পর পর দুই টি-টোয়েন্টি জিতে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদেরকে আগেই আন্ডারডগ বানিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সিরিজ রক্ষার ম্যাচের চেয়ে অজিদের কাছে তৃতীয় এই টি-টোয়েন্টিটা ছিল সম্মান বাঁচানোর লড়াই। তবে সফলকাম হলো না এবারও।
মিরপুরের শের-ই-বাংলায় জানপ্রাণ দিয়ে লড়ে তৃতীয় ম্যাচে মাঝেমধ্যে উজ্জ্বলতা ছড়ানো অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত হেরেই গেল। আর ৫ ম্যাচের সিরিজে অবিশ্বাস্যভাবে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ও স্পিকার।
করোনাকালে বাংলাদেশ সফরে এসে শর্তের পর শর্ত দিয়ে আলোচনায় এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। সব মেনেই আসতে দিয়েছে বাংলাদেশ। যেন পরিকল্পনাটি ছিল মাঠেই জবাব দেয়ার।
হলোও তাই। প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৩১ রান করে অস্ট্রেলিয়াকে ১০৮ রানে বেঁধে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম জয়টা পেয়েছিল টাইগাররা।
দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার টসে জিতে আর বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর ঝুঁকি নেয়নি। কিন্তু তাতে ম্যাচের ফলাফল পাল্টেনি। এবার বাংলাদেশ জিতল পরে ব্যাটিং করে, পাঁচ উইকেটে।
তখন অস্ট্রেলিয়ার কাছে তৃতীয় ম্যাচ হয়ে পড়ে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে। আর বাংলাদেশ টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেয়। মন্থর উইকেটে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশের দুই ওপেনার।
এবারও ফলাফল, ছোট স্কোর করেও সফরকারীদের বেঁধে রাখা।
বাংলাদেশ ২০ ওভারে তুলেছিল ১২৭ রান। ৬ এর কিছু বেশি আস্কিং রেট তাড়া করতে গিয়ে এক পর্যায়ে ১ উইকেটে ৭১ রান তুলে ফেলার পরেও সফরকারীরা হারল ১০ রানে।
ম্যাচে চরম উত্তেজনা দেখা দেয় শেষ ওভারে। তখন ২২ রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সম্ভাবনা দেখাতে পারবে, এমনটি ধারণাও ছিল না। তবে প্রথম বলে অ্যালেক্স ক্যারি ছক্কা মেরে তরুণ মাহেদী হাসানকে চাপে ফেলে দেন।
তবে দ্বিতীয় বলে ১ আর তৃতীয় বল ডট দেয়ার পর নিয়ন্ত্রণ আবার বাংলাদেশের দিকে নিয়ে আসেন তরুণ টাইগার। তবে ৩ বলে দরকার ১৫, এই অবস্থায় আবার একটি নো বল করে বসেন তিনি। সেই বলে হয় আরও একটি রান।
ফলে তিন বলে তখন দরকার হয় ১৩। ভীষণ চাপ। কিন্তু এরপর ভেলকি দেখান মাহেদী। কিন্তু ‘ফ্রি হিটের’ বলটি রাউন্ড দ্য ইউকেটে এসে ব্যাটসম্যান ক্যারির বুটের কাছাকাছি ফেলেন। যেভাবেই মারেন আউট হবেন না, এমন বলে সপাটে চালাতে পারেননি ব্যাটসম্যান। আসে ১টি রান।
২ বলে দরকার দুই। জিততে হলে মারতে হবে দুটি ছক্কা। ক্রিজে ড্যান ক্রিশ্চিয়ান। ফুল লেংন্থে ব্যাটসম্যানের একটু নাগালের বাইরে জোরের ওপর দেন মাহেদী। সপাটে চালাতে এবারও ব্যর্থ। রান হয়নি একটিও।
এক বলে দরকার ১২। নো বা ওয়াইড না হলে ম্যাচ বাংলাদেশের। এই অবস্থায় কোনো ঝুঁকি না নিয়ে মাহেদী সোজা বল দিলেন। একেবারে ফ্ল্যাট ডেলিভারি। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক চাপের কারণেই কি না, এবারও বলকে সীমানায় পাঠাতে ব্যর্থ ক্রিশ্চিয়ান। রান হলো একটি মাত্র। ফল বাংলাদেশের জয় ১০ রানে।
করোনার কারণে খালি স্টেডিয়ামে সিরিজ জেতার আনন্দটা পূর্ণাঙ্গ হয়নি। যা কিছু উল্লাস, তার সিংহভাগই তখন টেলিভিশনের সামনে।
তবে টাইগাররা তখন গর্জন করছে মাঠে। তাদের আনন্দ বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো আছড়ে পড়েছে মাঠে। উল্টো চিত্র অজি শিবিরে। অতীতে একবার ওয়ানডে আর একটি টেস্টে হারা দলটি বাংলাদেশকে কোনো টি টোয়েন্টিতে এর আগে পাত্তাও দেয়নি। সেই তাদের কাছেই পরপর তিনটি ম্যাচের পরাজয় যেন হজম হচ্ছিল না সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
কিন্তু মেনে না নিয়ে উপায় নেই। আর হতাশার ছাপ তখন সফরকারীদের চোখে মুখে স্পষ্ট। মাথা নুইয়ে মাঠ থেকে বিদায় হন তারা।
ম্যাচের নায়ক নিঃসন্দেহে টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কঠিন উইকেটে এক প্রান্ত আগলে ধরে তার অমূল্য ৫১ রানেই লড়াইয়ের স্কোরটি করেছিল স্বাগতিকরা। ম্যান অব দ্য ম্যাচও উঠে তার হাতেই।
বোলিংয়ে সেরা পেইসার শরীফুল ইসলাম। তবে ২টি উইকেট শিকার করলেও তিনি রান দিয়ে বসেন ২৯। এই উইকেটে যেটি একটু বেশিই বলা যায়।
তবে বোলিংয়ের নায়ক বলতে হবে মুস্তাফিজকে। কিপটেমি বলতে কী বোঝায় তা করে দেখিয়েছেন তিনি। ২৪ বলে ১৫টি ডট বল, ২ ওভারে যখন দরকার ২৩ রান, তখন তার ৫টি ডটবল বাংলাদেশকে বলীয়ান করে। ওই ওভারে হয় মাত্র ১ রান।
প্রথম ম্যাচে চার উইকেট শিকার করে নায়ক নাসুম আহমেদ শুরুর উইকেটটি পেলেও পরে আর কাউকে সাজঘরে ফেরাতে পারেননি। ৪ ওভারে রান দেন ১৯টি।
সাকিব আল হাসান ২২ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিকার করেন একটি উইকেট। আর সৌম্য এক ওভারে দেন ৯ রান।
১২৮ রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট পড়ে ৮ রানে। অধিনায়ক ম্যাথিউ ওয়েডকে ফেরান নাসুম আহমেদ। এরপর অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়েন মিচেল মার্শ ও বেন ম্যাকডারমট। তারা স্কোর নিয়ে যান ৭১ রানে।
তখন ওভার চলে ১৪ তম ওভার। আক্রমণে এসে ম্যাকডারমটকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান সাকিব। এরপর ৭৪ রানে মোয়েজেস এনরিকসকে ফেরান শরিফুল। আর সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফর ব্যাটসম্যান মার্শ ব্যক্তিগত ৫১ ও দলীয় ৯৪ রানে যখন ফিরে যান, তখন অস্ট্রেলিয়া দল কাঁপছে।
এরপর মুস্তাফিজের স্লোয়ার আর বুদ্ধিদীপ্ত কাটারে ব্যাটই লাগাতে পারছিলেন না সফরকারীরা। আর রান আস্কিং রান রেট বেড়ে শেষ ওভারে গিয়ে দাঁড়ায় ২২ রানে। যা করা অসম্ভব প্রায় এই উইকেটে।
বাংলাদেশের স্কোর এগিয়েছে যেভাবে
এর আগে বাংলাদেশের শুরুটাও ভালো হয়নি।
ম্যাচে দলীয় তিন রানেই পরপর সাজঘরে ফেরেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও সৌম্য সরকার। আর শুরুতেই আঘাতে রানের গতি যায় কমে। ৫ ওভারে রান উঠে ২০।
এমন বিপর্যয়ে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান এবং অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। মন্থর গতিতে হলেও সচল রাখেন রানের চাকা।
কিছুক্ষণ রয়ে সয়ে খেলার পর মারমুখী হন সাকিব। বাড়াতে থাকেন রানের গতি। তাকে বেশি দূর এগুতে দেননি অজি স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা। তার বলে অ্যাস্টন এইগারের তালুবন্দি হয়ে ১৭ বলে ২৬ করে ফেরেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।
আগের ম্যাচে জয়ের নায়ক আফিফ হোসেন এই ম্যাচে বেশিদূর এগুতে পারেননি। ১৩ বলে ১৯ করে অ্যালেক্স ক্যারির ডিরেক্ট হিটে রান আউট হন তিনি। তাতে ৭৬ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
তিন রান করে জশ হেইজলউডের স্লো বাউন্সারে বড় শট খেলতে গিয়ে বেন ম্যাকডরমটের হাতে ক্যাচ তুলে দেন শামীম হোসেন। সেই রেশ না কাটতেই মাহমুদুল্লাহর ভুলে রান আউন হন নুরুল হাসান সোহান।
উইকেট কামড়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে পঞ্চম অর্ধশতক।
৫৩ বলে চার বাউন্ডারিতে ৫২ রান করা মাহমুদুল্লাহ শিকার হন অস্ট্রেলিয়ার অভিষিক্ত নেইথান এলিসের। শেষ ওভারের চতুর্থ বলে বোল্ড হন তিনি। ততক্ষণে লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। উইকেট হারায় ৯টি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাকিব আল হাসান করেন ২৬ রান। আফিফ হোসেন করেন ১৯ রান।
শেষ ওভারের শেষ তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে নিজের অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ান পেইসার নেইথান এলিস।
দুই দলের সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ ৭ ও ৯ আগস্ট।
আরও পড়ুন:3-0 🐯
— Bangladesh Cricket (@BCBtigers) August 6, 2021
Bangladesh beat Australia by 10 runs in the third T20I and seal the series 👏#BANvAUS #RiseOfTheTigers pic.twitter.com/LGqwwnU28B
কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস ও প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র কুক্ষিগত করার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবি বাস্তাবায়নের দাবিতে ফুঁসে ওঠেছে কারিগরি শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন তারা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীর ও বাসচালকরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ— প্রভাবশালী গোষ্ঠী কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। তারা পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে প্রকৌশল পেশায় প্রবেশের পথ সংকুচিত করছে। এ ছাড়া চাকরি ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল, তাদের পদবি পরিবর্তন ও সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করা।
২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল ও বিতর্কিত নিয়োগবিধি সংশোধন।
ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তি বাতিল, উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু এবং ধাপে ধাপে ইংরেজি মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা।
উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বাদ দিয়ে নিম্নপদে নিয়োগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবলকে কারিগরি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিষিদ্ধ ও আইনানুগভাবে নিশ্চিত করা।
এসব পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন।
উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ের নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতায় একাডেমিক কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করা।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কৃতি সন্তান, বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি জালাল চৌধুরী (মাসুম) ইন্তেকাল করেছেন। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ৬টার দিকে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মরহুমের ভাই রোমান চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগলেও হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার ছোট ভাই জালালের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী (২২তম বিসিএসের সচিব), দুই ছেলে, অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী।
তিনি আরও জানান, সকাল ৯টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ গ্রামের বাড়ি কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের মনসুর গ্রামে নেওয়া হবে। বাদ এশা মনসুর আশরাফিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হবে।
জানা গেছে, পেশাজীবনে জালাল চৌধুরী ছিলেন দক্ষ, সৎ ও মানবিক একজন পুলিশ কর্মকর্তা। দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন লেখক, চিন্তাশীল মেধাবী ও সত্যিকারের মানবিক মানুষ। সম্প্রতি তিনি পুলিশ সংস্কার কমিশনের সচিবালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। নিজ এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও তার অবদান ছিলো স্মরণীয়।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও রেখেছেন অবদান। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে প্ল্যানিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ পুলিশ তার ওপর একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করে যা প্রকাশিত হয় জাতিসংঘ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে।
পেশাগত জীবনের পাশাপাশি তিনি ছিলেন সাহিত্যপ্রেমী। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার ছিলেন তিনি। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে কোথায় পাবো তাকে, নির্বাসিত হৃদয়ে এসো, ইরোটা ম্যানিয়া এবং ছোটগল্প সংকলন।
ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ও ব্যবসায়ীদের ন্যায্যমুল্যে দেওয়ার দাবীতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
বুধবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ডে এ কর্মসূচীর আয়োজন করে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে ব্যবসায়ী, স্থানীয়সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেয়।
সেসময় ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক আলহাজ শহিদুল ইসলাম, বদরুজ্জামান, ডা: জহুরুল ইসলাম, কমিশনার আনোয়ারসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা অভিযোগ করেন, জমির মালিকদের ২০২২ সালের মৌজা মুল্য দেওয়া হচ্ছে। যেসব জমির দাম ১০ লাখ টাকা সেই জমির দাম দেওয়া হচ্ছে ২ লাখ টাকা করে। এছাড়াও একটি বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পুর্ণ ক্ষতিপুরণ না দিয়ে আংশিক দিচ্ছে কর্র্তৃপক্ষ। তাই মালিক ও ব্যবসায়ীদের ন্যায্য মুল্যে নিশ্চিতের দাবী জানানো হয়।
পরে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় ঝিনাইদহ থেকে যশোর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গাগামী সকল রুটের যানচলাচল। প্রায় ১ ঘন্টাপর আবারো কর্মসূচীর হুশিয়ারি দিয়ে অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবী দুর্গার আগমন উপলক্ষে ইতোমধ্যেই ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এবছর উপজেলায় ১২৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে দুর্গাপূজা, যা চলবে ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী পর্যন্ত। ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।
উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে—খড়, বাঁশ ও কাদা-মাটি দিয়ে শিল্পীরা শৈল্পিক ছোঁয়ায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিমা কারিগর মনেন্দ্র পাল (৫৭) বলেন, “প্রতি বছর প্রায় ৫০-৫৫টি মণ্ডপে কাজ করি। কিন্তু এবার মাত্র ৩২টি মণ্ডপের প্রতিমা বানানোর কাজ করছি। প্রতিটি প্রতিমার দাম প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা ধরা হচ্ছে।” একই কথা জানিয়েছেন কারিগর বিজয় পালসহ অন্যান্য শিল্পীরাও।
নবীনগর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক সঞ্জয় সাহা বলেন, “এবার উপজেলায় ১২৭টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তা ও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী জানান, “আসন্ন দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী মিটিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে পারিবারিক কলহের জেরে বাবাকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তা ভর্তি করে বসতভিটার পাশে মাটি চাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাইয় অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেপ্তা্ার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার অন্তত ৩৬ ঘন্টার পর প্রকাশ পায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের দক্ষিণ ডেইলপাড়া কুরিমারিয়ারছড়া এলাকায় পৌঁছায়। পরে রাত ৯ টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় মাটি খুড়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, নিহত মোহাম্মদ ছৈয়দ (৫০) একই এলাকার বাসিন্দা। গ্রেপ্তারকৃৎ মোহাম্মদ রফিক নিহত মোহাম্মদ ছৈয়দের ছেলে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহত ও গ্রেপ্তার ব্যক্তি সম্পর্কে বাবা-ছেলে। মোহাম্মদ ছৈয়দের সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। তিনি কয়েক বছর আগে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে খুরুশকুলের কুমারিয়ারছড়া এলাকায় এসে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। পুরো পরিবারটি রোহিঙ্গা নাগরিক।
নিহতের প্রতিবেশিসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে মোহাম্মদ সৈয়দের বাড়ির আশেপাশের উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ালে এলাকাবাসীর সন্দেহ জাগে। এক পর্যায়ে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে তার বাড়ির ধানক্ষেতের পাশে সদ্য মাটি চাপা দেওয়া একটি শার্ট দেখতে পান। সেখান থেকে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পুলিশকে অবহিত করা হয়। পরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলের পৌঁছার পর মাটি সরিয়ে বস্তাবন্দী অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তারকৃত রফিকের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, ‘সোমবার ভোরে তার শ্বশুর মোহাম্মদ ছৈয়দ স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। সকালে বাড়ী ফিরলে শ্বাশুরির সঙ্গে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে তার স্বামীও কলহে জড়িয়ে পড়েন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্বামী রফিক বাবাকে লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করেন। আঘাতে তার শ্বশুর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আহত হন। পরে তার মৃত্যু হলে লাশটি বস্তাবন্দী করে ঘরে ফেলে রাখা হয়।
ঘটনার ব্যাপারে কারও কাছে প্রকাশ করলে বাবার মত পরিণতি ভোগ করারও হুমকি দেন তার স্বামী, জানান অভিযুক্তের স্ত্রী।
এদিকে সোমবার মধ্যরাতে ঘটনা ধামাচাপা দিতে সৈয়দের স্ত্রী, দুই সন্তান রফিক ও সাহাবউদ্দিন জিয়া মিলে গত সোমবার রাত ১০টার দিকে বাড়ির পাশে ধানক্ষেতে মাটি চাপা দিয়ে লাশ পুঁতে রাখেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ছৈয়দের স্ত্রী ও সন্তানরা পালিয়ে আত্মগোপন করেন।
পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণার কথা বলেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াছ খান।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার পর পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় মাটি সরিয়ে বস্তাবন্দী লাশটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে নিহতের ছেলে মোহাম্মদ রফিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলা নথিভূক্ত হওয়ার পর জড়িত অন্যদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত একটার দিকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সাতটি ট্রাকে ইলিশ পাঠানো হয়। ৩৭ দশমিক ৪৬ মেট্রিক টন ইলিশ নিয়ে ট্রাকগুলো ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামীম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারতের কলকাতার ৫টি প্রতিষ্ঠান ইলিশ আমদানি করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ন্যাশনাল ট্রেডিং, এফএনএস ফিশ, জয় শান্তসী, মা ইন্টারন্যাশনাল ও আর জে ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি করেছে সততা ফিশ, স্বর্ণালি এন্টারপ্রাইজ, তানিশা এন্টারপ্রাইজ, বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ ও লাকী ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ সরকার আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ভারতে মোট এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।
এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করতে পারবে ৫০ টন ইলিশ, ২৫টি প্রতিষ্ঠান ৩০ টন করে (৭৫০ টন), ৯টি প্রতিষ্ঠান ৪০ টন করে (৩৬০ টন) এবং দুটি প্রতিষ্ঠান ২০ টন করে (৪০ টন) ইলিশ ভারতে রপ্তানি করতে পারবে।
বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টিন কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, ‘প্রতিকেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলারআগামী ৫ অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।’
লিবিয়ার উপকূলে সুদানি শরণার্থীবাহী একটি নৌকায় আগুন লাগার ঘটনায় অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, ওই দুর্ঘটনার সময় নৌকাটিতে ৭৫ জন শরণার্থী ছিলেন।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
আইওএম জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ২৪ জনকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছে, সমুদ্রপথে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এর আগেও সমুদ্রপথে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। গত মাসে ইয়েমেন উপকূলে একটি নৌকা ডুবে অন্তত ৬৮ শরণার্থী ও অভিবাসীর মৃত্যু হয়, নিখোঁজ হয় আরও অনেকে।
আইওএম-এর তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত বছরই ভূমধ্যসাগরে ২ হাজার ৪৫২ অভিবাসী বা শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সমুদ্রপথগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
২০১১ সালে লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে দেশটি আফ্রিকা থেকে ইউরোপগামী শরণার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে। গাদ্দাফির আমলে আফ্রিকার বহু মানুষ লিবিয়ায় কাজ করলেও তাঁর পতনের পর দেশটিতে বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সংঘাতে স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়।
গত আগস্টে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের কাছে দুটি নৌকা ডুবে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়। তার আগে জুন মাসে লিবিয়া উপকূলে দুটি জাহাজডুবিতে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয় বা নিখোঁজ হন।
মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা বলছে, লিবিয়ায় আটক শরণার্থী ও অভিবাসীরা নিয়মিতভাবে নির্যাতন, ধর্ষণ ও অর্থ আদায়ের শিকার হচ্ছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিবাসন ঠেকাতে লিবিয়ার কোস্টগার্ডকে সরঞ্জাম ও অর্থসহায়তা দিয়েছে। কিন্তু ওই কোস্টগার্ডের সঙ্গে নির্যাতন ও অপরাধে জড়িত মিলিশিয়ার সম্পর্ক থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এনজিওগুলো বলছে, সরকারি সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ কার্যক্রম কমিয়ে দেওয়ায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সীমিত করায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া অভিবাসীদের জীবন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে যুদ্ধ, সংঘাত ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা বহু মানুষ লিবিয়ায় আটকে পড়ছেন এবং অমানবিক অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
মন্তব্য