে জানান।
আরও পড়ুন:নাইজেরিয়ায় বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে চালানো সামরিক ড্রোন হামলায় ভুলবশত ৮৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
আল জাজিরার মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাদুনা রাজ্যের তুদুন বিরি গ্রামে রোববার রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। মুসলমানরা সেখানে ধর্মীয় উৎসবে জড়ো হয়েছিলেন।
কাদুনা গভর্নর উবা সানি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে চালানো ড্রোন হামলায় ভুলে বেসামরিকদের হত্যা করা হয়েছে। এ হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন।’
ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, ৮৫টি মরদেহ এখন পর্যন্ত কবর দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অনুসন্ধান কাজ চলছে।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নাইজেরিয়া দপ্তর ওই এলাকায় তাদের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের বরাত দিয়ে বলছে, হামলায় অন্তত ১২০ জন নিহত হয়েছেন।
অ্যামনেস্টির নাইজেরিয়ার পরিচালক ইসা সানুসি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে।
নাইজেরিয়ার উপদ্রুত অঞ্চলে বাসিন্দাদের ওপর ‘ভুল’ বোমা হামলার সবশেষ ঘটনা ছিল এটি। এর আগে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাইজেরিয়ার একটি সামরিক বিমান বোর্নো রাজ্যের দাগলুনে বোমা ফেলে ২০ জন বেসামরিককে হত্যা করে ও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক এলাকায় এই ধরনের বোমা হামলার অন্তত ১৪টি ঘটনার রেকর্ড রয়েছে।
এ হামলায় নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের কিছু অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে চলতি বছরের জুলাইয়ে হওয়া সামরিক অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটি থেকে রাষ্ট্রদূত ও সেনা প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।
এক টেলিভিশনে রোববার দেয়া সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, ‘ফ্রান্স তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের রাষ্ট্রদূতসহ কয়েকজন কূটনীতিক ফ্রান্সে ফিরে আসবেন।’
নাইজারের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা ‘শেষ’ জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে থাকা দেড় হাজার সেনাকে আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ সবাইকে দেশে নিয়ে আসা হবে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারে কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্ষমতার দখল নেয়া সামরিক বাহিনীর চাপ ও জনতার বিক্ষোভের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট উল্লিখিত ঘোষণা দিলেন।
নাইজারে গত ২৬ জুলাই হওয়া অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি না দেয়া মাখোঁর কাছে ফ্রান্সের সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন সামরিক নেতারা। সেনা প্রত্যাহারের কাঙ্ক্ষিত সেই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
জাতীয় টেলিভিশনে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে পাঠ করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই রোববার আমরা নাইজারের সার্বভৌমত্বের পথে নতুন ধাপকে স্বাগত জানাচ্ছি। এটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যাতে নাইজারের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইচ্ছার প্রতিফলন হয়েছে।’
আরও পড়ুন:লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দারনায় প্রলয়ংকরী ঝড় দানিয়েলের প্রভাবে বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন শহরটির মেয়র আবদুলমেনাম আল-গাইতি।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন আল অ্যারাবিয়াকে তিনি জানান, বন্যা উপদ্রুত জেলা বিবেচনায় মৃতের সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ হাজার হতে পারে।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর স্বজনদের মরিয়া হয়ে খুঁজছেন দারনার প্রাণে বেঁচে যাওয়া লোকজন। উদ্ধারকারীরা মরদেহ রাখার জন্য আরও বডি ব্যাগ চাইছেন।
দারনার বাসিন্দা মাহমুদ আবদুলকরিম ত্রিপোলিতে সাংবাদিক মৌতাজ আলিকে জানান, বাঁধ ভাঙার পর দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে যথাসময়ে উদ্ধার করতে না পারায় তিনি মা ও ভাইকে হারিয়েছেন।
ত্রিপোলির দেরওয়ানি সম্প্রদায়ের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থল থেকে মৌতাজ আলি বলেন, ‘তিনি (আবদুলকরিম মা) স্থান ছাড়তে চাননি…বুঝতে পারেননি পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে।’
আবদুলকরিম জানান, তার মা ও ভাই যতক্ষণে ফ্ল্যাট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। তারা রাস্তায় আসার পর বানের জলে ভেসে যান।
গত মঙ্গলবার দারনা ছাড়তে পারা সাংবাদিক মাবরুকা এলমেসমারি আল জাজিরাকে জানান, দারনা শহরে নেই পানি, বিদ্যুৎ কিংবা পেট্রল।
তার ভাষ্য, পুরো শহর ধসে সমতল হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য