× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিনোদন
My job is to create poetry with architecture
google_news print-icon

‘আমার কাজ স্থাপত্য দিয়ে কবিতা নির্মাণ’

আমার-কাজ-স্থাপত্য-দিয়ে-কবিতা-নির্মাণ
ইসলামাবাদে বাংলাদেশের চ্যান্সেরি ভবনের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান স্থপতি রফিক আজম অ্যাকাডেমিক মহলে পরিচিত ‘গ্রিন আর্কিটেক্ট’ হিসেবে। প্রকৃতি ও স্থাপত্যের মেলবন্ধন তার কাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সম্প্রতি নিউজবাংলার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নেয়া হয় তার বারিধারার অফিসে। তিনি তার কাজ ও দর্শন, গ্রিন আর্কিটেকচারের ধারণা, ভবন নির্মাণের উপকরণ, ঢাকার দেয়াল সংস্কৃতি, বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্প, রাজধানীর নগরায়ণ নিয়ে কথা বলেছেন। নিউজবাংলার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তরুণ সরকার।  

রাজধানীর, বিশেষত পুরান ঢাকার পার্কগুলোর স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য বদলে যাচ্ছে। পার্কের দেয়াল উঠে যাচ্ছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা যে কেউ যেকোনো দিক দিয়ে যেকোনো সময় পার্কে প্রবেশ করতে পারবে, বের হতে পারবে।

এরই মধ্যে শহীদ মতিউর পার্ক, বাহাদুর শাহ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, ইসলামবাগ পার্ক, তাঁতীবাজার পার্ক, হাজী আবদুল আলীম মাঠসহ পুরান ঢাকার ৩০টি মাঠ ও পার্কের দেয়াল উঠিয়ে দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে।

ঢাকায় পার্কের দেয়াল উঠিয়ে দেয়ার ডিজাইন শুরু করেছিলেন স্থপতি রফিক আজম। ঢাকেশ্বরী অঞ্চলের হাজী আবদুল আলীম খেলার মাঠের ডিজাইনের জন্য তিনি গত জুন মাসে পেয়েছেন ডিএনএ প্যারিস ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড-২০২১।

বাংলাদেশের স্থপতিদের মধ্যে রফিকই সর্বাধিক আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। প্রাপ্ত অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে ইউরেশিয়ান অ্যাওয়ার্ড-২০২০, আর্ক এশিয়া গোল্ড মেডেল-২০১৭, ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড-২০১২, দ্য সাউথ এশিয়ান আর্কিটেক্ট অফ দি ইয়ার-২০১২, ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড-২০০৮, দি কেনেথ এফ. ব্রাউন এশিয়া প্যাসিফিক কালচার অ্যান্ড ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড-২০০৭, ইউএসএ অন্যতম।

স্থপতি রফিক আজমের কাজ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। ইতালীয় প্রকাশনা সংস্থা স্কিরা ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশ হয়েছে ‘রফিক আজম: আর্কিটেকচার ফর গ্রিন লিভিং’ শীর্ষক গ্রন্থ। ইউরোপে তাকে নিয়ে নির্মাণ হয়েছে চলচ্চিত্র।

স্থপতি রফিক আজমের কাজের মূল বৈশিষ্ট্য উন্মুক্ততা, সবুজসংলগ্নতা ও স্থানীয় জ্ঞানের প্রয়োগ। তিনি প্রতিটি বহুতল ভবনে রাখেন বাগান।

পাঁচ তলার ওপর সুইমিং পুল রাখেন না, রাখেন ‘সুইমিং পন্ড’। ভবনের তিন তলায় তিনি তৈরি করেন ‘বৃষ্টিঘর’, ‘গোস্বাঘর’। ভবনের ছাদে থাকে ধানক্ষেত।

তার ডিজাইন করা প্রতিটি ভবনের ভেতর ও বাইরে থাকে সবুজের উপস্থিতি। তার ডিজাইনের মূল লক্ষ্য প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস। অ্যাকাডেমিক মহলে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন ‘গ্রিন আর্কিটেক্ট’ হিসেবে।

‘আমার কাজ স্থাপত্য দিয়ে কবিতা নির্মাণ’
মেঘনা রেসিডেন্স গুলশান


সম্প্রতি নিউজবাংলার পক্ষ থেকে স্থপতি রফিক আজমের বারিধারার অফিসে তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এ সময় তার কাজ ও দর্শন, গ্রিন আর্কিটেকচারের ধারণা, ভবন নির্মাণের উপকরণ, ঢাকার দেয়াল সংস্কৃতি, বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্প, রাজধানীর নগরায়ণের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়।

নিউজবাংলা: আপনার কাজকে ‘আর্কিটেকচার ফর গ্রিন লিভিং’, ‘গ্রিন আর্কিটেকচার’ ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। কেন বলা হয়ে থাকে, একটু ব্যাখ্যা করবেন?

রফিক আজম: গ্রিন আর্কিটেকচার শব্দ আকারে অনেক ছড়িয়ে গেছে। গ্রিন আর্কিটেকচার কথাটার আসল সৌন্দর্য হচ্ছে আপনার এবং প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে বসবাস করা। আপনি সূর্যের আলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন। বাতাসকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন। পাখিকে বাঁচতে দেবেন, গাছকে বাঁচতে দেবেন। এর বেনিফিট আপনি পাবেন। অক্সিজেন তৈরি করবে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করবে। এভাবে সম্পূরক আমরা। মানুষ একা বাঁচতে পারে না। তাদের নিয়ে আপনি বাঁচবেন।

মেইনলি ব্যাপারটা হচ্ছে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেশি তৈরি হলে তো বিপদ। গাছ তা গ্রহণ করে নিচ্ছে। কার্বন রিডিউস হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে গ্রিন। আর আপনি এনার্জি কম খরচ করবেন। আপনি যে জ্বালানি খরচ করেন, এটা তৈরি করতে যে পরিমাণ ফুয়েল লাগে, সাপোর্ট লাগে, তাতে অনেক বেশি ট্যাক্সেশন করতে হয় পৃথিবীকে।

প্রকৃতির মধ্যে যে রকম জীবনযাপন, সে রকম করে বাঁচা। এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে। এয়ার কন্ডিশন একটি বড় সমস্যা। একটা গ্লাসের বিল্ডিং বানালেন। এটা গ্রিন হাউস ইফেক্ট করে। সূর্যের আলো হচ্ছে ওয়ানওয়ে ট্রাফিক। সূর্যের আলো যখন গ্লাসে ঢোকে আর বের হতে পারে না। শর্ট ওয়েব ও লং ওয়েবের একটা খেলা।

ধরুন একটা গাড়ি রোদে দাঁড়া করে রাখবেন। কত গরম হয়ে যায়; আগুন হয়ে যায়। বিল্ডিংও তাই হয়। এই গ্লাসের বিল্ডিং ঠান্ডা রাখার জন্য আপনি সারাক্ষণ এসি চালান। এনার্জি কনজাম্পশন বেড়ে যায়। এ জন্য পৃথিবীকে ট্যাক্সেশন করতে হয়। আপনি মাটি থেকে টেনে ফুয়েল বের করেন। এতে কার্বনকে ওপেন করা হয়। এগুলো বন্ধ করতে বলা হচ্ছে। কম করতে বলা হচ্ছে।

এখন বন্ধের উপায় কী, সেটা জানতে হবে। এটা নলেজের খেলা। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে আপনি সবসময় খাদ্য উৎপাদন করবেন। কার জন্য? নিজের জন্য, পাখির জন্য, কীটপতঙ্গের জন্য। আপনি একাই খাবেন? এ জন্য আপনি যে গাছ লাগাবেন, শুধু অক্সিজেন দেবে, তা নয়। সে ফুল দেবে। সে ফল দেবে। সে পাখিকে খাওয়াবে। আপনাকে ভিটামিন দেবে, আপনার বাচ্চাকে ভিটামিন দেবে। এইভাবে সম্পূরকভাবে বেঁচে থাকা। এটাকে বলে গ্রিন।

পানির ব্যবহার পৃথিবীর একটি বড় জিনিস। পৃথিবীতে পানি আছে দুই-তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে মাত্র শতকরা এক ভাগ বিশুদ্ধ সুপেয় পানি। সৃষ্টিকর্তা এক ভাগ পানি মাটির নিচে পাঠান। এই পানিকে আমরা বের করে ব্যবহার করি। মাটির নিচ থেকে, বৃষ্টি থেকে যে সুপেয় পানি আসে, তা মোট পানির এক ভাগ। এই জন্য বলা হয়, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি লাগে, তবে পানির জন্যই লাগবে।

এই সমস্ত জিনিস নিয়ে যারা কাজ করেন, এই প্যাসিভ এনার্জি নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের গ্রিন বলা হয়ে থাকে। আমি যেহেতু প্যাসিভ এনার্জি নিয়ে কাজ করি, খুব চেষ্টা করি; সবসময় পেরে উঠি না। সেই জন্য কেউ কেউ আমার কাজ গ্রিন আর্কিটেকচার বলে থাকেন। এই হচ্ছে গ্রিন আর্কিটেকচারের মেইন ধারণা।

নিউজবাংলা: আপনার ডিজাইনে তিনটি বিষয় প্রাধান্য পায়। আলো, বাতাস ও পানি। বিষয় তিনটি..

রফিক আজম: সৃষ্টিকর্তা কিন্তু কোরআনে এক জায়গায় বলেছেন, তোমরা কি দেখো না, সূর্য আমি এক জায়গা থেকে তুলি না। সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে। এটা সাধারণ জ্ঞান। কিন্তু ক্রিটিক্যালি যদি দেখেন, গভীরভাবে যদি দেখেন, সূর্য কিন্তু মুভিং। গরমকালে-বর্ষাকালে সে উঠবে ঠিক পূর্ব-উত্তর দিক থেকে। উত্তর দিকে চলে যায়। উত্তর-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিমে গিয়ে অস্ত যায়। এই সূর্যটা সরতে সরতে মার্চ মাসে পুবে চলে আসে। মার্চ মাসে দিন-রাত সমান থাকে যেদিন, তখন সূর্য পুব দিকে টু দি পয়েন্টে উদিত হয়। শীতকাল এলে সে চলে যায় দক্ষিণে। উদিত হয় দক্ষিণ-পুবে। অস্ত যায় দক্ষিণ-পশ্চিমে। তখন কিন্তু একটা হেলানো সূর্য। অনেকখানি হেলে যায়। ৩৭ ডিগ্রি হেলে যায়। এ জন্য আমাদের গ্রামে একটা কথা প্রচলিত আছে:

‘দক্ষিণ দুয়ারি স্বর্গবাস

উত্তর দুয়ারি সর্বনাশ

পুবে হাঁস

পশ্চিমে বাঁশ।’

কথাটা প্রচলিত হয়ে আসছে। খনার বচন। জ্ঞানী লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে চর্চা করে এটা দাঁড় করিয়েছেন। এটাই হচ্ছে আমাদের দেশের শক্তি। এটা আমাদের দেশে বসবাস করার সৌন্দর্য।

দক্ষিণ দুয়ারি স্বর্গবাস কেন? গরমকালে সূর্য দক্ষিণ দিকে থাকে না। থাকে মাথার ওপর। সকালে ও সন্ধ্যায় থাকে উত্তরে। কখনো হেলে যায় না দক্ষিণে। ফলে গরমকালে দক্ষিণে সূর্য আপনি পাচ্ছেন না। আবার গরমকালে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে, সমুদ্র থেকে হাওয়া আসে। আর বর্ষা যখন আসে, তখন বাতাস আসে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে। এটা বৈশ্বিক বায়ু (গ্লোবাল উইন্ড)।

আগে যেটা বললাম, সেটা দেশজ বাতাস (লোকাল উইন্ড)। দুটো আসে দক্ষিণ দিক থেকে। দক্ষিণ খোলা রাখলে গরমকালে বাতাস পাবেন। যেই শীতকাল আসল, সূর্য চলে যাবে দক্ষিণে। সূর্যের হেলান দেয়া আলো দক্ষিণ দিকে চলে আসবে আপনার ঘরে। আর হাওয়া।

শীতকালে হাওয়া আসে উত্তর দিক থেকে। হিমালয়ের ঠান্ডা বাতাস। হাওয়া নাই, কিন্তু রোদ আছে। বাসা উষ্ণ। এটা সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেশন। এটা যদি অস্ট্রেলিয়ায় করেন, তাহলে আপনি মারা যাবেন। ওরা থাকে সাউথ হেমিস্ফিয়ারে। ওর নর্থই সৌন্দর্য। আমরা নর্থ হেমিস্ফিয়ারে। আর আমাদের সৌন্দর্য দক্ষিণ।

‘আমার কাজ স্থাপত্য দিয়ে কবিতা নির্মাণ’
স্থপতি রফিক আজম


এগুলো হচ্ছে লোকাল জ্ঞান। যে এলাকায় বাস করেন, সেই এলাকার জ্ঞান। স্থানীয় জ্ঞানের ভিত্তিতে বাড়ি নির্মিত হলে অনেক বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত হবে, প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করতে পারবেন। আপনি কোন গাছ লাগাচ্ছেন, তা জানতে হবে।

গাছ সম্পর্কে, প্রকৃতি সম্পর্কে, পানি সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি যদি নিমগাছ লাগান, নিম এমন একটা গাছ, সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন দেয়; সবচেয়ে লম্বা সময় অক্সিজেন দেয়। আগে বাড়ির দক্ষিণে নিমগাছ লাগাত বাঙালিরা। কিন্তু নিমগাছ কোথায় গেল? এখন রাস্তায় রাস্তায় মেহগনি গাছ লাগায়। কেন লাগায়? কারণ জ্ঞানের অভাব।

আপনি জ্ঞান দিয়ে দেখবেন, আপনার যা দরকার, প্রকৃতি সব আপনাকে দিচ্ছে। কিন্তু জ্ঞানের অভাবে আপনি ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে প্রকৃতি আপনার বিরুদ্ধে কাজ করছে। আপনি প্রকৃতিকে ব্যবহার করতে জানেন না।

কম্পিউটার আপনি ব্যবহার করতে জানেন না, কম্পিউটার নিয়ে কী করবেন? ইউজলেস। প্রকৃতি আমাদের সবকিছু দিচ্ছে। কিন্তু আমরা ব্যবহার করতে জানি না। এ কারণে আমরা খুব বিপদে আছি। এত কম যে মিষ্টি পানি, তার একটা সিংহভাগ আমরা পাই। সে জন্যই আমরা সবচেয়ে সম্পদশালী দেশগুলোর একটি। সবচেয়ে কম যে জিনিস ডায়মন্ড, সেটাকে বলা হয় দামি। ওটা আসলে কিছু না। তার চেয়ে অনেক দামি পানি– সুমিষ্ট পানি। সুমিষ্ট পানি থাকায় আমরা অনেক রিচ। আমাদের উর্বর মাটি আছে। এই উর্বর মাটির কারণে আমরা অনেক রিচ।

আমাদের দেশে আপনি এক শটা ফলের নাম সহজেই বলতে পারবেন। আমাদের সূর্যের আলো দেখেন। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২৫০ দিন সূর্যের আলো পান। সেটা দিয়ে সৌরবিদ্যুৎ তৈরি করা যায়।

এ দেশে সব আছে। ব্যবহার করাটাই কাজ। ব্যবহার করাটাই গ্রিন আর্কিটেকচার। আমি কেন ব্যবহার করব না? আমার সব কাজে পানির ছোঁয়া থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমি ডেল্টার মানুষ। বদ্বীপের মানুষ। পানি হচ্ছে বাঙালির চিহ্ন। বাঙালি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বন্যা, পানি ইত্যাদি চিত্র।

বন্যাকে আপনি নেগেটিভলি দেখবেন না। বন্যা না হলে আপনি মারা যেতেন অনেক আগেই। এই যে ধান উৎপাদন, শস্য উৎপাদন; বন্যার পানি চলে যাওয়ার পর হয়ে থাকে। পানি চলে যাওয়ার পর পুরো দেশটাই সবুজ। আবার পানি এলে দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ডুবে যায়। পানি আসা-যাওয়ার খেলা না থাকলে, পানি না এলে শস্য উৎপাদন করা সম্ভব? সুতরাং বন্যাকে যদি হার্ডলি ম্যানেজ করতে পারেন, তাহলে মানুষ মারাই যাবে না। এখনও বন্যায় মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা খুব কম আগের তুলনায়। কিন্তু কত লোক বাঁচে? সারা জাতি কিন্তু বাঁচে এটার ওপর।

নিউজবাংলা: আপনার কাজে ভবনের ম্যাটেরিয়ালের ক্ষেত্রেও কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। ইটের ব্যবহার হ্রাস, কংক্রিট ব্যবহারের আধিক্য, দেয়ালে প্লাস্টার বা রং না করা ইত্যাদি। পোড়া মাটির ব্যবহার একেবারেই করেন না।

রফিক আজম: পোড়া মাাটির একটা স্ট্রেংথ আছে। বাংলাদেশ একটা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বেশ ঝুঁকিতে আছে অঞ্চলটি। ভূমিকম্পের সময় যখন চারদিক থেকে একসঙ্গে আক্রমণ হয়, এই ধাক্কাটা নেয়ার মতো ম্যাটেরিয়াল না থাকলে আপনি বাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতে পারবেন না। একতলা ভবন হলে হয়তো বুদ্ধি করে করা যায়। কিন্তু আমাদের লোকসংখ্যা বেশি, জমি কম। ধানি জমিতে যদি বাড়ি বানিয়ে ফেলি, ধানি জমিগুলো যদি খেয়ে ফেলি, তাহলে খাব কী? সুতরাং যত কম জমি ব্যবহার করা যায়।

জমিতে উঁচা বিল্ডিং বানাই। ১০ তলা, ১৫ তলা, ২০ তলা ভবন। এই বাড়ি কি দাঁড়িয়ে থাকবে? থাকবে না। এর স্ট্রেংথ থাকতে হবে। তাই কংক্রিটের বাড়ি যদি হয়, তাহলে স্ট্রেংথ থাকবে। কংক্রিট খুব গ্রিন ম্যাটেরিয়াল না। আবার খুব বাজে জিনিসও না।

আপনাকে একটা চয়েস নিতে হবে। আমরা একটা মাঝামাঝি জায়গায় থাকি। বিল্ডিং ঘরে গ্রিন দিতে পারি, ছাদে গ্রিন দিতে পারি। প্লাস-মাইনাস করে একটা জায়গায় আসতে পারি। আমি বেঁচেও থাকব, গ্রিনও থাকবে। ব্যালেন্সটাই জীবনে আসল। আমি কংক্রিট ব্যবহার করি। অ্যাকচুয়ালি বাংলাদেশে কংক্রিট জনপ্রিয় হয়েছে আমার হাতেই।

নিউজবাংলা: আপনি কি ইটের ব্যবহার একবারেই করেন না?

রফিক আজম: করি, কম। ইটের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছি। কারণ ইট মাটি পুড়িয়ে, ধানি জমি পুড়িয়ে, কার্বন পুড়িয়ে তৈরি করা হয়। ইট তৈরির ফলে আমরা মাটি হারাতে থাকি। এতে সমস্যা হচ্ছে। ওয়েস্টে ম্যাটেরিয়াল দিয়ে রিসাইকেল করে যদি আমরা কংক্রিটের ব্লক তৈরি করি, তাহলে কিন্তু মাটি হারাতে হবে না। কিন্তু কাজ তো হয়। তাহলে কেন আমরা মাটি পুড়িয়ে, কার্বন পুড়িয়ে ইট তৈরি করব? অনেক প্রসেসের পরও গ্রিন থাকছে না।

নিউজবাংলা: আপনি কি ইটের ব্যবহার পুনর্বিবেচনা করতে বলছেন?

‘আমার কাজ স্থাপত্য দিয়ে কবিতা নির্মাণ’
চট্টগ্রামে স্থপতি রফিক আজমের করা একটি আবাসিক ভবন


রফিক আজম:
হুম। কারণ এতে পোড়াতে হয়। মাটি নিতে হয়। আমরা কত মাটি নেব? পুরো দেশ উজাড় করে দেবো নাকি? পুরোনো বিল্ডিংয়ের ইট, রড, সিমেন্ট, খোয়া ইত্যাদি ভেঙেচুরে রিসাইকেল করা যাচ্ছে। কংক্রিটের ব্লক তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটি নষ্ট না করি, জমি নষ্ট না করি। ওদিকে আমরা যাচ্ছি। কংক্রিটের ব্লক আমরা ব্যবহার করছি। পুরোনা বিল্ডিং, বালি, সিমেন্ট মিশিয়ে আমরা বানিয়ে নিচ্ছি। এর জন্য মাটি পোড়ানোর দরকার হচ্ছে না।

আমরা আস্তে আস্তে ফেইজ আউট করছি। আস্তে আস্তে আমরা ইট থেকে সরছি। এখনও যে ব্রিক ব্যবহার করি না, তা নয়। তবে কম করি। আমরা যদি ব্রিকের ব্যবহার কমিয়ে দিই, তাহলে একটা সময় দেখবেন মাটি কেটে আর ইট পোড়াতে হচ্ছে না। বিশেষ কারণে লাগতে পারে, লাগুক। কিন্তু এটাই যদি পূর্ণাঙ্গ হয়, তাহলে সব মাটি একদিন আপনারা খেয়ে ফেলবেন। এটা কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, ‘প্লিজ, আপনারা মাটি পুড়িয়ে ব্রিক তৈরি বন্ধ করেন।’ সরকারি কাজে ইতিমধ্যেই নির্দেশনা এসেছে। প্রাইভেট কাজে হচ্ছে কিছু। সরকারি কাজে বন্ধ হয়ে গেছে।

নিউজবাংলা: কংক্রিট ব্লক কীভাবে তৈরি করেন?

রফিক আজম: ওয়েস্ট (পরিত্যক্ত) কংক্রিট। ভাঙা বিল্ডিং। ব্রিজ বানাতে গিয়ে অনেক ব্লক বানায়। এগুলো কোথায় নিয়ে যাবে? এগুলো স্ম্যাশ করে আবার কংক্রিটের ছোট ছোট ব্লক বানানো হয়, যা বাড়িঘরে লাগানো হয়। এভাবে রিসাইকেল করা গ্রিন আর্কিটেচারের অংশ। আমরা পুনর্ব্যবহার করি।

গার্বেজ সমস্যা নয়; বরং সম্পদ। কমিউনিটির সম্পদ। এই গার্বেজ দিয়ে সার বানানো হচ্ছে, ইলেকট্রিসিটি বানানো হচ্ছে। যশোরে এটা করছে। ইতিমধ্যে ওরা প্ল্যান্ট বানিয়েছে। ওরা এখন গার্বেজ পাচ্ছে না। অন্য শহর থেকে গার্বেজ আনতে চাচ্ছে; গার্বেজ তো সোনার খনি। গার্বেজ সব শেষ হয়ে যাবে। সার বানিয়ে ফেলবে; গ্যাস বানিয়ে ফেলবে। সিলিন্ডারে ভরে গ্যাস বিক্রি করবে।

গার্বেজ কি এখন আর শহর নষ্ট করবে? এইসব চিন্তাভাবনা হচ্ছে গ্রিন। রিসাইকেল করা, রিইউজ করা আর রিডিউস করা; কম ব্যবহার করা। প্রয়োজন না হলে ব্যবহার না করা। জীবনটাকে এমন বোহেমিয়ান ধরনের করবেন না, ‘যা খুশি করব।’ এটা বন্ধ করেন। গ্রিন অ্যাকটিভিস্টরা এটাকে ‘থ্রি আর’ বলে। রিডিউস, রিইউজ, রিসাইকেল।

নিউজবাংলা: আপনার কাজ অ্যাকাডেমিক মহলে প্রশংসিত। আবার ভোক্তাদের কাছেও আপনার কাজের চাহিদা বেশ। দুটোর...

রফিক আজম: হিসাব করলে হয়তো দেখা যাবে, ৫০-৬০টি অ্যাওয়ার্ড আমি পেয়েছি। যখন ইয়াং ছিলাম, তখন খুব ভালো লাগত এসব। অ্যাওয়ার্ডের জন্য জমা দিলাম। এটা পেলাম, ওটা পেলাম। বিদেশে লেকচার দিতে গেলাম, পড়াতে গেলাম। অনেক দেশে পড়িয়েছি। আমাকে নিয়ে পড়ানো হচ্ছে, বই বের হচ্ছে, আমাকে নিয়ে ইতালিতে ফিল্ম হয়েছে। এগুলো একসময় এক্সাইটমেন্ট ছিল আমার। এখন কিন্তু মানুষ যে আমার কাজ পছন্দ করে, তারা যায়, কথা বলে, তাদের জীবন বদলাচ্ছে, পরিবেশ সুন্দর হচ্ছে, তাদের বাচ্চারা মানুষ হচ্ছে। এটাই আমার পুরস্কার।

আমি অনেক বড়লোকের বাড়ি করেছি। এখনও করি। করতে আপত্তি নেই। বড়লোকের বাড়ি করতে পেরেছি বলেই অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছি। অন্যরা তো পয়সা দিত না। আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে তারা। এ কথাও আমি শুনেছি, ‘উনি তো বড়লোকের আর্কিটেক্ট। উনি তো অনেক টাকা নেন।’ কথাটা মিথ্যা না। তো আমার মনে মনে স্বপ্ন ছিল, আমি মানুষের আর্কিটেক্ট হব; বড়লোকের বা ধনী লোকের আর্কিটেক্ট না।

আমি সাধারণ মানুষের আর্কিটেক্ট হব। সেই কারণে হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমার কথা শুনেছেন। আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাজ করছি। সরকারি কিছু কাজ করছি, যেগুলো সাধারণ মানুষ ব্যবহার করবে।

যখন বড়লোকদের কাজ করেছি, তখন বাউন্ডারি ওয়ালটা ফেলে দিয়েছি। বড়লোকের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে বাউন্ডারি ওয়াল নাই। আমার অনেক বাড়ি আছে এমন। এখন অনেকেই এমন ডিজাইন করছে। আপনি যদি গুলশান এলাকায় হাঁটেন, বাড়ির সামনের দেয়ালটা গ্লাস দিয়ে তৈরি। আপনি গুলশান-বারিধারা এলাকায় হাঁটেন, তবে এ ধরনের গ্লাস দেয়া অনেক বাড়ি অ্যাপার্টমেন্ট দেখতে পাবেন। বারিধারায় আমার বাড়িতেও গ্লাসের বাউন্ডারি ওয়াল। ২০০৯ সালে যখন গ্লাসের বাউন্ডারি দেয়ালের প্রথম কাজের উদ্বোধন করি, তখন আমি নিজেও ভয়ে ছিলাম।

‘আমার কাজ স্থাপত্য দিয়ে কবিতা নির্মাণ’
মেঘনা রেসিডেন্স গুলশান


কেন বাউন্ডারি ওয়াল ফেলে দিয়েছি? আমার মনে হয়েছে বড়লোকের বাড়ি এবং রাস্তা একে অপরের শত্রু। যখন রাস্তা দিয়ে কেউ হেঁটে যায়, তখন রাস্তার পাশে যে উঁচু দেয়াল থাকে, এর ওপর থাকে কাঁটাতারের বেড়া। লেখা থাকে কুকুর হইতে সাবধান। একটা গার্ডরুমে গার্ড বসে আছে। এটা কিসের চিহ্ন? ও বলতে চায় সাধারণ মানুষকে, ‘তুমি তো চোর। তোমার তো বিশ্বাস নাই। আমার কুকুর কামড়ে দেবে। আর যদি টপকাতে চাও, তাহলে এই তারকাঁটা দিয়ে রেখেছি, তুমি রক্তাক্ত হয়ে যাবে।’

এটার মানে কী? একটা বিরাট দেয়াল দিয়ে বাড়ি আটকে রেখেছে। তারকাঁটা আছে। গার্ড লাঠি হাতে বসে থাকে। আপনাকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দেবে। এগুলো কিসের চিহ্ন? এগুলো সমাজের মধ্যে বিভেদের চিহ্ন। রাস্তায় যারা যায়, তারাও গালি দিয়ে থাকে। ও ব্যাটা টাকা-পয়সা মাইরা-মুইরা বাড়ি বানাইছে। এই হচ্ছে আমাদের মনে মনে কথোপকথন।

আমি ভেবেছি, এটা ভাঙতে হবে। আমি বাসার সামনে থেকে এমন ডিজাইন করেছি, ও কিন্তু ঢুকতে পারবে না বাসায়, কিন্তু বাসার সামনের অংশ, গাছগাছালি, বসার জায়গা, পানির ফোয়ারা দেখা যাচ্ছে। ওর কাছে মনে হবে: ‘বাহ! কী সুন্দর! লোকটার রুচি আছে। গ্লাসের দেয়াল দিয়েছে। ভেঙে যাবে না? লোকের সাহস আছে।’

কথাবার্তা কিন্তু চেইঞ্জ। সে কিন্তু আর গালি দিচ্ছে না। আগে ধানমন্ডিতে ছোট ছোট দেয়াল ছিল। তার মানে আপনাকে বলত, ‘দেখো, সমস্যা নেই। এটা আমার টেরিটোরি, প্রবেশ করো না।’ কত ভদ্রভাবে বলত। ‘তুমি দেখো, কিন্তু ঢুকো না।’ এটা বাড়তে বাড়তে এখন এমন হয়েছে, স্বাধীনতার পর ‘এ ব্যাটা তো চোর’, ‘ও ব্যাটা তো ডাকাত’ বলা শুরু হয়।

এই ভঙ্গুর সমাজ আমাকে খুব ব্যথা দিত। আমি কিন্তু পেরেছি, জানেন? পেরেছি। এখন ঢাকায় অসংখ্য বাড়িঘর দেখবেন, সামনে গাছগাছালি, সামনে তেমন কোনো দেয়াল থাকে না। ফাইনালি আমি ঢাকার পার্কগুলো থেকে দেয়াল ফেলে দিয়ে বলেছি, ওটা জনগণের। আমার ডেভেলপমেন্ট কিন্তু একদিনে হয়নি। গত ২৫-৩০ বছর ধরে স্ট্রাগল করছি। পরীক্ষামূলকভাবে দেখে বুঝেছি, এটা পসিবল। এটা আমার একটা কনট্রিবিউশন। সারা দুনিয়া এটা জানে।

নিউজবাংলা: গ্লাসের বাউন্ডারি দেয়াল প্রচলন করার সূচনাপর্বটি...

রফিক আজম: গ্লাসের দেয়াল উদ্বোধন করি ২০০৯ সালে, কিন্তু চিন্তাটা এসেছিল ২০০৫ সালে। ডিজাইন করা, পারব কি না, এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে করতে ২০০৯ সালে প্রথম একটি বাড়ির ডিজাইন করি আমেরিকান অ্যাম্বাসির পাশে। এ জন্য আমি সাহস পেয়েছিলাম। একটা গ্লাস যদি কেউ ভেঙে ফেলে তাহলে আইডিয়া কিন্তু বাতিল। সবাই বলল, ‘পাগল নাকি আপনি?’

খান জয়নুলের কাচের দেয়াল নামে একটা মুভি ছিল। ছোটবেলায় ওই মুভি দেখার পর মজা পেয়েছিলাম। কাচের আবার দেয়াল হয়? পাগল নাকি! একটা কাব্যিক ব্যাপার। কিন্তু আমার মনে গেঁথে ছিল। মিলে গেল। আমি কাচের দেয়াল করলাম। কিন্তু ভয়ে থাকি। প্রতিদিন ইঞ্জিনিয়ারকে ফোন করে খবর নিতাম, ঠিক আছে নাকি কেউ ভেঙে ফেলেছে? আমি ওখানে করেছিলাম। কারণ ওখানে অনেক গার্ড থাকে। আমি যদি প্রথম ভুল জায়গায় করতাম, কেউ যদি একটা গ্লাস ভেঙে ফেলত, তাহলে তো সবাই এসে বলবে, ‘জীবনে ও রকম আর করবেন না। খবরদার। দেখা হইছে, বাঙালিরা এটা মানবে না। বাঙালিদের তুমি চিনো?’

ওটা সাসটেইন করেছে, ওখানে পাহারা ছিল। লোকজন তখন বিশ্বাস করা শুরু করে, পসিবল। দ্বিতীয়বার করলাম গুলশান ক্লাবের পাশে। ততদিনে মানুষ একটু একটু করে বুঝে ফেলেছে, আরে! এটা তো থাকে। আমার দেখাদেখি অন্যরাও শুরু করল।

আপনি আজকে হাঁটলেও দেখতে পাবেন, এমন অনেক বাড়ি। সামনে কাচের দেয়াল অথবা দেয়াল নাই। বিষয়টি খুবই ইন্টারেস্টিং। কখনো কখনো গাছ দিয়ে রিপ্লেস করেছি; গাছগাছালির সংখ্যা বাড়িয়েছি। গাছের সংখ্যা তো আমাদের কম। গাছের সংখ্যা তো বাড়াতে হবে।

আমার আরেকটি কাজ কংক্রিটের ব্লকের বাড়ি নির্মাণ জনপ্রিয় করা। তবে এটা আমার আবিষ্কার নয়। আগেও অল্প কয়েকটি ছিল। সেনাকল্যাণ ভবনসহ কয়েকটি অফিস ভবন। আগে সবার ধারণা ছিল, এটা দামি জিনিস; বাণিজ্যিকভাবে নির্মাণ করা যাবে না, কিন্তু আমি প্রমাণ করেছি, এটা দামি নয়। করে করে দেখিয়েছি, এটা করা যায়। এখন ডেভেলপাররাও করে থাকে।

আগে ডেভেলপাররা বলত, ‘পাগল হইছো? লস করব নাকি?’ তখন অঙ্ক করে দেখালাম, এটা কস্টলি হবে না। অঙ্ক করে দেখানোর পর বলে, ‘তাই নাকি? দেখি তো করি।’ আর এখন বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, আপনি যদি কোনো ডেভেলপারের কাছে কংক্রিটের ব্লক ছাড়া বাড়ির ডিজাইন জমা দেন, তাহলে বলবে, ‘ভাগেন। এসব দিয়ে চলবে না।’ ঢাকায় এখন ৯০ ভাগ বাড়ি কংক্রিট দিয়ে হয়। গাছের বাউন্ডারি দেয়াল, প্রচুর গাছগাছালি, বাড়ির সামনে পুকুর ইত্যাদি।

নিউজ বাংলা: কংক্রিট তাহলে আগামী দিনে হতে যাচ্ছে প্রধান উপকরণে?

রফিক আজম: উপায় নাই। উপায় নাই। বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। দামে কম। কিন্তু হেভি পোক্ত। ছোটখাটো ভূমিকম্পে কিছুতেই পড়বে না। এই একটা ম্যাটারিয়েল দামে কম। বিদেশে তৈরি অন্য ম্যাটারিয়েল অনেক দামি।

নিউজবাংলা: কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারের শুরুর কাহিনিটা...

রফিক আজম: আমার ডিজাইন করার পর খুব জনপ্রিয় হয় বিষয়টি। এরপর সবাই ফলো করতে থাকে। বাংলাদেশের যত ইয়াং আর্কিটেক্ট, আমার নাম বললেই বুঝবেন, তারা আমাকে কীভাবে দেখে।

নিউজ বাংলা: আপনি প্রথম কোথায় কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করেছিলেন?

রফিক আজম: খাজে দেওয়ান বলে পুরান ঢাকায় একটি জায়গা আছে। সেখানে ছোট্ট একটি বাড়িতে।

নিউজবাংলা: আপনার খাজে দেওয়ান লেনের বাড়ির ডিজাইন তো বিশ্বব্যাপী আলোচিত।

রফিক আজম: ১৯৯৯ সালে ডিজাইন করেছিলাম। এটা এখন এমআইটি, হার্ভার্ডে পড়ানো হয়। খাজে দেওয়ানের বাড়িতে চার কাঠা জমির ওপর পাঁচ তলা একটি বিল্ডিং। ১৪টি পরিবার এতে বসবাস করে। ছোট্ট ছোট বাড়ি। বাড়িগুলোর আয়তন ৪০০ স্কয়ার ফুট থেকে সাড়ে ৬০০ স্কয়ার ফুট। ওটা কংক্রিট দিয়ে বানানো। এক্সপোসড কংক্রিট। আর কিছু ব্রিক।

কিছু ব্রিক দেয়া হয়েছে খরচ কমানোর জন্য। এ রকম বাড়ি বাংলাদেশে আগে আর হয়নি। কোনো প্লাস্টার নাই, রং নাই। বাড়ির ফ্রেম হচ্ছে কংক্রিট। কম খরচে স্ট্রং বাড়ি। বাড়ির ফ্রেম হবে কংক্রিটে। আর গ্যাপগুলো পূরণ করবে জানালা, ইট ইত্যাদি। দেয়ালে প্লাস্টার নাই, রং নাই। প্লাস্টার, রং উঠিয়ে দিয়ে প্রথম ডিজাইন করি খাজে দেওয়ান মহল্লায়। এটা একটা সিস্টেম। অর্গানাইজড সিস্টেম। আমার আগে কেউ করেনি; এখন সবাই করছে।

‘আমার কাজ স্থাপত্য দিয়ে কবিতা নির্মাণ’
স্থপতি রফিক আজমের কাজের মূল বৈশিষ্ট্য প্রকৃতি ও স্থাপত্যের মেলবন্ধন


পুরান ঢাকার মানুষ তো গরিব। চিকন একটা গলির ভেতরে বাড়ি। এই যে কংক্রিটের বিম, যেটা বিল্ডিং ধরে রাখছে, তারপর কলাম আছে। তারপর ছাদ। কোনো রং নাই, প্লাস্টার নাই, ঢাকাঢাকি নাই। কংক্রিট ওপেন, ব্রিক ওপেন। এই ১৪টি বাড়িতে সবার একটি করে বাগান আছে। সেটা সাড়ে ৪০০ স্কয়ার ফুটের বাড়ি হোক, আর হোক সাড়ে ৬০০ স্কয়ার ফুটের। সততার সঙ্গে বাড়ির ভেতরে যা, বাইরেও তা। কোনো কিছু প্লাস্টার করে ঢাকি নাই। টাইলস লাগাই নাই। কোনো কিছু হাইড করি নাই। কম খরচে। এই আইডিয়াটা আমি অস্ট্রেলিয়ায়ও করেছি।

নিউজবাংলা: বহুতল ভবনের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে বাগান থাকার আইডিয়া?

রফিক আজম: হ্যাঁ। প্রতি বাড়িতে বাগান থাকবে। এই আইডিয়াটাও আমাদের দেশে নতুন। উঁচা বিল্ডিং বানাও। আমাকে দশ তলায় পাঠাতে চান, ঠিক আছে, রাজি আছি। কিন্তু আমাকে একা পাঠাবেন না। তাহলে আমি, আমার পরিবার, বাচ্চারা মারা যাব। ওখানে একা গেলে আমার মাটি কোথায়? গাছ কোথায়? পানি কোথায়? আকাশ কোথায়? আমাকে ১০০ তলায় পাঠিয়ে দেন, আমি যাব। কিন্তু আমি মাটি চাই, গাছ চাই, ফুল চাই, ফল চাই, পাখি চাই। সব দিতে হবে। এটা একটা ফিলোসফি।

হ্যাঁ, উঁচা বিল্ডিং বানাবেন। কিন্তু মাটি দিতে হবে, পানি দিতে হবে, গাছ দিতে হবে, বাগান দিতে হবে। এটা একটা নতুন আইডিয়া। বাংলাদেশে তো অবশ্যই। আমি যখন শুরু করছিলাম, তখন পৃথিবীতেই নতুন ধরনের এই বিষয়টা তৈরি হচ্ছিল।

ধানমন্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের বিপরীত দিকে তিন তলার ওপর একটা বাড়ি করেছি। নাম ‘বৃষ্টিঘর’। বৃষ্টি হলে এখানে পানি জমে। এটাই সৌন্দর্য।

লিভিংরুম থেকে বের হয়ে এখানে পানিতে পা ডুবিয়ে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। আমেরিকায় লিভিংরুমে বসে বসে টিভি দেখে। আমাদের দেশে তা হবে কেন? আমাদের দেশে লিভিংরুমে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে গল্প করবে। এই যে দেখেন, লিভিংরুম থেকে বের হলেই বৃষ্টিঘর।

তখন পৃথিবীও এ রকমভাবে চিন্তা করছে না। খুব অল্প কিছু মানুষ বিষয়টি নিয়ে তখন ভাবছিল। এ জন্য পৃথিবীতে আমাকে এত অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে।

এক ক্লায়েন্ট বললেন, পাঁচ তলার ওপর সুইমিংপুল বানাতে। আমি বললাম, বাঙালির কিসের সুইমিং পুল? বাঙালির সুইমিং পুল দরকার নাই। আমাদের দরকার পন্ড। সুইমিং পন্ড। পুকুরে নেমে বাঙালিরা গোসল করে। আমি পাঁচ তলার ওপর পন্ড বানাব। আমাকে তখন জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘পন্ড মানে কী? সুইমিং পন্ড ও সুইমিংপুলের মধ্যে পার্থক্য কী?’

বললাম, পুকুরে নামার জন্য ঘাট থাকে। পুকুরপাড়ে জংলা থাকে। গুলশানের বাড়িটিতে ঘাটলা, জংলা নিয়ে পাঁচ তলায় পুকুর হলো। এখানে সুইমিং পুলের মতো মেশিনে পানি ট্রিটমেন্ট হয়। কিন্তু চেহারাটা দেখেন, আমাদের দেশের পুকুরের মতো। ঘাট আছে, জংলা আছে। পুকুরের পানিতে ভাসছে নৌকা। নীল রঙের সুইমিং পুলের ধারণাটি ইউরোপীয়। আমি বাঙালি। সুইমিংপুল বানাব না। আমি সুইমিং পন্ড বানাব।

এটা হচ্ছে গোস্বা নিবারণী ঘর। আমাদের দেশে আগে ছিল। পুকুরের পাড়ে একটি ঘর থাকত। রাগ হলে সেখানে গিয়ে বসে থাকত। স্বামী বা স্ত্রী তখন গিয়ে অনুনয় করত, ‘খেয়ে যাও। রাগ কোরো না।’ অ্যাংগারটা বের করে দিতে এটা ছিল সামাজিক উদ্যোগ। সেই সামাজিক উদ্যোগ কই গেল? এখন চড়থাপ্পড় মেরে দেয়, বিচ্ছেদ হচ্ছে। এমনকি খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। এর কারণ হচ্ছে অ্যাংগার বের করে দেয়ার জায়গা নেই। তাই বাড়িগুলোতে আমি গোস্বা ঘর বা গোস্বা নিবারণ ঘর রাখা শুরু করি।

আমি এসব পাগলামি চিন্তা করি, করতে থাকি। অনেকেই আবার পছন্দ করেন। অ্যাংগার রিডাকশন রুম মানে এখানে বিউটিফুল মিউজিক বাজতে পারে, বিউটিফুল ভিউ পাচ্ছেন, পাশে কাঠ গোলাপের গাছ, প্রিয় আরও গাছ। পাখি বসে আছে। ফুলের সুগন্ধ আসছে। কিছুক্ষণ বসলেন, অবশ্যই আস্তে আস্তে আপনি আরও ভালো মানুষ হয়ে উঠবেন।

এই ইনগ্রেডিয়েন্ট না থাকলে বাসা হলো? বাসায় ফিরে কি শুধু ঘুমাবেন আর চলে যাবেন? সারা দিন খেটে যখন আপনি বাসায় ফেরেন, তখন জিব বের হয়ে যায়। বাসা কি শুধু ঘুমানোর স্থান? বাসায় এসে শুয়ে পড়লেন। সকালে উঠে দেখলেন, গাছ দেখা যাচ্ছে; পাখি কিচিরমিচির করছে। এ পরিবেশে নাশতা করলেন। আপনি আবার শক্তি নিয়ে সারা দিনের যুদ্ধ করতে যাত্রা শুরু করলেন। বাসা যদি আপনাকে আরও টায়ার্ড করে দেয়, তাহলে সকালে আপনি অর্ধেক টায়ার্ড হয়ে থাকবেন। সারা দিন কাজ করবেন কীভাবে? আপনাকে রিভাইটালাইজ করা, রিঅ্যানার্জাইজ করা বাসার কাজ। সেটা হতে পারে বড়লোকের বাসা, হতে পারে খাজে দেওয়ান লেনের ৪০০ স্কয়ার ফুটের বাসা। আমার আইডিয়ার কোনো পার্থক্য নেই।

ধানমন্ডির বাসাটা ৩০ হাজার স্কয়ার ফুটের। আর খাজে দেওয়ান লেনের ৪০০ স্কয়ার ফুটের বাসা। দুজনই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি ক্লাসলেস। আমার কাছে কোনো ক্লাস নেই। যিনি আসছেন, তিনি বড়লোক হোন, আর গরিব লোক হোন, তার বাসাটি হবে পূর্ণাঙ্গ।

একটি বাড়ির নাম দিয়েছিলাম ‘স্মল ইয়েট অ্যাবানডেন্ট’। ছোট্ট কিন্তু অসীম। ছোট্ট কখনো অসীম হয়? কিন্তু আমি ‘ছোট্ট অসীম’ নাম দিয়েছি। আমরা শুনে থাকি, ‘ভাই, আমার একটি ছোট্ট আশা আছে। ছোট একটি বাসা থাকবে। ছোট্ট একটি বারান্দা থাকবে, ছোট্ট একটু উঠান থাকবে। একটু গাছ লাগাব। আমার রুমের পাশে পড়ার একটু জায়গা থাকবে। ছোট্ট একটি বাগান থাকবে।’

বলতে বলতে কিন্তু দেখবেন, তার আশা বিরাট। ছোট্ট বাসা মানে কি ছোট্ট আশা? বাসা ছোট্ট হলেও তার আশা কিন্তু অনেক বড়। ছোট বাসা কিন্তু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে দেখে। সে এটা এনজয় করে। গাছ দেখে, বাগান দেখে। নিজের বাগান, এমনকি অন্যের বাগান। দূরের মাঠও দেখে। আকাশের তারা। কাজ করার সময় আর্কিটেক্টকে সব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

আচ্ছা, উনার বাসা ছোট। ওখানে দূরে একটি মাঠ দেখা যাচ্ছে। ওদিকে একটি গাছ দেখা যাচ্ছে। আচ্ছা, তাহলে এদিকে একটি জানালা দেই। ও, ছোট্ট বাসা থেকে ওটা দেখে বলছে, ‘ওয়াও!’ পৃথিবীকে যদি কানেক্ট করতে পারেন, প্রকৃতিকে যদি কানেক্ট করতে পারেন, তাহলে আশাটা অনেক বড় হয়ে যায়। লালন বলেছেন, যা দেহে নাই, তা দেহের বাইরেও নাই। তার মানে পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আপনার দেহে আছে।

নিউজবাংলা: ‘যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তা আছে দেহভাণ্ডে।’

রফিক আজম: কী করে সম্ভব? আপনার এতটুকু দেহ, এর মধ্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আসে কী করে? তার মানে স্কেল ভুল করা যাবে না। ছোট একটি বাসা, তার মানে এই নয়, এর মধ্যে কিছু নাই। আমি লালনকে নিয়ে কাজ করেছি। ওই কাজটি ইউরোপ-আমেরিকায় বহুল প্রশংসিত হয়েছে। গুলশানের একটি বাড়ি, বড়লোকের একটি বাড়ি। লালনের ভাষায় করা এটি। নাম ‘আনফোল্ডিং নাথিংনেস’।

আপনি তখন উন্মুক্ত করতে থাকবেন সবকিছু, তখন আপনি শূন্যতাকে উন্মুক্ত করবেন। শূন্যতাই উন্মুক্ততা।

লালনের মতে, দেহে দুটি পার্ট আছে। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।’ তার মানে উনি দেহকে একটি খাঁচা বলে বিবেচনা করছেন।

‘বাড়ির কাছে আরশিনগর।’ এগুলো কী? খাঁচা হচ্ছে বডি। আর চিন্তাগুলো হচ্ছে অচিন পাখি। ‘ধরতে পারলে মনবেড়ি দিতাম তার পায়।’ অর্থাৎ তাকে ধরতে পারা যায় না। চিন্তা আসে আর যায়। আপনার দেহের মধ্যে আসে, আর যায়। আর আসা-যাওয়ার খেলাই জীবন।

যেদিন পাখি গেল, আর এলো না, সেদিন আপনি ডেড। আপনি শেষ। আমি ভাবলাম, আচ্ছা আমি যদি একটি বাড়ি বানাই খাঁচার মতো। খাঁচা বানালাম। খাঁচার মধ্যে কী আসবে-যাবে? রোদ আসবে, চলে যাবে। বৃষ্টি আসবে, চলে যাবে। বাতাস আসবে, চলে যাবে। ফুলের সুগন্ধ আসবে-চলে যাবে। আমি কী করতে পারি?

আমি লালন যেভাবে বলেছেন, বাতচিত করা। আপনি বাতচিত করবেন, নেগোশিয়েট করবেন। ধারণ করবেন। পাত্র হিসাবে ধারণ করবেন ভালো ভালো জিনিসগুলো। তখন আপনি আদমি হবেন। মানুষ হবেন।

আপনি যদি প্রকৃতির ভালো ভালো জিনিসগুলো গ্রহণ করেন, সূর্যের আলো, বাতাস, সুগন্ধকে ধারণ করতে পারেন, তাহলে কী হবে? আদমি হবে, আর্কিটেকচার হবে। এই জন্যই দেখেন, বাড়ির মাঝখানে খোলা উঠান, ওই যে পুকুর। পুকুরে নৌকা। ওই যে দেখেন তিন তলায় ধানক্ষেত। সূর্যের আলো আসবে, আবার চলে যাবে। পূর্ব দিকে কামিনীগাছ; পূর্বের বাতাস সুগন্ধসহ বাসায় ঢোকে। ওই যে দেখেন পুকুরপাড়ে হিজলগাছ। চিচিঙ্গা ঝুলছে। জায়গাটা একটা জঙ্গলের মতো।

ওই জায়গাটি পাখিদের জন্য। পানি পার হয়ে যেতে হয়। পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছে। কিছু প্রজাপতি আসা-যাওয়া করে। কিছু পাখি বাসা বেঁধেছে। এই যে বাতচিত করা প্রকৃতির সঙ্গে, রোদের সঙ্গে, বাতাসের সঙ্গে, পানির সঙ্গে, বৃষ্টির সঙ্গে, ফুলের সুগন্ধের সঙ্গে। এটাই জীবন। এটাই গ্রিন আর্কিটেকচার। এটাই লালনের দর্শন।

‘আমার কাজ স্থাপত্য দিয়ে কবিতা নির্মাণ’
সাউথ ওয়াটার ক্যারেস, বারিধারা

বিদেশে দার্শনিকদের নিয়ে কাজ হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের দার্শনিকদের নিয়ে কাজ হয়নি। যখন বিদেশে বক্তৃতা দিতে যেতাম, খুব রাগ হতো আমার। তখন বলতাম, আমিও আমাদের দেশের দার্শনিককে নিয়ে কাজ করব। আমি একবার লেকচারে বলেছিলাম, রুমির কবিতার প্রসঙ্গ।

রুমি বলেছিলেন, ‘আলো সন্ধ্যায় যখন গন্তব্যে চলে যায়, সে কিন্তু তার কাছ থেকে কিছুই নিয়ে যায় না, যাকে সে আলোকিত করেছিল।’ না, আমি মনে করি, রুমি ভুল বলেছিলেন। সন্ধ্যায় যখন সে এই বাসা ছুঁয়ে চলে যায়, তখন সে বলে, ‘আমি একটি সুন্দর জায়গা ছুঁয়ে এসেছি। আমার আনন্দ।’ এ কথা বলতে সাহস লাগে। আমি কাজের গভীরে প্রবেশ করে আনন্দ নিতে থাকি। মানুষকে আনন্দ দিতে থাকি।

নিউজবাংলা: বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পের সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন।

রফিক আজম: অনেক ভালো। আগের তুলনায় খুব ভালো। আমরা যখন শুরু করেছি, তখন আর্কিটেক্টদের তেমন চিনত না। আমরা কাজ পেতাম না। কাজ দিলে টাকা দিত না। একটুখানি টাকা দিতে যেন দয়া করত। ওই জায়গা থেকে আমরা ভয় পেতাম। আমরা পড়াশোনা করলাম কোন দুঃখে? এর চেয়ে ডাক্তার হতাম, ল’ইয়ার হতাম বা অন্য পেশায় যেতাম। তখন খুব কষ্ট হত। কিন্তু ধীরে ধীরে মনোযোগ দিয়ে যখন কাজ করি, কয়েকজন আর্কিটেক্ট বিশেষত মুস্তাফা খালিদ পলাশ একজন আছেন, আপনি তার নাম শুনেছেন কি না, নির্ঝরকেও বলা যায় কিছুটা। ফিল্মও বানায় সে। তারও কিছুটা অবদান আছে।

উত্তম কুমার সাহা বলে একজন আছেন। এ রকম অল্প কয়েকজন আর্কিটেক্ট কষ্ট করতে করতে মানুষজনের কাছে ইম্পরট্যান্ট হয়ে উঠল। ডেভেলপাররা আমাদের এসে ধরল। আমরাও তাদের সে রকম বিল্ডিং দিলাম। গাছগাছালিসহ কংক্রিটের বিল্ডিং। তাদের ব্যবসা বাড়ল। আর আমাদেরও পজিশন বাড়ল।

এখন তো কিছু আর্কিটেক্টকে বলা হয় সেলিব্রেটি, স্টার আর্কিটেক্ট। এখন তো আমরা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেতে শুরু করেছি। বাংলাদেশের স্থাপত্য ইন্টারন্যাশনালি ইম্পরট্যান্ট হয়ে পড়েছে।

গত দুই বছর ধরে ইউরোপে একটি এক্সিবিশন ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘বেঙ্গল স্টিম’ নামে। বাংলাদেশের ২৯ জন আর্কিটেক্ট নিয়ে ইউরোপীয়রা নিজেরা আয়োজন করেছে। এটা আমেরিকায় যাবে। বাংলাদেশেও একসময় আসবে।

তো ইউরোপের কী এমন দুঃখ হলো যে, তারা বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পকে এমন মর্যাদা দিচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের আর্কিটেক্টরা প্রমাণ করেছে তারা মারাত্মক লেভেলে কাজ করে। আমি প্রথম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমাকে নিয়ে প্রথম ইন্টারন্যাশনালি বই বেরিয়েছে। তবে আমি প্রথম বলে আমি একা না। আমি শুরু করেছি। অনেক মানুষ এসে গেছে।

এখন ভয়ের জায়গা হচ্ছে, ইয়াং জেনারেশন এদিক-ওদিক দেখে কপি করে ফেলে। এই যে গভীরতা, আমি লালন নিয়ে কথা বলছি, আমি হাসন রাজা নিয়ে কাজ করেছি। বাংলাদেশের পানি, বাংলাদেশের জলবায়ু, বাংলাদেশ কোথা থেকে পানি পায়, কখন সূর্য কোথায় থাকে, এই যে জ্ঞানের বিবেচনায় কাজ করি, সেইভাবে স্কুলেও পড়ায় না। তারা চর্চাও করে না। কপি করলে আপনি কতটুকু যেতে পারবেন?

একটা দুইটা ভালো হতে পারে। সব তো ভালো হবে না। আপনি ভুল করবেন। আপনাকে গাছ চিনতে হবে। পাখি চিনতে হবে। ম্যাটেরিয়েল বুঝতে হবে। গ্রিন জিনিসটা বুঝতে হবে। ইকোনমি বুঝতে হবে। আমাদের দেশে পড়াশোনা তেমন হচ্ছে না। পড়াশোনায় গভীরতা নেই। অনেক গভীরতায় পড়ানো হয় না। ফলে ওরা শিখতে পারে না। পড়ে শেখার যে কষ্ট, সেটাও করতে চায় না অনেক সময়।

আমি তরুণদের বলব, তাদের খাটতে হবে। দেয়ার ইজ নো রয়্যাল ওয়ে ফর লার্নিং। ইয়াং জেনারেশন যদি পরিশ্রম না করে, আমাদের চেয়ে বেশি এগিয়ে না যায়, তাহলে দেশ কীভাবে আগাবে? আমার পর্যন্ত থাকলে হবে? আমরা তো এক জায়গা পর্যন্ত আসছি। আমরা তো এখন পুরান হয়ে যাচ্ছি। এ জন্য আমি মনে করি, ওদের আরও অ্যাগ্রেসিভ হতে হবে। আরও ডেডিকেডেট হতে হবে। সারা দুনিয়াতে আরও নজর রাখতে হবে। রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে।

আজকাল ক্যাপিটালিস্টরা গ্লোবালাইজেশনের কথা বলে। তারা কি গ্লোবালাইজ করেছে? প্রেম, ভালোবাসা, সমতা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ইত্যাদি তারা গ্লোবালাইজ করেছে? তারা করেছে অস্ত্র, যুদ্ধ, ধ্বংস। এগুলো যদি তরুণ প্রজন্ম না বোঝে…। তারা করেছে ব্যবসার জন্য। অস্ত্র বিক্রির জন্য, তাদের পণ্য বিক্রির জন্য। এগুলো কি আমরা মেনে নেব? আমরা যদি বোকা হই, তাহলে কি বুঝব এগুলো?

আমাকে রেসপন্ড করতে হবে জ্ঞানের ভিত্তিতে। আমরা যদি ওদের কথা শুনে গ্রিন আর্কিটেকচার বলতে এসি লাগাই, বলবে গ্রিন এসি। এসি তো এসিই। এখানে আবার গ্রিন কী? এমন ডিজাইন করতে হবে, যেখানে এসি লাগবে অতি নগণ্য। ফলে আমার খরচ কম হবে, প্রকৃতিকে ব্যবহার করব এবং ইমিউন থাকব।

প্রকৃতির সঙ্গে থেকে থেকে ইমিউনড হব। ভিটামিন ডি পাব। আমি কালেভদ্রে খুব যখন বাজে গরম, এক মাস তখন এসি চালালাম। ওরা শুরুই করে এসি দিয়ে।

‘কাচ লাগাও। মোটা মোটা কাচ লাগাও’। কেন কাচ লাগাব? কাচ লাগালে আমাকে বুঝতে হবে, কাচে যদি রোদ না পড়ে, কাচের ওপর যদি আমি একটা শেডিং দিই, তাহলে ভাদ্র মাসে যখন কঠিন গরম, সূর্যটা হেলে গেছে, হেলানো সূর্যটা কাচে পড়ে না। কারণ একটা হেডের মতো মাথালের মতো দিয়ে দিয়েছি, যার ছায়ায় থাকে। তাহলে আমার আর গরম লাগবে না। শীতকালে সূর্যটা যখন আরেকটু হেলে যায়, তখন যদি শেডটা বড় হয়, তখন রোদ আটকে গেলে রুম ঠান্ডা থাকবে। তাহলে রোদটাকে অ্যালাও করতে হবে।

কৃষকের মাথালের একটা মাপ আছে। মাপ হচ্ছে গরমকালে সূর্যটা যখন মাথার ওপরে থাকবে। তখন পুরো শরীর ছায়াতে থাকবে। যেই শীতকাল এসে যায়, তখন মাথালের সাইড দিয়ে রোদ তার শরীরে পড়ে। এটা ম্যাথমেটিকস।

‘আমার কাজ স্থাপত্য দিয়ে কবিতা নির্মাণ’
বহুতল ভবনেও পুকুর রফিক আজমের স্থাপত্যের অনন্য দিক


চট্টগ্রামে একটি বাড়িতে আমি মাথালের ব্যবহার করেছি। অ্যাসথেটিক হচ্ছে ম্যাথমেটিকস। আমি গণিত খুব পছন্দ করি। গণিতে যারা সিরিয়াস, তারা বলেন, গড হচ্ছে একটা সংখ্যা। আসলেই কিন্তু সংখ্যা। সম্প্রতি হলিউডে একটা ফিল্ম হয়েছে। ৩১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণকারী একজন ভারতীয় গণিতবিদকে নিয়ে; পড়াতেন কেমব্রিজে।

নিউজবাংলা: রামানুজন?

রফিক আজম: হ্যাঁ, রামানুজন। তাকে নিয়ে নির্মাণ হয়েছে মুভিদ্য ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি। আমি মুভিটি দেখেছি।

আবার কংক্রিটের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমি এটার আবিষ্কারক বলে দাবি করি না। পৃথিবীতে এর আগে অনেক হয়েছে। গ্রেট আর্কিটেক্টরা এর আগেও করেছেন।

আমাদের দেশে চিন্তাও করত না। দু-একটা হয়েছিল অফিস। কিন্তু বাসাবাড়িতেও এটা করা যায়। ইট লাগে, শক্তিশালী জিনিস, দেখতে খুব সুন্দর লাগে। আমাদের দেশে মাটির বাড়ি ছিল গ্রে কালারের। আমি ও রকম একটা গন্ধ পাই। আমি দাবি করছি না, মাটির বাড়ি বানাচ্ছি। কিন্তু ও রকম একটা গন্ধ পাই। ছাইরঙা লেপা বাড়ি, ও রকম একটা ছাঁচ পাই। ওটা নিজেই একটি কবিতার মতো।

আমার সৌন্দর্য পাবেন ডিটেইলসগুলোতে। প্রকৃতি, পানি, কংক্রিটকে আমি এক করে ফেলেছি। আজ থেকে ১৫ বছর আগে কেউ চিন্তা করত? এখন অনেকেই করেন। আমার চেয়ে বেশিও কেউ কেউ করতে পারেন।

আমরা তো এখন অসহায়। কাজ পাব, খেতে পাব, নাকি দুনিয়ার সাথে কমপিট করে দেখাব, আমরা কম না? আমার এমনও দিন গেছে, ইউরোপের বার্লিনের রাস্তায় হাঁটছি, আর কাঁদছি। আমরা তো কিছু করতে পারব না। ওরা এত কিছু পারে, জানে। আমাদের না আছে টেকনোলজি, না আছে প্রজেক্ট। প্রজেক্ট দেখাতে হবে। সিভিল প্রজেক্ট।

মাঠ-ঘাট দেখাতে হবে। এই যে পাঠালাম প্যারিসে অ্যাওয়ার্ড পেয়ে গেল। বড়লোকের বাড়ি বানালে আর প্রাইজ দেয় না। এখন বলে, আর্কিটেকচার হ্যাজ চেইঞ্জড। মানুষের জন্য কী করেছে বলো। ১০-১২ বছর আগে পেয়েছি। এখন কিন্তু বড়লোকের বাড়ি করলে আর পাত্তা পাব না।

অনেক আর্কিটেক্ট আছে আমাদের চেয়ে ভালো আইডিয়া দিয়ে বসে থাকে। কত আর দিব? দিচ্ছি আর দিচ্ছি। এ জন্য আমি কাজের ধারা চেঞ্জ করে মানুষের জন্য কাজ করছি। ওল্ড ঢাকায় কাজ করছি। আমার কাজ হচ্ছে কবিতা তৈরি করা। আর্কিটেকচার দিয়ে কবিতা তৈরি করা। মানুষ যেন জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে পারে, শিখতে পারে, চিন্তা করতে পারে।

নিউজবাংলা: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলবেন?

রফিক আজম: আমি এখন পুরোপুরি শহরের কাজে নামছি। দেশ বললে তো পারব না। আমি ঢাকা শহর, বিশেষ করে পুরান ঢাকার কাজ যেভাবে শুরু করেছি, নদীর ধার, পুরোনো বাড়িঘর ইত্যাদি ঠিক করে, পুরান ঢাকায় ফরেস্ট এরিয়া বানানো যায় কি না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৮টি ওয়ার্ড পেয়েছে নতুন। ওয়ার্ড ১৮টি হলেও জায়গা কিন্তু আগের চেয়ে বেশি। ধ্বংস করার আগেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া দরকার।

নিউজবাংলা: এখন ঢাকার বিস্তৃত হবে মূলত পুব দিকে। ঢাকার একমাত্র পুব দিকেই এখনও প্রচুর উন্মুক্ত স্থান রয়েছে। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন আবাসিক প্রকল্প করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

রফিক আজম: ঢাকা শহরের জনঘনত্ব বেশি হয়ে গেছে। আপনি ইচ্ছে করলেই পুরান ঢাকা থেকে মানুষকে বের করে দিয়ে করতে পারবেন না। এখনই সুযোগ আছে পুব দিকে শহর ফ্লারিশ করা। কী পরিমাণ গ্রিন হবে, কী গাছ হবে, ট্রেনের ব্যবস্থা করা যায় কি না, পেরিফেরাল রোড ব্যবহার করা যায় কি না, পানিকে পুরোপুরি ট্রান্সপোর্টের রোড হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না।

কোর ঢাকার লোককে ডিস্ট্রিবিউশন, ডিসেন্ট্রালাইজ করতে পারেন। কোর ঢাকার লোক প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৫০ হাজার হতে পারে। কোনো কোনো স্পটে ১ থেকে দেড় লাখও রয়েছে। গেন্ডারিয়ায় লক্ষাধিক লোক বাস করে। ভাবা যায় বিষয়টি?

অনেক শহর আছে, ৫ হাজার লোক বাস করে। পৃথিবীর সর্বাধিক ঘনবসতির শহরগুলোর মধ্যে মুম্বাইয়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৭ হাজার লোক বাস করে। ম্যানিলায় ৪০ হাজার হতে পারে। ওদের অবস্থাও টাইট। আমরা ওই জায়গায় যাব কেন? আমাদের লোকজনদের ডিস্ট্রিবিউশন করার তো এখনও সুযোগ আছে। তারা যদি চলে যায়, ট্রেনে করে অফিসে আসবে অথবা ওখানেই অফিস-টপিস তৈরি করা যেতে পারে। তখন ঢাকার লোড কমতে থাকবে। পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে।

এখন যে পরিস্থিতি, এ সুযোগ কি সবসময় পাওয়া যাবে? এখন যে এত জমি পাওয়া গেল, সবসময় কি তা পাওয়া যাবে? কোথায় অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি তথা ফরেস্ট হবে, কোথায় সেন্ট্রাল ফরেস্ট হবে, ভেঙে ভেঙে কোথায় ফরেস্ট হবে, কোথায় ট্রেন হবে, পেরিফেরাল রোড কোথায় হবে, এভাবে চিন্তা করলে ঢাকাকে দারুণভাবে ফিরিয়ে আনা যায়।

এটাকে আমি একটা অপরচুনিটি মনে করি। গ্রেট অপরচুনিটি। এইবার যদি ভুল করি, তাহলে আমাদের আর জায়গা নেই। ঢাকাকে চাইলে এখন ভালো করা যায়। ঢাকা কেন রাজনীতির রাজধানী হবে, কেন কালচারাল রাজধানী হবে, কেন বিজনেসের রাজধানী হবে? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাগ করা হয়েছে। পাকিস্তানের ইসলামাবাদ কিন্তু শুধু পাকিস্তানের রাজধানী কিংবা কুয়ালালামপুর কিন্তু মালয়েশিয়ার রাজধানী নয়, রাজধানী পুত্রজায়া।

কেন ঢাকার মধ্যে সব হবে? মিলিটারি, এয়ারফোর্স সব কেন ঢাকায় হতে হবে? ফ্যাক্টরিগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। এসব যদি সরিয়ে ফেলা যায়, ঢাকা হবে বাংলাদেশের কালচারাল রাজধানী অথবা বিজনেস ও কালাচারাল রাজধানী; পলিটিক্যাল নয়।

এভাবে ঢাকাকে ভালো করা যায়। সবাই মিলে বসলে আরও আইডিয়া আসবে। এটা একটা অপরচুনিটি। এটাকে কাজে লাগাতে হবে।

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিনোদন
Baluka Municipality residents increase the misery when it rains a little

সামান্য বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগ বাড়ে ভালুকা পৌরসভা বাসিন্দাদের

সামান্য বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগ বাড়ে ভালুকা পৌরসভা বাসিন্দাদের

ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় কয়েক বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় এলাকাবাসী নানামুখী দুর্ভোগে পড়ছেন প্রতিনিয়তই ।

ভুক্তভোগীরা জানান, পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের তাহমিনা হাসপাতাল থেকে বাংলালিংক টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে বৃষ্টির পানি জমে থাকে দীর্ঘ সময়। অনেক বাসার নিচতলায়ও পানি প্রবেশ করছে। জলাশয় ভরাট, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা এবং ড্রেনেজ সমস্যার কারণে এ দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান তারা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, আগে এই এলাকায় এমন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন চারপাশের জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে, ড্রেন নেই, পানি বের হওয়ার রাস্তা নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা ঘাট ডুবে যায়। ঘরে পর্যন্ত পানি উঠে যায়।

গৃহিণী সালমা আক্তার জানান, রান্নাঘরে পানি ঢুকে গেলে চুলা জ্বালানোই যায় না। কখনো কখনো আমাদের বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। খরচও বাড়ে, কষ্টও হয়।

স্কুল শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার জানান, পানি জমলে রাস্তায় হাঁটা যায় না। স্কুলে যেতে জামা-জুতো ভিজে যায়। অনেকে তাই স্কুলেই যায় না।

ভালুকা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসাইন জানান, এই সমস্যার সমাধানে আমরা কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে কিছু জমি সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় আগে পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। এডিপির বরাদ্দ এলে আগামী অর্থবছরে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করা হবে।

মন্তব্য

বিনোদন
Tareq Rahmans gift distribution at Pujamandapa

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে তারেক রহমানের উপহার বিতরণ

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে তারেক রহমানের উপহার বিতরণ

আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কুমিল্লা মহানগরীর ১৩১টি পূজামণ্ডপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে নগদ৥৥৥ বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে নগরীর ধর্মসাগর পাড়স্থ কুমিল্লা মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উপহার প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপহার বিতরণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন।

অনুষ্ঠানে মহানগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে উপহার গ্রহণ করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারি আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিউর রাজিব, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকসহ মহানগর ও ওয়ার্ড বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সবসময় দেশের মানুষের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে বিএনপি। শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দলের পক্ষ থেকে প্রতিবারই বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।

হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন বলেন, “তারেক রহমান সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি সমান সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা পোষণ করেন। কুমিল্লার ১৩১টি পূজামণ্ডপে আজকের এই উপহার প্রদান তারেক রহমানের আন্তরিক ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি বিশ্বাস করে—একটি সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতেই হবে।”

অনুষ্ঠান শেষে পূজামণ্ডপ প্রতিনিধিরা বিএনপি ও তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ উৎসবকে আরও আনন্দঘন করে তোলে।

মন্তব্য

বিনোদন
Rohingya detained one by one

পারকির চরে একের পর এক রোহিঙ্গা আটক

সক্রিয় দালাল চক্রে, পর্যটন ও ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে
পারকির চরে একের পর এক রোহিঙ্গা আটক

নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ আনোয়ারা উপজেলার উপকূলবর্তী এলাকা পারকির চরে আটক হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এসব ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দালাল চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা পর্যটন ও ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় রোহিঙ্গা আটক হলেও, পালানোর এই প্রবণতা কমছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি সক্রিয় দালাল চক্র দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ভাসানচর থেকে পালিয়ে পারকির চর হয়ে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা সাধারণত ছোট ট্রলার বা নৌকায় করে হাতিয়া চ্যানেল অতিক্রম করে রাতের আঁধারে পারকির চর ও তার আশপাশের এলাকায় ওঠে।

বিশেষ করে বর্তমানে পারকির চর টানেল সার্ভিস এরিয়ার আশপাশের এলাকা রোহিঙ্গা পাচারের একটি ‘মূল রুটথ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর পারকির চর এলাকা থেকে ২৫ জন, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি ২০ জন, ১৬ সেপ্টেম্বর ৩১ জন এবং সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর আরও ৮ জন রোহিঙ্গা আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুরাও রয়েছে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয়রা পারকি বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও পাচার চক্রের তৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। টানেল সার্ভিস এরিয়ার আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ট্রলার থেকে নামার পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা দালাল চক্রের সদস্যদের অনেকবার ধরার চেষ্টা করেছি,কিন্তু তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় ধরা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও জানান, দালাল চক্রের একজনকে চিহ্নিত করে তার নাম ও ফোন নম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন বিরূপ মন্তব্য ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা পাচার বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আমাদের ব্যবসা এবং পর্যটন খাতের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে দাঁড়াবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ কাইয়ুম বলেন, পারকির চর ও আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গাদের আটক করেছে স্থানীয়রা। পরে আমরা তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি। এ ধরনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। এই পাচার বন্ধ করতে শুধু প্রশাসনের নয়, স্থানীয়দেরও সতর্ক থাকতে হবে।

আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন বলেন, নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ আনোয়ারা উপকূল এলাকা থেকে আটক হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে পাচার চক্রের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং নিয়মিত টহলও চলছে। পাশাপাশি স্থানীয় এলাকাবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

মন্তব্য

বিনোদন
Madaripurs young man died in Libya Mafias firing

লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে প্রাণ হারালেন মাদারীপুরের যুবক ঢালী

মানবপাচারকারীদের কঠিন শাস্তির দাবি করেছে পরিবার
লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে প্রাণ হারালেন মাদারীপুরের যুবক ঢালী

মাদারীপুর সদরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের জৈয়ার গ্রামের আবুল কালাম ঢালীর পুত্র জীবন ঢালী (২২)। স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যাবার জন্য দালালদের মাধ্যমে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়িয়ে দিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন লিবিয়ায়। সেখান থেকে ইতালিতে যাবেন, ফিরিয়ে আনবেন পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা- এমন আশা বুকে বেঁধে প্রায় ৬ মাস আগে বাড়ি ছেড়ে ছিলেন মাদারীপুরের সেই যুবক। দালালের প্রলোভনে পড়ে ভূমধ্যসাগর পথ পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশের স্বপ্ন ছোঁয়ার আশায় অনেকের সাথে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় বসেছিলেন তিনি। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস, শেষ পর্যন্ত ভাগ্য তার সহায় হয়নি। এরইমধ্যে লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতেই নিমিষেই শেষ হয়ে যায় তার জীবন প্রদীপ।

জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর লিবিয়ায় মাফিয়াদের ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারায় জীবন ঢালী। এমন একটি খবর ১৯ সেপ্টেম্বর তার নিজ বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড জৈয়ার গ্রামে পৌঁছালে শুরু হয় শোকের মাতম।

বিষয়টি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেসরে জমিনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে ছুটে যান গণমাধ্যমকর্মীরা।

শনিবার নিহতের পিতা আবুল কালাম ঢালী জানান, আমার ছেলেকে বিগত ছয় মাস আগে মানবপাচারকারী চক্র ভুলিয়ে-ভালিয়ে ইতালি যাবার প্রলোভনে মাথা নষ্ট করে ফেলে, আমরা তাকে প্রথমে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইতালি পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করি। কিন্তু সে তাতে রাজি না হয়ে আমাদের চাপাচাপি করতে থাকে। একপর্যায়ে আমরা রাজি হই, যেটা ছিলো আমাদের চরম ভুল। আজ আমরা সেই ভুলের খেসারত পুত্রের জীবনাবসানের মাধ্যেম পেলাম। আর যেন কোনো বাবা-মা তাদের ছেলেকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে না দেয়। আমরা এ হত্যার জন্য দায়ী মানব পাচারকারীদের কঠিন শাস্তি চাই।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, জীবন ঢালীর মৃত্যুর বিষয়টি লিবিয়ায় থাকা তার সফর সঙ্গীরা ফোন করে পরিবারকে নিশ্চিত করেছেন, গত ৮ সেপ্টেম্ব সাগরপথে গেম দিতে গিয়ে ঐ দিনই সে লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে নিহত হয়েছেন- যা তারা ধীরে-ধীরে জানতে পেরেছেন এবং গত ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে জীবন ঢালির নহতের বিষয়টি দেশে খবর আসে। প্রায় ৬ মাস আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘাটমাঝি ইউনিয়নের ঝিকরহাটি গ্রামের মানবপাচারকারী দালাল জনৈক রাসেল নামের একজন ও তাদের এজেন্ট হয়ে এলাকায় কাজ করা আরো কিছু দালালের প্রলোভনে পড়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাবার উদ্দেশ্য লিবিয়া যান জীবন ঢালী। দালাল রাসেল দেশে থাকেন না, তিনি বিদেশে বসে তার দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমেই সাগর পথে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা অন্যান্য বোটে লিবিয়া, তিউনিসিয়া রুটের ভুমধ্যসাগর পথ দিয়ে ইতালি-স্পেন সহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। লিবিয়ায় নেবার পরে সেখানে কয়েকমাস গেম ঘরে রাখা হয় ইতালি-স্পেন সহ ঐসব দেশে গমনেচ্ছু যুবক-তরুন ও বিভিন্ন বয়সের লোকদের। অনেক সময় গেম ঘরে রেখে বিভিন্ন কৌঁশলে তাদের মারধরও করা হয় কন্ট্রাক্ট করা টাকার চাইতে আরো বেশী টাকা আদায় করার জন্য। যে সব ভিডিও করেও বাংলাদেশে থাকা অভিভাবকদের দেখিয়েও অনেক সময় দূর্বল করে আরো অধিক টাকা আদায় করা হয়।

মাফিয়াদের গুলিতে নিহত হওয়া জীবন ঢালী সম্পর্কে এলাকাবাসী জানায়, সে অত্যন্ত একজন সহজ-সরল ও মিশুক ধরণের ভালো ছেলে ছিল। দালালদের খপ্পরে পড়ে এভাবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে বিষয়টি জানার পর থেকে তার পরিবারের আপনজনের পাশাপাশি আমরাও অত্যন্ত মর্মাহত, আমরা দায়ী দালালদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। এছাড়াও এ ঘটনায় রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে নিহতের পরিবারকে সহায়তা করার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো গ্রামবাসি

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. আদিল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক যুবক দালালের খপ্পরে পড়ে জীবন হারাচ্ছেন। মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দালালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য

বিনোদন
Water water

পানি নিষ্কাশন পথ মাটি দিয়ে ভরাটে জলাবদ্ধতা

সাটুরিয়ায় কৃষকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
পানি নিষ্কাশন পথ মাটি দিয়ে ভরাটে জলাবদ্ধতা হরগজ বাজার চৌরাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন স্থানীয় কৃষক

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় সেতুর পাশে দীর্ঘদিনের পানি নিষ্কাশনের পথ মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়ায় কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে ফসলহানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসী। শনিবার হরগজ বাজার চৌরাস্তায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন হয়। এর আগে বাজার প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কৃষকরা।

মানববন্ধনে কাজী শহিদুল্লাহ, কৃষক সাইদুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন ও স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বক্তব্য দেন। তারা অভিযোগ করেন, গত বছর ৫ আগস্ট রাতের আঁধারে বালুর চর এলাকায় সেতুর উত্তর পাশে পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথটি কয়েকজন প্রভাবশালী মাটি ফেলে বন্ধ করে দেন। ফলে সড়কের দুই পাশের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে পানি আটকে গিয়ে ধান, ভুট্টা ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

মানববন্ধনে কাজী শহিদুল্লাহ বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী আনোয়ার, ফরিদ ও আলতাফ মাটি ভরাটে সহযোগিতা করেছেন। এর ফলে সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার একর জমিতে পানি আটকে থেকে ধান ও সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগে এ পানি খাল হয়ে ধলেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ত, কিন্তু এখন জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাইদুর রহমান জানান, তার জমির পানি বের হতে না পারায় ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মাঠে পানি জমে আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সামনে শীতকালে রবিশস্যও চাষ করা সম্ভব হবে না, যদি দ্রুত এর সমাধান না হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই বালুর চকে শত শত কৃষকের ভুট্টা, ধান ও বিভিন্ন সবজি নষ্ট হচ্ছে।

অন্যদিকে বেলাল হোসেন বলেন, সেতুর পাশে হানিফ আলী, ঝর্ণা বেগমসহ কয়েকজন জমি কিনেছেন। কিনে নেওয়া জমির চেয়ে বেশি জায়গা দখল করে নিষ্কাশন পথ ভরাট করা হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমিতে পানি জমে ফসল নষ্ট হচ্ছে।

মানববন্ধনে কৃষকরা দ্রুত নিষ্কাশন পথ খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি পূরণ না হলে উপজেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জমির মালিক হানিফ আলী ও ঝর্ণা বেগম দাবি করেন, তারা নিজেদের কেনা জমিতেই মাটি ভরাট করেছেন। অপরদিকে মাটি ভরাটে সহায়তাকারী ফরিদ বলেন, জমির মালিক খুব গরিব, নিজেদের জমি ভরাট করেছে। কিন্তু একটি পক্ষ চাঁদা না পেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ হাতে পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

মন্তব্য

বিনোদন
Fire service workers in Sonimuri accuses torture

সোনাইমুড়ীতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ

সন্তানসহ স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন
সোনাইমুড়ীতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ

স্ত্রী সন্তানের অবহেলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ফায়ার সার্ভিস কর্মীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী স্ত্রী। এ সময় তার দুই ছেলে উপস্থিত ছিলেন। শনিবার দুপুর সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও শফিউল্লার মেয়ে রোজিনা আক্তার পশ্চিমপাড়া বায়তুল হুদা তালিমূল নূরানী মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০১৩ সালে পার্শ্ববর্তী বজরা ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের আব্দুল খালেক এর পুত্র আব্দুল্লাহ বিজয়ের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। তাদের মেহেদী হাসান (১১) ও রেজওয়ান হাসান (৫) নামে দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্বামী চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিসে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত আছে। ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগদান করার কথা বলে তার কাছ থেকে ৪ লাক টাকা নেয়। ২০২১ সালে সে গোপনে অন্যত্রে আরেকটি বিবাহ করে। বিয়ে করার পর থেকে ওই দুই ছেলে এবং তার স্ত্রীর কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। উল্টো মানসিক নির্যাতন শুরু করে। মাঝে মধ্যে এখানে এসে শারীরিক নির্যাতনও করেছে। এ নিয়ে ২০২২ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো কূলকিনারা পাননি। ফায়ার সার্ভিস কর্মী চাকরির পূর্বে বিয়ে করার বিষয়টি গোপন করে।

ভুক্তভোগী রোজিনা আক্তার আরও জানান, তার স্বামীর এসব কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় মাতব্বর, সোনাইমুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কয়েকবার এ নিয়ে সালিশ-বৈঠক হয়েছে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তার স্বামীর বিচার দাবি করেন।

মন্তব্য

নেত্রকোনার ধলাই নদীর প্রাণ ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগ

কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান শুরু করেছে পৌরসভা
নেত্রকোনার ধলাই নদীর প্রাণ ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগ

নেত্রকোনার ধলাই নদীর প্রাণ ফেরাতে পৌরসভার উদ্যোগে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান শুরু করা হয়েছে। নেত্রকোনা জেলা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা ধলাই নদী আজ আর আগের মতো নেই। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নদীটি কচুরিপানায় ভরে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক গতি ও সৌন্দর্য। তবে এবার নদীটিকে তার হারানো প্রাণ ফিরিয়ে দিতে শুরু হয়েছে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান। শনিবার সকাল ১০টায় নেত্রকোনা পৌরসভার উদ্যোগে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় এই মহৎ উদ্যোগের সূচনা হয়। নদীটির পুনর্জাগরণে এই সম্মিলিত প্রয়াস শুধু পরিবেশ নয়, বরং জনজীবন, কৃষিকাজ ও স্থানীয় অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধান অতিথি হিসেবে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানের উদ্বোধন করেন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। এছাড়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান দুদু জেলা বিএনপি নেতা ইসলাম উদ্দিন খান চঞ্চল। কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান শুরুর আগে স্বাগত বক্তব্যে নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন, ধলাই নদীর প্রাণ ফিরিয়ে দিয়ে এবং দূষণমুক্ত করতেই পরিষ্কার অভিযান শুরু হয়েছে। পৌর নাগরিকদের জীবন মান উন্নয়ন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সবুজ প্রকৃতি ও পরিষ্কার নদী রক্ষায় পৌরসভা সবসময় জনগণের পাশে আছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই উদ্যোগ স্থানীয়দের মাঝে নতুন আশার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে জানিয়েছেন, ধলাই নদী তার প্রাকৃতিক রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে, যা কৃষিকাজ, নৌযান চলাচল এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নদী রক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি, জনগণের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও মনে করছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

মন্তব্য

p
উপরে