মঙ্গলবার পর্যন্ত খবর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলছেন মুশফিকুর রহিম। হঠাৎ বুধবার সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। পারিবারিক কারণে দেশে ফিরছেন তিনি।
বিসিবির বিজ্ঞপ্তিতে কারণ জানান হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মুশফিকুর রহিমের বাবা মাহবুব হামিদ ও মা রহিমা খাতুন।
মুশফিকুরের ভাই মোজাহিদুর রহিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুজনই করোনায় আক্রান্ত। তবে গতকাল রাতে হঠাৎ করে বাবা অক্সিজেন সমস্যায় ভুগছিলেন। শরীর আরও খারাপ করছিল তাই তাকে ঢাকায় নেয়া হচ্ছে। মায়ের শরীর মোটামুটি ঠিক আছে।’
মাহবুব হামিদকে ঢাকায় এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে বলে জানান তিনি। এমন ঘটনা শোনার পরপরই বিসিবিকে অনুরোধ জানান মুশফিকুর।
পারিবারিক কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় ফেরার কথা মুশফিকের।
বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের ওয়ানডে সিরিজ শুরু ১৬ জুলাই। তার আগে ১৪ জুলাই এক দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। ১৬, ১৮ ও ২০ জুলাই হবে তিনটি ম্যাচ।সবগুলো ম্যাচই হবে হারারেতে।
একই ভেন্যুতে দুই দলের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হচ্ছে ২৩ জুলাই। ২৫ ও ২৭ জুলাই হবে পরের ম্যাচ দুটি।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় হরতাল সমর্থনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মশাল মিছিল থেকে গাড়িতে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ ও দোকানপাটে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ সময় ফতুল্লা থানা স্বেচ্চাসেবক দলের সদস্য সচিবকে আটক করে পুলিশ।
ফতুল্লার পঞ্চবটী মুক্তারপুর সড়কের ভুলাইল এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
ফতু্ল্লা মডেল থানার ওসি নূরে আজম মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানায়, রাত আটটার দিকে বিসিক সড়কের ভুলাইল এলাকা থেকে মশাল মিছিল বের করে থানা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতা-কর্মী। মশাল মিছিল থেকে হরতালের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা একটি তেলবাহী ট্রাকসহ তিনটি যানবাহন ভাংচুর করে।
মিছিল থেকে একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন দেয় এবং কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় নেতা-কর্মীরা। এ সময় রাস্তার পাশের কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুর চালানো হয়।
খবর পেয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ধাওয়া করে ফতুল্লা থানা স্বেচ্চাসেবক দলের সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদকে আটক করে।
ওসি নূরে আজম মিয়া বলেন, ‘মশাল মিছিলসহ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে ট্রাকে ভাংচুর করা হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ ধাওয়া করে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিবকে আটক করেছে। যারা হরতালের নামে সড়কে নাশকতা চালিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন ও তা নিয়ে প্রশ্ন করতে গিয়ে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর রোষের শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে ক্ষেপে যান তিনি। এ সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন সাংবাদিকদের।
বিপুল পরিমাণ নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসায় নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কি না- এমন প্রশ্ন করতেই তিনি প্রশ্নকারী ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক রাকিব উদ্দিনকে ঘুষি দেন। এসময় তার কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে মারধর শুরু করেন সংসদ সদস্যের কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় তারা মাছরাঙা টেলিভিশনের মাইক্রোফোন ও ট্রাইপড আছড়ে ভেঙে ফেলেন। পাশাপাশি আরও কয়েকজন সাংবাদিকের মাইক্রোফোন ও ক্যামেরা ভাঙচুর করেন।
এ ঘটনায় দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
মারধরের শিকার সাংবাদিক রাকিব উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী ৫ জনের বেশি নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি অনেক নেতা-কর্মী নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আসেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করায় আমার ওপর হামলা করেন এবং মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে ফেলে দেন। তিনি আমাকে পরবর্তীতে দেখে নেয়ারও হুমকি দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কাছে সাংবাদিকরা মৌখিক অভিযোগ দিলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে এই বিষয়ে অভিযোগ পেলে ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীর অভিযোগসাপেক্ষে ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভুক্তভোগী সাংবাদিককে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন এ কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে মিছিলের নেতৃত্বদান, দলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করাসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে বেশ কয়েকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পর আবারও ‘নৌকা ভাগিয়ে নিয়ে’ আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছেন বিতর্কত এই নেতা।
আরও পড়ুন:আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাদারীপুর-৩ ও বরিশাল-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস।
মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদারীপুর এবং বিকেলে বরিশালে মনোনয়নপত্র জমা দেন এ শিল্পী।
রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর-৩ আসনে প্রার্থিতার জন্য গত ২৭ নভেম্বর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন নকুল কুমার বিশ্বাস। ২৯ নভেম্বর তিনি বরিশাল-২ আসনের জন্যে মনোনয়নপত্র নেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে নকুল কুমার বিশ্বাস জানান, দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভক্ত-অনুরাগীদের অনুরোধে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হলে সুখে-দুঃখে ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মানুষের পাশে থাকবেন। বিগত দিনেও তিনি এলাকার জন্যে নিবেদিত ছিলেন; আগামীতেও থাকবেন।
নকুল কুমার বিশ্বাস ১৯৬৫ সালে মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামের এক সংগীত অনুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। তার বাবা নাম সুরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এবং মা মঙ্গলী দেবী। মাত্র ৮ বছর বয়সে যাত্রার দলে শিল্পী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার সংগীতের ক্যারিয়ার শুরু হয়। সেই থেকে যাত্রাসহ গ্রাম ও শহরাঞ্চলে অনেক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করছেন তিনি।
গানের পাশাপাশি তিনি সেতার, তবলা, বাঁশি, সরোদসহ নানারকম বাদ্যযন্ত্রে পারদর্শী। হারমোনিয়াম বাজানোতে রয়েছে তার বিশেষ দক্ষতা।
বাংলাদেশ বেতারে যন্ত্র ও সংগীতশিল্পী হিসেবে চাকরি করেছেন অনেক দিন, তবে ক্যারিয়ারে তার সেরা সুযোগটি আসে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ইত্যাদিতে গান পরিবেশনের সুবাদেই শ্রোতা-দর্শকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে নকুল কুমার বিশ্বাস জানান, তার পূর্বপুরুষ হরনাথ বাইন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের এমপি। বরিশালের সাতলা গ্রামে সাবেক এ সংসদ সদস্যের একটি বাড়ি আছে। এ কারণে বরিশাল ও মাদারীপুর দুই জায়গা থেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন তিনি।
আরও পড়ুন:আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর গত ২৯ অক্টোবর সকাল ৬টায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। সেই হিসাবে বুধবার (২৯ নভেম্বর) পর্যন্ত টানেল যুগে এক মাস পাড়ি দিয়েছে দেশ। এই এক মাসে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৯৭টি যানবাহন বঙ্গবন্ধু টানেল পাড়ি দিয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ। এসব যানের বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১২ লাখ ২১ হাজার টাকা।
২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু টানেলের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে ২০২৫ সাল পর্যন্ত টানেল দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টির বেশি যান চলাচলের কথা এ টানেল দিয়ে। তাছাড়া সম্ভাব্য যান চলাচলের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আদায় করা টোল থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ১২৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। টানেল উদ্বোধনের পরবর্তী ৫০ বছরে শূন্য দশমিক ১৬৬ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে টানেল চালুর পর সেতু বিভাগের তথ্য বলছে, গেল এক মাসে গড়ে দৈনিক ৫ হাজার ৬৫২টি যান বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে চলাচল করেছে। আর টোল হিসেবে দৈনিক গড়ে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ২৯ হাজার ১০০ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। যান চলাচলের সংখ্যা ও লক্ষ্যমাত্রার এত বিশাল তারতম্যে টানেল থেকে সরকারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই এক মাসে টানেল দিয়ে যেসব যান চলাচল করেছে তার অধিকাংশই ব্যক্তিগত। এখনও টানেল দিয়ে নির্দিষ্ট কোনো রুটের গণপরিবহন চালু হয়নি। তাছাড়া দূরপাল্লার অনেক বাস এখনও শাহ-আমানত সেতু দিয়ে কর্ণফুলি পাড়ি দিচ্ছে। ফলে বঙ্গবন্ধু টানেলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে চলাচলকারী সব যানবাহনের চাপ পড়ছে না।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী তানভীর রিফা বলেন, ‘টানেল দিয়ে এখনও পুরোপুরি বাণিজ্যিক যান চলাচল শুরু হয়নি। কারণ দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও মাতারবাড়ীকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি।’
অন্যদিকে টানেলের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া প্রতি ৫ বছর পর পর টানেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের প্রতিস্থাপন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে টানেল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে খরচ হবে আরও ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার।
টানেল নির্মাণে ব্যয় করা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে দুই শতাংশ সুদে বাংলাদেশকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয় চীন। ২০২৫ সাল থেকে টানেলের আয় দিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করবে সরকার। কিন্তু বর্তমানে যে হারে টোল আদায় হচ্ছে তা চলতে থাকলে বছরে আয় হবে ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা, যা প্রায় ৪ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলারের সমান। এমন পরিস্থিতিতে টানেলের আয় দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন ব্যয় মেটানোই কঠিন হয়ে পড়বে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
তবে ২০১৩ সালের সমীক্ষায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মিরসরাই-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক, মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চল ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন নানা শিল্প কারখানা চালু হওয়ার বিষয়টি হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং মিরসরাই-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। এমনকি দক্ষিণ চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন শিল্প কারখানাগুলোও তাদের কার্যক্রম এখনও পুরোদমে চালু করেনি। এসবের কারণে শুরুতে তুলনামূলক কম যান চলাচলকে অনেকটা কাঙ্ক্ষিত হিসেবেই ধরে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে টানেলের প্রভাবে আনোয়ারা-পটিয়া এলাকায় ব্যাপক শিল্পায়ন ও বছরে অন্তত ১৭ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের কথা সমীক্ষায় বলা হলেও এখনও তা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। তাই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও টানেলের পুরোপুরি সুফল পেতে এখন থেকেই চট্টগ্রামে সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা মাথায় রেখে মহাপরিকল্পনা সাজানোর কথা বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘ফিজিবিলিটি স্টাডিজে অনেক কিছু দেখা যায়, কিন্তু ইনিশিয়ালি (প্রাথমিক অবস্থায়) এত গাড়ি হবে না। কারণ গাড়ি ওদিকে কী জন্য যাবে? ওখানে কী এমন ইন্ডাস্ট্রি হয়েছে যে গাড়ি যাবে? ওদিক থেকে কেনই বা গাড়ি আসবে? ওখানে তো সেই ডেভেলপমেন্টটা (উন্নয়ন) এখনও হয়নি। কাজেই টানেল দিয়ে এত তাড়াতাড়ি গাড়ি যাবে না। বিষয়টা হলো যে, ওই দিকে গাড়ি জেনারেট করার মতো তো সেরকম ডেভেলপমেন্ট হয়নি। ওরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে ঠিক আছে, কিন্তু সেদিকে যদি শিল্পায়ন না হয় তাহলে তো গাড়ি যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
টানেল দিয়ে যান চলাচল কম হওয়ার কারণ হিসেবে টোলের তুলনামূলক বেশি হারকেও দোষেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ওইদিকে যেহেতু আপনার কাজ নাই, আপনি তো যাচ্ছেন না বা যাবেন না। আর ওই দিকে কাজ থাকলেও আপনি এখন কোন দিক দিয়ে যাবেন? আপনি টানেল দিয়ে গেলে আপনার টোল দিতে হবে কত, আর শাহ আমানত ব্রিজ দিয়ে গেলে টোল দিতে হবে কত? এগুলো তো টাকা, এই চড়া দ্রব্যমূল্যের বাজারে টাকার হিসেব তো করবেই জনসাধারণ।
‘যাদের কাঁচা টাকা আছে, গাড়ি আছে, তারা যাবে। বাস গেলে তো বাসে অনেক টোল নেয়, সাধারণ মানুষ তো বাসে যাবে না। একটা ৩০ সিটের বাস গেলেও তো ৩০০ টাকা টোল নেয়। মানে প্রতি জনের ঘাড়ে দশ টাকা করে বেশি পড়বে। তাহলে বাসচালকও তো যাত্রী পাবে না। সাধারণ মানুষ কেন অতিরিক্ত টাকা পে (পরিশোধ) করবে? এতদিন যেগুলো গেছে প্রথম প্রথম, এগুলো তো সব টুরিস্ট বাস। ফিজিবিলিটি স্টাডিজে যে পূর্বাভাস দিয়েছে, এ অঞ্চলে ওই রকম যানবাহন হতে আরও অনেক বছর সময় লাগবে।’
‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী টোল আদায় না হলে স্বপ্নের এ টানেল অনেকটা হাতি পোষার মতো হবে’ জানিয়ে টানেলের সুফল পেতে এর দু’পাশে পরিকল্পিত নগরায়নের পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘আর এখন টোল টেক্সট যদি না পাই, এগুলো আমাদের জন্য হোয়াইট এলিফ্যান্ট (শ্বেতহস্তী) হয়ে যাবে।
‘টানেল হয়ে গেছে এখন আর কিছু করার নেই। দু’পাশেই শিল্পায়ন করতে হবে; পরিকল্পিত নগরায়ন, টার্মিনাল- এগুলোর সবই করতে হবে। এখন সেগুলো এই পরিস্থিতিতে কবে হবে তার কোন ঠিক নেই।’
অবকাঠামো ও অবস্থানগত কারণে টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ পদ্মা সেতুর চেয়েও বেশি হবে বলে জানান এ নগর পরিকল্পনাবিদ।
তার সুরে সুর মেলালেন আরেক নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামকে ঘিরে আগামীর বাংলাদেশকে মাথায় রেখে এখন থেকেই মহাপরিকল্পনা সাজাতে হবে যাতে এই অঞ্চলে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল, আবাসিক এলাকা ও পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। এখানে এসবের উপাদানগুলোও রয়েছে। এ কাজগুলো করলে টানেল ব্যবহারে পণ্যবাহী যানবাহনের পাশাপাশি অন্যান্য যানবাহনও বাড়বে।’
গত ২৮ অক্টোবর বেলা ১১টা ৪১ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে খোলে দেশের দখিনা দুয়ার। দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এটাই প্রথম টানেল।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং টানেল নির্মাণকাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের প্রথম টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
টানেলটি নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ধরা হলে ২০১৭ সালে তা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়।
আরও পড়ুন:আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি ও দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো।
রাজধানীর তোপখানা মোড়ের শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বিকেলে দলগুলোর যৌথসভায় এমন দাবি জানানো হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিএনপি মিডিয়া সেলের পক্ষে শাকিব আনোয়ারের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ দীর্ঘদিন ধরে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে আসছি। এ জন্য আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও গ্রেপ্তারকৃত সকল রাজবন্দির মুক্তি এবং বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কারের দাবিতে যুগপৎ ধারায় এক আন্দোলনে আছি।
‘এই দাবিগুলো ইতিমধ্যে গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। গণদাবির এই আন্দোলনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরিকল্পিত সহিংসতা ও নাশকতা ঘটনা ঘটিয়ে সরকার ও সরকারি দল গত ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহের মহাসমাবেশ পণ্ড করে দেয়। বিএনপিসহ বিরোধীদের ওপর এই দায় চাপিয়ে গত এক মাস দমন-নিপীড়ন ও গ্রেপ্তারের পথে দেশব্যাপী তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সরকার ও সরকারি দলের এইসব নৃশংসতায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের জন্য আমরা গভীর শোক প্রকাশ করি। নিহত, আহত ও কারাবন্দিদের পরিবারের প্রতি আমরা সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।’
সরকার একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি সরকারের পদত্যাগের গণদাবিকে উপেক্ষা করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি একতরফা নীলনকশার নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। সরকারের এই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সরকারের সহযোগী হিসেবে নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। পাতানো এই নির্বাচনের অংশ হিসেবে আজ ৩০ নভেম্বর কথিত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখও নির্ধারণ করেছে।
‘জনগণের ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া সমগ্র এই নির্বাচনের তফসিলকে আমরা প্রত্যাখান করছি। আমরা অনতিবিলম্বে ৭ জানুয়ারি ঘোষিত নির্বাচনি তফসিল বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী রাজনৈতিক উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাই।
‘আমরা পরিষ্কার করে উল্লেখ করতে চাই যে, সরকার যদি জেদ, অহমিকা নিয়ে জবরদস্তি করে নির্বাচনের নামে আরেকটি তামাশা মঞ্চস্থ করতে চায়, তাহলে সরকারের এই অশুভ তৎপরতা প্রতিরোধ করা ছাড়া দেশবাসীর সামনে অন্য কোনো পথ থাকবে না। আমরা সরকার ও সরকারি দলের সকল ধরনের উসকানি, সহিংসতা ও পরিকল্পিত নাশকতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে চলমান গণআন্দোলন, গণসংগ্রামকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। এই আন্দোলনে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশা ও সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, জাগপা সভাপতি খন্দকার লুতফর রহমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মুহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকীসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:গাজীপুরে একটি কাভার্ড ভ্যানে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
টঙ্গীর মেঘনা রোডে বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে ফায়ার সার্ভিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আগুন লাগানোর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তারা ওই স্থানে পৌঁছায়। টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট পুলিশ প্রহরায় অগ্নিনির্বাপণের কাজ করে।
এদিকে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ড ভ্যানে হঠাৎ আগুন দেখতে পায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চার রাজনৈতিক অঙ্গীকার বিষয়ে সুপারিশমালা উপস্থাপন উপলক্ষে রাজধানীতে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবি। সূত্র: ইউএনবি
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে ৭৬টি সুপারিশ করেছে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশটি তুলে ধরেন টিআইবির গবেষণা সহযোগী কাওসার আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম এবং গবেষণা ও নীতিমালা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরবর্তী সময় পর্যালোচনার ভিত্তিতে আমাদের ধারণা হয়েছে- অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে আমরা যা বুঝি, তা এবারও পাওয়া যাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। ভোটের অধিকারভিত্তিক নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করা এবং এই নির্বাচনের ওপর জনআস্থা নিশ্চিত করাও অসম্ভব বলে আমরা মনে করি।’
টিআইবির সুপারিশামালায়ও বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ড. জামান বলেন, ‘অর্ধশতাব্দী ধরে আমরা আসনভিত্তিক সংসদীয় ব্যবস্থার চর্চা করছি। এখন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় ব্যবস্থার চর্চা করার সময় এসেছে। সংসদীয় ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে প্রয়োজন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার এবং অন্যান্য সব অংশীজন বিশেষ করে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ভূমিকা প্রয়োজন, যা নিশ্চিত করতে আইনি সংস্কার জরুরি।’
স্বাধীন, শক্তিশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) সব কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনে অন্তর্ভুক্ত যোগ্যতা ও অযোগ্যতার শর্তাবলি যথাযথভাবে অনুসরণ করা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতে অনুসন্ধান কমিটি কর্তৃক গণশুনানি; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধনী) ২০২৩-এর ৯১ (এ) সংশোধনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সংসদীয় আসনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল বাতিল করার ক্ষমতা রহিত করার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সংকুচিত করার এই ধারা পরিবর্তন, প্রতিযোগিতার সমান ক্ষেত্র (লেভেল প্লেইং ফিল্ড) নিশ্চিতে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নির্বাচনকেন্দ্রিক আচরণ বিধি সুস্পষ্ট করা এবং সব দল ও প্রার্থীর প্রচারণার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা; জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে ‘না’ ভোটের পুনঃপ্রচলনের সুপারিশ করেছে টিআইবি।
রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চা রাজনৈতিক দলের সব প্রকার গৃহীত অনুদান, আয়-ব্যয়, বিশেষ কার্যক্রমভিত্তিক সংগৃহীত অর্থ ও ব্যয়, প্রচারণাসহ নির্বাচনী ব্যয়, মনোনয়ন কেন্দ্রিক আর্থিক লেনদেন প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার; রাজনৈতিক দলসমূহের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন ইসির কাছে জমা দেয়া ও নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; রাজনৈতিক দলসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে দলের কেন্দ্রীয়/নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সম্পদের হিসাব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা; সব রাজনৈতিক দলের কমিটিতে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা, নির্বাচনে ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্যকে মনোনয়ন দেয়া এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে প্রার্থী মনোনয়ন বৃদ্ধিরও সুপারিশ করেছে টিআইবি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে জেন্ডার, ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং অন্যান্য মাপকাঠিতে প্রান্তিকতার শিকার নাগরিকদের যথাযথ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।’
টিআইবির সুপারিশমালায় বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য বিচার বিভাগের নিজস্ব সচিবালয় স্থাপন, অধস্তন আদালতের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিসহ সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে এককভাবে সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের ওপর ন্যস্ত করার কথা বলা হয়েছে।
সুপারিমালায় নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, তথ্য অধিকার, তথ্য ও উপাত্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এছাড়া আর্থিক খাত ও সরকারি ব্যয়ে সুশাসন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সুস্পষ্ট সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। গণমাধ্যম, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিতে এদের পরিপন্থী আইন সংস্কার এবং নজরদারিমূলক সমাজ ব্যবস্থা থেকে সরে এসে সরকারকে গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়েছে টিআইবির পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য