রাজধানীর, বিশেষত পুরান ঢাকার পার্কগুলোর স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য বদলে যাচ্ছে। পার্কের দেয়াল উঠে যাচ্ছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা যে কেউ যেকোনো দিক দিয়ে যেকোনো সময় পার্কে প্রবেশ করতে পারবে, বের হতে পারবে।
এরই মধ্যে শহীদ মতিউর পার্ক, বাহাদুর শাহ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, ইসলামবাগ পার্ক, তাঁতীবাজার পার্ক, হাজী আবদুল আলীম মাঠসহ পুরান ঢাকার ৩০টি মাঠ ও পার্কের দেয়াল উঠিয়ে দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে।
ঢাকায় পার্কের দেয়াল উঠিয়ে দেয়ার ডিজাইন শুরু করেছিলেন স্থপতি রফিক আজম। ঢাকেশ্বরী অঞ্চলের হাজী আবদুল আলীম খেলার মাঠের ডিজাইনের জন্য তিনি গত জুন মাসে পেয়েছেন ডিএনএ প্যারিস ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড-২০২১।
বাংলাদেশের স্থপতিদের মধ্যে রফিকই সর্বাধিক আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। প্রাপ্ত অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে ইউরেশিয়ান অ্যাওয়ার্ড-২০২০, আর্ক এশিয়া গোল্ড মেডেল-২০১৭, ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড-২০১২, দ্য সাউথ এশিয়ান আর্কিটেক্ট অফ দি ইয়ার-২০১২, ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড-২০০৮, দি কেনেথ এফ. ব্রাউন এশিয়া প্যাসিফিক কালচার অ্যান্ড ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড-২০০৭, ইউএসএ অন্যতম।
স্থপতি রফিক আজমের কাজ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। ইতালীয় প্রকাশনা সংস্থা স্কিরা ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশ হয়েছে ‘রফিক আজম: আর্কিটেকচার ফর গ্রিন লিভিং’ শীর্ষক গ্রন্থ। ইউরোপে তাকে নিয়ে নির্মাণ হয়েছে চলচ্চিত্র।
স্থপতি রফিক আজমের কাজের মূল বৈশিষ্ট্য উন্মুক্ততা, সবুজসংলগ্নতা ও স্থানীয় জ্ঞানের প্রয়োগ। তিনি প্রতিটি বহুতল ভবনে রাখেন বাগান।
পাঁচ তলার ওপর সুইমিং পুল রাখেন না, রাখেন ‘সুইমিং পন্ড’। ভবনের তিন তলায় তিনি তৈরি করেন ‘বৃষ্টিঘর’, ‘গোস্বাঘর’। ভবনের ছাদে থাকে ধানক্ষেত।
তার ডিজাইন করা প্রতিটি ভবনের ভেতর ও বাইরে থাকে সবুজের উপস্থিতি। তার ডিজাইনের মূল লক্ষ্য প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস। অ্যাকাডেমিক মহলে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন ‘গ্রিন আর্কিটেক্ট’ হিসেবে।
সম্প্রতি নিউজবাংলার পক্ষ থেকে স্থপতি রফিক আজমের বারিধারার অফিসে তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এ সময় তার কাজ ও দর্শন, গ্রিন আর্কিটেকচারের ধারণা, ভবন নির্মাণের উপকরণ, ঢাকার দেয়াল সংস্কৃতি, বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্প, রাজধানীর নগরায়ণের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়।
নিউজবাংলা: আপনার কাজকে ‘আর্কিটেকচার ফর গ্রিন লিভিং’, ‘গ্রিন আর্কিটেকচার’ ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। কেন বলা হয়ে থাকে, একটু ব্যাখ্যা করবেন?
রফিক আজম: গ্রিন আর্কিটেকচার শব্দ আকারে অনেক ছড়িয়ে গেছে। গ্রিন আর্কিটেকচার কথাটার আসল সৌন্দর্য হচ্ছে আপনার এবং প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে বসবাস করা। আপনি সূর্যের আলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন। বাতাসকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন। পাখিকে বাঁচতে দেবেন, গাছকে বাঁচতে দেবেন। এর বেনিফিট আপনি পাবেন। অক্সিজেন তৈরি করবে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করবে। এভাবে সম্পূরক আমরা। মানুষ একা বাঁচতে পারে না। তাদের নিয়ে আপনি বাঁচবেন।
মেইনলি ব্যাপারটা হচ্ছে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেশি তৈরি হলে তো বিপদ। গাছ তা গ্রহণ করে নিচ্ছে। কার্বন রিডিউস হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে গ্রিন। আর আপনি এনার্জি কম খরচ করবেন। আপনি যে জ্বালানি খরচ করেন, এটা তৈরি করতে যে পরিমাণ ফুয়েল লাগে, সাপোর্ট লাগে, তাতে অনেক বেশি ট্যাক্সেশন করতে হয় পৃথিবীকে।
প্রকৃতির মধ্যে যে রকম জীবনযাপন, সে রকম করে বাঁচা। এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে। এয়ার কন্ডিশন একটি বড় সমস্যা। একটা গ্লাসের বিল্ডিং বানালেন। এটা গ্রিন হাউস ইফেক্ট করে। সূর্যের আলো হচ্ছে ওয়ানওয়ে ট্রাফিক। সূর্যের আলো যখন গ্লাসে ঢোকে আর বের হতে পারে না। শর্ট ওয়েব ও লং ওয়েবের একটা খেলা।
ধরুন একটা গাড়ি রোদে দাঁড়া করে রাখবেন। কত গরম হয়ে যায়; আগুন হয়ে যায়। বিল্ডিংও তাই হয়। এই গ্লাসের বিল্ডিং ঠান্ডা রাখার জন্য আপনি সারাক্ষণ এসি চালান। এনার্জি কনজাম্পশন বেড়ে যায়। এ জন্য পৃথিবীকে ট্যাক্সেশন করতে হয়। আপনি মাটি থেকে টেনে ফুয়েল বের করেন। এতে কার্বনকে ওপেন করা হয়। এগুলো বন্ধ করতে বলা হচ্ছে। কম করতে বলা হচ্ছে।
এখন বন্ধের উপায় কী, সেটা জানতে হবে। এটা নলেজের খেলা। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে আপনি সবসময় খাদ্য উৎপাদন করবেন। কার জন্য? নিজের জন্য, পাখির জন্য, কীটপতঙ্গের জন্য। আপনি একাই খাবেন? এ জন্য আপনি যে গাছ লাগাবেন, শুধু অক্সিজেন দেবে, তা নয়। সে ফুল দেবে। সে ফল দেবে। সে পাখিকে খাওয়াবে। আপনাকে ভিটামিন দেবে, আপনার বাচ্চাকে ভিটামিন দেবে। এইভাবে সম্পূরকভাবে বেঁচে থাকা। এটাকে বলে গ্রিন।
পানির ব্যবহার পৃথিবীর একটি বড় জিনিস। পৃথিবীতে পানি আছে দুই-তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে মাত্র শতকরা এক ভাগ বিশুদ্ধ সুপেয় পানি। সৃষ্টিকর্তা এক ভাগ পানি মাটির নিচে পাঠান। এই পানিকে আমরা বের করে ব্যবহার করি। মাটির নিচ থেকে, বৃষ্টি থেকে যে সুপেয় পানি আসে, তা মোট পানির এক ভাগ। এই জন্য বলা হয়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি লাগে, তবে পানির জন্যই লাগবে।
এই সমস্ত জিনিস নিয়ে যারা কাজ করেন, এই প্যাসিভ এনার্জি নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের গ্রিন বলা হয়ে থাকে। আমি যেহেতু প্যাসিভ এনার্জি নিয়ে কাজ করি, খুব চেষ্টা করি; সবসময় পেরে উঠি না। সেই জন্য কেউ কেউ আমার কাজ গ্রিন আর্কিটেকচার বলে থাকেন। এই হচ্ছে গ্রিন আর্কিটেকচারের মেইন ধারণা।
নিউজবাংলা: আপনার ডিজাইনে তিনটি বিষয় প্রাধান্য পায়। আলো, বাতাস ও পানি। বিষয় তিনটি..
রফিক আজম: সৃষ্টিকর্তা কিন্তু কোরআনে এক জায়গায় বলেছেন, তোমরা কি দেখো না, সূর্য আমি এক জায়গা থেকে তুলি না। সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে। এটা সাধারণ জ্ঞান। কিন্তু ক্রিটিক্যালি যদি দেখেন, গভীরভাবে যদি দেখেন, সূর্য কিন্তু মুভিং। গরমকালে-বর্ষাকালে সে উঠবে ঠিক পূর্ব-উত্তর দিক থেকে। উত্তর দিকে চলে যায়। উত্তর-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিমে গিয়ে অস্ত যায়। এই সূর্যটা সরতে সরতে মার্চ মাসে পুবে চলে আসে। মার্চ মাসে দিন-রাত সমান থাকে যেদিন, তখন সূর্য পুব দিকে টু দি পয়েন্টে উদিত হয়। শীতকাল এলে সে চলে যায় দক্ষিণে। উদিত হয় দক্ষিণ-পুবে। অস্ত যায় দক্ষিণ-পশ্চিমে। তখন কিন্তু একটা হেলানো সূর্য। অনেকখানি হেলে যায়। ৩৭ ডিগ্রি হেলে যায়। এ জন্য আমাদের গ্রামে একটা কথা প্রচলিত আছে:
‘দক্ষিণ দুয়ারি স্বর্গবাস
উত্তর দুয়ারি সর্বনাশ
পুবে হাঁস
পশ্চিমে বাঁশ।’
কথাটা প্রচলিত হয়ে আসছে। খনার বচন। জ্ঞানী লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে চর্চা করে এটা দাঁড় করিয়েছেন। এটাই হচ্ছে আমাদের দেশের শক্তি। এটা আমাদের দেশে বসবাস করার সৌন্দর্য।
দক্ষিণ দুয়ারি স্বর্গবাস কেন? গরমকালে সূর্য দক্ষিণ দিকে থাকে না। থাকে মাথার ওপর। সকালে ও সন্ধ্যায় থাকে উত্তরে। কখনো হেলে যায় না দক্ষিণে। ফলে গরমকালে দক্ষিণে সূর্য আপনি পাচ্ছেন না। আবার গরমকালে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে, সমুদ্র থেকে হাওয়া আসে। আর বর্ষা যখন আসে, তখন বাতাস আসে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে। এটা বৈশ্বিক বায়ু (গ্লোবাল উইন্ড)।
আগে যেটা বললাম, সেটা দেশজ বাতাস (লোকাল উইন্ড)। দুটো আসে দক্ষিণ দিক থেকে। দক্ষিণ খোলা রাখলে গরমকালে বাতাস পাবেন। যেই শীতকাল আসল, সূর্য চলে যাবে দক্ষিণে। সূর্যের হেলান দেয়া আলো দক্ষিণ দিকে চলে আসবে আপনার ঘরে। আর হাওয়া।
শীতকালে হাওয়া আসে উত্তর দিক থেকে। হিমালয়ের ঠান্ডা বাতাস। হাওয়া নাই, কিন্তু রোদ আছে। বাসা উষ্ণ। এটা সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেশন। এটা যদি অস্ট্রেলিয়ায় করেন, তাহলে আপনি মারা যাবেন। ওরা থাকে সাউথ হেমিস্ফিয়ারে। ওর নর্থই সৌন্দর্য। আমরা নর্থ হেমিস্ফিয়ারে। আর আমাদের সৌন্দর্য দক্ষিণ।
এগুলো হচ্ছে লোকাল জ্ঞান। যে এলাকায় বাস করেন, সেই এলাকার জ্ঞান। স্থানীয় জ্ঞানের ভিত্তিতে বাড়ি নির্মিত হলে অনেক বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত হবে, প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করতে পারবেন। আপনি কোন গাছ লাগাচ্ছেন, তা জানতে হবে।
গাছ সম্পর্কে, প্রকৃতি সম্পর্কে, পানি সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি যদি নিমগাছ লাগান, নিম এমন একটা গাছ, সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন দেয়; সবচেয়ে লম্বা সময় অক্সিজেন দেয়। আগে বাড়ির দক্ষিণে নিমগাছ লাগাত বাঙালিরা। কিন্তু নিমগাছ কোথায় গেল? এখন রাস্তায় রাস্তায় মেহগনি গাছ লাগায়। কেন লাগায়? কারণ জ্ঞানের অভাব।
আপনি জ্ঞান দিয়ে দেখবেন, আপনার যা দরকার, প্রকৃতি সব আপনাকে দিচ্ছে। কিন্তু জ্ঞানের অভাবে আপনি ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে প্রকৃতি আপনার বিরুদ্ধে কাজ করছে। আপনি প্রকৃতিকে ব্যবহার করতে জানেন না।
কম্পিউটার আপনি ব্যবহার করতে জানেন না, কম্পিউটার নিয়ে কী করবেন? ইউজলেস। প্রকৃতি আমাদের সবকিছু দিচ্ছে। কিন্তু আমরা ব্যবহার করতে জানি না। এ কারণে আমরা খুব বিপদে আছি। এত কম যে মিষ্টি পানি, তার একটা সিংহভাগ আমরা পাই। সে জন্যই আমরা সবচেয়ে সম্পদশালী দেশগুলোর একটি। সবচেয়ে কম যে জিনিস ডায়মন্ড, সেটাকে বলা হয় দামি। ওটা আসলে কিছু না। তার চেয়ে অনেক দামি পানি– সুমিষ্ট পানি। সুমিষ্ট পানি থাকায় আমরা অনেক রিচ। আমাদের উর্বর মাটি আছে। এই উর্বর মাটির কারণে আমরা অনেক রিচ।
আমাদের দেশে আপনি এক শটা ফলের নাম সহজেই বলতে পারবেন। আমাদের সূর্যের আলো দেখেন। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২৫০ দিন সূর্যের আলো পান। সেটা দিয়ে সৌরবিদ্যুৎ তৈরি করা যায়।
এ দেশে সব আছে। ব্যবহার করাটাই কাজ। ব্যবহার করাটাই গ্রিন আর্কিটেকচার। আমি কেন ব্যবহার করব না? আমার সব কাজে পানির ছোঁয়া থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমি ডেল্টার মানুষ। বদ্বীপের মানুষ। পানি হচ্ছে বাঙালির চিহ্ন। বাঙালি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বন্যা, পানি ইত্যাদি চিত্র।
বন্যাকে আপনি নেগেটিভলি দেখবেন না। বন্যা না হলে আপনি মারা যেতেন অনেক আগেই। এই যে ধান উৎপাদন, শস্য উৎপাদন; বন্যার পানি চলে যাওয়ার পর হয়ে থাকে। পানি চলে যাওয়ার পর পুরো দেশটাই সবুজ। আবার পানি এলে দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ডুবে যায়। পানি আসা-যাওয়ার খেলা না থাকলে, পানি না এলে শস্য উৎপাদন করা সম্ভব? সুতরাং বন্যাকে যদি হার্ডলি ম্যানেজ করতে পারেন, তাহলে মানুষ মারাই যাবে না। এখনও বন্যায় মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা খুব কম আগের তুলনায়। কিন্তু কত লোক বাঁচে? সারা জাতি কিন্তু বাঁচে এটার ওপর।
নিউজবাংলা: আপনার কাজে ভবনের ম্যাটেরিয়ালের ক্ষেত্রেও কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। ইটের ব্যবহার হ্রাস, কংক্রিট ব্যবহারের আধিক্য, দেয়ালে প্লাস্টার বা রং না করা ইত্যাদি। পোড়া মাটির ব্যবহার একেবারেই করেন না।
রফিক আজম: পোড়া মাাটির একটা স্ট্রেংথ আছে। বাংলাদেশ একটা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বেশ ঝুঁকিতে আছে অঞ্চলটি। ভূমিকম্পের সময় যখন চারদিক থেকে একসঙ্গে আক্রমণ হয়, এই ধাক্কাটা নেয়ার মতো ম্যাটেরিয়াল না থাকলে আপনি বাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতে পারবেন না। একতলা ভবন হলে হয়তো বুদ্ধি করে করা যায়। কিন্তু আমাদের লোকসংখ্যা বেশি, জমি কম। ধানি জমিতে যদি বাড়ি বানিয়ে ফেলি, ধানি জমিগুলো যদি খেয়ে ফেলি, তাহলে খাব কী? সুতরাং যত কম জমি ব্যবহার করা যায়।
জমিতে উঁচা বিল্ডিং বানাই। ১০ তলা, ১৫ তলা, ২০ তলা ভবন। এই বাড়ি কি দাঁড়িয়ে থাকবে? থাকবে না। এর স্ট্রেংথ থাকতে হবে। তাই কংক্রিটের বাড়ি যদি হয়, তাহলে স্ট্রেংথ থাকবে। কংক্রিট খুব গ্রিন ম্যাটেরিয়াল না। আবার খুব বাজে জিনিসও না।
আপনাকে একটা চয়েস নিতে হবে। আমরা একটা মাঝামাঝি জায়গায় থাকি। বিল্ডিং ঘরে গ্রিন দিতে পারি, ছাদে গ্রিন দিতে পারি। প্লাস-মাইনাস করে একটা জায়গায় আসতে পারি। আমি বেঁচেও থাকব, গ্রিনও থাকবে। ব্যালেন্সটাই জীবনে আসল। আমি কংক্রিট ব্যবহার করি। অ্যাকচুয়ালি বাংলাদেশে কংক্রিট জনপ্রিয় হয়েছে আমার হাতেই।
নিউজবাংলা: আপনি কি ইটের ব্যবহার একবারেই করেন না?
রফিক আজম: করি, কম। ইটের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছি। কারণ ইট মাটি পুড়িয়ে, ধানি জমি পুড়িয়ে, কার্বন পুড়িয়ে তৈরি করা হয়। ইট তৈরির ফলে আমরা মাটি হারাতে থাকি। এতে সমস্যা হচ্ছে। ওয়েস্টে ম্যাটেরিয়াল দিয়ে রিসাইকেল করে যদি আমরা কংক্রিটের ব্লক তৈরি করি, তাহলে কিন্তু মাটি হারাতে হবে না। কিন্তু কাজ তো হয়। তাহলে কেন আমরা মাটি পুড়িয়ে, কার্বন পুড়িয়ে ইট তৈরি করব? অনেক প্রসেসের পরও গ্রিন থাকছে না।
নিউজবাংলা: আপনি কি ইটের ব্যবহার পুনর্বিবেচনা করতে বলছেন?
রফিক আজম: হুম। কারণ এতে পোড়াতে হয়। মাটি নিতে হয়। আমরা কত মাটি নেব? পুরো দেশ উজাড় করে দেবো নাকি? পুরোনো বিল্ডিংয়ের ইট, রড, সিমেন্ট, খোয়া ইত্যাদি ভেঙেচুরে রিসাইকেল করা যাচ্ছে। কংক্রিটের ব্লক তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটি নষ্ট না করি, জমি নষ্ট না করি। ওদিকে আমরা যাচ্ছি। কংক্রিটের ব্লক আমরা ব্যবহার করছি। পুরোনা বিল্ডিং, বালি, সিমেন্ট মিশিয়ে আমরা বানিয়ে নিচ্ছি। এর জন্য মাটি পোড়ানোর দরকার হচ্ছে না।
আমরা আস্তে আস্তে ফেইজ আউট করছি। আস্তে আস্তে আমরা ইট থেকে সরছি। এখনও যে ব্রিক ব্যবহার করি না, তা নয়। তবে কম করি। আমরা যদি ব্রিকের ব্যবহার কমিয়ে দিই, তাহলে একটা সময় দেখবেন মাটি কেটে আর ইট পোড়াতে হচ্ছে না। বিশেষ কারণে লাগতে পারে, লাগুক। কিন্তু এটাই যদি পূর্ণাঙ্গ হয়, তাহলে সব মাটি একদিন আপনারা খেয়ে ফেলবেন। এটা কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, ‘প্লিজ, আপনারা মাটি পুড়িয়ে ব্রিক তৈরি বন্ধ করেন।’ সরকারি কাজে ইতিমধ্যেই নির্দেশনা এসেছে। প্রাইভেট কাজে হচ্ছে কিছু। সরকারি কাজে বন্ধ হয়ে গেছে।
নিউজবাংলা: কংক্রিট ব্লক কীভাবে তৈরি করেন?
রফিক আজম: ওয়েস্ট (পরিত্যক্ত) কংক্রিট। ভাঙা বিল্ডিং। ব্রিজ বানাতে গিয়ে অনেক ব্লক বানায়। এগুলো কোথায় নিয়ে যাবে? এগুলো স্ম্যাশ করে আবার কংক্রিটের ছোট ছোট ব্লক বানানো হয়, যা বাড়িঘরে লাগানো হয়। এভাবে রিসাইকেল করা গ্রিন আর্কিটেচারের অংশ। আমরা পুনর্ব্যবহার করি।
গার্বেজ সমস্যা নয়; বরং সম্পদ। কমিউনিটির সম্পদ। এই গার্বেজ দিয়ে সার বানানো হচ্ছে, ইলেকট্রিসিটি বানানো হচ্ছে। যশোরে এটা করছে। ইতিমধ্যে ওরা প্ল্যান্ট বানিয়েছে। ওরা এখন গার্বেজ পাচ্ছে না। অন্য শহর থেকে গার্বেজ আনতে চাচ্ছে; গার্বেজ তো সোনার খনি। গার্বেজ সব শেষ হয়ে যাবে। সার বানিয়ে ফেলবে; গ্যাস বানিয়ে ফেলবে। সিলিন্ডারে ভরে গ্যাস বিক্রি করবে।
গার্বেজ কি এখন আর শহর নষ্ট করবে? এইসব চিন্তাভাবনা হচ্ছে গ্রিন। রিসাইকেল করা, রিইউজ করা আর রিডিউস করা; কম ব্যবহার করা। প্রয়োজন না হলে ব্যবহার না করা। জীবনটাকে এমন বোহেমিয়ান ধরনের করবেন না, ‘যা খুশি করব।’ এটা বন্ধ করেন। গ্রিন অ্যাকটিভিস্টরা এটাকে ‘থ্রি আর’ বলে। রিডিউস, রিইউজ, রিসাইকেল।
নিউজবাংলা: আপনার কাজ অ্যাকাডেমিক মহলে প্রশংসিত। আবার ভোক্তাদের কাছেও আপনার কাজের চাহিদা বেশ। দুটোর...
রফিক আজম: হিসাব করলে হয়তো দেখা যাবে, ৫০-৬০টি অ্যাওয়ার্ড আমি পেয়েছি। যখন ইয়াং ছিলাম, তখন খুব ভালো লাগত এসব। অ্যাওয়ার্ডের জন্য জমা দিলাম। এটা পেলাম, ওটা পেলাম। বিদেশে লেকচার দিতে গেলাম, পড়াতে গেলাম। অনেক দেশে পড়িয়েছি। আমাকে নিয়ে পড়ানো হচ্ছে, বই বের হচ্ছে, আমাকে নিয়ে ইতালিতে ফিল্ম হয়েছে। এগুলো একসময় এক্সাইটমেন্ট ছিল আমার। এখন কিন্তু মানুষ যে আমার কাজ পছন্দ করে, তারা যায়, কথা বলে, তাদের জীবন বদলাচ্ছে, পরিবেশ সুন্দর হচ্ছে, তাদের বাচ্চারা মানুষ হচ্ছে। এটাই আমার পুরস্কার।
আমি অনেক বড়লোকের বাড়ি করেছি। এখনও করি। করতে আপত্তি নেই। বড়লোকের বাড়ি করতে পেরেছি বলেই অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছি। অন্যরা তো পয়সা দিত না। আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে তারা। এ কথাও আমি শুনেছি, ‘উনি তো বড়লোকের আর্কিটেক্ট। উনি তো অনেক টাকা নেন।’ কথাটা মিথ্যা না। তো আমার মনে মনে স্বপ্ন ছিল, আমি মানুষের আর্কিটেক্ট হব; বড়লোকের বা ধনী লোকের আর্কিটেক্ট না।
আমি সাধারণ মানুষের আর্কিটেক্ট হব। সেই কারণে হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমার কথা শুনেছেন। আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাজ করছি। সরকারি কিছু কাজ করছি, যেগুলো সাধারণ মানুষ ব্যবহার করবে।
যখন বড়লোকদের কাজ করেছি, তখন বাউন্ডারি ওয়ালটা ফেলে দিয়েছি। বড়লোকের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে বাউন্ডারি ওয়াল নাই। আমার অনেক বাড়ি আছে এমন। এখন অনেকেই এমন ডিজাইন করছে। আপনি যদি গুলশান এলাকায় হাঁটেন, বাড়ির সামনের দেয়ালটা গ্লাস দিয়ে তৈরি। আপনি গুলশান-বারিধারা এলাকায় হাঁটেন, তবে এ ধরনের গ্লাস দেয়া অনেক বাড়ি অ্যাপার্টমেন্ট দেখতে পাবেন। বারিধারায় আমার বাড়িতেও গ্লাসের বাউন্ডারি ওয়াল। ২০০৯ সালে যখন গ্লাসের বাউন্ডারি দেয়ালের প্রথম কাজের উদ্বোধন করি, তখন আমি নিজেও ভয়ে ছিলাম।
কেন বাউন্ডারি ওয়াল ফেলে দিয়েছি? আমার মনে হয়েছে বড়লোকের বাড়ি এবং রাস্তা একে অপরের শত্রু। যখন রাস্তা দিয়ে কেউ হেঁটে যায়, তখন রাস্তার পাশে যে উঁচু দেয়াল থাকে, এর ওপর থাকে কাঁটাতারের বেড়া। লেখা থাকে কুকুর হইতে সাবধান। একটা গার্ডরুমে গার্ড বসে আছে। এটা কিসের চিহ্ন? ও বলতে চায় সাধারণ মানুষকে, ‘তুমি তো চোর। তোমার তো বিশ্বাস নাই। আমার কুকুর কামড়ে দেবে। আর যদি টপকাতে চাও, তাহলে এই তারকাঁটা দিয়ে রেখেছি, তুমি রক্তাক্ত হয়ে যাবে।’
এটার মানে কী? একটা বিরাট দেয়াল দিয়ে বাড়ি আটকে রেখেছে। তারকাঁটা আছে। গার্ড লাঠি হাতে বসে থাকে। আপনাকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দেবে। এগুলো কিসের চিহ্ন? এগুলো সমাজের মধ্যে বিভেদের চিহ্ন। রাস্তায় যারা যায়, তারাও গালি দিয়ে থাকে। ও ব্যাটা টাকা-পয়সা মাইরা-মুইরা বাড়ি বানাইছে। এই হচ্ছে আমাদের মনে মনে কথোপকথন।
আমি ভেবেছি, এটা ভাঙতে হবে। আমি বাসার সামনে থেকে এমন ডিজাইন করেছি, ও কিন্তু ঢুকতে পারবে না বাসায়, কিন্তু বাসার সামনের অংশ, গাছগাছালি, বসার জায়গা, পানির ফোয়ারা দেখা যাচ্ছে। ওর কাছে মনে হবে: ‘বাহ! কী সুন্দর! লোকটার রুচি আছে। গ্লাসের দেয়াল দিয়েছে। ভেঙে যাবে না? লোকের সাহস আছে।’
কথাবার্তা কিন্তু চেইঞ্জ। সে কিন্তু আর গালি দিচ্ছে না। আগে ধানমন্ডিতে ছোট ছোট দেয়াল ছিল। তার মানে আপনাকে বলত, ‘দেখো, সমস্যা নেই। এটা আমার টেরিটোরি, প্রবেশ করো না।’ কত ভদ্রভাবে বলত। ‘তুমি দেখো, কিন্তু ঢুকো না।’ এটা বাড়তে বাড়তে এখন এমন হয়েছে, স্বাধীনতার পর ‘এ ব্যাটা তো চোর’, ‘ও ব্যাটা তো ডাকাত’ বলা শুরু হয়।
এই ভঙ্গুর সমাজ আমাকে খুব ব্যথা দিত। আমি কিন্তু পেরেছি, জানেন? পেরেছি। এখন ঢাকায় অসংখ্য বাড়িঘর দেখবেন, সামনে গাছগাছালি, সামনে তেমন কোনো দেয়াল থাকে না। ফাইনালি আমি ঢাকার পার্কগুলো থেকে দেয়াল ফেলে দিয়ে বলেছি, ওটা জনগণের। আমার ডেভেলপমেন্ট কিন্তু একদিনে হয়নি। গত ২৫-৩০ বছর ধরে স্ট্রাগল করছি। পরীক্ষামূলকভাবে দেখে বুঝেছি, এটা পসিবল। এটা আমার একটা কনট্রিবিউশন। সারা দুনিয়া এটা জানে।
নিউজবাংলা: গ্লাসের বাউন্ডারি দেয়াল প্রচলন করার সূচনাপর্বটি...
রফিক আজম: গ্লাসের দেয়াল উদ্বোধন করি ২০০৯ সালে, কিন্তু চিন্তাটা এসেছিল ২০০৫ সালে। ডিজাইন করা, পারব কি না, এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে করতে ২০০৯ সালে প্রথম একটি বাড়ির ডিজাইন করি আমেরিকান অ্যাম্বাসির পাশে। এ জন্য আমি সাহস পেয়েছিলাম। একটা গ্লাস যদি কেউ ভেঙে ফেলে তাহলে আইডিয়া কিন্তু বাতিল। সবাই বলল, ‘পাগল নাকি আপনি?’
খান জয়নুলের কাচের দেয়াল নামে একটা মুভি ছিল। ছোটবেলায় ওই মুভি দেখার পর মজা পেয়েছিলাম। কাচের আবার দেয়াল হয়? পাগল নাকি! একটা কাব্যিক ব্যাপার। কিন্তু আমার মনে গেঁথে ছিল। মিলে গেল। আমি কাচের দেয়াল করলাম। কিন্তু ভয়ে থাকি। প্রতিদিন ইঞ্জিনিয়ারকে ফোন করে খবর নিতাম, ঠিক আছে নাকি কেউ ভেঙে ফেলেছে? আমি ওখানে করেছিলাম। কারণ ওখানে অনেক গার্ড থাকে। আমি যদি প্রথম ভুল জায়গায় করতাম, কেউ যদি একটা গ্লাস ভেঙে ফেলত, তাহলে তো সবাই এসে বলবে, ‘জীবনে ও রকম আর করবেন না। খবরদার। দেখা হইছে, বাঙালিরা এটা মানবে না। বাঙালিদের তুমি চিনো?’
ওটা সাসটেইন করেছে, ওখানে পাহারা ছিল। লোকজন তখন বিশ্বাস করা শুরু করে, পসিবল। দ্বিতীয়বার করলাম গুলশান ক্লাবের পাশে। ততদিনে মানুষ একটু একটু করে বুঝে ফেলেছে, আরে! এটা তো থাকে। আমার দেখাদেখি অন্যরাও শুরু করল।
আপনি আজকে হাঁটলেও দেখতে পাবেন, এমন অনেক বাড়ি। সামনে কাচের দেয়াল অথবা দেয়াল নাই। বিষয়টি খুবই ইন্টারেস্টিং। কখনো কখনো গাছ দিয়ে রিপ্লেস করেছি; গাছগাছালির সংখ্যা বাড়িয়েছি। গাছের সংখ্যা তো আমাদের কম। গাছের সংখ্যা তো বাড়াতে হবে।
আমার আরেকটি কাজ কংক্রিটের ব্লকের বাড়ি নির্মাণ জনপ্রিয় করা। তবে এটা আমার আবিষ্কার নয়। আগেও অল্প কয়েকটি ছিল। সেনাকল্যাণ ভবনসহ কয়েকটি অফিস ভবন। আগে সবার ধারণা ছিল, এটা দামি জিনিস; বাণিজ্যিকভাবে নির্মাণ করা যাবে না, কিন্তু আমি প্রমাণ করেছি, এটা দামি নয়। করে করে দেখিয়েছি, এটা করা যায়। এখন ডেভেলপাররাও করে থাকে।
আগে ডেভেলপাররা বলত, ‘পাগল হইছো? লস করব নাকি?’ তখন অঙ্ক করে দেখালাম, এটা কস্টলি হবে না। অঙ্ক করে দেখানোর পর বলে, ‘তাই নাকি? দেখি তো করি।’ আর এখন বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, আপনি যদি কোনো ডেভেলপারের কাছে কংক্রিটের ব্লক ছাড়া বাড়ির ডিজাইন জমা দেন, তাহলে বলবে, ‘ভাগেন। এসব দিয়ে চলবে না।’ ঢাকায় এখন ৯০ ভাগ বাড়ি কংক্রিট দিয়ে হয়। গাছের বাউন্ডারি দেয়াল, প্রচুর গাছগাছালি, বাড়ির সামনে পুকুর ইত্যাদি।
নিউজ বাংলা: কংক্রিট তাহলে আগামী দিনে হতে যাচ্ছে প্রধান উপকরণে?
রফিক আজম: উপায় নাই। উপায় নাই। বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। দামে কম। কিন্তু হেভি পোক্ত। ছোটখাটো ভূমিকম্পে কিছুতেই পড়বে না। এই একটা ম্যাটারিয়েল দামে কম। বিদেশে তৈরি অন্য ম্যাটারিয়েল অনেক দামি।
নিউজবাংলা: কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারের শুরুর কাহিনিটা...
রফিক আজম: আমার ডিজাইন করার পর খুব জনপ্রিয় হয় বিষয়টি। এরপর সবাই ফলো করতে থাকে। বাংলাদেশের যত ইয়াং আর্কিটেক্ট, আমার নাম বললেই বুঝবেন, তারা আমাকে কীভাবে দেখে।
নিউজ বাংলা: আপনি প্রথম কোথায় কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করেছিলেন?
রফিক আজম: খাজে দেওয়ান বলে পুরান ঢাকায় একটি জায়গা আছে। সেখানে ছোট্ট একটি বাড়িতে।
নিউজবাংলা: আপনার খাজে দেওয়ান লেনের বাড়ির ডিজাইন তো বিশ্বব্যাপী আলোচিত।
রফিক আজম: ১৯৯৯ সালে ডিজাইন করেছিলাম। এটা এখন এমআইটি, হার্ভার্ডে পড়ানো হয়। খাজে দেওয়ানের বাড়িতে চার কাঠা জমির ওপর পাঁচ তলা একটি বিল্ডিং। ১৪টি পরিবার এতে বসবাস করে। ছোট্ট ছোট বাড়ি। বাড়িগুলোর আয়তন ৪০০ স্কয়ার ফুট থেকে সাড়ে ৬০০ স্কয়ার ফুট। ওটা কংক্রিট দিয়ে বানানো। এক্সপোসড কংক্রিট। আর কিছু ব্রিক।
কিছু ব্রিক দেয়া হয়েছে খরচ কমানোর জন্য। এ রকম বাড়ি বাংলাদেশে আগে আর হয়নি। কোনো প্লাস্টার নাই, রং নাই। বাড়ির ফ্রেম হচ্ছে কংক্রিট। কম খরচে স্ট্রং বাড়ি। বাড়ির ফ্রেম হবে কংক্রিটে। আর গ্যাপগুলো পূরণ করবে জানালা, ইট ইত্যাদি। দেয়ালে প্লাস্টার নাই, রং নাই। প্লাস্টার, রং উঠিয়ে দিয়ে প্রথম ডিজাইন করি খাজে দেওয়ান মহল্লায়। এটা একটা সিস্টেম। অর্গানাইজড সিস্টেম। আমার আগে কেউ করেনি; এখন সবাই করছে।
পুরান ঢাকার মানুষ তো গরিব। চিকন একটা গলির ভেতরে বাড়ি। এই যে কংক্রিটের বিম, যেটা বিল্ডিং ধরে রাখছে, তারপর কলাম আছে। তারপর ছাদ। কোনো রং নাই, প্লাস্টার নাই, ঢাকাঢাকি নাই। কংক্রিট ওপেন, ব্রিক ওপেন। এই ১৪টি বাড়িতে সবার একটি করে বাগান আছে। সেটা সাড়ে ৪০০ স্কয়ার ফুটের বাড়ি হোক, আর হোক সাড়ে ৬০০ স্কয়ার ফুটের। সততার সঙ্গে বাড়ির ভেতরে যা, বাইরেও তা। কোনো কিছু প্লাস্টার করে ঢাকি নাই। টাইলস লাগাই নাই। কোনো কিছু হাইড করি নাই। কম খরচে। এই আইডিয়াটা আমি অস্ট্রেলিয়ায়ও করেছি।
নিউজবাংলা: বহুতল ভবনের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে বাগান থাকার আইডিয়া?
রফিক আজম: হ্যাঁ। প্রতি বাড়িতে বাগান থাকবে। এই আইডিয়াটাও আমাদের দেশে নতুন। উঁচা বিল্ডিং বানাও। আমাকে দশ তলায় পাঠাতে চান, ঠিক আছে, রাজি আছি। কিন্তু আমাকে একা পাঠাবেন না। তাহলে আমি, আমার পরিবার, বাচ্চারা মারা যাব। ওখানে একা গেলে আমার মাটি কোথায়? গাছ কোথায়? পানি কোথায়? আকাশ কোথায়? আমাকে ১০০ তলায় পাঠিয়ে দেন, আমি যাব। কিন্তু আমি মাটি চাই, গাছ চাই, ফুল চাই, ফল চাই, পাখি চাই। সব দিতে হবে। এটা একটা ফিলোসফি।
হ্যাঁ, উঁচা বিল্ডিং বানাবেন। কিন্তু মাটি দিতে হবে, পানি দিতে হবে, গাছ দিতে হবে, বাগান দিতে হবে। এটা একটা নতুন আইডিয়া। বাংলাদেশে তো অবশ্যই। আমি যখন শুরু করছিলাম, তখন পৃথিবীতেই নতুন ধরনের এই বিষয়টা তৈরি হচ্ছিল।
ধানমন্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের বিপরীত দিকে তিন তলার ওপর একটা বাড়ি করেছি। নাম ‘বৃষ্টিঘর’। বৃষ্টি হলে এখানে পানি জমে। এটাই সৌন্দর্য।
লিভিংরুম থেকে বের হয়ে এখানে পানিতে পা ডুবিয়ে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। আমেরিকায় লিভিংরুমে বসে বসে টিভি দেখে। আমাদের দেশে তা হবে কেন? আমাদের দেশে লিভিংরুমে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে গল্প করবে। এই যে দেখেন, লিভিংরুম থেকে বের হলেই বৃষ্টিঘর।
তখন পৃথিবীও এ রকমভাবে চিন্তা করছে না। খুব অল্প কিছু মানুষ বিষয়টি নিয়ে তখন ভাবছিল। এ জন্য পৃথিবীতে আমাকে এত অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে।
এক ক্লায়েন্ট বললেন, পাঁচ তলার ওপর সুইমিংপুল বানাতে। আমি বললাম, বাঙালির কিসের সুইমিং পুল? বাঙালির সুইমিং পুল দরকার নাই। আমাদের দরকার পন্ড। সুইমিং পন্ড। পুকুরে নেমে বাঙালিরা গোসল করে। আমি পাঁচ তলার ওপর পন্ড বানাব। আমাকে তখন জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘পন্ড মানে কী? সুইমিং পন্ড ও সুইমিংপুলের মধ্যে পার্থক্য কী?’
বললাম, পুকুরে নামার জন্য ঘাট থাকে। পুকুরপাড়ে জংলা থাকে। গুলশানের বাড়িটিতে ঘাটলা, জংলা নিয়ে পাঁচ তলায় পুকুর হলো। এখানে সুইমিং পুলের মতো মেশিনে পানি ট্রিটমেন্ট হয়। কিন্তু চেহারাটা দেখেন, আমাদের দেশের পুকুরের মতো। ঘাট আছে, জংলা আছে। পুকুরের পানিতে ভাসছে নৌকা। নীল রঙের সুইমিং পুলের ধারণাটি ইউরোপীয়। আমি বাঙালি। সুইমিংপুল বানাব না। আমি সুইমিং পন্ড বানাব।
এটা হচ্ছে গোস্বা নিবারণী ঘর। আমাদের দেশে আগে ছিল। পুকুরের পাড়ে একটি ঘর থাকত। রাগ হলে সেখানে গিয়ে বসে থাকত। স্বামী বা স্ত্রী তখন গিয়ে অনুনয় করত, ‘খেয়ে যাও। রাগ কোরো না।’ অ্যাংগারটা বের করে দিতে এটা ছিল সামাজিক উদ্যোগ। সেই সামাজিক উদ্যোগ কই গেল? এখন চড়থাপ্পড় মেরে দেয়, বিচ্ছেদ হচ্ছে। এমনকি খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। এর কারণ হচ্ছে অ্যাংগার বের করে দেয়ার জায়গা নেই। তাই বাড়িগুলোতে আমি গোস্বা ঘর বা গোস্বা নিবারণ ঘর রাখা শুরু করি।
আমি এসব পাগলামি চিন্তা করি, করতে থাকি। অনেকেই আবার পছন্দ করেন। অ্যাংগার রিডাকশন রুম মানে এখানে বিউটিফুল মিউজিক বাজতে পারে, বিউটিফুল ভিউ পাচ্ছেন, পাশে কাঠ গোলাপের গাছ, প্রিয় আরও গাছ। পাখি বসে আছে। ফুলের সুগন্ধ আসছে। কিছুক্ষণ বসলেন, অবশ্যই আস্তে আস্তে আপনি আরও ভালো মানুষ হয়ে উঠবেন।
এই ইনগ্রেডিয়েন্ট না থাকলে বাসা হলো? বাসায় ফিরে কি শুধু ঘুমাবেন আর চলে যাবেন? সারা দিন খেটে যখন আপনি বাসায় ফেরেন, তখন জিব বের হয়ে যায়। বাসা কি শুধু ঘুমানোর স্থান? বাসায় এসে শুয়ে পড়লেন। সকালে উঠে দেখলেন, গাছ দেখা যাচ্ছে; পাখি কিচিরমিচির করছে। এ পরিবেশে নাশতা করলেন। আপনি আবার শক্তি নিয়ে সারা দিনের যুদ্ধ করতে যাত্রা শুরু করলেন। বাসা যদি আপনাকে আরও টায়ার্ড করে দেয়, তাহলে সকালে আপনি অর্ধেক টায়ার্ড হয়ে থাকবেন। সারা দিন কাজ করবেন কীভাবে? আপনাকে রিভাইটালাইজ করা, রিঅ্যানার্জাইজ করা বাসার কাজ। সেটা হতে পারে বড়লোকের বাসা, হতে পারে খাজে দেওয়ান লেনের ৪০০ স্কয়ার ফুটের বাসা। আমার আইডিয়ার কোনো পার্থক্য নেই।
ধানমন্ডির বাসাটা ৩০ হাজার স্কয়ার ফুটের। আর খাজে দেওয়ান লেনের ৪০০ স্কয়ার ফুটের বাসা। দুজনই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি ক্লাসলেস। আমার কাছে কোনো ক্লাস নেই। যিনি আসছেন, তিনি বড়লোক হোন, আর গরিব লোক হোন, তার বাসাটি হবে পূর্ণাঙ্গ।
একটি বাড়ির নাম দিয়েছিলাম ‘স্মল ইয়েট অ্যাবানডেন্ট’। ছোট্ট কিন্তু অসীম। ছোট্ট কখনো অসীম হয়? কিন্তু আমি ‘ছোট্ট অসীম’ নাম দিয়েছি। আমরা শুনে থাকি, ‘ভাই, আমার একটি ছোট্ট আশা আছে। ছোট একটি বাসা থাকবে। ছোট্ট একটি বারান্দা থাকবে, ছোট্ট একটু উঠান থাকবে। একটু গাছ লাগাব। আমার রুমের পাশে পড়ার একটু জায়গা থাকবে। ছোট্ট একটি বাগান থাকবে।’
বলতে বলতে কিন্তু দেখবেন, তার আশা বিরাট। ছোট্ট বাসা মানে কি ছোট্ট আশা? বাসা ছোট্ট হলেও তার আশা কিন্তু অনেক বড়। ছোট বাসা কিন্তু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে দেখে। সে এটা এনজয় করে। গাছ দেখে, বাগান দেখে। নিজের বাগান, এমনকি অন্যের বাগান। দূরের মাঠও দেখে। আকাশের তারা। কাজ করার সময় আর্কিটেক্টকে সব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
আচ্ছা, উনার বাসা ছোট। ওখানে দূরে একটি মাঠ দেখা যাচ্ছে। ওদিকে একটি গাছ দেখা যাচ্ছে। আচ্ছা, তাহলে এদিকে একটি জানালা দেই। ও, ছোট্ট বাসা থেকে ওটা দেখে বলছে, ‘ওয়াও!’ পৃথিবীকে যদি কানেক্ট করতে পারেন, প্রকৃতিকে যদি কানেক্ট করতে পারেন, তাহলে আশাটা অনেক বড় হয়ে যায়। লালন বলেছেন, যা দেহে নাই, তা দেহের বাইরেও নাই। তার মানে পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আপনার দেহে আছে।
নিউজবাংলা: ‘যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তা আছে দেহভাণ্ডে।’
রফিক আজম: কী করে সম্ভব? আপনার এতটুকু দেহ, এর মধ্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আসে কী করে? তার মানে স্কেল ভুল করা যাবে না। ছোট একটি বাসা, তার মানে এই নয়, এর মধ্যে কিছু নাই। আমি লালনকে নিয়ে কাজ করেছি। ওই কাজটি ইউরোপ-আমেরিকায় বহুল প্রশংসিত হয়েছে। গুলশানের একটি বাড়ি, বড়লোকের একটি বাড়ি। লালনের ভাষায় করা এটি। নাম ‘আনফোল্ডিং নাথিংনেস’।
আপনি তখন উন্মুক্ত করতে থাকবেন সবকিছু, তখন আপনি শূন্যতাকে উন্মুক্ত করবেন। শূন্যতাই উন্মুক্ততা।
লালনের মতে, দেহে দুটি পার্ট আছে। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।’ তার মানে উনি দেহকে একটি খাঁচা বলে বিবেচনা করছেন।
‘বাড়ির কাছে আরশিনগর।’ এগুলো কী? খাঁচা হচ্ছে বডি। আর চিন্তাগুলো হচ্ছে অচিন পাখি। ‘ধরতে পারলে মনবেড়ি দিতাম তার পায়।’ অর্থাৎ তাকে ধরতে পারা যায় না। চিন্তা আসে আর যায়। আপনার দেহের মধ্যে আসে, আর যায়। আর আসা-যাওয়ার খেলাই জীবন।
যেদিন পাখি গেল, আর এলো না, সেদিন আপনি ডেড। আপনি শেষ। আমি ভাবলাম, আচ্ছা আমি যদি একটি বাড়ি বানাই খাঁচার মতো। খাঁচা বানালাম। খাঁচার মধ্যে কী আসবে-যাবে? রোদ আসবে, চলে যাবে। বৃষ্টি আসবে, চলে যাবে। বাতাস আসবে, চলে যাবে। ফুলের সুগন্ধ আসবে-চলে যাবে। আমি কী করতে পারি?
আমি লালন যেভাবে বলেছেন, বাতচিত করা। আপনি বাতচিত করবেন, নেগোশিয়েট করবেন। ধারণ করবেন। পাত্র হিসাবে ধারণ করবেন ভালো ভালো জিনিসগুলো। তখন আপনি আদমি হবেন। মানুষ হবেন।
আপনি যদি প্রকৃতির ভালো ভালো জিনিসগুলো গ্রহণ করেন, সূর্যের আলো, বাতাস, সুগন্ধকে ধারণ করতে পারেন, তাহলে কী হবে? আদমি হবে, আর্কিটেকচার হবে। এই জন্যই দেখেন, বাড়ির মাঝখানে খোলা উঠান, ওই যে পুকুর। পুকুরে নৌকা। ওই যে দেখেন তিন তলায় ধানক্ষেত। সূর্যের আলো আসবে, আবার চলে যাবে। পূর্ব দিকে কামিনীগাছ; পূর্বের বাতাস সুগন্ধসহ বাসায় ঢোকে। ওই যে দেখেন পুকুরপাড়ে হিজলগাছ। চিচিঙ্গা ঝুলছে। জায়গাটা একটা জঙ্গলের মতো।
ওই জায়গাটি পাখিদের জন্য। পানি পার হয়ে যেতে হয়। পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছে। কিছু প্রজাপতি আসা-যাওয়া করে। কিছু পাখি বাসা বেঁধেছে। এই যে বাতচিত করা প্রকৃতির সঙ্গে, রোদের সঙ্গে, বাতাসের সঙ্গে, পানির সঙ্গে, বৃষ্টির সঙ্গে, ফুলের সুগন্ধের সঙ্গে। এটাই জীবন। এটাই গ্রিন আর্কিটেকচার। এটাই লালনের দর্শন।
বিদেশে দার্শনিকদের নিয়ে কাজ হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের দার্শনিকদের নিয়ে কাজ হয়নি। যখন বিদেশে বক্তৃতা দিতে যেতাম, খুব রাগ হতো আমার। তখন বলতাম, আমিও আমাদের দেশের দার্শনিককে নিয়ে কাজ করব। আমি একবার লেকচারে বলেছিলাম, রুমির কবিতার প্রসঙ্গ।
রুমি বলেছিলেন, ‘আলো সন্ধ্যায় যখন গন্তব্যে চলে যায়, সে কিন্তু তার কাছ থেকে কিছুই নিয়ে যায় না, যাকে সে আলোকিত করেছিল।’ না, আমি মনে করি, রুমি ভুল বলেছিলেন। সন্ধ্যায় যখন সে এই বাসা ছুঁয়ে চলে যায়, তখন সে বলে, ‘আমি একটি সুন্দর জায়গা ছুঁয়ে এসেছি। আমার আনন্দ।’ এ কথা বলতে সাহস লাগে। আমি কাজের গভীরে প্রবেশ করে আনন্দ নিতে থাকি। মানুষকে আনন্দ দিতে থাকি।
নিউজবাংলা: বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন।
রফিক আজম: অনেক ভালো। আগের তুলনায় খুব ভালো। আমরা যখন শুরু করেছি, তখন আর্কিটেক্টদের তেমন চিনত না। আমরা কাজ পেতাম না। কাজ দিলে টাকা দিত না। একটুখানি টাকা দিতে যেন দয়া করত। ওই জায়গা থেকে আমরা ভয় পেতাম। আমরা পড়াশোনা করলাম কোন দুঃখে? এর চেয়ে ডাক্তার হতাম, ল’ইয়ার হতাম বা অন্য পেশায় যেতাম। তখন খুব কষ্ট হত। কিন্তু ধীরে ধীরে মনোযোগ দিয়ে যখন কাজ করি, কয়েকজন আর্কিটেক্ট বিশেষত মুস্তাফা খালিদ পলাশ একজন আছেন, আপনি তার নাম শুনেছেন কি না, নির্ঝরকেও বলা যায় কিছুটা। ফিল্মও বানায় সে। তারও কিছুটা অবদান আছে।
উত্তম কুমার সাহা বলে একজন আছেন। এ রকম অল্প কয়েকজন আর্কিটেক্ট কষ্ট করতে করতে মানুষজনের কাছে ইম্পরট্যান্ট হয়ে উঠল। ডেভেলপাররা আমাদের এসে ধরল। আমরাও তাদের সে রকম বিল্ডিং দিলাম। গাছগাছালিসহ কংক্রিটের বিল্ডিং। তাদের ব্যবসা বাড়ল। আর আমাদেরও পজিশন বাড়ল।
এখন তো কিছু আর্কিটেক্টকে বলা হয় সেলিব্রেটি, স্টার আর্কিটেক্ট। এখন তো আমরা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেতে শুরু করেছি। বাংলাদেশের স্থাপত্য ইন্টারন্যাশনালি ইম্পরট্যান্ট হয়ে পড়েছে।
গত দুই বছর ধরে ইউরোপে একটি এক্সিবিশন ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘বেঙ্গল স্টিম’ নামে। বাংলাদেশের ২৯ জন আর্কিটেক্ট নিয়ে ইউরোপীয়রা নিজেরা আয়োজন করেছে। এটা আমেরিকায় যাবে। বাংলাদেশেও একসময় আসবে।
তো ইউরোপের কী এমন দুঃখ হলো যে, তারা বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পকে এমন মর্যাদা দিচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের আর্কিটেক্টরা প্রমাণ করেছে তারা মারাত্মক লেভেলে কাজ করে। আমি প্রথম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমাকে নিয়ে প্রথম ইন্টারন্যাশনালি বই বেরিয়েছে। তবে আমি প্রথম বলে আমি একা না। আমি শুরু করেছি। অনেক মানুষ এসে গেছে।
এখন ভয়ের জায়গা হচ্ছে, ইয়াং জেনারেশন এদিক-ওদিক দেখে কপি করে ফেলে। এই যে গভীরতা, আমি লালন নিয়ে কথা বলছি, আমি হাসন রাজা নিয়ে কাজ করেছি। বাংলাদেশের পানি, বাংলাদেশের জলবায়ু, বাংলাদেশ কোথা থেকে পানি পায়, কখন সূর্য কোথায় থাকে, এই যে জ্ঞানের বিবেচনায় কাজ করি, সেইভাবে স্কুলেও পড়ায় না। তারা চর্চাও করে না। কপি করলে আপনি কতটুকু যেতে পারবেন?
একটা দুইটা ভালো হতে পারে। সব তো ভালো হবে না। আপনি ভুল করবেন। আপনাকে গাছ চিনতে হবে। পাখি চিনতে হবে। ম্যাটেরিয়েল বুঝতে হবে। গ্রিন জিনিসটা বুঝতে হবে। ইকোনমি বুঝতে হবে। আমাদের দেশে পড়াশোনা তেমন হচ্ছে না। পড়াশোনায় গভীরতা নেই। অনেক গভীরতায় পড়ানো হয় না। ফলে ওরা শিখতে পারে না। পড়ে শেখার যে কষ্ট, সেটাও করতে চায় না অনেক সময়।
আমি তরুণদের বলব, তাদের খাটতে হবে। দেয়ার ইজ নো রয়্যাল ওয়ে ফর লার্নিং। ইয়াং জেনারেশন যদি পরিশ্রম না করে, আমাদের চেয়ে বেশি এগিয়ে না যায়, তাহলে দেশ কীভাবে আগাবে? আমার পর্যন্ত থাকলে হবে? আমরা তো এক জায়গা পর্যন্ত আসছি। আমরা তো এখন পুরান হয়ে যাচ্ছি। এ জন্য আমি মনে করি, ওদের আরও অ্যাগ্রেসিভ হতে হবে। আরও ডেডিকেডেট হতে হবে। সারা দুনিয়াতে আরও নজর রাখতে হবে। রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে।
আজকাল ক্যাপিটালিস্টরা গ্লোবালাইজেশনের কথা বলে। তারা কি গ্লোবালাইজ করেছে? প্রেম, ভালোবাসা, সমতা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ইত্যাদি তারা গ্লোবালাইজ করেছে? তারা করেছে অস্ত্র, যুদ্ধ, ধ্বংস। এগুলো যদি তরুণ প্রজন্ম না বোঝে…। তারা করেছে ব্যবসার জন্য। অস্ত্র বিক্রির জন্য, তাদের পণ্য বিক্রির জন্য। এগুলো কি আমরা মেনে নেব? আমরা যদি বোকা হই, তাহলে কি বুঝব এগুলো?
আমাকে রেসপন্ড করতে হবে জ্ঞানের ভিত্তিতে। আমরা যদি ওদের কথা শুনে গ্রিন আর্কিটেকচার বলতে এসি লাগাই, বলবে গ্রিন এসি। এসি তো এসিই। এখানে আবার গ্রিন কী? এমন ডিজাইন করতে হবে, যেখানে এসি লাগবে অতি নগণ্য। ফলে আমার খরচ কম হবে, প্রকৃতিকে ব্যবহার করব এবং ইমিউন থাকব।
প্রকৃতির সঙ্গে থেকে থেকে ইমিউনড হব। ভিটামিন ডি পাব। আমি কালেভদ্রে খুব যখন বাজে গরম, এক মাস তখন এসি চালালাম। ওরা শুরুই করে এসি দিয়ে।
‘কাচ লাগাও। মোটা মোটা কাচ লাগাও’। কেন কাচ লাগাব? কাচ লাগালে আমাকে বুঝতে হবে, কাচে যদি রোদ না পড়ে, কাচের ওপর যদি আমি একটা শেডিং দিই, তাহলে ভাদ্র মাসে যখন কঠিন গরম, সূর্যটা হেলে গেছে, হেলানো সূর্যটা কাচে পড়ে না। কারণ একটা হেডের মতো মাথালের মতো দিয়ে দিয়েছি, যার ছায়ায় থাকে। তাহলে আমার আর গরম লাগবে না। শীতকালে সূর্যটা যখন আরেকটু হেলে যায়, তখন যদি শেডটা বড় হয়, তখন রোদ আটকে গেলে রুম ঠান্ডা থাকবে। তাহলে রোদটাকে অ্যালাও করতে হবে।
কৃষকের মাথালের একটা মাপ আছে। মাপ হচ্ছে গরমকালে সূর্যটা যখন মাথার ওপরে থাকবে। তখন পুরো শরীর ছায়াতে থাকবে। যেই শীতকাল এসে যায়, তখন মাথালের সাইড দিয়ে রোদ তার শরীরে পড়ে। এটা ম্যাথমেটিকস।
চট্টগ্রামে একটি বাড়িতে আমি মাথালের ব্যবহার করেছি। অ্যাসথেটিক হচ্ছে ম্যাথমেটিকস। আমি গণিত খুব পছন্দ করি। গণিতে যারা সিরিয়াস, তারা বলেন, গড হচ্ছে একটা সংখ্যা। আসলেই কিন্তু সংখ্যা। সম্প্রতি হলিউডে একটা ফিল্ম হয়েছে। ৩১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণকারী একজন ভারতীয় গণিতবিদকে নিয়ে; পড়াতেন কেমব্রিজে।
নিউজবাংলা: রামানুজন?
রফিক আজম: হ্যাঁ, রামানুজন। তাকে নিয়ে নির্মাণ হয়েছে মুভিদ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি। আমি মুভিটি দেখেছি।
আবার কংক্রিটের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমি এটার আবিষ্কারক বলে দাবি করি না। পৃথিবীতে এর আগে অনেক হয়েছে। গ্রেট আর্কিটেক্টরা এর আগেও করেছেন।
আমাদের দেশে চিন্তাও করত না। দু-একটা হয়েছিল অফিস। কিন্তু বাসাবাড়িতেও এটা করা যায়। ইট লাগে, শক্তিশালী জিনিস, দেখতে খুব সুন্দর লাগে। আমাদের দেশে মাটির বাড়ি ছিল গ্রে কালারের। আমি ও রকম একটা গন্ধ পাই। আমি দাবি করছি না, মাটির বাড়ি বানাচ্ছি। কিন্তু ও রকম একটা গন্ধ পাই। ছাইরঙা লেপা বাড়ি, ও রকম একটা ছাঁচ পাই। ওটা নিজেই একটি কবিতার মতো।
আমার সৌন্দর্য পাবেন ডিটেইলসগুলোতে। প্রকৃতি, পানি, কংক্রিটকে আমি এক করে ফেলেছি। আজ থেকে ১৫ বছর আগে কেউ চিন্তা করত? এখন অনেকেই করেন। আমার চেয়ে বেশিও কেউ কেউ করতে পারেন।
আমরা তো এখন অসহায়। কাজ পাব, খেতে পাব, নাকি দুনিয়ার সাথে কমপিট করে দেখাব, আমরা কম না? আমার এমনও দিন গেছে, ইউরোপের বার্লিনের রাস্তায় হাঁটছি, আর কাঁদছি। আমরা তো কিছু করতে পারব না। ওরা এত কিছু পারে, জানে। আমাদের না আছে টেকনোলজি, না আছে প্রজেক্ট। প্রজেক্ট দেখাতে হবে। সিভিল প্রজেক্ট।
মাঠ-ঘাট দেখাতে হবে। এই যে পাঠালাম প্যারিসে অ্যাওয়ার্ড পেয়ে গেল। বড়লোকের বাড়ি বানালে আর প্রাইজ দেয় না। এখন বলে, আর্কিটেকচার হ্যাজ চেইঞ্জড। মানুষের জন্য কী করেছে বলো। ১০-১২ বছর আগে পেয়েছি। এখন কিন্তু বড়লোকের বাড়ি করলে আর পাত্তা পাব না।
অনেক আর্কিটেক্ট আছে আমাদের চেয়ে ভালো আইডিয়া দিয়ে বসে থাকে। কত আর দিব? দিচ্ছি আর দিচ্ছি। এ জন্য আমি কাজের ধারা চেঞ্জ করে মানুষের জন্য কাজ করছি। ওল্ড ঢাকায় কাজ করছি। আমার কাজ হচ্ছে কবিতা তৈরি করা। আর্কিটেকচার দিয়ে কবিতা তৈরি করা। মানুষ যেন জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে পারে, শিখতে পারে, চিন্তা করতে পারে।
নিউজবাংলা: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলবেন?
রফিক আজম: আমি এখন পুরোপুরি শহরের কাজে নামছি। দেশ বললে তো পারব না। আমি ঢাকা শহর, বিশেষ করে পুরান ঢাকার কাজ যেভাবে শুরু করেছি, নদীর ধার, পুরোনো বাড়িঘর ইত্যাদি ঠিক করে, পুরান ঢাকায় ফরেস্ট এরিয়া বানানো যায় কি না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৮টি ওয়ার্ড পেয়েছে নতুন। ওয়ার্ড ১৮টি হলেও জায়গা কিন্তু আগের চেয়ে বেশি। ধ্বংস করার আগেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া দরকার।
নিউজবাংলা: এখন ঢাকার বিস্তৃত হবে মূলত পুব দিকে। ঢাকার একমাত্র পুব দিকেই এখনও প্রচুর উন্মুক্ত স্থান রয়েছে। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন আবাসিক প্রকল্প করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন।
রফিক আজম: ঢাকা শহরের জনঘনত্ব বেশি হয়ে গেছে। আপনি ইচ্ছে করলেই পুরান ঢাকা থেকে মানুষকে বের করে দিয়ে করতে পারবেন না। এখনই সুযোগ আছে পুব দিকে শহর ফ্লারিশ করা। কী পরিমাণ গ্রিন হবে, কী গাছ হবে, ট্রেনের ব্যবস্থা করা যায় কি না, পেরিফেরাল রোড ব্যবহার করা যায় কি না, পানিকে পুরোপুরি ট্রান্সপোর্টের রোড হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না।
কোর ঢাকার লোককে ডিস্ট্রিবিউশন, ডিসেন্ট্রালাইজ করতে পারেন। কোর ঢাকার লোক প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৫০ হাজার হতে পারে। কোনো কোনো স্পটে ১ থেকে দেড় লাখও রয়েছে। গেন্ডারিয়ায় লক্ষাধিক লোক বাস করে। ভাবা যায় বিষয়টি?
অনেক শহর আছে, ৫ হাজার লোক বাস করে। পৃথিবীর সর্বাধিক ঘনবসতির শহরগুলোর মধ্যে মুম্বাইয়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৭ হাজার লোক বাস করে। ম্যানিলায় ৪০ হাজার হতে পারে। ওদের অবস্থাও টাইট। আমরা ওই জায়গায় যাব কেন? আমাদের লোকজনদের ডিস্ট্রিবিউশন করার তো এখনও সুযোগ আছে। তারা যদি চলে যায়, ট্রেনে করে অফিসে আসবে অথবা ওখানেই অফিস-টপিস তৈরি করা যেতে পারে। তখন ঢাকার লোড কমতে থাকবে। পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে।
এখন যে পরিস্থিতি, এ সুযোগ কি সবসময় পাওয়া যাবে? এখন যে এত জমি পাওয়া গেল, সবসময় কি তা পাওয়া যাবে? কোথায় অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি তথা ফরেস্ট হবে, কোথায় সেন্ট্রাল ফরেস্ট হবে, ভেঙে ভেঙে কোথায় ফরেস্ট হবে, কোথায় ট্রেন হবে, পেরিফেরাল রোড কোথায় হবে, এভাবে চিন্তা করলে ঢাকাকে দারুণভাবে ফিরিয়ে আনা যায়।
এটাকে আমি একটা অপরচুনিটি মনে করি। গ্রেট অপরচুনিটি। এইবার যদি ভুল করি, তাহলে আমাদের আর জায়গা নেই। ঢাকাকে চাইলে এখন ভালো করা যায়। ঢাকা কেন রাজনীতির রাজধানী হবে, কেন কালচারাল রাজধানী হবে, কেন বিজনেসের রাজধানী হবে? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাগ করা হয়েছে। পাকিস্তানের ইসলামাবাদ কিন্তু শুধু পাকিস্তানের রাজধানী কিংবা কুয়ালালামপুর কিন্তু মালয়েশিয়ার রাজধানী নয়, রাজধানী পুত্রজায়া।
কেন ঢাকার মধ্যে সব হবে? মিলিটারি, এয়ারফোর্স সব কেন ঢাকায় হতে হবে? ফ্যাক্টরিগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। এসব যদি সরিয়ে ফেলা যায়, ঢাকা হবে বাংলাদেশের কালচারাল রাজধানী অথবা বিজনেস ও কালাচারাল রাজধানী; পলিটিক্যাল নয়।
এভাবে ঢাকাকে ভালো করা যায়। সবাই মিলে বসলে আরও আইডিয়া আসবে। এটা একটা অপরচুনিটি। এটাকে কাজে লাগাতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে।
তিনি পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে আজ এ কথা বলেন।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পবিত্র আশুরা’র শোকাবহ এই দিনে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদতবরণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
তিনি বলেন, ইসলাম সত্য, ন্যায় এবং শান্তির ধর্ম। ইসলামের এই সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তাঁর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচরবৃন্দ বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অত্যাচারীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইসলামের বীর সৈনিকদের এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ একটি দিন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টিসহ নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দুটি রোজা রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
এই মহিমান্বিত দিনটির তাৎপর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সকলের প্রতি বেশি বেশি নেক আমল করার আহবান জানান। তিনি সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পবিত্র আশুরার এই দিনে তিনি মুসলিম উম্মার ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।
সাম্প্রতিক নিরাপত্তা অভিযানে ‘চরমপন্থি উগ্রবাদী’ আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমওএফএ) বলেছে, ‘সন্ত্রাস-সংক্রান্ত তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুরে তাৎক্ষণিকভাবে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিচয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চেয়েছে।’
বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গ্রেপ্তার বা আটককৃতদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনার হালনাগাদ তথ্যে বাংলাদেশ জানিয়েছে, বাকি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে বা তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশন) প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ সরকার ঘটনাপ্রবাহ ‘ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে এবং কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কাজ করে যাবে।
মালয়েশিয়ার সরকার শুক্রবার জানায়, মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি যে বাংলাদেশি চরমপন্থি গোষ্ঠী (জিএমআরবি) ভেঙে দিয়েছে, তা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জন্য তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগে লিপ্ত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৬ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ধারা ৬এ অনুযায়ী অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৬ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০১২ (এসওএসএমএ)-এর আওতায় তদন্ত ও বিচারের জন্য আটক রাখা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া ৩৬ বাংলাদেশির বিষয়ে দেশটি ইতোমধ্যে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, তারা এখন মালয়েশিয়ার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ৩৬ জন বাংলাদেশির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছি এবং এখন তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাই করবে, তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
‘যদি তারা জড়িত থাকে, তাহলে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে,’ বলেন উপদেষ্টা হোসেন। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনো কিছুটা ‘ফ্লুইড’ বা অস্থির।
এই ঘটনা ভবিষ্যতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মালয়েশিয়ান ভিসা ইস্যুতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো নেতিবাচক ঘটনা ভিসা ইস্যুতে প্রভাব ফেলতে পারে, এবং তারা একথা বলতে পারেন না যে এর কোনো প্রভাবই পড়বে না।
তবে তিনি বলেন, যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে প্রভাব কমানো সম্ভব।
মালয়েশিয়ার পুলিশ মহাপরিদর্শক তান শ্রী মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল বলেন, এই গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছ থেকে বার্ষিক সদস্যপদ ফি হিসেবে জনপ্রতি ৫০০ রিংগিত এবং আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী অন্যান্য স্বেচ্ছা অনুদান গ্রহণ করে তহবিল সংগ্রহ করত।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জন, যারা সবাই মালয়েশিয়ায় কারখানা, নির্মাণকাজ ও পেট্রোল পাম্পে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক।
তিনি বলেন, সংগৃহীত অর্থ ই-ওয়ালেট অ্যাপ এবং আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সেবার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হতো। গোষ্ঠীটি নতুন সদস্য নিয়োগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করত।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, পুলিশ এখনো তদন্ত করছে ঠিক কত টাকা আইএস নেটওয়ার্কে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, গোষ্ঠীটি সোশ্যাল মিডিয়া ও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে আইএস-এর প্রচারণা ছড়াত, ‘বাইআহ’ (আনুগত্যের শপথ) সম্পন্ন করত এবং গোপন ধর্মীয় ক্লাস ও সদস্য সভার মতো কার্যক্রম আয়োজন করত।
তিনি বলেন, ‘যারা অনলাইনে আনুগত্যের শপথ করত, তাদেরকে সেল নেতা বানানো হতো, যাতে তারা গোষ্ঠীর প্রভাব আরও বাড়াতে পারে। নতুন সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল ধাপে ধাপে—স্ক্রিনিং থেকে শুরু করে অভিজাত দলের গঠন পর্যন্ত।’
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই গোষ্ঠীতে কোনো মালয়েশিয়ান নাগরিকের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে এই গোষ্ঠী মালয়েশিয়ায় প্রায় এক বছর ধরে সক্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও গোষ্ঠীটি মালয়েশিয়ায় কোনো হামলার পরিকল্পনা করছিল না, তবে তারা দেশটিকে তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল। তদন্তে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারপোল সহায়তা করছে।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, মালয়েশিয়ান আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে আইএস মতাদর্শ ছড়াতে থাকা বাংলাদেশিদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথমে গোষ্ঠীটির কার্যক্রম শনাক্ত করা হয়।
সিলেটে নতুন করে একজনের করোনা ও একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে চলতি বছর ২৭ জনের করোনা ও ৩৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো।
আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে। এই বছর ৪৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জনের করোনা ধরা পড়েছে এবং দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সিলেট স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রেরিত ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে জুলাই মাসে পাঁচজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো। বর্তমানে ২৫০ শয্যার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চলতি বছর ৩৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১০ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় তিনজন, মৌলভীবাজার জেলায় ১১ জন এবং হবিগঞ্জ জেলায় ১৪ জন। তবে, ডেঙ্গুতে সিলেট অঞ্চলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ জুলাই মাসের শেষে কিংবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউসন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই মাসের শেষের দিকে কিংবা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে বলে আমরা প্রসিকিউসনের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করছি।’
এদিকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পলাতক আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের মুখোমুখী করতে ট্রাইব্যুনালে এরইমধ্যে আর্জি জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।
গত ১ জুলাই বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ক শুনানিতে বিচারের এই আর্জি জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ তুলে ধরেন। এসময় তিনি ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে সর্বত্র অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। পরিমাণে, সংখ্যায় এবং স্থানের ব্যপকতায় এই অপরাধ ছিল বিস্তৃত-ব্যাপক। আর এই অপরাধ ছিল সিস্টেমেটিক (পদ্ধতিগত)। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশ এসেছে এবং নির্দেশের চেইন অব কমান্ড অনুসারে বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুলিশ এবং অন্যান্য সহযোগী বাহিনী সব জায়গায় একই পদ্ধতিতে অপরাধ সংঘটন করেছে। এছাড়া সারা বাংলাদেশের সর্বত্র একই পদ্ধতিতে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং যে অপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে এবং যে অভিযোগগুলো আমরা দিয়েছি পুরোটাই ছিল বিস্তৃত এবং পদ্ধতিগত, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে প্রমাণ করে। ফলে আমাদের সবিনয় প্রার্থনা হচ্ছে, এই মামলায় যে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এনেছি, তার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারের মুখোমুখী করা হোক।’
চিফ প্রসিকিউটরের এই শুনানির পর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন দুই সপ্তাহ সময় চাইলে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য রয়েছে।
এসময় ট্র্যাইব্যুনালে হাজির ছিলেন এই মামলায় গ্রেফতারকৃত পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল- মামুন। তার পক্ষে ট্র্যাইব্যুনালে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। অভিযোগ গঠন বিষয়ক সেদিনের শুনানি ট্র্যাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।
গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আগামী সাতদিনের মধ্যে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দু’টি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় ট্র্যাইব্যুনাল ১ জুলাই অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে ধারাবাহিকতা ১ জুলাই শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউসন। এদিন প্রথম ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দু’টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
ভোলা জেলা শহরের কালিনাথ বাজারে ঢাকা থেকে আসা ভোলাগামী এস এ পরিবহনের পন্য বহনকারী একটি কাভার্ড ভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে আনা প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের ২০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ৮০ কেজি পলিথিন, ৫ হাজার ৮৮৯ পিস আতশবাজি ও ১৯ হাজার ৬০০ শলাকা বিদেশি সিগারেট জব্দ করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ভোলা বেইস।
শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে কোস্টগার্ড ভোলা বেইসের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর রশিদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় কোস্টগার্ডের ভোলা বেইসের সদস্যরা শহরের কালিনাথ রায়ের বাজারে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান চলাকালে ওই এলাকায় ঢাকা থেকে ভোলাগামী এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ডভ্যান তল্লাশি করে ৭ কোটি ৮ লাখ ২ হাজার ৩৬০ টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, পলিথিন, আতশবাজি ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে জব্দকৃত কারেন্ট জাল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিনষ্ট করা হয়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ পলিথিন ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শুল্ক ফাকি দিয়ে আনা সিগারেট বরিশাল কাস্টমস ও আতশবাজি ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ২৪ ঘণ্টা টহল জারি রেখেছে। যার মাধ্যমে কোস্টগার্ডের আওতাধীন উপকূলীয় এবং নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হয়েছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কতৃক শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা চোরাচালানবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরুতে কয়েকদিন ধরেই কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়।
৬ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ওই দিন অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সারা বাংলাদেশ অবরোধ করার পরিকল্পনা থেকেই সেদিন এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই দাবিতে এইদিন সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
২০২৪ সালের ৬ জুলাই আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় এক ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সেখান থেকে সরে যান তারা। এরপর শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।
৬ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি ছিল শুধুমাত্র বিক্ষোভ মিছিল। ৪ জুলাই কোটা সংক্রান্ত হাইকোর্টের শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ রায়ের ক্ষেত্রে আদালতের দীর্ঘসূত্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছিল। আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে তা অবজ্ঞার চোখে দেখা হচ্ছিল। এছাড়াও শাহবাগে অবরোধ চলাকালে গাড়িগুলো পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। তাতে আন্দোলনের প্রভাব প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হচ্ছিল না। তখন আন্দোলনকারীরা চিন্তা করেন আরেকটু বড় পরিসরে কিছু করতে হবে। এমন চিন্তা থেকে ‘বাংলা ব¬কেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যুক্ত হয়ে যান।
অবরোধ তুলে নিয়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আগামীকাল বিকাল তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার মনে করছে আমরা দুই-তিনদিন রাস্তা অবরোধ করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যাব। সরকারের এই ধারণা যে ভুল সেটি আমাদের প্রমাণ করে দিতে হবে।
আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি প্রয়োজনে আমরা হরতাল দিতে বাধ্য হব। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী যেখানে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কোটা থাকবে না, সেই কোটা এখন কেন ফিরে আসল এর জবাব আমরা চাই। শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতেই নয় তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটার বৈষম্য দূর করতে হবে।’
ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’
‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণার আগের রাতে কার্জন হলের হোয়াইট হাউসের সিঁড়িতে বসে আন্দোলনের সংগঠকরা বৈঠক করে ‘বাংলা ব্লকেড’ নাম চূড়ান্ত করেন। এই কর্মসূচি কীভাবে সফল করা যায়, কোন কোন পয়েন্টে কোন কোন প্রতিষ্ঠান থাকবে, কোন পয়েন্টে কোন হল থাকবে, তা নিয়েও সেখানে আলোচনা হয়। বৈঠক থেকে প্রতিটি হলের প্রতিনিধিদের দায়িত্বও ভাগ করা হয়।
ঢাকা ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে এবং বোরহানুদ্দীন কলেজের শিক্ষর্থীরা চানখাঁরপুলে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবে। এদিকে আন্দোলনকারীরা চিন্তা করেন যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে তাদের সবাইকে শাহবাগে নিয়ে আসার প্রয়োজন নেই।
ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমাগমও যথেষ্ট বড় হচ্ছিল।
ওইদিন বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের শ্যাডো ও মল চত্বর প্রদক্ষিণ করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে দিয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, টিএসসি ও বকশী বাজার হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশী ও আজিমপুর এলাকা ঘুরে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে বিক্ষোভ করেন।
এর আগেই আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে মূল মিছিল আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মূল মিছিলটি চারুকলা অনুষদের সামনে আসতেই জাদুঘরের সামনে অপেক্ষমান শিক্ষার্থীরা ৪টা ৩৭ মিনিটে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এরপর তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ৫০ মিনিট এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এর পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া ও চট্টগ্রামে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেন।
২০২৪ সালের ৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মোশাররফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
ওইদিন রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুই ঘণ্টা পর বিকেল পাঁচটায় শিক্ষার্থীরা তাঁতিবাজার মোড় ত্যাগ করে মিছিল নিয়ে জবি ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’—এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন।
এইদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন উপেক্ষা করে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। বিক্ষোভ চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
এদিকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
৬ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। অবরোধ চলাকালে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে অবরোধ চালিয়ে যান। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনসংলগ্ন বটতলা থেকে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো নগরীর সড়ক অবরোধ করেন। এইদিন বিকাল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনে এসে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে অবস্থান নেন। এর সাথে যুক্ত হন চট্টগ্রামের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টায় রংপুরের মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। দেড় ঘণ্টা অবরোধ শেষে দুপুর পৌনে ২টার দিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য